কমেডি
ট্রাজেডি
সনেট

দ্য উইন্টার’স টেল

দ্য উইন্টার’স টেল
মূল রচনা: উইলিয়াম শেকসপিয়র
পুনর্কথন: মেরি ল্যাম্ব
অনুবাদ: অর্ণব দত্ত

সিসিলির রাজা লিওন্টেস তাঁর সুন্দরী সতীসাধ্বী রানি হারমায়োনিকে নিয়ে সুখে দিন কাটাচ্ছিলেন। লিওন্টেস তাঁর এই মহতী রানিটিকে খুবই ভালবাসতেন। জীবনে তাঁর কিছুরই অভাব ছিল না। কেবল মাঝে মাঝে বাল্যবন্ধু তথা সহপাঠী বোহেমিয়ার রাজা পলিজেনাসকে আরেকবার দেখার এবং তাঁকে স্ত্রীর সামনে উপস্থিত করার ইচ্ছে জাগত লিওন্টেসের মনে। দু’জনে একসঙ্গে বড়ো হয়েছিলেন। পিতার মৃত্যুর পর উভয়কেই নিজ নিজ রাজ্যে ফিরে রাজকার্য হাতে তুলে নিতে হয়। তাই অনেকদিন তাঁদের মধ্যে দেখাসাক্ষাৎ ছিল না। তবে ঘন ঘন তাঁরা পরস্পরের মধ্যে উপঢৌকন, চিঠিপত্র ও রাজদূত আদানপ্রদান ঠিকই করতেন।

অনেক অনুরোধের পর অবশেষে একদিন বোহেমিয়া থেকে সিসিলির রাজসভায় এসে লিওন্টেসের সঙ্গে দেখা করলেন পলিজেনাস।

তাঁর আগমনে লিওন্টেস তো দারুণ খুশি হলেন। রানির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন ছেলেবেলার বন্ধুর। তাঁর সুখ যেন পূর্ণতা লাভ করল প্রিয় বন্ধুর মিলনে। তাঁরা পুরনো দিনের স্মৃতিচারণা করতে লাগলেন। হারমায়োনিকে বলতে লাগলেন তাঁদের পাঠশালার কথা, তাঁদের ছেলেবেলার দুষ্টুমির কথা। হারমায়োনিও তাঁদের কথা শুনে খুব আনন্দ পেলেন।

এইভাবে বেশ কিছুদিন কাটিয়ে পলিজেনাস ঘরে ফেরার তোড়জোড় শুরু করলেন। তখন স্বামীর ইচ্ছানুসারে হারমায়োনি পলিজেনাসকে আরও কিছুদিন থেকে যেতে অনুরোধ করলেন।

আর তারই ফলে ঘনিয়ে এল হারমায়োনির দুঃখের দিন। পলিজেনাসকে থেকে যেতে অনুরোধ করেছিলেন লিওন্টেসও। তাঁর অনুরোধ পলিজেনাস ফিরিয়ে দিলেও, হারমায়োনির মধুর বাক্যের উত্তরে না বলতে পারলেন না তিনি। যাত্রার দিন পিছিয়ে দিলেন আরও কিছুদিন। তার ফলে এক বেয়াড়া ঈর্ষা এসে জুটল। ভেসে গেল লিওন্টেসের এতকালের ন্যায়পরায়ণতা, আদর্শবোধ, বন্ধুপ্রীতি, পত্নীপ্রেম সব। স্বামীর মন রাখতে পলিজেনাসের সেবাযত্নের ভার নিয়েছিলেন হারমায়োনি। অথচ রাজার ঈর্ষা তা দেখে বেড়েই চলল। লিওন্টেস ছিলেন এক সত্যিকারের বন্ধু, এক পত্নীনিষ্ঠ স্বামী; হলেন এক অমানবিক দানব। তাঁর রাজসভায় ক্যামিলো নামে এক লর্ড ছিলেন। তাঁকে ডেকে রাজা জানালেন নিজের সন্দেহের কথা। ক্যামিলোকে আদেশ করলেন, যেন বিষ দিয়ে পলিজেনাসকে হত্যা করা হয়।

ক্যামিলো ছিলেন সজ্জন ব্যক্তি। তিনি জানতেন, লিওন্টেসের এই সন্দেহ সম্পূর্ণ অমূলক। তাই পলিজেনাসকে বিষ দেওয়ার বদলে তাঁর কাছে গিয়ে প্রভুর আদেশের কথা খুলে বললেন ক্যামিলো। দু’জনে স্থির করলেন, তাঁরা সিসিলি রাজ্যের বাইরে পালিয়ে যাবেন। তারপর ক্যামিলোর সাহায্যে পলিজেনাস নিরাপদে তাঁর নিজের রাজ্য বোহেমিয়ায় ফিরে এলেন। সেখানেই বসবাস শুরু করলেন ক্যামিলো। অলংকৃত করলেন ক্যামিলোর রাজসভা। পরিণত হলেন পলিজেনাসের প্রধান মিত্র তথা প্রিয়পাত্রে।

এদিকে পলিজেনাসের পলায়নের সংবাদ লিওন্টেসের ঈর্ষা আরও বাড়িয়ে তুলল। তিনি চললেন হারমায়োনির মহলের দিকে। রানি তখন তাঁর শিশুপুত্র ম্যামিলিয়াসকে সঙ্গে নিয়ে বসেছিলেন। মাকে খুশি করতে ম্যামিলিয়াস তাঁর একটি ভাল-লাগা গল্প শোনাবার উপক্রম করছিল। এমন সময় কক্ষে ঢুকলেন রাজা। ছেলেকে সরিয়ে নিয়ে রানিকে নিক্ষেপ করলেন কারাগারে।

ম্যামিলিয়াস ছিল নেহাত শিশু। কিন্তু মাকে সে খুব ভালবাসত। মাকে অসম্মানজনকভাবে কারাগারে নিক্ষেপ করা হল দেখে সে মনে খুব ব্যথা পেল। আহারনিদ্রা থেকে তার রুচি গেল চলে। স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ল। খুব রোগা হয়ে গেল সে। সবাই ভাবল দুঃখে বুঝি মারাই যাবে ম্যামিলিয়াস।

রানিকে কারাগারে নিক্ষেপ করার পর লিওন্টেস ক্লিওমেনস ও ডিওন নামে দুই সিসিলিয়ান লর্ডকে পাঠালেন ডেলফোসে – রানি অবিশ্বাসিনী কিনা, সে কথা অ্যাপোলোর মন্দিরের ওরাকল থেকে তা যাচাই করে আসার জন্য।

এদিকে কারাগারে রানি এক শিশুকন্যার জন্ম দিলেন। ভারি শান্তি পেলেন তিনি মনে সেই ফুটফুটে মেয়েটিকে দেখে। বললেন, “ওরে আমার ছোট্ট বন্দিনী সোনা, আমিও যে তোর মতোই নিষ্পাপ!”

হারমায়োনির সখি ছিলেন সিসিলিয়ান লর্ড অ্যান্টিগোনাসের স্ত্রী পলিনা। দয়াময়ী মহতী এক নারী ছিলেন তিনি। প্রভুপত্নী কারাগারে একটি শিশুর জন্ম দিয়েছেন শুনেই তিনি ছুটে গেলেন সেখানে। রানির পরিচর্যা করত এমিলিয়া নামে এক দাসী। পলিনা তাকে বললেন, “দোহাই এমিলিয়া, মহারানিকে গিয়ে বলো যে, তিনি যদি আমার উপর বিশ্বাস রেখে মেয়েটিকে আমার হাতে দেন, তাহলে আমি তাকে তার বাবার কাছে নিয়ে যাই। হয়ত এই নিষ্পাপ শিশুটিকে দেখে তাঁর মন গলে যাবে।” এমিলিয়া বললে, “আমি এক্ষুনি গিয়ে বলছি, ঠাকরুন। মহারানি আজই জিজ্ঞাসা করছিলেন, তাঁর কোনো সই মেয়েটাকে মহারাজের কাছে নিয়ে যেতে প্রস্তুত কিনা।” পলিনা বললেন, “আর তাঁকে বোলো, আমি তাঁর সপক্ষে মহারাজের সামনে সওয়াল করব।” এমিলিয়া বললে, “আপনি মহারানির জন্য কত করছেন। ভগবান আপনার ভাল করুন।” এমিলিয়া গেল হারমায়োনির কাছে। হারমায়োনি সানন্দে মেয়েকে ছেড়ে দিলেন পলিনার তত্ত্বাবধানে। তাঁর ভয় ছিল, কেউই বোধহয় মেয়েটিকে তার বাবার কাছে নিয়ে যেতে রাজি হবে না।

পলিনার স্বামী রাজাকে ভয় পেতেন। তিনি পলিনাকে রাজার কাছে যেতে বাধা দিলেন। তৎসত্ত্বেও পলিনা নির্ভয়ে সদ্যোজাত শিশুটিকে নিয়ে গেলেন রাজার কাছে। বাবার পায়ের কাছে মেয়েকে শুইয়ে পলিনা হারমায়োনির সপক্ষে অনেক কথা বললেন। অমানবিক আচরণের জন্য কঠোর তিরস্কার পর্যন্ত করলেন রাজাকে। অনুরোধ করলেন নিষ্পাপ রানি ও শিশুকন্যাটির প্রতি একটু সহৃদয়তা দেখানোর জন্য। কিন্তু পলিনার তেজস্বী প্রতিবাদে রাজার রাগ বাড়ল বই কমল না। অ্যান্টিগোনাসকে আদেশ করলেন, স্ত্রীকে তাঁর চোখের সামনে থেকে নিয়ে যেতে।

যাওয়ার সময় পলিনা মেয়েটিকে রেখে গেলেন তাঁর বাবার পায়ের কাছে। তিনি ভেবেছিলেন, একান্তে মেয়েটিকে দেখে রাজার মনে দয়ার উদ্রেক হলেও হতে পারে।

পলিনার উদ্দেশ্য সৎ ছিল। কিন্তু তিনি ভুল করেছিলেন। তিনি চলে যেতেই নিষ্ঠুর বাপ অ্যান্টিগোনাসকে আদেশ করলেন, মেয়েটিকে সমুদ্রে নিয়ে গিয়ে প্রথম যে নির্জন বেলাভূমি নজরে আসবে সেখানেই মৃত্যুমুখে ফেলে আসতে।

অ্যান্টিগোনাস ক্যামিলোর মতো সজ্জন ব্যক্তি ছিলেন না। তিনি রাজাজ্ঞা পালন করলেন অক্ষরে অক্ষরে। শিশুটিকে তুলে নিলেন একটি জাহাজে। তারপর চললেন কোনো এক নির্জন বেলাভূমির সন্ধানে। প্রথম যে জায়গাটি তাঁর নজরে আসবে, সেখানেই মেয়েটিকে ফেলে আসবেন বলে বদ্ধপরিকর ছিলেন তিনি।

হারমায়োনি অপরাধী – এই ধারণা রাজার মনে বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছিল। তাই তিনি আর ডেলফোসের ওরাকলের পরামর্শপ্রার্থী ক্লিওমেনস ও ডিয়নের প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় রইলেন না। রাজসভার সকল লর্ড ও অভিজাত পুরুষদের সামনে আদালতে রানির বিচারের আদেশ দিলেন তিনি। রানি তখনও গর্ভাবস্থা-উত্তর শারীরিক দুর্বলতা বা মূল্যবান শিশুটিকে হারানোর দুঃখ সামলে উঠতে পারেননি। এমন সময়ে দেশের সকল লর্ড, বিচারপতি ও অভিজাত পুরুষেরা একত্রিত হলেন রানির বিচার করতে। এঁরা সকলেই ছিলেন রানির প্রজা। দুঃখিনী রানি এঁদেরই সামনে দাঁড়ালেন এঁদের বিচারের রায় শোনার জন্য। ঠিক সেই সময়ে ক্লিওমেনস ও ডিয়ন উপস্থিত হলেন সেই সভায়। তাঁদের সঙ্গে ছিল ওরাকলের সিলমোহরবন্দী জবাব। লিওন্টেসের আদেশে ভাঙা হল সিলমোহর। পড়ে শোনানো হল সেই ওরাকল:- “হারমায়োনি নিষ্পাপ, পলিজেনাস নির্দোষ, ক্যামিলো এক সত্যকারের প্রজা, লিওন্টেস এক হিংসুটে ষড়যন্ত্রকারী, যা হারিয়ে গেছে, তা খুঁজে না পাওয়া গেলে, রাজা নিঃসন্তান অবস্থায় দিনযাপন করবেন।” রাজা ওরাকলটিকে গুরুত্ব দিলেন না। বললেন, ওগুলি রানির অনুচরদের অপপ্রচার মাত্র। রাজা বিচারকদের আদেশ করলেন রানির বিচার চালিয়ে যাওয়ার। লিওন্টেস বলছেন, এমন সময়ে একটি লোক এসে তাঁকে জানালো যে, মায়ের বিচার হচ্ছে শুনে দুঃখে ও লজ্জায় অকস্মাৎ প্রাণত্যাগ করেছেন রাজকুমার ম্যামিলিয়াস।

তাঁরই দুঃখে মর্মব্যথী হয়ে প্রিয় সন্তানের প্রাণত্যাগ করেছেন শুনে জ্ঞান হারালেন হারমায়োনি। লিওন্টেসের মনও ভেঙে পড়ল। এইবার দুঃখিনী রানির প্রতি কিছুটা সহানুভূতি জেগে উঠল তাঁর মনে। পলিনা ও অন্যান্য দাসীদের আদেশ করলেন, রানিকে ওখান থেকে নিয়ে গিয়ে সুস্থ করে তুলতে। খানিকবাদে পলিনা ফিরে এসে জানালেন, রানি মারা গিয়েছেন।

রানির মৃত্যুসংবাদ শুনে নিজের কঠোর মনোভাবের জন্য অনুতাপ করতে লাগলেন লিওন্টেস। ভাবলেন, তাঁরই দুর্ব্যবহারে রানির হৃদয় ভেঙে পড়েছিল। রানি নিষ্পাপ – ওরাকলের এই কথায় বিশ্বাস জন্মালো তাঁর। “যা হারিয়ে গেছে, তা খুঁজে না পাওয়া গেলে” – রাজা বুঝলেন কথাটা তাঁর কন্যা সম্পর্কে। রাজকুমার ম্যামিলিয়াস মৃত। এখন তিনি সত্যই নিঃসন্তান। গোটা রাজ্যের মূল্যেও তখন তিনি মেয়েকে ফিরে পেতে রাজি। শোক গ্রাস করল লিওন্টেসকে। এরপর বহু বছর বিষাদে, দুঃখে আর মনস্তাপেই কেটে গেল তাঁর।

এদিকে অ্যান্টিগোনাস শিশু রাজকুমারীকে নিয়ে যে জাহাজে করে চলেছিলেন, এক ঝড়ের কবলে পড়ে সেটি ভিড়ল পলিজেনাসের রাজ্য বোহেমিয়ার উপকূলে। অ্যান্টিগোনাস ঠিক করলেন মেয়েটিকে এখানেই ফেলে যাবেন।

রাজকুমারীকে কোথায় ফেলে এসেছেন, সেই খবর দিতে আর সিসিলি ফেরা হল না অ্যান্টিগোনাসের। তিনি জাহাজে ফেরার আগেই বন থেকে একটা ভালুক বেরিয়ে এসে তাঁকে টুকরো টুকরো করে ফেলল। লিওন্টেসের নিষ্ঠুর আদেশ পালন করার উপযুক্ত সাজা পেলেন তিনি।

হারমায়োনি খুব সাজিয়ে গুজিয়ে মেয়েকে পাঠিয়েছিলেন লিওন্টেসের কাছে। শিশুটির গায়ে ছিল বহুমূল্য বস্ত্র ও রত্নালঙ্কার। অ্যান্টিগোনাস পারডিটা নামটি একটি কাগজে লিখে আটকে দিয়েছিলেন মেয়েটির কাপড়ে। দুর্বোধ্য এই শব্দটি যেন শিশুটির বংশগত আভিজাত্য ও অভাবনীয় দুর্ভাগ্যের জানান দিতে লাগল।

এক মেষপালক হতভাগ্য পরিত্যক্ত শিশুটিকে খুঁজে পেল। সে ছিল দয়ালু লোক। তাই ছোট্ট পারডিটাকে তুলে এনে সে দিল তার বউয়ের হাতে। তার বউ মেয়েটির খুব যত্ন করল। কিন্তু মেষপালক ছিল গরিব। তাই পারডিটার সঙ্গে সে যে ধনরত্নগুলি পেয়েছিল, সেগুলির কথা সে কারোর কাছে প্রকাশ করল না। এলাকা ছেড়ে চলে গেল অন্যত্র। পারডিটার কয়েকটি অলঙ্কার বেচে একটা বড়ো মেষের পাল কিনে ধনী মেষপালক হয়ে বসল। পারডিটাকে সে নিজের মেয়ে হিসেবে মানুষ করতে লাগল। পারডিটাও জানল যে, সে মেষপালকেরই মেয়ে।

ধীরে ধীরে ছোট্ট পারডিটা সুন্দরী কিশোরী হয়ে উঠল। আর পাঁচটা মেষপালকের মেয়ের চেয়ে শিক্ষাদীক্ষা তার বেশি ছিল না বটে, কিন্তু তার শিক্ষাবিহীন মনে রাজরানি মায়ের থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া একটা রাজকীয় ভাব ছিল। তার আচরণ দেখে মনে হত না যে, সে তার পৈত্রিক রাজসভার আবহে বেড়ে ওঠেনি।

বোহেমিয়ার রাজা পলিজেনাসের একমাত্র ছেলে ফ্লোরিজেল একদিন এই মেষপালকের কুটিরের কাছে শিকার করতে এসে মেয়েটিকে দেখতে পেল। পারডিটার রূপ, বিনয় ও রানি-সুলভ আচরণ দেখেই সে তার প্রেমে পড়ে গেল। তারপর ‘ডোরিকলস’ ছদ্মনামে এক সম্ভ্রান্ত ভদ্রলোকের ছদ্মবেশে সে বুড়োর কুটিরে নিত্য আসাযাওয়া শুরু করল। রাজপ্রাসাদ থেকে ফ্লোরিজেলের মাঝেমাঝেই উধাও হয়ে যাওয়া দেখে পলিজেনাস শঙ্কিত হয়ে উঠলেন। তিনি ছেলের পিছনে লোক লাগালেন। এবং অচিরেই জানতে পারলেন যে ছেলে তাঁর এক মেষপালকের সুন্দরী কন্যার প্রেমে পড়েছে।

পলিজেনাস ডাকলেন ক্যামিলোকে। এই সেই বিশ্বস্ত ক্যামিলো যিনি লিওন্টেসের ক্রোধ থেকে একদা তাঁর জীবনরক্ষা করেছিলেন। পলিজেনাস ক্যামিলোকে নিয়ে পারডিটার বাপ হিসেবে পরিচিত সেই মেষপালকের বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন।

পলিজেনাস ও ক্যামিলো ছদ্মবেশে বুড়ো মেষপালকের কুটিরে এসে হাজির হলেন। সবাই সেখানে ভেড়ার লোম ছাঁটার বার্ষিক উৎসব পালন করছিলেন। পলিজেনাস ও ক্যামিলো ছিলেন অপরিচিত আগন্তুক। কিন্তু উৎসবের সময় সবাইকে স্বাগত জানানো হত বলে তাঁদেরও আমন্ত্রণ জানানো হল। তাঁরাও উৎসবে যোগ দিলেন।

সেখানে তখন শুধুই বইছিল আনন্দের স্রোত। পাতা হয়েছিল টেবিল। আয়োজন করা হয়েছিল গ্রাম্য এক ভোজসভার। বাড়ির সামনের ঘাসের উপর কয়েকটি ছেলেমেয়ে নাচছিল। কয়েকটি ছেলে দরজার কাছে দাঁড়ানো এক খেলনাওয়ালার কাছ থেকে রিবন, হাতমোজা আর খেলনা কিনছিল।

এত সব ব্যস্ততার মধ্যেও ফ্লোরিজেল আর পারডিটা এক কোণে বসে মনের আনন্দে গল্প করছিল। খেলাধূলা বা হালকা বিনোদনে তাদের মন ছিল না।

ছদ্মবেশী রাজাকে চেনা তখন তাঁর ছেলের পক্ষেও দুঃসাধ্য। এই সুযোগে রাজা কাছে গিয়ে তাদের কথোপকথন শুনতে লাগলেন। পারডিটার কথাগুলি ছিল সরল ও রাজোচিত। শুনে পলিজেনাস ভারি অবাক হলেন। তিনি ক্যামিলোকে বললেন, “ইতর সমাজে জন্ম নেওয়া কোনো মেয়েকে এমন সুন্দরী হতে দেখিনি। ওর হাবভাব, কথাবার্তা এই পরিবেশের সঙ্গে খাপ খায় না। তা অনেকটা সম্ভ্রান্তবংশীয়দের মতো।”

ক্যামিলো উত্তর দিলেন, “সত্যিই ভারী সুন্দরী মেয়েটি।”

রাজা বুড়ো মেষপালককে জিজ্ঞাসা করলেন, “আচ্ছা, বন্ধু, ওই যে ফরসাপানা ছোঁড়াটি তোমার মেয়ের সঙ্গে গপ্পো করছে, ও কে?” মেষপালক বলল, “ওরা বলে ওর নাম ডোরিকলস। ছোঁড়া বলে, ও নাকি আমার মেয়েকে ভালবাসে। সত্যি বলছি, আমার মেয়েটাও ওকে ভালবাসে। যদি ওই ডোরিকলস ছোঁড়া ওকে বিয়ে করে, তাহলে ওর জন্য আরও কিছু অপেক্ষা করছে।” মেষপালক পারডিটার অবশিষ্ট ধনরত্নের দিকে ইঙ্গিত করল। কিছু অংশ দিয়ে সে মেষের পাল কিনলেও বাকিটা পারডিটার বিয়ের জন্য তুলে রেখেছিল।

পলিজেনাস তার ছেলেকে বললেন, “এই যে, ছোকরা, শোনো! মনে হচ্ছে, কোনো কিছু তোমার মনকে এই ভোজসভা থেকে দূরে নিয়ে গেছে। আমার যখন বয়স অল্প ছিল তখন আমার প্রেমিকাকে আমি নানা উপহার দিতুম। কিন্তু তুমি তো দেখছি, খেলনাওয়ালাকে ডাকলেও না, মেয়েটাকে কিছু কিনেও দিলে না।”

তরুণ রাজকুমার তো জানত না যে, সে তার বাপের সঙ্গে কথা বলছে। সে বলে বসল, “মহাশয়, ওই সব ছোটোখাটো খেলনা ওর প্রাপ্য নয়। যে উপহার পারডিটা চায়, সে আমার হৃদয়ে বদ্ধ রয়েছে।” তারপর পারডিটার দিকে তাকিয়ে সে বলল, “শোনো, পারডিটা, এই প্রাচীন ভদ্রলোক, যিনি নিজেকে একদা প্রেমিক মনে করতেন, এঁরই সামনে আমি তোমাকে আমার মনের কথাটি বলি।” এই বলে সেই বৃদ্ধ আগন্তুককে সাক্ষী রেখে ফ্লোরিজেল পারডিটাকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিল। তারপর পলিজেনাসকে বলল, “আপনার কাছে প্রার্থনা, আমার এই প্রতিশ্রুতির সাক্ষী থাকুন আপনি।”

“প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করো, যুবক,” এই বলে রাজা আত্মপ্রকাশ করলেন। এক ইতর শ্রেণির মেয়ের সঙ্গে নিজের বিয়ের সাক্ষী থাকতে বলার জন্য পলিজেনাস ছেলেকে খুব বকাঝকা করলেন। পারডিটাকে ‘মেষপালকের ঘরের ছেনাল, ভেড়ার খুঁটি’ ইত্যাদি নানা অসম্মানজনক নামে অভিহিত করলেন। ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখলে পারডিটা ও তার বাপকে নিষ্ঠুর মৃত্যুদণ্ডের ভয় দেখালেন।

প্রচণ্ড রেগে সেখান থেকে বেরিয়ে গেলেন রাজা। ক্যামিলোকে বলে দিলেন ফ্লোরিজেলকে নিয়ে আসতে।

এদিকে পলিজেনাসের বকুনি খেয়ে পারডিটার রাজকীয় সত্ত্বা জাগরিত হয়ে উঠল। সে বলল, “আমাদের সম্পর্ক ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আমি আর ভয় পাই না। একবার কি দুই বার আমারও বলতে ইচ্ছে করছিল। ওঁকে বলতে চাইছিলাম, যে স্বার্থশূন্য সূর্য তাঁর প্রাসাদের উপর আলোকবর্ষণ করে, তা আমাদের কুটিরের কাছে মুখ লুকায় না। বরং আমাদের সবাইকে সমানভাবে দেখে।” তারপর দুঃখিতচিত্তে বলল, “কিন্তু আমার নিদ্রাভঙ্গ হয়েছে। আমি রানি হওয়ার বাসনা পোষণ করি না। আমাকে ছেড়ে দিন, মহাশয়, আমি মেষীর দুগ্ধ আহরণ করার পর একটু কাঁদতে চাই।”

দয়ালু ক্যামিলো পারডিটার দার্ঢ্য ও চারিত্রিক ঔচিত্যবোধ দেখে মুগ্ধ হলেন। বুঝলেন বাবা রাজামশাই যাই আদেশ করুন না কেন, তরুণ রাজকুমার সহজে তার প্রেয়সীকে ছেড়ে দেবে না। তাই তিনি প্রেমিকযুগলের বন্ধু হতে চাইলেন। তাঁর মনে একটা চমৎকার পরিকল্পনা ছিল।

ক্যামিলো আগেই জানতে পেরেছিলেন যে, সিসিলির রাজা লিওন্টেস এখন সত্যিই অনুতপ্ত। তাই তিনি তাঁর পুরনো প্রভু ও মাতৃভূমি দর্শনের ইচ্ছা দমন করতে পারলেন না। তিনি ফ্লোরিজেল ও পারডিটাকে তাঁর সঙ্গে সিসিলির রাজসভায় যাওয়ার প্রস্তাব দিলেন। বললেন, যতদিন না তাঁর মধ্যস্থতায় পলিজেনাস তাদের ক্ষমা করে এই বিবাহে সম্মতি দেন ততদিন সেখানে লিওন্টেস তাঁদের রক্ষা করবেন।

একথায় সবাই সানন্দে রাজি হয়ে গেল। ক্যামিলো পলায়নের তোড়জোড় করলেন। বুড়ো মেষপালককেও তাঁদের সঙ্গে নিলেন।

মেষপালক সঙ্গে নিল পারডিটার অবশিষ্ট ধনরত্ন, তার শিশুবয়সের জামাকাপড় আর তার কাপড়ের সঙ্গে যে কাগজটি বাঁধা ছিল সেটি।

নির্বিঘ্ন যাত্রার শেষে ফ্লোরিজেল, পারডিটা, ক্যামিলো ও বুড়ো মেষপালক নিরাপদে লিওন্টেসের রাজসভায় উপস্থিত হলেন। লিওন্টসে স্ত্রী হারমায়োনি ও তার সন্তানকে হারিয়ে তখনও অনুশোচনায় পুড়ছিলেন। তিনি পরম আনন্দে ক্যামিলোকে গ্রহণ করলেন এবং রাজকুমার ফ্লোরিজেলকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানালেন। ফ্লোরিজেল পারডিটার সঙ্গে লিওন্টেসের পরিচয় ঘটাল তার স্ত্রী রূপে। পারডিটাকে দেখে লিওন্টেস আশ্চর্য হয়ে গেলেন তাঁর মৃত রানি হারমায়োনির সঙ্গে পারডিটার চেহারার আশ্চর্য মিল দেখে। তাঁর বেদনা আরেকবার উথলে উঠল। বললেন, মেয়েকে নিষ্ঠুরভাবে নির্বাসিত না করলে, আজ তাঁর এমনই একটি ফুটফুটে মেয়ে থাকত। ফ্লোরিজেলকে বললেন, “আর তোমার বাবার মতো এক নির্ভীক বন্ধুর সাহচর্য ও ভালবাসাও হারাতে হত না আমায়। আহা! আর একবার আমি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চাই।”

রাজা একদিন তাঁর শিশুকন্যাকে হারিয়েছিলেন। আবার পারডিটা রাজার দৃষ্টি আকর্ষণ করল। ব্যাপার দেখে, বুড়ো মেষপালক রাজার মেয়ে হারানো আর তার মেয়ে পাওয়ার সময়টা হিসেব কষে দেখল। তার মনে হল, যে অবস্থায় সে পারডিটাকে পেয়েছিল, তাতে তার রাজকন্যা হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অন্তত তার ধনরত্ন ও অন্যান্য জিনিসপত্র সেই কথাই বলে। সে নিশ্চিত হল যে, পারডিটাই রাজার হারিয়ে যাওয়া সেই মেয়ে।

ফ্লোরিজেল, পারডিটা, ক্যামিলো ও বিশ্বস্ত পলিনার সামনে বুড়ো মেষপালক তার মেয়েটিকে খুঁজে পাওয়ার বৃত্তান্ত বর্ণনা করল। অ্যান্টিগোনাসের মৃত্যুর কথাও বলল। সে তাকে ভালুকের হাতে আক্রান্ত হতে দেখেছিল। মেষপালক শিশুর কাপড়টি দেখাল। পলিনার মনে পড়ল যে, এই কাপড়েই হারমায়োনি মেয়েটিকে রাজার কাছে পাঠিয়েছিলেন। মেষপালক যখন গয়নাগুলি দেখালো, পলিনার মনে পড়ল যে, হারমায়োনি এগুলিই মেয়ের গলায় বেঁধে দিয়েছিলেন। মেষপালক কাগজটি দেখাতে পলিনা তার স্বামীর লেখা চিনতে পারল। সকলে নিঃসন্দেহ হল যে পারডিটাই লিওন্টেসের হারিয়ে যাওয়া মেয়ে। পলিনার মনে তখন একই সঙ্গে স্বামীর মৃত্যুসংবাদের দুঃখ এবং ওরাকল পরিপূর্ণ হওয়া অর্থাৎ, রাজার হারানো উত্তরাধিকার ফিরে পাওয়ার আনন্দ তোলপাড় করতে লাগল। পারডিটাই তাঁর মেয়ে – একথা জানার পর হারমায়োনিকে হারাবার দুঃখ আবার একবার পেয়ে বসল লিওন্টেসকে। অনেকক্ষণ কথা বলতে পারলেন না তিনি। শুধু বলে গেলেন, “আহা, তোর মা, তোর মা!”

এই আনন্দবেদনাঘন মুহুর্তে ছেদ টানলেন পলিনা। তিনি লিওন্টেসকে বললেন, জুলিও রোমানো নামে এক অদ্বিতীয় শিল্পী তাঁর বাড়িতে রানির একটি মূর্তি বানিয়েছেন। সেই মূর্তি দেখলে রাজার মনে হবে, যেন স্বয়ং রানিই দাঁড়িয়ে রয়েছেন। খুব ভাল লাগবে তাঁর। একথা শুনে সকলেই তখন চললেন মূর্তিটি দেখতে। রাজা তাঁর হারমায়োনির প্রতিরূপ দেখার জন্য উৎসুক ছিলেন। পারডিটা তার মায়ের মূর্তি দেখার জন্য ব্যগ্র ছিল। মাকে সে তো কোনোদিন দেখেইনি।

পর্দা সরালেন পলিনা। মূর্তিটি একেবারে হারমায়োনির অনুরূপ। দেখে রাজার দুঃখ জেগে উঠল আর একবার। তিনি বাক্যহারা স্থবির হয়ে রইলেন অনেক ক্ষণ।

পলিনা বললেন, “আপনার স্তব্ধতা আমাকে আপ্লুত করছে, মহারাজ। একেবারে আপনার রানির মতো দেখাচ্ছে, তাই নয় কী?”

তখন রাজা বললেন, “আহা, যেমনটি ওকে প্রথম দেখেছিলুম, সেই রকমভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু পলিনা, হারমায়োনিকে একটু বয়স্ক দেখাচ্ছে, ও তো এতটা বয়স্ক ছিল না।” পলিনা বলল, “শিল্পীর দক্ষতা তো এখানেই। তিনি এমনভাবে এই মূর্তি বানিয়েছেন, যাতে এটি দেখলে হারমায়োনি আজ কেমন দেখতে হতেন, তা বোঝা যায়। কিন্তু মহারাজ, এবার পর্দা ফেলব, নইলে আপনি ভেবে বসবেন, মূর্তিটি এবার নড়াচড়া করবে।”

তখন রাজা বললেন, “পর্দা ফেলো না। আহা, আমার মরণ হয় না কেন! দ্যাখো, ক্যামিলো, তোমার মনে হচ্ছে না যে, মূর্তিটার শ্বাস পড়ছে। মনে হচ্ছে না, ওর চোখের পাতার মধ্যে কেমন একটা প্রাণ রয়েছে।” পলিনা বলল, “মহারাজ, আমাকে পর্দা ফেলতেই হচ্ছে। আপনি অত্যন্ত বিহ্বল হয়ে পড়েছেন। আপনি উন্মাদ হয়ে যাবেন।” লিওন্টেস বললেন, “পলিনা, লক্ষ্মীটি, কুড়ি বছরের কথা আমাকে ভাবতে দাও। আজও মনে হয়, ওর থেকে একটা হাওয়া আসছে। আহা, কোন ছেনিতে ওমন নিঃশ্বাস ফুটে উঠেছে! লোকে যা বলে বলুক, আমি ওকে চুম্বন করব।” পলিনা বলে উঠল, “না মহাশয় না, ওর ঠোঁটের উপর রং এখনো কাঁচা রয়েছে। আপনার ঠোঁট লেগে ওই তেলরং নষ্ট করে দেবে। পর্দা ফেলি?” লিওন্টেস বললেন, “পর্দা ফেলবে? কী করে এই কুড়ি বছরের উপর পর্দা ফেলবে তুমি?”

পারডিটা হাঁটু গেড়ে বসে চুপচাপ মুগ্ধভাবে তার অপূর্ব সুন্দরী মায়ের মূর্তিটি দেখছিল। এবার সে বলল, “এখানে বসে মায়ের মূর্তিটির দিকে তাকিয়ে থাকব।”

পলিনা বললেন, “বিহ্বলতা কাটিয়ে উঠুন, আমাকে পর্দা ফেলতে দিন। আর তা না হলে, আরও আশ্চর্য কিছু দেখার জন্য প্রস্তুত থাকুন। আমি এই মূর্তিটাকে জীয়ন্ত করে তুলতে পারে। ওকে আপনাআপনি বেদি থেকে নামিয়ে আনতে পারি। ওকে দিয়ে আপনার হাত ধরাতে পারি। না, আপনি যদি ভাবেন যে, আমি কোনো অশুভ শক্তির সাহায্যে এমনটা করতে চাইছি, তাহলে আপনি ভুল ভাববেন।”

হতবাক রাজা বললেন, “তুমি ওকে দিয়ে যা করাবে, আমি তা-ই প্রাণভরে দেখব। যা বলাবে, তাই হৃদয় ভরে শুনব। শুধু ওকে জীয়ন্ত করে কথা বলাও।”

পলিনা সবকিছু প্রস্তুত করেই রেখেছিলেন। তিনি মৃদুস্বরে গান ধরলেন। এই গান তিনি এই উদ্দেশ্যেই বেঁধে রেখেছিলেন। তাঁর স্পর্শে দর্শকদের বেবাক করে মূর্তিটা নেমে এল বেদি থেকে। জড়িয়ে ধরল লিওন্টেসের গলা। কথা বলল। স্বামী আর নবলব্ধ সন্তান পারডিটার জন্য প্রার্থনা করতে লাগল।

মূর্তিটা যে লিওন্টেসের গলা জরিয়ে ধরে তার স্বামী ও সন্তানের জন্য প্রার্থনা করল, তাতে সন্দেহ রইল না। সন্দেহ রইল না যে, মূর্তিটাই স্বয়ং হারমায়োনি, অকৃত্রিম, জীবন্ত রানি।

পলিনা মিথ্যে বলেছিলেন। হারমায়োনি মারা যাননি। পলিনা রাজাকে রানির মৃত্যুসংবাদ দিয়ে রানির প্রাণরক্ষা করতে চেয়েছিলেন। তারপর থেকে হারমায়োনি দয়ালু পলিনার কাছেই থেকে যান। লিওন্টেস সেকথা ঘূণাক্ষরেও জানতে পারেননি। তাঁর প্রতি কৃত অবিচার রানি অনেক কাল আগেই ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। কিন্তু ক্ষমা করতে পারেননি তাঁর শিশুকন্যার উপর প্রদর্শিত নিষ্ঠুরতা। তাই পারডিটাকে খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত তিনি আত্মগোপন করে থাকেন।

মৃত রানি ফিরে পেলেন প্রাণ। ফিরে এল হারানো মেয়ে। লিওন্টেসের বহুকালের দুঃখ ঘুচে তখন শুধুই আনন্দ আর আনন্দ।

চারিদিকে সবাই তাঁদের অভিনন্দন জানায়। নানা স্নেহবাক্য বলে। আনন্দিত পিতামাতা রাজকুমার ফ্লোরিজেলকে ধন্যবাদ জানায়, তাদের মেয়েকে ইতর শ্রেণির লোকেদের মধ্যে পেয়েও তাকে ভালবাসার জন্য। ক্যামিলো ও পলিনাও খুব খুশি হয়। খুশি হয় তাদের সেবার এমন মধুর ফল দেখে।

এই আশ্চর্য অভাবনীয় আনন্দময় পরিবেশে প্রাসাদে প্রবেশ করেন রাজা পলিজেনাস।

পলিজেনাস তাঁর ছেলে আর ক্যামিলোকে দেখতে না পেয়ে ধরে নেন যে, পলাতকেরা এখানে এসেছে। কারণ ক্যামিলো অনেক দিন ধরেই সিসিলিতে ফিরতে চাইছিলেন। পলিজেনাস দ্রুত তাঁদের পিছু নেন। শেষে এখানে যখন আসেন, সেই মুহুর্তটি লিওন্টেসের জীবনের সবচেয়ে আনন্দঘন ক্ষণ।

পলিজেনাসও আনন্দ উৎসবে যোগ দিলেন। ক্ষমা করে দিলেন বন্ধুর অন্যায় ঈর্ষা ও প্রতিহিংসাপরায়ণতা। ছেলেবেলার বন্ধুত্ব আর একবার ফিরে পেলেন দু’জনে। পারডিটার সঙ্গে ছেলের বিয়েতে তাঁর অমত হওয়ার ভয়ও দূর হল। কারণ পারডিটা তখন আর ‘ভেড়ার খুঁটি’ নয়, বরং সিসিলির রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকারিণী।

এভাবে আমরা দেখলাম, বহুকালের দুঃখিনী হারমায়োনির তিতিক্ষার জয়। তিনি হলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ রানি ও সবচেয়ে সুখী মা। এই মহীয়সী নারী বহুকাল লিওন্টেস ও পারডিটার সঙ্গে সুখে কালাতিপাত করেছিলেন।

[কৃতজ্ঞতা: অর্ণব দত্ত, http://bangabharati.wordpress.com]

1 Comment
Collapse Comments
পর্দা করা ফরজ September 27, 2022 at 10:11 am

পড়লাম

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *