আম্রপালী – ১১

১১.

থানা থেকে বেরিয়ে এসে তালুকদারসাহেব বলেন, ওঠ গাড়িতে।

দুজনকে গাড়িতে তুলে নিয়ে ফিরে এলেন কলেজের গেটে। সেখানে এখন এই কোনও উত্তেজনা নেই। যথারীতি যানবাহন। আর পদাতিকের কসরৎ চলছে –কে কার আগে যেতে পারে। কে বলবে, তিন-চার ঘণ্টা আগে এই রাস্তায় একটা বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে, একটি যুবক ছুরিকাহত হয়েছে, আর একটি তরুণীর আর্ত কণ্ঠস্বরে ট্রাম রাস্তা মুখর হয়ে উঠেছিল! সর্বসমক্ষে টানতে টানতে দুঃশাসনের দল তাকে টেনে নিয়ে গেছে মরণাতীত যন্ত্রণার নরকে!

কলেজ-গেট-এর কাছে এসে উনি গাড়িটা কার্ব ঘেঁষে দাঁড় করালেন। বললেন, আমি এবার একবার মেডিকেল কলেজে যাব। তোমরা কে কী করবে?

সতীশ বলে, এখন তো ভিজিটিং আওয়ার নয়, আপনাকে যেতে দেবে?

–দেবে। ওখানকার দু-একটি ডাক্তার আমার ছাত্র। সতীশ, তুমি বরং এখানে নেমে যাও। খোঁজ নিয়ে দেখ, জোয়াদ্দার এসেছে কিনা। ইতিমধ্যে। এসে থাকলে তাকে আপটুডেট খবরটা জানাও। আর প্রিন্সিপাল-সাহেবকেও জানিয়ে দিও যে, ছাত্র তিনজন হাজত থেকে ছাড়া পেয়ে গেছে– জামিনে নয়, পুলিস আর তাদের বিরুদ্ধে কেস চালাবে না। কেমন?

সতীশ গাড়ি থেকে নেমে গেল। তালুকদার তাপসকে নিয়ে আবার গোলদিঘিকে পাক মারলেন। পাঁচ-দশকের পুরাতন একটি সরবতের দোকানের সামনে এসে গাড়িটাকে থামালেন। উনি নিজে যখন প্রেসিডেন্সিতে পড়তেন তখন এখানে পাশাপাশি দুটি সরবতের দোকান ছিল –প্যারাডাইস আর প্যারাগন। তারই একটা ভগ্নাংশ আজও টিকে আছে। পড়ন্ত বেলায় এখন খদ্দের নেই। উনি তাপসকৈ নিয়ে পিছনের একটা বেঞ্চিতে গিয়ে বসলেন। বললেন, তেষ্টাও পেয়েছে, আর তোমার সঙ্গে জরুরি কয়েকটা কথা বলে নিতে চাই।

একজন ছোকরা মতো দোকানের কর্মচারী এসে ফ্যানটা খুলে দিয়ে গেল। তালুকদার ওকে দুটো ‘মালাই’ দিতে বললেন।

ছোকরা চলে যেতেই তাপস বলে ওঠে, আমারও একটা প্রশ্ন জানবার আছে, স্যার। আপনি অনুমতি দিলে সেটাই আগে পেশ করি।

–কর। প্রশ্ন করতে আর দোষ কি? জবাব দেব কি না সেটা যখন আমার মর্জির উপর নির্ভর করছে। বল?

–তিনটে কাগজের মধ্যে কটায় ‘লালু বিশ্বাস’-এর নাম ছিল?

–একটাতেও নয়। একটি কাগজে ইংরেজিতে লেখা ছিল এল. এ. এল. টি. উ.। আর একটিতে এল. এ. এল. এল. ইউ.। আর তৃতীয় কাগজে ‘নাম জানি না। তবে এ অঞ্চলের কুখ্যাত অ্যান্টিসোশাল। দেখলে চিনতে পারব।’–এই কথা কটা গোটা গোটা বাংলা হরফে লেখা।

–আপনি কি স্যার, ওকে দেখলে চিনতে পারবেন?

–না। অ্যান্টিসোশালদের ছবি সংগ্রহ করার বাতিক আমার নেই।

তাপস জবাব দিল না। হাসল না পর্যন্ত। তার কাঁধের ব্যাগ থেকে একটা পত্রিকা বার করে একটা পাতা মেলে ধরল।

তালুকদার দেখলেন, কী একটা ক্লাবের সেটা কালীপূজোর স্যুভেনির। তার প্রথম দিকে গোটা কতক আলোকচিত্র। পূর্ববৎসরের প্রাক-পূজা অনুষ্ঠানের। ছবিগুলি ‘গুণীজন সম্বর্ধনা’-র। কয়েকজন প্রখ্যাত খেলোয়াড়, সঙ্গীতজ্ঞ, সাহিত্যিক প্রভৃতিকে দেখা যাচ্ছে পর-পর ছবিতে, একই মন্ত্রীমশায়ের হাত থেকে স্মারক-সম্মান গ্রহণ করতে। প্রতিটি আলোকচিত্রেই মন্ত্রীমশায়ের পাঁজর ঘেঁষে একজন স্বাস্থ্যবান যুবক দাঁড়িয়ে আছে। প্রায় দেহরক্ষীর ভঙ্গিতে। তার পরনে জিনস-এর প্যান্ট, উর্ধ্বাঙ্গে গোল-গলা স্পোর্টস গেঞ্জি, মাজায় চওড়া বেল্ট। গোঁফ-দাড়ি কামানো। মাথায় পাখির বাসার মতো সযত্নবিন্যস্ত কেশচুড়।

তাপস তার তর্জনীটা ঐ ছেলেটির বুকের উপর চেপে ধরে বললে : এই হচ্ছে লালটু বিশ্বাস।

দোকানের ছেলেটি দু গ্লাস সরবৎ হাতে এগিয়ে আসছিল। তালুকদার নিঃশব্দে তাপসের হাত থেকে পত্রিকাটা নিয়ে অ্যাটাচি-কেসে ভরে ফেললেন। গ্লাস দুটো নামিয়ে রেখে ছেলেটি চলে যেতেই তালুকদার প্রশ্ন করেন, কৃষ্ণাকে কেন ওরা ধরে নিয়ে গেল, তা জান?

–জানি, স্যার। বলছি শুনুন।

তাপস ওঁকে জানালো কৃষ্ণা সেন একজন নামকরা ছাত্র নেত্রী। তাপসদের ইউনিয়নের। ফলে লালটুর বিরুদ্ধ পার্টির। লালটু অবশ্য ছাত্র নয়। সে পার্টি ক্যাডারদের নেতা। প্রয়োজনে কখনো বা কলেজের ছাত্র-রাজনীতিতে অংশ নেয়। যদি কাউকে ‘ধোলাই’ দেওয়ার প্রয়োজন হয়। অথবা ‘হাফিজ’ করার। কিছুদিন আগে কৃষ্ণার সঙ্গে লালটুর রাজনৈতিক দলের একটা ছেলের বচসা হয়। ওরা দাবী করেছিল ওদের কী একটা ফাংশনে কৃষ্ণাকে গান গাইতে হবে। কৃষ্ণা সম্মত হয়নি। বচসার সময় ও দলের একটি ছেলে কৃষ্ণার গায়ে হাত দেয়। আর কৃষ্ণা তাকে একটা চড় মারে। ফলে একটা হাতাহাতির সূত্রপাত হয়। ঘটনাচক্রে সে সময় ওরা দলে ভারী ছিল না। মার খেয়ে পালায়। তাপসের আশঙ্কা, তারপর ওরা ওদের পার্টি-মস্তান লালটুর শরণ নেয়। তা থেকেই এই পরিণতি।

তালুকদার জানতে চান, কৃষ্ণা যে ছেলেটিকে চড় মেরেছিল তা কেউ দেখেছে?

–কী বলছেন স্যার? ঘটনাটা ঘটে কমনরুমের সামনে। অন্তত দশ-বিশজন সাক্ষী আছে। তবে আপনি যা ভাবছেন তা হবার নয়?

–কী ভাবছি আমি?

–যদি কোনও এনকোয়ারি হয়, অথবা আদালতে সাক্ষী দেবার প্রয়োজন হয় তবে প্রত্যক্ষদর্শী একটাও পাবেন না।

–ঐ মস্তান লালটু বিশ্বাসের ভয়ে?

তাপস কিছুক্ষণ নীরব রইল। তারপর বলল, ওর নামে কতগুলো কেস ঝুলছে তার হিসাব বোধকরি লালটু নিজেই জানে না। প্রয়োজনও হয় না। সে হিসাব রাখবার জন্য প্রভাবশালী ব্যক্তিরা আইন-মোতাবেক মাহিনা-করা ব্যবস্থা করেন। একাধিক খুন, ডাকাতি, রাহাজানি এবং রেপ-কেস-এর নায়ক বুক ফুলিয়ে মটোর সাইকেলে চেপে সারা শহর চষে বেড়োয়। গুণীজন-সম্বর্ধনার আসরে সেজে-গুঁজে মন্ত্রীমশায়ের পাঁজর ঘেঁষে দাঁড়ায়। ওকে অসংখ্যবার পুলিসে ধরেছে–না ধরে উপায় নেই বলেই ধরেছে–চক্ষুলজ্জার খাতিরে, সংবাদপত্রের ছুড়ো খেয়ে যখন ধরতে বাধ্য হয়েছে কিন্তু প্রতিবারেই প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কলকাঠি নাড়ায় জামিন পেয়ে বেরিয়ে এসেছে।

–তারপর? আদালতে কেস ওঠে না?

–আজ্ঞে না। তারিখের পর তারিখ পড়ে। যতদিন না প্রত্যক্ষসাক্ষীদের কৰ্জা করা যায়। লোভে পড়ে অথবা ভয়ে, তারা সরে দাঁড়ায়। আদালতের হাজার-হাজার পেন্ডিং-কেস-এর কিছু সংখ্যাবৃদ্ধি হয় মাত্র। তারপর সবাই সে কথা ভুলে যায়। লালটু বুক ফুলিয়ে মটোর সাইকেলে ঘুরে বেড়ায়।

তালুকদার-সাহেবের মনে হল : সবাই কি ভোলে? যে মায়ের জোয়ান ছেলেটা হারিয়ে গেল, যে বিধবার স্বামী আর কোনদিন বাড়ি ফিরে আসবে না, তারাও কি ভুলতে পারে? আর ঐ হতভাগিনীর দল –যাদের সর্বনাশ করে মস্তান পার্টি বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়? যারা লোকসমাজে মুখ তুলে আর তাকাতে পারে না। পাছে কেউ পার্শ্ববর্তীর কানে-কানে বলে, হ্যাঁরে, সেই মেয়েটাই!

ওঁর মনে পড়ে গেল, ভাগলপুর জেল-এর একটা ঘটনার কথা। কয়েক বছর আগে সংবাদপত্রে পড়েছিলেন। পড়ে শিউরে উঠেছিলেন। জেলে বিচারাধীন তিনজন আসামীকে পুলিস-হেপাজতে অন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল! কী নৃশংস কাণ্ড! অবশ্য তার সাতদিনের মধ্যেই অপরাধী পুলিস –ঐ যারা অন্ধ করেছিল –তাদের সাসপেন্সনের অর্ডার এসে যায় উপরমহল থেকে। মায় জেলার স্বয়ং সাসপেন্ডেড!

সবচেয়ে অবাক করা খবর : ভাগলপুরের মানুষ ঐ আদেশনামার প্রতিবাদ করতে সর্বাত্মক হরতাল করে বসল। কোনও রাজনৈতিক দলের ডাকা বন্ধ নয়। সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল পালন করছে। স্কুল-কলেজ, আইন-আদালত, দোকান-পাট সব বন্ধ! কী চায় গোটা ভাগলপুরের মানুষ? ওরা চায় ঐ পুলিস অফিসারদের উপর যে সাসপেন্সন অর্ডার দেওয়া হয়েছে তা প্রত্যাহার করতে হবে!

কী আশ্চর্য! কেন? কেন? কেন?

এমন নৃশংস পুলিস-নির্যাতনের…..

সাংবাদিক তদন্ত করে জানালেন : বিচারাধীন আসামীদের প্রত্যেকের নামে দশ বিশটা খুন আর ডাকাতির কেস ঝুলছিল। এক-একজন বিশ-ত্রিশ-চল্লিশটা রেপ কেস-এর আসামী। বিশ্বাস করা কঠিন, তাই নয়? একটা মানুষ অভাবের তাড়নায় বিশবার ডাকাতের দলে নাম লেখাতে পারে, কিন্তু বিশবার বলাৎকারের বীভৎসতায় গা ভাসানোর বিলাস হয় কেমন করে? খোঁজ নিয়ে দেখ, ওদের ঘরে আছে শয্যাসঙ্গিনী। অথবা যারা অর্থের বিনিময়ে দেহদান করে তাদের সঙ্গে আঁতাত! কিন্তু না! তাতে ওদের তৃপ্তি হয় না। রমণীর আর্তনাদেই ওদের পৈশাচিক তৃপ্তি! বীভত্স ওদের রুচি –যাকে বলাৎকার করবে তার স্বামী-সন্তান অথবা সহোদরকে পিঠমোড়া করে থামের সঙ্গে বেঁধে রাখবে, চোখের সামনে।

তবেই না মজা। হি-হি! হো-হো!

সাংবাদিক অনুসন্ধান করে জেনেছিলেন : ঐ তিনজন কুখ্যাত সমাজবিরোধী দশ বারো বছর ধরে ভাগলপুরে তাদের অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। বিত্তবানেরা, ব্যবসায়ীরা মাস-মাস ওদের ‘তোলা’ দিয়ে যায়, অর্থাৎ মাসিক চাঁদা –বিনিময়ে এরা প্রতিশ্রুতি দেয় ওদের ‘গদি’তে, বাড়িতে বা দোকানে এরা ডাকাতি করবে না, ওদের স্ত্রী-কন্যা পুত্রবধূকে তুলে নিয়ে যাবে না। এই ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরে সবাই মেনে চলতে বাধ্য হয়েছিল, অপ্রতিবাদে। পুলিসের কিছু করার ছিল না।

হেতুটা সহজবোধ্য। ঐ তিনজন কুখ্যাত সমাজবিরোধী ছিল এমন লোকের পোষা গুন্ডা, যারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। তারা শাসক-সম্প্রদায়ের চূড়ামণি –এম. এল. এ., এম. পি., মন্ত্রী, মায় মুখ্যমন্ত্রী! শাসক-সম্প্রদায়ের ক্ষমতা দখলের লড়াই-ভাগাড়ে তারা শকুনির মতো টানাটানি-ছেঁড়াছেড়ি করে। এই তথাকথিত ‘দেশসেবক গুন্ডা’দের পৃষ্ঠপোষকতাতেই ‘অপরাধজীবী’রা জীবনযাত্রা নির্বাহ করে। হ্যাঁ, এরা অপরাধজীবীই। নিরুপায় পুলিসের জ্ঞাতসারে। অথবা সহযোগী পুলিসের! কখনো কখনো অপরাধজীবীরা হাতে-নাতে ধরা পড়েছে –কিন্তু তৎক্ষণাৎ প্রভাবশালী ‘দেশসেবকেরা’ হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন–ওরা জামিনে ছাড়া পেয়েছে।

জনশ্রুতি, ভাগলপুরের জেল-এর জেলার ছিলেন ভিন্ন জাতের পুলিস-অফিসার। লোভে লালায়িত হওয়া অথবা ভয়ে কুঁকড়ে যাওয়া তার স্বভাব-বিরুদ্ধ। কিন্তু কিছু করার নেই। অন্তর্দ্বন্দ্বে ক্ষতবিক্ষত জেলর-সাহেব নাকি একবার ক্ষেপে উঠে ওদের একজনকে বলেছিলেন, তোকে মেরে এই জেলের ভিতরেই পুঁতে ফেলব, শয়তান!

লোকটা ভাগলপুরী দেহাতি-খিস্তি মিশিয়ে জবাবে বলেছিল, সেটা তোর হিম্মতে কুলাবে না রে পুলিসের বাচ্চা! জেলের ভেতর আমার মৌত মানে তোর জরু-গরুও ফৌত! তোকে ফাঁসি কাঠ থেকে না ঝুলিয়ে থামবে না ঠাকুর-সাহেব! না কী বলিস রে ভগলু ভেইয়া?

ওর পাপের সাথী ঠাকুর-সাহেবের আরেকজন পোষা কুত্তা ভগলু অট্টহাসে ফেটে পড়েছিল। বলেছিল, তব শুন লে রে জেলার-সাহব! তোকরা হিসাব হ্যয় নু, কি মেরা উনতালিশঠো কেস হো চুকা? অব শুন……

অর্থাৎ, শোন, রে জেলার-সাহেব। তুই তো জানিস আমার নামে উনচল্লিশটা রেপ-কেস আছে। তাই না? লেকিন তুই যেটা জানিস না সেটা শুনে রাখ। ‘চালিশবারে’র জন্য কোন মনপসন্দকে চুনাও করে রেখেছি। বড়ি খুবসুরৎ! উমর কেৎনা ভইল রে জেলার সা’ব? আঠারা বহ্ বিশ?

দাঁতে-দাঁত দিয়ে জেলার বলেছিলেন, কার কথা বলছিস?

–তেরি লেড়কি কি। কলেজমে সে পড়তি হ্যয় নু?

দুরন্ত ক্রোধে স্থান-ত্যাগ করেছিলেন জেলার সাহেব।

ওরা তিনজন অট্টহাস্য করে উঠেছিল তাঁর পলায়নের ভঙ্গিটায়।

কিন্তু ওরা ঠিক বুঝতে পারেনি।

জেলার পালিয়ে যাননি আদৌ। মনস্থির করেছেন ততক্ষণে। বুঝতে পেরেছেন; এ-ছাড়া তাঁর ফুলের মতো নিষ্পাপ আত্মজার ধর্মরক্ষা করা অসম্ভব। হ্যাঁ, কলেজেই পড়ে –ভাগলপুর কলেজে –সুবো-সাম লেডিজ-সাইকেলে চেপে ভাগলপুর কলেজে যেতে হয় তাকে। ক্যাবিনেট-মন্ত্রীর প্রভাবে ঐ তিনটে নরপিশাচ জামিনে খালাস পাবেই। আর তখন তারা প্রতিশোধ নেবে নির্ঘাৎ! মেয়েটিকে মাঝপথ থেকে তুলে নেওয়া ওদের কাছে ছেলেখেলা। উনতাল্লিশ সে চালিস! ক্যা ফারক?

জেলারকে মদত দিতে এগিয়ে এল আরও পাঁচ-সাতজন পুলিস। তারাও নানান কারণে অন্তর্দ্বন্দ্বে জ্বলছিল। প্রতিশোধস্পৃহায় তারাও ছিল আগ্নেয়গিরি।

তিন-তিনটে আসামী জেলের ভিতর অন্ধ হয়ে গেল!

না, জেলর-সাহেবের উপর থেকে সাসপে্নশন-অর্ডার প্রত্যাহার করা হয়েছিল কি না তা আর জানেন না তালুকদার-সাহেব। কিন্তু এটুকু জানেন, তাঁর ঐ বে আইনি কাজটা শতকরা শতভাগ সমর্থন পেয়েছিল ভাগলপুরবাসীদের কাছ থেকে।

না, এবারও হিসাবে ভুল হয়। শতকরা শতভাগ নয়। কয়েকজন উচ্চকোটির ‘ষড়যন্ত্রী-মশাই’ ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। ঐ অপরাধব্যবসায়ীরা ছিল যে-কয়জন মুষ্টিমেয় রাজনীতিব্যবসায়ীর পোষাগুণ্ডা। কিন্তু ক্ষমতার চূড়ায় অধিষ্ঠিত ঐ মন্ত্রীমশাইদেরও কিছু করার ছিল না। অবিমৃষ্যকারী জেলারের কেশস্পর্শ করলে আগামী ‘চুনাও’-য়ের সময় গোটা ভাগলপুর অঞ্চলের কয়েক লক্ষ ভোট হারাতে হবে!

জেলার-সাহেব বদলি হয়ে গেছিলেন নিশ্চয়–ঠিক জানেন না। কিন্তু এটুকু আন্দাজ করতে অসুবিধা হয় না তাঁর সেই অষ্টাদশী আত্মজাটি একদিন কলেজ থেকে পাস করে বেরিয়েছিল–দু-হাতে মেহদির ছাপ নিয়ে একদিন ছাঁদনা-তলায় অবাক চোখে তাকিয়ে দেখেছিল তার দুলহন-এর দিকে।

এতদিনে বোধকরি সে সোনার চাঁদ খোকার-মা!

কৃষ্ণার কি সে সৌভাগ্য হবে?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *