1 of 4

১.০৬ তৃতীয় শেখের কাহিনী

তৃতীয় শেখের কাহিনী

তৃতীয় শেখ বললো, শোনো, আফ্রিদি সম্রাট, আমার কাহিনী আরও মজাদার। এই যে খচ্চরটা দেখছো, এ হচ্ছে আমার বিবি। কাজের তাগিদে, এক সময়, বছরখানেকের জন্যে বিদেশে গিয়েছিলাম। কাজকাম শেষ করে ঘরে ফিরলাম একদিন। রাত তখন অনেক, বাডিতে ঢুকেই বিবির সঙ্গে দেখা করার জন্যে অন্দরে গেলাম। ঘরে ঢুকতে গিয়েই মাথাটা ঘুরে গেলো। দেখি, এক নিগ্রো নফরের কোলে মাথা দিয়ে আমার এই বিবিজান বেশ রসালাপে মত্ত। মুখে চলেছে হাসিমস্করা এবং আদিরসের খেউড়। আর হাতে চলেছে শৃঙ্গার। এই ভাবে ক্রমে ক্রমে উত্তেজিত হয়ে উঠছে দুজনে। আমি দরজার ফাক দিয়ে দেখতে থাকলাম। এমন সময় হঠাৎ আমার ওপর নজর পড়লো আমার বিবির। আর তখুনি তাড়াৎ করে উঠে একটা জলের বাটি তুলে নিয়ে ছুটে এলো আমার দিকে। আমাকে যে কখন দেখে নিয়েছে, বুঝতে পারিনি। জলের বাটিটার ওপর বিড়বিড় করে কি সব মন্ত্র আওড়ালো। আর সেই জল নিয়ে ছিটিয়ে দিলে আমার গায়ে। আর কী আশ্চর্য, সঙ্গে সঙ্গে আমি একটা কুকুর হয়ে গেলাম। তখন সে আমাকে তাডিয়েবাড়ি থেকে বের করে দিলো।

সারা শহর ঘুরে ঘুরে শেষে এক কষাই-এর দোকানে এসে ফেলে দেওয়া কিছু মাংসের হাড়গোড় চিবুতে লাগলাম। দারুণ খিদে পেয়েছিলো আমার। কষাই-এর প্রাণে বোধহয় দয়া হলো।বাড়ি ফেরার সময় আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে গেলো সে।

কষাই-এর কন্যা, আমাকে দেখামাত্ব, নাকাব দিয়ে মুখখানা ঢেকে ভৎসনা করতে লাগলো বাবাকে। তুমি তো জানো বাপজান, পর-পুরুষের সামনে আমি কখনও বেরোই না, তবে একে নিয়ে অন্দরমহলে ঢুকেছো কেন? এতো আর সত্যি সত্যি কুকুর না। একজন পুরুষ মানুষ। একটা শয়তান মেয়েমানুষ। ওকে যাদুমন্ত্র দিয়ে কুকুর বানিয়ে দিয়েছে। তুমি যদি বলো, এখনি আমি ওকে আবার মানুষ করে দিতে পারি।

কষাই বললো, তা হলে মা, তুমি আর দেরি করো না। ওকে এখুনি মানুষ করে দাও। আহা, বেচারার কি কষ্ট!

তখন একটা বাটিতে খানিকটা জল নিয়ে বিড়বিড় করে কি সব মন্ত্র পড়লো সে। তারপর জলটুকু হাতে নিয়ে আমার গায়ে ছিটিয়ে দিতে দিতে আবার কি যেন সব বিড়বিড় করে আওড়ালো। ধীরে ধীরে আমার দেহ রূপান্তরিত হয়ে গেলো আমার আগের চেহারায়। কৃতজ্ঞতায় ভরে গেলো আমার মন। মেয়েটির হাতে ছোট্ট একটা চুম্বন করে বললাম, আমাকে যে শয়তানী যাদু করে রাস্তার কুকুর বানিয়ে কষ্ট দিয়েছে তাকে আমি শায়েস্তা করতে চাই। মন্ত্র দিয়ে তুমি তাকে খচ্চর বানিয়ে দিতে পারো, সুন্দরী?

নিশ্চয়ই পারি। এ আর এমন কঠিন কি কাজ!

তখন কষাই-কন্যা ছোট্ট একটা পাত্রে খানিকটা জল এনে মন্ত্র পড়ে আমার হাতে দিয়ে বললো, যখন তোমার বিবি ঘুমিয়ে থাকবে তখন তার গায়ে এই পানি ছিটিয়ে দিয়ে মনে মনে যা কামনা করবে। সে তাই হয়ে যাবে।

দৈত্য সম্রাট, এই যে খচ্চরটা দেখছো, এ আমার সেই যাদুকরী বিবি।

তখন আফ্রিদি রসিকতা করে জিজ্ঞেস করে, কি গো, তোমার স্বামী যা সব বললো, ঠিক?

তারপর তৃতীয় শেখের দিকে ফিরে বললো, তোমার কাহিনী শুনে খুব খুশি হলাম, শেখ। সওদাগরকে সব গুনাহ থেকে মাফ করে দিলাম। যাও সওদাগর, তোমার ছুটি, তোমাকে খালাস করে দিলাম।

এমন সময় শাহরাজাদ দেখলো, ভোর হয়ে আসছে। গল্প থামিয়ে চুপ করে বসে রইলো সে। কনিষ্ঠা দুনিয়াজাদ আনন্দে গদগদ হয়ে বলে, কি সুন্দর গল্প, দিদি! আর কি মিষ্টি করেই না বলতে পারো তুমি!

এ আর এমনকি? শাহরাজাদ বললো, যদি বেঁচে থাকি তো কাল রাতে আরও মজার কাহিনী শোনাবো।

বাদশাহ ভাবে, বাকী গল্পগুলো না শুনে তো ওকে মারা যায় না! এরপর শহরাজাদ আর শারিয়ার আলিঙ্গনাবদ্ধ হয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। দরবারের সময় সমাগত। শারিয়ার শয্যা ছেড়ে উঠে পড়লো। নিজেকে তৈরি করে নিয়ে চলে গেলো দরবারে। সারাদিন নানা কাজের ব্যস্ততায় কাটে। রাত্রে আবার ফিরে আসে খাসমহলে। শাহরাজাদের শয্যাকক্ষে।

 

দুনিয়াজাদ আব্দার ধরে, এবার তোমার কাহিনী শুরু করো, দিদি!

শাহরাজাদ বলে, এখুনি শুরু করছি, বোন। তারপর শুনুন জাঁহাপনা, সেই তৃতীয় শেখ তার গল্প শেষ করতে আফ্রিদি খুশি হয়ে বললো, তোমার গল্প শুনে খুব ভালো লাগলো, শেখ। সওদাগরের সব অপরাধ মাফ করে দিলাম আমি।

নতুন জীবন ফিরে পাওয়ার আনন্দে সওদাগর তখন কেঁদে ফেলেছে। তিন শেখকে বুকে জড়িয়ে ধরে গভীর কৃতজ্ঞতা জানালো সে। পরে সবাই যে যার দেশের পথে পা বাড়ালো।

কিন্তু এ কাহিনী, শাহরাজাদ বলতে থাকে, সেই ধীবর আর আফ্রিদি দৈত্যের কাহিনীর কাছে কিছু না।

শারিয়ার কৌতুহলী হয়ে প্রশ্ন করে, শোনাও দেখি, কেমন সে কাহিনী? শাহরাজাদ শুরু করে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *