অধ্যায় : ৩ – ‘র’-এর গঠন প্রক্রিয়া
The Coming of RAW
‘র’ তার ‘ছদ্মবেশি রূপের’ প্রতিবিম্ব লুকিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল; কিন্তু ১৯৬৯ সালে যখন কংগ্রেস ভেঙে যায়, তখন সরকারের পূর্ববর্তী সদস্যদের রাজনৈতিক জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটায়, তাঁরা ‘র’ সম্পর্কে বিভিন্ন কথাবার্তা বলা আরম্ভ করেন। ইলাসট্রেটেড উইকলি অব ইন্ডিয়ার’ জুলাই সংখ্যায় বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে উল্লেখ্য করা হয় যে, ভারতীয় প্রচার মাধ্যমসমূহ ভারতের গুপ্ত সংস্থার অস্তিত্ব সম্পর্কে সম্যক অবগত আছে। এরপর ‘বিশেষ সংবাদ’ সংগ্রহ ও ছাপার জন্য প্রচার মাধ্যমে তীব্র আলোড়ন ও চিৎকার চেঁচামেচির সৃষ্টি হয় এবং বিভিন্ন সংবাদপত্রে একটির পর একটি ‘গল্প’ ছাপা হতে থাকে। ঠিক তখনই ‘র’-এর প্রধান হিসেবে ‘কাও’-এর নাম উচ্চারিত হতে শোনা যায়।
ক। ‘র’ গঠনে কাও ও শংকর নায়ারের মিলিত প্রচেষ্টা (Kao With Sankaran Nair Build RAW)
‘র’-এর প্রধান পদটির জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া ছিল একটি অত্যন্ত কঠিন কাজ। কারণ অভিজ্ঞতা ও গুপ্তচরবৃত্তির বিশেষ নৈপুণ্যে পারদর্শী খুব কম লোকই শনাক্ত করা সম্ভব ছিল। অবশেষে সকলে কাও-এর দিকে তাদের দৃষ্টি নিবন্ধ করেন এবং ভারতীয় সরকারও তাঁর থেকে অভিজ্ঞ ও উপযুক্ত কোনো ব্যক্তির সন্ধান না পেয়ে তাঁকে নিয়োগ দান করেন।
রামেশ্বর নাথ কাও আই বি (IB) তে তাঁর কার্যকালে গুপ্তচরবৃত্তি ও গোয়েন্দা জগতে একজন উপযুক্ত ব্যক্তিরূপে সকলের নজর কাড়তে সমর্থ হন, যিনি নেহরুর সময় ষাট দশকের মধ্যভাগে মাঠপর্যায়ে কর্মরত ছিলেন। তখন ১৯৬০ সালের ১ জুলাই ঘানা সদ্য স্বাধীনতা লাভ করে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে প্রেসিডেন্ট নক্রুমা ঘানায় বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা গঠনের জন্য ভারতের সাহায্য লাভের আশা প্রকাশ করেন। নেহেরু এ প্রস্তাবে তৎক্ষণাৎ রাজি হয়ে যান এবং এর পরপরই দু’জন কর্মকর্তা যথাক্রমে আর এন কাও ও কে শংকর নায়ারকে প্রেষণে (Deputation) ঘানায় পাঠানো হয়। এ দু’ভদ্রলোকই পরবর্তী বছরগুলোতে এলোমেলো অবস্থা থেকে ঘানার গুপ্তর সংস্থার সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে তোলেন। তাদের কঠিন পরিশ্রমের ফলশ্রুতিতে শূন্য অবস্থা থেকে ঘানার গুপ্ত সংস্থা একটি অবয়ব লাভে সক্ষম হয়। কাও এর অবকাঠামো রূপায়ণ করেন ও ভিত্তিস্থাপনের পর নায়ার তাঁর ক্রমাগত চেষ্টায় ‘ঘানা গুপ্তচর সংস্থা’ সচল করে তুলতে সক্ষম হন।
তাদের ঘানায় অর্জিত সুনাম ও অতীতের মাঠপর্যায়ের দক্ষতা তাদের একটি সম্মানজক অবস্থানে পৌঁছতে সাহায্য করে। আট বছরের মধ্যে (ঘানার কাজ করার পর) তাদের যথারীতি মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয়ের আওতাধীন R. and A. W-এ (Research & Analysis Wing) দায়িত্বশীল আসনে নিয়োগ করা হয়। অবশেষে ১৯৬৮ সালের ২১ সেপ্টেম্বর R. and A. W গঠনের চূড়ান্ত আদেশ প্রদান করা হয়। বড় কোনো হৈ চৈ ছাড়াই কাও ও নায়ারসহ আরো ২৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী IB থেকে ‘র’-এর ‘ছায়ায়’ বদলি হয়ে আসেন।
তাৎক্ষণিকভাবে ‘র’-এর কার্যালয় ও আনুষঙ্গিক স্থাপনার জন্য স্থান সংকুলান প্রাথমিক অসুবিধার সৃষ্টি করে ও রাজধানী নয়াদিল্লি ততোদিনে অসংখ্য অফিস-আদালতের ভারে নিমগ্ন প্রায়। তাই শুরুতে কেন্দ্রীয় সচিবালয়ের উত্তর ব্লকে ‘র’-এর কার্যক্রম শুরু করতে হয় এবং দক্ষিণ ব্লকের তথাকথিত ‘স্পেশাল উইং’-এ কাও তাঁর নিজস্ব অফিস স্থাপন করেন। অতঃপর অবকাঠামো অপরিবর্তিত রেখে কিছু সংস্কার সাধন করা হয় এবং পৃথক আরেকটি ‘ক্যাডার’ গঠনের পরিকল্পনা নেয়া হয়।
গোয়েন্দা কার্যক্রমের শুরুতে, ভারতের প্রাথমিক মাথাব্যথা পাকিস্তান ও চীন সংক্রান্ত ডেস্কের পুনর্গঠন ও উন্নয়ন সাধন জরুরি হয়ে দাঁড়ায়। ‘রাও ও সিং কমিশন’ ১৯৬৫ সালের ব্যর্থতার জন্য সংগৃহীত গোয়েন্দা তথ্য ও এর গবেষণা এবং পর্যালোচনার মধ্যে দুস্তর ব্যবধানকে দায়ী বলে মত প্রকাশ করেন। শংকর নায়ার, যিনি পূর্বে IBতে পাকিস্তান ডেস্কে কর্মরত ছিলেন, তিনি এ সব ‘ব্যবধান’ চিহ্নিত করতে ও এর সমাধান দিতে সক্ষম হন। পূর্বের চিন্তাধারা অনুযায়ী IB থেকে ‘র’-এ লোক নিয়োগ স্থগিত করে তৎপরিবর্তে বিভিন্ন সংস্থা ও বিশেষ পেশায় দক্ষ লোকদের বিশেষ কাজের’ জন্য বাছাই করা হয়। এ পদক্ষেপ পরবর্তীতে ব্যাপক বিদ্বেষ ও রেষারেষির জন্ম দেয় কারণ ‘অন্য সংস্থার ও বিশেষ পেশায় দক্ষ ব্যক্তিত্বের গোয়েন্দা পেশায় আদৌ প্রয়োজন আছে কিনা’ এ নিয়ে নানাজন নানা প্রশ্ন উত্থাপন করেন।
‘র’ ১৯৬৮ সালে-এর প্রাথমিক স্তরে দুটি সংস্থার সাথে তীব্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে বাধ্য হয়েছিল। এ দুটো সংস্থা ছিল ব্রিগেডিয়ার ভদ্র পরিচালিত ‘সেনা গোয়েন্দা পরিদপ্তর’ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়; বিশেষ করে ভারতীয় বৈদেশিক সার্ভিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।
১৯৬৯ সালে কংগ্রেস ভেঙে যাওয়ায় সরকারি অবকাঠামোর পুনর্গঠন করা হয় ও মুখ্যতঃ অর্থ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন রাজস্ব গোয়েন্দা শাখা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্থানান্তরিত হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার দায়িত্ব (CBI) জনশক্তি বিভাগের উপর ন্যস্ত করা হয় এবং সকলের ‘হৃদয় জ্বালা’ সৃষ্টি করে চিরদিনের জন্য ‘র’ প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি নিয়ন্ত্রণে মন্ত্রিপরিষদ মন্ত্রণালয়ে (এর) জায়গা করে নেয়।
‘র’-এর কার্যক্রম দিন দিন সম্প্রসারিত হতে থাকে। ১৯৬৯ সলে ২৫০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ এর বার্ষিক বাজেট ছিল দুই কোটি রুপি। তবে অল্পসময়েই এর বরাদ্দ ১০ কোটি রুপিতে উন্নতি হয় (যদিও এ খসড়া আনুমানিক হিসেবমাত্র, আসল হিসেব জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে কখনই প্রকাশ করা হবে না) এবং লোকবল ৭০০০ এ বৃদ্ধি পায়। ভারত সে সময় প্রতিবছর মাথাপিছু মাত্র ২০ পয়সা বৈদেশিক গোয়েন্দাবৃত্তির জন্য খরচ করে। ‘র’ প্রধানকে ক্রমান্বয়ে আরো অধিক অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রদান করে সচিব পদমর্যাদায় উন্নীত করা হয় এবং তিনি তাঁর সকল কাজের জন্য সরাসরি একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর নিকট দায়বদ্ধ থাকেন। এ দৃঢ় পদক্ষেপের ফলে আমলাতান্ত্রিক ‘লাল ফিতার বেড়াজাল ছিন্ন করে’ দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজতর হয় এবং সংস্থায় সাংগঠনিক সাবলীলতা ফিরে আসে।
প্রাথমিক পর্যায়ে শুধু ‘গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহকারী’ সংস্থা হিসেবে ‘র’-এর নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছিল। কিন্তু পরে পররাষ্ট্র নীতির আওতায় পরিচালিত আরেকটি বিশেষ অপারেশনাল শাখার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এ পরিকল্পনা ভবিষ্যতে অত্যন্ত কার্যকর ফল লাভে সক্ষম হয় (বাংলাদেশ ও সিকিম অপারেশন এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত)।
খ। অপারেশনাল শাখা (The Operational Arm)
ভারতীয় বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থায় ‘স্পেশাল অপারেশন ব্রাঞ্চের’ ‘বিশেষ অপারেশনাল শাখা’ গোয়েন্দা জগতে কোনো নতুন সংযোজন নয়। এ রকম একই ধরণের শাখা সি আই এ, কেজিবি ও বৃটিশ গোয়েন্দা বাহিনী এস আই এস (Sceret Intelligence Service)-এও রয়েছে।
এ ধরণের অপারেশনাল শাখা সময়ে সময়ে যখন প্রয়োজন হয় তখন ব্যাপক গোয়েন্দা নীতিমালা প্রণয়নে বিশেষ কাজে ব্যবহৃত হয়। যদিও ‘র’ ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা সাধারণত প্রচলিত নিয়মতান্ত্রিক গুপ্তচরবৃত্তিতে নিয়োজিত থাকার চেষ্টা করে কিন্তু অনিবার্য অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অপ্রচলিত ধারার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে, যা ক্ষেত্রবিশেষে অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে এবং এ রকম কোনো কোনো ক্ষেত্রে ‘অপারেশন’ সফল নাও হতে পারে। এখানে কিছুদিন পূর্বে সি আই এ পরিচালিত ‘জিম্মি উদ্ধারের’ (ইরানে মার্কিন দূতাবাসে আটক জিম্মি উদ্ধার প্রচেষ্টা) ব্যর্থতা বিশেষভাবে উল্লেখ্য করা যায়।
কিন্তু সব সময় এটা ভাবা ঠিক নয় যে, বিশেষ অপারেশন সম্পূর্ণ অপারেশনের সাফল্য ব্যর্থতার নিয়ামক। ইরানের ‘জিম্মি উদ্ধারের’ অপারেশনাল ব্যর্থতা সি আই এ’র ইরানে সম্পৃক্ততার পুরোপুরি ইতি ঘটায়নি এবং ‘বাংলাদেশ অপারেশনেও’ এ রকম অনেক ঘটনা ঘটেছে।
আবার অনেক ‘বিশেষ অপারেশনে’ ব্যাপক ঝুঁকি বা বিপদের সম্ভাবনা থাকে না। বিশেষ করে যেখানে প্রথাগত কূটনৈতিক দেনদরবার সম্ভব নয়, সেখানে সাধারণত বিভিন্ন সরকারের সাথে ‘বিশেষ ব্যবস্থায় সম্মত হতে হয়। মাঝে মাঝে সে দেশের স্থানীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে পর্যন্ত এ ধরণের কাজে সাহায্যের আহ্বান জানানো হয়ে থাকে। এ রকম একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল ‘মোশে দায়ান’ ও ‘মোরারজী দেশাই’-এর মধ্যে নয়াদিল্লিতে আয়োজিত এক গোপন বৈঠক, যার মাধ্যমে একটি ‘বিশেষ’ অপারেশনে বিদেশী গোয়েন্দা বাহিনীর সাহায্য নেয়া হয়েছিল।
(তখন ইসরাইলের সাথে ভারতের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল না : অনুবাদক)
গ। ‘র’-এর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যসমূহ (RAW Objectives)
ব্যাপক অর্থে ‘র’-এর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যসমূহ নিম্নলিখিত নীতিমালার ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত:
১। পার্শ্ববর্তী সকল দেশের রাজনৈতিক ও সামরিক ঘটনাবলী ও অবস্থান, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার সাথে সরাসরি জড়িত এবং ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতিতে তার প্রভাব অবশ্যম্ভাবী।
২। দ্বিতীয়ত: ‘র’ আন্তর্জাতিক সমাজতন্ত্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং চীনের সামজতান্ত্রিক মতভেদ সম্পৰ্কীয় ঘটনাবলীর ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখবে; কারণ এ দু’পরাশক্তির ভারতীয় সমাজতান্ত্রিকতায় ও অন্যান্য দেশে সরাসরি সম্পৃক্ত হবার সম্ভাবনা আছে।
৩। তৃতীয়ত: পাকিস্তানে বিপুল সমরোপকরণ সরবরাহ সর্বপ্রধান বিবেচ্য বিষয়, বিশেষ করে ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন থেকে অস্ত্র সংগ্রহ ভারতের জন্য বড় উদ্বেগের বিষয়।
৪। সর্বশেষ কিন্তু বিশেষ উদ্দেশ্য হলো যে, বিভিন্ন গোত্রের বিপুলসংখ্যক ভারতীয় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাস করে আসছেন, যারা ওই সব দেশে একটি জোরালো অবস্থানে আসীন এবং এ সব প্রবাসী গোয়েন্দা তথ্য জোগাতে পারে। সুতরাং ‘র’-এর উচিৎ এ সব ‘পরবাসী’ ভারতীয়দের সম্পর্কে বিশেষ দৃষ্টি রাখা।
অত্যন্ত জটিল ও ‘টেকনিক্যাল’ তথ্য বিভিন্ন সূত্র থেকে জড়ো করে ওগুলোর বিশ্লেষণ করার জন্য বিভিন্ন বিষয়ে অভিজ্ঞ ও উপযুক্ত বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন হয়। তাই সংস্থার জন্য অত্যন্ত যত্ন ও নিরাপত্তার সাথে তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই এর পর এজেন্ট নিয়োগ করতে হয়।
সংস্থার ব্যাপ্তি বাড়ার সাথে সাথে একটি নিয়মিত ক্যাডারের’ প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভূত হয় যাদের সামনে দক্ষতা প্রকাশের মাধ্যমে উৎকর্ষ লাভের পথ খোলা থাকে ও পদোন্নতি প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ‘র’-এর সকলেই ছিল অন্যান্য সংস্থার ধার কৃত সদস্য যাদের জন্য এক সময় ‘পে-স্কেল’ ও পদবীর সাদৃশ্য রক্ষা করা জরুরি হয়ে দাঁড়ায়। পুলিশ বাহিনী থেকে আসা সদস্যদের ‘পদোন্নতি’ ও ‘জ্যেষ্ঠতার’ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নিয়ম রীতি থাকলেও অন্যান্য অনেক বাহিনী ও সংস্থার লোকজন নিয়ে তীব্র সমস্যার সৃষ্টি হয় (বিশেষ করে সশস্ত্র বাহিনীর পদোন্নতি ও আনুষঙ্গিক ব্যাপারগুলো ছিল অন্যদের থেকে একেবারেই আলাদা প্রকৃতির)। আবার অনেকের ক্ষেত্রে তাঁদের পূর্বের সংস্থায় ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত পদোন্নতির কোনো সম্ভাবনাই ছিল না। বেশ কয়েক বছর পর্যন্ত এ সব সমস্যার কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি।
অতঃপর ১৯৭৫ সালের শেষ দিকে একটি ‘নিয়মিত ক্যাডার সার্ভিস’ গঠনের মাধ্যমে সংস্থাকে একটি সুষ্ঠু প্রশাসনিক ভিত্তি প্রদানের পরিকল্পনা নেয়া হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল অন্যান্য সংস্থা থেকে লোক নিয়োগের সমস্যা দূর করা, যারা ইতোমধ্যেই বিভিন্ন সংস্থা থেকে আসার কারণে একই কাজ করে ভিন্ন বেতন পাওয়ার হতাশায় নিমজ্জিত ছিলেন। তখন শোনা গিয়েছিল যে, সরকার ‘র এক্সিকিউটিভ ক্যাডার’ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত প্রয়োগ করার পূর্বেই ‘জনতা পার্টি’ সরকার গঠন করে এবং ‘অনুমোদন’ ‘হিমাগারে’ স্থান লাভ করে। এরপর এ প্রস্তাব শুধু কল্পনাই রয়ে যায় এবং ‘র’ পূর্বাপর অন্যান্য সংস্থা থেকে অস্থায়ী ভিত্তিতে প্রেষণে (OSD) এক্সিকিউটিভ নিয়োগ অব্যাহত রাখে। এটা অবশ্য অত্যন্ত আশ্চর্যের ব্যাপার যে, ‘র’ গঠনের শুরুতে ‘র’-প্রধান নিজে এ প্রস্তাব উত্থাপন করেননি।