৫৫. কর্নেল হোলিস

৫৫.

কর্নেল হোলিসের মনে হলো, বোট ছাড়ার পর এক জনম পেরিয়ে গেছে। ক্যারিয়ার পিজিয়ন হেলিকপ্টার উপকূল রেখা বরাবর খুব নিচ দিয়ে উড়ে খাড়ির মুখে খুদে একটা দ্বীপে কোনো রকম বিপদ ছাড়াই পৌঁছে দিয়ে গেছে দলটাকে। বোট পানিতে নামাতে বা বোটে চড়ে রওনা হতেও কোনো সমস্যা হয়নি। তবে খানিক পরই তীব্রগতি জোয়ারের মধ্যে পড়ে তারা, বোট সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে। কপাল ফাটার ওই শুরু।

শব্দহীন টো বোট বেশ চলছিল, রওনা হবার দশ মিনিট পর হঠাৎ সেটার মোটর অচল হয়ে পড়ল। অগত্যা বৈঠা মেরে এগোতে হলো দলটাকে, আঙুলের ফাঁক গলে বেরিয়ে যেতে শুরু করল মহার্ঘ সময়, ভোরের প্রথম আলো ফোঁটার আগে লেডি ফ্ল্যামবোরোয় পৌঁছানোর আশা ম্লান হয়ে এল।

কী এক রহস্যময় কারণে এরপর অকেজো হয়ে পড়ল কমিউনিকেশন সিস্টেম। হতাশায় মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করল কর্নেলের, জন ডিলিঞ্জার বা গ্রাউন্ড টিমের আর কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারল না সে। জন ডিলিঞ্জার জাহাজে পৌঁছল, নাকি হারিয়ে গেল গ্লেসিয়ারে?

 হামলা করার নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে যাচ্ছে, দ্বিতীয় টিমের অবস্থান জানা নেই, এখন আর অপারেশনটা বাতিল করাও সম্ভব নয়, করণ অসময়ে হামলা করার চেয়ে ঝুঁকি তাতে বেশি পাবেন। বাতিল করা হলে জন ডিলিঞ্জার তা জানবে না।

কর্নেলের একমাত্র সুবিধা ফগ স্মোক। ছোট বোটগুলোর চারধারে ঘন ধোঁয়ার মতো ভেসে আছে কুয়াশা, খানিকটা দূর থেকেও কেউ ওদেরকে দেখতে পাবে না।

একে অন্ধকর রাত, তার ওপর কুয়াশা, কয়েক মিটারের বেশি ওরাও কিছু দেখতে পাচ্ছে না। ইনফ্রারেড স্কোপ-এর সাহায্যে খুদে বহর নিয়ে এগোচ্ছে কর্নেল। সবগুলো বোটকে তিন মিটারের মধ্যে রেখেছে সে, কাউকে দিগভ্রান্ত হতে দেখল মিনিয়েচার রেডিওতে নির্দেশ দিয়ে ফিরিয়ে আনছে পথে।

স্কোপটা লেডি ফ্ল্যামবোয়রার দিকে ঘোরাল সে। আন্দাজ করল, এখনও ওটা প্রায় এক কিলোমিটার দূরে। জাহাজের সুদৃশ্য কিনারাগুলো যেন, শ্বেতপাথরের পাঁচিলের সামনে অ্যান্টিক বাথটাবে ভাসছে।

দেখি যা করার করিয়ে দিয়ে অবশেষে অকস্মাৎ মন্থর হয়ে পড়ল জোয়ারের গতি। কর্নেল লক্ষ করল, তার লোকজন বৈঠা চালিয়ে ক্লান্তির চরমে পৌঁছে গেছে।

আড়াল করে রাখা কুয়াশা পাতরা হতে শুরু করল। শত্রুপক্ষের সহজ নিশানায় পরিণত হতে হবে ভেবে ভয় পেল কর্নেল। মুখ তুলল সে। কুয়াশার ফাঁকগুলো দিয়ে দেখল হালকা নীল হতে শুরু করেছে কালো আকাশ।

তার বোটটা খাড়ির মাঝখানে রয়েছে, তীরের সবচেয়ে কাছাকাছি অংশটুকুতে আড়াল পেতে হলে লেডি ফ্ল্যামবোরোকে ছাড়িয়ে আরও আধ কিলোমিটার এগোতে হবে।

জোরে বৈঠা চালাও, আরও জোরে! নির্দেশ লি কর্নেল, ইনফ্রারেড স্কোপ ছেড়ে দিয়ে নিজেও একা বৈঠা তুলে নিল হাতে।

সরাসরি জাহাজের দিকে এগোল বোটগুলো। ক্ষীণ আশা দেখা দিয়েছে সবার মনে। দেরিতে হলেও, হামলা চালানোর সুযোগ এখনও আছে তাদের।

কিন্তু জন ডিলিঞ্জার? গ্লেসিয়ারের ওপর দ্বিতীয় দল? কোথায় তারা?

.

মেজর ডিলিঞ্জারও সুখে নেই। পরিস্থিতি সম্পর্কে তার বরং আরও আবছা ধারণা সি ১৪০ ট্রান্সপোর্ট প্লেন থেকে জাম্প করার পরপরই তীব্রগতি বাতাস আকাশময় চরকির মতো ঘোরাতে শুরু করল তাদেরকে।

কার কী অবস্থা দেখার জন্য চোয়াল শক্ত করে ওপর দিকে মুখ তুলল জন ডিলিঞ্জার। প্রত্যেকের কাছে ছোটো একটা নীল আলো আছে, কিন্তু তুষার বৃষ্টি আড়াল থাকায় দৃষ্টি চলে না। প্যারাসুট খোলার পরপরই তাদেরকে হারিয়ে ফেলল সে।

নিচের দিকে হাত বাড়াল মেজর, পায়ের সাথে স্ট্র্যাপ দিয়ে আটকানো ঘোট কালো বাক্সটা নাগালের মধ্যে পেয়ে সুইচে চাপ দিল। কথা বলল খুদে ট্রান্সমিটারে, মেজর ডিলিঞ্জার বলছি। মার্কার বীকন অন করেছি আমি। সাত কিলোমিটার গ্লাইড করে যেতে হবে আমাদের, কাজেই আমার কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করো সবাই, ল্যান্ড করার পর চলে এসো আমার কাছে।

এই জঘন্য অবস্থায় আইল্যান্ডে নামতে পারাটাই সাত পুরুষের ভাগ্য। দলের একজন অসন্তুষ্ট সদস্য বলল।

ইমার্জেন্সি ছাড়া রেডিও সাইলেন্স বহাল থাকবে, হুকুম করল মেজর।

সবচেয়ে বড় ভয়, গ্লেসিয়ারের কিনারা ছাড়িয়ে খাড়িতে গিয়ে পড়তে পারে ওরা। ভাগ্য বিপদে ফেলল উল্টোভাবে, কিনারা থেকে বড় বেশি পেছনে ল্যান্ড করল ওরা, প্রায় এক কিলোমিটার।

অন্ধকারের ভেতর ধীরে ধীরে উন্মোচিত হলো গ্লেসিয়ারটা; জন ডিলিঞ্জার দেখল সরাসরি একটা ফাটলের ভেতর পড়তে যাচ্ছে সে। অসহায়ভাবে শূন্যে হাত-পা ছুড়ল, কিন্তু তাতে কি আর প্যারাস্যুট দিক বদলায় আকস্মিক দমকা বাতাসে খানিকটা কাজ হলো, ফাটলের ভেতর দিকের দেয়ালে বাড়ি খেল মেজর, প্যারাস্যুটে টান পড়ায় ফাটলের ঠোঁট থেকে উঠতে পারল। প্যারাসুট গুটাবার কোনো চেষ্টা না করে মিনিয়েচার রেডিওতে কথা বলল সে, আমি জন ডিলিঞ্জার। নিচে নেমেছি। আমার পজিশনে চলে এসো সবাই।

কোটের পকেট থেকে হুইসেল বের করে দশ সেকেন্ড পর পর একবার করে বাজাল সে, প্রতিবার দিক বদলে। কয়েক মিনিট কেটে গেল, কারো দেখা নেই। সাত মিনিটের মাথায় একজন, আট মিনিটের মাথায় আরেকজন, এভাবে বারো মিনিটের মধ্যে হাজির হলো সবাই। চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েছিল ওরা। একজনের গোড়ালি মচকে গেছে, কাঁধের হাড় ভেঙেছে আরেকজনের, সার্জেন্টের ভেঙেছে কবজি। আহতদের দিকে ফিরে মেজর বলল, সবার সাথে তাল মেলাতে পারবে না তোমরা, কাজেই পেছনে থাকো। আলোয় যেন হুড থাকে। সার্জেন্টকে নিজের পাশে দরকার তার। ফস্টার, রশি দাও সবার হাতে। গেট রেডি। আমি সামনে আছি।

এক মিনিটের মধ্যে রওনা হয়ে গেল দলটা।

.

ভাঙাচোরা, উঁচু-নিচু বরফের ওপর দিয়ে এগোনো সহজ নয়, তবু হাঁটা আর দৌড়ের মাঝখানে একটা ভঙ্গি নিয়ে বেশ দ্রুতই যাচ্ছে ওরা। সবা কোমরে রশি জড়ানো আছে, হঠাৎ ফাটলের ভেতর পা গলে গেলে খুব একটা ভয়ের কারণ নেই, বাকি সবাই তাকে টেনে তুলবে। দুবার বিরতি নিল মেজর, বিশ্রাম নেয়ার সাথেসাথে চরপাশে চোখ বুলিয়ে দিক সম্পর্কেও নিশ্চিত হওয়া গেল।

সামনে পড়ল একটা আইস রিজ। রিজের পর ভোলা একটা খাদ। এত চওড়া খাদটা, লাফ দিয়ে পেরোনোর প্রশ্নই ওঠে না। ওপারের শক্ত বরফে লোহার একটা আঁকশি আটকাতে সাত মিনিট বেরিয়ে গেল। আটকানো গেলেও, বরফ ভেঙে সেটা খুলে আসতে পারে। সবচেয়ে হালকা লোকটা লাইন ধরে এক ইঞ্চি এক ইঞ্চি করে খাদ পেরোচ্ছে, রুদ্ধশ্বাসে দেখছে সবাই। ওপারে পৌঁছে আঁকশিটা ভালো করে বরফের ভেতর গাঁথল সে। একজন একজন করে খাদ পেরোতে বেরিয়ে গেল আরও দশটা মিনিট।

মন মেজাজের অবস্থা খুবই খারাপ মেজরের। টিমে মাত্র দু’জন লোক অক্ষত, হামলা করার নির্দিষ্ট সময় অনেক আগেই পার হয়ে গেছে। নুমা সদস্যদের পরামর্শ গ্রহণ করেনি বলে নিজের ওপরেই রাগ হচ্ছে তার। বরফে নামার পর থেকে হামলা করার মধ্যবর্তী সময় দ্বিগুণ ধরা উচিত ছিল।

ডাইভ টিমের অবস্থা কী হয়েছে ভাবতে গিয়ে শিউরে উঠল জন ডিলিঞ্জার। তারা যদি লেডি ফ্ল্যামবোয়রার খোলের পাশে ওদের জন্য অপেক্ষায় থাকে, স্রেফ ঠাণ্ডায় মারা পড়বে সব কজন। বারবার সঙ্কেত পাঠিয়েও কর্নেলের কাছ থেকে কোনো সাড়া পায়নি সে। তার পেছনে ফুটতে শুরু করেছ ভোরের ক্ষীণ আলো, ধীরে ধীরে উন্মোচিত হচ্ছে। গ্লেসিয়ারের সারফেস। চারদিকে অদ্ভুত এক নির্জনতা। ভীতিকর নিস্তব্ধতা স্নায়ুর ওপর যেন একটা অত্যাচার। খাড়ির চকচকে ভাবটুকুও দেখতে পেল সে। যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে যাবার কারণটা হঠাৎ উপলব্ধি করতে পারল জন ডিলিঞ্জার।

ইনফ্রারেড স্কোপ ছাড়াই এখন জাহাজটাকে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে কর্নেল হোলিস। শ্যেনদৃষ্টি সন্ত্রাসবাদীদের একজন যদি এই মুহূর্তে সরাসরি তাকায়, গাঢ় রঙের পানির গায়ে বোটের ছায়া দেখতে পাবে সে। মাঝখানের দূরত্ব দ্রুত কমে আসছে, নিঃশ্বাস ফেলতে ভুলে গেছে কর্নেল।

আশা নেই জেনেও হাল ছাড়েনি সে, ডিলিঞ্জারের সাথে এখনো যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

হাঙর ডাকছি। বাজপাখি, সাড়া দাও। এবার নিয়ে বোধ হয় একশো পাঁচবার ডাকতে যাচ্ছে সে, এই সময় এয়ারপিস থেকে হঠাৎ করে বেরিয়ে এল ডিলিঞ্জারের গলা।

বাজপাখি বলছি, পরিস্থিতি জানান।

দেরি করছে তোমরা! শান্তভাবে ফিসফিস করল কর্নেল। আমার ডাকে সাড়া দাওনি কেন?

 এইমাত্র নাগালের মধ্যে এলাম। বরফের পাঁচিল আমদের সঙ্কেত ভেদ করতে পারেনি।

তোমরা কি পজিশনে পৌঁছেছ?

নেগেটিভ, ভোঁতা গলায় বলল জন ডিলিঞ্জার। একটা সঙ্কটে পড়েছি, উদ্ধার পেতে সময় লাগবে।

কাকে তুমি সঙ্কট বলো?

গ্লেসিয়াল ফ্রন্টের পেছনে, একটা আইস ফ্যাকচারে অনেক এক্সপ্লোসিভ রাখা হয়েছে, সিগন্যালের সাহায্যে ডিটোনেট করার জন্য তৈরি অবস্থায়।

অকেজো করতে কতক্ষণ?

 সবগুলোকে খুঁজে বের করতেই হয়তো এক ঘণ্টা পেরিয়ে যাবে।

সময় আছে মাত্র পাঁচ মিনিট, দ্রুত বলল কর্নেল। তার বেশি দেরি করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়, মারা পড়ব।

বিস্ফোরণ ঘটলে মারা আমরা সবাই পড়ব, কারণ বরফের পাঁচিল সরাসরি জাহাজের ওপর ধসে পড়বে।

 আমরা ঝুঁকি নেব। হঠাৎ হামলা করে চমকে দেব আতঙ্কবাদীদের, বাধা দেব ডিটোনেট করতে। তাড়াতাড়ি করো। যেকোনো মুহূর্তে আমাদের বোট দেখে ফেবে ওরা।

 গ্লেসিয়ারের কিনারা থেকে অস্পষ্টভাবে আপনাদের ছায়া দেখতে পাচ্ছি আমি।

তোমার দল আগে যাবে, নির্দেশ দিল কর্নেল। গাঢ় অন্ধকার না থাকায় খোল বেয়ে উপরে ওঠা আমদের জন্য বিপজ্জনক, তোমরা যদি ওদেরকে ডাইভার্ট করতে পারো খুব ভালো হয়।

সান ডেকে ককটেল পার্টি, ওখানে আমাদের দেখা হচ্ছে, সহাস্যে বলল জন ডিলিঞ্জার।

 সব বিল আমি দেব, জবাব দিল কর্নেল হোলিস, হঠাৎ প্রত্যাশায় উৎফুল্ল হয়ে উঠল সে। গুড লাক।

***

ইবনের চোখে ধরা পড়ে গেল ওরা।

 জেটিতে দাঁড়িয়ে আছে সে, সুলেমান আজিজের পাশে, ওদের সাথে চারজন জিম্মিসহ বিশজন মিসরীয় ও রয়েছে। চোখে বাইনোকুলার তুলে গ্লেসিয়ারটা দেখছিল সে, কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা কালো পোশাকে ঢাকা মূর্তিগুলো দেখেই চমকে উঠল। রশি বেয়ে নামছে লোকগুলো, প্লাস্টিক আবরণ কেটে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে জাহাজের ভেতর।

জাহাজের খোলের নিচে বাইনোকুলার তাক করল ইবনে। কয়েকটা বোট একজায়গায় জড়ো হয়ে রয়েছে, বোটের লোকজন রশির মাথায় লাগনো হুক ছুঁড়ে দিচ্ছে ঘোট যন্ত্রের সাহায্যে, রশি বেয়ে উঠে যাচ্ছে মেইন ডেক লেভেলে।

ওরা কারা? জিজ্ঞেস করল সুলেমান আজিজ, তার চোখেও বাইনোকুলার।

বলতে পারছি না, জনাব। ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে উদ্ধারকারী ফোর্স। আশ্চর্য, কোনো শব্দ তো শুনলাম না। অস্ত্রগুলোয় নির্ঘাত সাইলেন্সর লাগানো আছে। ওদের অ্যাসল্ট অপারেশনে কোনো খুঁত নেই, হযরত।

হুম।

আমার ধারণা, জনাব, ওরা বোধ হয় আমেরিকান স্পেশাল অপারেশনস ফোর্সের লোক। ভোরের সাপোর্ট দল পৌঁছুনোর আগে আমাদের সরে যাওয়া দরকার, জনাব, তাগাদা দিল ইবনে।

ট্রেনের জন্য সিগন্যাল পাঠিয়েছে?

 ট্রেন এল বলে, হযরত। মাইনে পৌঁছুতে পারলে….

কী ব্যাপার? প্রেসিডেন্ট দো লরেঞ্জো জানতে চাইলেন। কি ঘটছে এখানে? সুলেমান আজিজের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য একটা হাত বাড়িয়ে তার কাঁধ ছুঁতে গেলেন তিনি।

কাঁধ ঝাঁকিয়ে হাতটা সরিয়ে দিল সুলেমান আজিজ। দেখা যাচ্ছে, ঠিক সময়টিতে জাহাজ ছেড়ে চলে এসেছি আমরা। আল্লাহ হাসছেন। ওদের পরিচয় যাই হোক, জানে না এখানে আমরা আছি।

আর মাত্র ত্রিশ মিনিটের মধ্যে দ্বীপে গিজগিজ করবে আমেরিকান সৈন্য। ধীর লয়ে বললেন সিনেটর পিট। আত্মসমর্পণের প্রস্তাবটা আমিই দিয়ে রাখছি।

চুপ করুন। খেঁকিয়ে উঠল সুলেমান আজিজ।

চোখ কটমট করে তাকাল সে। উদ্ধার পাওয়ার আশা ত্যাগ করুন। যারা উদ্ধার করতে আসছে বলে আপনার বিশ্বাস, তারা পৌঁছে দেখবে উদ্ধার করার মতো অবশিষ্ট নেই কেউ।

অত্যন্ত সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে স্পষ্ট কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন হে’লা কামিল, তাহলে জাহাজেই কেন আমাদের তুমি খুন করলে না?

মুখোশের ভেতর হিংস্র হাসির সাথে সুলেমান আজিজের দাঁত দেখা গেল। হে’লা কামিলের দিকে তাকাল সে, কিন্তু জবাব না দিয়ে ইবনের দিকে ফিরল।

চার্জগুলো ডিটোনেট করো।

 জো হুকুম, হযরত।

চার্জ কী চার্জ? সুলেমান আজিজের দিকে এক পা সামনে বাড়লেন সিনেটর। কী বলছ তুমি?

ওহ হো? আপনারা তো আবার জানেন না। গ্লেসিয়াল ওয়ালের পেছনে এক্সপ্লোসিভ বসিয়েছি আমরা। ইঙ্গিতে লেডি ফ্ল্যামবোরোকে দেখল সে। ইবনে।

কোট পকেট থেকে ছোট একটা ট্রান্সমিটার বের করল ইবনে, সামনে বাড়িয়ে ধরল যাতে মুখের দিকটা গ্লেসিয়ারের দিকে থাকে। সম্পূর্ণ নির্লিপ্ত তার চেহারা।

গর্জে উঠলেন সিনেটর পিট। থামো।

সুলেমান আজিজের দিকে তাকাল, ইবনে ইতস্তত করছে।

জাহাজটায় একশোর ওপর লোক রয়েছে, কেন ওদেরকে তুমি মারতে চাইছ?

কারো কাছে জবাবদিহি করতে আমি বাধ্য নই! ধমকে উঠল সুলেমান আজিজ।

ইয়াজিদ তোমাকে দেখে নেবে, বিড়বিড় করে বললেন হে’লা।

কাজটা সহজ করে দিলেন কথাটা বলে, সুলেমান আজিজ বলে। ইবনে, তোমার কাজ তুমি করো।

ট্রান্সমিটারের সুইচ অন করে দিল ইবনে।

.

৫৬.

গুড়গুড় শব্দে যেন মেঘ ডেকে উঠল কোথাও। গ্লেসিয়ারের সামনের চেহারায় ফাটল দেখা দিল, গুঙিয়ে উঠল বরফের প্রকাণ্ড স্তরগুলো। তারপর আর কিছুই ঘটল না। বরফের পাঁচিল শক্ত আর খাড়াই থেকে গেল।

 ফাটলের ভেতর আটটা আলাদা জায়গায় বিস্ফোরণ ঘটার কথা, তবে জন ডিলিঞ্জার আর তার লোকজন জানে না, তল্লাশি বন্ধ করার আগে এটা বাদে সবগুলোকে অকেজো করে দিয়েছে।

খনির পুরনো লোকোমোটিভ-এর ইঞ্জিন স্টার্ট দেয়ার চেষ্টা করছে দু’জন, সতর্কতার সাথে তাদের দিকে রুডিকে নিয়ে এগোচ্ছে পিট, এই সময় বিস্ফোরণের ভোঁতা আওয়াজটা শুনতে পেল ওরা।

স্থির হয়ে গেল সন্ত্রাসবাদীদের দুজোড়া হাত, পরস্পরের দিকে তাকাল তারা, আরবিতে বাক্য বিনিময় করল। কী কথায় কে জানে হেসে উঠল দু’জনেই, তারপর আবার মন দিল নিজেদের কাজে।

 বিস্ফোরণের কারণ যা-ই হোক, বলল রুডি, ব্যাটারা অবাক হয়নি। যেন শুনতে পাবে বলে আশা করছিল।

গ্লেসিয়ার ভেঙে পড়ছে না, জনান্তিকে বলল পিট। পায়ের তলায় মাটি কাঁপত।

ন্যারোগেজ লোকোমোটিভটার দিকে তাকিয়ে আছে পিট। একটা কোল চেম্বারের সাথে পাঁচটা ওর-কার জোড়া হয়েছে। এ ধরনের ট্রেন আজকাল শুধু চাষাবাদ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্লান্ট আর মাইনিং অপারেশনে ব্যবহার করা হয়। ধোঁয়া বেরোনোর জন্য স্কুল চেহারার একটা চিমনি রয়েছে, ক্যাবে রয়েছে গোল আকৃতির জানালা। ইঞ্জিনের চারদিক থেকে বাষ্প আর ধোঁয়া বেরোচ্ছে অনর্গণ। ভোতা, কঠিন, জবড়জং চেহারার একটা ট্রেন।

চলো, নিচু গলায় প্রস্তাব করল পিট, প্রকৌশলী আর তার ফায়ারম্যানকে উষ্ণ বিদায়-সম্বর্ধনা দিয়ে আসি। করার মতো আর কিছু আমি খুঁজে পাচ্ছি না।

অবাক বিস্ময়ে পিটের দিকে তাকাল রুডি, কিন্তু কিছু বলার আগেই দেখল মাথা নিচু করে ট্রেনের লেজ লক্ষ্য করে ছুটছে পিট। অগত্যা পিছু নিতে হলো তাকে। ট্রেনের পেছনে পৌঁছে আলাদা হয়ে গেল দু’জন দুই পাশ ধরে এগোল ওরা, ওর-কারগুলোকে ব্যবহার করল আড়াল হিসেবে। ভোলা ফায়ারবক্সের আলোয় আলোকিত হয়ে রয়েছে ক্যাব। একটা হাত তুলে ইঙ্গিত দিল পিট, রুডিকে অপেক্ষা করতে বলছে।

আরবদের একজন ইঞ্জিনিয়ারের ভূমিকা নিয়েছে। ভালব ঘোরাতে ব্যস্ত সে, স্টিম প্রেশার গজের ওপর স্থির হয়ে আছে চোখ। অপর লোকটা টেন্ডার থেকে কয়লা নিয়ে আগুনে ফেলছে। কাজ শেষ করে হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে কপালের ঘাম মুছল সে, বেলচা দিয়ে বন্ধ করল ফায়ারবক্সের দরজা, সাথে সাথে প্রায় অন্ধকার হয়ে গেল ক্যাবের ভেতরটা।

 প্রথমে রুডির দিকে, তারপর ইঞ্জিনিয়ারের দিকে আঙুল তাক করল পিট। মাথা ঝাঁকিয়ে সঙ্কেত দিল রুডি, ঠিক আছে। হাতলটা ধরে লাফ দিয়ে ক্যাবের ভেতর উঠে পড়ল সে।

প্রথমে পৌঁছাল পিট। সরাসরি ফায়ারম্যানের পাশে গিয়ে দাঁড়াল, বলল, দিনটা আজ তোমার জন্য শুভ নয়।

 লোকটা সিধা হবারও সময় পেল না, তার হাত থেকে বেলচাটা কেড়ে নিল পিট, সেটা দিয়েই মাথায় একটা বাড়ি মারল।

 প্রকৌশলী তাকাতে যাচ্ছিল, হেকলার অ্যান্ড কোচের মাজলে লাগানো সাইলেন্সর দিয়ে তার চোয়ালের নিচে গুতো মারল রুডি, বস্তা ভর্তি সিমেন্টের মতো পড়ে গেল লোকটা।

 নতুন কেউ আছে কি না দেখার জন্য পাহারায় থাকল রুডি, অজ্ঞান দেহ দুটোকে টেনে ক্যাবের দরজার ওপর দিনে এল পিট। দুটো শরীরই বাইরের দিকে অর্ধেক ঝুলছে। সিধা হয়ে গাদা গাদা পাইপ, লীভার আর ভালভের দিকে তাকাল ও।

ভুলে যাও, মাথা নেড়ে বলল রুডি। এ কাজ আমাদের দ্বারা সম্ভব নয়।

 কেন, মাথা নেড়ে বলল পিট। আগে আমি ট্রেন চালিয়েছি।

তুমি ট্রেন চালিয়েছ?

একটা অ্যান্টিক অটোমোবাইল। ফায়ারবক্সের দরজাটা খোলা। গজ পড়ার জন্য আলো দরকার আমার।

দরজা খুলে গরম করার জন্য আগুনের দিকে হাত দুটো বাড়াল রুডি। যা করার তাড়াতাড়ি করো। আলোটা হাজার মাইল দূর থেকে দেখা যাচ্ছে।

একটা লিভার টেনে নামালো পিট, ছোট্ট ইঞ্জিনটা এক সেন্টিমিটারের মতো এগোল। বোঝা গেল, এটা ব্রেক। কোনো হ্যাঁন্ডেলের কী কাজ, বোধ হয় বুঝতে পারছি। শোনো, ক্রাশিং মিল পেরিয়ে যাচ্ছি দেখলে লাফ দিয়ে নেমে পড়বে, কেমন?

লাফ দিয়ে নেমে পড়ব? কেন? ট্রেনের কী হবে?

বিরতিহীন ট্রেন, চালকবিহীন।

ভয়ে ভয়ে হাতল আর লিভারগুলো নাড়াচাড়া করল পিট। ট্রেন যদি পেছন দিকে ছুটতে শুরু করে তাহলেই সেরেছে। ঝুঁকিটা স্বস্তির পরশ বুলিয়ে দিল শরীরে, সামনে এগোতে শুরু করেছে ওরা। থ্রটলটা শেষ সীমা পর্যন্ত ঠেলে দিল ও।

ডাইনিং হলের সামনে দিয়ে ছুটলো ট্রেন, প্রতি মুহূর্তে গতি বাড়ছে। ডাইনিং হলের দরজা খুলে বাইরের দিকে ঝুঁকল একজন, হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে, হঠাৎ ক্যাব থেকে দুটো দেহকে ঝুলতে দেখে ঝট করে হাতটা নামিয়ে নিল সে। দরজার সামনে থেকে চোখের পলকে অদৃশ্য হয়ে গেল লোকটা, যেন কেউ তাকে হ্যাঁচকা টান দিয়ে সরিয়ে নিল। তার তীক্ষ্ণ আর্তচিৎকার শুনতে পেল ওরা।

ডাইনিং হলের দরজা লক্ষ্য করে পরপর কয়েকটা গুলি করল রুডি। ট্রেন ক্রাশিং মিলের দিকে ছুটে চলেছে। নিচে, মাটির দিকে তাকাল পিট, ট্রেনের গতি আন্দাজ করল পনেরো থেকে বিশ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়।

হুইসেলের লিভারটা টানল পিট, স্কি জ্যাকেটের পকেট থেকে খানিকটা নাইলন কর্ড বের করে বাঁধল সেটা। বাষ্প উদ্‌গিরণের সাথে কান ফাটানো আওয়াজ ছাড়ছে বাঁশি।

লাফ দেয়ার জন্য তৈরি হও. হুইসেলের আওয়াজকে ছাপিয়ে উঠল পিটের চিৎকার।

রুডি জবাব দিল না, কাঁকর ছড়ানো মাটির দিকে বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে আছে সে। তার মনে হলো হাজার মিটার নিচে রকেটের বেগে পেছন দিকে ছুটে যাচ্ছে পাথুরে জমি।

লাফ দাও! নির্দেশ দিল পিট।

মাটিতে পা পড়তেই ছুটতে শুরু করল ওরা, হোঁচট খেল, পেছনে গেল, তবে ছিটকে পড়ল না। দু’জনের কারও মধ্যেই কোনো ইতস্তত ভাব নেই, দম ফুরোনোর লক্ষণ নেই, ট্রেনের সাথে পাশাপাশি ছুটছে। সামনে ক্রাশিং মিলের সিঁড়ি, তরতর করে উঠে এল মাথায়, দোরগোড়া টপকে ডাইভ দিয়ে পড়ল মেঝের ওপর।

মুখ তুলতেই প্রথমে পিট, জিওর্দিনোক দেখতে পেল। দরজার পাশ থেকে ওদের দিকে এক পা এগোল জিওর্দিনো, হাতে রয়েছে মেশিন গান।

বার থেকে মাতালদের ঘাড় ধরে বের করে দিতে দেখেছি, বলল জিওর্দিনো। কিন্তু ট্রেন থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিতে এই প্রথম দেখলাম।

মেঝের ওপর দাঁড়াল পিট। কথা বলে সময় নষ্ট কোরো না। তৈরি হও।

 গুলির আওয়াজ। ওদের, না আমাদের?

আমাদের।

সত্যি তাহলে আসছে?

 চাকভাঙা মৌমাছির মতো, বলল পিট।

লক্ষ্যস্থির করার সময় সাবধান থাকা উচিত ওদের, তা না হলে নিজেদেরই ক্ষতি-হেলিকপ্টার ভেঙে যেতে পারে।

সুবিধাটা পুরোপুরি কাজে লাগবে আমরা।

গার্ড আর মেকানিক দু’জনকে একসাথে রশি দিয়ে শক্ত করে বাঁধল ফিনলে, তারপর সিধে হলো। কোথায় চান আপনি ওদের, মি. পিট?

 মেঝের যেকোনো জায়গায় থাকতে পারে ওরা, বলে চারিদিকে চোখ বুলালো পিট। মাঝখানে ক্রাশিং মিল নিয়ে ভবনটা বিশাল একটা গুহার মত। অ্যাল, ফিনলেকে সাথে নিয়ে ইকুইপমেন্ট বা ফার্নিচার যা পাও সব টেনে এনে ওর ক্রাশারাকে একটা দুর্গ বানাও। আমি আর রুডি যতক্ষণ পারি ওদেরকে ঠেকাব।

 দুর্গের ভেতর আরেকটা দুর্গ? চোখ কপালে তুলল ফিনলে।

ভবনটাকে আমি নিরাপদ মনে করছি না, ব্যাখ্যা করল পিট। হাইজ্যাকাররা প্রথমে সামনের দরজাটা উড়িয়ে দেবে। এলোপাতাড়ি গুলি করতে করতে সবাই একসাথে ভেতরে ঢুকে হেলিকপ্টারটা ফিরে পাবার চেষ্টা করবে ওরা। ওদের বাধা দিতে হলে বিশজন লোক দরকার আমাদের। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে যে কটাকে পারি ফেলব আমরা, তারপর পিছিয়ে গিয়ে পজিশন নেব মিলে।

প্রকাণ্ড মিলটাকে দুর্গে পরিণত করার কাজে লেগে গেল ফিনলে আর জিওর্দিনো। বিল্ডিংয়ের উল্টোদিকের কোণের জানালায় পাহারায় থাকল পিট আর রুডি। পাহাড়ের অপরদিকের চালগুলোয় আলো ফেলতে শুরু করেছে সূর্য। অন্ধকার প্রায় নিঃশেষে মুছে গেছে।

মনে মনে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছে পিট। ওদের পালানোর পথ বন্ধ করার জন্য সন্ত্রাসবাদীরা সম্ভবত ঘিরে ফেলবে ক্রাশিং মিল। তবু, বন্দুকযুদ্ধে জেতা হয়তো অসম্ভব নয়, কারণ ভালো একটা আড়াল রয়েছে ওদের। কিন্তু বিপদটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে জাহাজের রা স্পেশাল ফোর্সকে ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে আসতে পারলে। জানা কথা, সবাই তারা হেলিকপ্টারের দিকে ছুটে আসবে। চারজনের ছোট্ট একটা দল আতঙ্কবাদীদের বড় একটা দলের বিরুদ্ধে কতক্ষণ লড়বে?

পাহাড়ের গা বেয়ে এখন উঠে যাচ্ছে ট্রেনটা। রেললাইন থেকে আগুনের ফুলকি উঠছে। ট্রেনের মাথার ওপর সমান্তরাল একটা টানেল তৈরি করেছে সাদা বাস্প। হুইসেলের তীক্ষ্ণ শব্দ নরকে হারিয়ে যাওয়া অতৃপ্ত আত্মার বিলাপ ধ্বনির মতো একঘেয়ে আর ভোঁতা লাগল কানে।

.

৫৭.

গ্লেসিয়ারের সামনের অংশ ভাঙছে না দেখে হতবিহ্বল হয়ে পড়ল সুলেমান আজিজ। ঝট করে ইবনের দিকে ফিরল সে।

কী ব্যাপার, ইবনে? কোথায় ভুল হলো? কঠিন সুরে জিজ্ঞেস করল। পরপর কয়েকটা বিস্ফোরণ হবার কথা ছিল না?

ইবনের মুখ যেন পাথরে খোদাই করা। আপনি আমাকে ভালো করে জানেন, হযরত কাজে আমি ভুল করি না। আয়োজনে কোনো খুঁত ছিল না। গ্লেসিয়ার থেকে যাদেরকে নামতে দেখলাম, নিশ্চয়ই তারা এক্সপ্লোসিভগুলো দেখতে পেয়ে অকেজো করে দিয়েছে।

মুহূর্তের জন্য আকাশের দিকে তাকাল সুলেমান আজিজ, হাত দুটো উপরে তুলে আবার ঝট করে নামিয়ে নিল। ইয়া আল্লাহ, আমাদের জীবন নিয়ে কত রকম নকশাই না তৈরি করো তুমি। ঠোঁট থেকে সারা মুখে ছড়িয়ে পড়ল উজ্জ্বল হাসি। গ্লেসিয়ার এখনো ভাঙা যায়। হেলিকপ্টার নিয়ে আকাশে ওঠার পর, বার কয়েক আসা-যাওয়া করে ফাটলের ভেতর গ্রেনেড় ফেলতে পারি আমরা।

দুকান লম্বা হাসি দিল ইবনে। আল্লাহ আমাদেরকে ত্যাগ করেননি, হযরত।  একটা কথা তো ঠিক, তীরে নেমে এসে সম্পূর্ণ নিরাপদে রয়েছি আমরা, আমেরিকানদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য রয়ে গেছে দুর্ভাগা মেক্সিকানরা। এ তো আল্লাহরই ইচ্ছা।

 তুমি ঠিক বলেছ, ইবনে-আল্লাহর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। চোখে ঘৃণা নিয়ে জাহাজটার দিকে তাকাল সুলেমান আজিজ। খানিক পরই আমরা জানতে পারব, মেক্সিকানদের আটেক দেবতা ক্যাপটেন ম্যাকাডোকে রক্ষা করতে পারে কি না।

 দেখুন, হয়তো এতক্ষণে ব্যাটা মরে ভূত হয়ে,… হঠাৎ থামল ইবনে, বাতাসে কান পাতল, তারপর ঝট করে তাকাল পাহাড়ি ঢলের দিকে। গুলির আওয়াজ, জনাব। ফিসফিস করে বলল সে। খনির দিকে থেকে আসছে।

 কান পাতল সুলেমান আজিজও, তবে অন্য একটা শব্দ শুনল সে। লোকোমোটিভ হুইসেলের বিরতিহীন আওয়াজ। ক্রমশ বাড়ছে। তারপর ধোয়া আর বাষ্পের আভাস চোখে পড়ল। পরমুহূর্তে পাহাড়ের মাথা টপকাল ট্রেন, ঢাল বেয়ে উন্মত্ত হাতির মতো ছুটে এল জেটির দিকে।

 গাধার বাচ্চারা করছেটা কী! হাঁপিয়ে উঠল সুলেমান আজিজ, তার চিৎকার প্রায় চাপা পড়ে গেল হুইসেলের তীক্ষ্ণ আওয়াজে।

এ ধরনের একটা ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিল না সন্ত্রাসবাদী বা তাদের জিম্মিরা। প্রতি মুহূর্তে কাছে চলে আসছে যান্ত্রিক দানবটা। কী করা উচিত বুঝে উঠতে না পেরে অনড় পাথর হয়ে থাকল সবাই।

আল্লাহ আমাদের রক্ষা করো! আকুল আবেদন জানাল সন্ত্রাসবাদীদের একজন।

নিজের চেষ্টার বচো! ধমক দিল ইবনে। তারই প্রথম সংবিৎ ফিরল, সবাইকে লাইন ছেড়ে সরে যাবার নির্দেশ দিল সে।

 শুরু হলো ছুটোছুটি, রেললাইন থেকে কে কার আগে নেমে যেতে পারে তারই প্রতিযোগিতা। ঠিক সেই মুহূর্তে সগর্জনে পৌঁছে গেল ট্রেনটা। নিয়ন্ত্রণহীন ইঞ্জিন পাঁচটা ওর-কার নিয়ে ছুটে গেল ওদের পাশ ঘেঁষে, ওদেরকে ঢেকে দিল বাষ্প আর ধোয়ার ধন মেঘ। খানিক দূর ঘিরে ধরলেও বয়লার বিস্ফোরিত হলো না। হিসস আওয়াজের সাথে বাস্পের বিশাল স্তম্ভ খাড়া হলো, খাঁড়ির পানিতে অদৃশ্য হলো ইঞ্জিন, সেটাকে অনুসরণ করে এক এক করে ডুব দিল ওর কারগুলো।

সুলেমান আজিজ আর ইবনে ছুটে গিয়ে দাঁড়াল জেটির কিনারায়। অসহায় দৃষ্টিতে বুদ্বুদ আর বাস্পের দিতে তাকিয়ে তারা।

ক্যাব থেকে কয়েকজন লোক ঝুলছিল, বলল সুলেমান আজিজ। দেখছে তুমি, ইবনে?

দেখেছি, জনাব।

ওরা আমাদের লোক?

 আমাদের।

খানিক আগে গুলির আওয়াজ শুনেছ তুমি? রাগে কেঁপে উঠল সুলেমান আজিজ। খনিতে আমাদের লোকের ওপর হামলা করা হয়েছে।

 হেলিকপ্টার! আঁতকে উঠল ইবনে।

এখনও হয়তো সময় আছে, তাড়াতাড়ি পৌঁছাতে পারলে অক্ষত পাওয়া যাবে ওটা।

 নিজের লোকদের উদ্দেশে চিৎকার করে নির্দেশ দিল সে। বন্দিদের এক লাইনে দাঁড় করাতে হবে, লাইনের পেছনে আর সামনে একজন করে গার্ড থাকবে।

 কথা শেষ করেই রেললাইন দলে ছুটল সুলেমান আজিজ, সবাই তাকে অনুসরণ করল।

ভয়ে বুক শুকিয়ে গেছে সুলেমান আজিজের। হেলিকপ্টার নষ্ট হলে পালানোর কোনো উপায় থাকবে না। খালি দ্বীপটায় লুকানোরও কোনো জায়গা নেই। আমেরিকান স্পেশাল ফোর্স তাদেরকে একজন একজন করে খুঁজে বের করবে। তারও দরকার হবে, স্রেফ ওদেরকে ফেলে চলে গেলেই না খেতে পেয়ে বা ঠাণ্ডায় মারা পড়বে সবাই।

ভয় পেলেও, বাঁচার আশা ছাড়তে রাজি নয় সুলেমান আজিজ। প্রাণের ওপর মায়া, সেটা কারণ নয়। প্রতিশোধ নিতে হবে তাকে। প্রথমে সে দেখে নেবে যারা তার এত কষ্টের প্ল্যানটা বরবাদ করেছে তাদেরকে। তারপর মূল কাজে হাত দেবে সে। জানে, আখমত ইয়াজিদকে খুন করা সহজ হবে না, তবে নিজের ওপর তার আস্থা আছে। কেউ যদি পারে তো সেই পারবে বেঈমানটাকে খুন করতে।

 পাহাড় থেকে গোলাগুলির আওয়াজ ভেসে আছে। ঢাল বেয়ে উঠতে কষ্ট হচ্ছে। সুলেমান আজিজের। এরই মধ্যে ঘেমে নেয়ে উঠেছে সে।

.

লেডি ফ্ল্যামবোরোর হুইলহাউসে দাঁড়িয়ে আছে ক্যাপটেন ম্যাকাডো, বিস্কোরণের আওয়াজটা ঠিক শুনল না, বলা চলে অনুভব করল সে। কাঁধ আর ঘাড় আড়ষ্ট হয়ে গেল, সজাগ হলো কান, কিন্তু আর কিছু শুনতে পেল না।

হঠাৎ ছুটে কমিউনিকেশন রুমে চলে এল ম্যাকাডো, দেখল একটা টেলিটাইপের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে তার একজন লোক।

ক্যাপটেন, আমি যেন বিস্ফোরণের শব্দ শুনলাম?

পেটের ভেতরটা শিরশির করে উঠল ম্যাকাডোর। রেডিও অপারেটর বা মিসরীয় নেতাকে দেখেছ?

না, কাউকে দেখিনি।

 কাউকে দেখোনি মানে?

এক ঘন্টার ওপর হবে আরবদের একজনেরও ছায়া দেখছি না, রাডার অপারেটর থামল, কী যেন চিন্তা করল, তারপর মুখ তুলল। ডাইনিং সেলুন থেকে বেরিয়ে এখানে এসে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ওদের কাউকে দেখিনি আমি। বাইরের ডেকগুলোয় টহল দেয়ার কথা ওদের, তাই না, ক্যাপটেন? কাজটা ওরা যেচে পড়ে নিয়েছিল।

রেডিওর সামনে খালি চেয়ারটার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থেকে ম্যাকাডো বিড়বিড় করে বলল, ওদেরকে বোকা ভেবে আমি বোধহয় ভুলই করেছি।

হেলমের সামনে কাউন্টারের দিকে এগোল ম্যাকাডো। ব্রিজ উইন্ডোর সরাসরি সামনে প্লাস্টিক শিট কয়েক জায়গায় ছোট করে কাটা হয়েছে বাইরেটা দেখার জন্য, জাহাজের সামনের অংশ পরিষ্কার দেখতে পাবার মতো যথেষ্ট আলো ফুটেছে ইতিমধ্যে।

 ম্যাকাডো দেখল, বেশ কয়েক জায়গায় চওড়া করে কাটা হয়েছে প্লাস্টিক। দেরিতে হলেও, চোখে পড়ল গ্লেসিয়ারের মাথা থেকে নেমে এসে ফাঁকগুলো দিয়ে ভেতরে ঢুকেছে কয়েকটা রশি। গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল তার। অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এই মুহূর্তে সবাইকে সাবধান করা দরকার। কমিউনিকেশন সিস্টেমের দিকে ঠট করে ঘুরল, সেই সাথে পাথর হয়ে গেল।

দোরগোড়ায় একজন লোক।

লোকটা যে শুধু কালো পোশাক পরে আছে তাই নয়, হাত আর স্কি মাস্কের বাইরে মুখের সামান্য যেটুকু দেখা যাচ্ছে তাও কালো রং করা। গলা থেকে ঝুলছে নাইটভিশন গগলস। বুকে পরেছে বুলেট প্রুফ চেস্ট পিস, তাতে অনেকগুলো পকেট আর ক্লিপ, ভেতরে গ্রেনেড ও তিনটে ছুরি ছাড়াও আরও মারাত্মক সব অস্ত্র রয়েছে।

 চোখ কুঁচকে গেল ম্যাকাডোর। কে তুমি? কঠিন সুরে প্রশ্ন করল সে, ভালো করেই জানে, তাকিয়ে রয়েছে মৃত্যুর দিকে। কথা বলার সময়ই বিদ্যুৎবেগে নাইন মিলিমিটার অটোমেটিক পিস্তলটায় ছোঁ দিল সে, শোল্ডার হোলস্টার থেকে বের করে গুলিও করল একটা।

 ম্যাকাডোর হাত সত্যি ভালো। ওয়েস্টার্ন যুগের নামকরা পিস্তলবাজরা থাকলে তার শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নিত। গুলিটা সরাসরি আগন্তুকের বুকের ঠিক মাঝখানে গিয়ে ঢুকল।

 পুরনো দিনের বুলেটপ্রুফ ভেস্ট হলে সেটাকে ভেদ করে যেত বুলেটটা, একটা পাঁজর ভাঙত বা থামিয়ে দিত হৃৎপিণ্ডটাকে। স্পেশাল ফোর্সের লোকটা পরে আছে আধুনিক একটা আবিষ্কার, ভেস্টটা এমনকি ন্যাটোর একটা ৩০৮ রাউন্ডকেও ঠেকিয়ে দিতে পারে, বুলেটের ধাক্কা সমানভাবে ছড়িয়ে যায় চারদিকে, ফলে চামড়ায় সামান্য দাগ ছাড়া আর কোনো ক্ষতি হয় না।

মৃদু ঝাঁকি খেল জন ডিলিঞ্জার, এক পা পিছিয়ে গিয়ে হেকলার অ্যান্ড কোচের ট্রিগার টেনে দিল, সবই বিরতিহীন সাবলীলতার সাথে।

ভেস্ট একটা পরে আছে ম্যাকাডোও, তবে পুরনো মডেলের। ডিলিঞ্জারের বুলেটগুলো তার বুকের শক্ত আবরণটাকে তুবড়ে দিল, তারপর ভেদ করে গুঁড়িয়ে দিল পাঁজর। ধনুকের মতো বাঁকা হলো তার পিঠ, হোঁচট খেল পেছন দিকে, ক্যাপটেনের চেয়ারের ঘষা খেয়ে পড়ে গেল ডেকে।

মাথার ওপর হাত তুলে চিৎকার করল মেক্সিকান গার্ড, থামুন! গুলি করবেন না। আমি নিরস্ত্র…।

ডিলিঞ্জারের সংক্ষিপ্ত বিস্ফোরণ ছিন্নভিন্ন করে দিল তার গলা, ছিটকে গিয়ে জাহাজের কম্পাস রাখার বাক্সের ওপর পড়ল সে, ঝুলে থাকল তোবড়ানো পুতুলের মতো।

মেজর ডিলিঞ্জারকে পাশ কাটিয়ে এগোল সার্জেন্ট ফস্টার, পরীক্ষা করল লোকটাকে। মারা গেছে, স্যার।

 ওকে আমি সাবধান করেছিলাম, নির্লিপ্ত সুরে বলল জন ডিলিঞ্জার, হেকলার অ্যান্ড কোচে নতুন ক্লিপ ভরল।

পা দিয়ে লাশটা উল্টাল ফস্টার, কলারের নিচের খাপ থেকে ডেকে খসে পড়ল লম্বা একটা বেয়নেট। বুঝলেন কীভাবে, মেজর? অবাক হয়ে জানতে চাইল সার্জেন্ট।

বুঝিনি, তবে নিরস্ত্র বলে বিশ্বাসও করিনি….।

হঠাৎ থেকে গিয়ে কান পাতল মেজর। শব্দটা দু’জনেই শুনতে পেল ওরা। পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করল। আরে, কী ওটা? বিস্ময় প্রকাশ করল মেজর।

আমার জন্মের ত্রিশ বছর আগেকার জিনিস, বলল সার্জেন্ট। তবে আওয়াজটা চিনি।

মানে?

পুরনো একটা স্টিম লোকেমোটিভ।

শব্দ শুনে মনে হচ্ছে খনি থেকে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে আসছে।

কিন্তু আমি তো জানি খনিটা পরিত্যক্ত।

আমরা জাহাজ দখল না করা পর্যন্ত নুমার লোকজন ওখানে অপেক্ষা করার কথা।

হঠাৎ কী কারণে তারা একটা পুরনো লোকেমোটিভ চালু করতে যাবে?

কী জানি। চিন্তিতভাবে মাথা নাড়ল জন ডিলিঞ্জার। হতে পারে ওরা বোধ হয় আমাদের কিছু বলতে চাইছে।

.

গ্লেসিয়ারে বিস্ফোরণ ঘটার সময় কর্নেল হোলিস আর তার দল লেডি ফ্ল্যামবোরোর ডাইনিং রুমে।

 প্লাস্টিক কেটে নিরাপদেই জাহাজে উঠেছিল ডাইভ দল। ভুয়া কার্গো কন্টেইনারের মাঝখান দিয়ে পথ করে নিল ওরা, একটা দরজা দিয়ে লাউঞ্জে টুকে কাউকে দেখতে পেল না। চারদিকে পিলার আর ফার্নিচার, ছড়িয়ে পড়ে আড়াল নিল সবাই। দু’জনকে পাঠানো হলো সিঁড়ির গোড়ায়, দু’জনকে এলিভেটরের সামনে, বাকি সবাই ডাইনিং হলে ঢুকে চমকে দিল মেক্সিকান আতঙ্কবাদীদের।

বিরতিহীন গুলিবর্ষণে সব কটা আতঙ্কবাদী ধরাশায়ী হলো। তারা এমনকি নিজেদের অস্ত্রে হাত ছোঁয়ানোর সুযোগও পায়নি। দল নিয়ে সামনে অগ্রসর হলো কর্নেল হোলিস, লাশগুলোকে টপকে। এই সময় রক্ত পানি করা আওয়াজ হলো, ফাটল ধরছে বরফের পাঁচিলে।

শব্দটা থামার পর কর্নেল বলল, ডিলিঞ্জারের দল বোধ হয় একটা এক্সপ্লোসিভ অকেজো করতে পারেনি।

এখানে কোনো জিম্মি নেই, স্যার, তার একজন লোক জানাল। সবাই আতঙ্কবাদী।

কয়েকটা লাশের মুখ পরীক্ষা করল কর্নেল। একজনকেও মধ্যপ্রাচ্যের লোক বলে মনে হলো না। এরা সবাই তাহলে জেনারেল ব্রাভোর কু। ডিলিঞ্জারের সাথে যোগাযোগ করল সে।

 রেডিওতে মেজর জানাল, চারজন আতঙ্কবাদীকে খতম করেছে তারা। ব্রিজ তাদের দখলে চলে এসেছে। সবগুলো এক্সপ্লোসিভ খুঁজে পায়নি বলে দুঃখ প্রকাশ করল সে।

কর্নেল তাকে জানাল, আরোহীদের উদ্ধার করার জন্য মাস্টার স্টেটরুমে যাচ্ছি আমরা। ইঞ্জিন রুম ক্রুদের অনুরোধ করো যে যার কর্তব্যে ফিরে যাক। প্রয়োজনের অতিরিক্ত এক সেকেন্ডও বরফ-পাঁচিলের নিচে থাকব না আমরা। ষোলোজন আতঙ্কবাদী মারা পড়েছে। সবাই তারা ল্যাটিন। জাহাজে আরও অন্তত বিশজন আরব আছে।

হতে পারে তারা তীরে চলে গেছে, স্যার।

 কেন, এ কথা বলছ কেন?

মিনিট দুই আগে একটা লোকোমোটিভ ইঞ্জিনের আওয়াজ শুনেছি, স্যার। রাডার মাস্টে আমার একজন লোককে তুলেছিলাম। রেললাইন থেকে নেমে এসে ট্রেনটা পানিতে পড়ে গেছে, লাইনের ওপর বিশ-পঁচিশজন আতঙ্কবাদীকেও দেখেছে সে।

প্রথম কাজ জিম্মিদের উদ্ধার করা, বলল কর্নেল। জাহাজটাকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার পর তীরে কে কী করছে ভাবা যাবে।

স্টেটরুমগুলোর সামনে কোনো প্রহরীকে না দেখে অবাক হলো কর্নেল। তার লোকেরা লাথি মেরে দরজা খুলল, ভেতরে মিসরীয় ও মেক্সিকান প্রেসিডেন্সিয়াল স্টাফের দেখা মিললেও, দু’জন প্রেসিডেন্ট বা সেক্রেটারি জেনারেলকে কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না।

এক পশলা গুলি করে ভাঙা হলো হল ওয়ের শেষ দরজাটা। ভেতরে ঢুকল কর্নেল। জাহাজের ইউনিফর্ম পরা পাঁচজন লোককে দেখতে পেল সে, জড়োসড়ো হয়ে বসে রয়েছে এক কোণে। তাদের একজন উঠে দাঁড়াল, এগিয়ে এসে ঘৃণাভরে তাকাল কর্নেলের দিকে। গুলি না করে তালা ঘোরালেও পারতেন। ভ্রু কুঁচকে উঠল তার।

আপনি নিশ্চয় ক্যাপটেন কলিন্স?

হ্যাঁ… ভাব দেখাচ্ছেন আমাকে যেন চেনেন না!

 দরজা ভাঙার জন্য দুঃখিত। আমি কর্নেল হোলিস, স্পেশাল অপারেশনস ফোর্স।

মাই গড! ঘরের কোণ থেকে লাফ দিয়ে এগিয়ে এল মাইকেল ফিনি, ফাস্ট অফিসার। আমরা উদ্ধার পেয়েছি।

মাফ করবেন, কর্নেল, কলিন্স বললেন। আপনারা এসেছেন, ধন্যবাদ।

সব মিলিয়ে কতজন আতঙ্কবাদী? দ্রুত জানতে চাইল কর্নেল।

 মেক্সিকানরা জাহাজে আসার পর প্রায় চল্লিশজন।

আমরা মাত্র বিশজনকে পেয়েছি।

ক্যাপটেনের মুখ থেকে সমস্ত রক্ত নেমে গেল। বিশজনের ভাগ্যে কী ঘটেছে আন্দাজ করতে পারলেন তিনি। তাঁর মুখ ঝুলে পড়লেও, দাঁড়িয়ে থাকলেন ঋজু ভঙ্গিতেই। প্রেসিডেন্ট হাসান, প্রেসিডেন্ট লরেঞ্জো, মহাসচিব হে’লা কামিল আর সিনেটর পিটকে উদ্ধার করেছেন তো?

মাথা নাড়ল কর্নেল। দুঃখিত, ওদেরকে এখনো আমরা পাইনি।

বলেন কী! কর্নেলকে পাশ কাটিয়ে দরজার দিকে ছুটলেন কলিন্স। সবাই ওঁরা মাস্টার স্যুইটে আছেন।

তাকে অনুসরণ করতে গিয়েও থমকে গেল কর্নেল। কেউ নেই ওখানে, বলল সে। এই ডেকের সবগুলো স্যুইট দেখেছি আমরা।

মাই গড! হাইজ্যাকাররা ওদের নিয়ে গেছে!

মাইক্রোফোনে ডিলিঞ্জারের সাথে কথা বলল কর্নেল। মেজর ডিলিঞ্জার।

 পাঁচ সেকেন্ড পর সাড়া দিল মেজর। গো অ্যাহেড, কর্নেল।

 শত্রুদের দেখা পেলে?

না।

 কমপক্ষে বিশজন হাইজাকার আর ভি.আই.পি প্যাসেঞ্জারদের হিসাব মিলছে না।

আমিও কারো কোনো হদিস পাচ্ছি না।

 ঠিক আছে, ক্রুদের বলো খাড়ি থেকে জাহাজ বের করে নিয়ে যাক।

সম্ভব নয়, জবাব দিল জের রক।

সমস্যা?

ইঞ্জিনরুমে কিছু আস্ত রাখেনি সন্ত্রাসবাদীরা। জাহাজ আবার চালু করতে এক সপ্তাহ লেগে যাবে।

কোন পাওয়ার নেই?

দুঃখিত, কর্নেল। এমনকি জেনারেটর পর্যন্ত ভেঙে দিয়ে গেছে বাস্টার্ডরা… দুঃখিত।

তাহলে?

গ্লেসিয়ারের নিচে আটকা পড়েছি আমরা, স্যার। প্রকৌশলীরা কোথাও আমাদের নিয়ে যেতে পারবে না।

কঠিন সুরে বলল কর্নেল। লাইফবোটে করে ক্রু আর প্যাসেঞ্জারদের পার করব। ম্যানুয়াল উষ্ণ ব্যবহার করতে অসুবিধা কী?

আবার দুঃখ প্রকাশ করে মেজর বলল, আমরা সত্যিকার বেজন্মাদের পাল্লায় পড়েছি, স্যার। লাইফবোটের তলা ফুটো করে দিয়েছে।

ভরাট, গুরুগম্ভীর গর্জন ভেসে এল গ্লেসিয়ার থেকে। জাহাজ কাঁপল না, তবে শব্দটা শুনে বুকে কেঁপে উঠল সবার। একটানা প্রায় এক মিনিটের মতো শোনা গেল গর্জনটা। তারপর ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে থেমে গেল।

কর্নেল ও মেজর দু’জনেই সাহসী মানুষ, তাদের চোখেও আতঙ্ক ফুটে উঠল।

গ্লেসিয়ার ভেঙে পড়ার সময় হয়েছে, গম্ভীর সুরে বললেন কলিন্স। আমাদের একমাত্র আশা, স্রোতে যদি খাড়ি থেকে বের করে নিয়ে যায় জাহাজাটাকে। নোঙরের চেইন কেটে দিয়ে অপেক্ষা করা যাক।

 আগামী আট ঘণ্টার মধ্যে টান দেবে না ভাটা, বলল কর্নেল। আমি জানি।

 তাহলে বিকল্প একটা ব্যবস্থা করুন। লেডি ফ্ল্যামবোহোর কত লোক আছে জানেন? এক্ষুনি সবাইকে সরানো দরকার।

চলে যেতে বললে গ্লেসিয়ারটা যাবে? উত্তরের অপেক্ষায় না থেকে শান্তভাবে ব্যাখ্যা করল কর্নেল, আমাদের বোটে অল্প কিছু লোকের জায়গা হবে। হেলিকপ্টার আনিয়ে বাকিদের সরানো যেতে পারে। তাতেও সময় লাগবে এক ঘণ্টার কম নয়।

তাহলে তাই করুন….

একটা হাত তুলে ক্যাপটেনকে থামিয়ে দিল কর্নেল হোলিস। তার চেহারায় নগ্ন বিস্ময় ফুটে উঠল, ইয়ারফোনে অচেনা একটা গলা পাচ্ছে সে।

কর্নেল হোলিস, আমি কি আপনার ফ্রিকোয়েন্সিতে? ওভার।

জানতে পারি কোত্থেকে কে আপনি কথা বলছেন? ধমকের সুরে জিজ্ঞেস করল কর্নেল।

নুমার জাহাজ সাউন্ডার থেকে, আমি ক্যাপটেন ফ্রাঙ্ক স্টুয়ার্ট, অ্যাট ইওর সার্ভিস। কোথাও আপনাকে লিফট দিতে পারি, কর্নেল?

ফ্রাঙ্ক! বিস্ফারিত হলে কর্নেল। কোথায় আপনি, ক্যাপটেন?

সুপারস্ট্রাকচারের প্রাস্টিক সরিয়ে তাকান, পোর্ট সাইডে আধ কিলোমিটার দূরে দেখতে পাবেন আমাকে, আপনার দিকেই ছুটে আসছি।

স্বস্তির বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে ক্যাপটেন কলিঙ্গের দিকে তাকাল কর্নেল। একটা জাহাজ আসছে। আপনার কোনো পরামর্শ আছে?

 অবিশ্বাসে তাকিয়ে থাকলেন কলিন্স। এক সেকেন্ড পর তোতলাতে শুরু করলেন তিনি, গ-গুড গড ম্যান ইয়েস, ম্যা-ম্যান। ওদের বলুন আমাদের টেনে নিয়ে যাক।

.

সাউন্ডারের যা ওজন, তার দ্বিগুণ ওজন লেডি ফ্ল্যামবোরোর। লোহার মোটা চেইন দিয়ে বেঁধে দুটো জাহাজকে জোড়া লাগানো হলো। প্রতি মুহূর্তে বিপদটা ঝুলে থাকল মাথার ওপর, যেকোনো মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে গ্লেসিয়ারের সামনের পাঁচিল। বিপদকে তুচ্ছ জ্ঞান করে ক্রু, প্যাসেঞ্জার ও স্পেশাল ফোর্সের লোকজন খোলা ডেকে বেরিয়ে এসেছে, আগেই সরিয়ে ফেলা হয়েছে প্লাস্টিকের আবরণ। সাক্ষাৎ মৃত্যুর দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে আছে সবাই। দুই জাহাজের মাঝখানের চেইনগুলো টান টান হলো। ফুল অ্যাহেড, নির্দেশ দিল ক্যাপটেন ফ্রাঙ্ক স্টুয়ার্ট, তার একটা চোখ ফ্ল্যামবোরোর ওপর, আরেকটা গ্লেসিয়ারের গায়ে।

টান পড়লেও বরফে আটকে থাকা লেডি ফ্ল্যামবোয়রা প্রথমে নড়ল না। তারপর বোমা ফাটাল মতো আওয়াজের সাথে প্রচণ্ড ঝাঁকি খেল জাহাজটা, গ্লেসিয়ারের ছায়া থেকে বেরোতে শুরু করল। রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছে সবাই। আকাশ ছুঁয়ে থাকা বরফের পাঁচিল এখনও কাত হচ্ছে না।

ধীরে ধীরে গতি বাড়ল লেডি ফ্ল্যামবোরোর। খাড়ির মাঝখানে চলে এল জাহাজটা। ডেকে দাঁড়িয়ে দুই জাহাজের লোকজন মহা আনন্দে নাচানাচি শুরু করে দিল। এই সময় দুনিয়া কাঁপানো আওয়াজের সাথে কাত হতে শুরু করল গ্লেসিয়ারের সামনের পাঁচিল। পাহাড়ের গায়ে লেগে ফিরে এল আওয়াজগুলো, শক ওয়েভে থরথর করে কেঁপে উঠল জাহাজ দুটো। ভাঙা পাঁচিলের এক একটা টুকরোর ওজন হবে কয়েকশো, একটা একটা করে খাঁড়ির পানিতে লাফ দিল, ছলকে ওঠা পানি স্তম্ভের আকৃতি নিয়ে সিধে হলো আকাশের দিকে। বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে থাকল দর্শকরা, বিশ্বাস করতে পারছে না সত্যি তারা বেঁচে গেছে।

.

৫৮.

প্রথমটায় চিৎকার, ছোটোছুটি আর এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণের মধ্য দিয়ে যেন নরক, নেমে এল। ডাইনিং হল লক্ষ্য করে যারা গুলি ছুঁড়েছে তাদের পরিচয় বা সংখ্যা সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই মিসরীয় আতঙ্কবাদীদের। ট্রেন থেকে গুলি করা হলেও, এই মুহূর্তে শত্রুরা কোথায় সে সম্পর্কেও তারা কিছু জানে না। আলো নিভিয়ে দিল তারা, ভোরের গাঢ় ছায়া লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ল। খানিক পর উপলব্ধি করল পাল্টা গুলি হচ্ছে না। তার পরও বেশ কিছুক্ষণ ডাইনিং হল ছেড়ে বেরোল না কেউ।

বেরোল তারা দুটো দরজা দিয়ে; সামনে থেকে দু’জন, পেছন থেকে চারজন। কেউ ডাইভ দিল, কেউ হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে এল, আগে থেকে ঠিক করা পজিশনে এসে গা ঢাকা দিল সবাই। আড়াল পাবার পর একটা সঙ্কেতের অপেক্ষায় থাকল তারা, তারপর চারদিকে গুলি ছুঁড়ে একটা বৃত্ত রচনা করল, বাকি সঙ্গীরা যাতে নিরাপদে বেরিয়ে আসতে পারে। কালো পাগড়ি পরা এক লোক, ওদের নেতা, হুইসেল বাজিয়ে দিক নির্দেশনা দিল লোকটাকে।

পিটের ভয়টা মিথ্যে নয়, মিসরীয় সন্ত্রাসবাদীরা প্রফেশনাল এবং উন্নতমানের ট্রেনিং পাওয়া যোদ্ধা। বাড়ি বাড়ি ঢুকে লড়াই করতে ওদের জুড়ি নেই, স্ট্রিট ফাইটিংয়েও তারা অভিজ্ঞ ও দক্ষ। মাথায় কালো পাগড়ি জড়ানো নেতাও অত্যন্ত যোগ্য লোক, একাধিক গেরিলাযুদ্ধের অভিজ্ঞতা আছে তার।

ধীরে ধীরে এগোল তারা, সার্চ করল প্রতিটি ভবন, অর্ধচন্দ্রের আকৃতিতে ঘিরে ফেলল ক্রাশিং মিলটাকে। অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকি নিচ্ছে না কেউ, প্রতি মুহূর্তে আড়ালে থাকছে, ছোট করে আনছে জাল।

 আরবি ভাষায় কি যেন বলল নেতা। কোনো সাড়া মিলল না। আরেক পজিশন থেকে অন্য এক আতঙ্কবাদী ডাক দিল। ঠিকই আন্দাজ করতে পারল পিট, ক্রাশিং মিলের ভেতর নিজেদের লোককে ডাকছে ওরা।

 একেবারে কাছে চলে এসেছে লোকগুলো, জানালার সামনে কারো থাকা চলে না। টেরোরিস্টদের স্কি মাস্ক আর পোশাক খুলে ফেলল পিট, নিজের স্কি জ্যাজেটের পকেট হাতড়ে ছোটো একটা আয়না বের করল, টেনে লম্বা করা যায় এমন একটা হাতল লাগানো রয়েছে আয়নাটায়। জানালার কার্নিসের ওপর রাখল সেটা, টেনে লম্বা করল হাতল, পেরিস্কোপের মতো ঘোরালো জিনিসিটাকে।

সুবিধামতো একটা টার্গেট দেখতে পেয়ে খুশি হয়ে উঠল পিট, শতকরা নব্বই ভাগ গা ঢাকা দিয়ে আছে, তবে যতটুকু বেরিয়ে আছে কিলিং শট-এর জন্য তা-ও যথেষ্ট।

ফায়ার সিলেক্ট লিভার ফুল অটো, থেকে সিঙ্গল-এ ঘোরাল পিট। তারপর ঝট করে মাথা তুলল, জানালার কার্নিস ছাড়িয়ে গেল চোখ। লক্ষ্যস্থির করল, টেনে দিল ট্রিগার।

গর্জে উঠল পুরনো থম্পসন। দুই কি তিন পা সামনে বাড়াল কালো পাগড়ি, হতভম্ব চেহারা। তারপর হাঁটু ভেঙে গেল মুখ থুবড়ে পড়ে গেল, পাথুরে মাটিতে।  

জানালার নিচে মাথা নামাল পিট, অস্ত্রটা টেনে নিল বুকের কাছে, আবার চোখ রাখল আয়নায়। মরচে ধরা মাইনিং ইকুইপেমেন্টের বাতিল অংশ ও ছড়িয়ে থাকা ভবনগুলোর আড়ালে পজিশন নিয়েছে শত্রুরা। নেতা মারা গেলেও, পিট জানে, রণে ভঙ্গ দিয়ে পালানোর লোক ওরা নয়। নিজের দায়িত্ব সম্ভবত এরই মধ্যে বুঝে নিয়েছে। সেকেন্ড ইন কমান্ড।

রাস্তার ওপারে একটা টিন শেড, বন্ধ কাঠের দরজা লক্ষ্য করে একপশলা গুলি করল রুডি। অত্যন্ত ধীরগতিতে খুলে গেল দরজার কবাট, পাক খেতে থাকা একটা রক্তাক্ত শরীরের ধাক্কায় খোলা দরজার বাইরে ধরাশায়ী হলো সে।

তবু পাল্টা কোনো গুলি হলো না। লোকগুলো বোকা নয়, উপলব্ধি করল পিট। মিসরীয় সন্ত্রাসবাদীরা বুঝতে পেরেছে, ক্রাশিং মিলে সংখ্যায় ওরা মাত্র কয়েকজন। সময় নিয়ে নিজেদের এক জায়গায় জড়ো করবে এবার তারা, আলোচনা করবে বিকল্প কী ব্যবস্থা নেয়া যায়। কারণ জানে, ক্রাশিং মিলের ভেতর হেলিকপ্টারও প্রতিপক্ষের দখলে চলে গেছে।

মাথা নিচু করে ছুটে এল পিট, রুডির পাশে থামল। তোমার এদিকে খবর কি?

শান্ত। মাথা ঘামাচ্ছে ওরা। নিজেদের হেলিকপ্টার নষ্ট করতে চায় না।

আমার ধারণা, সামনের দরজায় আসার ভান করবে ওরা, ঢুকবে সাইড অফিস দিয়ে।

মাথা ঝাঁকানো রুডি। সম্ভবত। জানালা ছেড়ে দিয়ে আরও ভালো কাভার পেতে হবে আমাদের। কোথায় আমাকে দেখতে চাও তুমি?

চোখ তুলে উপরের ক্যাটওয়াকের দিকে তাকাল পিট। একসার স্কাইলাইটের দিতে হাত তুলল ও, ছোটো একটা উইষ্ণ টাওয়ারকে ঘিরে আছে। উপরে উঠে নজর রাখো। হামলা করতে যাচ্ছে দেখলে চিৎকার দেবে। সামনের দরজায় এসে গেছে দেখলে ব্রাশ করবে। সাবধান, সময় থাকতে নেমে আসবে। কপ্টারের ওপর দিকে গুলি করতে ভয় পাবে না ওরা।

উঠলাম আমি।

মাথা নিচু করে সাইড অফিসের দিকে এগোল পিট, দোরগোড়ায় পৌঁছে জিওর্দিনো আর ফিনলের দিকে ঘাড় ফেরাল। তোমাদের কাজ কেমন এগোচ্ছে?

ফেলে যাওয়া ওর এক জায়গায় জড়ো করে একটা ব্যারিকেড তৈরি করছে জিওর্দিনো, মুখ তুলে কপালের ঘাম মুছল সে। ফোর্ট জিওর্দিনো সময় মতোই তৈরি হবে।

কাজ থামিয়ে মুখ তুলল ফিনলে। বর্ণমালায় জি-এর আগে এফ আসে, দুৰ্গটার নাম ফোর্ট ফিনলে।

কাজে হাত দেয়ার আগে ফিনলের দিকে অগ্নিদৃষ্টি হানল জিওর্দিনো। আমরা হেরে গেলে ফোর্ট ফিনলে, জিতলে ফোর্ট জিওর্দিনো।

দুই কাঁধ উঁচু করে অসহায় একটা ভাব প্রকাশ করলেও, নুমায় ওর এ-ধরনের অবিশ্বাস্য বন্ধু থাকায় ভাগ্যবান মনে করল নিজেকে পিট। কৃতজ্ঞতা জানিয়ে কিছু একটা বলতে ইচ্ছে করল তবে কিছু বলা বা না বলা সমান কথা, ওর মনের কথা জানা আছে ওদের; এধরনের লোকদের প্রশংসা করার বা উৎসাহ দেয়ার দরকার হয় না।

এনিয়ে পরে তর্ক কোরো, নির্দেশ দিল পিট। ওরা যদি আমাকে ছাড়িয়ে এগিয়ে আসে, লক্ষ্য রাখবে যেন উষ্ণ সংবর্ধনা পায়।

 স্যাঁতসেঁতে অফিসে ঢুকল ও। ভ্যাপসা একটা গন্ধ এল নাকে। থম্পসনটা চেক করে একপাশে নামিয়ে রাখলো, হাত লাগালো কাজে। উল্টে পড়া দুটো ডেস্ক, ইস্পাতের একটা ফাইলিং কেবিনেট আর সম্ভবত ভারী লোহার একটা পেটমোটা স্টোভ দিয়ে তৈরি হলো ব্যারিকেড। মেঝেতে শুয়ে অপেক্ষায় থাকল পিট।

 বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না। এক মিনিট পর পিটের মনে হলো, বাইরের কাঁকরে হালকা পায়ের আওয়াজ পেয়েছে ও। খানিক পর আবার শুনল শব্দটা। নরম, তবে শুনতে ভুল করেনি। থম্পসনটা ধরে বুকের কাছে আনল।

রুডি চিৎকার করল, তবে অনেক দেরিতে। দরজার উপরকার জানালার কাঁচ ভেঙে মেঝেতে পড়ল জিনিসটা, গড়াতে গড়াতে ছুটে এল। দ্বিতীয়া পড়ল এক সেকেন্ড পর। ব্যারিকেডের নিচে মাথা নামিয়ে নিয়ে স্টিল কেবিনেটের ভেতর সেঁধিয়ে যাবার চেষ্টা করল পিট, দাঁত চাপল নিজের বোকামির কথা ভেবে।

 কান ফাটানো আওয়াজের সাথে বিস্ফোরিত হলো অফিসটা। চারদিকে ছুটে গেল ফার্নিচারের ভাঙা টুকরো আর ডানা মেললো গাদা গাদা হলুদ কাগজ। একদিকের দেয়াল পড়ে গেল, পড়ল বাইরের পাঁচিলটাও, নিচের দিকে ঝুলে পড়ল সিলিং।

 দুটো গ্রেনেড প্রায় একসাথেই বিস্ফোরিত হয়েছে। বিস্ফোরণের ধাক্কায় ও প্রচণ্ড শব্দে আচ্ছন্ন বোধ করছে পিট। হাত-পায়ে জোর নেই, মাথাটা ঠিকমতো কাজ করছে না।

পেটমোটা স্টোভটাই বেশির ভাগ এ্যাপনেল জম করেছে, কিন্তু আকৃতি হারায়নি, গায়ে শুধু কর্কশ কিনারা নিয়ে অনেকগুলো ফুটো তৈরি হয়েছে। তুড়ে, মোচড় খেয়ে আকৃতি বদলেছে ফাইল কেবিনেটটা। টুকরো হয়ে গেছে ডেস্ক দুটো। পিটও অক্ষত নয়। উধাও হয়েছে বুকের আধ ইঞ্চি চামড়া। আর উরুতে হোট, গভীর একটা গর্ত তৈরি হয়েছে।

চারদিকে বারুদের গন্ধ আর ধোঁয়া। যেকোনো মুহূর্তে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠবে ভেবে আতঙ্কিত বোধ করল পিট। তারপরই ভয়টা দূর হলো, বৃষ্টি ভেজা বিল্ডিংয়ের পুরনো কাঠ কয়েক জায়গায় সামান্য ঝলসালেও, আগুন ধরল না।

সচেতনভাবে চেষ্টা করার পর হাত-পা নাড়তে পারল পিট। ফুল অটো-য় নিয়ে এল থম্পসনটাকে, ভেঙে পড়া সামনের দরজার দিকে লক্ষ্য স্থির করল। কলারের নিচ থেকে গড়িয়ে নেমে যাচ্ছে রক্তের একটা ধারা, ধ্রুর ওপর কালটা জ্বালা করছে। আউটার ওয়ালের ভাঙা অংশটা দিয়ে ভেতরে ঢুকে একসাথে গুলি করল চারজন লোক, অনবরত। মাথার ওপর দিয়ে, ঝক ঝক বুলেট বেরিয়ে গেলেও চোখের পাতা একটুও কাপল না পিটের।

 শান্তভাবে এক পশলা গুলি করল ও। যেন একটা টর্নেডো লাফিয়ে পড়ল হামলাকারীদের ঘাড়ের ওপর। হাতের অস্ত্র ফেলে দিল তারা, হাত ছোঁড়ার বহন দেখে মনে হলো স্টেজে দাঁড়িয়ে নাচছে, ভাঙা ফার্নিচার ছড়ানো মেঝের ওপর পাক খেতে লাগল।

আক্রমণের প্রথম ঢেউয়ের পিছু নিয়ে ভেতরে ঢুকল আরও তিনজন আতঙ্কবাদী, তদেরকেও নির্দয় নৈপুণ্যের সাথে প্রতিহত করল পিট! তিনজনের খানিক পেছনে এল আরেকজন, তার ক্ষিপ্রতার বুঝি তুলনা হয় না, ডাইভ দিয়ে প্রায় বিধ্বস্ত ও ধূমায়িত একটা লেদার সোফার পেছনে অদৃশ্য হয়ে গেল সে।

কামান দাগার মতো আওয়াজ ঢুকল পিটের কানে, ওর পেছনের মেঝেতে হাঁটু গেড়ে শটগান থেকে তিনবার গুলি করল ফিনলে, সোফার নিচের নিকটা লক্ষ্য করে।

 লেদার, মোটা ক্যানভাস, স্পঞ্জ আর কাঠ ছড়িয়ে পড়ল বাতাসে। তারপর নিস্তব্দতা নেমে এল। সোফার বাকা পায়ার সামনে মরা সাপের মতো খসে পড়ল টেরোরিস্টের একটা হাত।

ধোয়ার ভেতর থেকে উদয় হলো জিওর্দিনো, পিটের দুই বগলের নিচে হাত গলিয়ে দিয়ে টান দিল। ক্রাশিং মিলের দিকে, একটা ওর-কারের পেছনে নিয়ে যাচ্ছে ওকে।

 তোমার কেলেংকারি করার স্বভাবটা আর গেল না, মুখভর্তি নিঃশব্দ হাসি নিয়ে বলল সে। যেখানেই যাও, সব কিছু এলোমেলো না করে পারো না। হঠাৎ উদ্বেগে কাতর হলো তার চেহারা। মারাত্মক কোনো আঘাত পেয়েছে?

 হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে বুকের রক্ত মুছল পিট, রক্তে ভেজা ট্রাউজারের দিকে তাকাল একবার। স্পেশাল ফোর্সের লোকেরা আসা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে হবে আমাদের।

 হাঁটু গেড়ে বসল ফিনলে, প্যান্ট কেটে ক্ষতটায় পট্টি বাঁধতে শুরু করল। আপনি ভাগ্যবান, মি. পিট, নাকের সামনে দুটো গ্রেনেড় ফাটল অথচ দুজায়গায় শুধু চামড়া উঠে গেছে।

 গ্রেনেডের কথা আগে ভাবা উচিত ছিল আমার, তিক্ত কণ্ঠে বলল পিট। মুখ তুলে দিকে তাকাল ও। বাইরে ওরা কী করছে?

সামনে থেকে আর হামলা করবে না, বলল জিওর্দিনো। বিস্ফোরণে ভেঙে গেছে বাইরের সিঁড়ি, ভাঙা বাঁশ বেয়ে দশ ফুট উঠতে সাহস করবে না ওরা।

ফিনলে বলল, এই সুযোগ, হেলিকপ্টারে আগুন ধরিয়ে দিয়ে চলুন আমরা কেটে পড়ি।

 দুঃসংবাদ, একটা মই বেয়ে মেঝেতে নেমে এল রুডি। দাবাগ্নির মতো ছুটে আসছে ওদের আরও বিশজন লোক, রেললাইন ধরে। সাত থেকে আট মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাবে।

চোখে সন্দেহ নিয়ে রুডিক্লিফের দিকে তাকাল জিওর্দিনো। কতজন বললে?

পনেরোর পর আর গুনিনি।

লেজ গুটিয়ে পালানোর এখনই সময়, বিড়বিড় করল ফিনলে।

 কর্নেল তার দলবল নিয়ে আসছে না? জিজ্ঞেস করল পিট।

 ক্লান্ত ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল রুডি। ওদের কোনো খবর নেই।

বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলার জন্য থামল সে, তারপর সরাসরি পিটের দিকে তাকাল। লোকগুলো সন্ত্রাসবাদীদের রি-ইনফোর্সমেন্ট, পিট। পাহারা দিয়ে নিয়ে আসছে চারজন জিম্মিকে, রিনকিউলার থাকায় কোনো রকমে চিনতে পেরেছি। একজন তোমার বাবা। তিনি আর একজন ভদ্রমহিলা বাকি দু’জনকে হাঁটতে সাহায্য করছেন।

হে’লা কামিল। স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল পিট। থাঙ্ক গড! বাবা বেঁচে আছে!

 বাকি দু’জন? প্রশ্ন করল জিওর্দিনো।

 সম্ভবত প্রেসিডেন্ট লরেঞ্জো আর প্রেসিডেন্ট হাসান।

আমার কাজ শেষ, পট্টি বাঁধা শেষ করে সিঁধে হলো ফিনলে। আবার গ্রেনেড ফাটলে খবর দেবেন আমাকে।

 ওঁদের বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে বীমা হিসেবে, বলল পিট। ওঁদের মুক্তির বিনিময়ে হেলিকপ্টার ফেরত চাইবে সন্ত্রাসবাদীরা।

হেলিকপ্টার যদি না দিই, একজন একজন করে খুন করবে জিম্মিদের, নিচু গলায় মন্তব্য করল রুডি।

কোনো সন্দেহ নেই, বলল পিট। তবে হেলিকপ্টার পেলেও যে খুন করবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এর আগে দুবার তারা হে’লা কামিলকে খুন করার চেষ্টা করেছে। প্রেসিডেন্ট হাসানকেও মেরে ফেলার ইচ্ছে ওদের।

আমার ধারণা, ওরা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়ে বসবে, এসো আলোচনায় বসি।

হাতঘড়ি দেখল পিট। দর কষাকষিতে খুব বেশি সময় নষ্ট করবে না ওরা। জানে, স্পেশাল ফোর্স পৌঁছে যেতে পারে। তবু, খানিকটা দেরি করাতে পারব আমরা।

তুমি একটা প্ল্যান দাও, অনুরোধ করল জিওর্দিনো।

যতক্ষণ পারা যায় আমরা লড়ব। রুডির দিকে তাকাল পিট। জিম্মিদের কি ওরা ঘিরে রেখেছে।

না, হাইজ্যাকারদের অন্তত দুশো মিটার পেছনে রয়েছেন ওঁরা, দু’জন গার্ড পাহারা দিয়ে নিয়ে আসছে।

 পিটের কালো চোখে কিসের যেন ইঙ্গিত দেখতে পেল রুডি, মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিল ওকে। তুমি চাও গার্ড দু’জনের উপযুক্ত ব্যবস্থা করি আমি, স্পেশাল ফোর্স না পৌঁছুনো পর্যন্ত জিম্মিদের নিরাপদ কোথাও লুকিয়ে রাখি?

 আমাদের মধ্যে তুমিই দেখতে সবচেয়ে ছোটখাটো, ছুটতেও পারো সবার চেয়ে জোরে। ওদের চোখে ধরা না পড়ে একমাত্র তোমার পক্ষেই ভবন থেকে বেরোনো সম্ভব। ঘুরপথে যাবে তুমি, তই না? গার্ড দু’জনের পেছনে পৌঁছুতে হলে।

হাত দুটো তুলে বুকে ভাঁজ করল রুডি। কৃতজ্ঞবোধ করছি, আমার ওপর তোমার এত আস্থা দেখে। পারব কি না জানি না, তবে চেষ্টা করব।

পারলে তুমিই পারবে, রুডি।

তার মানে দুর্গ রক্ষার জন্য তোমরা মাত্র তিনজন থাকছু।

তিনজনেই চালিয়ে নেব। আড়ষ্ট ভঙ্গিতে দাঁড়াল পিট, সামান্য খোঁড়াতে খোঁড়াতে মেঝেতে পড়ে থাকা আতঙ্কবাদীদের কাপড়গুলোর দিকে এগোল। ফিরে এসে রুডির দিকে বাড়িয়ে ধরল সেগুলো। পরে নাও, ওরা তোমাকে নিজেদের একজন মনে করবে।

অনড় দাঁড়িয়ে থাকল রুডি, বন্ধুদের ছেড়ে যেতে মন চাইছে না তার। তার ছোটোখাটো কাঁধে ভারী একটা হাত রাখলো জিওর্দিনো, হাঁটিয়ে নিয়ে এল একটা মেইন্টেন্যান্স প্যাসেজের সামনে, মেঝে থেকে নিচের দিকে নেমে গেছে সেটা, বিশাল ক্রাশিং মিলটাকে চারদিকে থেকে ঘিরে রেখেছে। এই পথ দিয়ে নেমে যেতে পারো তুমি, বলল জিওর্দিনো। পরিস্থিতি গরম না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে, তারপর ছুটবে।

রুডি কিছু বলার আগেই টানেলের ভেতর তাকে অর্ধেকটা নামিয়ে দিল জিওর্দিনো। শেষবার পিটের দিকে তাকাল রুডি, যেন কোনো উপদেশ শুনতে চাইছে। অভয় দিয়ে হাসল পিট, হাত নাড়ল। মুখ খুলে দিকে তাকাল রুডিক্লিফ। উজ্জ্বল হাসিতে উদ্ভাসিত হয়ে আছে চেহারা, ঢাকা পড়ে গেছে সমস্ত উদ্বেগ। তালুতে চুমো খেয়ে হাতটা বাতাসে ছুঁড়ে দিল সে। সবশেষে ফিনলের দিকে তাকাল রুডি। সে-ও হাসছে। নুমরি এরা সবাই তার শুধু বন্ধু নয়, জীবনেরও অংশবিশেষ, জানে না আবার ওদেরকে জীবিত দেখার সুযোগ হবে কি না।

ফিরে এস যেন তোমাদের সব কটাকে এখানে আমি দেখতে পাই, চড়া গলায় বলল রুডি। কী বলছি বুঝতে পারছ?

পরমুহূর্তে টানেলের ভেতর অদৃশ্য হয়ে গেল সে।

.

৫৯.

তাড়াহুড়ো করে লেডি ফ্ল্যামবোরোর সুইমিংপুলের ওপর তৈরি করা হয়েছে ল্যান্ডিং প্যাডটা, অস্থিরভাবে সেটার পাশে পায়চারি করছে কর্নেল হোলিস। এইমাত্র একটা ক্যারিয়ার পিজিয়ন হেলিকপ্টার নামাল, তাতে চড়ার জন্য একপাশে অপেক্ষা করছে। কয়েকজন লোক।

খনির দিক থেকে নতুন করে গুলির আওয়াজ ভেসে আসছে শুনে মুহূর্তের জন্য পায়চারি থামালো কর্নেল, চিন্তার রেখা ফুটল কপালে।

 তাড়াতাড়ি, মেজর, তাড়াতাড়ি! তাগাদা দিল সে। লোকজনকে শুধু পার করলেই হবে না, আরও কাজ আছে আমাদের। বুঝতে পারছ তো, ওদিকে এখনও বেঁচে আছে কারা যেন, আমাদের যুদ্ধটা লড়তে হচ্ছে তাদের।

খনিটা বোধ হয় সন্ত্রাসবাদীদের এস্কেপ পয়েন্ট ছিল, বললেন ক্যাপটেন কলিন্স। তিনিও কর্নেলের পাশে পায়চারি করছেন।

কৃতিত্বটা আমার। ডার্ক পিট আর তার দল সন্ত্রাসবাদীদের একেবারে ঘাড়ে লাফিয়ে পড়েছে, গম্ভীর সুরে বলল কর্নেল।

সময়মতো পৌঁছে জিম্মি আর ওদেরকে বাঁচাতে পারবেন কি না, সেটাই হলো প্রশ্ন।

হতাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল কর্নেল হোলিস। আমি তো কোনো আশা দেখছি না।

.

হঠাৎ ঝমঝম বৃষ্টি শুরু হওয়ায় কৃতজ্ঞবোধ করল রুডি। ক্রাশিং মিল থেকে বেরিয়ে খালি কয়েকটা ওর-কারের পাশ দিয়ে ক্রল করে এগোচ্ছে সে, ডোরাকাটা কাপড়ের মতো ওকে আড়াল করে রেখেছে বৃষ্টি। খনির নিচের পাহাড়ি ঢাল বেয়ে নামার সময় আর কোনো আড়াল থাকল না। নিচে নেমে এসে ছুটল সে।

রেললাইনে পৌঁছে গেল রুডি। কোনো শব্দ না করে হাঁটতে লাগল সে। খানিক পর বৃষ্টির ফাঁকে অস্পষ্ট কয়েকটা মূর্তি দেখতে পেরে দাঁড়িয়ে পড়ল। চারজন আছে, দাঁড়িয়ে আছে দু’জন।

দ্বিধায় পড়ে গেল রুডি। তার ধারণা, জিম্মিরা বসে আছেন, তাদের ওপর চোখ রেখে দাঁড়িয়ে আছে গার্ডরা। কিন্ত ধারণাটা ঠিক কি না গুলি করার পর পরীক্ষা করা যায় না। কে বন্ধু আর কে শত্রু জানতে হলে ওদের কাছাকাছি যেতে হবে তাকে। ধোঁকা দেয়ার জন্য ভরসা করতে হবে পিটের দেয়া টেরারিস্টদের কাপড়চোপড়ের ওপর। বিষম একটা অসুবিধা হলো, খুব বেশি হলে তিন কি চারটে আরবি শব্দ জানে সে।

 বড় করে শ্বাস টেনে এগোল রুডি। একবার সালাম করল, আস্তে বলা হয়ে গেছে ভেবে গলা একটু চড়িয়ে আরও দুবার উচ্চারণ করল শব্দটা।

ওকে পৌঁছুতে দেখে দাঁড়িয়ে থাকা লোক দু’জন বিশেষ গ্রাহ্য করল না। তাদের হাতে মেশিনগান রয়েছে, সেগুলো ওর দিকে ধরা, তবে ঠিক তাক করা ভঙ্গিতে নয়।

উত্তরে দু’জনের একজন কী যেন বলল, অর্থটা ধরতে পারল না রুডি। আন্দাজ করল, ওর নাম জিজ্ঞেস করা হয়েছে।

মুহাম্মদ, বিড়বিড় করে বলল সে, ভাবছে মহানবীর নাম নিয়ে যদি এই যাত্রা পার পাওয়া যায়। হেকলার অ্যান্ড কোচটা বুকের সাথে চেপে ধরে আছে, মাজলটা আরেক দিকে ঘোরানো।

 গার্ড দু’জনকে হাতের অস্ত্র আরেক দিকে ঘুরিয়ে নিতে দেখে স্বস্তি বোধ করল রুডি, একযোগে মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকাল তারা।

শান্তভাবে, অলসভঙ্গিতে, ওদের পাশে চলে এল রুডি, এখন গুলি করলে জিম্মিদের গায়ে লাগার ভয় নেই।

রেললাইনের ওপর বসে আছেন জিম্মিরা, তাদের ওপর চোখ রেখে, সন্ত্রাসবাদীদের দিকে সরাসরি না তাকিয়ে, হেকলার অ্যান্ড কোচের ট্রিগার টানল সে।

.

খনির কাছাকাছি পৌঁছাবার আগেই ক্লান্তির চরমে পৌঁছে গেল সুলেমান আজিজ আর তার লোকজন। তুমুল বর্ষণ অত্যাচার হয়ে দেখা দিল ভিজে ভারী হয়ে উঠেছে পরনের কাপড়চোপড়। পুরনে একটা দোচালা দেখতে পেয়ে হুড়হুড় করে ভেতরে ঢুকল সবাই। একসময় এখানে মাইনিং ইকুইপমেন্ট রাখা হতো।

কাঠের একটা বেঞ্চে ধপ করে বসল সুলেমান আজিজ, বুকের ওপর ঝুলে পড়ল মুখ, হাপরের মতো হাঁপাচ্ছে। এক লোককে সাথে নিয়ে ভেতরে ঢুকল ইবনে, পায়ের আওয়াজ পেয়ে চোখ তুলল সুলেমান আজিজ। ও ওসমান, বলল ইবনে। বলছে, সশস্ত্র একটা কমান্ডো গ্রুপ ওদের নেতাকে খুন করেছে, তারপর আশ্রয় নিয়েছে ক্রাশিং মিলের ভেতর। ওখানে আমাদের হেলিকপ্টারটা আছে, জনাব।

বেঞ্চ ছেড়ে দাঁড়াল সুলেমান আজিজ, রাগে থরথর করে কাঁপছে। এইজন্য পাঠানো হয়েছিল তোমাদের?

আতঙ্কে নীল হয়ে গেল ওসমান। আমরা… আমরা কোনো ওয়ানিং পাইনি জনাব। পাহাড় বেয়ে কখন নেমে এসেছে ওরা কিছুই আমরা জানতে পারিনি। সেন্ট্রিদের কাবু করে, ট্রেনটা দখল করে, তারপর আমাদের লিভিং কোয়ার্টার লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। আমরা যখন পাল্টা হামলা শুরু করি, ক্রাশিং মিল থেকে জুবাব দেয়া ওরা।

হতাহত? হিসহিস করে জানতে চাইল সুলেমান আজিজ।

 বেঁচে আছি আমরা মাত্র সাতজন।

 দাঁতে দাঁত চাপল সুলেমান আজিজ। যা ধারণা করেছিল, পরিস্থিতি তার চেয়ে অনেক খারাপ। ওরা?

 বিশজন তো হবেই, ত্রিশজনও হতে পারে।

তোমরা সাতজন ওদের ত্রিশজনকে কোণঠাসা করে রেখেছ? খেঁকিয়ে উঠল সুলেমান আজিজ। ঠিক করে বলো। কজন ওরা? মিথ্যে বললে ইবনে তোমাকে জবাই করবে।

ভয়ে সুলেমান আজিজের চোখে তাকাতেই পারল না। চার-পাঁচজন হতে পারে, কমও হতে পারে … জনাব–

চারজন লোক এত কিছু করেছে? বিস্মিত হলো সুলেমান আজিজ। রাগ সামলানোর চেষ্টা করল সে। হেলিকপ্টারের খবর বলো। ওটার কোনো ক্ষতি হয়েছে?

একটু যেন উজ্জ্বল হলো ওসমানের চেহারা। না, জনাব, কোনো ক্ষতি হয়নি। খুব সাবধানে গুলি করেছি আমরা। আমার বাপজানের সম্মানের কসম, একটা গুলিও হেলিকপ্টারে লাগেনি….

কমান্ডোরা ওটার কোনো ক্ষতি করেছে কিনা আল্লাহ মালুম, ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল ইবনে।

ওটাকে অক্ষত অবস্থায় না পেলে খুব শিগগিরই সবাই আমরা আল্লাহর কাছে পৌঁছে যাব, শান্তভাবে বলল সুলেমান আজিজ। কমান্ডোদের কাবু করার একমাত্র উপায়, চারদিক থেকে ঝাঁপিয়ে সোজা ভেতরে ঢুকে পড়া-স্রেফ সংখ্যার জোরে হারাতে হবে ওদেরকে।

শেষ পর্যন্ত হয়তো জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে হেলিকপ্টার ফেরত চাইতে হবে।

ইবনের দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাঁকালো সুলেমান আজিজ। হয়তো। শোনো-কমান্ডোদের সাথে আলোচনা শুরু করব আমি, তুমি হামলার প্রস্তুতি নাও।

সাবধানে, হযরত।

 মুখোশ খুলে ফেলতে দেখলেই তুমি হামলা শুরু করবে।

সশস্ত্র লোকদের একপাশে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে নির্দেশ দিতে শুরু করল ইবনে।

একটা জানালার পর্দা টেনে ছিঁড়ে ফেলল সুলেমান আজিজ। এককালে কাপড়টা হলুদ ছিল, রং উঠে সাদা হয়ে গেছে। একটা লাঠির মাথায় কাপড়টা বাঁধল সে। শান্তির পতাকা হাতে বেরিয়ে এল দোচালা থেকে।

মাইনারদের সার সার বাঙ্কহাউসকে পাশ কাটিয়ে এল সে, সতর্ক থাকল ক্রাশিং মিল থেকে তাকে যেন কেউ দেখতে না পায়। তারপর সামনে পড়ল রাস্তা। একটা বিল্ডিংয়ের কোণ থেকে শান্তির পতাকাটা সামনে বাড়িয়ে নাড়ল সুলেমান আজিজ।

কোনো গুলি হলো না, তবে আর কিছুও ঘটল না। ইংরেজিতে চিৎকার করল সুলেমান আজিজ, আমরা কথা বলতে চাই।

 কয়েক মুহূর্ত পর একটা কণ্ঠস্বর ভেসে এল, নো হাবলো ইংলেস।

মুহূর্তের জন্য পিছিয়ে এল সুলেমান আজিজ। চিলিয়ান সিকিউরিটি পুলিশ? তার ধারণা ছিল, চিলিয়ান পুলিশ তেমন দক্ষ নয়। ইংরেজি ভালো বলতে পারে সে, কাজ চালাবার মতো ফ্রেঞ্চও জানে কিন্তু স্প্যানিশে দখল নেই।

দ্বিধায় ভুগলে বিপদ শুধু বাড়বে। যেভাবে হোক শত্রুপক্ষের পরিচয় ও শক্তি সম্পর্কে জানতে হবে তাকে। গা বাঁচিয়ে পালানোর পথে ওরাই একমাত্র বাধা। আবার পতাকাটা সামনে বাড়িয়ে ধরল সুলেমান আজিজ। কোণ থেকে বেরিয়ে এল এক লোক, থামল তার কাছ থেকে কয়েক পা রাখলো।

 পাজ অর্থ শান্তি, জানে সুলেমান আজিজ। শব্দটা কয়েকবার গলা চড়িয়ে উচ্চারণ করল সে। অবশেষে সদর দরজা খুলে খোঁড়াতে খোঁড়াতে রাস্তায় রেবিয়ে এল এক লোক, থামল তার কাছ থেকে পা দূরে।

লোকটা লম্বা, গভীর সবুজ চোখ, কোনো দ্বিধা নেই হাবে ভাবে। সোজা সুলেমান আজিজের দিকে চেয়ে আছে। লম্বা চুলগুলো, কালো, ঢেউখেলানো; সূর্যের তাপে পোড়া তামাটে চামড়া। ঘন ভ্রু, ঠোঁটে বিদ্রুপাত্মক হাসি।

গালে সরু একটা কাটা দাগ। এক হাত খালি, দস্তানা পড়া অপর হাত স্কি জ্যাকেটের পেছনে ঝুলছে।

মাত্র তিন সেকেন্ডের মধ্যে যা বোঝার বুঝে নিল সুলেমান আজিজ, বিপজ্জনক এক লোকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সে। সতর্ক হবার প্রয়োজন বোধ করল। মনে মনে স্প্যানিশ শব্দ খুঁজল সে। আমরা কথা বলতে পারি? হ্যাঁ, এভাবে শুরু করা যায়। বলল, পোডেমস হাবলার?

উত্তরে প্রতিপক্ষের ঠোঁটের ক্ষীণ হাসিটুকু সামান্য উজ্জ্বল হলো।

ভাঙাচোরা স্প্যানিশ ভাষায় এরপর সুলেমান আজিজ জিজ্ঞেস করল, আমরা হেলিকপ্টারটা ফেরত পেতে পারি কি?

 হঠাৎ হেসে উঠল পিট। তোমার স্প্যানিশ আমার চেয়ে খারাপ। ইংরেজিতে বলল ও। উত্তর হলোনা, হেলিকপ্টারটা ফেরত দেয়ার জন্য দখল করা হয়নি।

প্রতিপক্ষ ইংরেজি জানে, তবে বিস্ময়টা তাড়াতাড়ি কাটিয়ে উঠল সুলেমান আজিজ। সাথে সাথে প্রস্তাব দিল সে, আমি আপনাদেরকে আত্মসমর্পণ করার পরামর্শ দিচ্ছি।

প্রস্তাবটা গিলে ফেল।

এরই মধ্যে হিসাব কষতে শুরু করেছে সুলেমান আজিজ। যোদ্ধার পোশাক নয়, প্রতিপক্ষের পরনে দামি স্কি জ্যাকেট। সিআইএ নাকি?

আপনার নাম জানতে পারি?

ডার্ক পিট।

 আমি সুলেমান আজিজ ওমর।

 তুমি কে বা কী, আমার তাতে কিছুই আসে যায় না, ঠাণ্ডা সুরে বলল পিট।

বেশ, মি. পিট, রাগল না সুলেমান আজিজ। হঠাৎ তার একটা ভ্রু উঁচু হলো। আপনার সাথে সিনেটরের কোনো সম্পর্ক নেই তো?

রাজনৈতিক মহল আমার মিত্র নয়।

 কিন্তু নামে মিল আছে। চেহারাও। সে কি আপনার বাবা?

যদি কিছু বলার থাকে, তাড়াতাড়ি করো। বৃষ্টিতে ভিজতে চাই না।

আমার জিনিসটা আমি ফেরত পেতে চাই, মৃদু হাসির সাথে বলল সুলেমান আজিজ। অক্ষত অবস্থায়।

কোনো জিনিস কেউ খুঁজে পেলে বা দখল করতে পারলে সেটা তার হয়ে যায়। তোমার যদি খুব দরকার থাকে, ভেতরে ঢুকে নিয়ে এসো।

হাত দুটো ঘন ঘন মুঠো করল আর খুলল সুলেমান আজিজ। শক্ত লোকের পাল্লায় পড়েছে সে। তীক্ষ্ণ, চাপা গলায় বলল, আমাদের কিছু লোক মারা যাবে, আপনি মারা পড়বেন এবং অবশ্যই আপনার আত্মীয় বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও মারা পড়বেন, হেরিকপ্টারটা যদি আমার হাতে তুলে না দেন।

চোখের পাতা একচুল কাপল না, পিট বলল, দু’জন প্রেসিডেন্ট আর হে’লা কামিলের কথা বলছ না। নিজের কথাটাও ভুলে যাওয়া উচিত হয়নি তোমার। ঘাসের সার হিসেবে তুমিও অবদান রাখবে।

লাল হয়ে উঠল সুলেমান আজিজের চেহারা। আপনার গোয়ার্তুমি অসহ্য! রক্তপাত ঘটিয়ে কী লাভ আপনার?

 যুদ্ধ চাইলে, ঘোষণা করো তুমি, তীক্ষ্ণকণ্ঠে বলল পিট। দেখতে পাবে যুদ্ধ কাকে বলে, প্রতিপক্ষ কেমন লড়তে জানে। কিন্তু সে সাহস কি তোমার আছে? মহিলা, অসহায় বৃদ্ধদের যারা জিম্মি রাখে তারা যদি কাপুরুষ না হয়, আর কাকে কাপুরুষ বলা যায়? তবে, সন্ত্রাসের ইতি ঘটেছে ঠিক তুমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছ, সেখানে। আমি আমার নিজের আইনে চলি, এক পা সামনে এগিয়ে দেখো, ঝাঁঝরা হয়ে যাবে। আমাদের একজন মারা গেলে কথা দিচ্ছি, তোমাদের পাঁচজনের লাশ পড়বে।

আপনার সাথে আমি নীতিকথা মতপার্থক্য নিয়ে আলোচনা করতে আসিনি, রাগ সামলে নিয়ে বলল সুলেমান আজিজ। আমার জানা দরকার, হেলিকপ্টারটা অক্ষত আছে কি না।

আঁচড়ের দাগ পর্যন্ত পড়েনি কোথাও, বলল পিট। তোমার পাইলটরাও বহাল তবিয়তে আছে, অন্তত ফ্লাই করতে পারবে।

অস্ত্র ফেলে দিয়ে আত্মসমর্পণ করাই হবে আপনাদের জন্য বুদ্ধিমানের কাজ।

কাঁধ ঝাঁকালো পিট। যাও, পাহাড়ের মাথা থেকে লাফ দাও।

পিটের দিকে তির্যকদৃষ্টিতে তাকাল সুলেমান আজিজ। আপনারা কজন? চার, সম্ভবত পাঁচজন? আপনাদের একজনের সমান আমাদের আটজন।

মুচকি হেসে পিট বলল, আর আমাদের হেলিকপ্টারের সমান?

ওটা আমাদের

 দখল নিতে পারলে, বলল পিট। ভালো কথা, ওটা অক্ষতই থাকবে। কিন্তু

কী?..

কিন্তু যদি জিম্মিদের কারও সামান্যতম কোনো ক্ষতি হয়, এক্সপ্লোসিভ দিয়ে ওরা আমি উড়িয়ে দেব।

এই আপনার শেষ কথা?

আপাতত, হ্যাঁ।

হঠাৎ কী যেন উপলব্ধি করে প্রায় চমকে উঠল সুলেমান আজিজ। আপনি! হ্যাঁ, নির্ঘাত আপনি। আপনিই তাহলে আমেরিকান স্পেশাল ফোর্সকে পথ দেখিয়ে এখানে এনেছেন।

 বেশির ভাগ কৃতিত্ব ভাগ্যের, বলল পিট। তবে পানির তলায় জেনারেল ব্রাভো আর প্লাস্টিকের রোলটা আমিই খুঁজে বের করি। তারপর খাপে খাপে মিলে যায় সব।

পিটের দিকে আচ্ছন্ন দৃষ্টিতে এক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকল সুলেমান আজিজ, তারপর নিচু গলায় বলল সে, আপনার মেধা আপনি অপচয় করছেন, মি. পিট। নিজের মূল্য সম্পর্কে আপনার কোনো ধারণা নেই। বলেন তো আমি একটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করতে পারি।

পারো নাকি?

আমার সাথে হাত মেলান, প্রস্তাব দিল সুলেমান আজিজ। মধ্যপ্রাচ্যের রাজা বানিয়ে দেব আপনাকে। আপনার মতো সাহসী ও বুদ্ধিমান লোক ইচ্ছে করলে দারুণ কিছু করতে পারে।

হেসে উঠল পিট। মিথ্যে প্রলোভন দেখাচ্ছ?

 আপনি জানেন, মি, পিট, চোখ সরু করে পিটের দিকে তাকাল সুলেমান আজিজ, তার ধৈর্যের বাধ ভেঙে গেছে, আপনাকে আমি নিজের হাতে খুন করতে যাচ্ছি? পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি, বুলেটে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে আপনার শরীর। এ ব্যাপারে কী বলার আছে আপনার?

পিটের দৃষ্টি বা চোখে কোনো আক্রোশ নেই, চেহারায় ঘৃণার ভাবও ফুটল না। সকৌতুক তাচ্ছিল্যের সাথে সুলেমান আজিজের দিকে তাকিয়ে থাকল ও। ছোট্ট করে বলল, আমি যা জানি তুমি তা জানো না।

রাগের সাথে শান্তির পতাকা ছুঁড়ে ফেলে দিল সুলেমান আজিজ, ঝট করে ঘুরে হন হন করে ফিরে চলল সে, কোটের ভেতর পকেট থেকে রুগার পি-85 সেমি অটোমেটিক নাইন-মিলিমিটার বেরিয়ে এসেছে হাতে।

বিদ্যুৎবেগে ঘুরল সে, একটানে মুখোশ খুলে দুহাতে বাগিয়ে ধরল রুগার, পিটের পিঠের ওপর মাজল সিধে হতেই পরপর ছটা গুলি করল।

পিটের পিঠের ওপর স্কি জ্যাকেটে এক ঝাক গর্ত সৃষ্টি হতে দেখল সে, দেখল তার ঘৃণিত প্রতিপক্ষ হোঁচট খেয়ে ক্রাশিং মিলের দিকে এগোল, বাড়ি খেল দেয়ালে।

পিটের পড়ার অপেক্ষায় থাকল সুলেমান আজিজ। সে জানে, মাটিতে পড়ার আগেই মারা গেছে শত্রু।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *