৩৩. ঘরে বাইরে নিরন্তর যুদ্ধ

ঘরে বাইরে নিরন্তর যুদ্ধ, যুদ্ধটা নিজের সঙ্গে। একদিকে অলোকের কথাবার্তা, আচার আচরণ মায় জীবনযাত্রা পাল্টে যাচ্ছে একটু একটু করে, অন্যদিকে অফিসের চটচটে আবহাওয়া, প্রতিমুহূর্তে মনের বিরুদ্ধে কাজ করে যেতে বাধ্য হওয়ায় দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল দীপাবলীর। কিন্তু কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না সে। এই জীবনে সে এটুকু শিখেছে, স্রোতে গা ভাসাতে না পারো উজানে সাঁতরাতে চেষ্টা কর কিন্তু কখনই জল ছেড়ে সরে দাঁড়িও না, তাহলেই তুমি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। একদা সে এই ভুল করেছিল নেখালি থেকে চাকরি ছেড়ে চলে এসে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে যাওয়া ছাড়া। কোন পথ নেই।

বাইরের জগৎ থেকে একধরনের আপাত উদাসীনতা দিয়ে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখা যায় কিন্তু ঘরের আবহাওয়া ভারী হয়ে গেলে নিঃশ্বাসে কষ্ট আসবেই। মেনে নেওয়া বা মানিয়ে নেওয়ার চিরাচরিত ফর্মুলা অনুসরণ করলে যদি কিছুটা স্বস্তি আসে এবং একসময় সেই স্বস্তির পথ ধরে শান্তি তৈরি হয় তাহলে সেটাই করা উচিত বলে মনে হল দীপাবলীর। নিজেকে অনেক বোঝাল সে। লড়াই করা মানে সবসময় দাঁত এবং নখের ব্যবহার নয়।

শনিবার সরকারি ছুটি কোন একটি পরব উপলক্ষ্যে। সকালে ঘুম থেকে উঠে জীবনযাপন স্বাভাবিকভাবেই শুরু হয়নি। অলোক ওঠেনি। পাশবালিশ জড়িয়ে অঘোরে ঘুমোচ্ছ। বাথরুমে ঢুকে কাপড় পাল্টাতে গিয়ে দীপাবলী বুঝতে পারল শরীরে বেশ অস্বস্তি। গতরাত্রে যা প্রথমদিকে বিস্ময়, মাঝখানে আনন্দ এবং শেষে বিরক্তিকর হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাই আজ জানান দিচ্ছে। বিশেষ করে বুকের চারপাশ দপদপ করছে। দাঁত ব্রাশ করে অনেকখানি জল ঢেলে স্নান করল সে। কিন্তু শরীর থেকে বেদনা একটুকুও কমল না।

এমন অভিজ্ঞতা ইতিমধ্যে কখনও হয়নি। গতরাত্রে ঈষৎ মাতাল অলোক হঠাৎই হিংস্ৰ হয়ে উঠেছিল। সে তার শরীরকে যথেচ্ছ ব্যবহার করেছে। শরীর নিয়ে সেই খেলায় কোন মমতা ছিল না। ব্যথা পেয়ে চিৎকার করেছে দীপাবলী। জড়ানো গলায় অলোক বলেছে, ওহে, ডোণ্ট সাউট, আনন্দটা মাটি করো না। ব্যথা সইতে না পেরে দীপাবলী বলেছিল, এত জোরে চাপ দিচ্ছ কেন?

জড়ানো গলায় অলোক জবাব দিয়েছিল, ইউ উইল গেট প্লেজার আউট অফ ইট। বীরভোগ্যা বসুন্ধরা। পুতুপুত করে আদর করে বলে একালের পুরুষরা মেয়েদের কন্ট্রোল করতে পারে না। এনজয় ইট।

আঃ। না। ছাড়ো! চিৎকার করে উঠেছিল দীপাবলী, আবার।

না, ছাড়ব না। কেমন করে একটা ফ্রিজকে গ্যাস বানারে টার্ন করতে হয় আজ তা আমি দেখিয়ে দেব।

কি বললে তুমি?

ইয়েস, ইউ আর কোন্ডি। ফ্রিজিড্‌ ওমেন। বাট ডোন্ট ওরি, আই উইল টার্ন ইউ—। কথা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আর স্তব্ধ হয়েছিল দীপাবলী। বিয়ের পর অনেক অবসরমুহূর্তে নানান কথার মধ্যে অলোক ওইসব মেয়েদের কথা বলেছে যারা তাদের স্বামীদের বিছানায় সুখী করতে পারে না। শুধু তাদের শীতলতার জন্যেই দাম্পত্যজীবনে ভাটা এসে যায়। এমন অনেক নারী আছে যারা সংসারের সব কাজে অত্যন্ত নিপুণা, কথাবার্তা, গান এবং সেবায় যাদের কোন তুলনা মেলা ভার কিন্তু একান্তের জীবনে যারা গুটিয়ে যায় শামুকের মত। অলোক সুর করে লাইনটা গেয়ে বলত এটা ঠিক গানের মত, একজন গাইবে গলায় আর একজন মনে মনে। নইলে সেটা আর যাই হোক গান হবে না। কিন্তু কখনই তার কথায় অতৃপ্তির সুর বাজেনি। একথা ঠিক প্রথম দিকে দীপাবলীর মনে যৌনজীবন সম্পর্কে কিছুটা ভীতি ছিল। তার ছাত্রীজীবনে কেউ যৌনজীবন সম্পর্কে কোন উপদেশ দেয়নি। কোন পাঠ্যপুস্তকে সে এ-সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেনি। পরবর্তীকালে বাস্তবের সঙ্গে লড়াই করার মুহূর্তে এ-সম্পর্কে আগ্রহ তৈরি হয়নি। তার ধারণা ছিল ঘটনাটা ঘটানো হয় শুধু সন্তান জন্মানোর জন্যে। বলতে গেলে অলোক তাকে প্রায় হাতে ধরেই ওই জীবনের আনন্দ পেতে শিখিয়েছে। শরীর শুধু সন্তান দেয় না, তাকে মন্দিরের মত ব্যবহার করে আর একধরনের পবিত্র আনন্দ পাওয়া যায় এই বোধও সে পেয়েছিল অলোকের কাছ থেকেই। কিন্তু এসবের সময়ে অলোক কখনই তাকে শীতল বলেনি। তার চেয়ে বড় কথা সে নিজে জানে শীতল নয়। কিন্তু আলো জ্বলুক বললেই আলো জ্বলে না। তার জন্যে কেরোসিন অথবা হ্যারিকেনের সঙ্গে দেশলাই-এর আয়োজন করতে হয় এবং সুইচ টেপার জন্যে হাত বাড়াতে হয়। এই প্রস্তুতি ছাড়া চরমমুহূর্ত কল্পনা করতে পারে না দীপাবলী।

গতরাত্রে অলোক কোনরকম মানসিক প্রস্তুতির সুযোগই দেয়নি। একাই একশ শকুন হয়ে ধারালো ঠোঁটের আঘাত হেনেছিল। তারপর যখন নিঃশেষিত হল তখন গোড়াকাটা কলাগাছের মত পড়ে গেল বিছানায়। দীপাবলী নিজেকে বোঝাতে চেয়েছিল, কখনও কখনও পুরুষেরা হয়তো এমন নির্মম আচরণ করে। হয়তো ওদের মধ্যে পাশবিক প্রবৃত্তি যা আদিম কাল থেকে একটু একটু করে সুপ্ত হয়ে আসছে তা হঠাৎ মাথাচাড়া দিয়ে জেগে ওঠে। তাকে এটাকেও উপেক্ষা করতে হবে। ওষুধ খেয়ে শরীরের এই ব্যথা নিশ্চয়ই মরে যাবে। শুধু তার মনে হচ্ছিল যদি মনের পেইনকিলার ট্যাবলেট বাজারে বিক্রি হত!

পরিষ্কার হয়ে চান করল দীপাবলী। কাপ হাতে শোওয়ার ঘরে ঢুকে অলোককে শুয়ে থাকতে দেখে আজই হঠাৎ খুব অশ্লীল বলে মনে হল। তাড়াতাড়ি চায়ের কাপ নামিয়ে সে একটু গলা তুলেই ওকে ডেকে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল। এখনও রোদ ওঠেনি। বারান্দার চেয়ারে বসে একা চা খেল সে। আজ দুপুরে কোথাও খাওয়ার কথা নেই। বাড়িতেই রান্না করবে সে। একদিন কথায় কথায় অলোক বলেছিল চিংড়ি মাছের বাটিচচ্চড়ি আর পার্শে মাছের ঝাল ওর খুব প্রিয় খাবার। হাঁটতে হাঁটতে বাজারটা করে এলেই হয়। না-রোদ এই সকালে হাঁটতে খারাপ লাগবে না। চা খেয়ে কাপ-প্লেট রান্নাঘরের বেসিনে নামিয়ে দীপাবলী বাজারের থলি নিয়ে শোওয়ার ঘরের দরজায় এসে দেখল অলোক বিছানায় বসে চা খাচ্ছে। দীপাবলী বলল, আমি একটু মাছ কিনে আনছি।

তুমি, মাছ? আমি থাকতে? না, না, আমি যাচ্ছি।

কিছু হবে না। তুমি রেস্ট নাও, আমার যেতে ভাল লাগবে। দীপাবলীর মুখে আচমকা একটা ভাললাগা ফিরে এল। সে যখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে ঠিক তখনই অলোক তাকে ডাকল, এই শুনছ?

দীপাবলী সামান্য মুখ ফেরাল। কোন কথা বলল না।

ডিড আই হাৰ্ট ইউ?

কি জবাব দেবে দীপাবলী! এতক্ষণের ভাবা সমস্ত কথা উগড়ে দেবে? যদি দেয় তাহলে কথা বাড়বে। হয়তো তর্ক হবে এবং শেষপর্যন্ত একটা তেতো আবহাওয়ায় দিনটা কাটবে। সে হাসল, কিছু বলল না, তারপর দরজার দিকে এগিয়ে গেল। কিন্তু এই সামান্য প্রশ্ন এবং তার আগের বাজারে যাচ্ছে শুনে অলোকের ব্যস্ততা দেখে মন বলতে লাগল এই মানুষের সঙ্গে গতরাত্রের মানুষের কোন মিল নেই। অথচ দুটো মানুষই সত্যি। সে ঠিক করল, দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পর অলোককে বুঝিয়ে বলবে। যাতে ভবিষ্যতে গতরাত্রের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় তার ব্যবস্থা করবে?

মিনিট দশেক হাঁটার পর যে বাজারটা তার আয়ু বেশিদিনের নয়। সবজির আধিক্য বেশি। এখানে আলু পেঁয়াজ এবং অন্যান্য সবজি কিনলে লঙ্কা অথবা ধনেপাতা ফাউ পাওয়া যায়। আর তরিতরকারি কলকাতার থেকে অনেক বেশি তাজা এবং স্বাস্থ্যবান। মাছের জায়গায় এসে দেখল আড় জাতীয় মাছই বেশি। পোনা আছে এবং তা বরফের। পার্শে নেই চিংড়ি তো দূরের কথা। অর্থাৎ ইচ্ছে হলেই এখানে তেমন রান্না করা যাবে না। অলোক বলে বাঙালি এলাকায় নানারকম মাছ আনে এরা। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর আরও কয়েক ঝুড়ি নতুন মাছ এলে ট্যাংরা পেল সে। ট্যাংরা আর পোনা নিয়ে ফিরে আসতে হল।

বাড়িতে ফিরতেই আর একটা চমক। ব্রেকফার্স্ট তৈরি করে ফেলেছে অলোক। বলল, চায়ের জল গরম হয়ে গিয়েছে চটপট হাত ধুয়ে এস। দীপাবলীর ইচ্ছে করছিল অলোককে দুহাতে জড়িয়ে ধরে। কিন্তু বাজারের ব্যাগে হাত জোড়া, সে নরম গলায় বলল, থ্যাঙ্কু।

চা খেতে খেতে টুকটাক গল্প। অলোক খবরের কাগজ পড়ছে। বাজারে মাছ ভাল পায়নি জানাল দীপাবলী। সেটা শুনে অলোক বলল, হুট করে চলে গেলে, নইলে গাড়ি নিয়ে বের হতাম।

দীপাবলী বলল, কিন্তু আমার নিজের হাতে বাজার করতে ইচ্ছে করছিল।

অলোক হাসল, দ্যাখো, তোমার হাত কি রকম রান্না করে।

তারপর সারাটা সকাল কেটে গেল রান্নাঘরে। অলোক শুয়ে বসে বই পড়ে সময়টা কাটাল। ট্যাংরা মাছের ঝাল, রুই-এর কালিয়া, ডাল পোস্ত এবং ঝুরঝুরে ভাত তৈরি হবার। আগেই দুবার তাগাদা দিয়ে স্নান করিয়েছে দীপাবলী অলোককে। তারপর নিজে স্নান সেরে টেবিলে খাবার সাজাল।

অলোক এল পাজামা পাঞ্জাবি পরে। এখন তার মেজাজ বেশ ভাল। এসেই টেবিল দেখে জিভে শব্দ করল, মাই গড। এ কি করেছ? এ যে দেখছি দারুণ ব্যাপার।

দীপাবলী নরম হাসল, কেমন হয়েছে জানি না। কোনদিন তো এসব রান্নার সুযোগ পাইনি। ভয়ে ভয়ে কোনমতে–!

সুযোগ কেউ দেয় না, করে নিতে হয়। বসে পড়, আমি আর ওয়েট করতে পারছি না। চেয়ার টেনে নিল অলোক।

দীপাবলী বসল না। এবং এই মুহূর্তে সে একজন যথার্থ বঙ্গরমণী কিংবা পৃথিবীর অন্যান্য রমণীদের মত এক অদ্ভুত রসে ভরপুর-যা না-প্রেম না-স্নেহ না বাৎসল্য না-শ্রদ্ধা নাকামনা অথচ সবটাই জড়িয়ে মিশিয়ে একাকার। সে ভাত ঢেলে দিল পরিচ্ছন্ন হাতে। অলোক বলল, না তা হবে না। তোমাকে আমার খাওয়ার তদারকি করতে হবে না। তুমিও বসে পড় একসঙ্গে।

দীপাবলী মাথা নাড়ল, না, খাও না, আমি একটু বাদে বসছি! অলোক একমুহূর্ত তাকাল, তাহলে ঘোমটা দাও।

মানে? হকচকিয়ে গেল দীপাবলী।

এককালে বাংলাদেশের বউরা যখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পরিবেশন করে যেত তখন তাদের মাথায় ঘোমটা থাকত। অলোক হাসল।

হাসিটা সংক্রামিত হল। দীপাবলী বলল, ঠিক মনে করতে পারছি না। একটা ছবি দেখেছিলাম, রবীন্দ্ৰনাথ হাঁটুমুড়ে পাত পেতে খেতে বসেছেন আর ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী পরিবেশন করছেন, মেয়েরাও ছিল কিন্তু কারো মাথায় ঘোমটা।

বেসিক জায়গাটায় গোলমাল করে ফেললে। থামিয়ে দিল অলোক, রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে অঁদের সম্পর্কটা কি ভাবছ না!

খাও তো, কথা বাড়িও না।

অলোক খেতে শুরু করল। দীপাবলী দেখছিল। গতরাত্রের মানুষটিকে এই চেহারার সঙ্গে কেউ মেলাতে পারবে না। এই সত্যিটুকু দিয়ে ওই সত্যিটুকুকে মুছে ফেলা যায় না। ওটাকে তো সে মিথ্যে ভাবতে পারছে না। তাহলে সত্যি কি মোছা যায়?

স্বচ্ছন্দ ভঙ্গি নিয়ে খাচ্ছিল অলোক। মাছে হাত দিতেই যেন আড়ষ্ট হল। দীপাবলী দেখল মুখে দিয়ে চোখ তুলতে গিয়েও নামিয়ে নিল সে। মুখটা কেমন থমথমে হয়ে যাচ্ছে। এতক্ষণ যে হাসিখুশী ভাবটা ছিল তা উধাও। সে ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করল, কি হয়েছে?

কি বলব! হাত গুটিয়ে নিল অলোক।

মানে?

পোস্ত থাকলে আর একটু দাও, খেয়ে উঠে পড়ি।

সে কি মাছ খাবে না?

নাঃ। খাওয়া যাচ্ছে না।

আশ্চর্য! কি হয়েছে বলবে তো!

এটা কোন রান্নাই হয়নি। টেস্টলেস, জল কাটছে, এটা কি ঝাল হয়েছে?

আমি তো বললাম আমার কোন এক্সপেরিয়েন্স নেই।

নেই তো রাঁধতে যাও কেন? আঃ, মা এটা যা বাঁধে তারপর এসব খাওয়া যায় না। আর রাঁধতে জানি না মানে এই?

ঠিক আছে, কালিয়া দিচ্ছি, ওটা খেয়ে দ্যাখে।

দরকার নেই, আমাকে পোস্ত দাও। ওটা তবু খাওয়া চলে।

একবার মুখে নিয়ে দ্যাখো—!

মুখটার বারোটা বাজার চান্স আছে দীপা!

হঠাৎ প্রচণ্ড রাগ হয়ে গেল দীপাবলীর। সে ঘুরে সোজা চলে এল শোওয়ার ঘরে। ঢুকেই দরজা বন্ধ করে বিছানায় উপুড় হয়ে পড়ল। সমস্ত শরীর নিংড়ে আচমকা জল উঠে এল চোখে। নিজের অজান্তেই কেঁদে যাচ্ছিল সে। এবং এই কান্নার সঙ্গে অদ্ভুত কাঁপুনি ছড়িয়ে পড়ছিল শরীরে।

খানিক বাদে দরজায় শব্দ হল, অলোকের গলা পাওয়া গেল। সে দরজা খুলতে বলছে। হঠাৎ মাথা গরম করে সিন না করার জন্যে অনুরোধ করছে। অনুরোধ না আদেশ? দীপাবলী সাড়া দিল না। তারপর সব চুপচাপ। যেন এবাড়িতে দ্বিতীয় প্রাণীর অস্তিত্ব নেই।

একসময় শক্তি ফিরে এল। দীপাবলী বিছানায় উঠে বসল। মুখ ফিরিয়ে আয়নার দিকে তাকাল। নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ খুব লজ্জা পেল সে। এভাবে ছুটে এসে বিছানায় ভেঙে পড়ল কেন? তার স্বভাবে তো এমনভাবে কান্না নেই। অলোকের রান্না অপছন্দ হয়েছে, সে তা মুখ ফুটে বলেছে। কোনটা খাবে বা না খাবে সেটা ওর ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে। তাহলে সেটা শুনে এমনভাবে আহত হওয়ার কি যুক্তি আছে? নাকি সে নিজে রান্না করেছে বলে ভেবেই রেখেছিল অলোক সবকিছু খুব তৃপ্তি নিয়ে যাবে! এমন ভাবনা বাড়াবাড়ি ছাড়া আর কি!

দীপাবলী চোখ মুছল। দরজা খুলল। ঘরের বাইরে এসে দেখল অলোক নেই। কোথাও নেই। বারান্দাও ফাঁকা। বাইরের দরজার ল্যাচ টেনে দেওয়া। অলোক বেরিয়ে গিয়েছে। হঠাৎ খুব একা মনে হতে লাগল। এইভাবে না বলে অলোক কখনও বাড়ি থেকে বের হয়নি। তারপরেই মনে হল হয়তো উত্তেজনার বশে অলোক কাছেপিঠে গিয়েছে। একটু ঘুরেফিরেই চলে আসবে। কিন্তু এমন ভরদুপুরে কোথায় যেতে পারে অলাক!

ঘড়ি দেখল সে। দুপুর দুটো। ঠোঁট কামড়ে খাওয়ার টেবিলটাকে দেখল একবার। তারপর যা কিছু বের করেছিল সব ফিরিয়ে নিয়ে গেল রান্নাঘরে। টেবিল পরিষ্কার করে হাত ধুয়ে বাইরের ঘরের চেয়ারে চুপচাপ বসে রইল। তার খিদের অনুভূতিটাই মরে গিয়েছিল।

বিকেল পাঁচটায় দরজায় শব্দ হল। অলোক ফিরল তার মাকে সঙ্গে নিয়ে। ঘরে ঢুকে শাশুড়ি বললেন, তোমার খাওয়া দাওয়া হয়েছে তো? আমি ওকে খুব বকলাম। রান্না একটু খারাপ হয়েছে তো এভাবে রাগরাগি করতে হবে? একদম বাপের স্বভাব পেয়েছে। তুমি নিশ্চয়ই বিয়ের আগে বলনি দারুণ কিছু রান্না করতে পার?

না। বরং বলেছিলাম একদম জানি না। শুনে বলেছিল ওটা কোন সমস্যাই না। দুজনে চাকরি করছি যখন তখন একটা রান্নার লোক রেখে দেবে। দীপাবলী বলা মাত্র অলোক বলল, আমি খেতে পারিনি এটা আমার সমস্যা। তাই বলে বেডরুমের দরজা বন্ধ করা হবে কেন? ওখানে তো আমারও প্রয়োজন থাকতে পারে।

ঠিক আছে, তুই আর কথা বাড়াস না। তুমি খাওনি?

ঠিক আছে, বসুন।

অলোক ভেতরের ঘরে চলে গেল। শাশুড়ি বসলেন। এই ভদ্রমহিলা ওদের এই ফ্ল্যাটে কয়েকবার এসেছেন। বেড়িয়ে গেছেন। তারা যে আলাদা হয়ে আছে এতে যেন উনি বেশ স্বস্তি পান। ভদ্রমহিলা জিজ্ঞাসা করলেন, ঠিক কি ভাবে রান্না করেছিলে বল তো?

দীপাবলী বলল, শুনে ভদ্রমহিলা শুধরে দিচ্ছিলেন। সেই রন্ধনপ্রণালী চুপচাপ শুনছিল দীপাবলী। যেন পুরোটাই বুঝিয়ে দিতে পেরেছেন এমন ভেবে নিয়ে শাশুড়ি বললেন, এভাবে করলে ও খুশি হবে।

দীপাবলী মাথা নাড়ল, বোধ হয় না। ওর সবসময় মনে হবে যে মায়ের মত হয়নি। অথচ হোটেলে এর চেয়ে অখাদ্য মুখ বুজে খেয়ে যায়।

ভদ্রমহিলা হাসলেন, এটাই তো বিপদ। তুমি আর কি ঝগড়া করছ! ওদিকে বাড়িতে যা আরম্ভ হয়েছে তোমাকে কি বলব! একেবারে চুলোচুলি হবার যোগাড়। ওদের যদি আলাদা করে দিতে পারতাম তাহলে স্বস্তি হত।

শাশুড়ি যেন মনের মত প্রসঙ্গ পেয়ে গেলেন। একনাগাড়ে তাঁর বড়বউ-এর নিন্দে করে গেলেন তিনি। দু-একবার মৃদু বাধা দিতে চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিল দীপাবলী। একজনের। সম্পর্কে তার অসাক্ষাতে এমন কটু সমালোচনা করা যে শোভন নয় তা ভদ্রমহিলা কখনই বুঝতে পারবেন না।

দীপাবলী জিজ্ঞাসা করল, আপনি চা খাবেন?

চা? দাও। হুট বলতে তো চলে এলাম।

অতএব রান্নাঘরে ঢুকল দীপাবলী। ভদ্রমহিলা পেছনে পেছনে এসে দরজায় দাঁড়ালেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সবসময় গলা জড়াজড়ি ভাব হবে এমন কেউ ভাবে না। একটু আধটু ঝগড়া না হলে আলুনি হয়ে যায় সব। তবে আমরা অল্প বয়সে এসে ঝগড়ার বদলে ঝগড়া করতে ভয় পেতাম। তাই এবেলার গোলমাল ওবেলাতেই মিটে যেত। তোমরা তো যে যার খুটি ছাড়বে না, এই তো বিপদ।

খুঁটি ছাড়ার ব্যাপার নয়। সব জেনেশুনেও কেউ যদি অবুঝ হয়, অপমান করে, তখন কিছু বলার থাকে না।

ওই তো মুশকিল। বলার না থাকলে খেয়োখেয়ি বাড়ে। তারপর একদিন আলাদা। চটপট বাচ্চা হলে এইসব গোলমাল চাপা পড়ে যায়।

দীপাবলী আড়চোখে শাশুড়িকে দেখল। সে কিছু বলল না। এখন মনের অবস্থা যা তাতে এমন কথা শুনে লজ্জিত হবারও অবকাশ নেই।

সন্ধের মুখে ওরা তিনজন বারান্দায় বসে চা খেল। অলোককে ডেকে এনেছিলেন তার মা। দীপাবলী বসেছিল শাশুড়ির পাশের চেয়ারে, একটু দূরত্ব রেখে। খালি পেটে চা খেতে খুব খারাপ লাগছিল, গা গোলাচ্ছিল। কিন্তু বাকি দুজনের মুখ দেখে মনে হচ্ছিল এই সময়ে চা বেশ উপভোগ্য।

হঠাৎ শাশুড়ি বললেন, তোমার কিন্তু একটা কাজ না করা অন্যায় হয়েছে।

অবাক হয়ে কাল দীপাবলী, কোনটা?

তোমার বিয়ের খবর বাড়িতে দাওনি। এত মাস হয়ে গেল ওঁরা কিছুই জানেন না! যাই হোক না কেন, ওঁরা তো এককালে অনেক করেছেন তোমার জন্যে।

দীপাবলী মাথা নাড়ল, আপনি জানেন না, আমি যাঁকে ঠাকুমা বলি তাঁকে চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু কোন উত্তর পাইনি।

ভদ্রমহিলা ব্যাগ খুললেন, এই দ্যাখো, উনিই লিখেছেন আমাকে।

এগিয়ে ধরা খামটা নিল দীপাবলী। ওবাড়ির ঠিকানায় এসেছে। খামের ওপরে ইংরেজি লেখাটা ঠাকুমার নয়। ভেতরে খাতার পাতা ছেড়া কাগজে ঠাকুমা লিখেছেন, কল্যাণীয়াষু, দীর্ঘকাল অপেক্ষা করার পর নিতান্ত বাধ্য হয়ে এই চিঠি লিখছি। যদি কোন অসুবিধে করে ফেলি তাহলে কিছু মনে করবেন না। আমি দীপাবলীর ঠাকুরমা।

বেশ কয়েকমাস আগে আপনাদের এক পরিচিত মানুষ এখানে এসে দীপাবলী সম্পর্কে খোঁজখবর করেন। আমরা জানতে পারি তিনি দীপাবলীর বিয়ের আগে তার সম্পর্কে জানতে চান। সেইসময় তাঁকে সব কথা অকপটে বলা হয়। কারণ মেয়েদের বিবাহিত জীবনে তার অতীতের কোন ঘটনা লুকিয়ে রাখা উচিত নয়, কোন লাভও হয় না। আমাদের মেয়েটি জীবনে সুখ পায়নি। অথচ আর পাঁচটা মেয়ের চেয়ে সে রূপে-গুণে অনেক ভাল। আমাদের ভুলের বোঝ সে এতকাল বহন করছে। তাই তার বিবাহের খবরে আমরা আনন্দিত হয়েছিলাম। এর কিছুকাল পরে আপনাদের পাঠানো নিমন্ত্রণপত্র পেলাম। সেখানেই আপনার ঠিকানা পেয়েছি। কিন্তু সেই সঙ্গে আমি দুঃখ পেয়েছি এই কারণে যে আমাদের মেয়ে ওই কথা দুলাইন লিখে জনায়নি বলে। শেষবার সে যখন এসেছিল তখন অনেক ভুল বোঝাবুঝি দূর হয়ে গিয়েছিল। তাই সে এমন সুখবর নিজে জানাবে তাই আশা করেছিলাম। কিন্তু সে আশা তো পূর্ণ হয়নি। তার পরেও অনেক মাস কেটে গেল তার কোন খবর নেই। নিমন্ত্রণপত্র যখন ছাপা হয়েছে তখন নিশ্চয়ই তার বিয়েতে কোন অসুবিধে ঘটেনি। সে নিশ্চয়ই আপনার সংসারে বউ হয়ে সুন্দরভাবে সংসার করছে। তবে সে চাকরি করতে ওদেশে গিয়েছিল তাই ঠিক কোথায় আছে তা আমার জানা নেই। আপনি যদি এই চিঠি পেয়ে অনুগ্রহ করে আমাকে তার ঠিকানা জানান তাহলে বড় উপকার হয়। কারণ এই মুহূর্তে তাকে আমার খুব দরকার। ভগবানের আশীর্বাদে নিশ্চয়ই আপনারা সবাই ভাল আছেন। ইতি আপনাদের শুভাকাঙিক্ষনী, দীপাবলির ঠাকুরমা।

সেকেন্ড দশেক চুপ করে থেকে চিঠিটা ফেরত দিল দীপাবলী। শাশুড়ি বললেন, তোমার চিঠি নিশ্চয়ই উনি পাননি। তুমি আজকালের মধ্যেই আবার চিঠি লিখো। আমিও লিখব। তারপর চায়ের কাপ নামিয়ে রেখে বললেন, আমাকে এখনই উঠতে হবে রে।

অলোক বলল, চল।

ভদ্রমহিলা দীপাবলীকে বললেন, এবার থেকে কোন রান্নার ব্যাপারে সমস্যা হলে সোজা আমার ওখানে চলে যাবে।

দীপাবলী মাথা নাড়ল, তার চেয়ে আপনি যদি একজন ভাল রান্নার লোক পাঠিয়ে দেন তাহলে খুব কাজে লাগবে।

কাজের লোক তবু পাওয়া যায় কিন্তু রান্নার লোক দিল্লিতে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। এখানকার লোকের হাতের রান্না তোমারা কেউ খেতে পারবে না। এক, কারও বাড়ি থেকে কোন বাঙালি রাঁধুনি যদি কাজ ছেড়ে দেয় তাহলেই তাকে–। দেখি।

মা এবং ছেলে নেমে গেল। দীপাবলী ওদের যাওয়া দেখল। অলোক তার সঙ্গে একটিও কথা বলেনি আর। চায়ের কাপ-ডিস ধুয়ে মনে হল পেটে চিনচিনে ব্যথা করছে। এটা যে খিদের জন্যে তা বুঝতে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। মনে পড়ল ছেলেবেলায় ঠাকুমাকে দেখেছে নানান তিথিতে সারাদিন না খেয়ে থাকতে। কখনও সেজন্যে তাঁর কষ্ট হচ্ছে বলে মনে হয়নি। বরং না খেয়ে থাকাটাই তাঁর কাছে বেশ আনন্দের ছিল। আর সে। মাত্র দশ ঘণ্টা না খেয়েই পেটে চিনচিনে ব্যথা বাধিয়ে বসল।

দীপাবলী গোটা তিনেক পাউরুটির পিস টোস্ট করে মাখন মাখিয়ে খেয়ে নিল। পেটে জল যাওয়া মাত্র অস্বস্তি কাটল। তারপর সে চিঠি লিখতে বসল। বিয়ের পর সমস্ত খবর জানিয়ে লেখা চিঠিটা কেন ঠাকুমা পায়নি তা বুঝতে পারছিল না সে। চিঠি না পৌঁছানোর কোন কারণ নেই, তবে কি সেটা ঠাকুমার হাতে কেউ দেয়নি? বিবাহের আগে, বিবাহ এবং তার পরবর্তীকালের কথা যতটুকু লেখা যায় ততটুকু জানিয়ে সে চিঠি শেষ করল। খামে ভরে ঠিক করল এবার রেজিস্ট্রি করে পাঠাবে যাতে আর মাঝপথে উধাও হয়ে না যায়। কি ব্যাপারে তাকে ঠাকুমার দরকার তা জানার কৌতূহল বাড়ছিল। খাম বন্ধ করার পরে চুপচাপ বসে রইল দীপাবলী। তাহলে অলোকদের বাড়ি থেকে তার সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছিল। এতে কোন অন্যায় নেই। একটা অজানা অচেনা মেয়ের কথা শুনে তাকে ঘরের বউ করে নিতে কেউ চাইবে না। সে যদি মা হত তবে একই কাজ করত। কিন্তু এটা নিশ্চয়ই অলোকের অজানা ছিল না। আর অলোক ব্যাপারটা ঘুণাক্ষরেও তাকে

জানায়নি কেন?

নিঃশ্বাস ফেলল দীপাবলী, জোরেই, অজান্তে। হঠাৎ তার মনে হল যদি ওরা খোঁজ নিয়ে জানত, সে যা বলেছে তার সঙ্গে পাওয়া খবরের কোন মিল নেই তাহলে কি করত? অলোক কি তার সমস্ত ভালবাসা এক মুহূর্তে বর্জন করত? যতই সত্যি হোক যে-কেউ খোঁজখবর না নিয়ে বিয়ের দিকে এগোয় না। তবু দীপাবলীর মনে হচ্ছিল তার একট পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। আর এই ভাবনাটাই একটা খারাপ লাগা তৈরি করছিল।

অলোক এল ঘণ্টা দুয়েক বাদে। দরজা খুলে দিতেই প্রায় স্বভাবিক গলায় জিজ্ঞাসা করল, কিছু খেয়েছ?

হুঁ।

কি?

খেয়েছি।

অলোকের হাতে বড় প্যাকেট। সেটি থেকে একটা বাক্স বের করে ডাইনিং টেবিলে রাখল, এটায় ফিস ফিঙ্গার, বোনলেস চিকেন কাবাব আর বিরিয়ানি আছে। ফিস ফিঙ্গারটা এখন খেয়ে নেওয়া যেতে পারে।

এভাবে কতদিন চলবে?

দেখা যাক। শোন, উই হ্যাভ এনাফ। আর কোন তর্ক নয়।

অলোক বাথরুমে ঢুকে গেল। দীপাবলী বড় প্লেটে ফিসফিঙ্গার ঢেলে বাকিগুলো রান্নাঘরে নিয়ে গেল। বড় প্যাকেটটা তখনও বেশ ফোলা। সেটায় হাত দিতে একটা ভদকার বোতল বেরিয়ে এল সঙ্গে স্কোয়াশ। দীপাবলী অবাক হল। বাড়িতে বসে মদ্যপান কখনও হয়নি। তাহলে কি অলোক বন্ধুদের আসতে বলেছে?

অলোক তাজা হয়ে বেরিয়ে বলল, বারান্দায় বসব। ভাল হওয়া আছে ওখানে। ছোট টেবিলটা নিয়ে যাচ্ছি তুমি জলের ব্যবস্থা করো।

আয়োজন সম্পূর্ণ হল। দীপাবলী চুপচাপ বসেছিল। গ্লাস আনার সময় অলোক জিজ্ঞাসা করল, তুমি খাবে না?

মাথা নেড়ে না বলল দীপাবলী।

অলোক কাঁধ চাল, একা খেতে খারাপ লাগে। না খাও, একটা হোন্ড করতে তো পারো। আমি তোমাকে সাহেববিবিগোলামের ছোট বউঠানের মত নেশা করতে বলছি না!

দীপাবলী আচমকা নিজেকে পাল্টে ফেলল। সোজা দাঁড়িয়ে বলল, তুমি বসো, আমি নিয়ে আসছি। ওর পরিবর্তনে অলোকের চোখেও বিস্ময় ফুটল।

স্কোয়াশ মেশানো ভদকায় চুমুক দিল দীপাবলী। স্কোয়াশের গন্ধ আড়াল করে রেখেছে অ্যালকোহলকে। তার যখন একটা গ্লাস শেষ হল তখন অলোক চতুর্থটি ভরেছে। ফিসফিঙ্গারের প্লেট খালি। হঠাৎ অলোক বলল, দীপা, ইউ বিলিভ মি, দুপুরে ওসব কথা বলতে চাইনি আমি। বলার জন্যে মনে কোন প্রিপারেশন ছিল না। হঠাৎ বলে ফেললাম। আই অ্যাম সরি।

ঠিক আছে। এবার কি খাবার গরম করব? দীপাবলী উঠে দাঁড়াল।

প্লিজ। চুমুক দিল অলোক, এখন কি আমি একটা রিওয়ার্ড পেতে পারি?

না। দীপাবলী ধীরে ধীরে রান্নাঘরের দিকে চলে গেল।

অলোক সেদিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করল, তুমি মাতালদের ঘেন্না কর। বাট আই অ্যাম নট ড্রাঙ্ক! তাই না? কথাগুলো দীপাবলীর কাছে পৌঁছাল না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *