১১. শারমিনকে একটা চেয়ারে উঁচু করে

শারমিনকে একটা চেয়ারে উঁচু করে বসানো আছে। তার হাত-পা-শরীর বেল্ট দিয়ে বাঁধা। মাথায় একটা হেলমেট পরানো আছে, সেখান থেকে অসংখ্য তার বের হয়ে এসেছে। ঘর বোঝাই যন্ত্রপাতি, সেখান থেকে একটা চাপা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। শারমিনের সামনে একটা বড় মনিটর, সেখানে অসংখ্য নকশা এবং সংখ্যা খেলা করছে।

শারমিনকে সকাল থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। তার মস্তিষ্কের ত্রিমাত্রিক একটা ছবি নেওয়া হয়েছে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে তার মস্তিষ্কের প্রায় প্রতিটি কোষ, প্রতিটি সিনাঙ্গের তথ্য নেওয়া হয়েছে। সে যখন মস্তিষ্ক ব্যবহার করে, তখন সেখানে কী পরিমাণ অক্সিজেন যায়, মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশে কী পরিমাণ তাপমাত্রার জন্ম নেয়, এইমাত্র সেই পরীক্ষাটি শেষ করা হয়েছে। দাড়ি-গোঁফের জঙ্গল মানুষটি বলল, আমি যে রকম আশা। করেছিলাম, ঠিক তা-ই। মেয়েটার মস্তিষ্কে অস্বাভাবিক অক্সিজেন খরচ হয়। সাধারণ মানুষের মস্তিষ্কে এ রকম অক্সিজেন খরচ হলে সেটা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা।

নীল চোখের মানুষটি বলল, দেখতেই পাচ্ছ, এটা সাধারণ মস্তিষ্ক নয়। এটা যে হওয়া সম্ভব, আমি নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না।

কম কথা বলে মানুষটি ভারী গলায় বলল, আমাদের প্রতি নিশ্চয়ই ঈশ্বরের এক ধরনের করুণা আছে। তা না হলে আমরা কেমন করে এই মেয়েটিকে পেলাম। অন্য কেউও তো একে পেতে পারত!

দাড়ি-গোঁফের জঙ্গল মানুষটি বলল, এই মেয়েটির শরীরের প্রত্যেকটা কোষ আমরা ক্লোন করার জন্য মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করতে পারি।

হ্যাঁ। মেয়েটার মস্তিষ্কের টিস্যু বিক্রি করতে পারি প্রতিগ্রাম বিলিয়ন। ডলারে!

আর আমরা স্ক্যান করে যেটা পেয়েছি, সেটা?

সেটা আমরা কাউকে দেব না।

নীল চোখের মানুষটি বলল, কাউকে না?

না। এনডেভারকেও না?

এনডেভারকে দিতে হবে, আমরা কোথায় সেই চুক্তি করেছি? আমাদের চুক্তি সাধারণ মানুষের মস্তিষ্কে ইমপ্ল্যান্ট বসিয়ে ইন্টারফেস তৈরি করার—এ রকম একটি জিনিয়াসের মস্তিষ্কে এনালাইসিসের জন্য কোনো চুক্তি হয়নি। এনডেভার যদি চায়, তাহলে তাদের নতুন করে আমাদের সাথে চুক্তি করতে হবে।

কম কথা বলে মানুষটি বলল, তোমার কথা শুনলে বব লাস্কি খুব খুশি হবে মনে হয় না!

দাড়ি-গোঁফের জঙ্গল বলল, তোমার বব লাস্কি এখন আমাদের কাছে। একটা জঞ্জাল ছাড়া আর কিছু নয়! তাকে খুশি রাখার দায়িত্ব আমার না।

নীল চোখের মানুষটি বলল ঠিক আছে, তাহলে কাজ শুরু করে দেওয়া যাক।

দাড়ি-গোঁফের জঙ্গল মাথা চুলকে বলল, আমাদের সমস্যা হচ্ছে, এই মেয়ের সঙ্গে কথা বলা। আমাদের কথা বোঝে না। যখন ভয় পাওয়ার কথা, নয়, তখন ভয় পেয়ে বসে থাকে!

হ্যাঁ, ইউনিভার্সিটির মাস্টার আর ওই সাংবাদিক মেয়েটাকে ধরে এনে এখানে বেঁধে রাখলে আমাদের কথাবার্তা অনুবাদ করতে পারত।

মানুষগুলো তখনো জানে না, রাফি আর ঈশিতা ঠিক তখন চুপি চুপি তাদের কাছেই এসেছে।

 

পায়ের শব্দ শুনে রাফি আর ঈশিতা ঠিক তখন চুপি চুপি বা দিকের একটা ছোট করিডরে ঢুকে গেল। করিডর ধরে একজন নার্স তার জুতার শব্দ তুলে হেঁটে চলে গেল। দুজন তখন আবার বের হয়ে সতর্কভাবে হাঁটে। ঠিক কোথায় শারমিন আছে, তারা জানে না। ঠিক কীভাবে তাকে খুঁজে বের করতে হবে, কিংবা খুঁজে বের করলেও ঠিক কীভাবে তাকে মুক্ত করবে, সেটাও তারা জানে না। তাদের হাতে এখন একটা সত্যিকারের অস্ত্র আছে, সেটা দিয়ে কাউকে জিম্মি করে কিছু একটা করা যায় কি না, সেটাই তাদের লক্ষ্য।

করিডর ধরে হেঁটে তারা কোনো কিছু খুঁজে পেল না এবং ঠিক তখন একজন বিদেশি মেয়ের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। রাফির হাতে রিভলবার এবং দুজনের শরীরে রক্তের ছোপ, তাদের চেহারায় একটা বেপরোয়া ভাব, বিদেশি মেয়েটি হকচকিয়ে গেল। হয়তো আর্তচিৎকার করে উঠত, রাফি সেই সুযোগ দিল না, রিভলবারটা মাথায় ঠেকিয়ে বলল, খবরদার, টু শব্দ করবে না।

মেয়েটি ভয়ে ভয়ে বলল, আমি কিছু জানি না। আমি কিছু করিনি।

আমি জানি, তুমি কিছু করনি, কিন্তু তুমি কিছু জানো না, সে ব্যাপারে আমি এত নিশ্চিত নই। গণিতের সেই প্রডিজি মেয়েটা কোথায়?

গণিতের কোন মেয়েটা?

অসাধারণ প্রতিভাবান সেই মেয়েটা, যাকে তোমরা তুলে এনেছ। মস্তিষ্ক কেটেকুটে নেওয়ার চেষ্টা করছ।

বিদেশি মেয়েটি কাঁপা গলায় বলল, বিশ্বাস করো, আমি এ সম্পর্কে কিছুই জানি না।

তুমি কি বব লাস্কিকে চেনো?

চিনি।

ঠিক আছে, আমাদের তাহলে বব লাস্কির কাছে নিয়ে যাও। খবরদার, কোনো রকম হ্যাংকি-প্যাংকি করবে না।

করব না। কোনো রকম হ্যাংকি-প্যাংকি করব না। বিশ্বাস করো।

 

বিদেশি মেয়েটি কয়েক মিনিটে তাদের বব লাস্কির অফিসে নিয়ে গেল। রাফি লাথি দিয়ে অফিসের দরজাটি খুলে রিভলবার তুলে চিৎকার করে বলল, হাত ওপরে তোলো, বব লাস্কি।

বিশাল একটা টেবিলের সামনে বসে থাকা বব লাস্কি হতচকিত হয়ে তাদের দিকে তাকাল। তার চোখে অবিশ্বাস। রাফি চিৎকার করে বলল, হাত তোলো আহম্মক। না হলে এই মুহূর্তে আমি গুলি করব।

বব লাস্কি আহাম্মক নয়, তাই সে এবার হাত ওপরে তুলল। রাফির কণ্ঠস্বরের তীব্রতা সে টের পেয়েছে।

দুই হাত ওপরে তুলে বের হয়ে এসো।

বব লাস্কি দুই হাত ওপরে তুলে বের হয়ে এল। রাফির কাছাকাছি এসে বলল, ইয়াং ম্যান। আমরা নিশ্চয়ই কোনো এক ধরনের সমঝোতায় আসতে পারি।

কথার মাঝখানে প্রচণ্ড ধমক দিয়ে রাফি তাকে থামিয়ে দেয়, খবরদার, কথা বলবে না। খুন করে ফেলব আমি। শারমিনের কাছে নিয়ে যাও আমাদের। দশ সেকেন্ড সময় দিলাম আমি।

বব লাস্কি বলল, ঠিক আছে, নিয়ে যাচ্ছি আমি। কিন্তু দশ সেকেন্ডে তো সম্ভব নয়।

রাফি হুঙ্কার দিয়ে বলল, আমি কোনো কিছু পরোয়া করি না। দরকার হলে তুমি দৌড়াও। দৌড়াও! ডবল মার্চ!

বব লাস্কি আর কথা বলার সাহস করল না। লম্বা লম্বা পা ফেলে হাঁটতে শুরু করে। সে এখনো বুঝতে পারছে না, দাবার চালটি কেমন করে উল্টে গেল।

করিডর ধরে সোজা হেঁটে গিয়ে বব লাস্কি ডান দিকে ঢুকে গেল, সেখান

আমার বহর দিয়ে সিড়ি দিয়ে নেমে বাঁ দিকে একটা আলোকোজ্জ্বল ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে বলল, এইটা সেই ঘর।

শারমিন এখানে?

হ্যাঁ।

দরজা খোলো।

বব লাস্কি ইতস্তত করতে থাকে। রাফি হুঙ্কার দিয়ে বলল, আমি বলছি, দরজা খোলো।

বব লাস্কি দরজায় গোপন সংখ্যা প্রবেশ করানোর সঙ্গে সঙ্গে খুট করে দরজা খুলে যায়। রাফি লাথি দিয়ে দরজা খুলে বব লাস্কিকে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়।

ঘরের ভেতর চারজন মানুষ মাথা ঘুরিয়ে তাকিয়ে হতবাক হয়ে গেল। ঘরের এক কোনায় একটা চেয়ার, সেখানে নানা রকম স্ট্র্যাপ দিয়ে শারমিনকে বেঁধে রাখা হয়েছে। তার মাথায় একটা হেলমেট, সেখান থেকে অসংখ্য তার বের হয়ে আসছে। ঈশিতা ও রাফিকে দেখে শারমিন ড়ুকরে কেঁদে উঠে বলল, ঈশিতা আপু! আমাকে এরা মেরে ফেলবে!

ঈশিতা বলল, না শারমিন, তোমাকে কেউ মারতে পারবে না। আমরা তোমাকে ছুটিয়ে নিতে এসেছি। ঈশিতা শারমিনের কাছে গিয়ে তার বাঁধনগুলো খুলতে থাকে।

রাফি বব লাস্কিকে ধাক্কা দিয়ে অন্য মানুষগুলোর দিকে ঠেলে দিয়ে বলল, খবরদার, কেউ নড়বে না।

নীল চোখের মানুষটি বলল, যদি নড়ি, তাহলে কী করবে?

গুলি করে দেব।

নীল মানুষটি শব্দ করে হেসে বলল, তুমি আগে কখনো কাউকে গুলি করেছ?

রাফি হিংস্র গলায় বলল, আমি এখন তোমার সঙ্গে সেটা নিয়ে কথা বলতে চাই না।

নীল চোখের মানুষটি হেসে বলল, অবশ্যই তুমি সেটা নিয়ে কথা বলতে চাইবে না। কারণ, সেটা নিয়ে কথা বললে দেখা যাবে, তুমি মানুষ। তো দূরে থাকুক, তুমি হয়তো কখনো একটা মশাও মারনি! রক্ত দেখলেই হয়তো তোমার নার্ভাস ব্রেক ডাউন হয়ে যায়! কাজেই তুমি হয়তো কোনো না কোনোভাবে একটা রিভলবার জোগাড় করে ফেলেছ, কিন্তু সেখানে ট্রিগার টানাটা তোমার জন্য এত সোজা নয়।

রাফি বুঝতে পারে, এ মানুষটি যা বলছে, তার প্রতিটি কথা সত্যি। সে রিভলবার দিয়ে ভয় দেখাচ্ছে সত্যি, কিন্তু যখন প্রয়োজন হবে, তখন সে গুলি করতে পারবে না। কিন্তু এটি তো কখনোই তাদের বুঝতে দেওয়া যাবে না। বব লাস্কিকে যে রকম ভয় দেখিয়ে এখানে নিয়ে এসেছে, এদেরও ঠিক সেভাবে ভয় দেখাতে হবে। রাফি তাই চিৎকার করে হিংস্র মুখে বলল, খবরদার! একটা বাজে কথা বলবে না। যে যেখানে আছ, সে সেখানেই হাত তুলে দাঁড়াও।

নীল চোখের মানুষটি বলল, আমি হাত তুলছি না। দেখি, তুমি আমাকে গুলি করতে পার কি না।

রাফি আবার চিল্কার করে বলল, তোলো হাত। না হলে গুলি করে দেব।

করো গুলি। বলে নীল চোখের মানুষটি এক পা এগিয়ে এসে বলল, করো।

রাফি বুঝতে পারল, সে হেরে যাচ্ছে, মানুষটি তার দিকে এগিয়ে আসতে থাকবে এবং সে কিছুতেই তাকে গুলি করতে পারবে না।

কিন্তু কিছুতেই সে হেরে যেতে পারবে না। কিছুতেই না। সে হিংস্র গলায় বলল, খবরদার! আর কাছে আসবে না।

নীল চোখের মানুষটি মধুরভাবে হাসল। বলল, এই যে আরও কাছে এসেছি। কী করবে তুমি? গুলি করবে? করো।

রাফি ভাঙা গলায় আবার চিৎকার করতে যাচ্ছিল, তখন নীল চোখের মানুষটি শব্দ করে হেসে ফেলল। বলল, শোনো ছেলে, আমি তোমাকে দেখেই বুঝতে পারছি, তুমি আসলে জীবনে হাতে কখনো কোনো রিভলবার ধরনি। তুমি যেভাবে রিভলবারটা ধরেছ, এভাবে ধরে গুলি করলে গুলি টার্গেটে লাগবে না, ওপর দিয়ে চলে যাবে। দুই হাতে ধরতে হয়, আরেকটু নিচু করে ধরতে হয়। তা ছাড়া রিভলবারে সেফটি ক্যাচ বলে একটা জিনিস থাকে, সেটা ঠিক করে না নিলে গুলি বের হয় না। তুমি ট্রিগার টেনে দেখো, কোনো গুলি বের হবে না।

রাফি ট্রিগার টেনে দেখার চেষ্টা করল না। অবাক হয়ে নীল চোখের মানুষটির দিকে তাকিয়ে রইল। নীল চোখের মানুষটি এতক্ষণ স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল, সেই চোখে ছিল এক ধরনের উত্তেজনা। হঠাৎ করে সেই চোখ দুটির উত্তেজনাও নিভে যায়, তাকে কেমন জানি বিষণ্ণ দেখায়। মানুষটি ক্লান্ত গলায় বলল, এই ছেলে, তুমি আসলে খুব বড় নির্বোধ। তুমি যখন এই ঘরে ঢুকেছ, ঠিক তখন আমি অ্যালার্মে চাপ দিয়েছি। সিকিউরিটির লোকজন আসছে, যতক্ষণ এসে হাজির না হচ্ছে, আমি ততক্ষণ তোমাকে একটু ব্যস্ত রাখতে চেয়েছিলাম, আর বেশি কিছু নয়। ওরা এসে গেছে।

মানুষটার কথা শেষ হওয়ার আগেই সশব্দে দরজাটা খুলে যায় এবং হুঁড়মুড় করে ভেতরে কয়েকজন মানুষ ঢোকে। তাদের সবার হাতে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র। কিছু বোঝার আগেই তারা রাফিকে জাপটে ধরে ফেলল এবং তাকে নিচে ফেলে দিয়ে তার হাতটা উল্টো দিকে ভাঁজ করে চেপে ধরে। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় রাফি চিৎকার করে ওঠে। রাফি শুনতে পেল, বব লাস্কি চিৎকার করে। বলল, মেরে ফেলো! মেরে ফেলো এই দুই আহাম্মককে।

রাফি তার কানের নিচে শীতল একটা ধাতব স্পর্শ অনুভব করল। সাথে সাথে সে একজন অনুভূতিহীন মানুষে পরিণত হয়ে যায়। তার ভেতর ভয় ভীতি, দুঃখ-বেদনা কোনো অনুভূতিই নেই। সে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গুলির জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।

ঠিক তখন দাড়ি-গোঁফের জঙ্গল মানুষটি বলল, এক সেকেন্ড। মারতেই যদি হয়, ল্যাবের ভেতরে নয়, বাইরে। খুনোখুনি দেখে প্রডিজি মেয়েটার উল্টো প্রতিক্রিয়া হতে পারে। আমাদের এক্সপেরিমেন্টের সমস্যা হবে।

রাফি অনুভব করল, ধাতব শীতল নলটি তার কানের নিচ থেকে সরে যাচ্ছে। কেউ একজন তাকে টেনে সোজা করে। রাফি বুকের ভেতর আটকে থাকা নিঃশ্বাসটা বের করে ঘরের ভেতর তাকাল। দুজন মানুষ ঈশিতাকে দুই পাশ থেকে ধরে রেখেছে। কাছেই একটা চেয়ারে শারমিন স্ট্র্যাপ দিয়ে বাঁধা, সে হতচকিত হয়ে তাকিয়ে আছে, তার চোখ থেকে ঝরঝর করে পানি ঝরছে।

দাড়ি-গোঁফের জঙ্গল মানুষটি বলল, এ দুজনকে কয়েক মিনিট এখানে রাখো। এরা আমাদের এক্সপেরিমেন্টটা দেখে যাক।

বব লাস্কি বলল, এদের দেখিয়ে কী লাভ?

কোনো লাভ নেই। সবকিছুই মানুষ লাভের জন্য করে, কে বলেছে? তারা যে বাচ্চাটিকে বাঁচানোর জন্য এত ঝামেলা করছে, আমরা সেই বাচ্চাকে দিয়ে কী করতে পারি, তার একটা ধারণা নিয়ে ঈশ্বরের কাছে ফেরত যাক।

বব লাস্কি বলল, তোমার পূর্বপুরুষ নিশ্চয়ই নাৎসি কনসেনট্রেশন। ক্যাম্পে কাজ করত। মানুষকে অত্যাচার করে তুমি অন্য রকম আনন্দ পাও। দাড়ি-গোঁফের জঙ্গল মানুষটি আনন্দে হা হা করে হেসে বলল, এই যে মাস্টার সাহেব ও সাংবাদিক সাহেব, আমাদের এই যন্ত্রটার নাম ট্রান্সকিনিওয়াল ইন্টারফেস। এটা মানুষের মস্তিষ্কের মধ্যে হাই ফ্রিকোয়েন্সির ম্যাগনেটিক ফিল্ড দিতে পারে। দেখা গেছে, এটা দিয়ে মানুষের মস্তিষ্ককে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আমরা আমাদের সব টেস্ট করেছি, এখন এই টেস্ট করা বাকি। আমরা এখন এই বাচ্চাটির মাথার নির্দিষ্ট স্থানে খুব হাই ফ্রিকোয়েন্সির ম্যাগনেটিক ফিল্ড দেব। আমরা তার অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব এবং সবচেয়ে বড় কথা, তার গাণিতিক ক্ষমতাটাকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারব।

রাফি আর ঈশিতা কোনো কথা বলল না। শারমিন কাঁদতে কাঁদতে বলল, স্যার, ঈশিতা আপু। কী বলছে এ মানুষগুলো?

রাফি কী বলবে বুঝতে পারল না। মিথ্যা সান্ত্বনা দিতে পারে, কিন্তু দিয়ে কী লাভ?

দাড়ি-গোঁফের জঙ্গল মানুষটি বলল, অক্সিজেন সাপ্লাই ঠিক আছে?

হ্যাঁ, আছে।

অক্সিজেন-নাইট্রোজেনের অনুপাত?

চব্বিশ আর ছিয়াত্তর। মানুষটি হঠাৎ থেমে বলল, কিন্তু—

কিন্তু কী?

খুবই বিচিত্র। আমরা মিথেনের একটা লাইন দেখছি।

কীসের লাইন?

মিথেনের। খুবই কম। কিন্তু নিশ্চিত, মিথেনের লাইন।

কী বলছ তুমি? আমাদের এই স্পেকট্রামে মিথেনের লাইন থাকার অর্থ কী, তুমি জানো?

জানি। এর অর্থ পুরো বিল্ডিং মিথেন দিয়ে বোঝাই, সেখান থেকে লিক করে এখানে ট্রেস অ্যামাউন্ট দেখা যাচ্ছে।

দাড়ি-গোঁফোর জঙ্গল মানুষটি বলল, হ্যাঁ। এটা সম্ভব নয়। এখানে মিথেন আসার কোনো উপায় নেই। নিশ্চয়ই মাস স্পেকট্রোমিটারটা ঠিক করে কাজ করছে না।

নিশ্চয়ই তা-ই। সবাই একসঙ্গে মাথা নাড়ে। শুধু রাফি বুঝতে পারল, কী ঘটেছে। মাজু বাঙালি এসে যন্ত্রপাতির ঘরগুলোয় অক্সিজেন-মিথেন দিয়ে বোঝাই করেছে। এখন দরকার শুধু একটা স্পার্ক। তাহলেই প্রচণ্ড বিস্ফোরণে এনডেভারের একটা অংশ উড়ে যাবে। উত্তেজনায় রাফির বুক ধক ধক করে শব্দ করতে থাকে।

দাড়ি-গোঁফের জঙ্গল মানুষটি কয়েকটা যন্ত্রের সুইচ অন করে দিয়ে বলল, আমরা শুরু করছি।

কোনটা দিয়ে শুরু করবে?

সোজা কিছু দিয়ে শুরু করি। ঘুম।

ঠিক আছে। মানুষটি একটা নব ঘুরিয়ে বলল, নাইনটি থ্রি গিগা।

চমৎকার।

এমপ্লিফুড অপটিমাল।

চমৎকার।

মেয়েটা এখন শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়বে।

সবাই শারমিনের দিকে তাকাল। শারমিন চোখ বড় বড় করে তীব্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সে মোটেই ঘুমিয়ে পড়েনি।

শারমিন মানুষগুলোর কথা বুঝতে পারছিল না, কিন্তু এক-দুটি শব্দ থেকে অনুমান করছিল, তাকে দিয়ে কোনো একটা পরীক্ষা করাবে। নিশ্চয়ই ভয়ংকর কোনো পরীক্ষা। পরীক্ষাটি কী, সে বুঝতে পারছিল না, কিন্তু সে প্রস্তুত হয়ে রইল। হঠাৎ করে তার চোখে ঘুম নেমে আসতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে শারমিন বুঝে যায়, পরীক্ষাটি কী। যন্ত্র দিয়ে তাকে ঘুম পাড়িয়ে দিতে চাইছে। কিন্তু শারমিন ঘুমাবে না, সে কিছুতেই ঘুমাবে না। শারমিন জোর করে নিজেকে জাগিয়ে রাখল। হঠাৎ ঢেউয়ের মতো করে ঘুম এসে তাকে ভাসিয়ে নিতে চায়, কিন্তু শারমিন তাকে কিছুতেই ভাসিয়ে নিতে দিল না। দাঁতে দাঁত চেপে জেগে রইল। বিড়বিড় করে নিজেকে বলল, ঘুমাব না। আমি ঘুমাব না। কিছুতেই ঘুমাব না।

শারমিন জোর করে চোখ বড় বড় করে জেগে রইল আর সেটি দেখে নীল চোখের মানুষটি চিন্তিত মুখে বলল, দেখেছ? মেয়েটা ঘুমাচ্ছে না।

হ্যাঁ, আগে কখনো দেখিনি। আমি থ্রি ডিবি বেশি পাওয়ার দিচ্ছি, তার পরও ঘুম পাড়ানো যাচ্ছে না।

আরও থ্রি ডিবি বাড়াও।

একজন নব ঘুরিয়ে শারমিনের মাথায় আরও বেশি পাওয়ার দিতে শুরু করল। শারমিনের চোখ ভেঙে ঘুম আসতে চাইছিল, কিন্তু সে তবু জোর করে জেগে রইল।

দাড়ি-গোঁফের জঙ্গল মানুষটি তার দাড়ি চুলকাতে চুলকাতে বলল, আমরা ইচ্ছে করলে আরও পাওয়ার বাড়াতে পারি, কিন্তু আমি সেটা করতে চাচ্ছি না।

কেন? মেয়েটার ক্ষতি হবে?

না, সে জন্য নয়। আমাদের কয়েলটা একটা সিগনাল পাঠাচ্ছে, তার মস্তিষ্কের সেটা গ্রহণ করার কথা। মনে হচ্ছে, তার মস্তিষ্ক সেটা গ্রহণ না করে ফিরিয়ে দিচ্ছে—

কী বলছ পাগলের মতো?

আমি পাগলের মতো মোটেই বলছি না। তাকিয়ে দেখো। হেলমেটের ভেতর যে কয়েল আছে, সেটা এই মেয়েটার মস্তিষ্ক থেকে এই সিগনালটা পিক করছে। পজিটিভ ফিডব্যাকের মতো—এটা বেড়ে আমাদের সোর্সে যাচ্ছে। তাপমাত্রা কত বেড়েছে, দেখেছ?

ও মাই গড! যে মানুষটি কম কথা বলে, সে এবার কথা বলল, আমি এটা বিশ্বাস করি না!

সেটা তোমার ইচ্ছা। কিন্তু আসল সত্যটি হচ্ছে, আমরা মেয়েটার মস্তিষ্ককে বশ করতে পারছি না। উল্টো মেয়েটা আমাদের জেনারেটরকে ওভার লোড করে দিচ্ছে।

চারজন মানুষ কিছুক্ষণ তাদের যন্ত্রপাতির দিকে তাকিয়ে রইল এবং মাথা চুলকাল, তখন একজন বলল, সার্ভারে তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। ট্রান্সকিনিওয়াল জেনারেটরটা বন্ধ করো।

নীল চোখের মানুষটি বলল, আরও একবার চেষ্টা করে দেখি।

কী চেষ্টা করবে?

এক শ চুয়াল্লিশ গিগা হার্টজ!

দাড়ি-গোঁফের জঙ্গল মানুষটি বলল, আতঙ্ক?

হ্যাঁ, আতঙ্ক। ভয়াবহ আতঙ্ক।

মেয়েটার ক্ষতি হবে না তো? মনে নেই, একজন কখনো রিকভার করতে পারল না। পাকাপাকিভাবে স্কিজোফ্রেনিয়া হয়ে গেল?

নীল চোখের মানুষটি ঘাড় ঝাঁকিয়ে বলল, দেখা যাক।

মানুষগুলো যন্ত্রের নব ঘুরিয়ে সিগনাল পাওয়ার কমিয়ে আনতেই শারমিন হঠাৎ করে যেন জেগে ওঠে। তার ভেতরে যে প্রচণ্ড ঘুমের চাপ ছিল হঠাৎ করে সেটা পুরোপুরি দূর হয়ে গেল। শারমিন তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে, মানুষগুলো একটু উত্তেজিত হয়ে আবার যন্ত্রপাতির সামনে দাঁড়িয়েছে। সে বুঝতে পারে, তারা এখন আবার কিছু একটা করবে। কী করবে, কে জানে!

হঠাৎ করে শারমিনের কেমন যেন ভয় করতে থাকে। সে বুঝতে পারে না, কেন তার ভয় করছে। শারমিন মাথা ঘুরিয়ে এদিক-সেদিক তাকাল, কী নিয়ে তার ভয়, সেটা সে বোেঝার চেষ্টা করল।

মানুষগুলো নব ঘুরিয়ে সিগনালটা বাড়িয়ে দিতেই শারমিনের ভয়টুকু ভয়াবহ আতঙ্কে রূপ নেয়, সে চোখ বন্ধ করে একটা আর্তচিৎকার করে ওঠে।

দাড়ি-গোঁফের জঙ্গল মানুষটি নিজের গাল চুলকে সন্তুষ্টির ভান করে মাথা নেড়ে বলল, এইটা ঠিক ঠিক কাজ করছে। দেখেছ?

নীল চোখের মানুষটি বলল, আগেই এত নিশ্চিত হয়ো না। সিগনাল পাওয়ার আরও কয়েক ডিবি বাড়াও। হৃৎস্পন্দন দ্বিগুণ হতে হবে, সারা শরীর ঘামতে হবে, চিৎকার করে গলায় রক্ত তুলে দেবে, তখন আমি নিশ্চিত হব।

কম কথার মানুষটি নবটা ঘুরিয়ে সিগনাল আরও বাড়িয়ে দিল। শারমিন সাথে সাথে থরথর করে কেঁপে ওঠে, আতঙ্কে ভয়াবহ একটা চিৎকার করতে গিয়ে সে থেমে গেল। সে বিড়বিড় করে নিজেকে বোঝাল, মিথ্যা! মিথ্যা! সব মিথ্যা। ওরা আমাকে ভয় দেখাচ্ছে, আসলে ভয়ের কিছু নেই। আমি ভয় পাব না, কিছুতেই ভয় পাব না। কিছুতেই না। কিছুতেই না!

শারমিন প্রাণপণ চেষ্টা করে নিজেকে শান্ত করে, পুরো ভয়টুকু জোর করে নিজের মাথা থেকে ঠেলে সরিয়ে দেয়। সে চোখ বন্ধ করে অন্য কিছু চিন্তা করার চেষ্টা করে, বিড়বিড় করে বলে, আমি ভয় পাব না। কিছুতেই ভয় পাব না। এই মানুষগুলো আমাকে যন্ত্র দিয়ে ভয় দেখাচ্ছে, কিন্তু আসলে ভয়ের কিছু নেই। আমি সুন্দর জিনিস চিন্তা করব, যেন ভয় না করে। আমি আমার মায়ের কথা চিন্তা করব। ছোট ভাইটার কথা চিন্তা করব, সে কেমন ফোকলা দাঁতে হাসে, সেই কথাটা চিন্তা করব। শারমিন তার চোখের সামনে তার সব প্রিয় দৃশ্যগুলো নিয়ে আসে, নীল আকাশে সাদা মেঘ, একটা গাছের ডালে হলুদ রঙের একটা পাখি, বাগানে ফুলের গাছে রঙিন ফুল। পানির ওপর একটা গাছের ডাল, সেখানে একটা রঙিন মাছরাঙা পাখি।

যন্ত্রপাতির প্যানেলের সামনে দাঁড়িয়ে মানুষগুলো মাথা চুলকাল। নীল চোখের মানুষটি বলল, একই ব্যাপার হচ্ছে। পুরো সিগনালটা রিফ্লেক্ট করতে শুরু করেছে।

শুধু তা-ই নয়, আমাদের কয়েল নতুন সিগনাল পিক করছে। কোনো আইসলেটর নেই, তাই সরাসরি সিস্টেমে ঢুকে যাচ্ছে। পজিটিভ ফিডব্যাকের মতো। জেনারেটরের ক্ষতি হতে পারে!

নীল চোখের মানুষটির কেমন যেন রোখ চেপে গেল, দাঁতে দাঁত ঘষে হিংস্র মুখে বলল, বাড়াও! সিগনাল আরও বাড়াও।

শারমিনের ভেতর আবার ভয়াবহ আতঙ্ক উঁকি দিতে চায়। শারমিন জোর করে সেটাকে ঠেলে সরিয়ে দেয়। মনে মনে নিজেকে বলে, আমি কিছুতেই ভয় পাব না। কিছুতেই না! আমার কাছে যেটা করতে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে, আমি সেটাই করব! রাফি স্যার আমাকে প্রাইম সংখ্যা শিখিয়েছে। আমি শেষবার যেই প্রাইম সংখ্যা বের করেছিলাম, সেটা ছিল দুই শ একাত্তর অঙ্কের। আমি এখন পরেরটা বের করব। আমি আমার সমস্ত মনপ্রাণ দিয়ে দেব এখানে, তাহলে কোনো কিছু আমার মাথায় ঢুকতে পারবে না। কেউ আমার মনোযোগ নষ্ট করতে পারবে না। কেউ না!

শারমিন তার মাথায় একটার পর একটা সংখ্যা সাজাতে থাকে। ধীরে ধীরে তার চারদিকে যেন সংখ্যার একটা দেয়াল উঠতে থাকে। সেই দেয়াল ভেদ করে কোনো কিছু শারমিনের কাছে পৌঁছাতে পারে না। শারমিন চোখ বন্ধ করে চেয়ারে হেলান দেয়। তার মুখে প্রশান্তির একটা হাসি ফুটে ওঠে।

নীল চোখের মানুষটি অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে শারমিনের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। সে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারে না, যে সিগনালে একজন মানুষের ভয়াবহ অমানুষিক আতঙ্কে চিরদিনের জন্য উন্মাদ হয়ে যাওয়ার কথা, সেই সিগনালে এই মেয়েটি পরম প্রশান্তিতে শুয়ে আছে—তার মুখে বিচিত্র একটা হাসি। মানুষটির কেমন যেন রোখ চেপে যায়, সে নবটিকে স্পর্শ করল।

পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অন্যরা বলল, আর বাড়িও না। আমাদের যন্ত্র আর সহ্য করতে পারবে না।

না পারলে, নাই। নীল চোখের মানুষটি হিংস্র মুখে বলল, আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব।

সে নবটি পুরোপুরি ঘুরিয়ে দেয়। শারমিন সঙ্গে সঙ্গে সোজা হয়ে বসে তীক্ষ্ণ গলায় চিৎকার করে বলল, না! না! না!

ঠিক তখন পুরো ঘরে একটা বিদ্যুৎস্ফুলিঙ্গ ঝলসে উঠল এবং সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ড বিস্ফোরণে পুরো এনডেভার কেঁপে ওঠে। ঘরটি সঙ্গে সঙ্গে অন্ধকার হয়ে যায়, যন্ত্রপাতি ভেঙেচুরে ছিটকে পড়তে থাকে। প্রথম বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় আরেকটা বিস্ফোরণ হলো, সেটি হলো আগের চেয়েও জোরে। পুরো এনডেভারের ভবন থরথর করে কেঁপে ওঠে রাফি টের পেল যে মানুষটি তাকে ধরে রেখেছিল, সে ছিটকে পড়েছে। তাকে ছেড়ে দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করছে।

রাফি দেয়াল ধরে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করল, ঠিক তখন আরও ভয়ংকর দুটো বিস্ফোরণ হলো। কোথায় জানি আগুন লেগেছে, আগুনের শিখায় ঘরের ভেতর আবছা দেখা যাচ্ছে।

রাফি দেখল, ঘরের কোনায় চেয়ারে বসে আছে শারমিন, ঈশিতা তাকে জড়িয়ে ধরেছে। রাফি টলতে টলতে সেদিকে এগিয়ে যায়। দুজনকে ধরে বলল, ভয় পেয়ো না তোমরা, ভয় পেয়ো না।

ঈশিতা জিজ্ঞেস করল, কিসের বিস্ফোরণ?

মাজু বাঙালি। সে রেডি করে দিয়েছে, শারমিন শুরু করিয়ে দিয়েছে—

রাফি কথা শেষ করতে পারল না, তার আগেই পরপর আরও দুটো বিস্ফোরণ হলো, তার প্রচণ্ড ধাক্কায় সে ছিটকে পড়ল। চারদিকে আগুন লেগেছে। অনেক মানুষ ছোটাছুটি করছে, তাদের আতঙ্কিত চিৎকার শোনা যাচ্ছে। অনেক দূর থেকে সাইরেনের শব্দ ভেসে আসতে থাকে।

রাফি উঠে বসার চেষ্টা করল, চারপাশে গাঢ় অন্ধকার। তার মাঝে দেখতে পেল দূর থেকে দুলতে দুলতে অনেক দূর থেকে অনেকগুলো টর্চলাইটের আলো ছুটে আসছে। তার মানে, অনেক মানুষ ছুটে আসছে। কে মানুষগুলো?

টর্চলাইটের আলো ঘরের সামনে এসে থেমে যায়। হঠাৎ করে সে শুনতে পেল, কেউ একজন ডাকছে, ঈশিতা! রাফি! শারমিন! তোমরা কোথায়?

রাফি গলার স্বর চিনতে পারে। মাজু বাঙালি। আর তাদের ভয় নেই।

মাজু বাঙালি আবার ডাকল, রাফি! ঈশিতা।

রাফি ভাঙা গলায় বলল, আমরা এখানে।

রাফি দেখতে পায়, অনেকগুলো টর্চলাইটের আলো তাদের দিকে ছুটে আসছে। পেছনের মানুষগুলোকে দেখতে পাচ্ছে না। কিন্তু রাফি জানে, না দেখতে পেলেও ক্ষতি নেই। এরা সবাই তার আপনজন। এরা তাদের বাঁচাতে ছুটে আসছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *