2 of 2

৬২. উমাইয়া ইবন খালফের হত্যার ঘটনা

উমাইয়া ইবন খালফের হত্যার ঘটনা

ইবন ইসহাক … আবদুর রহমান ইবন আওফ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, মক্কায় অবস্থানকালে উমাইয়া ইবন খালফের সাথে আমার বন্ধুত্ব ছিল। আমার নাম ছিল আবদে আমর। ইসলাম গ্রহণ করার পর ঐ নাম পরিবর্তন করে আমার নতুন নামকরণ করা হয় আবদুর রহমান। তখন সে আমার সাথে সাক্ষাত করে বলল, ওহে আবদে আমরা! তোমার পিতার রাখা নাম কি পরিবর্তন করে ফেলেছ? আমি বললাম, হ্যা। সে বলল, আমি রহমান চিনি না। সুতরাং তোমাকে ডাকার জন্যে এমন একটা নাম রাখ, যা আমাদের দু’জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। এখন থেকে তোমাকে পূর্বের নামে ডাকলে তুমি সাড়া দিবে না। আর আমিও তোমাকে এমন নাম ধরে ডাকবো না, যে নাম আমি চিনি না। এরপর থেকে আমাকে আবদে আমরা বলে ডাকলে আমি তার ডাকে সাড়া দিতাম না। আবদুর রহমান বলেন, আমি উমাইয়াকে বললাম–হে আবু আলী! তুমি তোমার পসন্দমত একটা নাম রোখ। সে বলল, তোমার নাম ‘আবদুল ইলাহ”। আমি বললাম, তাই হোক। এরপর থেকে আমি যখন তার পাশ দিয়ে যেতাম, সে আমাকে আবদুল ইলাহ বলে সম্বোধন করতো। আমি তার সে ডাকে সাড়া দিতাম এবং তার সাথে কথাবার্তা বলতাম। বদরের যুদ্ধে আমি তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম, দেখলাম উমাইয়া তার পুত্ৰ আলীর হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আমার কাছে ছিল কয়েকটি লৌহবর্ম। এগুলো আমি আমার হাতে নিহত শক্রিদের থেকে সংগ্ৰহ করেছিলাম। উমাইয়া আমাকে দেখে আবদে আমরা বলে ডাক দিল। কিন্তু আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম না। তখন সে “আবদে ইলাহ’ বলে ডাকল। এবার তার ডাকে আমি সাড়া দিলাম। সে বলল, আমার ব্যাপারে কি তোমার কোন দরদ নেই? তোমার কাছে সে বর্মগুলো আছে, তার থেকে কি আমি তোমার জন্যে অধিক কল্যাণকর নাই? আমি বললাম, অবশ্যই। তারপর আমি হাতের বর্মগুলো ফেলে দিয়ে তার ও তার পুত্রের

(আলীর) হাত ধরলাম। সে বলল, আজকের ন্যায় আর কোন (খুশীর) দিন কখনও দেখিনি। সে বলল, তোমাদের কি দুধের প্রয়োজন আছে? এরপর আমি তাদের দু’জনকে নিয়ে চললাম।

ইবন ইসহাক … সাআদ ইবন ইবরাহীম সূত্রে আবদুর রহমান ইবন আওফ থেকে বর্ণনা করেন, আমি যখন উমাইয়া ও তার পুত্রের হাত ধরে দাড়িয়েছিলাম, তখন সে আমাকে জিজ্ঞেস করল, ওহে আবদে ইলাহ! তোমাদের মধ্যে ঐ লোকটি কে, যে তার বুকে উটপাখীর পালক লাগিয়ে রেখেছে? আমি বললাম, হামযা। সে বলল, এ লোকটি তো আমাদের বিরুদ্ধে অনেক কিছুই করেছে। আবদুর রহমান বলেন, আমি যখন তাদের দু’জনকে সাথে নিয়ে চলছিলাম, তখন বিলাল উমাইয়াকে দেখতে পান। এই উমাইয়া বিলালকে ইসলাম গ্রহণের দায়ে মক্কায় নির্মমভাবে শাস্তি প্ৰদান করত। বিলাল তাকে দেখেই বললেন, এই তো কাফির নেতা উমাইয়া ইবন খালফ। সে যদি আজ রক্ষা পেয়ে যায়, তবে তো আমার রক্ষা নেই। আমি বললাম, বিলাল! এতো এখন আমার বন্দী। বিলাল বললেন, সে যদি বেঁচে যায়, তবে তো আমার রক্ষা নেই। এরপর বিলাল উচ্চৈঃস্বরে ডেকে বললেন, হে আল্লাহর সাহায্যকারিগণ! কাফির সর্দার উমাইয়া ইবন খালফ এখানে আছে। সে যদি বেঁচে যায়, তবে আমার আর রক্ষা নেই। বিলালের আহবানে আনসারগণ ছুটে এসে আমাদেরকে চারিদিক থেকে কাকনের মত বেষ্টন করে ফেলল। আমি তাদের আক্রমণ থেকে উমাইয়াকে বাচাবার চেষ্টা করতে লাগলাম। এর মধ্যে একজন পেছন থেকে উমাইয়ার ছেলের পায়ে আঘাত করলে সে মাটিতে পড়ে যায়। এ দেখে উমাইয়া এমন জোরে চিৎকার করল যে, ঐরূপ চিৎকার আমি কখনও শুনিনি। আমি বললাম, উমাইয়া!

পারব না। শেষ পর্যন্ত মুসলমানগণ উমাইয়া ও তার পুত্ৰকে তরবারি দ্বারা ক্ষত-বিক্ষত করে হত্যা করল। পরবতীতে আবদুর রহমান প্রায়ই বলতেন, “বিলাল আমাকে বর্ম ও বন্দীর ব্যাপারে কষ্ট দিয়েছে, আল্লাহ তাকে রহম করুন!

ইমাম বুখারী তার সহীহ গ্রন্থে প্রায় অনুরূপ হাদীছ বৰ্ণনা করেছেন। ওয়াকালাত অধ্যায়ে আবদুল আষীয ইবন আবদুল্লাহ। . আবদুর রহমান ইবন আওফ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমাইয়া ইবন খালফের সাথে আমি এই মর্মে একটা চুক্তিপত্র সম্পাদন করেছিলাম যে, সে মক্কায় আমার ধন-সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ করবে এবং আমি মদীনায় তার ধন-সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ করব। চুক্তিপত্রে আমার নামের অংশ রাহমান’ শব্দটি যখন লিখলাম, তখন সে আপত্তি জানিয়ে বলল, রাহমানকে তো আমি চিনি না; বরং জাহিলী যুগে তোমার যে নাম ছিল সে নামই লিখ। তখন আমি তাতে আবদে আমরা লিখে দিলাম। বদর যুদ্ধের দিন লোকজন ঘুমিয়ে পড়লে উমাইয়াকে বাঁচাবার জন্যে তাকে নিয়ে একটি পাহাড়ের দিকে গেলাম। এ সময় বিলাল তাকে দেখে ফেলে এবং দ্রুত আনসারদের এক সমাবেশে গিয়ে জানায়, এই তো উমাইয়া ইবন খালফ। যদি উমাইয়া বেঁচে যায়, তবে আমার রক্ষা নেই। তখন আনসারদের একটি দল তাকে সাথে নিয়ে আমাদের দিকে ছুটিল। যখন আমার আশঙ্কা হল যে, তারা আমাদের নিকটে এসে পড়বে, তখন আমি উমাইয়ার পুত্ৰকে তাদের জন্যে পিছনে ছেড়ে এলাম, যাতে তারা ওকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কিন্তু তারা তৎক্ষণাৎ তাকে হত্যা করে ফেলল। এরপর তারা আমাদের দিকে ধেয়ে

আসল। উমাইয়া ছিল একটি স্থূলদেহী ব্যক্তি। যখন তারা আমাদের কাছে এসে পড়লেন, তখন আমি তাকে বললাম, শুয়ে পড়। সে শুয়ে পড়লে আমি আমার শরীর দিয়ে তাকে ঢেকে ফেলে

খুঁচিয়ে তাকে হত্যা করে ফেলল। এদের একজনের তলোয়ারের একটি আঘাত আমার পায়ে এসে লাগে। আবদুর রহমান পরে আমাদেরকে তার পায়ের উপরের সে আঘাতের চিহ্নটি দেখাতেন। রিফায়া ইবন রফি’র মুসনাদে আছে যে, তিনিই উমাইয়াকে হত্যা করেছিলেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *