পরের দিন ঘুম ভাঙতে অনেক বেলা হয়েছিল। হয়ত আরো অনেক বেলা হতো। কিন্তু সূর্ষের আলো চোখে পড়ায় আমার ঘুম ভেঙে গেল। পাশের খাটে মেমসাহেব আমার দিকে ফিরে–শুয়েছিল। সূর্যের আলো ওর চোখে পড়ছিল না। মনে হলো মহানন্দে স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছে।
ওর ঘুম ভাঙাতে আমার মন চাইল না। ও এত নিশ্চিন্তে, শান্তিতে ঘুমুচ্চিল যে দেখতে বেশ লাগছিল। বহুক্ষণ ধরে শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলাম। তারপর উঠে বসে আরো ভাল করে দেখলাম। ওর সর্বাঙ্গের পর দিয়ে বার বার চোখ বুলিয়ে নিলাম। একটু হয়ত হাত বুলিয়ে দিয়েছিলাম ওর গায়।
মনে মনে কত কি ভাবলাম। ভাবলাম, এই মেমসাহেব। এই আমার জীবন-নাট্যের নায়িকা। এই সেই চপলা, চঞ্চল বালা যে আমার জীবন ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়েছে? এই সেই শিল্পী যে আমার জীবনে সুর দিয়েছে, চোখে স্বপ্ন দিয়েছে। ভাবলাম, এই সেই, মেয়ে যে আমার জীবনে না এলে আমি কোথায় সবার অলক্ষ্যে হারিয়ে যেতাম, শুকনো পাতার মত কালবৈশাখীর মাতাল হাওয়ায় অজানা ভবিষ্যতের কোলে চিরকালের জন্য লুকিয়ে পড়তাম?
ভাবতে ভাবতে ভারী ভাল লাগল। ওর কপালের পর থেকে চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে একটু আদর করলাম।
মেমসাহেব কান্ত হয়ে শুয়েছিল। ওর দীর্ঘ মোটা বিনুনিট কঁধের পাশ, বুকের পর দিয়ে এসে বিছানায় লুটিয়ে পড়েছিল। আমি মুগ্ধ হয়ে আরো অনেকক্ষণ চেয়ে রইলাম। ওর ছন্দোবন্ধ দেহের চড়াই-উতরাই দেখে যেন মনে হলো প্ৰাক্সিটলীসএর ভেনাস বা সাঁচীর যক্ষী টর্সো! নাকি খাজুরাহো’র নায়িকা, অজন্তায় মারকন্যা!
মনে পড়ল ঈতার প্রতি মিলটনের কথা-O fairest of creation last and best, of all God’s works’
ঈভার মত মেমসাহেব নিশ্চয়ই অত সুন্দরী ছিল না কিন্তু আমার চোখে আমার মনে সে তো অনন্যা। আমার শ্যামা মেমসাহেবকে মুগ্ধ হয়ে দেখলাম অনেকক্ষণ। ভাবলাম বাইবেলের মতে তো নারীই ভগবানের শেষ কীর্তি, শ্ৰেষ্ঠ কীর্তি। কিন্তু সবাই কি মেমসাহেব হয়? দেহের এই মাধুৰ্য, চোখে এমনি স্বপ্ন, চরিত্রে এই দৃঢ়তা, মনের এই প্ৰসারতা তো আর কোথাও পেলাম না।
ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও যেন ও আমাকে ইশারা করল। মনে হলো যেন ডাক দিল ওগো, কাছে এসো না, দূরে কেন? তুমি কি আমাকে তোমার বুকের মধ্যে তুলে নেবে না?
আমি হাসলাম। মনে মনে বললাম, পোড়ামুখী তুই তো জানিস না, তোকে বেশী আদর করতেও আমার ভয় হয়। তোকে বেশীক্ষণ বুকের মধ্যে ধরে রাখলে জ্বালা করে, ভয় ধরে।
ভয়?
হ্যাঁ, হ্যাঁ, ভয়। ভয় হবে না? যদি কোনদিন কোন কারণে কোন দৈবদুর্বিপাকে আমার বুকটা খালি হয়ে যায়? তখন?
ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই মেমসাহেব ওর ডান হাতটা আমার কোলের ’পর ফেলে একটু জড়িয়ে ধরবার চেষ্টা করল। যেন বলল, না গো, না, আমি তোমাকে ছেড়ে কোত্থাও যাব না।
আমি মেমসাহেবকে একটু কাছে টেনে নিলাম, একটু আদর করলাম।
ঐ সকালবেলার মিষ্টি সূর্যের আলোয় মেমসাহেবকে আদর করে বড় ভাল লাগল। কিন্তু আনন্দেয় ঐ পরম মুহুর্তেও একবার মনে হলো, সন্ধ্যায় তো সূৰ্য অস্ত যায়, পৃথিবীতে তো অন্ধকার নেমে আসে।
জান দোলাবৌদি, ঐ হতচ্ছাড়ী মেয়েটাকে যখনই বেশী করে কাছে পেয়েছি তখনই আমার মনের মধ্যে ভয় করত। কেন করত তা জানি না কিন্তু আজ মনে হয়–
থাকগে। ওসব কথা বলতে শুরু করলে আবার সব কিছু গুলিয়ে যাবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তোমাকে আমার মেমসাহেবের কাহিনী শোনাতে হবে। সময় ঝড়ের বেগে এগিয়ে চলেছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটা শুভলগ্নে আমাকে তো তোমার পাত্রীস্থ করতে হবে। তাই না? তাছাড়া আমারও তো বয়স বাড়ছে। বয়স বেশী হয়ে গেলে কি আমার কপালে কিছু জুটবে?
ঐ অরণ্য-পৰ্বত-লেকের ধারের রাজপ্রাসাদে দুটি দিন, দুটি রাত্রি স্বপ্ন দেখে আমরা আবার দিল্লী ফিরে এলাম। ফিরে এলাম ঠিকই কিন্তু যে মেমসাহেব। আর আমি গিয়েছিলাম। সেই আমরা ফিরে এলাম না। ফিরে এলাম সম্পূর্ণ নতুন হয়ে।
দিল্লীতে ফিরে এসে মেমসাহেব একটি মুহুৰ্তও নষ্ট করে নি। সংসার পাতার কাজে মেতেছিল। একটা স্কুটার রিক্সা নিয়ে দুজনে মিলে দিল্লীর পাড়ায় পাড়ায় ঘুরেছিলাম ভবিষ্যতের আস্তান পছন্দ করবার আশায়। ৰুরোলবাগ, ওয়েস্টার্ন এক্সটেনশন, নিউ রাজেন্দ্রনগর, ইস্ট প্যাটেল নগর থেকে দক্ষিণে নিজামুদ্দীন, জংপুর, ডিফেন্স, সাউথ একসটেনশন, কৈলাস, হাউসখাস, গ্ৰীনপার্ক পর্যন্ত ঘুরেছিলাম। সব দেখেশুনে ও বলেছিল, গ্ৰীনাপার্কেই একটা ছোট্ট কটেজ নেব। আমরা।
এত জায়গা থাকতে গ্রানিপার্ক?
শহর থেকে বেশ একটু দূরে আর বেশ ফাঁকা ফাঁকা আছে।
বড্ড দুর।
তা, হোক। তবুও থেকে শান্তি পাওয়া যাবে।
তা ঠিক।
পরে আবার বলেছিল, দুতিন মাসের মধ্যেই বাড়ি ঠিক করবে। তারপর একটু গোছগাছ করে নিয়েই আমরা সংসার পাতব।
হাত দিয়ে আমার মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে মেমসাহেব জিজ্ঞাসা করল, কেমন? তোমার আপত্তি নেই তো?
আমি মাথা নেড়ে বলেছিলাম, না।
আরো দু’চারটি কি যেন কথাবার্তা বলার পর ও আমার গলাটা জড়িয়ে ধরে বলল, দেখ না, বিয়ের পর তোমাকে কেমন জব্দ করি।
কি জব্দ করবে? আজেবাজে খাওয়া-দাওয়া ফালতু আডা দেওয়া সব বন্ধ করে দেব।
তাই বুঝি?
তবে কি?
এবার আমিও একটা হাত দিয়ে ওর গলাটা জড়িয়ে ধরে বললাম, আর কি করবে মেমসাহেব?
আধো আধো গলায় উত্তর দিল, সব কথা বলব কেন?
তাই বুঝি?
তবে কি? বাট ইউ উইল সী আই উইল মেক ইউ হ্যাপি।
তা আমি জানি। তবে মাঝে মাঝে আমার ভয় হয়।
কি ভয় হয়?
আমি ওর কানে কানে ফিসফিস করে বললাম, আমি বোধহয় স্ত্রৈণ হবো!
মেমসাহেব আমাকে একটা ধাক্কা দিয়ে বললে, বাজে বকো না।
একটু মুচকি হাসলেও বেশ সিরিয়াসলি বললাম, বাজে না মেমসাহেব। বিয়ের পর বোধহয় তোমাকে ছেড়ে আমি পার্লামেন্ট বা অফিসেও যেতে পারব না।
এবার মেমসাহেব একটু মুচকি হাসে। বললে, চব্বিশ ঘণ্টা বাড়ি বসে কি করবে?
আবার কানে কানে ফিসফিস করে বললাম, তোমাকে নিয়ে শুয়ে থাকব।
ও হেসে বললে, অসভ্য কোথাকার! একটু থেমে আবার বললে, শুতে দিলে তো?
আমি বললাম, শুতে না দিলে আমি চীৎকার করে, কান্নাকাটি করে। সারা পাড়ায় জানিয়ে দেব।
মেমসাহেব এবার আমার পাশ থেকে উঠে পড়ে। মুখ টিপে হাসতে হাসতে বললে, বাপরে বাপ! কি অসভ্য।
আমি দৌড়ে গিয়ে ওকে ধরতে গেলাম। ও ছুটে বারান্দায় বেরিয়ে যাবার চেষ্টা করল, পারল না। আঁচল ধরে টানতে টানতে নিয়ে এলাম সোফার ওপর। যদি বলি এখনই……
হাতে ঘুষি পাকিয়ে বললে, নাক ফাটিয়ে দেব।
সত্যি?
এমনি করে মেমসাহেবের দিল্লীবাসের মেয়াদ ধীরে ধীরে শেষ হয়ে গেল। রবিবার বিকেলে ডিলুক্স এয়ার কণ্ডিসনড এক্সপ্রেসে কলকাতা চলে গেল। ওয়েস্টার্ন কোর্ট থেকে স্টেশন রওনা হবার আগে মেমসাহেব আমাকে প্ৰণাম করল, আমার বুকে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরে একটু কাঁদল।
আমি ওকে আশীৰ্বাদ করলাম, আদর করলাম, চোখের জল মুছিয়ে দিলাম।
এক সপ্তাহ ধরে দুজনে কত কথা বলেছি কিন্তু সেদিন ওর বিদায় মুহুর্তে দুজনের কেউই বিশেষ কথা বলতে পারিনি। আমি শুধু বলেছিলাম, সাবধানে থেকে। ঠিকমত চিঠিপত্র দিও।
ও বলেছিল, ঠিকমত খাওয়া-দাওয়া করে। তোমার শরীর কিন্তু ভাল না।
শেষে নিউ দিল্লী স্টেশনে ট্রেন ছাড়ার ঠিক আগে বলেছিল, তুমি কিন্তু আমাকে বেশীদিন একলা রেখো না। কলকাতায় আমি একলা থাকতে পারি না।
মেমসাহেব চলে গেল। আমি আবার ওয়েস্টার্ন কোটের শূন্যঘরে ফিরে এলাম। মনটা ভীষণ খারাপ লাগল। খেতে গেলাম না। ডাইনিং হলে আমাকে দেখতে না পেয়ে গজানন এলো আমার ঘরে খবর নিতে। আমাকে অনেক অনুরোধ করল কিন্তু তবুও আমি খেতে গেলাম না। বললাম, শরীর খারাপ। গজানন আমার মনের অবস্থা নিশ্চয়ই উপলব্ধি করেছিল। সেজন্য সেও আর দ্বিতীয়বার অনুরোধ না করে বিদায় নিল।
কলকাতা থেকে মেমসাহেবের পৌঁছনো সংবাদ আসতে না আসতেই আমি আবার কাজকর্ম শুরু করেছিলাম। পুরো একটা সপ্তাহ পার্লামেণ্ট যাইনি, সাউথ ব্লক-নর্থ ব্লক যাইনি, মন্ত্রী-এম-পি-অফিসার-ডিপ্লোম্যাট দর্শন করিনি। এমন কি টাইপ রাইটার পৰ্যন্ত সম্পর্শ করিনি।
দু’একদিন এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করলাম। কিন্তু বিশেষ উল্লেখযোগ্য কোন খবর-টাবর পেলাম না। পার্লামেণ্টে তখন আকশাই চীন সড়ক নিয়ে ঝড় বইছিল প্ৰায়ই। প্ৰাইম মিনিস্টারও বেশ গরম গরম কথা বলছিলেন মাঝে মাঝেই। দু’চারজন পলিটাসিয়ান যুদ্ধ করবার পরামর্শ দিলেও প্রাইম মিনিস্টার তা মানতে রাজী হলেন না। অথচ এইভাবে বক্তৃতার লড়াই কতদিন চলতে পারে? অল ইণ্ডিয়া রেডিও আর পিকিঙ বেতারের রাজনৈতিক মল্লযুদ্ধ তেতো হয়ে উঠেছিল। লড়াই করার কোন উদ্যোগ, আয়োজন বা মনোবৃত্তি সরকারী মহলে না দেখায় আমার মনে স্থির বিশ্বাস হলো আলোচনা হতে বাধ্য।
দু’চারজন সিনিয়র ক্যাবিনেট মিনিস্টারের বাড়িতে আর অফিসে কয়েকদিন ঘোরাঘুরি করে কোন কিছুর হদিশ পেলাম না। শেষে সাউথ ব্লকে ঘোরাঘুরি শুরু করলাম। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারী ও স্পেশ্যাল সেক্রেটারীকেও তেল দিয়ে কিছু ফল হলো না।
শেষে আশা প্ৰায় ছেড়ে দিয়েছি। এমন সময়—
আফ্রিকা ডেক্সের মিঃ চোপরার সঙ্গে আড্ডা দিয়ে বেরুতে বেরুতে প্ৰায় সাড়ে ছাঁটা হয়ে গেল। বেরুবার সময় প্ৰাইম মিনিস্টারের ঘরের সামনে উঁকি দিতে গিয়ে দেখলাম, প্ৰাইম মিনিস্টার লিফট’এ ঢুকেছেন। আমি তাড়াতাড়ি হুড়মুড় করে লাফাতে লাফাতে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এলাম।
প্ৰাইম মিনিস্টার গাড়ির দরজার সামনে এসে গিয়েছেন, পাইলট তার মোটর সাইকেলে স্টার্ট দিয়েছে, আয়ারলেস আর সিকিউরিটি কারও স্টার্ট দিয়েছে কিন্তু চলতে শুরু করে নি, এমন সময় ফরেন সেক্রেটারী প্ৰায় দৌড়তে দৌড়তে এসে হাজির হলেন। কানে কানে প্ৰাইম মিনিস্টারের সঙ্গে কি যেন কথা বললেন। প্ৰাইম মিনিস্টার আর ফরেন সেক্রেটারী আবার লিফটএ চড়ে উপরে চলে গেলেন।
আমি একটু পাশে দাঁড়িয়ে সব কিছু দেখলাম। বুঝলাম, সামথিং ভেরী সিরিয়াস অথবা সামথিং ভেরী আর্জেণ্ট। তা নয়ত ঐভাবে ফরেন সেক্রেটারী প্ৰাইম মিনিস্টারকে অফিসে ফেরত নিয়ে যেতেন না।
আমি প্ৰাইম মিনিস্টারের অফিসের পাশে ভিজিটার্স রুমে বসে রইলাম। দেখলাম, বিশ-পাঁচিশ মিনিট পরে প্রাইম মিনিস্টার আবার বেরিয়ে গেলেন। প্ৰাইম মিনিস্টারকে এবার দেখে মনে হলো, একটু যেন স্বস্তি পেয়েছেন মনে মনে।
আমি আরো কয়েক মিনিট অপেক্ষা করলাম। দেখলাম প্রাইম মিনিস্টার চলে যাবার পর পরই চায়না ডিভিশনের জয়েণ্ট সেক্রেটারী মিঃ মালিক ফরেন সেক্রেটারীর ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন।
আমার আর বুঝতে বাকি রইল না চীন সম্পর্কেই কিছু জরুরী খবর এসেছে।
সেদিনকার মত আমি বিদায় নিলাম। পরের দিন থেকে মিঃ মালিকের বাড়ি আর অফিস ঘুরঘুর করা শুরু করলাম। তবুও কিছু সুবিধা হলো না।
শেষে ইউনাইটেড নেশনস ডিভিশনের এক’জন সিনিয়র অফিসারের কাছে খবর পেলাম সীমান্ত বিরোধ আলোচনার জন্য চীনা প্ৰধানমন্ত্রী চৌ এন-লাইকে দিল্লী আসার আমন্ত্রণ জানান হয়েছে এবং তিনি তা গ্ৰহণ করেছেন।
খবরটি সে বাজারে প্রায় অবিশ্বাস্য হলেও যাচাই করে দেখলাম, ঠিকই। দিল্লীর বাজার তখন অত্যন্ত গরম কিন্তু তবুও আমি খবরটা পাঠিয়ে দিলাম। ট্রাঙ্ককাল করে নিউজ এডিটরকে ব্রিফ করে। দিলাম। পরের দিন ডবল কলম হেডিং দিয়ে সেকেণ্ড লীড হয়ে ছাপা হলো, চৌ এন-লাই দিল্লী আসছেন।
এই খবরটা দেবার জন্য প্ৰায় সবাই আমাকে পাগল ভাবল। আমার এডিটরের কাছেও অনেকে অনেক বিরূপ মন্তব্য করলেন। এডিটর চিন্তিত হয়ে আমাকে ট্রাঙ্ককাল করলেন। আমি বললাম, একটু ধৈৰ্য ধরুন।
এক সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই লোকসভায় কোশ্চেন-আওয়ারের পর স্বয়ং প্রাইম মিনিস্টার ঘোষণা করলেন, প্রিমিয়ার চৌ এন-লাই তাঁর আমন্ত্রণ গ্ৰহণ করে সীমান্ত বিরোধ আলোচনার জন্য দিল্লী আসছেন।
বিনা মেঘে বজ্ৰাঘাত হলো অনেকের মাথায়। আমি কিন্তু আনন্দে ধেই ধেই করে নাচতে শুরু করলাম। রাত্রে এডিটরের টেলিগ্ৰাম পেলাম, কনগ্রাফুলেশনস স্পেশ্যাল ইনক্রিমেন্ট টু-ফিফটি উইথ ইমিডিয়েট এফেকটু। দু’হাত তুলে ভগবানকে প্ৰণাম করলাম।
সেই রাত্ৰেই মেমসাহেবকে একটা টেলিগ্ৰাম করে সুখবরটা জানিয়ে দিলাম।
পরের দিন মেমসাহেবেরও একটা টেলিগ্ৰাম পেলাম, এ্যাকসেপ্টট কনগ্ৰাচুলেশনস অ্যাণ্ড প্ৰণাম স্টপ লেটার ফলোজ।
মেমসাহেবের চিঠি পাবার পরও ভাবতে পারিনি। ভবিষ্যতে আরো কোন অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটবে আমার জীবনে। কিন্তু সত্যি সত্যিই ঘটল। প্ৰাইম মিনিস্টারের সঙ্গে ইউরোপ যাবার দুর্লভ সুযোগ এলে আমার জীবনে কয়েক মাসের মধ্যেই।
বিদায় জানাবার জন্য মেমসাহেব দিল্লী ছুটে এসেছিল। আমি আশ্চর্য হয়েছিলাম। বলেছিলাম, আমাকে সী-অফ করার জন্য। তুমি কলকাতা থেকে দিল্লী এলে?
দুটি হাত দিয়ে আমার দুটি হাত দোলাতে দোলাতে বলেছিল, তুমি প্ৰথমবারের জন্য ইউরোপ যাচ্ছি। আর আমি চুপ করে বসে থাকব কলকাতায়?
ঐ কালো হরিণ চোখ ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বললো, তাও আবার প্ৰাইম মিনিস্টারের সঙ্গে চলেছি। আমি না এসে থাকতে পারি?
পাগলীর কথাবার্তা শুনে আমার হাসি পেতো। কত হাজার হাজার লোক বিদেশ যাচ্ছে। তার জন্য এক হাজার মাইল দূর থেকে ছুটে এসে বিদায় জানাতে হবে?
দু’হাত দিয়ে আমার মুখখানা তুলে ধরে মেমসাহেব বললো, এসেছি, বেশ করেছি! তোমাকে কৈফিয়ত দিয়ে আসব?
বল দোলাবৌদি, অমন পাগলীর সঙ্গে কি তর্ক করা যায়? যায় না। তাই আমিও আর তর্ক করিনি।
পাশপোর্ট-ভিসা-ফারেন এক্সচেঞ্জ আগেই ঠিক ছিল। এয়ারপ্যাসেজ আগের থেকেই বুক করা ছিল। দুজনে মিলে এয়ার ইণ্ডিয়ার অফিসে গিয়ে টিকিটটা নেবার পর কিটনপ্লেসে। কয়েকটা ছোটখাট জিনিসপত্র কিনলাম। তারপর কফি হাউসে গিয়ে কফি খেয়ে ফিরে এলাম ওয়েস্টার্ন কোটে।
কেরার পথে মেমসাহেব বললো, দেখ তোমার কাজকর্ম আজই শেষ করবে। কালকে কোন কাজ করতে পারবে না।
কেন? কাল কি হবে? আমি জানতে চাইলাম। ঘাড় বেঁকিয়ে চোখ ঘুরিয়ে ও বললো, বা: পরশু ভোরেই তো চলে যাবে। কালকের দিনটাও আমি পেতে পারি না?
লাঞ্চের পর একটু বিশ্রাম করে বেরিয়েছিলাম বাকি কাজগুলো শেষ করার জন্য। তারপর এক্সটারনাল অ্যাফেয়ার্স মিনিস্ট্রিতে গিয়ে দেখাশুনা করে ফিরে এলাম সন্ধ্যার পরই।
এসে দেখি মেমসাহেব একটা চমৎকার বালুচরী শাড়ি পরেছে, বেশ চেপে কান ঢেকে চুল বেঁধেছে, বিরাট খোপায় রূপার কাঁটা গুজেছে। রূপার চেন’এ টিবেটয়ান লকেট লাগানো একটা হার ছাড়া আরো কয়েকটা রূপার গহনা পরেছে। কপালে টকটকে লাল একটা বিরাট টিপ ছাড়াও চোখে বোধ হয় একটু সুরমার টান লাগিয়েছিল।
আমি ঘরে ঢুকে মেমসাহেবকে দেখেই থমকে। দাঁড়ালাম। ও মুখটা একটু নীচু করে চোখটা একটু ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকাল। একটু হাসল।
আমি হাসলাম না, হাসতে পারলাম না। আগের মতই স্থির দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে রইলাম।
ও আবার আমার দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হাসল। জিজ্ঞাসা করল, অমন স্থির হয়ে কি দেখছ?
তোমাকে।
ন্যাকামি করে ও আবার বললো, আমাকে?
বুঝতে পারছি না?
একটু হাসল। বললো, তা তো বুঝতে পেরেছি। কিন্তু অমন করে দেখবার কি আছে?
কেন দেখছি তা বুঝতে পারছি না? দেখবার কি কোন কারণ নেই?
মেমসাহেব। এবার আর তর্ক না করে ধীর পদক্ষেপে দেহটাকে একটু দুলিয়ে দুলিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়াল। আমার হাত দু’টো ধরে মুখটা একটু বেঁকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, খুব খারাপ লাগছে?
আমি প্ৰায় চীৎকার করে উঠলাম, অসহ্য, অসহ্য!
সত্যি খারাপ লাগছে? অত খারাপ কি না তা জানি না, তবে তোমাকে আমি সহ্য করতে পারছি না।
ও এবার সত্যি একটু চিন্তিত হয়ে প্রশ্ন করল, এসব খুলে ফেলব?
এতক্ষণ ও আমার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল। এবার ওকে পাশে টেনে নিয়ে বললাম, হে নিরুপমা, চপলতা আজি যদি ঘটে তবে করিয়ো ক্ষমা… আর হে নিরুপমা, আঁখি যদি আজ করে অপরাধ, করিয়ো ক্ষমা।
দোলাবৌদি, মেমসাহেবও কোন কথা বলল না। দুটি হাত দিয়ে আমার হাতটা জড়িয়ে ধরে মাথাটা হেলান দিয়ে খুব মিহিমুরে গাইল, আমি রূপে তোমায় তোলাব না ভালবাসায় ভোলাব।
আমি প্রশ্ন করলাম, আর কি করবে? মেমসাহেব গাইতে গাইতে বললো, ভরাব না। ভূষণভারে, সাজাব না। ফুলের হারে-সোহাগ আমার মালা করে গলায় তোমার দোলাব।
আমি বললাম, সত্যি?
হাজারবার লক্ষবার সত্যি।
মেমসাহেব গজাননকে ডেকে চায়ের অর্ডায় দিল। চা এলো। চা খেতে খেতে জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি কি এয়ার ইণ্ডিয়া বা টুরিস্টবুরোর চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছ?
কেন বলতো?
তা নয়ত এত রূপোর গহনা চাপিয়েছ কেন?
আমার খুব ভাল লাগে। কেন তোমার খারাপ লাগছে?
পাগল হয়েছ? খারাপ লাগবে কেন? খুব ভাল লাগছে।
সত্যি?
সত্যি ছাড়া কি মিথ্যা বলছি?
যাই হোক এত সাজলে কেন?
তোমার ভাল লাগবে বলে।
একটু থেমে আবার বললো, তাছাড়া…
তাছাড়া কি?
মুখটা একটু লুকিয়ে, বললো, ইউরোপ যাচ্ছ। না জানি কত মেয়ের সঙ্গে আলাপ হবে। তাই যাতে চট করে ভুলে না যাও…
আমাকে নিয়ে আজো তোমার এত ভয়?
আমাকে একটু আদর করে মেমসাহেব বললো, না গো না। এমনি সেজেছি।
সেদিন সন্ধ্যা-রাত্রি আর পরের দিনটা পুরোপুরি মেমসাহেবকে দিয়েছিলাম।
তারপর বিদায়ের দিন এয়ারপোর্ট রওনা হবার আগে মেমসাহেব আমাকে প্ৰণাম করেছিল, আমি ওকে আশীৰ্বাদ করেছিলাম। কিন্তু তবুও ও চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। মনে হলো যেন কিছু বলবে। জানতে চাইলাম, কিছু বলবে?
কিছু কথা না বলে মাথা নীচু করে ঠোঁট কামড়াতে কামড়াতে মুচকি মুচকি হাসছিল।
আমি ওর মুখটা আলতো করে তুলে ধরে আবার জানতে চাইলাম, কি, কিছু বলবে?
অনেকক্ষণ ধরে অনেকবার জিজ্ঞাসা করার পর হতচ্ছাড়ী আমার কানে কানে কি বলেছিল জান দোলাবৌদি? বলেছিল, আমাকে আর একটু ভাল করে আদর কর।
কি করব? বিদায়বেলায় এই অনুরোধ না রেখে আমি পারিনি। সত্যি একটু ভাল করেই আদর করলাম। আর ওর দেহে একটা চিহ্ন রেখে গেলাম, যে চিহ্ন শুধু মেমসাহেবই দেখেছিল। কিন্তু দুনিয়ার আর কেউ দেখতে পারে নি।
পালামের মাটি ছেড়ে আমি চলে গেলাম।
ঘুরতে ঘুরতে শেষে লণ্ডন পৌঁছে মেমসাহেবের চার-পাঁচটা চিঠি একসঙ্গে পেলাম। বার বার করে লিখেছিল, ফেরার সময় তুমি দিল্লীতে না গিয়ে যদি সোজা কলকাতা আস, তবে খুব ভাল হয়। কলেজে টেস্ট শুরু হয়েছে; সুতরাং এখন ছুটি নেওয়া যাবে না। অথচ তুমি ফিরবে। আর আমি তোমাকে এয়ারপোর্টে রিসিভ করব না, তা হতে পারে না।
শেষে লিখেছিল,তুমি কবে, কোন ফ্লাইটে, কখন দমদমে পৌঁছাবে, সে খবর আর কাউকে জানাবে না। দমদমে যেন ভিড় না হয়। শুধু আমিই তোমাকে রিসিত করব, আর কোন তৃতীয় ব্যক্তি যেন এয়ারপোর্টে না থাকে।
মেমসাহেব আমাকে বিদায় জানাবার জন্য কলকাতা থেকে দিল্লী ছুটে এসেছিল। সুতরাং আমি ওর এই অনুরোধ উপেক্ষা করতে পারলাম না। বণ্ড স্ট্রীটে এয়ার ইণ্ডিয়া অফিসে গিয়ে আরো কিছু পেমেণ্ট করে টিকিটটা চেঞ্জ করে আনলাম। তারপর রওনা হবার আগে মেমসাহেবকে একটা কেবল করলাম, রিচিং ডামডাম এয়ার ইণ্ডিয়া স্যাটারডে মৰ্ণিং।। মজা করবার জন্য শেষে উপদেশ দিলাম, ডোন্ট ইনফর্ম এনিবডি।
সেদিন দমদমে অরেঞ্জ পাড়ের একটা তাঁতের শাড়ি আর অরেঞ্জ রং-এর একটা ব্লাউজ পরে, রোদপুরের মধ্যে মাথায় ঘোমটা দিয়ে ‘মেমসাহেব রেলিং এর ধারে দাঁড়িয়েছিল আমার আগমন প্ৰত্যাশায়। . আমার দুহাতে ব্রিফকেশ, টাইপরাইটার, কেবিনব্যাগ আর ওভারকোট থাকায় হাত নাড়তে পারলাম না। শুধু একটু মুখের হাসি দিয়ে ওকে জানিয়ে দিলাম, ফিরে এসেছি।
কাস্টমস ইমিগ্রেশন কাউন্টার পার হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসতেই ও আমার হাত থেকে টাইপরাইটার আর কেবিনব্যাগটা নিয়ে নিল। টার্মিনাল বিল্ডিং থেকে বেরুবার সময় জিজ্ঞাসা করল, ভাল আছ তো?
মাথা নেড়ে বললাম, হ্যাঁ। তারপর জিজ্ঞেস করলাম, তুমি?
ভাল আছি।
তারপর ট্যাক্সিতে উঠে মেমসাহেব আমাকে প্ৰণাম করল।
আমি ওর মাথায় হাত দিয়ে বললাম, সুখে থাক, মেমসাহেব।
নিশ্চয়ই সুখে থাকব। তারপর আমি বলেছিলাম, জান, এই শাড়িটা আর ব্লাউজ পরে তোমাকে ভারী ভাল লাগছে।
খুব খুশি হয়ে হাসিমুখে ও বললো, সত্যি বলছ?
সত্যি বলছি। তোমাকে বড় শান্ত, স্নিগ্ধ, মিষ্টি লাগছে।
একটু পরে আবার বলেছিলাম, ইচ্ছা করছে তোমাকে জড়িয়ে ধরে একটু আদর করি।
মেমসাহেব দু’হাত জোড় করে বলেছিল, দোহাই তোমার, এই ট্যাক্সির মধ্যে আদর করো না।
দোলাবৌদি, এমনি করে এগিয়ে চলেছিলাম। আমি আর মেমসাহেব। আমি দিল্লীতে থাকতাম, ও কলকাতায় থাকত। কখনও লুকিয়ে-চুরিয়ে মেজদিকে হাত করে ও দিল্লী আসত, কখনও বা আমি কলকাতা যেতাম। মাঝে মাঝেই আমাদের দেখা হতো। বেশীদিন দেখা না হলে আমরাও শান্তি পেতাম না।
ইতিমধ্যে এক’জন ন্যাভাল অফিসারের সঙ্গে মেমসাহেবের মেজদির বিয়ে হলো। বিয়ের নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে আমি কলকাতা গিয়েছিলাম। একটা ভাল প্রেজেনটেশনও দিয়েছিলাম।
মেজদির বিয়েতে গিয়ে ভালই করেছিলাম। এই উপলক্ষ্যে আমার সঙ্গে ওদের পরিবারের অনেকের আলাপ-পরিচয় হলো। তাছাড়া ঐ বিয়ে বাড়িতেই মেজদি আমাদের ব্যাপারটা পাকাপাকি করে দিয়েছিলেন। আমার হাত ধরে টানতে টানতে মেজদি ওর মার সামনে হাজির করে বলেছিলেন, হ্যাঁ মা, এই রিপোর্টারের সঙ্গে তোমার ঐ ছোটমেয়ের বিয়ে দিলে কেমন হয়? f
এমন অপ্ৰত্যাশিত ঘটনার জন্য আমি মোটেও প্ৰস্তুত ছিলাম না। লজ্জায় আমার চোখ-মুখ-কান লাল হয়ে উঠেছিল। তবুও আমি অনেক কষ্টে ভণিত করে বললাম, আঃ মেজদি! কি যা তা বলছেন? মেজদি আমাকে এক দাবিড় দিয়ে বললেন, আর ঢং করবেন। না। চুপ করুন।
তারপর মেজদি আবার বললেন, কি মা? তোমার পছন্দ হয়? এত সহজে ঐ কালো-কুচ্ছিত হতচ্ছাড়ী মেয়েটাকে যে আমার মত সুপাত্রের হাতে সমৰ্পণ করতে পারবেন, মেমসাহেবের মা তা স্বপ্নেও ভাবেন নি। তাই বললেন, তোদের যদি পছন্দ হয় তাহলে আর আমার কি আপত্তি থাকবে বল?
বিয়ে বাড়ি। ঘরে আরো অনেক লোকজনে ভর্তি ছিল। ওদের সবার সামনেই মেজদি আমার ঘাড়ে একটা ধাক্কা দিয়ে বললেন, নিন, মাকে প্ৰণাম করুন।
লজ্জায় আমার মাথা কাটা গেল। কিন্তু কি করব? প্ৰণাম করলাম। এবার মেজদি আমার মাথাটা চেপে ধরে বললেন, নিন, এবার আমাকে প্ৰণাম করুন।
আমি প্রতিবাদ করলাম, আপনাকে কেন প্ৰণাম করব?
মেজদি চোখ রাঙিয়ে বললেন, আঃ। যা বলছি তাই করুন। তা নিয়ত সবকিছু ফাস করে দেব।
আশেপাশের সবাই গিলে গিলে মেজদির কথা শুনছিলেন। আর হাঁ করে আমাকে দেখছিলেন।
আমি এদিক-ওদিক বাঁচিয়ে অনেক কষ্টে মেজদিকে চোখ টিপে ইশারা করলাম।
ন্যাভাল অফিসারকে পেয়ে মেজদির প্রাণে তখন আনন্দের বন্যা। আমার ইশারাকে সে তখন গাহ্য করবে কেন? তাই সবার সামনেই বলে ফেললেন, ওসব ইশারা-টিসারা ছাডুন। আগে প্ৰণাম করুন—তা নয়ত…
দোলাবৌদি, তুমি আমার অবস্থাটা একবার অনুমান কর। বিয়ে বাড়ি। চারদিকে লোক’জন গিজগিজ করছে। তারপর ঐ রণমূৰ্তিধারী বধুবেশী মেজদি! বীরত্ব দেখিয়ে বেশী তর্ক করলে না। জানি হাটের মধ্যে হাঁড়ি ভেঙে মেজদি কি সর্বনাশই করত। টিপ করে একটা প্ৰণাম করেই পালিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু মেজদি আবার টেনে ধরে বললেন, আহা-হা! একটু দাঁড়ান।
হুঙ্কার ছেড়ে বললেন, ঐ যে দিদি দাঁড়িয়ে আছে। দিদিকে প্ৰণাম করুন।
আমি একটু ইতস্তত করতেই মেজদি আবার ভয় দেখালেন, খবরদার রিপোর্টার। অবাধ্য হলেই…
দিদিকেও প্ৰণাম করলাম।
দিল্লী আসার দিন মেমসাহেব স্টেশনে এসে বলেছিল, জান, তোমাকে সবার খুব পছন্দ হয়েছে।
স্টেশনে প্ল্যাটফর্মের সবার সামনেই ও আমাকে প্ৰণাম করল, আমি ওকে আশীৰ্বাদ করলাম। দিল্লী মেল ছেড়ে দিল।