০৪. হাতে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটি

হাতে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটি নিয়ে ছেলেটি দরদর করে ঘামছে। রুহানের দিকে শূন্য

দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, আমি কখনো অস্ত্র ব্যবহার করি নি।

রুহান ছেলেটির কাঁধ স্পর্শ করে বলল, আমরা কেউই করি নি! তাতে কিছু আসে যায় না।

ছেলেটি ভাঙ্গা গলায় বলল, আমাকে মেরে ফেলবে।

সম্ভবত। রুহান নরম গলায় বলল, আপাতত সেটা নিয়ে চিন্তা কর না।

আমি কী করব?

তুম এখন দৌড়ে ঐ দিকে দেয়ালের পিছনে যাবে।

কিন্তু–

রুহান বলল, এর মধ্যে কোনো কিন্তু নেই। এখন ভয় পেলে হবে না। যাও।

আমি কী গুলি করতে করতে যাব?

গুলি করতে করতে দ্রুত ছুটতে পারবে না। কোনো কিছুর আড়ালে থেকে ঐ গ্রুজান জানোয়ারটার দিকে এক পশলা গুলি কর, সে তখন নিজেকে বাঁচানোর জন্যে আড়ালে সরে যাবে। জানোয়ারটা আড়াল থেকে আবার বের হবার আগে ছুটে কোনো একটা কিছুর আড়ালে চলে যাবে। আবার বের হবার আগে আবার এক পশলা গুলি করবে।

ছেলেটি ফ্যাকাসে মুখে বলল, তোমার কী ধারণা তাহলে আমি যেতে পারব?

রুহান হাসার চেষ্টা করে। বলল, হ্যাঁ পারবে অবশ্যই পারবে। যাও।

ছেলেটা চোখ বন্ধ করে একবার সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করে তারপর অস্ত্র হাতে এগিয়ে যায়।

দেয়ালের আড়াল থেকে অস্ত্রটা বের করে ছেলেটা ছাড়া ছাড়াভাবে কয়েকটা গুলি করল। জান সম্ভবত এর জন্যে প্রস্তুত ছিল না, তার গলায় কুৎসিত একটা গালি শোনা গেল। ছেলেটা দৌড়ে একটা পাথরের আড়ালে আশ্রয় নেয়। সেখান থেকে একটা বড় গাছের আড়ালে। আবার এক পশলা গুলি করে ছুটে আরেকটা পাথরের আড়ালে চলে গেল। জান সম্ভবত এরকম কিছু আশা করে নি, সে কুৎসিত ভাষায় গালাগাল করতে থাকে এবং তার মধ্যে ছেলেটা অন্যপাশে দেয়ালের আড়ালে চলে গেল।

রুহান মাথা ঘুরিয়ে তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অন্যদের বলল, দেখেছ?

অন্যেরা মাথা নাড়ল। রুহান বলল, এটাই হবে আমাদের টেকনিক। যাও পরেরজন। খুব সাবধান।

পরেরজনও ছাড়া ছাড়াভাবে গুলি করতে করতে এক পাথর থেকে অন্য পাথরের আড়ালে আশ্রয় নিয়ে অন্য পাশে চলে গেল। তৃতীয়জন রওনা দেবার। আগে রুহানের দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, আমি পারব না।

কেন পারবে না? দেখছ না দুজন চলে গেছে।

ছেলেটি শূন্য দৃষ্টিতে রুহানের দিকে তাকিয়ে বলল, আমার ভয় করে।

আমাদের সবার ভয় করে। কিন্তু সে জন্যে বসে থাকলে তো হবে না। যাও।

না। আমি পারব না।

তুমি পারবে। যাও।

ছেলেটা তবুও দাঁড়িয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকে। তখন সামরিক পোশাক পরা একজন এসে ছেলেটাকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। ছেলেটা হত বিহ্বলের মতো ফাঁকা জায়গাটাতে দাঁড়িয়ে থাকে, তাকে যে ছুটে যেতে হবে সেটাও যেন ভুলে গেছে।

রুহান চিৎকার করে বলল, দৌড়াও! দৌড়াও–

ছেলেটা রুহানের দিকে তাকাল, দেখে মনে হলো সে কী বলছে সেটা বুঝতে পারছে না। ঠিক তখন একটা গুলির শব্দ শোনা গেল এবং সাথে সাথে ছেলেটির শরীরটি মাটি থেকে কয়েক ইঞ্চি উপরে লাফিয়ে উঠে ধপ করে নিচে পড়ে গেল। রুহান তার চোখটি সরিয়ে নিতে চেষ্টা করল কিন্তু সরাতে পারল না, বিস্ফারিত চোখে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে রইল। ছেলেটির মুখে যন্ত্রণার। কোনো চিহ্ন নেই, সেখানে এক ধরনের বিস্ময়।

রুহান নিঃশব্দে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে রইল। কিছু মানুষের চিৎকার এবং হইচইয়ের শব্দ শোনা যায়। ছেলেটির দেহটি সরিয়ে নিচ্ছে, এক্ষুনি কাটাকাটি করে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সরিয়ে নেবে, তারপর সেগুলো প্যাকেটে সংরক্ষণ করে। চড়া দামে বিক্রি করা হবে।

রুহানের হাতে কে যেন একটা অস্ত্র ধরিয়ে দিয়েছে, রুহান মাথা ঘুরিয়ে তাকাল। ভাবলেশহীন মুখে একজন মানুষ তাকে স্পর্শ করে বলল, এখন তুমি।

আমি?

হ্যাঁ। যাও।

রুহান সামনের খোলা জায়গাটার দিকে তাকিয়ে দেখল সেখানে বড় বড় কয়েকটা পাথর। গাছ-গাছালি, ছোট একটা খাল এবং ঝোপঝাড়। তার ভেতর দিয়ে তাকে ছুটে যেতে হবে। সে যখন ছুটে যাবে তখন গ্রুজান তার স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে তাক করে থাকবে তাকে গুলি করে মেরে ফেলার জন্যে। এটা যেন একটা খেলা। যাদের নিয়ে এই খেলাটি খেলা হচ্ছে তারা যেন মানুষ নয়, তারা যেন খেলার গুটি।

ভাবলেশহীন চেহারার মানুষটি রুহানকে একটা ধাক্কা দিয়ে বলল, যাও।

রুহান স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটি হাতে দেয়ালের আড়াল থেকে বের হয়ে এলো। একটা পাথর থেকে অন্য পাথরের আড়ালে ছুটে না গিয়ে সে সোজা গ্রুজানের দিকে হেঁটে যেতে থাকে।

পেছন থেকে কে যেন চিৎকার করে ওঠে, এই ছেলে তুমি কোথায় যাচ্ছ?

রুহান সেই কথায় কান দিল না।

গ্রুজান স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, অবাক হয়ে রুহানের দিকে তাকিয়ে রইল। মনে হলো কিছু একটা বলবে কিন্তু কিছু বলল না। রুহান তার কাছাকাছি গিয়ে স্থির হয়ে দাঁড়াল। জানের মুখে একটা বিচিত্র হাসি ফুটে ওঠে, খসখসে গলায় বলল, তোমার কী মাথা খারাপ হয়ে গেছে?

রুহান কোনো কথা না বলে স্থির চোখে জানের দিকে তাকিয়ে রইল। গ্রুজান মুখ বিকৃত করে বলল, নর্দমার পোকা! তুমি যখন ছুটে যাবে তখন তোমাকে আমি পাখির মতো গুলি করে মারতে পারি। সামনাসামনি মারার আমার কোনো ইচ্ছে নেই। যাও। ভাগো–পালাও।

রুহান এবারেও কোনো কথা না বলে স্থির দৃষ্টিতে জানের দিকে তাকিয়ে রইল। গ্রুজান ধমক দিয়ে বলল, আহাম্মকের বাচ্চা! কী হলো তোমার?

কিছু হয় নি।

তাহলে?

রুহান ফিসফিস করে বলল, তোমার আর আমার মধ্যে কে বেঁচে থাকবে সেটা নির্ভর করছে–কে আগে তার অস্ত্রটি তুলতে পারে।

গ্রুজান হতচকিতের মতো রুহানের দিকে তাকিয়ে রইল। কয়েকবার চেষ্টা করে বলল, তু-তু-তুমি?

হ্যাঁ।

আহাম্মকের বাচ্চা! তুমি ভাবছ তুমি আমাকে গুলি করবে?

আমি কিছু ভাবছি না। আমি তোমার দিকে তাকিয়ে আছি। যেই মুহূর্তে তুমি অস্ত্রটা তোলার চেষ্টা করবে, আমি তখন তোমাকে গুলি করব।

জান হতবাক হয়ে রুহানের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, তু-তুমি?

হ্যাঁ। আমি প্রস্তুত।

গ্রুজান রুহানের চোখের দিকে তাকাল। গ্রুজানের চোখে প্রথমে ছিল তাচ্ছিল্য, রুহানের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে সেই দৃষ্টিতে প্রথম বিস্ময় তারপর খুব ধীরে ধীরে বিস্ময়কর এক ধরনের আতঙ্ক এসে ভর করে। রুহান দেখতে পায় গ্রুজানের সমস্ত শরীর ধীরে ধীরে শক্ত হয়ে আসছে, দেখতে পায় তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে উঠছে। গ্রুজান প্রথমে বড় বড় কয়েকটা নিঃশ্বাস নিল তারপর ঠিক যেই মুহূর্তে অস্ত্রটি তোলার চেষ্টা করে রুহান সাথে সাথে তাকে গুলি করল।

রুজানের দেহটি গড়িয়ে তার পায়ের কাছে এসে পড়ল। রুহান স্থির দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে থাকে। চারপাশে মানুষের চিকার, হইচই, চেচামেচি এবং পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে। রুহান নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে থাকে, কিছুতেই তার কিছু আসে যায় না। সে কখনোই ভাবে নি যে সে কখনো কোনো মানুষকে খুন করবে, কিন্তু কী আশ্চর্য সে সত্যি সত্যি একটা মানুষকে খুন করেছে। সত্যিই কী যাকে খুন করেছে সে মানুষ?

মধ্যবয়স্ক মানুষটি চতুর্থবারের মতো রুহানকে জিজ্ঞেস করল, তুমি কেমন করে জানকে হত্যা করেছ?

রুহান চতুর্থবারের মতো উত্তর দিল, আমি জানি না।

মধ্যবয়স্ক মানুষটির পাশে বসে থাকা লাল চুলের মহিলাটি বলল, তুমি জান না বললে তো হবে না। সবাই দেখেছে তুমি তাকে গুলি করে মেরেছ।

রুহান মাথা নেড়ে বলল, হ্যাঁ। আমি আসলে হত্যা, খুন এসব কখনো দেখি নি। যখন দেখলাম ছেলেটাকে গ্রুজান মেরে ফেলল–

না না না। লাল চুলের মহিলাটি মাথা নেড়ে বলল, তুমি কেন মেরেছ সেটা জিজ্ঞেস করি নি। জিজ্ঞেস করেছি কেমন করে মেরেছ।

রুহান একটু অবাক হয়ে বলল, আমাকে যে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটা দিয়েছিল —

আমরা সেটা জানি! লাল চুলের মহিলাটি একটু অধৈর্য হয়ে বলল, আমরা জানতে চাইছি গ্রুজানের মতো এত বড় একজন যোদ্ধাকে তুমি কেমন করে হত্যা করলে?

রুহান মাথা নেড়ে বলল, আমি জানি না।

মধ্যবয়স্ক মানুষটি বলল, তুমি অস্ত্র ব্যবহার করা কোথায় শিখেছ?

আমি কোথাও শিখি নি। এটা ছিল আমার প্রথম অস্ত্র ব্যবহার।

মধ্যবয়স্ক মানুষটি মাথা নেড়ে বলল, অসম্ভব!

না। অসম্ভব না। রুহান মাথা নেড়ে বলল, সত্যিই আমি এর আগে কখনো অস্ত্র হাতে নেই নি।

রুহানের সামনে বসে থাকা চারজন মানুষ কেমন যেন হতচকিত হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইল। এতক্ষণ চুপ করে বসে থাকা দুজন নিজেদের ভেতরে নিচু গলায় একটু কথা বলল। তারপর রুহানের দিকে তাকাল, একজন বলল, তোমাকে অভিনন্দন ছেলে।

রুহান অবাক হয়ে বলল, অভিনন্দন?

হ্যাঁ।

আমি তোমাদের একজনকে মেরে ফেলেছি সে জন্যে তোমরা আমাকে অভিনন্দন জানাচ্ছ?

হ্যাঁ। তুমি যেভাবে গ্রুজানকে মেরেছ তার তুলনা নেই। মানুষটি জিব দিয়ে পরিতৃপ্ত ভঙ্গির একটা শব্দ করে বলল, তোমার মতো এরকম তড়িৎগতির মানুষ আমরা আগে কখনো দেখি নাই।

রুহান এখনো মানুষটির কথা বিশ্বাস করতে পারছিল না, ইতস্তত করে বলল, কিন্তু তোমাদের জান?

মানুষটি হাত নেড়ে পুরো বিষয়টি উড়িয়ে দেবার ভঙ্গি করে বলল, আরে ধেৎ, তোমার জান! এক গ্রুজান গিয়েছে তো আরেক গ্রুজান আসবে। সত্যি কথা বলতে কী গ্রুজান তো আর পুরোপুরি ক্ষতি হয় নি তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি *রে দিয়েছি। কিন্তু তোমাকে তো আমরা পেয়েছি।

আমাকে?

হ্যাঁ। আমরা একটা শিল্প প্রতিষ্ঠান। মানুষ ধরে এনে তাকে বিক্রি করি। কখনো কেটেকুটে কখনো মগজে ইলেকট্রড বসিয়ে কখনো সৈনিক হিসেবে এবং যদি খুব কপাল ভালো হয় তখন আমরা তোমার মতো একজন পাই, যাকে আমরা খেলোয়াড় হিসেবে বিক্রি করতে পারি।

রুহান অবাক হয়ে বলল, খেলোয়াড়? কীসের খেলোয়াড়?

লাল চুলের মহিলাটি বলল, এক সময় পৃথিবীতে কত হাজার রকম বিনোদন ছিল! এখন কিছু নেই। এখন একমাত্র বিনোদন হচ্ছে এই খেলা—

কীসের খেলা?

একজন আরেকজনকে গুলি করার খেলা।

রুহান হতবাক হয়ে সামনে বসে থাকা মানুষগুলোর দিকে তাকিয়ে রইল। সে এখনো পরিষ্কার করে বুঝতে পারছে না তারা কী নিয়ে কথা বলছে। মধ্যবয়স্ক মানুষটি মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল, আমরা তোমাকে একেবারে প্রথম শ্রেণীর ট্রেনিং দিব। তোমাকে সব ধরনের অস্ত্র চালানো শেখাব তারপর তোমাকে লক্ষ ইউনিটে বিক্রি করব।।

লাল চুলের মহিলাটি মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল, তোমার উপর বাজি ধরা হবে।

বাজি?

হ্যাঁ। আমরা আশা করছি দেখতে দেখতে তোমার রেটিং উপরে উঠে যাবে। আমাদের নাম তখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে।

রুহান খানিকটা বিস্ময় নিয়ে তার সামনে বসে থাকা মানুষগুলোর দিকে তাকিয়ে রইল। মধ্যবয়স্ক মানুষটি বলল, এখানে তোমাকে ট্রেনিং দেয়া যাবে না। ট্রেনিংয়ের জন্যে তোমাকে আমাদের কেন্দ্রীয় অফিসে পাঠাতে হবে।

সেটা কোথায়?

লাল চুলের মহিলাটি বলল, এখান থেকে শ খানেক কিলোমিটার দূরে। পাহাড়ের উপর। চমত্তার জায়গা।

মধ্যবয়স্ক মানুষটি বলল, হ্যাঁ চমৎকার জায়গা, পাহাড়ের উপর চমৎকার একটি হৃদ। সেই হৃদের পাশে অফিস।

সেখানে আজেবাজে মানুষের ভিড় নেই।

খাওয়া খুব ভালো। সব খাঁটি প্রাকৃতিক খাবার। মধ্যবয়স্ক মানুষটি জিব দিয়ে তার ঠোঁট চেটে বলল, তুমি যদি চাও তোমাকে সঙ্গিনী দেয়া হবে। চমৎকার সব মেয়ে আছে হেড অফিসে।

রুহান কোনো কথা না বলে মানুষগুলোর দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। লাল চুলের মহিলাটি বলল, তোমার কী কোনো প্রশ্ন আছে ছেলে?

আমার নাম রুহান।

ও, আচ্ছা। হ্যাঁ। রুহান–তোমার কী কোনো প্রশ্ন আছে রুহান?

হ্যাঁ। আমার একটা প্রশ্ন আছে।

কী প্রশ্ন?

আমি যদি তোমাদের প্রস্তাবে রাজি না হই? আমি যদি মানুষকে গুলি করে মারার এই খেলা খেলতে না চাই?

সামনে বসে থাকা মানুষগুলো একজন আরেকজনের দিকে তাকাল। মধ্যবয়স্ক মানুষটির মুখে একটু কৌতুকের হাসি ফুটে ওঠে এবং সে হঠাৎ শব্দ করে হেসে ওঠে।

রুহান বলল, কী হলো? তুমি হাসছ কেন?

মানুষটি হাসি থামিয়ে বলল, তোমার কথা শুনে। তোমার আগে কেউ কখনো এই প্রশ্ন করে নি।

ঠিক আছে। কিন্তু আমি এই প্রশ্ন করছি।

ঠিক আছে ছেলে–

আমার নাম রুহান।

ঠিক আছে রুহান, আমি তোমাকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিই। মধ্যবয়স্ক মানুষটা আবার জিব দিয়ে তার ঠোঁটটা ভিজিয়ে নিয়ে বলল, পৃথিবীটা এখন আগের মতো নেই রুহান। মানুষ এখন নিজের ইচ্ছে মতো কিছু করতে পারে না। এখন মানুষ হয় আদেশ দেয় না হয় আদেশ শোনে। তোমার এখন আদেশ শোনার কথা। তুমি যদি আমাদের আদেশ না শোনো তাহলে তোমাকে আমাদের কোনো প্রয়োজন নেই।

লাল চুলের মহিলাটি মাথা নেড়ে বলল, হ্যাঁ, তোমাকে এখন আমাদের কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু তোমার মস্তিষ্কটা আমরা ব্যবহার করতে পারব না, কিংবা তোমার হৃৎপিণ্ডটা কারো কাছে বিক্রি করতে পারব না সে কথাটা তো কেউ বলে দেয় নি। বুঝেছ?

রুহান একটু মাথা নেড়ে বলল, বুঝেছি।

চমৎকার! মধ্যবয়স্ক মানুষটা বলল, তুমি তাহলে প্রস্তুত হয়ে যাও। তোমাকে আমরা এখনই আমাদের কেন্দ্রীয় অফিসে পাঠাব।

সামনে বসে থাকা চারজন মানুষ উঠে দাঁড়ায় এবং রুহান হঠাৎ নিজের ভেতরে এক ধরনের ক্লান্তি অনুভব করে। গভীর এক ধরনের ক্লান্তি।