০৮. বিবিধ সূত্র (বেদাঙ্গসূত্র)

বিবিধ সূত্র (বেদাঙ্গসূত্র)

প্রধান বেদাঙ্গ গ্রন্থগুলি রচিত হওয়ার পরেও বহুসংখ্যক সহায়ক গ্ৰন্থ প্ৰণীত হয়েছিল; এদের প্রধান বিষয়বস্তু হল প্রকৃত যজ্ঞানুষ্ঠান থেকে উদ্ভূত সমস্যাসমূহ এবং প্রাচীনতর রচনাগুলিতে আলোচিত বিষয়। যথা :–বৌধায়ন, গৌতম ও হিরণ্যকেশী প্রণীত পিতৃমেধসূত্রগুলি, শৌনক, পৈগ্নালাদ, কাত্যায়ন ও মানব শ্ৰাদ্ধকল্পগুলি, আশ্বালায়ন ও বৌধায়ন প্রণীত পরিশিষ্টসমূহ, গোভিলের ‘কর্মপ্ৰদীপ’, গোভিলপুত্রের ‘গৃহ্যসংগ্রহ’; ‘অথৰ্বপরিশিষ্ট’। শৌনকের ‘বৃহদ্দেবতা’ দেবতা ও প্রত্নকথাসমূহের সংক্ষিপ্তসার এবং তাঁর ‘ঋথিধা’ একটি মিশ্রবিষয়যুক্ত অর্বাচীন রচনা। এরূপ সম্পূরক গ্ৰন্থ প্রণয়নের ঐতিহ্য নিরবচ্ছিন্নভাবেই চলছিল; ফলে আমরা বেশ কিছু অনুক্ৰমণী পেয়েছি–যেখানে ঋষি, ছন্দ ও দেবতার নাম এবং গ্রন্থবিভাগের বিস্তুত বিবরণের শ্রেণীবদ্ধ সূচীপত্র রয়েছে। শৌনক ছটি ঋগ্বেদীয় অনুক্রমণীর রচয়িতা এবং কাত্যায়ন বিখ্যাত ‘সর্বানুক্রমণীর প্রণেতা। এই গ্ৰন্থসমূহ বৈদিক ঐতিহ্যের সমাপ্তি সূচিত করছে; এর পরবর্তীকালে যা কিছু রচিত হল, তা মূলত এই ঐতিহ্য থেকে স্বতন্ত্র–পরিবর্তিত সামাজিক পরিস্থিতির উপযোগী, রূপান্তরসাধনের প্রয়োজনে সেসব গ্ৰন্থ প্রচুর পরিমাণ অবৈদিক উপাদান আত্মসাৎ করেছিল।

ছন্দোবদ্ধ রচনা যে চার বা পাঁচ শতাব্দী ধরে ক্রমোন্নতি লাভ করেছিল, বৈদিক ছন্দশাস্ত্ৰও সেসময় ক্রমশ জটিল হয়ে উঠল। এ-বিষয়ে দুটি রচনা পাওয়া যায় ‘নিদানসূত্র’ ও ‘পিঙ্গলছন্দসূত্র’। নিদানসূত্রের প্রথম দশটি প্ৰপাঠক সামবেদের সঙ্গে সম্পর্কিত যেহেতু এখানে উকথ, স্তোম, গান প্রভৃতি সামবেদীয় বিষয়ই মুখ্যত বিবৃত হয়েছে; কারো কারো মতে এই অংশ পতঞ্জলির রচনা। এর ভাষা কৌতুহলজনক কারণ এতে নিহিত ব্যাকরণের চরিত্র কতকটা অদ্ভূত। বৃহদেবতা” গ্রন্থে সেসমস্ত শ্লোক নিদানসূত্র’ থেকে উদ্ধৃত বলে বর্ণিত হয়েছে–সেসব কিন্তু নিদানসূত্রে পাওয়া যায় নি। এই গ্রন্থে বিবৃত সমস্ত ছন্দই বৈদিক। কিন্তু পিঙ্গলছন্দঃসূত্র অর্বাচীন রচনা; এর দুটি পাঠভেদ ঋগ্বেদ ও সামবেদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। বৈদিক ছন্দের পাশাপাশি কিছু কিছু বেদোত্তর অর্থাৎ ধ্রুপদী ছন্দও এতে আলোচিত হওয়ায় গ্রহের অর্বাচীনততার প্ৰমাণ পাওয়া যাচ্ছে; পিঙ্গলকেই এর রচয়িতা বলে বলা হয়।