2 of 3

১০২. যী কারাদ অভিযান

এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় অল্প কয়েকদিন কাটালেন। সহসা উয়াইনা ইবনে হাসান ফযারী গাতফানীদের কতিপয় ঘোড় সওয়ারকে সাথে নিয়ে মদীনার অদূরে গাবা নামক স্থানে বিচরণরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গাভীন দুধেল উটগুলোর ওপর আক্রমণ চালিয়ে তা লুট করে নেয়। এই লুণ্ঠত উটগুলোর সাথে বনী গিফার গোত্রের এক ব্যক্তি এবং তার স্ত্রীও ছিল। তারা লোকটিকে হত্যা করে তার স্ত্রীকে সহ উটগুলো নিয়ে যায়।

এই লুণ্ঠনের ব্যাপারটা সর্বপ্রথম জানতে পারেন সালামা ইবনে আমর ইবনে আকওয়া। তিনি তালহা ইবনে আবদুল্লাহর গোলামকে সাথে নিয়ে তীর ধনুক সজ্জিত হয়ে গাবাতে গিয়েছিলেন। তাঁর সাথে ছিল একটা ঘোড়া। তিনি সানিয়াতুল ওয়াদা পাহাড়ের এক কিনারে গিয়ে উচ্চস্বরে চিৎকার করে উঠলেন, “বাচাঁও।” অতঃপর তাদেরকে অনুসরণ করে ক্ষিপ্রগতিতে এগিয়ে গেলেন। হিংস শ্বাপদ যেমন শিকারের পেছনে ছোটে তিনি ঠিক তেমনিভাবে ছুটলেন। ছুটতে ছুটতে তাদেরকে ধরে ফেললেন এবং তাদেরকে লক্ষ্য করে তীর ছুরতে শুরু করলেন। প্রতিটা তীর নিক্ষেপকালে তিনি বলছিলেন, “এই লও, আমি আকওয়ার পুত্র। আজকে পাপিষ্টদেরকে খতম করার দিন।” লুণ্ঠনকারীরা যেই তাকে ধাওয়া করে অমনি তিনি সরে পড়েন এবং পরক্ষণেই আবার বেরিয়ে মুকাবিলা করতে এগিয়ে যান। এভাবে তিনি সুযোগ পেলেই তীর নিক্ষেপ করেন আর বলেন, “লও, আমি আকওয়া বেটা। আজকে পাপিষ্ঠদের খতম করার দিন।” ওদিকে লুণ্ঠনকারীরা আর্তনাদ করতে থাকে, “লোকটা দিনের প্রথমভাগেই আমাদের ওপর এমন কঠোর হয়ে উঠলো।”

সালামার চিৎকার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কর্ণগোচর হলো। তিনি চিৎকার করে ঘোষণা করলেন, “বিপদ! বিপদ!” সঙ্গে সঙ্গে বিপুলসংখ্যক সাহাবী পিঠে সওয়ার হয়ে তাঁর কাছে সমবেত হতে লাগলেন। প্রথমে মিকদাদ ইবনে আমর, তারপর আব্বাদ ইবনে বিশর, তার একে একে সা’দ ইবনে যায়িদ, উসায়েদ বিন যুহাইর, উক্কাশা ইবনে মুহসান, মুহরিদ ইবনে নাদালা, আবু কাতাদাহ হারেস ইবনে রাবয়ী ও আবু আইয়াশ তাঁর কাছে উপস্থিত হলেন। তাঁদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সা’দ ইবনে যায়িদের নেতৃত্বে পাঠিয়ে দিলেন। বললেন, “লুণ্ঠনকারীদের ধাওয়া করে যেতে থাক। আমি পরে আরো লোক পাঠাচ্ছি।” সা’দ- এর বাহিনী পশ্চাদ্ধাবন করে তাদের ধরে ফেললো। প্রথমেই আবু কাতাদাহ হাবীব ইবনে উয়াইনাকে হত্যা করে নিজের চাদর দিয়ে ঢেকে রাখলেন এবং তারপর গিয়ে নিজের দলের লোকদের সাথে যোগ দিলেন।

কিছুক্ষণ পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং একদল মুসলমানকে সাথে নিয়ে এগিয়ে গেলেন। পথে হাবীবকে আবু কাতাদাহ চাদরে জড়ানো অবস্থায় দেখতে পেলেন। সঙ্গী সাহাবীগণ ইন্নালিল্লাহ পড়ে বলতেন, “কি সর্বনাশ! আবু কাতাদাহ নিহত হয়েছে?”

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘না, এ আবু কাতাদাহ নয়। আবু কাতাদার হাতে এ লোকটি নিহত হয়েছে। তবে সে তাকে নিজের চাদরে জড়িয়ে রেখেছে যাতে তোমরা বুঝতে পারো যে, এ তারই সঙ্গী।” উক্কাশা ইবনে মুহসান লুণ্ঠনকারীদের দু’জন- আওবার ও তার পুত্র আমরকে ধরে একসাথেই হত্যা করলেন। তারা একই উটে চড়ে যাচ্ছিল। কিছুসংখ্যাক লুণ্ঠিত উটও তাঁরা পুনরুদ্ধার করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যূ-কারাদের পাহাড়ের কাছে গিয়ে শিবির স্থাপন করলেন। এরপর বাদবাকী মুসলমানগণ তার কাছে কাটালেন। সালাম ইবনুল আকওয়া বললো, “হে আল্লাহর রাসূল, আমাকে যদি একশ’ লোক দিয়ে পাঠান আমি বাদবাকী উটগুলো ছিনিয়ে আনতে এবং লুণ্ঠনকারীদের ধরতে পারবো।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তারা এখন গাতফানের লোকদের কাছে রাত্রের আহার গ্রহণ করছে।”

অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদের মধ্যে প্রতি একশ’ জনে একটা উট বিতরণ করলেন এবং তা খেয়েই তাঁরা দিন অতিবাহিত করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের নিয়ে মদীনায় ফিরে আসলেন।

গিফারীর স্ত্রীর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট একটি উটে আরোহণ করে তাঁর কাছে উপনীত হলো এবং তার স্বামীর মৃত্যুর খবর জানালো। তারপর বললো, “ইয়া রাসূলাল্লাহ আমি মানত করেছি যে, যদি আমি এই উটের পিঠে চড়ে বিপদ থেকে উদ্ধার পাই তাহলে এটা আল্লাহর নামে জবাই করবো।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকি হেসে বললেন, “উটটাকে তুমি খুবই খারাপ প্রতিদান দিতে চেয়েছো। আল্লাহ তোমাকে তার পিঠে চড়িয়ে বিপদ থেকে উদ্ধার করলেন, আর তুমি কিনা তাকে জবাই করতে চাও! আল্লাহর নাফরমানীর ব্যাপারে কোন মানত চলে না। তুমি যার মালিক নও, তা দিয়ে মনত পূরণ করা চলে না। এটা আমার উট। তুমি নিজ পরিবারের কাছে ফিরে যাও। আল্লাহ তাতেই তোমার কল্যাণ করবেন।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *