ওল্ড স্টেটমেন্ট
নিউ স্টেটমেন্ট
1 of 2

বিচারকচরিত ১৯

১ সেই সময়, ইস্রায়েলীয়দের কোন রাজা ছিল না।পাহাড়ী দেশ ইফ্রয়িমের সীমান্তে একজন লেবীয় থাকত। সেই লোকটার একজন দাসী ছিল, তাকে একরকম তার স্ত্রীও বলা যায়। সে ছিল যিহূদার বৈত্‌লেহম শহরের।
২ কিন্তু সে (দাসীটি) তার প্রতি অবিশ্বস্ত ছিল। সে বৈত্‌লেহমে যিহূদায় তার পিতার বাড়ি চলে গেল। সে সেখানে চার মাস কাটালো।
৩ তারপর তার স্বামী তার কাছে গেলো। সে তার সঙ্গে বেশ ভালোভাবেই কথাবার্তা বলবে ঠিক করেছিল, এই আশায যদি স্ত্রী তার কাছে ফিরে আসে। একজন ভৃত্য ও দুটো গাধা নিয়ে সে মেয়েটির পিতার বাড়ী গেল। তাকে দেখতে পেয়ে মেয়েটির পিতা বেরিয়ে এসে তাকে আদর করে ডাকল। পিতা তো বেশ খুশী হল।
৪ মেয়ের পিতা লেবীয়টিকে তার বাড়িতে নিয়ে এল। তাকে সেখানে থাকবার জন্য বলল। লেবীয় সেখানে তিনদিন থেকে গেল। শ্বশুরবাড়িতে সে খাওয়া-দাওযা, পান ভোজন করে আর ঘুমিযে দিন কাটাল।
৫ চতুর্থ দিনে তারা খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠল। লেবীয় লোকটি চলে যাবার জন্য প্রস্তুত হল। কিন্তু শ্বশুরমশাই জামাতাকে বলল, “আগে কিছু খেযেদেযে নাও, তারপর যেও।”
৬ তাই লেবীয় লোকটি ও শ্বশুরমশাই একসঙ্গে খেতে বসল। খাওয়া হয়ে যাবার পর শ্বশুর বলল, “আজকের রাতটা থেকে যাও। আরাম করো, আনন্দ করো। তারপর বিকেল হলে চলে যেও।” সুতরাং তারা দুজন একসঙ্গে খাওয়া দাওযা করল।
৭ লেবীয় তারপর যাবার উদ্যোগ করলে শ্বশুর তাকে আর একরাত্রি থাকতে অনুরোধ করল।
৮ পঞ্চম দিনে ভোরবেলা লেবীয় ঘুম থেকে উঠে রওনা হবার উদ্যোগ করল। কিন্তু শ্বশুর আবার জামাতাকে বলল, “আগে তো কিছু খাও। আজ বিকাল পর্য়ন্ত বিশ্রাম কর।” অতএব তারা দুজন একসঙ্গে খাওয়া-দাওযা করল।
৯ তারপর লেবীয় লোকটি তার দাসী আর ভৃত্যের যাবার উদ্যোগ করলে শ্বশুর বলল, “এখন অন্ধকার হয়ে গেছে। দিন তো একরকম শেষ হয়ে গেছে। তাই বলছি কি, আজকের রাতটা থেকেই যাও। ভালভাবে রাতটা কাটাও। কাল সকাল সকাল উঠে চলে যেও।”
১০ এবারে লেবীয় লোকটি আর রাত কাটাতে চাইল না। গাধা দুটো আর দাসীটিকে সঙ্গে নিয়ে সে দূরে য়িবূষ শহরের দিকে চলে গেল। (য়িবূষ জেরুশালেমের আর একটি নাম।)
১১ দিন প্রায় শেষ হয়ে গেল। তারা য়িবূষ শহরের কাছাকাছি পৌঁছাল। তখন ভৃত্যটি তার মনিব লেবীয় লোকটিকে বলল, “এই য়িবূষ শহরে আজ রাত কাটানো যাক।”
১২ কিন্তু তার মনিব লেবীয় লোকটি বলল, “না, আমরা অপরিচিত শহরের ভেতরে যাব না। ওরা তো ইস্রায়েলের লোক নয়। আমরা গিবিয়া শহরে চলে যাব।’
১৩ সে আরও বলল, “চলো গিবিয়া কি রামা – এই দুটো শহরের যে কোন একটায আমরা গিয়ে সেখানে রাত কাটিযে দিতে পারি।”
১৪ তাই লেবীয় লোকটি তার সঙ্গীকে নিয়ে এগিয়ে চলল। গিবিয়ায় পৌঁছবার সঙ্গে সঙ্গে সূর্য় অস্ত গেল। গিবিয়া হল বিন্যামীন পরিবারগোষ্ঠীর দখলে।
১৫ তারা গিবিয়ায় থামল। সেই শহরেই তারা রাত কাটাবে ঠিক করল। শহরের একটা খোলা জায়গায় তারা বসে পড়ল। কিন্তু কেউই তাদের বাড়িতে ডেকে এনে রাত কাটাবার জন্য বলল না।
১৬ সেদিন সন্ধ্যায় ক্ষেত থেকে একজন বৃদ্ধ লোক শহরে এল। তার বাড়ী ইফ্রয়িমের পাহাড়ী অঞ্চলে হলেও গিবিয়াতেই সে বসবাস করে। (গিবিয়ার লোকরা সকলেই বিন্যামীন পরিবারগোষ্ঠীর।)
১৭ বৃদ্ধ লোকটি শহরের কেন্দ্রস্থলে ঐ পথিক লেবীয়কে দেখতে পেল। সে জিজ্ঞাসা করল, “তোমরা কোথায যাবে? তোমরা কোথা থেকে আসছ?”
১৮ লেবীয় লোকটি বলল, “আমরা যিহূদার বৈত্‌লেহম শহর থেকে আসছি। আমরা ইফ্রয়িমের পাহাড়ী দেশের সীমানায বাড়ি যাচ্ছি। আমি যিহূদার বৈত্‌লেহমে এবং প্রভুর গৃহে গিয়েছিলাম। এখন আমি বাড়ী ফিরে যাচ্ছি। কিন্তু আজ রাত্রে কেউই আমাকে তার বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে নি।
১৯ গাধাগুলোর জন্য খড় আর খাদ্য আমাদের সঙ্গে আছে। ভৃত্য, যুবতী স্ত্রী আর আমার জন্য রুটি আর দ্রাক্ষারসও রযেছে। আমাদের কোন কিছুর অভাব নেই।”
২০ বৃদ্ধ লোকটি বলল, “তোমরা আমার বাড়িতে স্বচ্ছন্দে থাকতে পারো। তোমাদের যা দরকার সব দেবো। শুধু একটাই কথা, রাত্রে ঐ খোলা মাঠে যেন তোমরা থেকো না।”
২১ এরপর বৃদ্ধলোকটা লেবীয় ও তার সঙ্গীসাথীদের তার বাড়ি নিয়ে গেল। সে তাদের গাধাগুলোকে খাওয়াল। তারা পা ধুয়ে পানাহার সেরে নিল।
২২ এদিকে, সঙ্গীদের নিয়ে লেবীয় লোকটি যখন আমোদ-ফূর্তি করছিল, তখন শহরের কিছু বদলোক বাড়িটা ঘিরে ফেলল। তারা দরজায ধাক্কা মারতে লাগল। তারা বাড়ির মালিক ঐ বৃদ্ধ লোকটার নাম ধরে চিত্কার করতে লাগল। তারা বলল, “তোমার বাড়ি থেকে ঐ লোকটাকে বের করে দাও। আমরা ওর সঙ্গে য়ৌন কার্য়্য় করবো।”
২৩ বৃদ্ধলোকটি বেরিয়ে এসে বদলোকগুলোকে বলল, “শোন বন্ধুরা, অমন মন্দ কাজ কোরো না। লোকটি আমার অতিথি। এরকম জঘন্য পাপ কাজ করো না।
২৪ এদিকে দেখ, এ হচ্ছে আমার মেয়ে। একটি কুমারী। একে আমি তোমাদের জন্য বের করে আনব। তোমরা যেভাবে খুশী একে ব্যবহার করো, আমি তার উপপত্নীকেও তোমাদের জন্য বের করে আনব। তার সঙ্গে এবং আমার মেয়ের সঙ্গে যা খুশী করো আপত্তি করব না। কিন্তু আমার অতিথির বিরুদ্ধে তোমরা এমন জঘন্য পাপ কাজ করো না।”
২৫ কিন্তু বদ লোকগুলো সেসব কথায় কান দিল না। শেষ পর্য়ন্ত লেবীয় লোকটি তার দাসী বা উপপত্নীকে বাড়ি থেকে বের করে তাদের কাছে এনে দিল। তারা তাকে আঘাত করল এবং সারারাত ধরে ধর্ষণ করল। ভোর বেলায তাকে ছেড়ে দিল।
২৬ রাত পোযালে মেয়েটি বাড়িতে ফিরে এল। যেখানে তার স্বামী ছিল। তার দোরগোড়ায সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল। দিনের বেলা পর্য়ন্ত সে সেখানে এইভাবে পড়ে রইল।
২৭ পরদিন খুব সকালে লেবীয় লোকটি ঘুম থেকে উঠল। বাড়ি যেতে হবে এবার। বেরবে বলে দরজা খুলল, আর সেখানে চৌকাঠের উপর একটা হাত এসে পড়ল। পড়ে রযেছে তার দাসী। দরজার গোড়ায সে পড়ে আছে।
২৮ লেবীয় লোকটি তাকে বলল, “ওঠো আমাদের যেতে হবে।” কিন্তু কোনো সাড়া মিলল না। সে মারা গিয়েছিল।গাধার পিঠে তাকে শুইযে লেবীয় লোকটি বাড়ি চলে গেল।
২৯ বাড়ি ফিরে সে একটি ছুরি দিয়ে দাসীটির দেহকে কেটে ১২টি টুকরো করল। তারপর ইস্রায়েলীয়রা যে সব জায়গায় বাস করত সে সব জায়গায় ঐ ১২টি টুকরো পাঠিয়ে দিল।
৩০ যারা দেখল তারা প্রত্যেকেই বলল, “এরকম কাণ্ড ইস্রায়েলে আগে কখনও ঘটে নি। যেদিন আমরা মিশর থেকে চলে আসি সেদিন থেকে আজ পর্য়ন্ত এরকম কাজ কখনও হয় নি এবং দেখাও যায় নি। এ বিষযে আলোচনা করতে হবে। ঠিক করতে হবে আমাদের কি করা উচিত্‌।”