২. সরকারি ডাকবাংলো

পূর্বমুখী এই সরকারি ডাকবাংলোটির গড়ন বিলিতি কান্ট্রিহাউসের মতো। দোতলা এবং রঙিন টালির ঢালু কয়েকটি তিনকোনা জ্যামিতিক ছাঁদের চাল আছে। আসলে বাড়িটি ছিল কোনও এক স্টিফেন সায়েবের। স্বাধীনতার পর সরকার নিয়ে নেন। পুরনো বৈশিষ্ট্য বজায় রেখেই একে একালীন করা হয়েছে। চওড়া ড্রয়িং রুম দু’ভাগ করে ডাইনিং এবং লবি হয়েছে। পুরনো ফায়ারপ্লেস পড়েছে লবি অংশে। ফায়ারপ্লেসের চিমনি চাল ফুঁড়ে বেরিয়ে আছে আগের মতোই এবং শীতের সময় আমলারা এলে ফায়ারপ্লেসে আগুনও জ্বলে। অথচ এয়ারকন্ডিশনের ব্যবস্থা আছে। লবির ভেতর থেকে সিঁড়ি দোতলায় উঠে গেছে। সেই সিঁড়ি কাঠের এবং ঘোরালো। সিঁড়িতে নারকোল-ছোবড়ার রঙচঙে কাপেট আছে। একই কার্পেট সব ঘরের মেঝেতেও। দোতলার মেঝেও কাঠের।

পুব-দক্ষিণ কোনার ঘরে কর্নেল নীলাদ্রি সরকার টেবিলবাতি জ্বেলে একটা চিঠি পড়ছিলেন। হরফগুলোর ওপর আতস কাঁচ রেখে খুঁটিয়ে দেখছিলেন। হাতের লেখা থেকে লোক চেনা যায়। তবে খানিকটা। সবটা নয়। তা বিশেষজ্ঞরা যতই দাবি করুন না কেন। কর্নেল ভাবছিলেন। বয়স্ক এবং বিচক্ষণ মানুষ বলেই মনে হয়। কিন্তু

এই চিঠিটি লেখা হয়েছে ২৩ মার্চ। আজকাল ডাকদফতরে কী একটা ঘটেছে। কর্মীদের অসন্তোষ? সম্ভবত। কর্নেল নিভে যাওয়া চুরুট ধরিয়ে তাকিয়ে রইলেন চিঠিটার দিকে। আজ ৩০ মার্চ। সম্বোধনহীন চিঠি। নোটবই বা ডায়রির লাইনটানা পাতা ছিঁড়ে লেখা।

‘হাথিয়াগড়ের ইভনিং ভিলায় আগামী ৩১ মার্চ ককটেলডিনার পার্টিতে একজনের প্রাণ যাবে।’

তলায় কোনও নামও নেই। হরফগুলো আঁকাবাঁকা আর বড়। তাড়াহুড়ো করে লেখা। খামে কর্নেলের নাম-ঠিকানাও একই হাতের লেখা। খামের মুখে আঠার ছাপ থাকে, আঠা থাকে না। মুখটা কোনওরকমে আটকানো ছিল শুধু।

কিন্তু এটা চ্যালেঞ্জ, না অনুরোধ? কিছু বলা যায় না। আতস কাঁচের সাহায্যে একটা ব্যাপারে নিঃসন্দেহ হয়েছেন। লেখক লেখাপড়া জানা লোক। কিন্তু লেখালিখিতে তত অভ্যস্ত নয়। আপাতদৃষ্টে নিছক সাক্ষর লোকের হস্তাক্ষর, অথচ ভাষা এবং বাক্যগঠনরীতিতে শিক্ষার পরিচয় স্পষ্ট। কোনও নিছক সাক্ষরকে দিয়ে লেখানো হয়েছে কি? বানান ভুল তো দেখা যাচ্ছে না। তাছাড়া কাউকে দিয়ে লেখালে গোপন কথাটি দ্বিতীয় জনের জানা হয়ে যায়। অথচ চিঠিটা যথেষ্ট গোপনীয়তা আষ্টেপৃষ্ঠে বহন করছে। আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট, সে কর্নেলকে ভাল চেনে। ঠিকানা জানে। কর্নেলের কাছে হাথিয়াগড় চেনা জায়গা, তা-ও জানে। সে জানে, ইভনিং ভিলা’ কর্নেল চিনতে পারবেন।

কিন্তু হাথিয়াগড়ে কয়েকবার এলেও কর্নেল ওই বাড়িটা লক্ষ্য করেননি। আজ বিকেলে এখানে পৌঁছে খোঁজাখুঁজি করে দেখে এসেছেন বাইরে থেকে। একটা নিচু টিলার গায়ে কতকটা কেল্লার গড়নের পুরনো বাড়ি। হাথিয়াগড়ের ওদিকটায় একসময় বাঙালি বড়লোক-রাজা মহারাজাদের বাড়ি ছিল অনেক। চেঞ্জার ভদ্রলোকেরা, মরশুমি হাঁসের মতো আসতেন। এখনও অনেকে আসেন। বহু বাড়ি ভেঙেচুরে গেছে। কিছু কিছু বাড়িতে মাইনেকরা কেয়ারটেকার আছে। ইভনিং ভিলার গেট বন্ধ ছিল। বাইরে একটা অ্যাম্বাসাডর গাড়ি ঢোকানো যায় না কি? পশ্চিমের জানালায় গেলেন কর্নেল। এতক্ষণে আবার সেই প্রশ্নটা মনে খোঁচা দিল।

এদিকটায় হাথিয়া নদী। পাথরে জলের আছড়ে পড়ার চাপা শব্দ কানে এল। দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে লনের শেষে সিমেন্টের বেঞ্চে দুটি মেয়ে বসে আছে। গেটের কাছে দেখেছেন মনে পড়ল। দুজনের একজন বিদেশিনী তরুণী। যথেষ্ট আলো পড়েছে ওখানে। দুজনে উত্তেজিতভাবে কথা বলছে। বাতাস উল্টোদিকে। শোনা যাচ্ছে না।

ঘড়ি দেখলেন কর্নেল। নটা সতের। দরজায় টোকা দিচ্ছিল কেউ। টেবিলের কাছে এসে চিঠি ও আতস কাঁচ জ্যাকেটের ভেতর পকেটে গুঁজে কর্নেল উঠে গিয়ে দরজা খুললেন। দরজায় ইন্টারলকিং সিস্টেম। বাইরে থেকে খোলা যায় না। কেয়ারটেকার-কাম-ম্যানেজার ম্যাথু স্যালুট ঠুকে বলল, ‘ইওর টেলিফোন সার!”

“হু ইজ হি?”

“অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপার মিঃ খান, স্যার!”

ম্যাথু পেছনে সিঁড়িতে নামতে নামতে চাপা স্বরে জানাল, কিছু একটা ঘটেছে। কলকাতার এক ভদ্রলোকের হাতে রক্ত ছিল। বেসিনে ধুচ্ছিলেন। পুলিশ সায়েব হন্তদন্ত, তখনই জিপ নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। তাঁর বন্ধু ব্যানার্জি সায়েবও নিজের গাড়ি নিয়ে চলে গেলেন। তারপর কলকাতার ভদ্রলোক-ভদ্রমহিলাদের মধ্যে ফিসফিস কথাবার্তা। হঠাৎ চাঁচামেচি। দু’ঘণ্টা ধরে কী সব চলেছে, মাথামুণ্ডু বুঝতে পারছে না ম্যাথু। হয়তো মারামারি করে এসেছে স্থানীয় মস্তানদের সঙ্গে। মেয়েদের নিয়ে আজকাল এখানে চলাফেরা করা বিপজ্জনক।

ডাইনিং সংলগ্ন কাঠের ছোট চেম্বারে ম্যাথুর রীতিমত একটা অফিস। সেখানে টেলিফোন আছে। লবি হয়ে ঢোকা যায়। লবি জনশূন্য। দরজা দিয়ে দেখা গেল বারান্দায় তিনজন ভদ্রলোক এবং এক ভদ্রমহিলা বসে আছেন। ফোন তুলে কর্নেল বললেন, “এনিথিং রং ডার্লিং?”

আরিফের সাড়া এল। “হাই ওল্ড বস! তা হলে আমি ঠিকই ধরেছিলাম–”

 “আরিফ! কী হয়েছে?”

“যা হয়ে থাকে, তা-ই মার্ডার।”

 “ইভনিং ভিলায় নয় তো?”

আরিফের হাসি ভেসে এল। “ধরা দিলেন, কর্নেল! আপনাকে দেখেই আমার বরাবরকার মতো অস্বস্তি হচ্ছিল।”

“ইভনিং ভিলায় কে খুন হয়েছে?”

“ও-বাড়ির কেউ নয়। একজন আউটসাইডার। বাড়ির কেউ চেনেন না। আমরাও শনাক্ত করতে পারছি না।”

“বডি কি মর্গে?”

“হ্যাঁ। অপেক্ষা করুন, আমি যাচ্ছি।” আরিফের হাসি শোনা গেল। “আপনাকে একটু বাজিয়ে দেখার জন্য ফোন করতে চেয়েছিলাম। নাও আই অ্যাম গড্ড্যাম রাইট। রাখছি বস!”

কর্নেল ফোন রেখে দেখলেন, ম্যাথু তার দিকে তাকিয়ে আছে। সে কাচুমাচু মুখে আস্তে বলল, “মার্ডার স্যার?”

কর্নেল মাথাটা একটু দুলিয়ে পা বাড়ালেন। যেতে যেতে বলে গেলেন, বারান্দায় এক পেয়ালা কড়া কফি পাঠালে খুশি হবেন। আর ডিনারটা যেন ওপরে তার ঘরে পাঠানো হয়। খেতে দেরি হতে পারে।

বারান্দায় তাঁকে দেখে কলকাতার দলটি চুপ করে গেল। ঈশিতার চোখে চোখ পড়ায় কর্নেল বললেন, “হাই!”

ঈশিতা আস্তে “হাই” বলে তাকিয়ে রইল। নায়ার এবং সুমিত অর্থপূর্ণ চোখাচোখি করল। সোমনাথ কর্নেলের আপাদমস্তক দেখে নিয়ে বলল, “তো আপনি প্রাইভেট ডিটেকটিভ! হা! আমি এরকুল পোয়ারোর ফ্যান। লিটুল গ্রে সে’–বোধ! দ্যাটস দা পয়েন্ট।”

এবার ঈশিতা বলল, “আপনি স্বচ্ছন্দে বসতে পারেন।”

 কর্নেল একটা খালি চেয়ারে বসলেন। দাঁতে কামড়ানো চুরুট। ঈশিতাকে বললেন, “তখন গেটে আপনারা দাঁড়িয়ে ছিলেন। কারও জন্য অপেক্ষা করছিলেন। আমার ধারণা তিনি–”

সোমনাথের দিকে তাকাতেই সে বলল, “হ্যাঁ। আমার জন্য। আপনি সত্যিই তা হলে–ওই যে বলছিলুম, “লিটল গ্রে সেলস’–বোধ। আপনার এটা আছে। তো নায়ার বলছিল, আপনার মধ্যে কিছু অড ব্যাপার লক্ষ্য করেছে। হ্যাঁ! সিসেরো বলেছিলেন, অডিটির সঙ্গে জিনিয়াসদের সম্পর্ক আছে। একমাত্র জিনিয়াসরাই অড় চিন্তাভাবনা কাজকর্ম করে থাকেন। তো আমি–হ্যাঁ, আমি সোমনাথ দাশগুপ্ত, ফর ইওর অনার স্যার, আপনার স্বাস্থ্য পান করার অনুমতি চাইছি।”

তার কণ্ঠস্বর একটু জড়িয়ে যাচ্ছিল। গ্লাসে শেষ চুমুক দিল। জনি ওয়াকারের বোতলটার অর্ধেক খালি। কর্নেল নায়ারের দিকে তাকালেন। নায়ার গোঁফে হাত রাখল। মুখটা গম্ভীর।

ঈশিতা হঠাৎ উঠে স্কচের বোতলটা নিয়ে লবিতে ঢুকে গেল। সুমিত একটু হাসল। “আপনি আমাদের কমনফ্রেন্ড আরিফ খানের ওল্ড বস। বাই এনি চান্স, আপনি কি সি বি আই অফিসার ছিলেন? নাকি রেভেনিউ ইনটেলিজেন্সে ছিলেন? পুলিশে ছিলেন না, এবিষয়ে আমি সিওর। কারণ কোনও কর্নেল পুলিশের লোক হতে পারেন না। রিটায়ার্ড মিলিটারি অফিসাররা–”

তাকে থামিয়ে সোমনাথ বলল, “তো–হ্যাঁ! রক্ত! দ্যাটস দা পয়েন্ট। অন্ধকারে কেউ পড়ে যাওয়ার শব্দ। যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ নয়? তবে হ্যাঁ– চারমিনারের প্যাকেট এবং দেশলাই আমার স্ট্রং অ্যালিবাই। মাত্র দুটো সিগারেট ছিল–সো হোয়াট? নীপু প্যাকেটটা এখানে ছুঁড়ে ফেলল। আসলে রক্ত সম্পর্কে মানুষের একটা প্রিমিটিভ আতঙ্ক আছে। হাঃ। প্যাকেটে রক্তের দাগ ছিল। ফেলে দিয়েছে, বেশ করেছে। সিগারেটে তো ছিল না! লাস্ট সিগারেটটা এবার খাওয়া যেতে পারে।”

সে বুক পকেট থেকে দোমড়ানো একটা সিগারেট বের করে বলল, “সুমিত! জ্বেলে দে। নীপু দেশলাইটা কোথায় ছুঁড়ে ফেলল, খুঁজে পেলুম না।”সে নীপার দিকে তাকাল। “তো প্যাকেটটা যদি বা পেলুম, ছেঁড়া অবস্থায়। নীপু তুমি প্যাকেট ছিড়লে কেন?”

নীপা গলার ভেতর বলল, “আমি ছিড়িনি।”

কর্নেল লাইটার জ্বেলে ধরিয়ে দিলেন। সোমনাথ বলল, “থ্যাংকস!” তারপর সে টেবিলের তলা থেকে খালি প্যাকেটটা মুড়িয়ে টেবিলে রাখল। “দেখুন মশাই, রক্তটা দেখুন। অথবা এটা ক্ল হিসেবে রেখে দিতেও পারেন।”

সুমিত একটু নার্ভাস হেসে বলল, “সোমনাথ। এঁকে ব্যাপারটা বলতে পারিস।”

কর্নেল প্যাকেটটা দেখে ভাজ করে জ্যাকেটের ভেতর পকেটে চালান করলেন।

ঈশিতা ফিরে এসে বসল। ম্যাথু কর্নেলের কফি দিয়ে গেল। বারান্দা ঘুরে নীপা আর ক্রিস্নানও এসে গেল এতক্ষণে। নায়ার গোঁফ থেকে হাত নামিয়ে বলল, “প্রমোদ-পর্যটনে এসে ফেঁসে গেলাম। কখন যে বীতশোক ফিরবে কে জানে! আমার ঘুম পাচ্ছে।”

নীপা ও ক্রিস্নান কর্নেলকে দেখছিল। সুমিত হঠাৎ স্মার্ট হয়ে বলল, “পরিচয় করিয়ে দিই। অধ্যাপিকা নীপা সেন, ক্রিস্নান ফ্রম কোপেনহাগেন, ঈশিতা ব্যানার্জি-ওয়াইফ অব বীতশোক ব্যানার্জি! নীপু, ইনি কর্নেল। প্রাইভেট ডিটেকটিভ।”

কর্নেল মাথা একটু ঝুঁকিয়ে বললেন, “কর্নেল নীলাদ্রি সরকার। আ নেচারিস্ট।”

 ক্রিস্নান বলল, “আমি ইংলিশ জানি না। শব্দটি চেনা মনে হয়।”

 নায়ার বলল, “প্রকৃতিবিদ। মানে যাঁরা প্রকৃতি সম্পর্কে আগ্রহী।”

সুমিত সোমনাথকে খোঁচাল। “পুরোটা রিপিট কর সোমনাথ! সত্যি কিছু রক্তারক্তি হয়ে থাকলে ফেঁসে যাওয়ার চান্স তোর। আমাদের নয়। ইভনিং ভিলায় তুই-ই ফিরে গিয়েছিলি এবং রক্তক্ত মেখে ফিরে এলি।”

কর্নেল কফিতে চুমুক দিয়ে বললেন, “ইভনিং ভিলায় একটা ডেডবডি পেয়েছে পুলিশ। মার্ডার।”

সবাই নড়ে উঠে মূর্তি হয়ে গেল, সোমনাথ বাদে। সে হাসল। “তো হ্যাঁ– বলেছিলুম সামথিং অড দেয়ার। গেট খোলা। হলঘরের দরজা খোলা। অন্ধকার। ডেকে সাড়া পেলুম না। তারপর ভারী কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ। শেষে ব্লাড।”

সে ডানহাতটা তুলে দেখতে থাকল, যেখানে রক্ত লেগে ছিল। সুমিত ফাসফেঁসে গলায় বলল, “মা-মার্ডার! সোমনাথ! তা হলে ফেঁসে গেছিস। অ্যাই সোমনাথ! ওয়েক আপ টু ইওর সেন্সেস। হলঘরে ডেডবডি পেয়েছে পুলিশ। তার মানে কী দাঁড়াচ্ছে দ্যাখ! আমরা চলে আসার পরই খুনটা হয়েছে এবং খুনটা হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তুই গিয়ে ঢুকেছিস।”

ঈশিতা এতক্ষণে কথা খুঁজে পেল। কর্নেলকে বলল, “ডেডবডিটা কার?”

কর্নেল একটু হেসে বললেন, “কার হতে পারে বলে আপনার ধারণা মিসেস ব্যানার্জি?”

“আমার কোনও ধারণা নেই।” ঈশিতা চটে গিয়েছিল। ফের বলল শ্বাসপ্রশ্বাস মিশিয়ে, “আমি ডিটেকটিভ নই।

সোমনাথ বলল, “বোধ! ‘দা লিটু গ্রে সেলস’ অব এরকুল পোয়ারো। যে ডেডবডিটা পড়ে যাওয়ার শব্দ আমি শুনেছিলুম, সেটা-হাঃ, চান্সের অনুপাত ৯০ : ১০। মিসেস বোস। অবশ্যই। মক্ষিরানি টাইপ। খুনের যোগ্য। হাঃ।”

কর্নেল নীপার দিকে তাকালেন। “মিস সেন, সিরিয়াসলি নেবেন না। আরিফ আসছে। তার আগে আমরা একটু তাস খেলে নিই।” কর্নেলের চোখে কৌতুক ঝিলিক দিচ্ছিল। “নিছক আই কিউ টেস্ট ধরনের খেলা। ডেডবডিটা কার হতে পারে? মনে করুন, একটা তাসের উল্টো পিঠ দেখিয়ে প্রশ্ন করছি।”

নায়ার বলল, “তাসটা আপনার তা হলে দেখা।”

“দেখা হলেও আমি চিনি না। কারণ ইভনিং ভিলায় আমি যাইনি কখনও। মিস সেন, বলুন!”

নীপা একটু ইতস্তত করে বলল, “মিসেস বোস। ভদ্রমহিলার গলায় মুক্তোর হার দেখেছি।”

 “মিঃ নায়ার!”

নায়ার গোঁফে হাত রেখে বলল, “মিঃ বোস। প্রচণ্ড উদ্ধত প্রকৃতির লোক। হত্যার যোগ্য। ভৃত্যের দ্বারা হত।”

“মিঃ চৌধুরী?”

সুমিত ফের নার্ভাস হাসল। “মাইরি–ওয়েল, মিসেস বোসের খুন হওয়ার চান্স আছে। গয়না কোনও ফ্যাক্টর নয়। ইউ নো কর্নেল সরকার, দা লেসবিয়ান টাইপ। একটা দেহাতী হেলদি চেহারার সুন্দর মেয়ে আমাদের চা-স্ন্যাক্স সার্ভ করছিল। আমার সেই জন্যে মনে হচ্ছে, বুঝলেন? হয়তো মেয়েটি সহ্যের সীমা পেরিয়ে গিয়েছিল। ডেলিবারেট মার্ডার নয়। রাগের মাথায়–”

“মিস ক্রিস্নান?”

 “আমাকে কৃষ্ণা বললে আনন্দিত হই।”

 “বেশ। কৃষ্ণা?”

ক্রিস্নান ভুরু কুঁচকে ঠোঁটে আঙুল রাখল। “আমাকে স্মরণ করতে দিন। আমরা ঘর থেকে বাহিরে এলাম। অশোক বলল, গাড়িতে গিয়ে বসো। আমি যাচ্ছি। মিসেস বোস তখন দোতলার বারান্দাতে চলে গিয়েছেন। আমরা গাড়িতে উঠলাম। দুই কিংবা তিন মিনিট পরে অশোক এল। গাড়িতে স্টার্ট দিয়ে বলল, ‘তা হলে যা বলেছিলাম’ কিংবা বলেছিলুম–সে ঠিক বলেছিল। ভারতীয় প্রাচীন অভিজাত ধনবানদের পরিবার দেখাতে চেয়েছিল।”

কর্নেল হাসলেন। “আমরা তাস খেলছি কৃষ্ণা। আমার প্রশ্ন, ডেডবডি কার হতে পারে?”

 “মিঃ বোস সুগঠিত দেহ। বলবান পুরুষ। এবং সেবক-সেবিকা কিংবা পরিচারক-পরিচারিকা ওই প্রকার অল্পক্ষণে নিহত হতে পারে না। তারা নিহত হবে কেন? যুক্তি কোথায়? সুতরাং বহিরাগত। আত্মগোপনকারী দস্যু হতে পারে।”

কর্নেল চুরুট অ্যাশট্রেতে গুঁজে বললেন, “এবার মিসেস ব্যানার্জি। বলুন, কার ডেডবডি?”

ঈশিতা ততক্ষণে স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। বলল, “অন্ধ ভদ্রলোক। মানে মিসেস বোসের কাজিন ব্রাদার। আরিফের কাছে ওঁর পাস্ট লাইফের আভাস পেয়েছি। এইসব লোক ব্ল্যাকমেল করে। আগে চোখ গিয়েছিল, এবার প্রাণ গেল।”

“হুঁ, আপনি কি কখনও আমেরিকায় ছিলেন?”

 “কেন?”

“প্যাস্ট বললেন আমেরিকানদের মতো!” কর্নেল কফিতে চুমুক দিলেন।

ঈশিতা বলল, “ছিলুম। আরও শুনুন। বীতশোকের সঙ্গে সেখানে আলাপ। বিয়ে করে ফিরে এসেছিলুম। বীতশোকের কোম্পানির এক পার্টনার এই মিঃ বোস। কোম্পানির এখানে একটা ব্রাঞ্চ আছে।

কর্নেল প্রায় অট্টহাসি হাসলেন। “আপনি এ বৃদ্ধের প্রতি অকারণ ক্রুদ্ধ কেন মিসেস ব্যানার্জি?”

“আপনি ডিটেকটিভ। খেলার ছলে আস্কিং মোটিভেটেড কোয়েশ্চেনস্। বুঝি না?” ঈশিতা শ্বাস ছেড়ে ট্রাম্পকার্ড ফেলার ভঙ্গিতে সুমিতের দিকে তাকাল।

 সুমিত বলল, “মাইরি–যাই হোক। তাসটা দেখিয়ে দিন কর্নেলসায়েব!”

কর্নেল চুরুট বের করেছিলেন। একটা চুরুট বেছে নিয়ে বললেন, “সত্যিই বলছি, আমি ইভনিং ভিলার কাকেও চিনি না। এইমাত্র আরিফ ফোনে জানাল, একটা ডেডবডি পাওয়া গেছে সেখানে। তবে কৃষ্ণা সঠিক জবাব দিয়েছে।”

সুমিত ও নায়ার একগলায় বলল, “আউটসাইডার?”

“আউটসাইডার বলা চলে। কারণ, নাকি ও বাড়ির কেউ বডি শনাক্ত করতে পারেনি।” কর্নেল চুরুটটা লাইটার জ্বেলে ধরালেন। “আরিফ আসছে মনে হচ্ছে। কারণ, গাড়ির হেডলাইট দেখতে পাচ্ছি।”

সবাই গেটের দিকে তাকাল। একটু পরে বীতশোকের অ্যামবাসাডর ঢুকতে দেখা গেল। ঈশিতা উঠে দাঁড়াল। গাড়ি গ্যারেজে ঢুকিয়ে লক করে চাবির রিং আঙুলে জড়াতে জড়াতে বীতশোক এগিয়ে এল। ঈশিতা বলল, “সত্যিই মার্ডার? কে মার্ডার হয়েছে?”

বীতশোক বারান্দায় উঠে একটা খালি চেয়ারে বসে বলল, “বোতল খালি করে দিয়েছিস তোরা?”

সুমিত বলল, “তোর বউ লুকিয়ে রেখেছে। ঈশু! এনে দাও। তোমার হাজব্যান্ড ভীষণ আপসেট মনে হচ্ছে।”

ঈশিতা আস্তে বলল, “কফি-টফি খাক। আমি নিয়ে আসছি।”

কর্নেল বললেন, “মিঃ ব্যানার্জি কি ইভনিং ভিলা থেকে আসছেন?”

ঈশিতা ঘুরে দাঁড়িয়ে বলে উঠল, “ওই ভদ্রলোকের একটা প্রশ্নের উত্তর দেবে না কিন্তু। খেলার ছলে ইনভেস্টিগেট করছেন।”

নায়ার খুবই গম্ভীর হয়ে বলল, “তাতে ক্ষতি কী? তুমি কি মনে করো তোমার স্বামী ঘাতক? অদ্ভুত তোমার ধারণা ঈশিতা! একমত না হওয়ার জন্য দুঃখিত।”

কর্নেল চোখ বুজে বললেন, “আগামীকাল ককটেল ডিনার কি ক্যানসেল হল মিঃ ব্যানার্জি?”

বীতশোক ঠোঁটের কোনা কামড়ে ধরে তাকাল কর্নেলের দিকে। তারপর ভুরু কুঁচকে একটু হেসে বলল, “লিস্টে আপনার নাম দেখিনি। তবে পার্টিটা ক্যানসেল হয়নি। আরিফ আশ্বাস দিল ইউ নো, আরিফ ইজ মাই ফ্রেন্ড। তা ছাড়া কে একজন ভবঘুরে মার্কা লোক কোথায় মার খেয়ে এসে ইভনিং ভিলায় আশ্রয় নিতে ঢুকেছে এবং দৈবাৎ তার শেষ নিঃশ্বাস পড়েছে, এটা কোনও ব্যাপার নয়। সো মাচ আই ক্যান টেল য়ু–অনেস্টলি! ককটেল ডিনার হচ্ছে। কারণ আমার কোম্পানি হাথিয়াগড়ে ইস্পাত কারখানায় এক্সটেনশন প্রজেক্ট হাতে নিতে চায়। অল দা লোকাল বিগ গাইজ আর কামিং। ইভ আ মিনিস্টার। এ ছাড়া কুখ্যাত বলুন কি বিখ্যাত বলুন, এরিয়ার মাফিয়া লিডার কেতন সিং আসছে। মে বি, ইউ নো হিম।”

কর্নেল হাসলেন। “তালিকা বেশ লম্বা তা হলে?”

 “বাদ-সাদ দিয়ে শেষ অবধি তেরো।”

“আনলাকি থারটিন!” কর্নেল জিভ কেটে মাথাটা একটু দোলালেন। “হোয়াই নট মেক ইট ফরটিন অর টুয়েলভ?”

বীতশোক পকেট থেকে বিদেশি সিগারেটের প্যাকেটের বের করল। বলল, “লিস্ট ওখানে শেষ হয়নি। কারণ ওটা অফিসিয়াল লিস্ট। মাই টিম ইজ এক্সক্লডেড ইন দা লিস্ট। আমাকে বাদ দিন। আমি হোস্ট পক্ষের লোক। আমার মিসেস আমার টিমের চার্জে থাকবে। কাজেই তেরো প্লাস পাঁচ আঠারো।”

ঈশিতা কিচেন থেকে কফি নিয়ে ফিরে এল। বলল, “সোমনাথ! ইউ আর ড্রাংক! নীপু, ওকে ডাইনিংয়ে নিয়ে যাও। ম্যাথু বলল, এখনই ডিনার সেরে নিলে ভাল হয়। কৃষ্ণা, সুমিত, নায়ার! খেয়ে নাও গে। আমরা যাচ্ছি।”

সোমনাথকে সুমিত টানল। “অ্যাই! দু’ পেগেই মাইরি কাত! ওঠ। খাওয়া রেডি।”

সোমনাথ চোখ বুজে হেলান দিয়েছিল। চোখ খুলে সোজা হয়ে বসে বলল, “তো–হ্যাঁ! টিবেটান মংক সং খাপার একটা কথা ভাবছিলুম। The human form is won with difficulty. It is easy to lose!’ কী অসাধারণ কথা! একটা লোক তা হলে হিউম্যান ফর্ম হারিয়ে ফেলল? এত সহজে? আঁঃ?”

নীপা বলল, “আবার আঁতলামি?”

নায়ার ফিক করে হেসেই স্বভাবমতো গোঁফ ঢাকল। “আঁতলামি নয়, মাতলামি। ওঠ ব্যাটা!”

সোমনাথ সুমিত ও নায়ারের টানে উঠে দাঁড়াল। কর্নেলের দিকে তাকিয়ে বলল, “জানেন মশাই? ইনটুইশন–বোধ! তা না হলে অতটা পথ চলে এসে হঠাৎ আমার চারমিনার প্যাকেটের কথা মনে পড়বে কেন? তো ‘রোখকে’ বলে গাড়ি দাঁড় করিয়ে প্রায় দৌড়ে চলে গেলুম। এখন মনে হচ্ছে, হ্যাঁঃ–একটা মহৎ কাজ করতে পেরেছি। ওই মধ্যযুগীয় বাড়িগুলোর যা ব্যাপার, সকালে বঁটা হাতে কেউ এসে তবে দেখতে পেত এটা হিউম্যান বডি পড়ে আছে। ওই লোকগুলোকে তা জানি। ট্রিপিক্যাল ড্রাকুলা–আই রিপিট, ড্রাকুলা। হাঃ—ভ্যাম্পায়ার।”

সুমিত ও নায়ার তাকে টানতে টানতে ডাইনিং ঘরে নিয়ে গেল। ক্রিস্নান কর্নেলের দিকে তাকাতে তাকাতে চলে গেল। বাঁ হাতে নীপার কোমর জড়িয়ে ধরে আছে। ঈশিতা বলল, “বেশ ঠাণ্ডা দিচ্ছে বাইরে। বরং কফিটা নিয়ে এসো। ডাইনিংয়ে বসে খাবে। আমার খিদে পেয়েছে।”

সে জোর করে কফির পেয়ালা তুলে নিল। অগত্যা বীতশোককে যেতে হল তার সঙ্গে। কর্নেল একা বসে রইলেন। আরিফ আসতে বড্ড দেরি করছে।

তা হলে ককটেল-ডিনার পার্টিটা হচ্ছে। কর্নেলকে লেখা চিঠিটার কথা দৈবাৎ কেউ জেনে আগেই তাড়াহুড়ো করে প্রাণটা নিয়ে ফেলল কি? কিন্তু আরিফের কথায় আঁচ পাওয়া গেল, তত কিছু উঁচুদরের লোক নয়। হলে শনাক্ত করতে পারত ওরা। বীতশোক বলল, ভবঘুরে কেউ এবং বাইরে মোক্ষম মার খেয়ে আশ্রয় নিতে ঢুকেছিল। এখন কথা হল, ইভনিং ভিলার ফটক খোলা ছিল এবং হলঘরও ভোলা ছিল। কেন? ঘরে আলো ছিল না। কেন? ক্রিস্নান বলল, বীতশোক সবার শেষে আসে গাড়িতে। এটা প্রশ্নযোগ্য নয়। কোম্পানির এক পার্টনারের সঙ্গে একা কথা বলার দরকার থাকতেই পারে। কিন্তু গাড়িটা ফটকের বাইরে দাঁড় করানো ছিল। এ-ও একটা কেন।

ক্রিস্নানের মাথায় আউটসাইডারের কথাটা এসেছে। সে কি ওর বুদ্ধিমত্তার পরিচয়? ওর প্রখর পর্যবেক্ষণবোধ আছে। ক্রিস্নান সম্ভবত নীপা সেনেরই বন্ধু এবং নীপা সেন যেন সোমনাথ দাশগুপ্তের গার্জেন। প্রেম থাকা সম্ভব। তবে সোমনাথের ‘ভোলে-ভালে’ হাবভাব এবং কথাবার্তা থেকে মনে হয়, সে সিগারেটের প্যাকেট ফেলে আসতেই পারে এবং আনতে যেতেও পারে। সোমনাথ আগাথা ক্রিস্টির ডিটেকটিভ এরকুল পোয়ারোর বিখ্যাত উক্তি ‘লিটল গ্রে সেলস’ উল্লেখ করছে। কিন্তু হাতে প্রচুর প্রয়োজনীয় তথ্য না থাকলে মাথার ভেতরকার ক্ষুদ্র ধূসর কোষগুলো কোনও কাজ করতে পারে না।

শুধু বোঝা যাচ্ছে, এই কলকাতা টিমের চলে আসার এবং সোমনাথের ফিরে যাওয়ার মধ্যবর্তী সময়ে ঘটনাটা ঘটেছে! পাঁচ, দশ, পনের, কুড়ি, যত ন্যূনতম মিনিট হোক, তার মধ্যেই।

আর একটা কথা, চিঠির লেখক জানেন, কর্নেলের ওই পার্টিতে যাওয়ার সুযোগ জুটে যাবে। কিন্তু হাথিয়াগড়ে তো তার তত চেনা-জানা হোমরা-চোমরা কেউ নেই, পুলিশের উঁচুতলার কিছু অফিসার বাদে। তাদের বদলির চাকরি। অতএব সিদ্ধান্তে আসতে হয়, আরিফের সঙ্গে কর্নেলের সম্পর্কের কথা চিঠির লেখক জানেন। তার চেয়ে বড় পয়েন্ট, আরিফ পার্টিতে থাকবে, অজ্ঞাত পরিচয় লোকটির কি তা-ও জানা? এ দিকে আরিফের বন্ধু বীতশোক মুখার্জি!

নাকি আরিফ খান আমন্ত্রিতদের তালিকায় ভদ্রতাজনিত সর্বশেষ সংযোজন? তাই পার্টি দেওয়ার আগেই প্রাণটি নেওয়া হল?

তা যদি হয়ে থাকে, তা হলে চিঠির কথা দ্বিতীয় কেউ টের পায়নি। হঠাৎ হয়তো বন্ধুর সঙ্গে আরিফের উপস্থিতিই খুনিকে খুনের সময় বদলাতে বাধ্য করেছে।

এতক্ষণে আবার হেডলাইটের আলো গেটের নীচের দিক থেকে ছড়িয়ে এল। আরিফের জিপটা ঢুকল। তারপর সোজা বারান্দার নীচে এসে থামল। জিপ থেকে নেমে আরিফ বলল, “সরি বস! বড্ড দেরি করে ফেললাম। আমার বন্ধুরা শুয়ে পড়েছে নাকি?”

“নাহ। খাচ্ছে।” কর্নেল নিবুনিবু চুরুট টেনে উজ্জ্বল করলেন। “এখানে বসবে, নাকি ওপরে যাবে?”

“এখানেই বসি।” আরিফ খান বসে বলল, “ফার্স্ট কার্ড আপনিই খেলেছেন? নেক্সট কার্ড আমার হাতে। ইট ইজ আ ট্রাম্পকার্ড, আই ওয়ার্ন য়ু কর্নেল!”

“বডি শনাক্ত হয়েছে?”

 “ইয়া। অ্যান্ড য়ু নো হিম। সিওর।”

 “কেমন করে সিওর হচ্ছ, ডার্লিং?”

আরিফ হাসল। “সিগারেটের প্যাকেটের একটা টুকরো রোল করা অবস্থায় প্যান্টের পকেটে দেশলাইয়ের বাক্সে পাওয়া গেছে। কোনও সিগারেটের প্যাকেট অবশ্য ছিল না। তো প্যাকেটের টুকরোয় আপনার নাম ঠিকানা লেখা।” বলে সে পকেট থেকে ওটা বের করে দিল কর্নেলকে।

কর্নেল দেখে বললেন, “মাই গুডনেস! এ তো একই হাতের লেখা।” জ্যাকেটের ভেতর থেকে সেই চিঠিটা বের করে মিলিয়ে নিলেন। জিজ্ঞেস করলেন, “লোকটা কে?”

“আরিফ চিঠিটা পড়ে দেখে বলল, “বুঝলাম। এনিওয়ে, আপনার ক্লায়েন্ট বসন্ত হাজরা মারা পড়েছে।”

 “বসন্ত হাজরা?” কর্নেল অবাক হয়ে বললেন। “কস্মিনকালে কোনও বসন্ত হাজরাকে আমি চিনতুম না।”

“দেখলে চিনতে পারবেন–সিওর। তবে খুনটা ওখানে হয়নি।” আরিফ গম্ভীর হয়ে গেল। “রক্তের দাগ গেটের বাইরে রাস্তায় একটু পাওয়া গেছে। মাথার পেছনে শক্ত ভোতা কিছু দিয়ে মারা হয়েছিল। হলঘরে গিয়ে মারা পড়ে। হলঘরের দরজা পর্যন্ত রক্তের দাগ আছে। আমরা চলে আসার পর হলঘরের দরজা এবং গেট বন্ধ করতে দেরি হয়েছিল। গণেশ নামে একজন এ সব করে। সে অন্য কাজ করছিল। আমি গিয়ে দেখি, বডি ইজ অলরেডি ডিসকভার্ড। ঘর অন্ধকার ছিল। কিন্তু তারও এক্সপ্ল্যানেশন আছে। বসন্ত হাজরা। আততায়ীদের ভয়ে সুইচ টিপে আলো নিভিয়েছিল। সুইচে রক্তের ছাপ আছে। চলুন, আপনার ক্লায়েন্টকে দেখবেন।”

কর্নেল জোরে মাথা নেড়ে বললেন, “নাহ্ ডার্লিং! আমি ক্লান্ত।”