০৯. কল্পসূত্র (বেদাঙ্গসূত্র)

কল্পসূত্র (বেদাঙ্গসূত্র)

সূত্রসাহিত্যের ছটি শ্রেণীর মধ্যে কল্পসূত্রগুলি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। কল্পসূত্রগুলি আবার চারভাগে বিন্যস্ত : শ্রৌত, গৃহ্য, ধর্ম ও শুল্ব। এদের মধ্যে বেদের সঙ্গে সবচেয়ে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কিত হল শৌতি সূত্র–প্রধান, বিশেষত সামূহিকভাবে পালনীয়, যজ্ঞানুষ্ঠানগুলির বিভিন্ন অনুপুঙ্খ এতে বিবৃত হয়েছে। শ্রৌতসূত্রে আলোচিত অনুষ্ঠানগুলি মুখ্যত তিনটি ভাগে বিন্যস্ত করা যায় : (ক) নিত্য অর্থাৎ আবশ্যিক অনুষ্ঠান–প্ৰত্যহিক ও সাময়িক; যেমন : অগ্নিহোত্র ও দর্শপুর্ণমাস। আর্য পুরুষকে সমগ্র জীবনব্যাপী এই অনুষ্ঠানগুলি পালন করতে হত। (খ) নৈমত্তিক অর্থাৎ বিশেষ বিশেষ সময়ে পালনীয় অনুষ্ঠান যেমন রাজসূয়, বাজপেয় এবং (গ) কাম্য অর্থাৎ পুত্র, গোধন, বৃষ্টিপাত, বিজয়লাভ প্রভৃতি বিশেষ আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য অনুষ্ঠান। যজ্ঞের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক থাকায় মনে হয় যে শ্রৌতসূত্রগুলি বিভিন্ন পুরোহিত পরিবারেই উদ্ভূত হয়েছিল এবং সম্ভবত এগুলি প্রাচীনতম সূত্ৰ-সাহিত্যের নিদর্শন। প্রতি বেদে, এমন কি তার প্রতি শাখায় যজ্ঞসম্পাদক পুরোহিতদের নিজস্ব শৌতিসূত্র ছিল। ঋগ্বেদের দুটি শ্রৌতসূত্র ছিল : আশ্বলায়ন ও শাখায়ন। অধিকাংশ শ্রৌতসূত্রের অধ্যায়গুলি ‘প্রশ্ন’ নামে অভিহিত; তাই অনুমান করা যায় যে, এই গ্রন্থগুলি যজ্ঞের যথার্থ পালন-বিধি সংক্রান্ত শিক্ষানবীশ পুরোহিতের প্রশ্ন ও শিক্ষকের উত্তর প্রত্যুত্তর প্রক্রিয়া থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। অবশ্য এই দ্বান্দ্ৰিক আঙ্গিক প্রচলিত পাঠে এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না কেননা সম্ভাব্য প্ৰশ্নসমূহ পরিত্যক্ত হয়ে গেছে; তবে উৎসগত বিচারে প্রাগুক্ত আঙ্গিক ও অব্যবহিত পূর্ববর্তী উপনিষদ সাহিত্যের সঙ্গে শ্রৌতসূত্রের নিবিড় সাদৃশ্য রয়েছে।

আশ্বালায়ন শ্রৌতসূত্রে বারোটি অধ্যায় আছে। বৌধায়ন শ্রৌতসূত্রে নামকরণ শিক্ষকের নামে হয়েছিল, কিন্তু আশ্বলায়ন শ্রৌতসূত্রের ক্ষেত্রে ছাত্রের নামই রয়েছে। অর্থাৎ দ্বিতীয় গ্রন্থের প্রকৃত রচয়িতা যদিও শৌনক, তিনি তার শিষ্য আশ্বলায়নের নামে রচনাটিকে পরিচিত হতে অনুমতি দিয়েছিলেন, হয়ত আশ্বলায়ন কিছু পরিমার্জন করেছিলেন। অশ্বমেধ, প্রবর্গ ও রাজসূয় ব্যতীত প্ৰায় সমস্ত প্রাচীনতর ও প্রধান যজ্ঞানুষ্ঠান এই গ্রন্থে আলোচিত হয়েছে; তাছাড়া এতে হােতা, মৈত্রাবরণ, আচ্ছাবাক ও গ্রাবষ্টুতের মতো ঋগ্বেদীয় পুরোহিত, এবং অথর্ববেদীয় পুরোহিত ব্ৰহ্মা ও যজমানের কর্মপদ্ধতি সংক্রান্ত নিয়মাবলী বিবৃত পয়েছে। অন্যান্য অর্বাচীন শ্রৌতসূত্রের মতো আশ্বালায়নে মন্ত্রবিশ্লেষণের সাধারণ নিয়মাবলী সংক্রান্ত পৃথক ‘পরিভাষা’ অধ্যায় নেই; এ ধরনের নিয়ম গ্রন্থের সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে এবং প্রসঙ্গ অনুযায়ী এদের আবির্ভাব ঘটেছে। নিয়মগুলি জটিল, তাই রচনাও দুরূহ।

শাঙ্খায়ন শ্রৌতসূত্র আশ্বলায়ন অপেক্ষা প্রাচীনতর এবং ঋথেদের বাষ্কল শাখার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, কিন্তু আশ্বলায়ন শাকল ও বাষ্কল–এই উভয় শাখার সঙ্গে সম্পর্কিত; শঙ্খ পরিবারভুক্ত সুযজ্ঞ আলোচ্য গ্রন্থের রচয়িতা। সতেরোটি অধ্যায়ে বিন্যস্ত শাঙ্খায়ন শ্রৌতসূত্রে সবগুলি নিবিদ বিবৃত হয়েছে (৮ : ১৬-২৩)। শেষ দুটি অধ্যায়ে আলোচিত মহাব্ৰত অনুষ্ঠানটি পরবর্তীকালে সংযোজিত; একই শাখার আরণ্যকে বিন্যস্ত অনুরূপ অধ্যায়টির নিবিড় অনুসরণ এখানে স্পষ্ট। শাখায়নের অবশ্য একটি পৃথক পরিভাষা অধ্যায় আছে। আশ্বলায়নের তুলনায় এই গ্রন্থে অপেক্ষাকৃত কমসংখ্যক যজ্ঞ আলোচিত হলেও এর তালিকায় কয়েকটি অনুষ্ঠান যুক্ত হয়েছেযা থেকে আমরা প্রাচীন যজ্ঞের কিছু কিছু নুতন বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অবহিত হই। পুরুষমেধ সম্পর্কে এই গ্রন্থে একটি সম্পূর্ণ ও বিবিধ-অনুপুঙ্খাযুক্ত অংশ রয়েছে; তবে স্পষ্ট বোঝা যায়, বহু পূর্বেই অনুষ্ঠানটি অপ্রচলিত হয়ে পড়েছিল। ভাষাতাত্ত্বিক বিচারে ব্রাহ্মণসাহিত্যের সঙ্গে এর প্রবল সাদৃশ্য স্পষ্ট, এতেও গ্রন্থটির অধিকতর প্রাচীনতা প্ৰমাণিত হয়।

তৈত্তিরীয় সংহিতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু শ্রৌতসূত্রে সন্ধান পাওয়া যায়; পুরোহিতের কার্যকলাপের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত বিধিগ্রন্থের পক্ষে সেটাই স্বাভাবিক। কারণ, বিশেষভাবে, বিভিন্ন অঞ্চলে উদ্ভূত বিভিন্ন শাখার আনুষ্ঠানিক কর্মপদ্ধতি পরস্পর ভিন্ন হতে বাধ্য। তৈত্তিরীয় শাখার শ্রৌতসূত্রগুলির সময়ানুক্রমিক তালিকা এভাবে দেওয়া যায় : বৌধায়ন ও বাধুল; তারপর ভরদ্বাজ, আপস্তম্ব, সত্যাষাঢ় হিরণ্যকেশী এবং শেষে বৈখান্‌স।

আপস্তম্ব শ্রৌতসূত্র ত্রিশটি প্রশ্ন বা অধ্যায়ে বিন্যস্ত একটি প্রাচীন গ্রন্থ। এতে প্রায় সমস্ত প্ৰধান যজ্ঞানুষ্ঠান আলোচিত হয়েছে; এগুলির মধ্যে সৌত্রামণী, বাজপেয়, রাজসূয়, অশ্বমেধ ও সর্বমেধের মতো নবীনতর অনুষ্ঠানও আছে। পিতৃপুরুষের তালিকা-সহ একটি পৃথক পরিভাষা অংশ, মন্ত্রসংগ্রহ এবং হােতৃশ্রেণীর পুরোহিতের কর্মপদ্ধতি এখানে বিবৃত হয়েছে। এই গ্রন্থটি নিকক শ্রৌতসূত্র থেকে অনেকাংশে পৃথক, অন্য শ্রৌতসূত্রগুলির তুলনায় এটি পূর্ণতর এবং প্রকৃতপক্ষে একটি সম্পূর্ণ কল্পসূত্র; কারণ এর একটি করে গৃহ্যসূত্র, ধর্মসূত্র ও শুল্বসূত্র আছে। তৈত্তিরীয় শাখার ভরদ্বাজ শ্রৌতসূত্রের সঙ্গে আলোচ্য আপস্তম্ব শ্রৌতসূত্রের প্রভূত সাদৃশ্য সুস্পষ্ট। এটা আরো কৌতুহলপ্ৰদ, কারণ অন্য সহযোগী রচনা থেকে ঋণ গ্রহণে এর কুষ্ঠা নেই।

ত্রিশটি প্রশ্নে বিন্যস্ত বৌধায়ন শ্রৌতসূত্র সম্ভবত প্ৰাচীনতম; বাধূল সম্ভবত একই যুগ কিংবা সামান্য পরবর্তীকালের রচনা। বৌধায়নে আলোচিত বিষয়বস্তুর মধ্যে রয়েছে প্ৰধান যজ্ঞগুলি, এবং প্রবর্গ্য ও অশ্বমেধ এবং কয়েকটি অপরিচিত বিষয়। স্পষ্টতই এটি এমন যুগে রচিত যখন শ্রৌতবিষয়ক মুখ্য রচনাংশেই এমন সমস্ত বিষয় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছিল যা পরবর্তী পর্যায়ে পৃথক সহায়ক রচনাসমূহে স্থান পেয়েছিল। তাই এতে কর্মান্ত অনুষ্ঠান, প্ৰায়শ্চিত্ত ও প্রবর-তালিকা সম্বলিত বিভিন্ন অংশ এবং শুল্বসূত্রের উপযোগী একটি অংশ পাওয়া যায়। রচনা বিশ্লেষণ করে এই তথ্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে প্রচলিত গ্রন্থটি একাধিক লেখকের রচনা; বিভিন্ন অংশে ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির রচনারীতির নিদর্শন রয়েছে। এই প্ৰাচীন গ্রন্থে অনেক প্রাচীনতর বিশেষজ্ঞদের অভিমত উদ্ধৃত হওয়ায় প্রমাণিত হয় যে শ্রৌতসূত্রগুলি রচনার পশ্চাতে সুদীর্ঘ একটি ইতিহাস রয়েছে। তৈত্তিরীয় সংহিতার উল্লেখ থাকায় মনে হয় সূত্র রচিত হওয়ার পূর্বেই এই সংহিতা তার প্রচলিত রূপ পরিগ্রহ করেছিল। অবশ্য কাঠক সংহিতার সঙ্গেই এই সূত্রের সম্পর্ক সবচেয়ে ঘনিষ্ট। লিপিগত সাক্ষ্য থেকে মনে হয় বৌধায়ন শ্রৌতসূত্র দক্ষিণাঞ্চলে উদ্ভূত হয়েছিল। সম্ভবত দক্ষিণাঞ্চলের পাণ্ডুলিপি রাণায়নীয় ও উত্তরাঞ্চলের পাণ্ডুলিপি কৌথুম শাখার পাঠ আমাদের কাছে পৌঁছেছে।

তৈত্তিরীয় শাখার দীর্ঘতম শ্রৌতসূত্র হল সত্যাষাঢ় হিরণ্যকেশী রচিত গ্রন্থ। উনচল্লিশটি অধ্যায়ে বিন্যস্ত বহু সূত্র উভয়ের মধ্যে সাধারণ। বিষয়বস্তুর তালিকাটি দীর্ঘ এবং একটি পৃথক পরিভাষা অংশ এর প্রথম অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত। অর্বাচীনতর যজ্ঞসমূহের মধ্যে প্রবর্গ্য, বাজপেয়, রাজসূয়, সৌত্রামণী, অশ্বমেধ, পুরুষমেধ, সর্বমেধ, মহাব্রত ও গবাময়ন এতে আলোচিত হয়েছে। সৌত্রিমণীর দুটি রূপভেদের সঙ্গে আমরা পরিচিত হই–চারক ও কোকিলী। ‘সব’ যজ্ঞের নিয়মাবলী এতে বিবৃত; তাছাড়া ভরদ্বাজ প্রণীত পিতৃমেন্ধের বিশেষ রূপভেদও এতে রয়েছে। গৃহ, শুল্ব ও ধর্ম সূত্রের অন্তর্ভুক্তি থেকে প্রমাণিত হয় যে আলোচ্য গ্রন্থটি ব্যাপক সূত্র ঐতিহ্যের অন্তৰ্গত।

পনেরোটি অধ্যায়ে বিন্যস্ত বাধূল শ্রৌতসূত্র সূত্রসাহিত্যের প্রাচীনতম পর্যায়ের অন্যতম, সম্ভবত তা বৌধায়নের সমকালীন। অধ্যাপক কাশীকারের মতে গ্রন্থটি হয়তো তৈত্তিরীয় সংহিতার সঙ্গে সম্পূক্ত ছিল না, এর সঙ্গে বিশেষ সাদৃশ্যযুক্ত অন্য কোনো পাঠভেদের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। পরিভাষা বিষয়ক কোনো পৃথক অধ্যায়। এতে নেই; তবে প্রধান যজ্ঞগুলির বিবরণ ছাড়াও এতে ‘ব্রাহ্মণ’ নামক কয়েকটি অংশও রয়েছে (তুলনীয় পশুবন্ধ বা অগ্নিচয়ন ব্ৰাহ্মণ)-এতে একই সঙ্গে রচনাটির প্রাচীনত্ব এবং ব্ৰাহ্মণসাহিত্যের সঙ্গে কালগত সান্নিধ্য প্রমাণিত হচ্ছে। তাই একে আমরা সূত্রব্রাহ্মণের যুগলবন্ধ রােপ হিসাবে গ্রহণ করতে পারি। এই গ্রহে বাধুলের নাম স্পষ্টভাবে উল্লিখিত; পণ্ডিতরা মনে করেন যে এটা প্রকৃতপক্ষে গোষ্ঠীনাম-যা যাস্ক ও ভৃগুদের সঙ্গে আত্মীয়তাসূত্রে বন্ধ ছিল। এই শ্রৌতসূত্রের লেখক। আপস্তম্বের প্রায় অর্ধশতাব্দী পূর্বে আবির্ভূত হয়ে অগ্নিবেশ্যকে শিক্ষা দান করেছিলেন-অগ্নিবেশ্যের গৃহ্যসূত্র আমাদের নিকট এসে পৌঁছেছে। বাধূল শ্রৌতসূত্রের প্রাচীনতা নানাভাবে প্রমাণ করা যায়; যেমন : রচনার মিশ্র সূত্ৰ-ব্ৰাহ্মণ চরিত্র, বহু গাৰ্হস্থ্য অনুষ্ঠানের অন্তর্ভুক্তি, মন্ত্রের ব্যাপক সংগ্রহ এবং কোনো কিছুকে বিনা প্রশ্নে গ্ৰহণ না-করার মনোভাব–ঐতিহ্যগত নির্দেশগুলিকে সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ না করে এটি প্রতিটি অনুষ্ঠানের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিয়েছে।

বৈখানস শ্রৌতসূত্র ‘ঔখীয়সূত্র’ নামেও পরিচিত; একুশটি প্রশ্নে বিন্যস্ত এই রচনাটি তৈত্তিরীয় শাখার অপর প্রধান সূত্র। কোনো কোনো পাণ্ডুলিপিতে গৃহ্যসূত্র শ্রৌতসূত্রকে অনুসরণ করেছে; ঐ গৃহসূত্রে এগারটি প্রশ্ন রয়েছে। একটি পরিভাষা অধ্যায় ছাড়াও তাতে বহু প্ৰধান যজ্ঞানুষ্ঠানের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ রয়েছে; তবে অশ্বমেধ, পুরুষমেধ, সর্বমেধ বা রাজসূয়ের মতাে অর্বাচীন যজ্ঞসমূহ আলোচিত হয় নি। সোমব্যাগগুলির উপর প্রধান গুরুত্ব আরোপিত হয়েছে। ইষ্টি ও সোমের সঙ্গে সম্পর্কিত প্ৰায়শ্চিত্ত বিষয়ক দুটি অংশে এতে রয়েছে সেগুলিই এর শেষ দুটি অধ্যায়। তৈত্তিরীয় শাখার মধ্যে বৈখানস শ্রৌতসূত্র যে অর্বাচীনতম রচনা, তা এর সুস্পষ্ট সাম্প্রদায়িক চরিত্র থেকেই প্রমাণিত। এটা স্পষ্টত বৈষ্ণব ধারার গ্ৰন্থ; এতে নারায়ণের স্তুতি এবং নির্দিষ্ট রীতি অনুযায়ী ভস্ম দিয়ে ললাট চিহ্নিত করার বিশেষ বৈষ্ণবীয় আচারের বিবরণ আছে। তাৎপৰ্যপূর্ণভাবে এই ভস্ম গাৰ্হাপত্য অগ্নি থেকে আহরণ করতে হত। সম্প্রদায়কেন্দ্ৰিক পৌরাণিক বিশ্বাস যে ইতিমধ্যে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে পড়েছে, তা নিম্নোক্ত প্রতিশ্রুতিতে স্পষ্ট : ‘এই ভস্ম-চিহ্ন যে ব্যবহার করে, সে পূণ্য অর্জন করে” শেষ পর্যন্ত পরমাত্মার সঙ্গে সম্মিলিত হয়”। মনে হয়, একদা এই শাখার জন্য একটি পৃথক ব্রাহ্মণ ছিল; কিন্তু পরে তা বিলুপ্ত হয়ে যায়। বৈখানস নিজস্ব মন্ত্রসংহিতার অস্তিত্বকে অনুমান করে নিয়েছে, তবে তার সমগ্র রূপটি শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে নি। এর ভাষা ব্ৰাহ্মণসাহিত্যে প্ৰযুক্ত গদ্যের প্রত্যক্ষ উত্তরসূরী—তাই বহু দুর্বোধ্য ও ত্রুটিপূর্ণ রীতির অস্তিত্ব তার বৈশিষ্ট্য সূচিত করছে।

পনেরোটি প্রশ্নে বিন্যস্ত সংক্ষিপ্ত ভারদ্বাজ শ্রৌতসূত্র মাত্র দশটি যজ্ঞ আলোচনা করেছে। জ্যোতিক্টোম ছাড়া অন্য কোনো সোমােযাগ এতে আলোচিত হয় নি; তবে এতে অধ্বর্যু শ্রেণীর পুরোহিতদের ভূমিকা সম্পর্কে একটি এবং পূর্বানুমিত প্ৰায়শ্চিত্ত সম্পর্কে আরেকটি অংশ রয়েছে। সম্ভবত মূল গ্রন্থের পূর্ণাঙ্গ রূপটি আমাদের কাছে পৌঁছয় নি। কারণ পরবর্তী সাহিত্যে আরো কিছু যজ্ঞ সম্পর্কে ভারদ্বাজ শ্রৌতসূত্রের এমন সব বক্তব্য উদ্ধৃত হয়েছে যা প্রচলিত পাঠে পাওয়া যায় না। এরকম একটি যজ্ঞ হল অশ্বমেধ। কিছু কিছু বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে এই রচনার সঙ্গে বৌধায়ন শ্রৌতসূত্রের সাদৃশ্য রয়েছে।

কাঠক শ্রৌতসূত্রের পাঠটি নামমাত্রে পর্যবসিত; কারণ এর সামান্য কিছু অংশই মাত্র আমাদের কাছে পৌঁছেছে–রচনার বিপুল অংশই এখনও বিলুপ্ত। এরকম একটি প্রচলিত অংশে আমরা পিণ্ডপিতৃ যজ্ঞের যে নির্দেশাবলী পাই—তাতে শ্রৌতসূত্রে আলোচিত হওয়ার যৌক্তিকতা সংশয়াতীত নয়, কেননা গৃহসূত্রেই এগুলি অধিক মানানসই।

মৈত্রায়ণী শাখায় দুটি শ্রৌতসূত্র রয়েছে : মানব ও বারাহ। মানব শ্রৌতসূত্র নানাভাবে পরিচিত : মানব মৈত্রায়ণীয়’ বা শুধু মৈত্রায়ণীয়’। এর একুশটি অধ্যায়ে বহু প্ৰধান যজ্ঞ আলোচিত হয়েছে; কিছু কিছু অংশে বিচিত্র বিষয়বস্তুর সন্ধান পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে সুস্পষ্ট সাম্প্রদায়িক বৈশিষ্ট্যযুক্ত কিছু কিছু বৈষ্ণব অনুষ্ঠান এবং ‘গোনামিক’ ও ‘অনুগ্রাহিক’। এছাড়া এতে আছে পিতৃপুরুষের একটি তালিকা, একটি পরিশিষ্ট, শ্ৰাদ্ধবিষয়ক একটি অংশ এবং একটি সংশ্লিষ্ট শুল্বসূত্র।

বারাহ শ্রৌতসূত্র নামক অর্বাচীন রচনাটি তেরটি অধ্যায়ে ও তিনটি পৃথক অংশে বিন্যপ্ত। কয়েকটি প্রধান যজ্ঞের সঙ্গে (এদের মধ্যে সোমব্যাগের বিবিধ রূপভেদই প্রধান) মহাব্ৰত এবং ‘উৎসৰ্গিণাম আয়ন’ ও ‘একাদশিনী’ মতো অপ্রচলিত অপ্রধান অনুষ্ঠানও এতে আলোচিত হয়েছে। মানব শ্রৌতসূত্রের সঙ্গে এর নিবিড় সাদৃশ্য লক্ষণীয়; একমাত্র পার্থক্য এই যে, বারাহে পরিভাষা অংশ অনুপস্থিত। এর শব্দভাণ্ডারে কিছু বৈশিষ্ট্য দেখা যায়; এতে এমন কিছু শব্দ প্ৰযুক্ত হয়েছে যা অন্য কোনো সূত্র গ্রন্থে পাওয়া যায় না।

বাজসনেয়ী শাখার কথা ও মাধ্যন্দিন–এই উভয় পাঠে একটিমাত্র শ্রৌতসূত্র রয়েছে; কাত্যায়ন শ্রৌতসূত্র; এর সঙ্গে তৎসংশ্লিষ্ট গৃহ্যসূত্রের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় যদিও সেই গৃহ্যসূত্রের নামকরণে কাত্যায়ন অনুপস্থিত। এই শাখায় গৃহ্যসূত্রকে পারস্কর গৃহ্যসূত্র বলা হয়। পারস্কর সম্ভবত কাত্যায়ন শ্রৌতসূত্রেরও রচয়িতা কারণ এই সূত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাত্যায়ন এবং সর্বানুক্রমণীয় রচয়িতা অভিন্ন নন। এতে পরিভাষা সম্পর্কে একটি পৃথক অধ্যায়, বিভিন্ন গোষ্ঠীর পিতৃপুরুষের একটি তালিকা এবং কৌকিলী, সৌত্ৰিমণী, পিতৃমেধ ও দীক্ষায়ণ যজ্ঞের মতো কিছু কিছু স্বল্প প্রচলিত অনুষ্ঠানের বিবরণ আছে। বাজসনেয়ী সংহিতা ও শতপথ ব্ৰাহ্মণের সঙ্গে এর সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ; যদিও এমন কিছু অনুষ্ঠান এতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে যা সংহিতায় পাওয়া যায় না, তবু সূত্রটি প্রাগুক্ত সংহিতাকে বিশ্বস্তভাবে অনুসরণ করেছে।

সামবেদের পাঁচটি শ্রৌতসূত্র আমাদের কাছে পৌঁছেছে : ল্যাটায়ন, দ্রাহ্যায়ণ, জৈমিনীয়, আর্যেয়কল্প ও নিদানসূত্র। ল্যাটায়ন ও দ্রাহ্যায়ণ–এই দুটিকেই কৌথুম ও রাণায়নীদের দশটি শ্রৌতসূত্রের তালিকার মধ্যে পাওয়া যায়। এই দুটি গ্রন্থ নিশ্চিতই প্রাচীনতর, যেহেতু নিজেদের শাখায় এগুলি প্ৰথম সূত্র। লাট্যায়ন দশটি প্ৰপাঠকে বিন্যস্ত–প্রতিটি প্ৰপাঠক আবার বারোটি করে কণ্ডিকায় বিভক্ত। সামবেদীয় রচনারূপে এতে প্ৰধানত উদগাতা শ্রেণীর পুরোহিত ও তার সহায়কদের দায়িত্ব এবং সোমযাগে ব্ৰহ্মা শ্রেণীর পুরোহিতদের কর্মপদ্ধতি আলোচিত হয়েছে। এতে কয়েকটি অনুষ্ঠান বিবৃত হলেও এই সব যজ্ঞে গীত মন্ত্রসমূহই প্রধান বিবক্ষিত বস্তু। পঞ্চবিংশ ব্ৰাহ্মণের প্রচুর উদ্ধৃতি এই সূত্রে রয়েছে। বিভিন্ন পরস্পরবিরোধী পরিস্থিতিতে বহু প্রাচীন বিশেষজ্ঞদের নাম উল্লিখিত হওয়ার ফলে এই গ্রন্থের পশ্চাদবর্তী দীর্ঘ ঐতিহ্য সম্পর্কে আমরা অবহিত হই।

দ্রাহ্যায়ণ শ্রৌতসূত্রের রূপটি স্পষ্ট নয়; কারণ এর বত্রিশটি পটলের মধ্যে মাত্র পনেরোটি এখনো পর্যন্ত প্ৰকাশিত হয়েছে। প্ৰতি পটল আবার চার খণ্ডে বিন্যস্ত। মোট সাতটি যজ্ঞ এতে বিবৃত হয়েছে—মূলত এগুলি হল সোমযাগের রূপভেদ। ল্যাটায়ন ও দ্রাহ্যায়ণ একই বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়েছে বলে এবং ভাষারীতির ক্ষেত্রে পারস্পরিক নিবিড় সাদৃশ্যযুক্ত হওয়াতে এদের একটি অভিন্ন গ্রন্থের সামান্য ভোদযুক্ত দুটি শাখা হিসাবে গণ্য করা হয়। অবশ্য, এদের মধ্যে লাট্যায়ন সংবদ্ধতর এবং দ্রাহ্যায়ণে প্ৰাপ্ত অনুষ্ঠানতত্ত্ব অংশ প্রথমোক্ত গ্রন্থে বর্জিত হয়েছে বলে বিশুদ্ধতর পাঠ এতে সংরক্ষিত।

জৈমিনীয় শ্রৌতসূত্র একটি সংক্ষিপ্ত গ্ৰন্থ; এতে মাত্র বিশটি খণ্ড আছে। অগ্নিচয়ন অনুষ্ঠানে গীত সামমন্ত্রগুলি বিবৃত হওয়ার পরেই রয়েছে প্রবর্গ অনুষ্ঠান বিষয়ক একটি পৃথক অংশ মন্ত্ৰ-গানের ক্রম বর্ণনার ক্ষেত্রে জৈমিনীয় বৌধায়নকে অনুসরণ করেছে।

চৌদ্দটি প্রপাঠকে বিন্যস্ত ‘আর্যেয়কল্পে’ ‘মশক কল্পসূত্ৰ’ নামেও পরিচিত; আবার, শেষ তিনটি প্ৰপাঠক নিয়ে গড়ে উঠেছে ক্ষুদ্রসূত্র। এই গ্রন্থের রচয়িতা মশক এবং তা নিশ্চিতই লাট্যায়ন ও দ্রাহ্যায়ণ অপেক্ষা প্রাচীনতর, যেহেতু এই দুটি গ্রন্থের নিকট আর্যেয়কল্প পরিচিত ছিল। এতে যে আটটি যজ্ঞ আলোচিত হয়েছে মূলত সেসব সোমযোগেরই রূপভেদ; এই যজ্ঞগুলিতে গীত সামমন্ত্রের তালিকা ছাড়াও প্ৰায়শ্চিত্তবিষয়ে একটি অংশও পাওয়া যায়। এই গ্ৰন্থ পঞ্চবিংশ ব্রাহ্মণকে নিবিড়ভাবে অনুসরণ করেছে; অবশ্য দ্বিতীয়োক্ত রচনায় যেসব অনুষ্ঠান বিশদভাবে আলোচিত হয়েছে, সেসব এতে বর্জিত হয়ে গেছে। যে গ্ৰামগেয়, আরণ্যগেয়, ঊহ, উহ্যগানগুলি আর্যেয়কল্পে প্রদত্ত সামমন্ত্রের ক্রমকে অনুসরণ করেছে বলে মনে হয়–তাদের মধ্যে অন্তরঙ্গ যোগসূত্র রয়েছে। এই গ্ৰন্থ মোটামুটিভাবে সুসংবদ্ধ, পুনরাবৃত্তির প্রবণতা থেকেও মুক্ত। ক্ষুদ্রসূত্রের নামকরণের সম্ভাব্য কারণ হলো রচনার সংক্ষিপ্ততা; এতে মাত্র তিনটি অধ্যায় আছে। পরবর্তীকালের সামবেদীয় সহায়ক রচনাগুলিতে এটি এই বর্ণনাত্মক নামেই পরিচিত ছিল। ‘উপগ্রন্থসূত্র’ নামক কাত্যায়ণ রচিত ক্ষুদ্রসূত্রের অংশবিশেষে ‘প্ৰতিহার’ নামক সামমন্ত্রের বিশেষ একটি শ্রেণী ব্যাখ্যাত হয়েছে। ভাষাগত বিচারে একে আর্যেয়কল্প অপেক্ষা প্ৰাচীনতর বলে মনে হয়।

দশটি প্ৰপাঠকে বিন্যস্ত নিদানসূত্ৰ’ প্রকৃতপক্ষে আর্যেয়কল্প গ্রন্থের পাঠান্তর; সামবেদের সংহিতা ও ব্রাহ্মণসমূহ এর প্রত্যক্ষ পূর্বসূরী। গৌতম তীর পিতৃমেধসূত্র গ্রন্থে আলোচ্য রচনার যে উদ্ধৃতি দিয়েছেন, তাতে নিদানসূত্রের রচয়িতারূপে পতঞ্জলির নাম উল্লেখিত হয়েছে। রাণায়নীয় বা কৌঘুম শাখার পাঠভেদের সঙ্গে এর কোনো প্ৰত্যক্ষ সম্পর্ক নেই বলে কেউ কেউ মনে করেছেন, এটি ‘ভাল্লবেয়’ শাখার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। বহু ঐতিহাসিক ও সাহিত্যবিষয়ক তথ্য জোগান দিয়েছে বলে রচনাটি কৌতুহলজনক। এর প্রথম অধ্যায়ের বিষয়বস্তু হল বৈদিক ছন্দ। দুটি প্রপাঠকে বিন্যস্ত ‘কল্পনুপদসূত্র’ নামক পরিশিষ্টকে ক্ষুদ্রসূত্রের বিভিন্ন অংশ-সম্পর্কিত ভাষ্য বলে মনে হয়। নিদানসূত্রের নবীনতা ভাষাতাত্ত্বিক সাক্ষ্য থেকেই স্পষ্ট; তবে প্রচলিত পাণ্ডুলিপি বিকৃতিমুক্ত নয়।

‘বৈতান’ ও ‘কৌশিক’ —অথর্ববেদের এই দুটি সূত্রে একটি অসাধারণ ক্রম পরিলক্ষিত হয়; কেননা গৃহসূত্রের বৈশিষ্ট্যযুক্ত কৌশিক সূত্র বৈতানের পূর্ববর্তী। বিভিন্ন লেখকের রচনা হলেও এদের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক লক্ষণীয়। বৈতানসূত্রের রচয়িতা কৌশিকের উপর নির্ভরশীল এবং বেশ কিছু উদ্ধৃতিও চয়ন করেছেন; শাস্ত্ৰ-অংশে আশ্বলায়নের সঙ্গে সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। রচনাটি যদিও শৌনক শাখার অন্তৰ্গত, তবু এটি পৈপ্পালাদের সঙ্গে সম্পর্কিত। বৈতানসূত্রে আটটি অধ্যায় ও তেতাল্লিশটি কণ্ডিকা রয়েছে; রচনার প্রথম শব্দ অনুযায়ী এর এরূপ নামকরণ হয়েছে। পরিভাষা অধ্যায় দিয়ে গ্রন্থের সূত্রপাত; এছাড়া এতে প্রধান যজ্ঞসমূহ, বিশেষত সোমযাগগুলি এবং রাজসূয়, বাজপেয়, সৌত্রামণী, অশ্বমেধ, পুরুষমেধ, সর্বমেধ ও গবাময়ন আলোচিত হয়েছে। রাজাদের উপযোগী বিশেষ অনুষ্ঠানগুলির উপর প্রচুর গুরুত্ব আরোপিত হতে দেখা যায়; কারণ আমরা জানি, অথর্ববেদের পুরোহিত মূলত রাজপুরোহিত। গ্রন্থটি অপেক্ষাকৃত অর্বাচীন; অথৰ্ববেদের স্বীকৃতিলাভের পরে, তবে সম্ভবত গোপথ ব্রাহ্মণের উদ্ভবের পূর্বে এটি রচিত হয়েছিল।

শৌনক শাখার অন্তর্গত কৌশিকসূত্রে প্রায়শ বিকল্প অনুষ্ঠানই বিবৃত হয়েছে; এই গ্রন্থটি অবশ্য যথার্থ শ্রৌতসূত্ৰ-পদবাচ্য নয়। এতে বহু গাৰ্হস্থ্য অনুষ্ঠানও আলোচিত হয়েছে; যেমন, জন্ম ও মৃত্যুসংক্রান্ত এবং ঐন্দ্রজালিক ও ডাকিনীবিদ্যা বিষয়ক অনুষ্ঠান। একে অবশ্য একজনমাত্র লেখকের রচনারূপেও গ্রহণ করা যায় না; আলোচিত বিষয়গুলি বিশ্লেষণ করে আমরা এই স্পষ্ট সিদ্ধান্তে উপনীত হই যে, এটি পরস্পরবিচ্ছিন্ন রচনাংশের একটি সংগ্ৰহ। গোপথ ছাড়াও অন্য একটি ব্ৰাহ্মণ সম্পর্কে এগ্ৰন্থ অবহিত ছিল, অবশ্য সেই ব্ৰাহ্মণটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

বৈতান বা কৌশিক-কোথাও প্ৰায়শ্চিত্ত সম্পর্কিত কোনো অংশ নেই; কারণ, সম্ভবত, প্ৰায়শ্চিত্তসংক্রান্ত নিয়মাবলী ‘অথর্ব-প্ৰায়শ্চিত্তানি’ নামক ছ’টি অধ্যায়ে বিন্যস্ত একটি পৃথক গ্রন্থে সংকলিত হয়েছিল। পরবর্তীকালে তাকে বৈতানের আটটি অধ্যায়ের সঙ্গে সংযুক্ত করে মোট চোদ্দটি অধ্যায়ে সম্প্রসারিত করা হল যাতে সমসংখ্যক অধ্যায়ে বিন্যস্ত কৌশিকসূত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষিত হয়; আনুষ্ঠানিক শিথিলতার উপর অথর্ববেদীয় শ্রৌতসূত্রের গুরুত্ব আরোপ সম্পূর্ণ স্বাভাবিক কারণ আনুষ্ঠানিক বিচূতির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে উপযুক্ত প্ৰায়শ্চিত্তমূলক অনুষ্ঠানের বিধান-দানই ব্ৰহ্মাশ্রেণীর পুরোহিতের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব। চৈনিক ধর্মানুষ্ঠানবিষয়ক পুথি ‘লি খী’র মতো শ্রৌতসূত্রগুলিও যথাযথ নির্দেশ-সহ প্ৰকৃত অনুষ্ঠানের বিবরণ, অনুষ্ঠানের নির্দিষ্ট সময়, কার্যপরিচালকদের নির্বাচন করার নিয়ম, সংখ্যাবিষয়ক বিধি এবং যজ্ঞ আয়োজনের পদ্ধতি, অবস্থান ও উদ্দেশ্যসংক্রান্ত নিয়মাবলী লিপিবদ্ধ করেছে।