2 of 3

০৫৪. চুক্তি বাতির হওয়ার কাহিনী

বনু হাশিম ও বনু মুত্তালিবকে গিরিবর্তে অবরোধ করে রাখার লক্ষ্যে কুরাইশগণ যে চুক্তিনমায় সই করে, কুরাইশদের একটি দল অবশেষে তা বাতিল করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী কৃতিত্ব হিশাম ইবনে আমরের। কারণ, তিনি ছিলেন নাদলা ইবনে হিশাম ইবনে আবদে মানাফের মা-শরীক সৎভাই। হিশাম অবরুদ্ধ বনু হাশিম ও বনু মুত্তালিবের কাছে আসতেন ও তাঁদেরকে উটের পিঠে করে এনে খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করতেন। গিরিবর্তের প্রবেশ মুখে এস নিজের মাথা থেকে শিরস্ত্রাণ খুলে তা দিয়ে এক পাশে সজোরে আঘাত করতেন। তারপর গিরিবর্তের ভেতরে প্রবেশ করতেন। পুনরায় আসতেন এবং পোশাক দিয়ে যেতেন। এভাবে বিভিন্ন সময় দরকারী জিনিসপত্র সরবরাহ করতেন।

একদিন যুহাইর ইবনে আবু উমাইয়া ইবনে মুগীরার কাছে গেলেন। তিনি ছিলেন আবদুল মুত্তালিবের কন্যা আতিকার ছেলে। গিয়ে বললেন, “হে যুহাইর, তুমি নিজে তো খেয়ে পরে ও স্ত্রী পরিজন নিয়ে দিব্যি সুখে আছ, অথচ তোমার মামারা কোথায় কিভাবে আছেন তাও তোমার জানা আছে। তারা বয়কট অবস্থায় রয়েছেন। কেউ তাদের সাথে বেচাকেনা করে না, বিয়েশাদী করে না। তুমি কি করে এ অবস্থ মেনে নিয়েছো? আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, ওরা যদি আবুল হাকাম ইবনে হিশামের (আবু জাহল) মামা হতো, আর তুমি যদি তাদেরকে এভাবে বয়কটকরতে তাকে অনুরোধ করতে, তাহলে সে কখ্খনো তোমার অনুরোধ রক্ষা করতো না।” যুহাইর বললো. “ব্যস,হয়েছে। আর বলতে হবে না। শোনো হিশাম, আমি একা কি করতে পারি? আমার সাথে যদি আর একজন লোক হতো তা হলে এই চুক্তি বাতিল করার উদ্যেগ নিতাম।” হিশাম কললেন, “লোক তো একজন পেয়েছি।” যুহাইর বললো, “কে তিনি? ” হিশাম বললো, “আমি নিজে।” যুহাইর বললো, “আর একজন লোক খুঁজে বের কর।”

হিশাম মুতয়িম ইবনে ’আদীর কাছে গিয়ে তাকে বললো, “হে মুতয়িম, বনু আবদ মানাফের দুইজন লোক যদি অনাহারে ধুঁকে ধুঁকে মারা যায়, তাহলে তুমি কি কুরাইশদের মন রক্ষা করার জন্য সে দৃশ্য নীরবে দেখবে? কুরাইশদেরকে যদি এভাবে সুযোগ দিতে থাক তাহলে তারা তোমাদের দিকেও দ্রুত ধেয়ে আসবে।” মুতয়িম বললো, “বেশ তো বুঝলাম। আমি একা কি করতে পারি?” হিশাম বললো, “তুমি তো আর একজন লোক পেয়ে গেছো।” মুতয়িম বললো, “সে কে?” হিশাম বললো, “আমি নিজেই সে ব্যক্তি।” মুতয়িম বললো, “তৃতীয়ি একজন লোক আমাদের খুঁজে বের করা দরকার।” হিশাম বললো, “তৃতীয় একজন লোকও পেয়ে গেছি।” মুতয়িম বললো, “কে সে?” হিশাম বললো, “যুহাইর ইবনে আবু উমাইয়া।” মুতয়িম বললো, “চতুর্থ আরেকজন খুঁজে বের কর।”

তখন সে বুখতারী ইবনে হিশামের কাছে গেল। তার কাছে গিয়ে সে মুতয়িমকে যা বলেছিল তারই পুনরাবৃত্তি করলো। আবুল বুখতারী বললো, “আমরা যদি এটা করতে যাই তাহলে আমাদের সাহায্যকারী কেউ হবে কি?। ” সে বললো, “হ্যাঁ।” সে বললো, “কে?” হিশাম বললো, “যুহাইর, মুতয়িম এবং আমি নিজে।” আবু বুখতারী বললো, “পঞ্চম আরেকজন লোক খুঁজে বের কর।”

তখন সে যাম’আ ইবনে আসওয়াদ ইবনে মুত্তালিবের কাছে গেল। সে অবরুদ্ধদের সাথে তার আত্মীয়তা ও অধিকারের উল্লেখ করে তার সাথে বিষয়টা আলোচনা করলো। যাম’আ বললো, “তুমি যে কাজে আমাকে আহ্বান করছো আর কেউ কি তার পক্ষে আছে?” সে বললো, “হ্যাঁ।” অতঃপর সে তাকে সবার সাম বললো।

এরপর মক্কার উচ্চভূমিত হাজ্জন নামক পর্বতের পাদদেশে তারা সমবেত হবার একটা তারিখ নির্ধারণ করলো। যথাসময়ে তারা সেখানে জমায়েত হলো এবং চুক্তিনামাটা বাতিল করানোর জন্য তোড়জোড় শুরু করার সিদ্ধান্ত নিল। যুহাইর বললো, “আমি নিজে এ ব্যাপারে অগ্রণী হয়ে সবার সাথে আলাপ আলোচনা করার দায়িত্ব নিলাম।”

পরদিন সকালে তারা সবাই কুরাইশদের সভাস্থলগুলোতে গিয়ে জড়ো হলো। যুহাইর জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক পরে উপস্থিত হলো এবং সাতবার কা’বার তাওয়াফ করে সমবেত জনতার কাছে এসে বললো, “হে মক্কাবাসী, আমরা খাবো পরবো, আর বনু হাশিম অবরুদ্ধ অবস্থায় ধুঁকে ধুঁকে মরে যাবে, কেউ তাদের সাথে কেনাবেচা করতে পারবে না-এটা কি করে চলতে পারে? আল্লাহর শপথ, এই সম্পর্ক-বিনাশী ও যুলুমের প্ররোচনা দানকারী চুক্তিনামা ছিঁড়ে ফেলার আগে আমি ক্ষান্ত হবো না।”

মসজিদে হারামের এক কোণায় উপবিষ্ট আবু জাহল বলে উঠলো, “তুমি মিথ্যা বলছো। আল্লাহর শপথ, ওটা ছেঁড়া হবে না।” তখন যাম’আ ইবনে আসওয়াদ বললো “আল্লাহর শপথ, তুমি নিজে সবচেয়ে বড় মিথ্যাবাদী। এই চুক্তিনামা যখন লেখা হয়, তখন আমরা ঐ জিনিসটির ব্যাপারে সম্মত ছিলাম না।” আবুল বুখতারী বললো, “যাম’আ ঠিক বলেছে। এই চুক্তিতে যা লেখা হয়েছে আমরা তা মানি না কিংবা স্বীকারও করি না।”মুতয়িম ইবনে আদী বললো.“তোমরা দু’জন ঠিক বলেছো। এর বিপরীত কথা যে বলে সে মিথ্যুক। আল্লাহর কাছে আমরা এই চুক্তির সাথে আমাদের সম্পর্কহীনতা ঘোষণা করছি এবং এতে যা লেখা হয়েছে তা অগ্রাহ্য করছি।” হিশাম ইবনে আমরও অনুরূপ কথা বললো। সব শুনে আবু জাহল বললো, “ব্যাপারটা রাতের অন্ধকারে স্থিরীকৃত হয়েছে এবং এ সম্পর্কে অন্য কোথাও পরামর্শ করা হয়েছে। ” আবু জাহল যখন একথা বলছিল তখন আবু তালিব মসজিদের এক কোণে কসে ছিলেন। মুতয়িম চুক্তি নামাটা ছিঁড়ে ফেলার জন্য এগিয়ে গেলো। কিন্তু ওটা হাতে নিয়ে দেখলো একমাত্র “বিসমিকা আল্লাহুম্মা” ( হে আল্লাহ তোমার নামে) এই শব্দটি ছাড়া সমগ্র চুক্তিনামাটা উই পোকায় খেয়ে ফেলেছে।

চুক্তিনামার লেখক মানসূর ইবসে ইকরামের হাত অবশ হয়ে গিয়েছিল বলে কথিত আছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *