ওল্ড স্টেটমেন্ট
নিউ স্টেটমেন্ট
1 of 2

রাজাবলি ১ – ২০

১ বিন্হদদ ছিলেন অরামের রাজা। তিনি তাঁর সেনাবাহিনী এক জায়গায় জড়ো করলেন। সেখানে তাঁর সঙ্গে আরো ৩২ জন রাজা য়োগদান করলেন। তাঁদের সঙ্গে ঘোড়া ও রথ ছিল। তারপর তারা সকলে মিলে শমরিয় আক্রমণ করে শমরিয় শহরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন।
২ রাজা বিন্হদদ ইস্রায়েলের রাজা আহাবের কাছে শহরে বার্তাবাহক পাঠালেন।
৩ তিনি বললেন, “তুমি আমাকে তোমার সোনা, রূপো, স্ত্রী, পুত্রকন্যা সবকিছু সমর্পণ করো।”
৪ ইস্রায়েলের রাজা উত্তর দিলেন, “মহারাজ আমি আপনার আনুগত্য স্বীকার করলাম। আমার যা কিছু আছে এখন সবই আপনার হল।
৫ বার্তাবাহকরা ফিরে এসে আহাবকে জানালো বিন্হদদ বলেছেন, “আমি তোমাকে আগেই তোমার সোনা, রূপো, স্ত্রী পুত্রকন্যা সবাই আমায় দিয়ে দিতে বলেছিলাম।
৬ আগামীকাল আমার লোকরা গিয়ে তোমার ও তোমার কর্মচারীদের বাড়ি তল্লাশি করবে। তারা আমার কাছে নিয়ে আসার জন্য যাবতীয় মূল্যবান সম্পদ নিয়ে নেবে।”‘
৭ আহাব তখন দেশের সমস্ত প্রবীণদের এক বৈঠক ডাকলেন। আহাব বললেন, “দেখুন, বিন্হদদ একটা গোলমাল করবার চেষ্টায আছে। প্রথমে ও আমার কাছে আমার স্ত্রী, পুত্রকন্যা, সোনা রূপো সবকিছু চেয়েছিল। আমি সে সবই ওকে দিতে রাজী হয়েছিলাম। কিন্তু এখন ও সব কিছুই নিয়ে য়েতে চাইছে।”
৮ সমস্ত প্রবীণরা বললেন, “ওর কথা শোনার দরকার নেই। ও যা বলছে তা আপনি কোনো মতেই করবেন না।”
৯ আহাব তখন বিন্হদদকে খবর পাঠালেন, “প্রথমে আপনি যা বলেছিলেন আমি তাতে সম্মত আছি, কিন্তু আপনার দ্বিতীয় নির্দেশ মানা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”বিন্হদদের দূতরা এ খবর রাজার কাছে নিয়ে গেল।
১০ তারপর তারা বিন্হদদের কাছ থেকে এসে জানালো, “আমি শমরিয় শহরকে ধ্বংস করে ধূলোয় মিশিয়ে দেব। আমি প্রতিজ্ঞা করছি য়ে এই শহর থেকে আমার লোকদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার মতো এক টুকরো স্মারক আমি অবশিষ্ট রাখবো না। যদি এ কাজ করতে না পারি আমার ঈশ্বর য়েন আমাকেই ধ্বংস করেন।”
১১ রাজা আহাব জবাব দিলেন, “যাও বিন্হদদকে গিয়ে বলো, যুদ্ধে যাওয়ার আগে বর্ম য়ে পরে তার যুদ্ধ করে এসে য়ে বর্ম খোলে তার মতো গলাবাজি সাজে না।”
১২ বিন্হদদ তখন তাঁবুতে বসে অন্যান্য রাজাদের সঙ্গে দ্রাক্ষারস পান করছিলেন। সে সময় বার্তাবাহকরা রাজা আহাবের কাছ থেকে ফিরে এসে তাঁকে এই খবর দিতে তিনি তাঁর সেনাবাহিনীকে শহর আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হতে বললেন। তখন তাঁর লোকরা যুদ্ধ করবার জন্য য়ে যার নিজের জায়গায় সরে গেল।
১৩ সে সময় এক ভাববাদী রাজা আহাবকে গিয়ে বলল, “প্রভু বলেছেন, ‘তুমি কি ঐ সুবিশাল সেনাবাহিনী দেখতে পাচ্ছো? আমি বয়ং আজ তোমায় ঐ বাহিনীকে যুদ্ধে হারাতে সাহায্য করবো। তাহলেই তুমি বুঝবে আমিই প্রভু।”
১৪ আহাব জিজ্ঞাসা করলেন, “ওদের যুদ্ধে হারানোর জন্য আপনি কাকে ব্যবহার করবেন?”সেই ভাববাদী উত্তর দিল, “প্রভু বলেছেন, ‘সরকারী রাজকর্মচারীদের তরুণ সহকারীদের আমি ব্যবহার করবো।”‘তখন রাজা জিজ্ঞেস করলেন, “মূল সেনাবাহিনীর সেনাপতিত্ব কে করবে?”ভাববাদী উত্তর দিল, “আপনি।”
১৫ আহাব তখন সরকারী কর্মচারীদের তরুণ সহকারীদের জড়ো করলেন। সব মিলিয়ে এরা সংখ্যায় ছিল ২৩২ জন। তারপর রাজা ইস্রায়েলের সেনাবাহিনীকে ডেকে পাঠালেন। সব মিলিয়ে সেখানে ৭,000 জন ছিল।
১৬ দুপুর বেলায় যখন বিন্হদদ ও অন্যান্য ৩২ জন রাজা দ্রাক্ষারস পান করে তাঁবুতে বেহুঁশ হয়ে পড়েছিলেন সে সময়ে রাজা আহাব আক্রমণ শুরু করলেন।
১৭ তরুণ সহকারীরাই প্রথম আক্রমণ করলো। রাজা বিন্হদদের লোকরা তাঁকে জানাল, শমরিয়া থেকে সেনারা যুদ্ধ করতে বেরিয়েছে।
১৮ বিন্হদদ বললেন, “হতে পারে ওরা যুদ্ধ করতে আসছে অথবা ওরা হয়তো শান্তি প্রস্তাব নিয়ে আসছে। ওদের জীবন্ত ধরে ফেলো।”
১৯ রাজা আহাবের তরুণ য়োদ্ধারা আক্রমণের সামনের দিকে ছিল আর ইস্রায়েলের সেনাবাহিনী ওদের অনুসরণ করছিল।
২০ ইস্রায়েলের সমস্ত ব্যক্তি তাদের সামনে যাকে পেলো হত্যা করল। তখন অরামের লোকরা পালাতে শুরু করল। ইস্রায়েলের সেনাবাহিনী তাদের ধাওযা করলো। রাজা বিন্হদদ কোনো মতে রথের একটা ঘোড়ায় চেপে পালালেন।
২১ রাজা আহাব সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দিয়ে অরামের সেনাবাহিনীর সমস্ত ঘোড়া ও রথ কেড়ে নিলেন। রাজা আহব এভাবেই অরামীয় সেনাবাহিনীকে চূড়ান্ত ভাবে পরাজিত করেছিলেন।
২২ তারপর সেই ভাববাদী রাজা আহাবের কাছে গিয়ে বললেন, “আগামী বসন্তে অরামের রাজা বিন্হদদ আবার আপনার সঙ্গে যুদ্ধ করতে ফিরে আসবে। এখন ফিরে গিয়ে আপনি আপনার সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করুন আর তার বিরুদ্ধে রাজ্য রক্ষা করার জন্য সতর্ক ভাবে পরিকল্পনা করুন।”
২৩ রাজা বিন্হদদের রাজকর্মচারীরা তাঁকে বললেন, “ইস্রায়েলের দেবতারা আসলে পর্বতের দেবতা। আর আমরা পর্বতে গিয়ে যুদ্ধ করেছি তাই ইস্রায়েলের লোকরা জিতে গিয়েছে। ওদের সঙ্গে এবার সমতল ভূমিতে যুদ্ধ করা যাক, তাহলে আমরা জিতে যাবো।
২৪ আপনি ঐ ৩২ জন রাজাকে সেনাবাহিনীর ওপর কর্তৃত্ব করতে না দিয়ে সেনাপতিদের সেনাবাহিনী পরিচালনা করতে দিন।
২৫ “প্রথমে আপনি ধ্বংস হয়ে যাওয়া সেনাবাহিনীর মতো আরেকটা বাহিনী গড়ার জন্য সেনা জড়ো করুন। আগের সেনাবাহিনীর মতো ঘোড়া ও রথ জোগাড় করুন। তারপরে চলুন ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গে সমতল ভূমিতে গিয়ে যুদ্ধ করি। তাহলেই আমরা জিতবো।” বিন্হদদ তাদের পরামর্শ অনুযায়ীকাজ করলেন।
২৬ বসন্তকাল এলে বিন্হদদ অরামের লোকদের জড়ো করে ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে অফেকে গেলেন।
২৭ ইস্রায়েলীয়রাও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়েছিল। তারাও অরামের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করতে গেল এবং তাদের তাঁবূর ঠিক উল্টোদিকে নিজেদের তাঁবু গাড়ল। শত্রুপক্ষের তুলনায় ইস্রায়েলীয় সেনাবাহিনীকে দুটো ছোট ছোট ছাগলের পালের মতো দেখাচ্ছিল। এদিকে অরামীয় সেনারা গোটা মাঠ ছেযে ফেললো।
২৮ ঈশ্বরের এক জন লোক তখন এসে রাজা আহাবকে বলল, “প্রভু বলেছেন, ‘অরামীয়দের ধারণা আমি কেবলমাত্র পর্বতেরই প্রভু ও ঈশ্বর, সমতল ভূমির নয়। তাই আমি এবার তোমায় এই বিরাট সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করতে সাহায্য করব। তাহলে তুমি বুঝবে আমি সর্বশক্তিমান প্রভু।”‘
২৯ দুই পক্ষের সেনাবাহিনী মুখোমুখি তাঁবু গেড়ে আরো সাতদিন বসে থাকল। সাত দিনের দিন যুদ্ধ শুরু হল। এক দিনেই ইস্রায়েলীয়রা অরামীয়দের ১,00,000 সৈন্যকে হত্যা করল।
৩০ যারা বেঁচে থাকল তারা পালিয়ে অফেক শহরে আশ্রয় নিল। কিন্তু শহরের দেওয়াল ভেঙ্গে পড়ায সেই সেনাবাহিনীর আরো ২৭,000 সৈন্যের মৃত্যু হল। বিন্হদদ ও অফেকে পালিয়ে গিয়ে একটি বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন।
৩১ তাঁর ভৃত্যরা তাঁকে বলল, “আমরা শুনেছি ইস্রায়েলের রাজারা দয়ালু হন। চলুন আমরা চটের পোশাক পরে মাথায় দড়ি দিয়ে ইস্রায়েলের রাজার সামনে যাই। তাহলে হয়তো তিনি আমাদের প্রাণে মারবেন না।”
৩২ তারা তখন সকলে চটের পোশার পরে মাথায় দড়ি দিয়ে ইস্রায়েলের রাজার সামনে এসে বলল, “আপনার ভৃত্য বিন্হদদ প্রাণ ভিক্ষা চাইতে এসেছে।”আহাব বললেন, “বিন্হদদ এখনও বেঁচে আছে, সে তো আমার ভাইযের মত।”
৩৩ বিন্হদদের লোকরা চেয়েছিল রাজা আহাব এমন কিছু প্রতিশ্রুতি দিন যাতে বোঝা যায় তিনি রাজা বিন্হদদকে হত্যা করবেন না। আহাবের মুখে ‘ভাই’ সম্বোধন শুনে বিন্হদদের পরামর্শদাতারা সঙ্গে সঙ্গে বলল, “হ্যাঁ, মহারাজ বিন্হদদ আপনার ভাই হলেন।”আহাব বললেন, “তাঁকে আমার কাছে নিয়ে এসো।” বিন্হদদ রাজা আহাবের কাছে এলে আহাব তাঁকে তাঁর সঙ্গে রথে চড়তে বললেন।
৩৪ বিন্হদদ তাঁকে বললেন, “আহাব, আমার পিতা তোমার পিতার কাছ থেকে য়ে সমস্ত শহর নিয়েছিলেন আমি সেই সমস্তই তোমাকে ফেরত্‌ দেব। আর তাছাড়া তুমি দম্মেশকে দোকান বসাতে পার য়েমন আমার পিতা শমরিয়ায বসিযে ছিলেন।”আহাব উত্তর দিলেন, “তুমি যদি এই প্রতিশ্রুতি দাও তাহলে আমি তোমাকে মুক্ত করে দিচ্ছি।” তারপর এই দুই রাজার মধ্যে শান্তি চুক্তি সাক্ষরিত হলে রাজা আহাব রাজা বিন্হদদকে মুক্তি দিলেন।
৩৫ এক ভাববাদী আরেক ভাববাদীকে আঘাত করতে বললেন। তিনি এরকম বলেছিলেন কারণ প্রভু তাঁকে এই নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু অন্য ভাববাদী তাকে আঘাত করতে রাজী হলেন না।
৩৬ তখন সেই প্রথম ভাববাদী বললেন, “তুমি প্রভুর আদেশ অমান্য করেছ, তাই এখান থেকে যাওয়ার পথে এক সিংহের হাতে তোমার মৃত্যু হবে।” দ্বিতীয় ভাববাদী সে জায়গা থেকে যাওয়ার সময় একটা সিংহ এসে তাকে হত্যা করল।
৩৭ প্রথম ভাববাদী তখন আরেক ব্যক্তির কাছে গিয়ে তাকে আঘাত করতে লাগল।এই ব্যক্তি আঘাত করে ভাববাদীকে আহত করলে,
৩৮ ভাববাদী একটি কাপড়ে মুখ ঢাকলেন। এর ফলে কেউ সেই ভাববাদীকে চিনতে পারছিল না। সেই ভাববাদী পথের ধারে রাজার যাওয়ার অপেক্ষায বসে থাকলেন।
৩৯ রাজা এলে সেই ভাববাদী তাঁকে বললেন, “আমি যখন যুদ্ধে গিয়েছিলাম তখন আমাদের দলের একজন এক শত্রু সৈন্যকে নিয়ে এসে আমাকে তাকে পাহারা দিতে বলে। সে বলেছিল, ‘একে পাহারা দাও। যদি ও পালিয়ে যায় তাহলে তোমাকে ওর বদলে প্রাণ দিতে হবে, আর না হলে ৭৫ পাউণ্ড রূপো জরিমানা দিতে হবে।’
৪০ কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত: আমি তখন অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় শত্রু সেনাটি পালিয়ে যায়।”ইস্রায়েলের রাজা উত্তর দিলেন, “তুমি বলছো তুমি বিপক্ষ দলীয এক সেনাকে পালিয়ে য়েতে দেওয়ার দোষে দোষী। এবার কি হবে তা তো তুমি জানোই। ঐ সেনাটির কথা মতোই তোমায় কাজ করতে হবে।”
৪১ তখন সেই ভাববাদী তাঁর মুখ থেকে কাপড় সরালে ইস্রায়েলের রাজা দেখে বুঝতে পারলেন য়ে তিনি এক জন ভাববাদী।
৪২ সেই ভাববাদী রাজাকে বললেন, “প্রভু বলেছেন, ‘আমি যাকে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিলাম তুমি তাকে মুক্তি দিয়েছ। তাই তোমায় তার জায়গা নিতে হবে। তোমার মৃত্যু হবে। আর তোমার প্রজারা তোমার শত্রুর জায়গা নেবে এবং তারাও মারা যাবে।”‘
৪৩ রাজা তখন চিন্তিত ও দুঃখিত মনে শমরিয়ায তাঁর বাড়িতে ফিরে এলেন।