উহুদ যুদ্ধের পর আজাল ও কারাহ গোত্রদ্বয় থেকে এ দল লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত হলো। তারা বললো, “ইয়া রাসুলাল্লাহ, আমাদের লোকেরা ইসলাম গ্রহণ করেছে। কাজেই আপনার সহচরদের মধ্য থেকে একটি দলকে আমাদের সাথে পাঠিয়ে দিন, যারা আমাদেরকে ইসলামের বিস্তারিত বিধান শিক্ষা দেবে ও কুরআন পড়াবে।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সাথে মুরসাদ ইবনে আবু মুরসাদ, খালিদ ইবনে বুকাইর, আসিম ইবনে সাবিত, খুবাইব ইবনে আদী, যায়িদ ইবনুদ দাসিনা ও অবদুল্লাহ ইবনে তারিককে পাঠিয়ে দিলেন। আমীর মনোনীত করলেন মুরসাদ ইবনে আবু মুরসাদকে। তিনি সবাইকে সাথে নিয়ে রওনা হলেন। হিজাজের এক প্রান্তে ‘উসফান ও মক্কার মধ্যবর্তী হুদয়ার ওপর অবস্থিত হুযাইল গোত্রের জলাশয় রাজীতে পৌঁছলে তারা বিশ্বাসঘাতকতা করলো। বিশ্বাসঘাতকরা হুযাইল গোত্রকেও সাহায্যের জন্য ডাকলো। সাহাবীগণ তখনও সওয়ারীর পিঠে। দেখলেন, তরবারীধারী লোকজন তাদেরকে চারদিক থেকে ঘেরাও করে ফেলেছে। তাঁরা নিজ নিজ তরবারী নিয়ে লড়াই করতে প্রস্তুত হয়ে গেলেন। তখন কাফিররা বললো, “আল্লাহর কসম, আমরা তোমাদেরকে হত্যা করতে চাই না। আমরা তোমাদের দ্বারা মক্কাবাসীর কাছ থেকে কিছু অর্থ আদায় করতে চাই।আল্লাহর কসম করে প্রতিজ্ঞা করছি, তোমাদেরকে হত্যা করবো না।” কিন্তু মুরসাদ ইবন আবু মুরসাদ, খালিদ ইবনে বাকাইর এবং আসিম ইবনে সাবিত বললেন, “আমাদের কোন মুশরিকের প্রতিজ্ঞা বা অঙ্গীকারে আস্থা নেই।” আসিম ইবনে সাবিত নিন্মোক্ত কবিতা আবৃত্তি করে জবাব দিলেন:
“আমার তো দুর্বলতা নেই, কেননা আমি শক্তিমান বর্শাধারী পুরুষ
আমার ধুনক রয়েছে এবং তাতে তীব্র ও তীক্ষè তীর রয়েছে।
শক্ত ও মোটা বর্শার ফলক সে তীরে আঘাত খেয়ে ছিটকে যায়
আসলে মৃত্যুই সত্য, জীবন হলো বাতিল।
আল্লাহ মানুষের জন্য যা নির্ধারিত করে রেখেছেন তা অনিবার্য
আর মানুষ তার অদৃষ্টের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য।”
অতঃপর তাঁরা কাফিরদের সাথে লড়াই করলেন এবং তিনজনই শাহাদাত বরণ করলেন।
আসিম নিহত হলে হুযাইল গোত্রের লোকজন তার মাথা সুলাফা বিনতে সা’দের নিকট বিক্রি করতে মনস্থ করলো। ঐ মহিলার দুই ছেলে উহুদ যুদ্ধে আসিমের হাত মারা যাওয়ার পর সে প্রতিজ্ঞা করেছিলো যে, আসিমের মাথা পেলে সে তার খুলিতে মদ পান করবে। হুযাইল গোত্র এ উদ্দেশ্যে আসিমের মাথা পেলে সে তার খুলিতে মদ পান করবে। হুযাইল গোত্র ও উদ্দেশ্যে আসিমের মাথা আনতে গেলে ভিমরুল ও মৌমাছি তার লাশ ঘিরে রাখায় আনতে পারলো না। তারা বললো, “এখন ওটা এখানেই থাক। বিকাল বেলা ভিমরুল ও মৌমাছি চলে যাবে। তখন আমরা তার মাথা কেটে আনবো।” এই বলে তারা চলে গেল। ইত্যবসরে আল্লাহ ঐ এলাকায় বন্যার তা-ব বইয়ে দিলেন এবং সেই বন্যায় আসিমের লাশ ভেসে উধাও হয়ে গেল।
শাহাদাতের পূর্বে আসিম আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন যে, তাঁর লাশ যেন কোন মুশরিক স্পর্শ করতে না পারে এবং তিনি নিজেও যেন কোন মুশরিককে স্পর্শ না করেন। কোননা তিনি মুশরিকদেরকে মনে প্রাণে অপবিত্র মনে করতেন ও ঘৃণা করতেন। উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন শুনলেন যে, ভিমরুল ও মৌমাছি ঘিরে রাখার কারণে মুশরিকরা আসিমের লাশ স্পর্শ করতে পারেনি, তখন বললেন, “আল্লাহ তাঁর মু’মিন বান্দাকে এভাবেই হিফাজত করেন। আসিম তাঁর জীবদ্দশায় প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, কোন মুশরিককে তিনি স্পর্শ করবেন না এবং কোন মুশরিককেও তাঁর দেহ স্পর্শ করতে দেবেন না। আল্লাহ তাঁর মৃত্যুর পর তাকে ঠিক তেমনিভাবে রক্ষা করেছেন, যেমন জীবদ্দশায় তিনি নিজেকে রক্ষা করে চলেছেন।”
যায়িদ ইবনে দাসিনা, খুবাইব ইবনে আদী ও আবদুল্লাহ ইবনে তারিক এরা তিনজন নমনীয় মনোভাব গ্রহণ করে বেঁচে থাকার প্রতি আগ্রহী হলেন। তাঁরা হাত বাড়িয়ে দিয়ে গ্রেফতারী বরণ করলেন। কাফিররা তাঁদেরকে গ্রেফতার করে বিক্রির জন্য মক্কায় নিয়ে চললো। যাহরান পর্যন্ত পৌঁছলে আবদুল্লাহ ইবনে তারিক হাতের বাঁধন খুলে মুক্ত হলেন এবং তরবারী ধারণ করলেন। কাফিররা তাঁকে ধরতে পারলো না। কিন্তু দূর থেকে পাথর ছুড়ে তাকে শহীদ করলো। যাহরানেই তাঁকে সমাহিত করা হয়।
অতঃপর খুবাইব ইবনে আদী ও যায়িদ ইবনে দাসিনাকে নিয়ে তাঁরা মক্কায় উপনীত হলো। কুরাইশদের কাছে হুযাইল গোত্রের দু’জন বন্দী ছিল। তাদের বিনিময়ে তারা ঐ দ্ইু সাহাবীকে কুরাইশদের কাছে বিক্রি করলো। খুবাইবনে কিনলো উকবা ইবনে হারেসের পক্ষে হুজায়ের ইবনে আবু ওহাব, যাতে উকবা তার পিতৃহত্যার প্রতিশোধ স্বরূপ তাঁকে হত্য করতে পারে। আর যায়িদ ইবনে দাসিনাকে নিল সাফওয়ান ইবনে উমাইয়া স্বীয় পিতা উমাইয়া ইবনে খালফের হত্যার বদলে হত্যা করার জন্য। সাফওয়ান তার গোলাম নাসতাসের সাথে তাঁকে হারাম শরীফের বাইরে তানয়ীমে পাঠিয়ে দিল হত্যার উদ্দেশ্যে। সেখানে আবু সুফিয়ান সহ কুরাইশদের এক বিরাট জনতা যায়িদকে ঘিরে ধরলো। যায়িদকে যখন হত্যা করার জন্য এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো তখন আবু সুফিয়ান বললো, “হে যায়িদ, তোমার বদলে আজ যদি আমরা মুহাম্মাদকে হাতে পাই এবং তাকে হত্যা করি ও তোমাকে তোমার পরিজনের কাছে পাঠিয়ে দিই তাহলে তুমি কি তা পছন্দ করবে?” যায়িদ বললেন, “আল্লাহর কসম, আমি এতটুকুও পছন্দ করবো না যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেখানে আছেন সেখানে থাকা অবস্থাতেই তাঁর গায়ে কাঁটা ফুটবে, তিনি তাতে যন্ত্রণায় ভুগবেন আর আমি নিজের পরিজনের মধ্যে আরামে বসে থাকবো।”
আবু সুফিয়ানের মন্তব্য এই যে, “মুহাম্মাদকে তার সাহাবীরা যেরূপ ভালোবাসতো এমন গভীর ভালোবাসা আর কারো মধ্যে আমি দেখিনি।” এরপর নাসতাস যায়িদকে হত্যা করলো।
হুজাইর ইবনে আবু ওহাবের এ মুক্তিপ্রাপ্ত দাসী মাবিয়া ইতিমধ্যেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, বলেন, খুবাইব আমার কাছেই ছিলেন। তঁকে আমার ঘরেই বন্দী করে রাখা হয়েছিলো। একদিন তাঁকে দেখলাম, মানুষের মাথার মত বড় একটা আঙ্গুরের থোকা নিয়ে আঙ্গুর খাচ্ছেন। অথচ এ সময় মক্কায় আঙ্গুর ছিল না। তাঁর হত্যার সময় যখন ঘনিয়ে এলো তখন মৃত্যুর প্রস্তুতিস্বরূপ পাক সাফ হবার জন্য আমার কাছে একখানা ক্ষুর চাইলেন। পাড়ার একটা ছেলেকে দিয়ে আমি তাকে ক্ষুর আনিয়ে দিলাম। ক্ষুর নিয়ে ঐ ছেলেকে খুবাইবের ঘরে ঢুকতে বললাম। সে ঘরে চলে গেলে সহসা আমার মনে হলো। একি করলাম। সর্বনাশ! এই লোকটি যদি ছেলেটিকে হত্যা করে প্রতিশোধ নেয় তাহলে কি হবে? সে তো নিজের জীবন নাশের বদলে একজনের জীবন নিয়ে আগাম প্রতিশোধ নিয়ে নেবে। ছেলেটি যখন খুবাইবকে ক্ষুর দিল তখন তিনি বললেন, “তোমার মা তোমাকে এই ক্ষুর নিয়ে আমার কাছে পাঠানোর সময় ভয় পায়নি তো?” এই বলে ছেলেকে তৎক্ষণাৎ পাঠিয়ে দিলেন।
এরপর খুবাইবকে কুরাইশরা তানয়ীমে নিয়ে গেল হত্যা করতে। খুবাইব বললেন, “তোমাদের যদি আপত্তি না থাকে তাহলে আমাকে দু’রাকাত নামায পড়তে দাও।”তারা বললো, “ঠিক আছে, পড়।”
তিনি খুব নিখুঁতভাবে দু’রাকাত নামায প্রড়ে নিলেন। অতঃপর কাফিরদের সামনে গিয়ে বললেন, “তোমরা যদি মনে না করতে যে,আমি মরার ভয়ে দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী নামায পড়ে সময় কাটাচ্ছি তাহলে আমি আরো কিছুক্ষণ নামায পড়তাম।” বস্তুত: মুসলমানরা যখনই এ ধরনের হত্যরর সম্মুখীন হন তখন দু’রাকাত নামায পড়া তাদের একটা রীতিতে পরণিত হয়েছে এবং খুবাইবই এ রীতির প্রথম প্রচলনকারী অগ্রনায়ক।
অতঃপর কাফিররা তাঁকে একটা কাঠের ওপর চড়িয়ে কষে বাঁধলো। এই সময় খুবাইব নিম্নরূপ দোয়া পড়লেন, “হে আল্লাহ, আমরা আপনার রাসূলের বার্তা পৌঁছিয়ে দিয়েছি। সুতরাং আগামীকাল সকালের মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আমাদের সাথে যে আচরন করা হলো তার খবর পৌঁছিয়ে দিন। হে আল্লাহ, এই দুশমনদেরকে আপনি গুনে গুনে এক এক করে হত্যা করুন এবং এদের কাউকে ছেড়ে দেবেন না।” অতঃপর তারা খুবাইবকে (রা) হত্যা কররো। আল্লাহ তাঁর ওপর রহমত নাযিল করুন।
আবু সুফিয়ান পুত্র মুয়াবিয়া (রা) বলতেন, “সেদিন খুবাইবের চারপাশে যারা জমায়েত হয়েছিলো তাঁদের মধ্যে আবু সুফিয়ানের সাথে আমিও ছিলাম। তখন এরূপ জনশ্রুতি প্রচলিত ছিল যে, কারোর ওপর অভিশাপ দেয়া হলে সে যদি তৎক্ষনাৎ কাত হয়ে শুয়ে পড়ে তাহলে এ অভিশাপ থেকে সে বেঁচে যায়।”
জুমাহী গোত্রের সাঈদ ইবনে আমেরকে উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) সিরিয়ার কোন এব এলাকায় প্রশাসক নিয়োগ করেছিলেন। তিনি আকষ্মিকভাবে লোকজনের সামনে মূর্ছা যেতেন। উমার ইবনুল খাত্তাবকে (রা) একথা জানানো হলো। তাঁকে জানানো হলো যে, সাঈদের কি যেন হয়েছে। উমার (রা) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে সাঈদ, তোমার কি হয়েছে? ” সাঈদ বললেন, “আমীরুল মু’মিনীন, আমর কোন অসুখ-বিসুখ হয়নি। তবে আমি খুবাইবে হত্যার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলাম এবং খুবাইবের বদদোয়া শুনেছিলাম। সেই বদদোয়ার কথা যখনই আমার মনে পড়ে এবং আমি কোন মজলিসে থাকি তখনই আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।” পরে উমারের কাছে থেকে তিনি সুস্থ হয়ে উঠলেন।
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেন, আসিম ও মুরসাদের দলটি যখন রাজীতে আক্রান্ত হলো তখন সে খবর শুনে মুনাফিকরা মন্তব্য করলো, “ধিক এই ধোঁকা খাওয়া লোকগুলোকে যারা এমন করে মারা পড়লো। তারা বাড়ীতেও থাকলো না, আর তাদের নবীর দাওয়াতও পৌঁছালো না। ”আল্লাহ মুনাফিকদের এ কথাবার্তার জবাবে আয়াত নাযিল করলেন।”
[আরবী *********]
কোন কোন লোক এমন ও আছে যার কথা পার্থিব জীবনে তোমাকে চমৎকৃত করে দেয় র্(অর্থাৎ মুখ দিয়ে ইসলামের চমৎকার বুলি আওয়ায়) এবং তার মনে যা আছে সে সম্পর্কে আল্লাহকে সাক্ষী মানে (তার মনের অবস্থা তার মুখের কথার সম্পূর্ণ বিপরীত) অথচ সে ন্যায় ও সত্যের কট্রর দুশমন। (অর্থাৎ তোমার সাথে যখন আলাপ-আলোচনা করে তখন ঘোরতর বিতর্কে লিপ্ত হয়।) আর যখন সে ক্ষমতার অধিকারী হয় তখন পৃথিবীতে অরাজকাত ছড়ায় এবং ফসল ও মানবকুলকে ধ্বংস করতে সচেষ্ট হয়। আল্লাহ তার এই ধ্বংসাত্মক বার্যকলাপ পছন্দ করেন না। তাকে যখন আল্লাহকে ভয় করতে বলা হয়, তখন তার আত্মসম্মানবোধ তাকে পাপের পথে আগলে রাখে এ ধরনের লোকের জাহান্নামই যথেষ্ট। আর তা অত্যন্ত খারাপ জায়গা। আবার কেউ কেউ এমনও আছে যে,আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য (আল্লাহর পথে জিহাদ করতে ও তার হক আদায় করতে গিয়ে) নিজেকে কুরবানী করে দিয়েছে। বস্তুত: আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ওপর বড়ই অনুকম্পশীল।” শেষের কথা কয়টিতে রাজী অভিযাত্রী মুসলমানদের কথাই বলা হয়েছে।
এ ঘটনা সম্পকে ঐতিহসিকগণ খুবাইবের কবিতা উদ্বৃত করেছেন। খুবাইব যখন জানতে পারলেন যে, তাঁকে শূলে চড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় হয়েঁেছ তখন এ কবিতাটি বলেন:
“দলগুলো তাদের সকল গোত্রকে আমার চারপাশে একত্রিত করেছে
তারা যতদূর পারে আমার ওপর শত্রুতা জাহির করেছে,
কেননা আমি স্বীয় প্রাণ বিপন্ন হওয়া সত্ত্বেও আপন আদর্শে অবিচল রয়েছি।
তারা তাদের সকল নারী ও সন্তানদেরকে, জমায়েত করেছে,
আর আমাকে দীর্ঘ ও সুরক্ষিত ডালের নিকটবর্তী করা হয়েছে
(শূলে চড়ানোর জন্য)
আমার প্রবাস জীবন ও মর্মবেদনার আকুতি শুধু আল্লাহর কাছেই তুলে ধরছি।
আর শত্রুর দলসমূহ আমার হত্যার জন্য যে আয়োজন করেছে তাও।
অতএব, হে আরশের অধিপতি,আমার বিরুদ্ধে যে কুমতলব আঁটা হয়েছে,
তার ওপর আমাকে ধৈর্য ধারণের ক্ষমতা দিন।
শত্রুরা আমার গোশত বিক্রী করে দিয়েছে,
আর সেই সাথেই আমার জীবনের আশার প্রদীপ নিভে গেছে।
তবে সেটা (আসন্ন মৃত্যু ) কেবলমাত্র ইলাহর উদ্দেশ্যেই,
তিনি যদি চান আমার টুকরো টুকরো অঙ্গ প্রত্যঙ্গেও অশেষ বরকত
দান করতে পারেন,
তারা আমাকে এক ইলাহর বদলে মৃত্যু ও কুফরীর
কোন একটি গ্রহণ করতে বলেছিল।
আমার চোখ সে দুটোকেই অগ্রাহ্য করেছে এবং আমর মন
মোটেই (মৃত্যুভয়ে) ভীত নয়
আমি মৃত্যুর কিছুমাত্র পরোয়া করি না, কেননা আমাকে মরতে হবেই।
আমি শুধু নিস্তার চাই সর্বগ্রাসী জাহান্নামের আগুন থেকে।
আল্লাহর শপথ, আমি কোনই ভয় পাবো না যখন মুসলিম অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবো, আর আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিহত হয়ে আমি যে দিকেই ঢলে পড়িনা কেন।
আমি শত্রুর সামনে বিন্দুমাত্রও নমনীয়তা দেখাবো না,
প্রকাশ করবো না কোনই অস্থিরতা। কেননা আল্লাহর কাছেই আমার প্রত্যাবর্তন।”
খুবাইবের জন্য শোক প্রকাশ করে হাস্সাস ইবনে সাবিত নিন্মোক্ত কবিতা রচনা ও আবৃত্তি করেণ,
“তোমার চোখের কি হলো যে, অশ্রু থামছেই না (নিজেকে সম্বোধন করে)
বুকের ওপর দিয়ে অবিরত ধারায় গড়িয়ে চলেছে মুক্তার মত
খুবাইবের শোকে-যিনি সেই যুবকদের অন্যতম যারা জেনেছে,
তাঁর (আল্লাহর) সাথে যখন তুমি মিলিত হবে তখন ব্যর্থতা কিংবা
অস্থিরত থাকবে না।
অতএব, হে খুবাইব, তুমি চলে যাও! আল্লাহ তোমাকে উত্তম পুরষ্কার দিন।
তোমারা কি জবাব দেবে যদি নবী তোমাদেরকে জিজ্ঞেস করেন (হে কুরাইশরা)
যখন পুণ্যবান ফেরেশতারা চক্রবালে সমবেত থাকবে,
কিসের বদলায় আল্লাহর সাক্ষীকে তোমরা হত্যা করলে?
একজন খোদাদ্রোহী সুবিধাবাদী ও দেশে দেশে উৎপাত সৃষ্টিকারী লোকের বদলায়?
(উল্লেখ্য যে, বদর যুদ্ধে হারেসকে খুবাইব (রা) হত্যা করেছিলেন।)