৭. হুইসেল বাজানো

হুইসেল বাজানো থেকে শুরু করে শোয়েবদের চারজনের হাত বাঁধা পর্যন্ত পুরো ব্যাপারটা এমনভাবে ঘটে গেলো যে, ওদের বিশ্বাসই হচ্ছিলো না ওরা শেষ পর্যন্ত জামাতীদের হাতে ধরা পড়েছে। ওদের চমক ভাঙলো যখন ওরা এক ঘন্টা পর নিজেদের আবিষ্কার করলো মাটির নিচের এক পাকা ঘরে।

দূর থেকে যেগুলো খড়ের আর বেড়ার ঘর মনে হয়েছিলো তার ভেতর যে দুটো পাকা ঘর রয়েছে দূর থেকে বোঝার উপায় নেই। ঘরের চালটাই শুধু খড়ের। মেঝে আর দেয়াল নিরেট ইট পাথরের। কর্কশ গলায় এক লোক হামার সাথ চলো, বলে ওদের ধাক্কা মেরে ঠেলে দিলো পাকা ঘরের ভেতর নিচে নামার সিঁড়ি থেকে। ভাগ্যিস ধাক্কাটা বেশি জোরে ছিলো না, তাই ওরা হুমড়ি খেতে খেতে বেঁচে গেছে।

অল্প দূরে কে যেন আসরের নামাজের আজান দিলো। আজান শেষ হওয়ার পর চারদিকে কোনও শব্দ নেই। যে ঘরটায় ওদের রাখা হয়েছিলো সেটার ছাদ ঘেষে দু দিকের দেয়ালে দুটো বড় ভেন্টিলেটার। ঘর থেকে বাইরে যাওয়ার রাস্তা একটাই–যেখান দিয়ে ওদের ঢোকানো হয়েছে। দরজাটা লোহার পাতের। ওদের ভেতরে ঠেলে কর্কশ ভাষী লোকটা বিকট শব্দে দরজা বন্ধ করে চলে যাওয়ার পাঁচ মিনিট পর মুখ খুললো শোয়েব হারামজাদা মাহবুবটা যে জামাতীদের লোক কল্পনাও করতে পারিনি।

সুমন বললো, তুমি কেন, কারও পক্ষে ধারণা করা সম্ভব ছিলো না।

ঝন্টু বললো, বইয়ে পড়েছিলাম চট্টগ্রামের জঙ্গলে বুনো হাতি ধরার জন্য পোষা হাতি ব্যবহার করে। জামাতীরা আমাদের ধরার জন্য একই ফন্দি করেছে।

সবার ভেতর বেশি ঘাবড়ে গিয়েছিলো রবি। ভাঙা গলায় বললো, আমাদের ওরা আটকে রেখে কী করবে শোয়েব ভাই?

শোয়েব শুকনো গলায় বললো, আমাকে যে ওরা জানে মেরে ফেলবে, এতে কোনও সন্দেহ নেই।

ওরা যে কাগজগুলো চাইছে ওগুলো দিয়ে দাও না? রবির গলা শুনে মনে হলো ও কেঁদে ফেলবে।

সুমন ম্লান হেসে বললো, তোর কি ধারণা? কাগজ পেলে ওরা শোয়েব ভাইকে ছেড়ে দেবে?

কেন ছাড়বে না?

শোয়েব ভাই ওদের সম্পর্কে এমন সব কথা জেনেছেন যা ওদের পছন্দ নয়।

কাউকে পছন্দ না হলেই মেরে ফেলবে?

ওরা এর চেয়েও তুচ্ছ কারণে মানুষ মারতে পারে।

শোয়েব বললো, একাত্তরে ওরা অকারণেও অনেক বাঙালিকে হত্যা করেছিলো।

তোমাকে মেরে ফেললে আমাদের কী হবে?

ওদের তিন জনের জন্য শোয়েবের খুবই খারাপ লাগছিলো। কিন্তু করারও কিছু ছিলো না। অসহায় গলায় বললো, আমি তোমাদের জন্য খুবই দুঃখিত রবি। আমার জন্যেই তোমাদের এত কষ্ট আর দুর্ভোগ। আমার প্রাণ দিয়েও যদি তোমাদের বাঁচাতে পারি তাই করবো।

ঝন্টু মৃদু ধমকের গলায় রবিকে বললো, তুই মেয়েদের মতো প্যান প্যান শুরু করলি কেন? আমাদের যেভাবেই হোক এখান থেকে পালাতে হবে।

কিভাবে পালাবি? গলায় ঝাঁঝ মিশিয়ে রবি বললো, বাইরে দেখিসনি স্টেনগান কাঁধে ঝুলিয়ে কিভাবে সবাই পাহারা দিচ্ছে।

রাত হোক একটা উপায় ঠিকই বের করে ফেলবো।

রাত হওয়ার আগেই আমাদের গুলি করে মেরে ফেলবে।

সুমন মাথা নাড়লো–তুই একটু বেশি বেশি ভাবছিস রবি। শোয়েব ভাইকে জেরা না করে ওরা কিছু করবে না।

ওপরে ভেন্টিলেটার দিয়ে শোয়েব বাইরে তাকিয়ে দেখলো দিনের আলো ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে আসছে। একটু পরেই সন্ধ্যা নামবে। তারপর রাত। কে জানে এই রাতই ওর জীবনের শেষ রাত কি না।

শোয়েবের বাড়ির কথা মনে হলো। ঢাকায় ওর বাবা মা দুই ভাই আর এক বোন থাকে, বোন সবার বড়। ভাইদের ভেতর সবার বড় শোয়েব। ছোট ভাইটা মাত্র ক্লাস ফাইভে পড়ে। ওর বড়টা এবার এইচ,এস,সি দেবে। যতবার বাড়ি যায় মা বার বার বলেন, চট্টগ্রামের যেসব খবর কদিন পর পর কাগজে বেরোয় পড়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে। যায়। তুই বাবা পলিটিক্সের ধারে কাছেও ঘেঁষবি না। রোজ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে আমি আল্লার কাছে তোর জন্য দোয়া করি। শোয়েব ভাবলো ঠিক এই মুহূর্তে মা আসরের নামাজ শেষ করে জায়নামাজে বসে ওর জন্য আল্লার কাছে দোয়া করছেন। বাবা মা দুজনই শোয়েবের মুখ চেয়ে দিন গোনেন। কবে ও পাশ করে বেরিয়ে চাকরিতে ঢুকে সংসারের হাল ধরবে। বাবার চাকরির হিসেব করা টাকায় সংসার চালাতে গিয়ে মা হিমশিম খান।

শোয়েবের মুখের দিকে তাকিয়ে সুমনের মনে হলো ও বাড়ির কথা ভাবছে। আস্তে আস্তে বললো, তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো শোয়েব ভাই?

কী কথা?

বাড়িতে তোমার কে কে আছেন?

সবাই আছে।

তোমার বাড়ির কথা বলো না। সুমনের মনে হলো শোয়েবকে চুপচাপ ভাবতে দিলে ও আরও ভেঙে পড়বে।

সুমনের কথা শুনে শোয়েবের মনে হলো ও ছেলে তিনটিকে যতটা ছোট ভেবেছে আসলে ওরা তত ছোট নয়। বিশেষ করে সুমন আর ঝন্টু খুবই বুদ্ধিমান ছেলে। শোয়েব ওর বাড়ির কথা সুমনদের বললো, ঢাকায় থাকতে ওর একটা পাহাড়ি ময়না ছিলো। ওকে কেউ বিরক্ত করলে রেগে গিয়ে তুই রাজাকার বলতো। একবার ওদের দূর সম্পর্কের এক মামাকে তুই রাজাকার বলাতে এক কেলেঙ্কারি কাণ্ড। আত্মীয়টি আসলেই রাজাকার ছিলো। তাই রেগেমেগে একাকার।

বাইরের আকাশ অন্ধকার হওয়ার আগেই ঘরের ভেতরটা অন্ধকারে ছেয়ে গেলো। ঝন্টু বললো, প্রায় তিন ঘন্টা হতে চললো, এখনও কারও সাড়া শব্দ শুনছি না। আমাদের কথা ওদের বড় কর্তাকে জানাতে ভুলে যায়নি তো!

শোয়েব ম্লান হেসে বললো, যতই ভুলেই যাক কথাটা বড় কর্তার কানে তোলার মতো আরও কেউ নিশ্চয় আছে। আমার মনে হয়–

শোয়েবের কথা শেষ না হতেই লোহার দরজায় ঝমঝম আওয়াজ হলো। রবির চেহারা কাগজের মতো ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। ওর মনে হলো এখনই যমদূতের মতো একটা লোক এসে ওদের ফায়ারিং স্কোয়াডে নিয়ে দাঁড় করিয়ে দেবে। ঝন্টু আর সুমন রবির মতো ভয় না পেলেও ওদের হার্টবিট বেড়ে গেলো। শোয়েবের মনে হলো ওকে জেরা করার জন্য নিতে এসেছে।

যে লোকটা ওদের ধাক্কা মেরে এ ঘরে ঠেলে দিয়েছিলো–থুতনিতে ছাগুলে দাঁড়ি আর গালে মস্ত আঁবওয়ালা সেই লোকটাই টর্চ জ্বালিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো। শেষ সিঁড়ির পাশে দেয়ালে সুইচ টিপে লাইট জ্বালালো। খুবই কম পাওয়ারের বাল্ব, তবু আলো দেখে ওরা কিছুটা স্বস্তি পেলো। লোকটা আগের মতো কর্কশ গলায় শোয়েবকে বললো, এই যে, বড় শয়তান, হামার সাথ চলো। বড় হুজুর এত্তেলা করেছেন।

লোকটার কথা শুনেই মনে হয় বিহারী। জেনেভা ক্যাম্পের বিহারী চট্টগ্রামে এলো কি। করে ভেবে একটু অবাক হলো সুমন। এদের ঘাঁটিতে আসার পর যতজনের কথা শুনেছে কাউকেই চট্টগ্রামের বাসিন্দা মনে হয়নি।

মাহবুব বলেছিলো ওর বাড়ি কক্সবাজার কিন্তু ওর কথার কোনও আঞ্চলিক টান ছিলো না।

লোকটার কথা শুনে শোয়েব উঠে দাঁড়িয়েছিলো। সুমন বললো, ও একা যাবে না। আমরাও সঙ্গে যাবো। নেহী! চিৎকার করে বললো ছাগুলে দাড়ি। তুমহাদের যা বুলবে সেইটাই করতে হবে। যেয়াদা বোলবে না।

এগিয়ে এসে শোয়েবের কনুই ধরলো লোকটা। ওর গা থেকে যে বিটকেল দুর্গন্ধ বেরুচ্ছিলো–শোয়েবের মনে হলো দুপুরে যা খেয়েছে সব বমি হয়ে যাবে।

শোয়েবকে ধরে নিয়ে চলে গেলোলোকটা। রবি এতক্ষণ কিছু বলেনি, দেয়ালে হেলান দিয়ে চুপচাপ বসেছিলো। বাইরে থেকে লোহার দরজা বন্ধ করার শব্দ হতেই ও ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।

ঝন্টু উদ্বিগ্ন গলায় জানতে চাইলো–কী হলো রবি, কাঁদছিস কেন?

কান্নাভেজা গলায় রবি বললো, শোয়েব ভাইকে ওরা মেরে ফেলবে।

সুমন মাথা নাড়লো–না, এখন মারবে না। ওর কাছ থেকে সব কথা আদায় করে তবে মারবে।

শোয়েব ভাই যদি কিছু বলতে না চায়?

বলতে বাধ্য করবে। টর্চার করবে। তবে জানে মারবে না। মারলে তো সব শেষ। এত সহজে শোয়েব ভাইকে ওরা মারবে না।

শোয়েব ভাইর জন্য আমার খুব খারাপ লাগছে।

রবিকে সান্ত্বনা দিয়ে ঝন্টু বললো, খারাপ তো আমাদের সবারই লাগছে। কান্নাকাটি না করে এখান থেকে পালাবো কিভাবে তাই ভেবে বের কর।

সুমন বললো, রাজা এখন কী করছে কে জানে। ও যদি জানতো আমরা কোথায়–

রাজাকেও ওরা নিশ্চয় কোথাও আটকে রেখেছে।

.

সুমন যখন রাজার কথা ভাবছিলো ও তখন কক্সবাজারের ডিসির অফিসে। দুপুরে রাজার টেলিফোন পেয়ে সুমনের বাবা হন্তদন্ত হয়ে চট্টগ্রাম থেকে ছুটে এসেছেন কক্সবাজার। ফোনে রাজা শুধু ওঁকে এটুকু বলেছিলো সুমনরা হারিয়ে গেছে। কাল রাত থেকে ওদের কোন খবর নেই। শুনেই সুমনের বাবা বলেছেন, তুমি ডিসি সাহেবের অফিসে অপেক্ষা করো। আমি সন্ধ্যার আগেই কক্সবাজার আসছি।

কক্সবাজারের ডিসি সুমনের বাবার ছেলেবেলার বন্ধু। দুজন একটানা দশ বছর একই স্কুলে পড়েছেন। রাজার সঙ্গে কথা শেষ করেই তিনি ডিসিকে ফোন করে বললেন, হাবিব, আমার ছেলে সুমন কক্সবাজার থেকে হারিয়ে গেছে। সঙ্গে ওর দুই বন্ধুও রয়েছে। পুলিশকে খবর দে। আমি এখনই রওনা হচ্ছি।

পর্যটন কর্পোরেশনের একটা ট্যাক্সি ভাড়া করে সোজা তিনি ডিসির অফিসে এসেছেন। রাজাকে বললেন, ডিসি সাহেবকে সব খুলে বলো কী হয়েছিলো।

শোয়েবের লিফট নেয়ার ঘটনা থেকে শুরু করে ওদের পেছনে লোক লাগা, গাড়ি খারাপ হওয়া, শোয়েবের গোপন কাগজ গাড়িতে লুকিয়ে রাখা, রাতে সৈয়দ বাড়িতে আশ্রয় নেয়া এক এক করে সব বললে রাজা।

ফজলুল করিমের হোভায় করে ও যখন কক্সবাজারের বিক্ৰম কার সেন্টারের গ্যারেজে এসে পৌঁছেছে রাত তখন প্রায় এগারোটা। গ্যারাজের মালিক, আধবুড়ো নববিক্রম বড়ুয়া রাতে গ্যারেজে থাকেন। ওকে মেকানিক দেয়ার কথা বলে কোনও লাভ হলো না। তাঁর দুজন মেকানিকই সন্ধ্যেবেলা ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়ি গেছে। ফিরবে পরশু। বড়ুয়া বললেন, রাজা যখন সৈয়দ বাড়ির মেহমান তিনি একটা জিপ ওকে দিতে পারেন। জিপের পেছনে বেঁধে রাজা যদি ওদের গাড়ি বড়ুয়ার গ্যারেজে আনতে পারে তিনি দেখে দেবেন, তবে সকালের আগে নয়।

বড়ুয়ার জিপ নিয়ে রাজা ফজলুল করিমের হোভার পেছন পেছন যখন ওদের গাড়ির কাছে এসেছে, তখন ফজলুল করিম বললো, গাড়ি নিয়ে রাজা একা কক্সবাজার যেতে। পারবে কি না। রাজা বলেছে পারবে। এরপর ফজলুল করিম হোন্ডা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। রাজা বড়ুয়ার জিপের পেছনে ওদের গাড়ি বেঁধে রাত সাড়ে বারোটায় কক্সবাজার এসে পৌঁছায়। বড়ুয়ার গ্যারেজেই ও রাত কাটায়। সকালে বড়ুয়া ওকে বললেন, সৈয়দরা চায় না তোমার গাড়িটা আমি মেরামত করে দিই। বলেছে রাজাকে কায়দা করে যেন ওদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে রাজা বুঝে ফেলেছে সুমনরা বিপদে পড়েছে। ও তখন ফকির সেজে বাসে করে গিয়ে ওদের বাড়ি থেকে ঘুরে এসেছে। বাড়ির এক কাজের লোকের কাছে শুনেছে রাতে যে মেহমানরা এসেছিলো ওরা নাকি ডাকাতদের দলের লোক।

পরিচয় জানাজানি হওয়াতে রাত থাকতেই পালিয়ে গেছে। এরপর রাজা কক্সবাজার এসেই সুমনের বাবাকে ফোন করেছে।

সব শুনে ডিসি বললেন, ছেলেরা যাদের ভয়ে পালাচ্ছিলো না জেনে রাতে তাদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলো। হয়তো কোনওভাবে জেনে পালিয়েছে, নয়তো ওদের কোথাও লুকিয়ে রেখে রটিয়ে দিয়েছে ওরা পালিয়েছে।

সুমনের বাবা জানতে চাইলেন, পুলিশ কী করছে। ডিসি বললেন, পুলিশকে আমি বিশেষভাবে টেকনাফের রাস্তার দিকে নজর রাখতে বলেছি। যদি কোনওভাবে বর্ডারের ওপারে পাচার করে দেয় আমাদের খুবই অসুবিধে হবে।

ডিসির আশঙ্কার কথা শুনে সুমনের বাবা মুষড়ে পড়লেন। স্কুল জীবনের বন্ধুর হাত ধরে বিচলিত গলায় বললেন, হাবিব তোরা তো জানিস জামাতীদের ঘাঁটি কোথায়। তোদের যত ইনফর্মার আছে ওদের কাজে লাগা। টাকা যা লাগে আমি দেবো। আমার ছেলেদের যেভাবে পারিস ওদের খপ্পর থেকে উদ্ধার করে দে।

বন্ধুকে আশ্বস্ত করে ডিসি বললেন, তুই এত ঘাবড়াচ্ছিস কেন? তোর ছেলে তো আমার ছেলেরই মতো। ইনফর্মারদের আমি যে সব জায়গায় পাঠানো দরকার অলরেডি পাঠিয়ে দিয়েছি। ছেলেরা যে জামাতীদের খপ্পরেই পড়েছে–নিশ্চিত হতে পারছি না তো। এমনও তো হতে পারে ওরা কোথাও গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে।

দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ফেলে সুমনের বাবা বললেন, ওদের হাতে না পড়লেই রক্ষা। কাগজে তো প্রায়ই দেখি কোথাও না কোথাও ওদের হাতে ছাত্ররা খুন হচ্ছে।

শোন সেলিম, কক্সবাজারে ওদের যে টপ লিডার–আমি তার সঙ্গেও কথা বলবো। সিধে আঙুলে ঘি না উঠলে আমরা আঙুল বাঁকাতে জানি। তোর ছেলেরা ওদের খপ্পরে পড়লেও ওদের কোনও ক্ষতি করতে পারবে না।

সুমনের বাবা ব্যকুল হয়ে বললেন তুই এক্ষুণি ওদের লিডারের সঙ্গে কথা বল। দরকার হলে আমিও কথা বলবো। আমার ছেলেরা তো ওদের কোনও ক্ষতি করেনি। ওরা শোয়েবকে রেখে আমার ছেলেদের ফিরিয়ে দিক। দরকার হলে আমি ওদের পার্টিকে মোটা টাকা ডোনেশন দেবো।

কক্সবাজারের ডিসি হাবিবুল বাশার একটু গম্ভীর হয়ে বললেন, সেলিম, তোর ছেলের জন্য তুই যতটা উতলা হচ্ছিস শোয়েবের বাবা মা জানলে তোর চেয়ে কম হবেন না। আমি কখনও শোয়েবকে বাদ দিয়ে তোর ছেলেদের ফিরিয়ে দেয়ার কথা ওদের বলতে পারবো না। যখন জেনেছি চারটা ছেলে বিপদে পড়েছে ওদের চারজনকেই উদ্ধার করা আমাদের কর্তব্য। একটু থেমে ডিসি আবার বললেন, তোর অনেক টাকা আছে জানি। ওদের যে টাকা আছে সে টাকায় হাজারটা সেলিম চৌধুরীকে ওরা কিনতে পারে। তুই ওদের ক টাকা ডোনেশন দিবি?

সুমনের বাবা হতাশ হয়ে বললেন, আমার আসলে মাথা ঠিক নেই। কান্ডজ্ঞান সব হারিয়ে ফেলেছি। তুই ঠিকই বলেছিস। নিজের ছেলের জীবন বাঁচানোর জন্য অন্যকে বিপদে ঠেলে দেয়া খুবই স্বার্থপরতা শুধু স্বার্থপরতা নয়, অমানবিক কাজ।

ডিসি কোনও কথা না বলে টেলিফোনের রিসিভার তুললেন, ওর পিএকে বললেন, ইউনুস মওলানা বাড়িতে না পার্টি অফিসে আছে খবর নিয়ে আমাকে জানাও।

মিনিট পনেরো পরে পি এ টেলিফোন করে ডিসিকে জানালেন, মওলানা ইউনুস গত পরশু জেদ্দা গেছেন, ঢাকায় ওদের পার্টির কী এক মিটিঙ আছে। অন্য নেতারাও সব ঢাকায়।

সুমনের বাবা ভাঙা গলায় জানতে চাইলেন–এবার কী হবে সেলিম?

ব্যাপারটা তুই আমার হাতে ছেড়ে দে। এই বলে ডিসি নিজেই একের পর এক টেলিফোনের ডায়াল ঘোরাতে লাগলেন।