কহতে হ্যাঁয় আগে থা বুতোঁ
মে রহম্
হায় খুদা জানীয়ে অহ্ কবকী বাত।।
(লোকে বলে আগের দিনে প্রতিমাদের বুকে দয়ামায়া ছিল,
হায়, ঈশ্বরই জানেন ওঁরা কবেকার কথা বলছেন।।)
মান্টোভাই, কালে মহলের জীবন যতই নিঃসঙ্গতা থাক না কেন, তেরো বছর বয়স পর্যন্ত আগ্রা আমাকে যা দিয়েছে, তা আমি সারা জীবনেও ভুলিনি। আগ্রার হাওয়া আর জল ছিল আমার আত্মার অংশ। আগ্রার প্রতিটি পথে এখনও আমার স্মৃতির মণিমুক্তো ছড়িয়ে আছে। যে ইক আমার হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করেছে, তাঁর খেলাঘর তো ছিল আগ্রাই। প্রতিটি বাগানের ফুল থেকে ঝরে পড়ত অনাস্বাদিত ভালবাসা, প্রতিটি গাছের পাতা যেন আমাকে আদর করতে চাইত। সত্যি বলতে কী, মান্টোভাই, আগ্রা আমার ভেতরে নীল ঝকঝকে আশমান ঢুকিয়ে দিয়েছিল। সেই আশমানে মাঝে মাঝেই ফুটে উঠত এক ফলক আরা। সে এক অনিঃশেষ হাসির ঝরনা। আমি তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতুম, সেই নক্ষত্রের হার আমার দিকে তাকিয়ে ক্ষণে ক্ষণে তাঁর রং দেখা যেত। কে সে? পুরা জিন্দেগি গুজর গিয়া মান্টোভাই, আমি তবু তাকে চিনতে পারলুম না, কখনও হাত দিয়ে ছুঁতে পারলুম না। একদিন বেশ মজা হয়েছিল। আমি চহরবাগের সামনের রাস্তা দিয়ে একা একা হাঁটছিলুম। হটাৎ দেখি, এক বেগম সাহেবা বসে আছেন বাগানে, আমার চেয়ে বয়েসে অনেকটাই বড়। হাফিজসাব বোধ হয় তার জন্যই লিখেছিলেন,
অগর অঁ তুর্ক-এ-শিরাযী
বদস্ত আরদ দিল-এ-মারা
বখাল-এ হিন্দবশ বখশম
সমরখন্দ ব বুখারারা
(গালে কালো-তিল সেই সুন্দরী
স্বহস্তে ছুঁলে হৃদয় আমার,
বোখারা তো ছার, সমরখন্দও
খুশি হয়ে তাকে দেব উপহার।
তাঁকে দেখে আমার ঘোর লেগে গেল, আমি বাগানে ঢুকে, তার পিছনে অনেক দূরে দাঁড়িয়ে ডাকলুম, ফলক আরা।
বেগম সাহেবা ফিরেও তাকালেন না। শুধু মাথা থেকে ওড়না সরিয়ে ছড়িয়ে দিলেন তাঁর কোঁকড়ানো চুল, যেন পানপাত্র ভেঙে ছড়িয়ে গেল সুরা, মান্টোভাই।
আহা হা, মীরসাবের সেই শের মনে পড়ে গেল বেগম সাহেবার কেশবাহার দেখে,
উসকে কাকুলকী পহেলী কহো তুম বুঝে মীর,
কেয়া হ্যয় জঞ্জীর নহী, দম নহী, মার নহী।
(তাঁর কোঁকড়ানো চুলের ধাঁধা কিছু বুঝতে পারলে, মীর?
কী এটা? এ তো শিকল নয়, সাপ নয়, ফাঁদ নয়।)
আমি আবার ডাকলুম, ফলক আরা।
এবার বেগম সাহেবা ফিরে তাকালেন। তাঁর হাসির কথা বলব, এমন সাধ্য আমার নেই। সেই হাসি দেখে আমার আবার হাফিজসাবের শের মনে পড়ল:
বাদা-এ-গুলরংগ ব তল্খ
ব
অজব খশ্খ্বরে সুবুক
নুক্লে অয লালে নিগার ব
নুক্লে অয য়াকুতে জাম।
(পেয়ালায় দাও হালকা মধুর
নেশায় মাতানো রসাস্বাদন।
ধারালো তীব্র সেই শরাবের,
যার রং ঠিক ফুলেরই মতন।)।
-তুম কৌন হো? তিনি হাতছানি দিয়ে আমাকে ডাকলেন।
আমি পায়ে পায়ে তাঁর দিকে এগিয়ে গেলুম। তিনিও আমার দিকে এগিয়ে এলেন। আমার হাত চেপে ধরে ফিসফিস করে বললেন, ফলক আরা কৌন হয়?
তাঁর খুবসুরতির সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলব? কোনও কথাই তো খুঁজে পাই না। তিনি আবারও জিজ্ঞেস করলেন, ফলক আরা কৌন হ্যায়?
এবার আমি সাহস করে বলে ফেললুম, জানি না, জি।
-এই নাম তুমি কোথায় পেলে?
-আগ্রার আকাশে, জি।
বেগম সাহেবা হেসে উঠলেন।-ইনশাল্লা, আগ্রার আকাশে এই নাম লেখা আছে বুঝি।
-জি।
-তুমি দেখেছ?
-জি।
-কব দেখা?
-হর রোজ।
-মীরসাবের একটা শের জানো?
-বলুন, জি।
-ফির কুছ এক দিল-কো বেকার রী হৈ
সীনহ জুয়া-এ জখমকারী হৈ।
মান্টোভাই, সত্যিই তো, আমার হৃদয় তখন অস্থির হয়ে উঠেছে। আমি তাকেই তো খুঁজতে বেরিয়েছি, যার আঘাতে আবারও কলিজা ফেটে যাবে আমার। কিন্তু তাকে না খুঁজেই বা কোথায় যাব আমি? আমার জীবনে নিজের কোনও মহল নেই, ঘর তো আমাকে খুঁজতেই হবে, কিন্তু ঘর খুঁজতে গিয়ে আমি দোজখের পর দোজখ পার হয়ে গেছি, সে-পথ এক দীর্ঘ শীতের রাত, আর রহমান-আর রহিম, আমি নীরবে চিৎকার করেছি, আমাকে বাঁচাও, আল-বশীর, আমাকে একবার খোশনসিব করো।
তারপর, কী হল জানেন, মান্টোভাই? তিনি আমার হাত ধরে চহরবাগের ভেতরে ঘুরতে ঘুরতে একটা খাঁচার সামনে এসে দাঁড়ালেন। খাঁচার ভেতরে উড়ছে অনেক ময়নাপাখি। বেগম সাহেবা আমার দিকে তাকালেন। কীরকম তাকানো জানেন, মান্টোভাই? সেই দৃষ্টিতে যেন লেখা ছিল হাফিজসাবের শের:
অলা ঐ আহ্ -এ-বশী কুজাঈ
মরা বা ভূস্ত বিস্তার আশ্নাঈ।
(হে উদভ্রান্ত বাউল হরিণ,
তুমি আছ কোনখানে কোন বনে!
তোমার আমার ভাব-ভালবাসা
সেই কবে থেকে! পড়ে না কি
মনে?)
এই শের শোনার পর, মান্টোভাই, কোনও সুন্দরীর দিকে যদি কেউ চোখ তুলে তাকাতে পারে, তা হলে আমি বলব, ইশ্ব কাকে বলে, সে জানে না। এরপর আপনি শুধু সেই বেগমের কদমবুশি করে বলতে পারেন:
হাজারোঁ খাাহিশে ঐসী কেহ্
হর ঋহিশ-পে দম নিক্লে,
বহুৎ নিকলে মেরে আর্মান, ফির-ভী কম নিকলে।।
হ্যাঁ, মান্টোভাই, আমার শত-শত বাসনা এমনই যে প্রত্যেকটার জন্য প্রাণ যায় যায়, অনেক বাসনা আমার পূর্ণ হল, তবুও কম হল। এই যে কম হল, এ-জন্যই তো আমরা বেঁচে থাকি, তাই না? অপেক্ষা করি, তবু পাত্র পূর্ণ হয় না। আমি তাঁর পায়ের দিকে তাকিয়ে মনে মনে। গাইলুম,
ভরা থাক, ভরা থাক,স্মৃতিসুধায়
বিদায়ের পাত্রখানি।
কোথা থেকে ভেসে এল এই গান আমি জানি না, মান্টোভাই। আগে তো কখনও শুনিনি। কোথা থেকে যে কী আসে! কোন অতীত থেকে, কত দূরের ভবিষ্যৎ থেকে? অতীত ভবিষ্যতকে ধারণ করে থাকে বলেই কি আশমান এত জ্বলজ্বল করে? আমদের জীবন পোড়া অঙ্গারের মতো ধিকিধিকি জ্বলে। এইভাবে জ্বলতে বড় কষ্ট হয় না মান্টোভাই?
খাঁচার ভেতরে ময়নারা কিচমিচ করতে করতে উড়ছিল। বেগম সাহেবা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, এখানেও একজন ফলক আরা আছে। দেখি চিনতে পার কি না।
আমি পাখিদের দেখতে থাকলুম। একসময় কী যে হল, আমি একটা ময়নার দিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে বলে উঠলুম, ওই তো ফলক আরা।
ময়নাটা দাঁড়ের ওপর বসেছিল।
বেগম সাহেবা আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বললেন, কী করে চিনলে? আগে কখনও দেখেছ?
-না।
-তা হলে?
-ও খুব কাঁপছে।
-কে?
-ফলক আরা।
-কেন? বেগম সাহেবার গলায় নীল রং ফুটে উঠল, আমি বুঝতে পারলুম।
-ও কারও সঙ্গে কথা বলতে চায়।
-কার সঙ্গে?
সত্যিই তো, কার সঙ্গে? আমি কি জানতুম, মান্টোভাই? যেন একটা পানপাত্র, সেভাবেই দুহাতে বেগম সাহেবা আমার মুখ চেপে ধরলেন। ফিসফিস করে বললেন, তুমি কে?
মান্টোভাই, আমি তাঁকে বলতে পারিনি, চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলুম, কিন্তু মনে মনে বলেছি,
হাফিজ ই হালে আজব
বা কে গুফক্ত কি মা
বুলবুলাঁনেম কি দর
মোসমে গুল খামোশেম।
সত্যিই, হাফিজসাব যেন আমার কথাই বলে গেছেন, কাকে বলি এই কথা, বড় শোচনীয় হাল আমার, কুসুমের মাস এসেছে, আর বুলবুলের মুখে কথা ফোটে না।
-আমার নামও যে ফলক আরা, তুমি কী করে জানলে? যেন আতরের শিশি থেকে মৃদু গন্ধের মতো বেগম সাহেবার কণ্ঠস্বর ছড়িয়ে যাচ্ছিল।
-জানি না।
-কী করে জানলে, বলো।
-তুমি ফলক আরা-তুমি-তুমিই ফলক আরা। আর কেউ নেই।
আমার খোয়াব ভেঙে গেল, মান্টোভাই। এসব একেবারে সত্যি কথা নয়। আমার খোয়াব। একদিন এইরকম দেখেছিলুম। আমার জীবনের কথা শুনতে চাইলে, এসব খোয়াবের কথাও তো শুনতে হবে। যেমন একদিন খোয়াব দেখেছিলুম, ওস্তাদ তানসেন আমার হাত ধরে ফতেপুর সিক্রির একের পর এক ঘর পেরিয়ে যাচ্ছেন, তারপর একটা ঘরে পৌঁছে আমাকে। বসতে বললেন। সেই ঘরে সেদিন বর্ষা নামল; আর আমি ঘামে ভিজে ঘুম ভেঙে উঠে চিৎকার করে ডাকলুম, কাল্লু-কাহাঁ গিয়া-কালু বেটা-।
কালু সঙ্গে সঙ্গে এসে হাজির।-জি হুজুর।
আমি বিড়বিড় করে বললুম, তার্জুমান আল-আশক্।
-হুজুর।
-হম হ্যায় তাৰ্জুমান আল-আক।
-জি হুজুর।
-বার বার হুজুর বলিস কেন?
-কেয়া চাহতে হ্যায় আপ?
-আজ সকালে একটু খাওয়াবি কাল্লু?
-দারু?
-জি হুজুর। আমি হেসে বলি। কাল্লু আমার পা চেপে ধরে।-মাফ কিজিয়ে হুজুর। সুবহ মে -দে না একটু কাল্লু।
-কেন?
-খোয়াব দেখি।
-কী খোয়ব হুজুর?
-ফলক আরা।
-ময়না দেখবেন? কত ময়না দেখতে চান, আমার সঙ্গে চলুন।
-আমি আমার ফলক আরাকে দেখব কাল্লু, ও তুই বুঝবি না।
কে ফলক আরা, মান্টোভাই? আমার জীবনের একটা খোয়াব। আগ্রার আকাশে তাকে দেখা যেত। আমি জানতুম, কোনদিন তাকে আমি পাব না। আমার ফলক ময়নাকে। সে কোনও না কোনও খাঁচায় বন্দি থেকে যাবে। মীরসাব একবার লিখেছিলেন, জিজ্ঞেস করলুম, কতদিন ফুটবে এই গোলাপ; গোলাপকুড়ি আমার প্রশ্ন শুনে এক চিলতে হেসেছিল, কিছুই বলেনি। তো, সে দাঁড়ের ময়না, ফলক আরাকে দেখে আমি চিনব না? আগ্রা রাতের আকাশে রোজ তার হাসি দেখতে দেখতে মনে হত, কত জন্ম থেকে আমি ওকে চিনি। আর কাল্লু আমাকে দেখাবে ময়না? ছছাঃ! সব ময়নাই কি ফলক আরা হয়, মান্টোভাই, বলুন?
আমি আজও ভাবি, কোথা থেকে আমার খোয়াবে বেগম সাহেবা এসেছিলেন, যাঁর নাম ফলক আরা? এমন বেগমকে তো আমি কখনও দেখিনি। বেগমরা যে পর্দার আড়ালেই ঢাকা থাকতেন, সে তো আর নতুন করে বলবার কথা নয়। তা হলে কে এই বেগম সাহেবা?
এরপর মোতি মহলে একদিন তাঁকে দেখতে পেলুম। সেদিন তাঁকে আর আমি ডাকিনি। দূর থেকে বসে দেখছিলুম। তিনি একবার কানের দুল খুলছেন, আবার পরছেন; নাকছাবিটা খুলে রুপোলি ঔজ্জ্বল্যের দিকে তাকিয়ে আছেন, তারপর পরে নিলেন, আবার খুললেন, আবার দেখলেন; মান্টোভাই, নাকছাবিতে কি কেউ লুকিয়ে থাকতে পারে, না হলে তিনি অতবার ধরে নাকছাবিটা খুলছিলেন কেন; আমার খুব কৌতূহল হল, কী আছে ওই নাকছাবিতে? আমি তাঁর সামনে গিয়ে দাঁড়ালুম।
তিনি চমকে উঠে বললেন, ফির তুম?
-বেগম সাহেবা-
-তুম কিউ মেরে পিছে পড় রহি হু?
-নাকছাবিটা
-কেয়া হ্যায় ইসমে?
-আপনি তাহলে বার বার দেখছেন কেন?
বেগম সাহেবা হা-হা করে হেসে উঠলেন।-খোয়াব কতবার দেখতে ইচ্ছে করে জানো?
-কতবার?
-জন্নত অউর জাহান্নম তক।
-উও তো একই হ্যায় বেগমসাহেবা।
-বোলো ফলক আরা।
তাঁর কণ্ঠস্বরে আমি কুয়াশায় ঢেকে যাই, মান্টোভাই।
-জি?
-আমার নাম ফলক আরা। তুমি জানো না?
বেগম সাহেবা আমার হাত ধরে তাঁর পাশে বসালেন। আমার দুই হাতের আঙুল ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখলেন। তারপর বললেন তুমি কি করো?
-কিছু না।
-মানে?
-কালে মহলে ঘুরে বেড়াই। আগ্রার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরি।
-আর কী করো? তিনি হাসলেন।
-পতঙ্গবাজি, সতরঞ্জ, শরাব
-অউর জেনানা?
আমি হেসে ফেললুম। মান্টোভাই, জেনানার শরীর কী, ততদিনে আমি ছানবিন করে দেখে নিয়েছি। এক এক শরীর যেন এক এক নকশার পশমিনা। আগ্রার এক তবায়েফের সঙ্গে বেশ আশনাইও হয়েছিল আমার। সে যেন হুসন-এ ল-বাম, একেবারে ভোরের মত তাজা। পাকা আতাফল দেখেছেন? আমি ছিলুম সেইরকম। একা একা ফল যেভাবে পেকে যায়, আমি সেভাবেই পেকে গিয়েছিলুম। সারা শরীরে ভোমরার গুনগুন শুনতে পেতুম।
-জি। আমি মাথা নীচু করে বললুম।
-কেয়া, জি?
-জি ইস্তেমাল কিয়া।
সে এক গুলফাম দস্তান, মান্টোভাই। তিনি আমাকে বুকের কাছে টেনে নিলেন। যে-সব কবুতর আমি মহলের ছাদে ছাদে দেখেছি, তাদের চেয়েও আজিব দুই কবুতর তিনি আমাকে দেখালেন। আমি সেই কবুতরদের ঠোঁটে মুখ ঘষতে লাগলুম, তাদের পালকে হাত বুলিয়ে দিতে কী আরাম, কী আরাম। মান্টোভাই, আমার কী মনে হয়েছিল জানেন? এ-পৃথিবী একবার পায় তারে, পায় নাকো আর…।
-একবার বোলো-। তিনি আমার কানে জিভ বুলোতে বুলোতে বলছিলেন, ফির একবার বোলো। মিঞা-
মান্টোভাই, তার ঘাড়ে, কোঁকড়ানো চুলের গভীরে লুকিয়ে ছিল একটা তিল। তিল মানে বিন্দু, আপনি তো জানেনই। নোক্তা থেকেই তো সৃষ্টির শুরুয়াৎ। আমি সেদিন শুধু সেই। বিন্দুমাত্রকেই খাচ্ছিলুম; সেই বিন্দু আমার ভেতরে এমন এক খিদে জিইয়ে রেখে গেল, এ-জীবনে আর মিটল না। মাঝে মাঝে মনে হয়, তিনি ছিলেন এক আশ্চর্য নিগার-ছবি-যার মধ্যে দিয়ে আমি হেঁটে গিয়েছিলুম।
এ সব সত্যি, একবারও ভাববেন না, মান্টোভাই, আল্লা রহিম, আমি কবুল করছি, আমার জীবনে কোনও সত্যি নেই, সব কিস্সা, খোয়াব, দস্তান। আমি তো তখন অনেক ছোট, বেগম সাহেবার বুকে মুখ চেপে বলেছিলাম, মুঝে ছোড়কে মৎ যাইয়ে।
-কিউ?
-আপ মেরি জান-
-মুঝে জান না কহো মেরি জান।
-কেয়া বলু?
-ফলক আরা।
মান্টোভাই, আগ্রা ছাড়ার সময় সেই নক্ষত্রের হার আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেল। ফলক আরা শুধু একটা নাম হয়ে বেঁচে রইল। বিন্দু,নোক্তা, শুরুয়াৎ। এমন এক শুরুয়াৎ, মান্টোভাই, তার ভেতরে শেষও লুকিয়ে আছে।