প্রথম কালান্দার ফকিরের কাহিনী
প্রথম কালান্দার এগিয়ে এসে তার কাহিনী শুরু করলো। শুনুন মালকিন, কেন আমার দাড়ি গোঁফ কামানো। আর কেন একটা চোখ আমার কানা–সেই কাহিনী বলি :
আমার বাবা ছিলেন এক দেশের বাদশাহ। আর আমার চাচাও আর-এক দেশের বাদশাহ। এমনি যোগাযোগ যে, আমার যেদিন জন্ম হয় আমার চাচারও একটি পুত্র সন্তান হয়। সেইদিনই।
অনেক দিন কেটে গেছে। আমরা দু’ভাই তখন যুবক। আমাদের পরিবারের প্রথা ছিলো— কিছুদিন পর পর আমরা পিতৃব্যের কাছে গিয়ে বেশ কিছু দিন কাটিয়ে আসতাম। শেষবারের মতো যেবার আমার চাচার ওখানে যাই, তিনি আমাকে যথেষ্ট আদর যত্ন করেছিলেন। নিত্য আমার জন্য সবচেয়ে ভালো ভেড়ার মাংস রান্না হতো। দুষ্প্রাপ্য সরাব জোগাড় করা হতো, আমরা দু’ভাই মদ্য পান করতে বসতাম। মদ পেটে পড়লে সে বেশ মাতোয়ারা হয়ে উঠতো। একদিন মদের নেশা যখন বেশ জমে উঠেছে, ভাইজান আমার দিলাদরিয়া মেজাজে বললো, তুমি আমার শুধু ভাই নও, প্ৰাণের দোস্ত কি বলো? আমি তোমাকে একটা কথা বলবো কিন্তু তুমি না করতে পারবে না। কিন্তু! বলো, না করবে না?
আমি তখন মদে বিভোর। বললাম, কথা দিচ্ছি না। শুধু আল্লাহর নামে হলফ করে বলছি, তুমি যা বলবে তাই করবো।
এই কথা শোনা মাত্র তডিৎবেগে অন্য ঘরে চলে গেলো সে। একটু পরে এক লাস্যময়ী পরমাসুন্দরী— যুবতীকে নিয়ে আবার ফিরে এলো। তার পরনে মহা দামী জমকালো শাহী পোশাক। দেহে মনমাতানে আতরের খুশবু।
—ভাই জানি, তুমি একে নিয়ে গোরস্তানে গিয়ে ঘুমটি ঘরে গিয়ে চুপটি করে বসে। কেউ যেন টের না পায়। আমি একটু পরে যাচ্ছি।
আমি আর কি বলবো। আগেই আমার কাছে কথা আদায় করে নিয়েছে, ও যা বলবে শুনতে হবে। মেয়েটিকে নিয়ে নির্জন গোরস্তানের মধ্যে ঢুকলাম। তার মাঝখানে একটা ঘুমটি ঘর। সেখানে অপেক্ষা করতে লাগলাম ওর জন্য। একটু বাদে সে এক ঝারি জল, খানিকটা প্লাস্টার আর একটা ছোট কুঠার নিয়ে হাজির হলো। ঘুমটির পাশেই একটা পোল্লাই পাথরের চাই। কুঠার দিয়ে সেই পাথরটা একটু করে কাটতে লাগলো। কাটতে কাটতে বেশ খানিকটা গর্ত বেরোলো যা—পরে সুড়ঙ্গ মতো হয়ে গেছে। আরোও একটু নিচে সরাতেই দেখা গেলো মনোরম এক প্রাসাদপুরি। সিঁড়ি বেয়ে নেমে মেয়েটি চোখের আড়ালে চলে গেলো। ভাই আমাকে বললো, আমি নিচে চলে যাচ্ছি, তুমি পাথরটা চাপা দিয়ে, তারপরে পাথরের টুকরোগুলো সাজিয়ে, প্লাস্টারগুলো দিয়ে লেপে পুছে এমন ভাবে বানাবে যেন, যেমনটি ছিলো তেমনটি দেখতে হয়। আমি ওর কথা মতো সুড়ঙ্গের মুখ বন্ধ করে, যেমনটি ছিলো ঠিক তেমনি ভাবে তৈরি করে, প্রাসাদে ফিরে এলাম। ফিরে শুনলাম, চাচা কোথায় শিকারে বেরিয়েছেন। কখন ফিরবেন, কে জানে! একা একা আর ভালো লাগছিলো না। সারা রাত কেটে গেলো। চাচার ছেলে ফিরলো না দেখে আমি আবার গেলাম সুড়ঙ্গে। কিন্তু তন্ন তন্ন করে খুঁজে তাদের কোন সন্ধান পেলাম না। বিষণ্ণ মনে ফিরে এলাম। এইভাবে সাতটা দিন কেটে গেলো। সে ফিরলো না। আমার আর কিছুই ভালো লাগে না। নাওয়া খাওয়া ভুলে গেলাম। আবার গেলাম সেই সুড়ঙ্গের মধ্যে। অনেক খুঁজলাম। কিন্তু না, কোথাও কোন হদিশ করতে পারলাম না। শেযে ভারাক্রান্ত মনে নিজের দেশে রওনা হলাম।
আমার নিজের শহরে প্রবেশ পথে একদল সশস্ত্ব লোক আমাকে ঘিরে ফেললো। আমাকে ওরা বন্দী করলো। আমি এদেশের শাহজাদা। আমাকে বন্দী করার দরুন অবাক হলাম। দেখলাম, যারা আমাকে বন্দী করেছে, তারা সকলেই আমার এবং বাবার অনুরক্ত বিশ্বাসী কর্মচারী।
ভয়ে বুক শুকিয়ে গেলো। তাহলে? তাহলে আমার বাবার কি হয়েছে? আমি ওদের জিজ্ঞেস করলাম, তোমরা বলো, আমার বাবার কী হয়েছে? সে কেমন আছে?
কিন্তু কেউ জবাব দিলো না। একটু পরে আমার ব্যক্তিগত এক নোকর আমাকে ফিস ফিস করে বললো, তোমার বাবা আর বেঁচে নেই। উজির সেনাপতির সঙ্গে যোগসাজস করে বিদ্রোহ করেছে। এখন এখানকার বাদশাহ তোমার বাবার উজির। আমরা তার আজ্ঞাবহ। তোমাকে বন্দী করে নিয়ে যাওয়ার হুকুম হয়েছে।
বাবার মৃত্যু সংবাদে আমি তখন ভেঙ্গে পড়েছি। ওরা আমাকে নিয়ে হাজির করলো উজিরের সামনে। আমার ওপর এই উজিরের ক্ৰোধ ছিলো বহুদিন ধরে।
অনেকদিন আগে, আমি তখন খুব ছোট, একদিন তীর ধনুক নিয়ে পাখি শিকার করছিলাম। একটা পাখি লক্ষ্য করে তীর ছুড়লাম। লক্ষ্যভ্বষ্ট হয়ে তীরটি পড়ল পাশের বাগানে। ঐ সময় উজির তখন ওই বাগানে পায়চারী করছিলো। তীরটা গিয়ে বিদ্ধ করলো, উজিরের চোখে। বেচারীর একটা চোখ নষ্ট হয়ে গেলো। উজির ক্রুদ্ধ হয়েছিলো। কিন্তু প্রকাশ করতে পারলো না। কারণ সে আমার বাবার কর্মচারী।
আজ আমি বন্দী। তার সামনে দাঁড়াতেই হুকুম দিলো, গর্দান নাও।
আমি শান্ত ভাবে প্রশ্ন করলাম কি আমার অপরাধ?
হুঙ্কার দিয়ে উঠলো সে। চোখের ঠেলিটা দেখিয়ে বললো, এর চেয়ে বড় অপরাধ আর কি হতে পারে?
–কিন্তু সে তো একটা দুর্ঘটনা মাত্র। আমি তো ইচ্ছা করে করিনি! উজির আমাকে তার কাছে যেতে বললো। আমি তার হাতের নাগালের মধ্যে যেতেই নখের খোঁচা মেরে আমার এই চোখটা ঘায়েল করে দিলে সে। যন্ত্রণায় চিৎকার করে পড়ে গেলাম আমি। সেই থেকে চোখটা হারালাম। শুধু চোখটা নষ্ট করেই রেহাই দিলো না সে। আমাকে একটা বাক্সের মধ্যে পুরে জল্লাদকে হুকুম করলো, ওকে বধ্যভূমিতে নিয়ে যা। সেখানে হত্যা করে ওর দেহটা শেয়ার শকুনিদের মুখে ফেলে দিয়ে আয়।
বধ্যভূমিতে এনে বাক্সর ভিতর থেকে আমাকে বের করলো লোকটা।
আমি তখন চোখের যন্ত্রণায় কাতর। এইরকম যন্ত্রণা একদিন উজিরও পেয়েছিলো, কিন্তু সেদিন আমার যন্ত্রণাও কিছু কম হয়নি। একটা মানুষের চোখ নষ্ট করে দেওয়ার অভিযোগে দগ্ধ হয়েছিলাম আমি। কিন্তু আজ সে আমার চোখ কানা করে দিয়েই ক্ষান্ত হলো না, আমাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে প্রতিশোধ নেবে।
জল্লাদ আমার বাবার বিশ্বস্ত ভৃত্য ছিলো। আমাকে বললো, আমি আপনাদের নিমক খেয়েছি। সারা জীবন। আজ নিজের হাতে আপনাকে হত্যা করে নিমকহারামী করতে পারবো না শাহজাদা। আপনাকে ছেড়ে দিচ্ছি, আপনি এদেশ ছেড়ে পালিয়ে যান হুজুর। কিন্তু আবার যদি কখনও ফিরে আসেন, আমার গর্দান যাবে।
চোখটা হারালাম, কিন্তু জানে বাঁচলাম। অনেক দুৰ্গম পথ পাডি দিয়ে আবার আমার চাচার কাছে ফিরে গেলাম। চাচাকে যখন আমার দূর্ভাগ্যের কথা বললাম, তিনি হাপুসা নয়নে কাঁদলেন। বললেন তোমার দুঃখের কথা শুনে আমার বুক ফেটে যাচ্ছে, বাছা। এদিকে আমার দুঃখ আরোও কাহিল করেছে আমাকে। অনেকদিন ধরে আমার ছেলেটা নিখোঁজ। কেউই বলতে পারে না, কি হলো। তোমার বাবার মৃত্যুর জন্য তোমাকে সান্ত্বনা দেবার ভাষা আমার নাই। কিন্তু একটা চোখ হারিয়েও যে তুমি জানটা বাঁচাতে পেরেছে, এজন্য আল্লাহকে সালাম জানাই।
চাচার কথা শুনে আমি আর চুপ করে থাকতে পারলাম না। তার ছেলের কীর্তি কাহিনী সব খুলে বললাম। তাঁকে। সব শুনে তার মুখে হাসি ফুটলো।
গোরস্থানে গিয়ে, অনেক খোঁজাখুঁজির পর সেই সুড়ঙ্গের মুখটা নজরে পড়লো। পাথর সরিয়ে ভেতরে ঢুকলাম। কয়েক ধাপ নিচে নামতেই একটা ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখতে পেয়ে ভয় করতে লাগলো। চাচা আমায় অভয় দিয়ে বললেন, কিচ্ছ ভয় নেই বাছা। আল্লাকে স্মরণ করা, সব ভয় কেটে যাবে।
সেই ধোঁয়ার মধ্যে দিয়ে আমরা এগোতে লাগলাম। শেষে, একটা বিরাট হল ঘরের মধ্যে এসে দাঁড়ালাম। নানা ধরনের খাবার আর দামি দামি সরাবে ভর্তি সারা ঘরটা। একপাশে একটা পালঙ্ক। মনে হলো, মশারীর মধ্যে বিছানায় কারা যেন ঘুমিয়ে আছে। কাছে গিয়ে দেখলাম, চাচার ছেলে আর ঐ মেয়েটা উভয়ে জড়িয়ে ধরে ঘুমে আচ্ছন্ন। মশারীটা তুলে আঁতকে উঠলাম, একি? দুটি দেহই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
চাচা আমার, ডুকরে কেঁদে উঠলেন, এই তোর উচিত। ইনাম মিলেছে রে হারামী, তোর পাপের শাস্তি যে তোকে পেতেই হবে। শুধু জানে মরেই তোর শাস্তির শেষ হবে না। আল্লাহর দরবারে তোর বিচার হবে, সে বিচারে অনন্ত দোজকে যেতে হবে তোকে। আমি তোর বাবা হয়ে এই অভিশাপ দিচ্ছি।
এই বলে পায়ের পয়জার খুলে ওর মাথায় আঘাত করলো চাচা। এমন সময় রজনী অতিক্রান্ত দেখে শাহরাজাদ গল্প থামালো।
পরদিন দ্বাদশ রাত্রি সমাগত। আবার কাহিনী শুরু হলো।
খলিফা, জাফর এবং সেই মেয়েদের সামনে কালাব্দর বলে চলে তার জীবনের বিচিত্র কাহিনী।
আমার চাচা যখন ভাইয়ের মাথায় জুতোরবাড়ি মারলো, দেখলাম তার মাথাটা ছাতু হয়ে গেলো। বিছানার মধ্যে ছড়িয়ে পড়লো খানিকটা কাঠকয়লার গুড়ো আর টুকরো। আমি কেঁদে উঠলাম, চাচার হাতটা চেপে ধরে বললাম, আপনি ক্ষান্ত হোন, এ দৃশ্য কি সহ্য করা যায় চাচা। ওদের দুজনের শরীরই পুড়ে শুধু কাঠকয়লা হয়ে গেছে।
তখন চাচা বললেন, জানো, বাছা, কার পাপে এমন হয়েছে? ওর পাশে যে মেয়েটা দেখছো, ওটা ওর বোন, আমার মেয়ে। ওর এই ব্যভিচার কি আল্লাহ সহ্য করবেন? এতো পাপ দুনিয়া ধারণ করতে পারে না। ছোট বেলা থেকেই সে তার বোনের সঙ্গে এই অনাচার করে আসছে। আমি তাকে অনেক বুঝিয়েছি, শাসন করেছি, কিন্তু কোন ফল হয়নি। আমার চোখকে ফাঁকি দিয়ে আড়ালে আড়ালে তারা দুজনে এক জায়গায় হতো। কিন্তু বাছা, আমার চোখকে ফাকি দিলেই কি তাঁর চোখ এড়ানো যায়? ওকে আমি কতভাবে শাসন করেছি, কত ভয় দেখিয়েছি কিন্তু সব পানি হয়ে গেছে। দুনিয়াতে এরকম কদৰ্য্য কাজ এর আগে কখনও কেউ করেনি, ভবিষ্যতেও কেউ করবে না। আমি তাকে হাজার বার বলেছি, তুমি যদি এসব নোংরামী না ছাড়ো তাহলে পরকালে দোজকের আগুনে দগ্ধ হতে হবে তোমাকে।
কিন্তু এতেও তাকে নিরস্ত করা যায়নি। আল্লাহর ইচ্ছায় আজি সব নোংরামী, ব্যভিচার থেমে গেছে। আমি তাকে ভয় দেখিয়েছিলাম, যা করেছো করেছে, এখনও সময় আছে, বন্ধ করো। না হলে আমি নিজে হাতে তোমাকে খুন করবো। কিন্তু, শোভান আল্লাহ, আমার হাতে আর ওর খুন মাখতে হলো না। ছেলেটার সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটারও মতিভ্বম ঘটেছিলো। সবই শয়তানের খেলা। তা না হলে এমনটা হবে কেন, বাছা। আমি যখন ভাইবোনকে আলাদাভাবে থাকার ব্যবস্থা করলাম, তখন সে গোপনে গোপনে সুড়ঙ্গ কেটে মাটির তলায় এই ঘর তৈরি করেছে। তখন কি সে জানতো, আসলে এটা ঘর না-কবর। আমি যখন শিকার বা অন্য কাজে শহর ছেড়ে কোথাও যেতাম, তখনই তারা দুজন এখানে এসে ব্যভিচার করতো। আগুনে পুড়ে মরেছে, আমি খুব খুশি। পরলোকে আরও বীভৎস শাস্তি অপেক্ষা করছে তাদের জন্যে।
এই বলে চাচা আকুলভাবে কাঁদতে লাগলো। সে কান্না পুত্রশোকের, আমি শান্ত করতে চাইলাম না তাকে। কাঁদুক, আরও কঁদুক। কেঁদে কেঁদে বুকটা হালকা হোক।
চাচা আমার মাথায় তাত রেখে বললেন, বাছা আজ থেকে তুমি আমার ছেলে, তোমার বাবা নিহত হয়েছেন, আজ থেকে আমি তোমার বাবা। চলো, আমরা প্রাসাদে ফিরে যাই।
দরবারে ফিরে এসেই আর এক দুঃসংবাদ শোনা গেলো। যুদ্ধের দামামা বাজছে শহর প্রান্তে। বিদেশী শত্রু শহর আক্রমণ করেছে। সাজ সাজ রাব পড়ে গেলো তখুনি। কিন্তু কোন লাভ হলো না। দুর্বর গতিতে শত্ৰু-সৈন্য শহরের পথে পথে ঢুকে পড়েছে। আমাদের সৈন্যরা প্রস্তুত ছিলো না। এই অতর্কিত আক্রমণে বিপর্যস্ত হয়ে পলায়ন করতে লাগলো। চাচা তার এক সহচরকে প্রশ্ন করলেন, কিছু বুঝতে পারছে, কে আক্রমণ করেছে।
সে বললো, সেই উজির। যে তোমার ভাইকে হত্যা করে তার দেশ-এর বাদশাহ বনেছে, সেই বদমাইসটা–
এ কথা শুনে আমি দিশাহারা হয়ে পড়লাম। কিছুই মাথায় এলো না, সেই মুহুর্তে কি করা উচিত। ভাবলাম, আমি যদি অস্ত্র ধারণ করি তবে সম্মুখ সমরে লড়াই করতে হবে। তার ফল অনিবাৰ্যভাবে খারাপ। উজিরের সৈন্যসামন্ত সবই আমার বাবার পুরোনো লোক। আমাকে দেখা মাত্র ওরা চিনে ফেলবে। আর চিনতে পারার সঙ্গে সঙ্গেই আমাকে হত্যা করবে। সুতরাং ওভাবে বঁচা যাবে না। হঠাৎ আমার মাথায় একটু বুদ্ধি খেলে গেলো। আমার চাপদাডিটা খুর দিয়ে কমিয়ে ফেললাম। তারপর এই ছেড়া কম্বলটা গায়ে জড়িয়ে এক ভিক্ষার পাত্ব হাতে নিয়ে গুটি গুটি করে শহর ছেড়ে বেরিয়ে পড়লাম। অনেক দুৰ্গম পথ হেঁটে, অতি কষ্টে এই বাগদাদে এসে পৌঁছুলাম। শুনেছি। এখানকার বাদশাহ আল্লাহর পয়গম্বর খলিফা হারুন-অল-রাসিদ পরম দয়ালু। তার কাছে গিয়ে অধমের আর্জি পেশ করবো, এই আমার ইচ্ছা। আমার এই দুঃখের কাহিনী শুনে যদি তিনি কিছু দয়া করেন, সেই আশায় এতোটা পথ এসেছি। শহরে যখন ঢুকলাম, সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে। পথঘাট কিছু জানি না। কোথায় যাবো, কি খাবো, কোথায় শোেব কিছুই ঠিক ছিলো না। এক রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে ভাবছি, এমন সময় এই কালান্দার কাছে এসে দাঁড়ালো। তার সঙ্গে কথাবার্তা বলতে বলতে আরও একজন কালান্দার এসে হাজির হলো। আমরা সবাই এখানে বিদেশী। কারুরই কোন আস্তানা নাই। রাতে তিনজনেরই আশ্রয় দরকার। তাই আপনার দরজায় কড়া নেড়েছিলাম আমরা। এই হলে আমার একটা চোখ নষ্ট হওয়া আর দাড়ি গোঁফ কামানোর ইতিবৃত্ত।
বড়বোন সব শুনে খুশি হলো। বললো, আমি সন্তুষ্ট হয়েছি। এবার তুমি মুক্ত, যেখানে ইচ্ছে যেতে পারে।
প্রথম কালান্দার বললো, কিন্তু মালকিন, আমরা সঙ্গের দুজনের কাহিনী না শোনা পর্যন্ত আমি এক পাও নড়ছি না। এখান থেকে।
খলিফা জাফরকে ফিসফিস করে বললেন, এমন সাংঘাতিক ঘটনা একটা মানুষের জীবনে ঘটতে পারে, ভাবা যায় না।