নর্স : ধর্ম বিশ্বাস দেবদেবী – ঋতুপর্ণা চক্রবর্তী
প্রাচীন নর্সগোষ্ঠীর দেবদেবীর অলৌকিক উপাখ্যান
অরণ্যমন প্রকাশনী
প্রথম প্রকাশ —বইমেলা, ২০১৯
.
ফ্ল্যাপের লেখা
উত্তর ইউরোপের ভাইকিংরা ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা ইউরোপ, এমনকি আমেরিকাতেও। তাদের ভাষাই নর্স ভাষা নামে পরিচিত। নর্থ শব্দটি থেকে এই নর্স নামটি এসেছে। ভাইকিংরা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে ছড়িয়ে দিয়েছিল দেশে-বিদেশে। প্রধানত যুদ্ধ এবং সমুদ্রযাত্রা নিয়ে গড়ে উঠেছিল তাদের মিথ। দুই গোত্রের দেবতা, বিশ্বের শুরু থেকে অন্ত পর্যন্ত বিস্তৃত কাহিনী, নয়টি বিশ্ব, যুদ্ধবাজ দেবতারা, চতুর ওডিন, শক্তিশালী থর এবং ধুর্ত লোকিকে নিয়ে বিভিন্ন গাথা, সবকিছু নিয়েই নর্স মিথোলজি অনন্য।
যুদ্ধে বীরের মত মৃত্যুবরণ করলে ওডিনের সভায় স্থান পাওয়া যাবে, এই ভেবেই আমৃত্যু লড়াই করত ভাইকিংরা। আর প্রস্তুত হতো আরেক মহাযুদ্ধের জন্য যখন সবকিছুর অন্ত হবে… র্যাগনারকে…
.
দুই-এক কথায় উৎসর্গ করতে পারতাম না কারণ এই বইয়ের জন্য আমি অনেকের কাছে কৃতজ্ঞ, তাই আমার ধন্যবাদ জানানোর তালিকা বেশ বড়সড়। বইটি প্রস্তুত হওয়ার পর যাঁর কথা সবথেকে বেশি মনে পড়ছে, তিনি আমার বাবা। আজ তিনি এই পৃথিবীতে থাকলে খুবই আনন্দিত হতেন নিশ্চয়ই। আমার মা, যিনি ছোট্টবেলা থেকে আমাকে নিজের পছন্দের বই পড়তে উৎসাহ দিয়েছেন। আমার সবথেকে প্রিয় বন্ধু ও জীবনসঙ্গী অরিজিৎ, আমাকে অক্লান্তভাবে সাহায্য করেছেন এবং এই বইয়ের প্রথম পাঠক এবং সমালোচকও তিনিই। আমার ক্ষুদে আড়াই বছরের পুত্র অরিন, তাঁর যতটুকু সামর্থ্য ততটুকু সাহায্য করেছেন। তিনি সময়ে ঘুমিয়েছেন বলেই লেখার সময় বার করতে পেরেছি। আমার দিদা এখন শয্যাশায়ী, কিন্তু তিনি আমার ছোট্টবেলা থেকে জন্মদিনে গল্পের বই উপহার দিয়ে আমাকে বইপোকা বানিয়েছেন। আমার বন্ধু পিপি অর্থাৎ রীণা চট্টোপাধ্যায়, তাঁর উষ্ণ প্রশ্রয় এবং সুচিন্তিত মতামত দিয়ে আমার লেখাকে উন্নত করতে সাহায্য করেছেন। আমার দুই প্রাণের বন্ধু সমীরণ বিশ্বাস এবং কস্তুরী সেন, আমাকে বই শেষ করার জন্য সবসময় তাড়া দিয়েছেন, বিভিন্ন সহায়তাও করেছেন। অর্ক দত্তগুপ্ত এবং মিথিল ভট্টাচার্য, আমার এই দুই ভাই আমাকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে এবং দরকারে বিভিন্ন তথ্যের যোগান দিয়ে প্রভূত সাহায্য করেছেন। বানান বা ব্যাকরণ নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলেই যাঁদের ফোন করে বিরক্ত করেছি, তাঁরা হলেন রাজা ভট্টাচার্য্য এবং ঋজু গাঙ্গুলী। তাঁরা ধৈর্য্য ধরে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। সব শেষে যাঁর কথা বলতেই হবে তিনি আমার প্রকাশক চিরঞ্জীৎ দাস, অরণ্যমন প্রকাশনীর কর্ণধার। এছাড়াও আমার অনেক বন্ধু, অনেক শুভানুধ্যায়ী, যাঁরা আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন— তাঁদের সকলকে আমার তরফ থেকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।
.
ভূমিকা
যেকোনো মিথের মতই, নর্স মিথও বিশাল। তবে গ্রীক, রোমান বা মিশরের মিথোলজিতে যেমন বিশ্বের অন্তের কোনো বর্ণনা নেই, নর্স মিথোলজি কিন্তু তেমন নয়। এর মূল গাথাটি অনেকগুলি গল্পের সমন্বয়ে রচিত একটি নদীর মত, যার আদি এবং অন্ত দুই—ই আছে। এছাড়াও আরো অনেক ছোটবড় অভিযান এবং ঘটনার গল্প রয়েছে, যেগুলি নদীর উপনদী, শাখানদীর মতই কখনও মূল গল্পের সঙ্গে অল্পই যোগ আছে, কখনও বা শুধুই চরিত্রগুলির সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে। সেসব গল্প সবকটি লেখা সম্ভব না বলে সেইগুলি বাদ দিয়ে মূল গাথাটি রাখার চেষ্টা করা হয়েছে, যেখানে বিশ্বের শুরু এবং শেষ দুটোই রয়েছে। ভাইকিংরা বড়ই যুদ্ধবাজ এবং তাঁদের রসিকতাও বড় মোটাদাগের হয়েছে অনেক সময়ে। এই বইটি যাতে ছোট-বড় সকল প্রকার পাঠকের পড়ার উপযুক্ত হতে পারে তাই কোনো ঘটনার ‘ভয়ানক’ বর্ণনা দেওয়া থেকে বিরত থাকার যথাসম্ভব চেষ্টা করা হয়েছে।
আরেকটা কথা এখানে উল্লেখযোগ্য যে নর্স মিথোলজি ভালো করে গভীরে গিয়ে পড়লে অনেক পরস্পরবিরোধী তথ্য পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, অনেকগুলি মিথ কাহিনীতে ওডিনের স্ত্রী ফ্রিগ এবং নিয়র্ডের কন্যা ফ্রেয়া আদতে একজনই। সেইক্ষেত্রে অনেক মতের মধ্যে একটি মত বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, অনেক দেবতার উল্লেখ একটি কাহিনীতে আছে কিন্তু পরের কাহিনীগুলিতে হঠাৎ করেই আর নেই। আবার একাধিক দেবতার উল্লেখ পাওয়াই যায় না র্যাগনারকের আগে। আবার র্যাগনারকের পরে অনেক দেবতাদের, বিশেষ করে দেবীদের কী হল জানা যায় না। বেশিরভাগ মিথের মতই নর্স মিথগাথাতেও এইরকম অনেক সূত্রের সমাধান নেই। নর্স মিথোলজির গল্পগুলি পড়লে দেখা যায় দেবতারা অনেকাংশে নিজেই দায়ী, র্যাগনারকের ফলাফলের জন্য। সাধারণ মানুষের মতোই তাঁরা কর্মফল ভোগ করেছেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। পুরো কাহিনীকে একটাই আখ্যানের আকার দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, নীরস বর্ণনা বা তুলনামূলক আলোচনা ইত্যাদি বাদ দিয়ে।
নর্স মিথোলজির কাহিনী ও গাথাগুলি খুবই মনোরঞ্জক, তাই সত্যি-মিথ্যে বিচার না করে, কেবল মাত্র কল্পনা হিসাবেই এই গাথাগুলি শুনলে অত্যন্ত আনন্দ পাওয়া যায়।
তাহলে শুরু করা যাক!
.
লেখক পরিচিতি
জন্ম ২৮শে জুলাই, ১৯৮৫, কলকাতা। বহুমুখী রাষ্ট্রীয় বালিকা বিদ্যলয়ের ছাত্রী। স্নাতক স্নাতকোত্তর স্তরে কম্পিউটার নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। পড়াশোনা শেষ করার আগেই চাকরীজীবন শুরু। ২০১৫ সাল অবধি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কাজ করলেও গল্পের বই পড়ার সময়ের অভাব ঘটেনি কখনো।
লেখালিখির শখ বহুদিনের। পড়াশোনা এবং লেখালখিতে মিথোলজি, রূপকথা বা উপকথাই প্রথম পছন্দ। সেই বিষয়ের ওপরেই বিভিন্ন ওয়েব-ম্যাগাজিনে একাধিক লেখা প্রকাশিত হয়েছে। ছাপার হরফে প্রথম প্রকাশ একটি কল্পবিজ্ঞান অনুবাদ গল্প (সংকলন: এফটিএল, ২০১৮। প্রকাশক —জয়ঢাক )।
বর্তমানে একটি আড়াই বছরের খোকার জননী। তারই অবসরে সম্প্রতি প্রকাশনাসংক্রান্ত কাজের ফ্রি-ল্যান্সিং করেন। তাঁর সম্পাদিত ‘জিয়নকাঠি’ বইটি কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা ২০১৯-এ খোয়াবনামা থেকে প্রকাশিত।
Leave a Reply