আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন,
মদীনায় জ্বরের প্রাদুর্ভাব ছিল সর্বাদিক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের অনেকেই রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লেন। আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবীকে এ থেকে ম্ক্তু রেখেছিলেন। আবু বাক্র ও তাঁর দুই ভৃত্য বিলাল ও ‘আমের ইবনে ফুহাইরা একই ঘরে বাস করতেন। তাঁরা সবাই জ্বরে আক্রান্ত হলেন। আমি তাঁদেরকে দেখতে গেলাম। তখনো পর্দার বিধান নাযিল হয়নি। আক্রান্তদের রোগযন্ত্রণা ছিল অবর্ণনীয়। আমি প্রথমে আবু বাকরের (রা) কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “আব্বা, আপনার কেমন লাগছে?” তিনি একটা কবিতা আবৃত্তি করে জবাব দিলেন,
“প্রত্যেক মানুষ তার আপনজনের কাছে অবস্থান করে। অথচ মৃত্যু তার অতি নিকটেই।”
আমি বুঝতে পারলাম এবং মনে মনে বললাম, “আব্বা নিশ্চয়ই প্রলাপ বকছেন। ’
অতঃপর আমের ইবনে ফুহাইরার কছে গিয়ে বললাম, “আমের, আপনার শরীর কেমন?”
তিনিও কবিতা আবৃত্তি করে জবাব দিলেন, “মৃত্যুর সাদ উপভোগ করার আগেই মৃত্যু লাভ করেছি,
কাপুরুষের মৃত্যু তার মাথার ওপরেই থাকে,
প্রত্যেকটি লোক তার সর্বশক্তি দিয়ে জিহাদ করে, ষাঁড় যেমন শিং দিয়ে নিজের চামড়া বাঁচায়।”
আমি বুঝতে পারলাম, ‘আমের সংজ্ঞা হারিয়ে প্রলাপ বকছেন।
বিলালের জ্বরের প্রকোপ যখন বৃদ্ধি পেতো তিনি বাড়ীর উঠানে গিয়ে শুয়ে পড়তেন।
তারপর উচ্চস্বরে কবিতা আবৃত্তি করে বলতেন,
“আহা! আমি কি একটি রাত ইযখের ও গোলাপের সাহচর্যে ফাখখে কাটাতে পারবো?
আর একটি দিনও কি আমি মাজান্নার [৪৯. ফাখ্খ: মক্কায় বাইরের একটি জায়গার নাম। উযখের : এক ধরনের সুগন্ধী উদ্ভিদের নাম। মাজান্না: মক্কার নিম্নাঞ্চলে অবস্থিত একটি বাজার।] জলাশয়ে নামবার সুযোগ পাবো? আর শামা ও তাফীল পর্বত দুটোকে কি আর একবারও দেখতে পাবো?[৫০. শামা ও তাফীর মক্কার দুটো পাহাড়ের নাম।]
তাঁদের কাছে যা শুনলাম তা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গিয়ে জানালাম। আমি বললাম, “জ্বরের প্রচ-তায় তাঁরা সবাই প্রলাপ বকছেন। যা বলছেন তা তাঁরা নিজেরাই বুঝেন না।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “হে আল্লাহ, আপনি মদীনাকে আমাদের কাছে মক্কার মত বা তার চেয়েও বেশী প্রিয় করে দিন। এখানে যেসব ফসল ফলে তাতে আমাদের জন্য বরকত দিন। এখান থেকে যাবতীয় রোগব্যাধি দূর করে মাহইয়ায়াতে [৫১. মাহইয়ায়া সিরিয়ার হাজীদের ইহরাম বাঁধার জায়াগা জুহফার অপর নাম।] নিয়ে যান।”