2 of 3

১০৩. বনু মুসতালিক অভিযান

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামাদিউস সানীর অবশিষ্টাংশ এবং রযব মাস মদীনায় অতিবাহিত করলেন। তারপর ৬ষ্ঠ হিজরীর শা’বান মাসে খাজায়া গোত্রের বনু মুস্তালিক শাখার বিরুদ্ধে অভিযান চালান।

এক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতে পারলেন যে, বুন মুসতালিক গোত্র তাঁর সৈন্য সমাবেশ করছে। তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে হারেস ইবনে আবু দিরার যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যতম স্ত্রী জুয়াইরিয়ার পিতা। এ খবর পেয়েই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সৈন্য সামন্ত নিয়ে তাদের মুকাবিলায় বেরুলেন। মুরাইসী নামক ঝর্ণার কিনারে তাদের সাথে তুমুল যুদ্ধ হলো। আল্লাহ বনু মুস্তালিককে পরাজিত করলেন। তাদের বহু লোক নিহত হলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সন্তান, নারী ও সম্পদ গণীমত হিসেবে গণ্য করলেন।

বনু কালব ইবনে আওফ গোত্রের হিশাব ইবনে সুবাবা নামক জনৈক মুসলিম এতে নিহত হলেন। তাঁকে শত্রুপক্ষীয় মনে করে উবাদা ইবনে সমিতের (রা) দলভুক্ত জনৈক আনসারী সাহাবী ভুলক্রমে হত্যা করেন।

ঝর্ণার কিনারে অবস্থানকালেই মুসলমানদের মধ্যে একটা দুঃখজনক ঘটনা ঘটলো। জাহজাহ ইবনে মাসউদ নামক বনু গিফারের এক ব্যক্তিকে উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) তাঁর ঘোড়া রাখার জন্য মজুর হিসাবে নিয়োগ করেন। পানি নিয়ে সিনান ইবনে আবার জুহানীর সাথে তার ঝগড়া হয় এবং ক্রমে ঝগড়া মারামারিতে রূপান্তরিত হয়। তখন জুহানী চিৎকার করে ডাকলো “হে আনসারগণ, বাঁচাও।” জাহজাহও চিৎকার করে বললো, “হে মুহাজিরগণ, আমাকে বাঁচাও।” আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সুলুল তখন তার গোত্রের একদল লোকের সাথে অবস্থান করছিল। কিশোর যায়িদ ইবনে আরকামও সেই দলের মধ্যে ছিলেন। আবদুল্লাহ ইবনে উবাই চিৎকার শুনে উত্তেজিত হয়ে বললো, তারা কি শেষ পর্যন্ত এমন কান্ড ঘটালো? ওরাতো আমাদের মাঝে থেকেই দল ভারী করে অহমিকায় মেতে উঠেছে। আমি দেখতে পাচ্ছি আমাদের ও মুহজিরদের অবস্থা সেই প্রবাদ বাক্যের মতই গড়াচ্ছে যে, ‘নিজের কুকুরকে খাইয়ে দাইয়ে মোটাসোটা বানাও, দেখবে একদিন সে তোমাকেই কেটে খাবে।’ আল্লাহর কসম, এবার যদি আমরা মদীনায় ফিরে যাই তাহলে সবলরা দুর্বলদেরকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেবে।” তারপর তার স্বগোত্রীয়দের বলতে লাগলো, “তোমার নিজেদের কি সর্বনাশ করেছ, এখন দেখ। ওদেরকে এ দেশে ঠাঁই দিয়েছো। তোমাদের সম্পদের ভাগ দিয়েছো। ওদের প্রতি অমন বদান্যতা যদি না দেখাতে তাহলে ওরা অন্যত্র যেতে বাধ্য হতো।”

যায়িদ ইবনে আরকাম এসব কথাবার্তা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানালেন। এ সময় তিনি সবেমাত্র শত্রুকে পরাস্ত করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। তিনি যখন এই খবর শুনলেন তখন তার কাছে উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) উপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন, “আব্বাদ ইবনে বিশরকে নির্দেশ দিন তাকে যমের ঘরে পাঠাক।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “উমার আমি যদি তা করি তাহলে লোকেরা বলবে যে,মুহাম্মাদ নিজেই তার সহচরদের হত্যা করছে। তা করা যায় না। তবে তুমি এখনই এখান থেকে রওনা হবার নির্দেশ জানিয়ে দাও।” যে সময় এ নির্দেশ দেয়া হলো সে সময় সাধারণত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোথাও রওনা হতেন না। তথাপি সবাই রওনা হলো।

আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সুলুল যখন জানতে পারলো যে যায়িদ ইবনে আরকাম তার কথাগুলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে দিয়েছেন, তখন সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ছুটে গিয়ে কসম খেয়ে বলতে লাগলো, “যায়িদ যা বলেছে, আমি সেসব কথা বলিনি।” আবদুল্লাহ ইবনে উবাই যেহেতু স্বগোত্রে খুবই সম্মানিত লোক বলে গণ্য হতে তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট যেসব আনসারী সাহাবী ছিলেন তারা বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল, যায়িদ হয়তো ভুল শুনেছে এবং সে যা বলেছে তা হয়তো পুরোপুরি মনে রাখতে পারেনি।” এভাবে তারা আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের প্রতি একটু সৌজন্য দেখালেন এবং তাকে বাঁচিয়ে দিলেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রওনা হলেন, তাঁর সাথে উসায়েদ ইবনে হুদাইস দেখা করলেন। তাঁকে সালাম ও অভিবাদন পূর্বক বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি বড়ই অসুবিধাজনক সময়ে যাত্রা করেছেন। সাধারণত এরকম সময়ে আপনি কোথাও যাত্রা করেন না।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তোমাদের সঙ্গী লোকটি কি বলেছে তা শোননি?” তিনি বললেন, “কোন্ সঙ্গী?” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আবদুল্লাহ ইবনে উবাই।” উসায়েদ বললেন, “সে কি বলেছে?” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তার ধারণা, সে যদি মদীনায় ফিরে যেতে পারে তাহলে সবলরা দুর্বলদেরকে সেখান থেকে বের করে দেবে।” উসায়েদ বললো, “হে আল্লাহর রাসূল, আপনি ইচ্ছা করলে তাকে আমরা বের করে দিতে পারি। সত্যই সে অত্যন্ত হীন ও নীচ। আর আপনি পরাক্রান্ত।” তিনি আরো বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল, তার প্রতি একটু নমনীয় হোন। আল্লাহর কসম, আপনাকে আল্লাহ আমাদের এমন সময় এসে দিয়েছেন যখন তার গোত্র তাকে মুকুট পরানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তাই সে মনে করে, আপনি তার থেকে একটা রাজ্য কেড়ে নিয়েছেন।”

এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদের সাথে নিয়ে একদিন একরাত ধরে পথ চললেন। পথে প্রচ- রৌদ্রে তাদের অসহনীয় কষ্ট হতে লাগলো। তাই এক জায়গায় যাত্রাবিরতি করলেন। লোকেরা মাটিতে নামতেই সবাই ঘুমিয়ে পড়লো। আগের দিন আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের কথায় লোকদের ভেতর যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ার সম্ভাবনা ছিল তা থেকে মনোযোগ ফিরিয়ে দেয়ার জন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে অসময়ে যাত্রা করেছিলেন। বিশ্রাম শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুনরায় সদলবলে যাত্রা শুরু করলেন। হিজাজের মধ্য দিয়ে যাত্রাকালে তিনি একটি ঝর্ণার কাছ যাত্রাবিরতি করলেন। সে স্থানটার নাম বাক্য়া। সেখান থেকে পুনরায় যখন যাত্রা শুরু হলো তখন মুসলমানদের উপর দিয়ে হঠাৎ একটা কষ্টদায়ক ভীতিপ্রদ বাতাস বয়ে গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “এ বাতাসকে তোমরা ভয় পেয়ো না। একটা মস্তবড় কাফিরের মৃত্যু ঘটেছে। সে জন্যই এ বাতাস।” মদীনায় ফিরে দেখেন বনু কাইনুকা গোত্রের প্রভাবশালী ব্যক্তি রিফায়া ইবনে যায়িদ ঐ দিনই মারা গেছে। সে ছিল মুনাফিকদের আশ্রয়স্থল তথা কুমন্ত্রণাদাতা।

কুরআন শরীফের সূরা মুনাফিকুন ্আবদুল্লাহ ইবনে উবাই এবং তার মত লোকদের সম্পর্কেই যায়িদ ইবনে আরকামের কানে হাত রেখে বললেন, “এই ব্যক্তি তার কানের সাহায্যে আল্লাহর ওয়াদা পালন করেছে।” আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের পুত্র আবদুল্লাহ তার পিতার ব্যাপারটা জানতে পেরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমি শুনেছি, আপনি আবদুল্লাহ ইবনে উবাইকে তার বৈরী কথাবার্তার জন্য হত্যা করতে ইচ্ছুক। যদি সত্যিই আপনি ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আমাকে নির্দেশ দিন আমি তার মাথা আপনার কাছে পৌঁছিয়ে দিই। আল্লাহর কসম, খাযরাজ গোত্র জানে যে, ঐ গোত্রে আমার চেয়ে পিতৃভক্ত লোক আর নেই। আমার আশংকা হয় যে, আপনি আমার পিতাকে হত্যার জন্য কাউকে নির্দেশ দেবেন। আর সে তাকে হত্যা করবে, তখন আমার পিতৃহত্নাকে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াতে দেখে হয়তো আমার প্রবৃত্তি কুপ্ররোচনা দিয়ে আমাকে অসহিষ্ণু করে তুলবে। ফলে তাকে হত্যা করে আমি জাহান্নামে যেতে বাধ্য হবো। কেননা সেক্ষেত্রে আমি একজন কাফিরের বদলায় একজন মু’মিনকে হত্যার দায়ে দোষী হবো।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “না সে যতদিন আমাদের সাথে থাকে ততদিন তার প্রতি আমরা নমনীয় থাকবো এবং ভালো ব্যবহার করবো।”

এরপর থেকে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই যখনই কোন অঘটন ঘটাতো, তার গোত্রের লোকেরাই তাকে শায়েস্তা করতো। তিরস্কার ও ভর্ৎসনা করতো এবং পাকড়াও করতো। এই অবস্থা জেনে একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমার ইবনুল খাত্তাবকে (রা) বললেন, “উমার, পরিস্থির পরিবর্তনটা দেখছো তো? তুমি যেদিন আবদুল্লাহ ইবনে উবাইকে হত্যার পরামর্শ দিয়েছিলে সেদিন যদি তাকে হত্যা করতাম তাহলে অনেকেই নাক সিটকাতো। কিন্তু আজ যদি তাকে হত্যার নির্দেশ দিই তাহলে সেদিন যারা নাক সিটকাতো তারাই আজ তাকে হত্যা করবে।” উমার (রা) বললেন, “আল্লাহর কসম, আমি জানি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সিদ্ধান্ত আমার সিদ্ধান্তের চাইতে অধিক কল্যাণকর।”

যে মুসলমানকে উবাইদা ইবনে সামিত (রা) শত্রুর লোক সন্দেহে ভুলবশতঃ হত্যা করেছিলেন, সেই হিসাম ইবনে সুবাবার ভাই মিকইয়াস ইবনে সুবাবা একদিন মক্কা থেকে এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে দেখা করে নিজের ভাইয়ের খুনের পণ দাবী করলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রক্তপণ দেয়ার ব্যবস্থা করলেন। মিকইয়াস নিজেকে মুসলমান বলে দাবী করেছিলো। রক্তপণ পাওয়ার পর সে অল্প কিছুদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট অবস্থান করে। তারপর একদিন তার ভ্রাতৃহন্তাকে হত্যা করে ইসলাম ত্যাগ করে মক্কা চলে যায়।

ওইদিন বনু মুসতালিকের বহুলোক নিহত হয়েছিল। [৭৩. ইবনে হিশাম বলেন, বনু মুসতালিকের যুদ্ধে মুসলমানদের শ্লোগান ছিল, “হে সাহায্যপ্রাপ্ত, হত্যা কর, হত্যা কর।”] আলী ইবনে আবু তালিবের (রা) হাতে মালিক ও তার পুত্রসহ বনু মুসতালিকের দু’জন লোক নিহতক হয়। আর আবদুর রহমান ইবনে আওফ হত্যা করেন অশ্বারোহী আহমার বা উহাইমিরকে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেদিন অনেক যুদ্ধবন্দী হিসাবে আটক করেন। তাদেরকে তিনি মুসলমানদের মধ্যে দাসদাসীরীপে বণ্টন করে দেন। এইসব যুদ্ধবন্দীদের মধ্যে একজন ছিলেন বনু মুসতালিকের গোত্রপতি হারেস ইবনে আবু দিরার দুহিতা জুয়াইরিয়া যিনি পরবর্তীকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীর মর্যাদা লাভ করেছিলেন।

আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আবহা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনু মুসতালিকে যুদ্ধবন্দীদেরকে বণ্টন করলে জুয়াইরিয়া বিনতে হারেস সাবিত ইবনে কায়েসের ভাগে অথবা তার এক চাচাতো ভাইয়ের ভাগে পড়েন। জুয়াইরিয়া তৎক্ষণাৎ মুক্তিপণ দিয়ে মুক্তিলাভের উদ্যেগ নেন। তিনি ছিলেন খুবই লাবণ্যময়ী মিষ্টি মেয়ে।

তাঁকে যেই দেখতো সে-ই মুগ্ধ হয়ে যেতো। জুয়াইরিয়া মুক্তি লাভের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে সাহায্য কামনা করেন। তাঁকে আমার ঘরের দরজায় দাঁড়তে দেখেই আমি তাঁকে খারাপ মনে করি। আমি বুঝতে পারলাম যে, তাঁর যে মনোহর রূপ আমি দেখছি তা নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দৃষ্টি এড়াবে না। অতঃপর তিনি রাসূলুল্লাহর সাথে সাক্ষাত করে বললেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ, আমি হারেস ইবনে আবু দিরারের কন্যা। আমার পিতা গোত্রের সরদার। আমি কি বিপদে পড়েছি তা আপনার অজানা নয়। আমি সাবিত ইবনে কায়েস Ñ অথবা তার চাচাতো ভাইয়ের ভাগে পড়েছি। আমার মুক্তিপণ আদায়ে আপনার সাহায্য কামনা করছি।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আমি যদি তোমার জন্য আরো ভালো কিছুর ব্যবস্থা করি?” তিনি বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল, সেটা কি?” তিনি বললেন, “আমি তোমার পক্ষ হতে মুক্তিপণ আদায় করে দিয়ে তোমাকে বিয়ে করবো।” জুয়াইরিয়া বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল, “আমি এতে রাজী আছি।” তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আমি তাই করলাম।”মুসলমানগণ যখন জানতে পারলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুয়াইরিয়াকে বিয়ে করেছেন তখন তাঁরা তাঁদের হাতে বন্দী বনু মুসতালিকের সব লোককে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আত্মীয় বিবেচনা করে ফেরত পাঠিয়ে দিলেন। এভাবে বনু মুস্তালিকের একশ’ বন্দী শুধু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে জুয়াইরিয়ার বিয়ে হওয়ার কারণে মুক্তিলাভ করলো। সত্যি বলতে কি নিজ গোত্রের জন্য জুয়াইরিয়ার চেয়ে কল্যাণকর প্রমাণিত হয়েছে এমন কোন মহিলার কথা আমার জানা নেই।

ইয়াজীদ ইবনে রোমান বলেন, বনু মুসতালিক গোত্র ইসলাম গ্রহণ করার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়ালীদ ইবনে উকবা ইবনে আবু মুয়াইতকে তাদের কাছে প্রেরণ করেন। তাঁর আগমনের খবর শুনে গোত্রের বহু অশ্বারোহী তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে এগিয়ে এলো। এদিকে ওয়ালীদ এসব দেখে ভয় পেয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ফিরে গিয়ে বললেন যে, গোত্রের লোকেরা তাঁকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছে এবং তাদের দেয় যাকাত আনতে দেয়নি। এতে মুসলমানগণ বনু মুসতালিককে আক্রমণ করার জন্য খুব পীড়াপীড়ি শুরু করে দিলো। ফলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। ঠিক এই সময় বনু মুস্তালিকের একটি প্রতিনিধিদল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বললো, “ইয়া রাসূলাল্লাহ, আপনি আমাদের কাছে দূত পাঠিয়েছেন শুনে আমরা তাকে অভ্যর্থনা করতে এবং আমাদের দেয় যাকাত দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তিনি ত্বরিত গতিতে ফিরে এলেন। পরে শুনলাম, তিনি আপনাকে বলেছেন যে, আমরা তাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিলাম। আল্লাহর কসম, আমরা সে জন্য আসিনি।” এ ঘটনা সম্পর্কে আল্লাহ সূরা হুজুরাতের এ আয়াত দু’টি নাযিল করেন।

“হে মুমিনগণ, তোমাদের কাছে কোন ফাসিক ব্যক্তি কোন খবর নিয়ে এলে তা যাচাই-বাছাই করে দেখো যাতে অজান্তে কোন গোষ্ঠীর ওপর চড়াও হ’য়ে কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও। আর জেনে রেখো, তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রয়েছেন। তিনি যদি অনেক ব্যাপারে তোমাদের মত অনুসরণ করেন তাহলে তোমরা মুসিবতে পড়ে যাবে। ……….”

এই সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আয়িশা (রা) ও ছিলেন। তাঁকে নিয়ে তিনি যখন প্রত্যাবর্তন করছিলেন, তখন মদীনার কাছাকাছি এক জায়গায় এলে একদল মুসলমান আয়িশার (রা) ওপর অপবাদ করে বসে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *