১২. শুতে বসতে অস্বস্তি

শুতে বসতে অস্বস্তি। টেলিগ্রামের শব্দদুটোর মানে বুঝতে পারছিল না দীপাবলী। আমরা আসছি। অমলকুমার কাকে নিয়ে আসছে? মাসীমাকে? আমরা শব্দটির ব্যাখ্যা। তার কাছে অন্য কিছু হতে পারে না। আর কাউকে নিয়ে এলে অমলকুমার নিশ্চয়ই তার নাম উল্লেখ করত। পয়সা বাঁচাবার জন্যে লোকে টেলিগ্রামে যত কম শব্দ ব্যবহার করুক না কেন মানে তো বোঝাবে!

আর এই আমরা মানে যদি মাসীমা এবং অমলকুমার হন তাহলেও তো ব্যাপারটা বোধগম্য হচ্ছে না। হঠাৎ ওরা তার কাছে আসতে যাবেন কেন? মাসীমাকে তার যথেষ্ট বিচক্ষণ বলে মনে হয়েছে। এককালে রাজনীতি করা কংগ্রেসী ভদ্রলোকের স্ত্রী। তিনি কেন হুট করে সুবিধে অসুবিধে না জেনে এখানে আসতে যাবেন! তাছাড়া টেলিগ্রামে আসার তারিখ জানানো নেই। অমলকুমারকে সে যতটুকু দেখেছে এবং এর চিঠিপত্রে যে স্বভাবের কথা বুঝেছে তাতে স্পষ্ট, সে শমিত নয়। বেখেয়ালী কাজ করা তার স্বভাবের নেই। তাহলে?

অবশ্য এলে কি এমন অসুবিধে হবে? ভেতরের ঘরের খাটে মাসীমাকে নিয়ে সে শোবে, বাইরের ঘরটা ছেড়ে দেবে অমলকুমারের জন্যে। একটু একটু করে ভালই লাগতে আরম্ভ করল ব্যাপারটা ভাবতে। তার কোন আত্মীয় স্বজন নেই, কেউ আসে না তার কাছে, বন্ধুত্বের সম্পর্ককে আত্মীয় বলে বোঝাতে হয় এখানকার মানুষদের। এবার অদ্ভুত সত্যি কথা বলা যাবে। প্রতুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাদার স্ত্রী এবং ছেলেকে, যতই অস্বীকার করুক, বন্দ্যোপাধ্যায় উপাধি লিখে যাওয়া পর্যন্ত আত্মীয় না বলে পারা যাবে না। অমলকুমার কেন তার কাছে আসছে? এই আসাটা বড় বিস্ময়কর।

পরের দিনও আকাশে মেঘ ছিল। টুপটাপ বৃষ্টি ঝরেছিল। আর সেই সঙ্গে হাওয়া। সূর্য-উঠেছিল দুপুর গড়ালে। এবং সেই সূর্য যথেষ্ট শান্ত, ভোল পাল্টে যাওয়া চরিত্র নিয়ে দেখা দিল এবং ডুবে গেল। জায়গাটা হঠাৎ খুব আরামদায়ক বলে মনে হচ্ছিল সবার। এইদিনও অমলকুমারদের কোন হদিশ পাওয়া গেল না। সতীশবাবু জানিয়ে গেলেন, দুদুবার বংশী অর্জুন নায়েকের বাড়ি থেকে ঘুরে এসেছে, তার দেখা পায়নি। লোকটা নাকি কলকাতায় গিয়েছে। অবশ্য সঠিক খবর দেবার লোক নাকি নেই।

পরের দিন ঘুম ভাঙল যে ভোরে সেই ভোরেই আকাশে সাতঘোড়ার পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে। দৌড়ে জানলায় এল সে। এক ফোঁটা মেঘ নেই। একটা শুকনো আকাশে সূর্যদেব মুখ তুলে যেন পৃথিবীর ভেজা চেহারা দেখে বিস্মিত। অর্থাৎ স্বচেহারায় ফিরে যাওয়া প্ৰকৃতি আজ আবার আগের মত কষ্ট দেবে। স্নান সেরে চা খেয়ে দীপাবলী অফিসে এসে দেখল বংশী আর সতীশবাবু এসে গিয়েছেন এর মধ্যে। সতীশবাবু বললেন, লোকে বলে নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল। কেন বলে জানি না। দুদিনের সুখ দিয়ে তিনশো তেষট্টি দিনের যন্ত্রণাকে কি ভোলা যায়?

আপনি কিন্তু শীতের মাসগুলোর কথা ভুলে যাচ্ছেন।

শীত? ওই তো দেড় মাস বড়জোর। তাও দুপুর বেলায় একই রকম।

আমি একটু বংশীকে হাটতলায় পাঠাবো। বংশী, তিরিকে জিজ্ঞাসা করে এসে কি কি লাগবে। একটু বেশী করে এনো। কয়েকজন আত্মীয় আসতে পারেন জলপাইগুড়ি থেকে। মাংস কাটলে নিয়ে এসো। আর তারপরেই খেয়াল হল মাসীমার কথা। তাকে তিনি ডিমের অমলেট দিয়েছিলেন বটে কিন্তু নিজে ঠিকঠাক বিধবার জীবনেই আছেন। সে বলল, নিরামিষ তরকারি যা পাও বেশী করে নেবে অবশ্য কি আর পাবে ওখানে।

সতীশবাবু জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার আত্মীয়রা কি আজই আসছেন?

না, দিন লেখেননি–।

তাহলে বেশী করে আনাচ্ছেন কেন? সব শুকিয়ে যাবে। তেমন বুঝলে বংশী নাহয় একঘণ্টা বাসে চাপবে।

মেনে নিল প্রস্তাবটা দীপাবলী। সঙ্গে সঙ্গে মনে হল বয়স যাই হোক এখনও সংসারী বলতে যা বোঝায় তা হয়ে ওঠা হল না। সতীশবাবু চলে গেলেন এস ডি ও-র অফিসে। এই ভদ্ৰলোককে না পেলে খুব সমস্যা হত তার। অফিসে বসে দীপাবলীর মাথায় অন্য চিন্তা এল। ঠিক এই চাকরি করার কথা সে কি কখনও ভেবেছিল? যে চাকরিতে কাজ প্রায় করতেই হয় না বললে ভাল শোনায়। কখনও উপর তলার কি মর্জি হবে এবং তাঁরা রিপোর্ট চেয়ে পাঠাবেন, সঙ্গে সঙ্গে তা পাঠিয়ে দিলেই হয়ে গেল। কখনও কখনও এলাকায় মানুষজনের জন্যে কিছু ডোল আসে, তা বিলিয়ে দিলেই শান্তি। মাইনে যত কমই হোক এভাবে বসে থাকার কোন মানে হয়? হ্যাঁ, অন্তত এই ব্লকে তার মাথার ওপরে কেউ নেই। এস ডি ও বা ডি এম-এর সঙ্গে রোজ দেখা হচ্ছে না। স্বাধীনতা সম্পূর্ণভাবে তার। কিন্তু কোন সিদ্ধান্ত সে একা নিতে পারে না। ওপরওয়ালারা ইচ্ছে করলে হবে, নইলে নয়। বলা যেতে পারে সব চাকরিতে একই ব্যাপার, নিয়ম মানতেই হয়। কিন্তু ক্রমশ নিজেকে একটা পুতুল বলে মনে হচ্ছিল তার।

এইসময় একটি অ্যাম্বাসাড়ার গাড়িকে আসতে দেখল দীপাবলী জানলা দিয়ে। গাড়িটা যে শহর থকে ভাড়া করে আনা ট্যাক্সি তা বুঝতে অসুবিধে হল না। অমলকুমাররা কি আসছে। দীপাবলী ঘর ছেড়ে অফিসঘরে এসে দেখল চারজন মানুষ গাড়ি থেকে নামছেন। সবশেষে যিনি নামলেন তাঁকে এখানে দেখে সে অবাক।

গাড়ি থেকে নেমে এঁরা চারপাশে নজর বোলাচ্ছিলেন। দীপাবলী এগিয়ে গেল, নমস্কার। আপনি কেমন আছেন?

সুবিনয় সেন চমকে উঠলেন, আরে! তুমি? তুমি এখানে?

চাকরি করছি। এই এলাকাটার তদারকি করার দায়িত্ব আমার ওপরে।

আচ্ছা! তাহলে তো তোমার কাছেই এসেছি আমরা।

আসুন। ভেতরে এসে বলুন।

ওরা এলেন। চেয়ার দেওয়া হল বাড়তি একটা। সুবিনয় সেন তার অফিসঘর দেখে রুমালে মুখ মুছলেন, ডব্লু বি সি এস দিয়েছিলে বুঝি?

হ্যাঁ।

আমি তখনই তোমাকে দেখে বুঝেছিলাম একদিন একটা কাণ্ড করবে।

এটাকে কাণ্ড বলছেন। খুবই সাধারণ চাকরি।

আরে এই চাকরি কজন বাঙালি মেয়ে করে। এত বছর হয়ে গেল স্বাধীনতা পেয়েছি তবু মেয়েরা চাকরি করছে স্কুল কলেজ হাসপাতাল নয়তো সরকারি অফিসে কেরানিগিরি।

আমারটার সঙ্গে কেরানিগিরির পার্থক্য খুব বেশী নেই। বলুন, কি জন্যে আপনার এই পাণ্ডববর্জিত অঞ্চলে আগমন?

ধোপাকে স্বর্গে দেখলেও বুঝবে সে সেখানে কাপড় ধুচ্ছে।

আচ্ছা! এখানে শুটিং করবেন?

হ্যাঁ। এবারে একটু অন্য ধরনের ছবি করছি। আর তেকোণমার্কা প্রেম, ন্যাকামি ভাল লাগছিল না। শ্ৰীবাস্তব সাহেব হঠাৎই এগিয়ে এলেন।

কে শ্ৰীবাস্তব?

শ্ৰীবাস্তব হলেন কলকাতার এক নম্বর অ্যাড্‌ এজেন্সির মালিক। দিল্লী বম্বেতেও অফিস আছে। তোমার এখানে শুটিং করতে হলে কি কি করতে হবে বল চিঠিপত্র এনেছি।

স্বচ্ছন্দে করুন। কোন ঝামেলা হবে না কিন্তু এখানে তো এক ফোঁটা সবুজ নেই। দুদিন একটু বৃষ্টি হল বলে এখনও টের পাচ্ছেন না, দুপুরে বুঝতে পারবেন গরম কাকে বলে। জায়গাটা ঘুরে দেখুন, মত পাল্টে যেতে পারে। আপনার গল্প কি তা অবশ্য আমি জানি না।

তোমার এখানে আসার আগে আমরা অনেকটা ঘুরে দেখেছি, কাল রাত্রে মিস্টার নায়েক যা বলেছেন তার সঙ্গে খুব মিল আছে।

মিস্টার নায়েক? দীপাবলী বিস্মিত।

তাই তো উপাধি ভদ্রলোকের। ডি এমের বাড়িতে ডিনারে আলাপ হল ওঁর সঙ্গে। ডি এম সেন এই জেলা নাকি ওঁর নদর্পণে।

আপনি ডি এমের কাছ থেকে অনুমতি নিলেন না কেন?

ওঁকে চিঠি দিয়েছি। উনি সেটা তোমার রেকমেন্ড করে এখানে পাঠিয়ে দেবেন। আইন অনুযায়ী তোমার কাছেই আসা উচিত।

নিজেকে সামলে নিল দীপাবলী। অর্জুনের নামটা শোনামাত্র মেজাজ চড়েছিল। কিন্তু সুবিনয় সেন বাইরের মানুষ, এখানকার ব্যাপার স্যাপার বুঝবেন না। ওঁকে বলাও ঠিক হবে না। কিন্তু অর্জুন নায়েক তাহলে ডি এমের ডিনারেও নিমন্ত্রিত হয়। নিশ্চয়ই কোন ধান্দায় শহরে বসে আছে তাই এখানে কোন পাত্তা সে পাচ্ছে না।

দীপাবলী জিজ্ঞাসা করল, এখানে শুটিং করবেন যখন তখন অনেক লোক সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে আপনাকে?

হ্যাঁ। তা তো হবেই প্রায় পঞ্চাশ জনের ইউনিট। তবে কয়েকজন আসবে যাবে।

পঞ্চাশ জন মানুষের থাকার ব্যবস্থা কি করবেন?

এসব জায়গায় শুটিং-এ ওটাই সমস্যা। দেখি কি করা যায়। যাহোক, কাজ করতে এসে নিশ্চয়ই তোমার সাহায্য পাব আমি! সুবিনয় সেন হাসলেন।

অবশ্যই।

আমি আর একটু ঘুরে দেখতে চাই, বুঝলে।

কি রকম জায়গা চাইছেন?

ঠিক মুখে বলে বোঝতে পারব না। তুমি একজন স্থানীয় লোককে দিতে পারবে আমাকে গাইড করার জন্যে?

নিশ্চয়ই। দীপাবলী উঠে বাইরের ঘরে এসে দেখল বংশী তখনও দাঁড়িয়ে আছে। তাকে নির্দেশ দিয়ে ফিরে আসার আগেই সুবিনয়বাবুরা বেরিয়ে এলেন। দীপাবলী জিজ্ঞাসা করল, সে কি! এখনই চললেন? একটু চা খাবেন না?

না, না। কাজের সময় দেখবে তোমাকে কি রকম জ্বালাই!

বংশীকে নিয়ে ওরা গাড়িতে উঠছিলেন। শহুরে বাবুদের সঙ্গে একই গাড়িতে উঠতে হচ্ছিল বলে বংশী বেশ সংকুচিত। হঠাৎ সুবিনয় সেন ঘুরে দাঁড়ালেন, মনে হচ্ছে এখনও বিয়ে থা করে সংসারী হওনি?

দীপাবলী হাসল। এবং তৎক্ষণাৎ মনে হল অফিসের বাবুরা কথাগুলো শুনতে পেল। এরা সবাই মিসেস ব্যানার্জি হিসেবেই তাকে জানে। অবশ্য এও জানে সে বিধবা। কিন্তু সুবিনয়বাবু যে তাকে কুমারী মেয়ে ভেবে প্রশ্ন করলেন তা বুঝতে কারো অসুবিধে হবার কথা নয়। দীপাবলীর হাসিতে জবাব পেয়েই সুবিনয় সেন বলল, তোমার মনে আছে স্টুডিওতে এসে একটা প্রস্তাব করেছিলে আমার কাছে?

দীপাবলীর কপালে ভাঁজ পড়ল। হ্যাঁ, অনেক বছর আগে শমিতকে সঙ্গে নিয়ে স্টুডিও পাড়ায় গিয়ে সুবিনয় সেনের সঙ্গে সে দেখা করেছিল বটে। উনি তখন চাইছিলেন সে ওঁর ছবিতে অভিনয় করুক। দীপাবলী অক্ষমতা জানিয়েছিল পরীক্ষার কারণে। কিন্তু কোন একটা কথায় একটু অপমানিত হয়ে চ্যলেঞ্জ জানিয়েছিল যদি পরে তাকে সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে ফিল্মে অভিনয় করার ব্যাপারে তার আপত্তি নেই। অন্তত একটি ছবিতে সে অভিনয় করবে। এসব মেঘের মত কিংবা বাতাসের মত কবে, কি করে মিলিয়ে গিয়েছে তা এখন নিজেরই খেয়াল নেই। সে আবার হেসে বলল, মনে আছে।

এখন যদি আমি অফার করি তাহলে অ্যাকসেপ্ট করবে?

এখন! এই বয়সে।

বয়স? কত বয়স তোমার হে? সুবিনয় সেন বিরক্ত হলেন, এই তো সেদিন বি এ পরীক্ষা দিচ্ছিলে?

আপনি ভুলে যাচ্ছেন সরকারী চাকরিতে ওসব করা নিষেধ।

অনুমিত নিতে হয়। সে ব্যবস্থা না হয় করা যাবে।

দেখি। ভেবে দেখি।

এখনও ভাবনা। তোমার কিস্যু হবে না। যাই, পরে দেখা হবে। ভদ্রলোক গাড়িতে উঠতেই সেটা ধীরে ধীরে বেরিয়ে গেল।

নিজের টেবিলে বসে কিছুক্ষণ চুপচাপ রইল সে। সত্যি আর কি হল না। এই সহজ। সত্যিটা কি সরল গলায় বলে গেলেন সুবিনয় সেন। এই চাকরি তাকে কোথাও নিয়ে যাবে না। সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা প্রশ্ন মনে এল, কোথায় যেতে চায় সে? আশ্চর্য, উত্তরটাই তার জানা নেই। হয়তো পৃথিবীর কোন মানুষই জানে না কোথায় সে পৌঁছাতে চায়! শুধু জানে, বহুদূর পথ যেতে হবে। এইটুকু।

এখন মনে হচ্ছে পথ বদলানো দরকার। এই শ্লথ পথ তার নয়। নিরাপদে ঘুমানো, খাওয়া এবং সঞ্চয়ের জীবন যাপন করতে যেসব চাকরিজীবী স্বপ্ন দ্যাখে সে কি নিজেকে তাদের দলে কখনও ফেলেছিল! সত্যসাধন মাস্টার বলতেন, দীপা, তুমি অনেক বড় হবা। ইউ মাস্ট গো টু দি টপ! এই চাকরি করে শীর্ষে পৌঁছাতে হয়তো একটা পুরো জীবন শেষ হয়ে যাবে। এবং এর শেষ কোথায়? রাইটার্সের আন্ডার সেক্রেটারি বা ডেপুটি? কিন্তু প্রতিযগিতামূলক পরীক্ষার ফল যখন নির্দেশ করল দীপাবলীর কপালে এই চাকরির শিকে ছিড়েছে তখন হৃদয় ময়ূরের মত নেচে উঠেছিল। ঢেউ থেমে গেলে জল থিতিয়ে এলে ক্রমশ একধরনের অবসাদের অক্টোপাস জড়িয়ে ধরছে তাকে। কিন্তু এই চাকরি ছেড়ে সে যাবেই বা কোথায়? তার চাকরিজীবনের উপার্জনের একটা বড় অংশ প্রতিমাসের মনিঅৰ্ডারে চলে যাচ্ছে। সঞ্চয় তো তেমন কিছু নেই। বড়জোর মাস ছয়েক চলতে পারে। আর যাই হোক শমিতের জীবন সে কখনই যাপন করতে পারবে না।

দুদিন বাদে বিকেল ফুরিয়ে অর্জুন এল। দিনটা ছিল ছুটির। দীপাবলী মাঠে দাঁড়িয়ে ছিল। সূর্যের তাপ এখনও পর্যন্ত আগের চেহারা নিতে পারছে না। কারণ কিছু দলছুট মেঘ এসে পড়ছে ঝাঁক বেঁধে মাঝেমধ্যে। বৃষ্টি হচ্ছে না কিন্তু ছায়া টেনে আনছে। আজ সকালে ঘুম ভাঙার পর দীপাবলী আবিষ্কার করেছিল সেই ন্যাড়া গাছটায় কোন আশ্চর্য জাদুতে পাতা গজাবার চেষ্টা চলছে। দুদিনের বৃষ্টিতে সে যেন ভরাট হয়ে গিয়েছে। এই দিগন্তবিস্তৃত নিঃস্বতার শরিক ওই ন্যাড়া গাছটা যেন এখন সবুজের প্রতিবাদ আনতে চইছে। দিনের মধ্যে কয়েকবার সে গাছটার দিকে তাকিয়ে লক্ষ করেছে পাতাগুলো কতখানি বড় হল! এই বিকেলে মনে হচ্ছিল একটু যেন ছড়াচ্ছে কিন্তু মনে হওয়াটা নিয়ে সন্দেহ ছিল। এমন সময় একটুও ধুলো না উড়িয়ে অর্জুনের জিপটিকে আসতে দেখল।

জিপ থেকে নেমে দুহাত জোড় করল অর্জুন, নমস্কার ম্যাডাম। এসেই খবর পেলাম আপনি আমাকে জরুরী তলব করেছেন। কি অন্যায় করেছি বলুন!

দীপাবলী বলল, আজ রবিবার। আপনি আগামীকাল আসুন। তখনই অফিসিয়াল কথা বলা যাবে। ছুটির দিনে কাজের কথা বলতে চাই না।

বাঁচা গেল। অন্তত আজকের দিনে আপনার সঙ্গে ঝগড়া হবে না। কেমন আছেন। বলুন? বৃষ্টিটা কি রকম এনজয় করলেন? যেন সমস্যামুক্ত হল অর্জুন।

এখানে বৃষ্টি পেলে নিশ্চয়ই ভাল লাগে। কথাগুলো বললেও নিজের ওপর বিরক্ত হল দীপাবলী। লোকটাকে দেখেই বিরক্ত হয়ে কাজের কথা না বলার ঘোষণা না করলেই হত। এখন ও এইরকম খেজুরে আলাপ করে যাবেই। চেষ্টা করেও তো অভদ্র হওয়া যায় না মাঝে মাঝে।

গ্রান্ড! ভাবতে পারছি না এখানে এমন বৃষ্টি হতে পারে। লোকে কি বলছে তা নিশ্চয়ই এর মধ্যে শুনে ফেলেছেন?

কি বলছে?

আপনি মূৰ্ত্তিমতী দেবী বলেই ঈশ্বর এমন বৃষ্টি ঢেলেছেন। যাহোক, আপনার সঙ্গে নিশ্চয়ই শুটিং পার্টির দেখা হয়েছিল? গুড। কলকাতার লোকগুলো এখানে এসে শ্যুটিং করলে একটাই লাভ, এখানকার গরীব মানুষগুলো কাজ পেতে পারে, কিছু কাঁচা পয়সা হাতে পাবে। আপনি নিশ্চয়ই আপত্তি করেননি?

আমার আপত্তির কোন প্রশ্ন কি ওঠে মিস্টার নায়েক? ডি এমের ডিনারে বসে আপনিই তো ওদের ঢালাও অনুমতি দিয়েছেন।

আমি! আমি অনুমতি দেবার কে?

সেকি? আপনিই তো এখানকার বাতাস, আকাশ, জীবন। গলায় ব্যঙ্গ আনল দীপাবলী।

যাঃ। আপনি অযথা বাড়িয়ে কথা বলছেন। যেন সত্যি সত্যি লজ্জিত হল অর্জুন।

ভেবেছিলাম আজ আপনার সঙ্গে কাজের কথা বলব না। কিন্তু মনে হচ্ছে আপনি ছাড়বেন না। শুনুন, আপনার লাগানো টিউবয়েলগুলো এর মধ্যে, খারাপ হয়ে গেছে। জানেন নিশচয়ই।

জানি। আমার খুব অবাক লাগছিল আপনি বৃষ্টি মাথায় নিয়ে অতদূরে গিয়ে এই তথ্য জেনে এসেছেন। সত্যি পারেন বটে।

এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কি? দীপাবলী প্রশ্ন করল শক্ত গলায়। লোকটা এর মধ্যে জেনে গেছে তার পরিক্রমার কথা! বলছে তো আজই ফিরেছে।

যন্ত্র তো খারাপ হতেই পারে ম্যাডাম।

কিন্তু এত তাড়াতাড়ি?

সেটা নির্ভর করছ আপনি কিভাবে সেটা ব্যবহার করছেন তার ওপরে।

কিন্তু আপনি সারাতে অস্বীকার করেছেন?

অন্যায় করিনি। ওটা এখন সরকারী সম্পত্তি। আপনার আদেশ ছাড়া আমি ওখানে হাত দিতে পারি না। পারি কি?

আমি চাই কালই ওটা ঠিক হয়ে যাক।

আপনার চাওয়া কি সরকারী না বেসরকারী?

মানে?

প্রথমটা হলে আমাকে চিঠি দেবেন। রেকর্ড থাকবে। দ্বিতীয়টা হলে কালই আদেশ পালিত হবে ম্যাডাম।

থমকে গেল দীপাবলী। তারপর বলল, ঠিক আছে চিঠি পাবেন।

আর কোন ত্রুটি?

আপাতত কিছু বলার নেই।

ব্যাস। আমি ভাবলাম কত কিছু ঘটে গেছে। অবশ্য আপনার কাছে এলে আমার বেশ ভাল লাগে। আপনার মধ্যে একটা, কি বলব, অন্যরকম ব্যাপার আছে।

ঠোঁট কামড়াল দীপাবলী।

ওহো, আপনার সেই আত্মীয় ভদ্রলোকটি খুব বুদ্ধিমান কিন্তু।

মানে?

পুলিশ ওঁর খোঁজে হাসপাতালে গিয়ে দ্যাখে তিনি না বলে উধাও হয়েছেন থাকলে ঝামেলা হত। খোদ ডি এম সাহেবের কানে এস পি খবরটা দিয়ে দিয়েছিলেন। কিছুই না, আপনাকে নিয়ে টানাটানি হত।

সেটা হলে আমি বুঝতাম।

তা তো নিশ্চয়ই। কিন্তু আমি ভদ্রলোককে বলেছি আপনাকে বিপদে ফেলা ওঁর উচিত হয়নি। একদিন নেখালিতে গিয়ে উপদেশ দিয়ে উনি কি আর করতে পারবেন।

আপনি ওঁকে বলেছেন মানে?

শহরে যাওয়ার সময় দেখলাম হাটতলায় একজন অচেনা ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছেন। বেশ অসুস্থ মনে হচ্ছিল। জিপ দাঁড় করিয়ে জানতে চাইলাম কোথায় যাবেন? গন্তব্যস্থল এক শুনে তুলে নিলাম জিপে। আরে, আপনি যে এককালে কলকাতায় নাটক করেছেন তা আপনাকে দেখে একেবারেই বোঝা যায় না। ছাড়লেন কেন?

দীপাবলীর বুঝতে বাকি রইল না। অর্জুনের সঙ্গে শহরে যাওয়ার পথে শমিত তার অতীত সম্পর্কে অনেক গল্পই করেছে। নিশ্চয়ই অর্জুনের জানতে বাকি নেই যে সে ওঁর আত্মীয় নয়। অনাত্মীয় এক প্ৰাক্তন বন্ধুকে দুরাত থাকতে দিয়েছে জেনে অর্জুন কি উৎসাহিত বোধ করছে? অৰ্জু। তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দেখে সে বলল, মিস্টার নায়েক, আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে আমি আপনার সঙ্গে আলোচনা করতে চাইছি না।

খুব স্বাভাবিক। আমি এমন উত্তরই আশা করছিলাম।

উঃ। আপনি কি চান বলুন তো?

আপনার কাছে?

হ্যাঁ!

নাথিং। কারণ আমাকে দেওয়ার মত কিছু আপনার নেই।

আপনি কিন্তু লিমিট ক্রশ করছেন।

সত্যি কথা বলছি। এবং নিজেকে জিজ্ঞাসা করে দেখুন, এখন পর্যন্ত আমি সজ্ঞানে আপনার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করিনি। করেছি কি?

আপনার এই ভদ্রতার মুখোশটা আমার ভাল লাগছে না।

শব্দ করে হাসল অর্জুন, এটা যা বলছেন। লাখ কথার এক কথা। তবে আপনার ভাল না লাগলেও মুখোশটাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। নিজেকে অন্যরকম দেখতে লাগছে। যাক এসব কথা। আপনার সহযোগিতা চাই, পাব কি?

কি ব্যাপারে?

এবারের নির্বাচনে আমার এক প্রার্থী কংগ্রেসের টিকিটে দাঁড়াচ্ছে। আপনি নিশ্চয়ই জানেন এখানকার এম এল এ মাস ছয়েক আগে মারা গিয়েছেন।

আমার সহযোগিতা কি জন্যে দরকার?

দরকার। যে লোকটিকে আমি দাঁড় করাচ্ছি তাকে কেউ তেমন চেনে না। আমি চিনিয়ে দিচ্ছি তাই চিনবে। লোকে আমাকে কতটা ভালবাসে জানি না তবে ভয় করে খুব। মুশকিল এখানেই। ব্যালট পেপার বাক্সে ঢোকাবার সময় সেই ভয় কাজ নাও করতে পারে। বরং কেউ বুদ্ধি দিলে সেটা উল্টেও দেওয়া সম্ভব। তাই না?

কিন্তু আমার ভূমিকা কি?

জাস্ট আমি যে মন্দ লোক নই, এখানকার সব কিছুর সঙ্গে আমি জড়িত এবং তা মানুষের ভালর জন্যে, এই কথাগুলো সাধারণের মধ্যে একটু প্রচার করে দিন।

চমৎকার। আপনি নিশ্চয়ই জানেন সরকারী কর্মচারীর রাজনৈতিক প্রচারে অংশ। নেওয়া নিষেধ। আমার দ্বারা এসব হবে না।

না বললে আমি মেনে নেব ভাবছেন কেন?

আচ্ছা। এত যখন নির্বাচন নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন তখন নিজে দাঁড়ালেন না কেন?

আমি উন্মাদ নই, তাই।

তার মানে? হাঁ হয়ে গেল দীপাবলী।

নির্বাচনে জিতে যারা নেতা হবার স্বপ্ন দ্যাখে বিধানসভায় ঢোকার মুখেই তাদের অহঙ্কারের জুতোয় ফোস্কা পড়ে। সেখানে আরও বড় নেতা, যারা মন্ত্রী কিংবা মুখ্যমন্ত্রীর কথাই শেষ কথা। আমার এই দলে যাওয়ার কি দরকার। বরং আমি একটা নেতা তৈরী করেছি যে আমার কথা শুনবে, যা বলব তাই করবে, এতে কম আনন্দ বলুন? যেদিন অবাধ্য হবে সেদিন ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আর একজনকে নেতা বানিয়ে নেব। আড়ালে আবড়ালে থাকলাম অথচ কাজের কাজ হলে গেল। অনুরোধ রাখবেন?

সম্ভব নয়।

ভেবে দেখুন। এত চটপট জবাব দিতে হবে না। অর্জুন নায়েক ফিরে গেল তার জিপের কাছে, এই তল্লাটে একমাত্র আপনাকেই আমি আমার মুখের ওপর অবাধ্য কথা। বলার ক্ষমতা দিয়েছি। তবে এটা নিশ্চয়ই জানেন ধৈর্য জিনিসটার একটা সীমা আছে। আশা করি আমাকে সীমা অতিক্ৰম করিয়ে ছাড়বেন না।

অর্জুনের জিপ বেরিয়ে গেলে সন্ধে নামল। একে কি বলে শাসনো! সরাসরি বলে যাওয়া, হয় আমার হয়ে কাজ করো না হয় তোমার ব্যবস্থা আমি নিচ্ছি। কি করতে পারে অৰ্জুন? ওপরতলার সঙ্গে ওর যা দহরম মহরম তাতে যেকোন মুহূর্তে ট্রান্সফার করিয়ে নিজের পছন্দমত লোক আনতে পারে। অবাধ্য হলে ছুঁড়ে ফেলে দিতে ও যে দ্বিধা করে না তা জানিয়ে গেল। হঠাৎ মনে হল এই জেলায় একমাত্র তাকেই সে অধিকার দিয়েছে মুখের ওপর কটুকথা বলার, এইটে বলে অর্জুন কি করুণা দেখাতে চাইল! যে লোকের প্রতি রাত্রে। নারী এবং মদ ছাড়া চলে না সেই নোক মজা দেখছে তাকে কিছু ক্ষমতা দিয়ে! যেন এই ক্ষমতা সরকার তাকে দেননি। সরকারী অফিসার হিসেবে সে কিছুই করতে পারে না। এখানে। এস ডি ও থেকে ডি এম যদি অর্জুনের কথায় ওঠাবসা করেন তবে তাকে একজন। জুনিয়র অফিসার হিসেবে সেই পথ ধরতে হবে?

সারাটা সন্ধে মাথার ভেতরে যেন দুরমুশ চলল। হঠাৎ সে স্থির করল, এখন এই রাত্রে অর্জুনের বাড়িতে যাবে। লোকটাকে সে স্পষ্ট জানিয়ে আসবে যেহেতু কোন ব্যক্তিগত স্বার্থ নেই তাই অর্জুনের শাসনিকে সে পরোয়া করে না। শিরায় শিরায় যেন তাপ প্রবাহ বইছিল দীপাবলীর। সে তিরিকে বলল, তুই জানিস অর্জুন নায়েকের বাড়িটা কোথায়?

হ্যাঁ। হাটতলা ছাড়িয়ে ওদিকে গেলে দোতলা বড় বাড়িতে বাবু থাকে। ওদিকে ওই একটাই বড় দোতলা বাড়ি। কেন?

দরকার আছে। তুই দরজা বন্ধ করে দে। আমি একটু ঘুরে আসছি। তিরিকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে টর্চ দিয়ে বেরিয়ে পড়ল দীপাবলী। অৰ্জুন সম্পর্কে তিরির যে আতঙ্ক তাতে জানলে কিছুতেই আসতে দেবে না।

মাঠ পেরিয়ে বড় রাস্তায় আসছিল টর্চের লম্বা আলো ফেলে। মাঝে মাঝে দু-একটা লরি ছুটে যাচ্ছে রাস্তা দিয়ে। হাটতলায় পৌঁছে দেখল জায়গাটা জমজমাট। হ্যারিকেন, হ্যাজাক, গ্যাস বাতি জ্বলছে দোকানে দোকানে। কেউ একজন সিটি দিল। দীপাবলী দাঁড়িয়ে পড়ল। সিটিটা যে তাকে দেখেই দেওয়া হয়েছে তা বুঝতে অসুবিধে হল না। এইসময় কেউ একজন কোন দোকান থেকে ধমকে উঠল, এই শালা, চোখের মাথা খেয়েছিস? কাকে দৈখে সিটি দিচ্ছিস জানিস? মেমসাহেব। ব্লকের।

সঙ্গে সঙ্গে উল্লাস চাপা পড়ে গেল। কেউ কেউ বাইরে বেরিয়ে তাকে দেখতে লাগল। একজন সেলাম পর্যন্ত করে ফেলল। ইউনিফর্ম পরা একজন সেপাই চায়ের দোকান থেকে বেরিয়ে এসে তাকে লম্বা স্যালুট করে বলল, হুকুম করুন মেমসাব।

আমি তো তোমাকে ডাকিনি।

না, যদি কোন প্রয়োজন হয়। এত রাত্রে–।

চটজলদি ভেবে নিয়ে দীপাবলী জিজ্ঞাসা করল, অৰ্জুন নায়েকের বাড়ি কোথায়?

ওই তো ওদিকে। যাবেন?

হ্যাঁ। নির্বাচনের ব্যাপারে কিছু কথা বলা দরকার।

এইসময় রোগা মতন একটি ঢাঙা লোক বললে, পাবেন না। দাদা তো আমাকে জেতাবার জন্যেই মাতলিকে নিয়ে এইমাত্র টাউনে চলে গেলেন।

হ্যাজাকের আলোয় লোকটির মুখ দেখল সে। বসন্তের গর্তখেড়া মুখ। পরনে মলিন পাজামা শার্ট। দেখে মনে হয় বিদ্যে বেশী পেটে পড়েনি আজ পর্যন্ত। সেপাইটি পরিচয় করিয়ে দিল, এ হল দিবাকর। দাদা একেই ইলেকশনে দাঁড় করিয়েছেন। আর কদিন বাদেই এম এল এ হবে।

দিবাকর বলল, কিছু বলতে হবে? আমি এখানে রাতভর থাকব। দাদা না ফেরা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। সাক্ষাৎ ভগবান বুঝলেন।

মাথা নাড়ল দীপাবলী। তারপর অত্যন্ত শ্লথগতিতে ফিরে এল নিজের আস্তানায়। অতএব ওই দিবাকর এম এল এ হবে। সেই এম এল একে সেলাম করবে ডি এম, এস ডি ও এবং সে। তাই দেখে মজা পাবে অৰ্জুন নায়েক। মদ ও মেয়েমানুষ নিয়ে যে শহরে। গিয়েছে ভাবী এম এল একে পাহারায় বসিয়ে।

দীপাবলী সাদা কাগজ টেনে নিল। তিনমাসের নোটিস দিতে হয়। সে গোটা গোটা অক্ষরে পদত্যাগপত্র লিখে তিনমাসের নোটিস দিল। সঙ্গে সঙ্গে কেমন হালকা লাগতে শুরু করল। তিরি এসেছিল খাবার দেবে কিনা জানতে। দীপাবলী তার দিকে তাকিয়ে বলল, আমার এখানকার পালা শেষ। এবার চলে যেতে হবে রে।

তিরি বলল, তুমি যেখানেই যাও আমি তোমার সঙ্গে যাব।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *