2 of 3

০৮৮. সাওয়ীক অভিযান

জিলহাজ্ব মাসেই আবু সুফিয়ান ইবনে হারব সাওয়ীক অভিযান চালায়। এই বছর মুশরিকরা হজ্ব বাদ দিয়েই যুদ্ধে এসেছিল। কেননা আবু সুফিয়ান এবং কুরাইশদের অন্যান্য লোকেরা বদর থেকে পরাজয়ের গ্লানি মাথায় নিয়ে মক্কায় ফিরেই প্রতিজ্ঞা করলো যে, মাহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর আর একটি হামলা চালিয়ে উপযুক্ত প্রতিশোধ না নেয়া পর্যন্ত স্ত্রী সঙ্গমজনিত অপবিত্রতা দূর করার জন্য গোসলের পানি মাথায় লাগাবো না [৫৯. হজ্ব ও বিয়ে শাদীর মত এই গোসলেরও রেওয়াজ জাহিলিয়াত যুগে ছিল।] এই প্রতিজ্ঞা পূরণের জন্য আবু সুফিয়ান দুশো ঘোড় সওয়ার নিয়ে রওনা হলো। নাজদিয়া অতিক্রম করে সে মদীনার অনতিদূরে অবস্থিত ‘সায়েব’ নামক পাহাড়ের পার্শ্ববর্তী একটি ঝর্ণার কাছে এসে তাঁবু স্থাপন করলো। অতঃপর রাতের আঁধারে সে বনু নাযীরের হুয়াই ইবনে আখতাবের বাড়ীতে পৌঁছে দরজায় করাঘাত করলো। হুয়াই শংকিত হয়ে দরজা খুলতে অস্বীকার করলো। অগত্যা আবু সাফিয়ান সালাম ইবনে মিশকামের কাছে গেল। এই ব্যক্তি ছিল তৎকালে বনু নাযীরের সরদার এবং তাদের আপৎকালীন সংকট মুকাবিলার জন্য সঞ্চিত তহবিলের সংরক্ষক। আবু সুফিয়ান তার বাড়িতে ঢোকার অনুমতি প্রার্থনা করলে সে অনুমতি দিল। সে তাকে আপ্যায়নও করলো। সালাম তাকে মদীনার আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি অবহিত করলো। অতঃপর আবু সুফিয়ান রাত থাকতেই তার সহচরদের কাছে চলে গেল। সে কুরাইশ বাহিনীর কিছু লোককে মদীনার পাঠিয়ে দিল। তারা মদীনার পার্শ্ববর্তী উরাইব নামক স্থানে উপনীত হলো। সেখানকার খেজুর বাগানে তারা আগুন জ্বালালো। সেখানে তারা আনসার ও তার জনৈক মিত্রকে তাদের একটি যৌথ কৃষি খামারে পেয়ে হত্যা করলো। তারপর যেদিক থেকে এসেছিল সেদিকে অদৃশ্য হয়ে গেল। মদীনাবাসী তাদের এই কর্মকা- টের পেয়ে গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সন্ধানে বেরিয়ে পড়লেন। বাশীর ইবনে আবদুল মুনযিরকে মদীনার দায়িত্বে রেখে গেলেন। ‘কারকারাতুল কাদর’ নামক স্থানে পৌঁছে আবু সুফিয়ান ও তার দলবলের কোন হদিস না পেয়ে ফিরে এলেন। খামারের ভেতরে তাদের ফেলে যাওয়া কিছু জিনিসপত্র দেখতে পেলেন। হালকা হয়ে দ্রুত পালানোর উদ্দেশ্যে তারা ওগুলো ছুড়ে ফেলে দেয়।[৬০.ক্রুাইশদের ফেলে যাওয়া এই সব জিনিসের মধ্যে বেশীরভাগ ছিল গম বা জবের ছাতুÑ যা দুধ, মধু ও ঘি দিয়ে অথবা পানি দিয়ে খাওয়া যায়। এই ছাতুকে আরবীতে সাওয়ীক বলা হয়। আর এই কারনেই এই অভিযানের নাম হয়েছে ‘সাওয়ীক অভিযান।’] বিনাযুদ্ধে ফিরে আসা হলো বলে মুসলমানরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, “হে আল্লাহর রাসূল, এটা কি আমাদের জিহাদ বলে গণ্য হবে?” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, “হ্যাঁ।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *