অধ্যায় : ৫ – রাখঢাক ছদ্মাবরণ
The Hush Hush Outfits
গুপ্তচর কার্যক্রমের আওতায় একমাত্র বিশেষ অপারেশন শাখা নিয়েই যে কদাচিৎ কখনো আলাপ-আলোচনা হয়ে থাকে তাই কেবল নয় বরং সংস্থার অন্যান্য সেকশন যেমন তথাকথিত চুপ-চাপ বা রাখঢাক সাজ সরঞ্জামাদির’ সেকশন নিয়েও বিভিন্ন কথা শোনা যায়। অবশ্য এ সব সংস্থাকে ওইরূপ নামে অভিহিত করা হয় না বটে, তবে পাঠকের কাছে ওইসব নাম আসল উদ্দেশ্যটিকে পরিস্ফুট করে তোলে। ‘র’-এর সংগঠন ও সাধারণ কার্যক্রম ইতোমধ্যেই ‘রহস্যের দুর্জ্ঞেয় গহ্বরে’ ঢাকা পড়ে আছে যা গড়পড়তা সাধারণ ভারতবাসীকে এর বিকৃত প্রতিবিম্বের ভেলকি দেখাতে ব্যস্ত। অবশ্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিভিন্ন লেখালেখি ও সাধারণ আলাপ-আলোচনা বা আড্ডা থেকেই এ ধরণের কথাবার্তা ছড়ায়।
প্রতিরক্ষা ও জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত ইন্টেলিজেন্স সংগ্রহের বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত ব্যাপ্তি ব্যাপকভাবে জানা সম্ভব নয়। এ পর্যন্ত ‘র’-এর চিত্র যতদূর ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তার বাইরেও ‘র’-এর মতো ‘অত গোপনীয় নয়’, এমন একটি সংস্থা (এ সম্পর্কে যথাস্থানে পূর্ণ আলোচনা করা হবে) যেমন ‘অল ইন্ডিয়া রেডিও’র (AIR) সিমলায় অবস্থিত মনিটরিং সার্ভিস’ আলোচনার দাবি রাখে। এ স্থাপনায় সকল উন্মুক্ত বেতার প্রচারণা মনিটর করা হয় এবং চাহিদানুযায়ী সে সব উপাত্ত যে কোনো সরকারি সংস্থা যার মধ্যে ‘র’ অন্তর্ভুক্ত, তাদের সরবরাহ করা হয়। মাঝে মাঝে প্রায়ই এ সংস্থা ‘র’-এর বিশেষ বিশেষ দুঃসাহসিক কাজে সহযোগিতা করে থাকে। এ সহযোগিতাকে সাধারণ দৃষ্টিকোণ থেকে বিদঘুটে বা অপ্রীতিকর বলে মনে করা স্বাভাবিক, কিন্তু এ ধরণের সাহায্য-সহযোগিতা ইন্টেলিজেন্স জগতে নতুন কিছু নয়। উদাহরণস্বরূপ বি বি সি বা বৃটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন’-এর নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। এ মনিটরিং বিভাগ পৃথিবীব্যাপী বেতার প্রচরণা মনিটর প্রচেষ্টার একটি বহুজাতিক অংশমাত্র যা জনসাধারণ ও সংবাদসংস্থার জন্য পুরোপুরি উন্মুক্ত। ১৯৪৮ সালে সি আই এ’র সাথে সম্পাদিত এক চুক্তির আওতায় বি বি সি পৃথিবীর সব উল্লেখযোগ্য খবর ও বেতার প্রচারণা মনিটর করে আসছে। বি বি সি ও সি আই এ উভয়েরই গোপনীয়তার বিভিন্ন শ্রেণীভেদে বৈদেশিক স্থাপনাসহ একটি সংগঠিত নেটওয়ার্ক বিদ্যমান, যার মাধ্যমে তারা মৌলিক ইন্টেলিজেন্স সংগ্রহ করে। বি বি সি কর্তৃপক্ষ এ ধরণের ছদ্মবিভাগের কথা জানুক বা না জানুক কিন্তু এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, মনিটরিং কাজের জন্য এরূপ ব্যবস্থা থাকা অত্যন্ত স্বাভাবিক। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পূর্বে এ বিভাগটি অস্থায়ী রূপে গড়ে ওঠে কিন্তু দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় রাজনৈতিক যুদ্ধ সংক্রান্ত নির্বাহীদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য অতিদ্রুত এ সংগঠনের বিস্তৃতি ঘটে। তারা নাৎসি প্রচারণা ও অন্যান্য সংবাদ সংস্থার প্রচারণা ও মনিটর করা আরম্ভ করে এবং এখনোও তা চালিয়ে যাচ্ছে (নাৎসি ছাড়া)।
দূতাবাস ও কনস্যুলেটের ভিতরের শ্রবণ কেন্দ্রের’ (Listening Posts) ব্যবহার মনিটরিং বিভাগের কাছে অত্যন্ত সংবেদনশীল ব্যাপার যাদের অবস্থিতি কখনই যথাযথভাবে স্বীকার করা হয় না। ভারতে ‘র’-সূত্রের দাবি অনুযায়ী ‘এ ধরণের কার্যক্রম শুধু বি বি সি-র মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়’। বিভিন্ন দূতাবাসের ছাদে অবস্থিত নানা আকৃতির এন্টেনা তাদের নিজস্ব ‘কীর্তি কাহিনী’ বলার জন্য যথেষ্ট। যদিও দূতাবাসের স্বাভাবিক রুটিন অনুযায়ী বেতার বার্তা প্রেরণ ও গ্রহণের বৈধ স্বীকৃতি বিদ্যমান তবুও বিভিন্ন সময় ওই সব বেতার নেটওয়ার্ক নানা প্রকার ‘ছদ্ম গোপন’ কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এরপরও ওই সব নিত্য নৈমিত্তিকভাবে ব্যবহার করা হয় না, কারণ বেশিরভাগ দূতাবাস প্রধান এ ধরণের কাজকে ঘৃণার চোখে দেখেন।
ক। অল ইন্ডিয়া রেডিও (AIR)
যদিও অল ইন্ডিয়া রেডিও মনিটরিং সার্ভিস স্থাপনাসমূহ সরাসরি ইন্টেলিজেন্স সংগ্রহের সাথে জড়িত নয়, বা সি আই এ ও বি বি সি-র মতো কোনো চুক্তিতেও আবদ্ধ নয়, কিন্তু তারপরও প্রায়ই ‘র’ তাদের কাছে বিভিন্ন তথ্য চেয়ে পাঠায়। আকাশবাণীর মনিটরিং কেন্দ্রগুলো মনিটর করা বেতার প্রচারণা রেকর্ড করে রাখে। এ রেকর্ডগুলো প্রায়ই ‘র’ তাদের নিজস্ব কাজে ব্যবহার করে।
আকাশবাণীর নেটওয়ার্ককে বিভিন্ন সামরিক অপারেশনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ‘ঢাকা অভিযানের’ সময় আকাশবাণীর মাধ্যমে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ পরিচালনা একটি সর্বোত্তম উদাহরণ, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, উন্মুক্ত প্রচার মাধ্যমও অত্যন্ত কার্যকরভাবে ইন্টেলিজেন্স কার্যক্রমের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যায়।
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে জেনারেল মানেকশ’র একটি ব্যক্তিগত বার্তা অবরুদ্ধ পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্যে আকাশবাণীর মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছিল। অফিসার ও সৈনিকদের উদ্দেশ্যে পঠিত ওই বার্তায় বলা হয়, “আমি আপনাদের ইতোমধ্যেই দু’টো বার্তা পাঠিয়েছি। কিন্তু এ পর্যন্ত আপনাদের নিকট থেকে কোনোরূপ উত্তর পাইনি। আমি পুনরায় উল্লেখ করতে চাই যে, এরপর নতুন কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হবে নির্বুদ্ধিতা এবং এর ফলশ্রুতিতে আপনার নেতৃত্বাধীন অনেক গরীব ও হতোদ্যম সৈনিকের অপ্রয়োজনীয় মৃত্যু অনিবার্য হয়ে দাঁড়াবে।” এ বার্তার সাথে সাথে তাদের বেশি দেরি হবার পূর্বেই অস্ত্রসমর্পণের আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং সতর্ক করে বলা হয় “ভারতীয় বাহিনী আপনাদের চতুর্দিকে পৌঁছে গিয়েছে, আপনাদের বিমানবাহিনী বিধ্বস্ত। সমুদ্র দিয়েও আপনাদের কোনো আশা নেই। কেউ আপনাদের কাছে পৌঁছতে পারবে না। আপনাদের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে আছে। মুক্তিবাহিনী ও জনগণ আপনাদের কৃত বর্বরতা ও পৈশাচিকতার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য সম্পূর্ণ তৈরি। সুতরাং বৃথা জীবনহানি কেন? আপনারা কি বাড়ি ফিরে আপনাদের সন্তানদের সান্নিধ্য কামনা করেন না? সময় নষ্ট করবেন না। একজন সৈনিকের নিকট অস্ত্রসমর্পণে লজ্জিত বা অপমানিত হবার কিছু নেই।” (The Liberation war of Bangladesh; Maj Gen Sukhwant Sing, Vikas )।
এটি ছিল একটি উল্লেখযোগ্য উপলক্ষ্য যখন প্রচার যন্ত্রকে একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিশেষ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়। আকাশবাণীর মনিটরিং সেল এখন পর্যন্ত নিয়মিতভাবে ভারতের স্বার্থের সাথে সরাসরি জড়িত যেমন মূলতঃ পাকিস্তান, বাংলাদেশ, চীন ও আফগানিস্তানের উন্মুক্ত বেতার প্রচারণা মনিটরিং করে থাকে। প্রচারযন্ত্রের চাতুরীপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের জন্যই-এর উদ্দেশ্য হলো বিভিন্ন দেশকে লক্ষ্য করে নানা তথ্য বিকীর্ণ করা। উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক সম্মেলনে স্থির করা হয়েছে যে, প্রচার মাধ্যম সংবাদ, বিনোদন ও জ্ঞানদানের জন্য ব্যবহৃত হবে। তবে এটা সকলে ভালোভাবেই জানেন যে, প্রচারকার্যে নিজ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ভুল তথ্য অনুস্থাপন করা হয়ে থাকে। আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে প্রেসিডেন্ট বাবরাক কারমাল উত্তেজিত হয়ে বি বি সি’কে ‘পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মিথ্যার যন্ত্র” বলে উল্লেখ করেছিলেন। রাশিয়ানদের আফগানিস্তানে অনুপ্রবেশের পর অনুষ্ঠিত প্রথম প্রেস কনফারেন্সে বাবরাক কারমাল ওই মন্তব্য করেন। এ ধরণের একটি মন্তব্যকে, কে কিভাবে বিশ্লেষণ করবেন তা নির্ভর করে তিনি কোন শিবিরে অবস্থান করছেন তার ওপর।
খ। রাখঢাক শাখা ( Hush Hush Section )
ইলেকট্রনিক টেকনিক্যাল সেকশন (ETS) : ‘ইলেক্ট্রনিক টেকনিক্যাল সেকশন’-’র’ এর একটি অত্যাধুনিক ইলেক্ট্রনিক শাখা যার কাজ হচ্ছে সামরিক বেতার সংকেত (যার বেশিরভাগ সাংকেতিক) মনিটর করা। অবশ্য ই টি এস-এর আসল কার্যক্রম প্রতিবেশী দেশসমূহ, বিশেষ করে যাদের কাজ কারবার সরাসরি বা পরোক্ষভাবে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার সাথে সম্পর্কিত, তাদের সামরিক বেতার সংকেত মনিটর করা ও সাংকেতিক বার্তা রহস্য উদ্ধারের (Decoding the message) সাথে সম্পর্কিত। এ সংগঠনকে তত্ত্বাবধান করার জন্য এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ নিয়োজিত থাকেন যারা কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতির সাহায্যে কাজ চালিয়ে যান। বেসামরিক ও সামরিক বিশেষজ্ঞদের সমন্বিত ও অতি উঁচুমানের এ দলটির কথা খুব কম আলোচিত হয়, এমনকি ‘র’- সংগঠনেও এদের সম্পর্কে কদাচিৎ কখনো কিছু শোনা যায়।
এভিয়েশন রিসার্চ সেন্টার (ARC) : এভিয়েশন রিসার্চ সেন্টার বিমান চলাচল ও নভোশ্চরণ সম্পর্কিত একটি সংস্থা, যার কাজ অনেকটা ই টি এস-এর সমপর্যায়ের; কিন্তু এরপরও এ দুটোর মাঝে কিছু পার্থক্য বিদ্যমান। এর লক্ষ্য সামরিক প্রকৃতির হওয়া সত্ত্বেও মূলতঃ ভূমিতে বিভিন্ন চলাচল মনিটর করাই এ সংস্থার আসল কাজ। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে, যেরূপ ইউ-২ বিমান, ও (ইউ-২ বিমান মার্কিনিদের তৈরি যা রাশিয়ার বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তিতে ব্যবহার করা হয়েছিল) উপগ্রহের মাধ্যমে ভূমিতে পর্যবেক্ষণ চালানো হয়, তদ্রূপ এ সংস্থাও অনেকটা সে ধরণের কাজ করে থাকে। এ আর সি সাধারণত বিমান থেকে পর্যবেক্ষণ, শত্রু এলাকার ফটো তোলা ও লজিস্টিক সাহায্য প্রদান সংক্রান্ত কাজ করে।
ই টি এস ও এ আর সি সংস্থা দু’টোর জন্য ‘র’-এর বাজেটের বৃহদাংশ ব্যবহার করা হয়। ইন্টেলিজেন্স জগতে এভাবে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা অবশ্যই একটি ভালো দিকনির্দেশনা দেয়।
গ। স্পেশাল সার্ভিস ব্যুরো (এস এস বি) বা বিশেষ কার্যক্রম বিভাগ : (Special Service Bureau)
১৯৬২ সালে চীনের সাথে যুদ্ধের পর পরই বিশেষ কার্যক্রম বিভাগ সৃষ্টি করা হয়, যা ছিল দেশের ভিতরে ‘র’-এর একমাত্র সক্রিয় শাখা। এমনকি এ সংস্থা যখন এ ধরণের কাজে ব্যাপৃত ছিল তখনও যুদ্ধাকালীন সীমান্তের ওপারে এর (যুদ্ধ) প্রতিক্রিয়ার দিকেই লক্ষ্য রাখা হতো। এভাবে-এর কার্যক্রম ভারতের বাইরে কেন্দ্রীভূত হয়।
ভারতের চারপাশে সীমানাব্যাপী বিশেষ কার্যক্রম বিভাগের অপারেটিভরা সীমানাসংলগ্ন সীমান্তবাসীদের ছোটোখাটো যুদ্ধাস্ত্র ও যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এ প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য হচ্ছে যে, যদি কোনো দেশ ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে তবে যেন তারা নিজেদের রক্ষা করতে সমর্থ হয় এবং এর পাশাপাশি এস এস বি অপারেটরদের সাথে সীমান্ত অতিক্রম করে শত্রুর পশ্চাতে সক্রিয় থাকতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সীমান্তের জনগণের সীমানার ওপারের জনগণের সাথে শারীরিক ও অন্যান্য অভ্যাসগত সাদৃশ্য থাকায় প্রয়োজনীয় মুহূর্তে ছদ্মবেশে গোপনে কাজ করা সহজতর হয়ে ওঠে।
এস এস বি; এ আর সি-র মতো ‘মহাপরিচালক নিরাপত্তা’র নিয়ন্ত্রণে থাকে। অন্যদিকে ই টি এস অতিরিক্ত পরিচালকের আওতাধীন একটি বিভাগ। এ তিন শাখা আবার ঘুরে ফিরে ‘র’-এর পরিচালকের কর্তৃত্বাধীন বলে বিবেচিত হয়।
ঘ। আড়িপাতা (Snooping On People )
‘কাউন্টার এসপায়োনজ’ কার্যক্রম ছাড়া ইন্টেলিজেন্স সংস্থাগুলো সাধারণত আড়িপাতার ব্যাপার-স্যাপার অস্বীকার করে থাকে। যদিও এ কাজের ভার দেশের মধ্যে ‘র’ এর ঘাড়ে বর্তায় না, তবে পৃথিবীর বড় রাজধানীগুলোয় ‘র’-কে বাধ্য হয়ে এ ধরণের কাজে জড়িত হতে হয়।
৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭৯ সংখ্যা ‘ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউনে’ আর্ট বুকওয়ান্ড এ সম্পর্কে একটি চমৎকার কলাম লিখেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, জাতিসংঘের বিভিন্ন রাষ্ট্রদূতদের উপর আড়িপাতা নিউইয়র্কে অবস্থিত অদৃশ্য এজেন্টদের জন্য একটি মানসম্পন্ন কাজ বলে বিবেচিত। জাতিসংঘে বিভিন্ন সদস্য দেশের রাষ্ট্রদূতগণের মর্যাদা নির্ভর করে, আসলে কিভাবে ও কত অসুবিধার মধ্যে একজন বিদেশী এজেন্ট তাদের লক্ষ্য করে আড়িপাতা যন্ত্র রোপণ করবেন তার উপর। বৃহৎ শক্তিবর্গ যেমন- রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গণচীন, জাপান, ফ্রান্স ও বৃটেনকে পাঁচটি আড়িপাতা তারার মূল্যমানে ওজন করা হয়। অন্যান্য পশ্চিমী ও পূর্ব ব্ল্যাকের রাষ্ট্রগুলো পায় চারটার সম্মান, তৃতীয় বিশ্বের যে সব দেশ তেলসমৃদ্ধ সেগুলো তিনটি ও তেলছাড়া দেশগুলো একটি বা কোনটি তারা ছাড়াও মূল্যায়িত হয়; অবশ্য তা নির্ভর করে তাদের সরকার প্রতিবেশীদের জন্য কেমন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে তার উপর। তবে এরও ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়, যেমন- কিউবা। যদিও কিউবা একটি ক্ষুদ্রশক্তি বিশেষ তথাপি একে পাঁচটি তারা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে। পাকিস্তান আণবিক প্রযুক্তির উন্নয়নের পূর্ব পর্যন্ত মাত্র ২টি তারার (!) সম্মানের অধিকারী ছিল।
নতুন দিল্লিতে ‘আড়িপাতা’র পরিস্থিতি খুব একটা খারাপ নয়। যদিও ভারতীয়রা এ সব দৃশ্যের আড়ালে অবস্থান নিয়েছে, কিন্তু রাশিয়ানরা এ ক্ষেত্রে বেশ সক্রিয় এবং তারা ধরা পড়লে ভারতের ওপর দোষ চাপিয়ে দেয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। তবে আজ পর্যন্ত এ ধরণের ঘটনা ঘটেনি।