রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রবিউল আউয়াল মাসে মদীনায় পৌঁছেন এবং পরবর্তী বছর সফর মাস পর্যন্ত মদীনাতেই অবস্থান করেন। এই সময়ের মধ্যে তাঁর জন্য মসজিদ ও ঘর তৈরী করা হয়। উপরন্তু মদীনার আনসারদের এই গোত্রটির (বনু মালিক ইবনে নাজ্জার) ইসলাম গ্রহণের ফলে ইসলাম ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। একমাত্র খতমা, ওয়াকেদ, ওয়ায়েক ও উমাইয়া এই চারটি পরিবার ছাড়াও আওস গোত্রের একটি গোষ্ঠী পৌত্তলিকতা আঁকড়ে থাকে।
আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান আমর কাছে বর্ণনা করেছেন যে, মদীনায় রাসূলুল্লাহ (সা) প্রথম যে ভাষণ দেন তাতে প্রথমে জনতার সামনে দাঁড়িয়ে তিনি আল্লাহর যথাযোগ্য প্রশংসা করেন। তারপর নিম্নবর্ণিত কথাগুলো বলেন:
“হে জনম-লী, তোমরা আখিরাতের জন্য পুণ্য সঞ্চয় কর। জেনে রেখো, তোমাদের মধ্য থেকে কেউ হয়তো সহসাই মারা যাবে, তার মেষপাল দেখার লোকও থাকবে না। অতঃপর তার রব জিজ্ঞেস করবেন। কোন দোভাষীও সেখানে থাকবে না। তিনি বললেন,‘তোমার কাছে কি আমার রাসূল আসেনি? আমি কি তোমাকে ধন সম্পদ অনুগ্রহ বিতরণ করিনি? তা থেকে তুমি কতটুকু আখিরাতের জন্য পাঠিয়েছো?’ তখন সে ডানে বামে তাকাবে। কিন্তু কিছুই দেখতে পাবে না। সামনের দিকে তাকাবে। সেখানে জাহান্নাম ছাড়া কিছুই দেখতে পাবে না। যে ব্যক্তি নিজেকে দোযখ থেকে রক্ষা করতে পারে, তার নিজেকে রক্ষা করতে যত্নবান হওয়া উচিত তা যদি একটা খোরমার অংশ দিয়েও হয়। যার এটুকু ক্ষমতা সেই তারও উচিত অন্তত ভালো কথা বলে নিজেকে দোযখ থেকে রক্ষা করা। কেননা প্রতিটি ভালো কাজের পুরস্কার দশগুণ থেকে সাতশো গুণ পর্যন্ত দেয়া হয়। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।”
আরেকবার তিনি নিম্নরূপ ভাষণ দেন,
“সকল প্রশংসা। আমি তাঁর প্রশংসা করি ও তাঁর কাছেই সাহায্য চাই। আমরা তাঁর কাছে প্রবৃত্তির কুপ্ররোচনা ও খারাপ কাজ থেকে আশ্রয় চাই। আল্লাহ যাকে হিদায়াত দান করেন তাকে কেউ বিপথগামী করতে পারে না। আর আল্লাহ যার জন্য গুমরাহীর অনুমোদন দান করেন তাকে কেউ সুপথগামী করতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি একক ও লা শরীক। বস্তুত: আল্লাহর কিতাব হলো সর্বোত্তম কথা। যে ব্যক্তির অন্তরে তিনি কুরআনকে আকর্ষণীয় করেছেন এবং যাকে কুফরীতে নিমজ্জিত থাকার পর ইসলাম গ্রহণের সুযোগ দিয়েছেন এবং যে মানুষের কথা বাদ দিয়ে কুরআনকে গ্রহণ করেছে সে সফলকাম। কেননা কুরআনের চেয়ে সুন্দর ও অলংকারম-িত কথা আর নেই। আল্লাহ যা পছন্দ করেন তোমরা তাই পছন্দ কর। আল্লাহকে সমগ্র মন দিয়ে ভালবাস। আল্লাহর বাণী চর্চা ও তাঁর স্মরণে গাফিল হয়ো না এবং মনকে কঠিন হতে দিও না। কেননা আল্লাহ তাঁর প্রত্যেক সৃষ্টি থেকেই কিছু সংখ্যককে বাছাই করেন। তার আমল থেকেও কিছু আমলকে মনোনীত বলে স্থির করেছেন। তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকেও কিছু সংখ্যাক বান্দাকে মনোনীত করেছেন। তিনি উত্তম কথা পছন্দ করেন। মানুষকে কিছু দেয়া হয়েছে তার মধ্যে হালাল ও হারাম দুই-ই আছে। অতএব আল্লাহর ইবাদাত কর এবং তাঁর সাথে কোন কিছু শরীক করো না। তাঁকে যথার্থভাবে ভয় কর। তোমরা যে সব কথা মুখে বলে থাক তার ভেতরে যে কথা উত্তম তাকে কার্যে পরিণত করার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সম্যবাদী হও, আল্লাহর অনুগ্রহ দ্বারা পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা গড়ে তোল। আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার লংঘিত হলে তিনি ক্রুদ্ধ হন। তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।”
অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসার ও মুহাজিরদের মধ্যে একটি ঘোঘনাপত্র সম্পাদন করেন। এই দলীলের মাধ্যমে তিনি ইহুদীদের সাথে শাস্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রতিশ্রুতি প্রদান ও গ্রহণ করেন, তাদের ধর্মপালনের স্বাধীনতা ও ধন সম্পদে তাদের মালিকানার স্বীকৃতি দেন এবং তদের সাথে কিছু শর্ত প্রদান ও গ্রহণ করেন। সে ঘোষণাপত্র নিম্নরূপ:
“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, কুরাইশ ও ইয়াসরিবের মু’মিন মুসলমানগণ এবং পরবর্তীকালে যারা তাদের অনুসারী হয়ে তাদের সাথে শরীক হবে ও একসাথে জিহাদে অংশগ্রহণ করবে, তাদের পক্ষ থেকে এ একটি ঘোষণাপত্র। সমগ্র মানব জাতির মধ্যে তারা একটি স্বতস্ত্র উম্মাহ। কুরাইশদের মধ্য থেকে আগত মুহাজিররা তাদের ইসাম গ্রহণকালীন অবস্থার ওপর বহাল থকবে, তাদের পরস্পরের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দানের নীতি অক্ষুণœ থাকবে, তাদের পরস্পরের মধ্যে সাবেকী ক্ষতিপূরণ দানের নীতি অটুট থাকবে, প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মু’মিনদের মধ্যে মুক্তিপণ নিয়ে বন্দীকে মুক্তি দেয়ার বিধান চালু থাকবে। বনু সায়েদাও তাদের ইসলাম গ্রহণকালীন অবস্থার ওপর বহাল থাকবে। তাদের প্রত্যেক গোষ্ঠীর মুমিনদের মধ্যে বন্দীকে মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেয়া চলবে। বনু হারেস তাদের ইসলাম গ্রহণকালীন অবস্থার ওপর বহাল থাকবে। তাদের পরস্পরের মধ্যে সবেকী ক্ষতিপূরণ দানের নীতি অক্ষুণœ থাকবে। তাদের প্রত্যেক গোষ্ঠীর মু’মিনদের মধ্যে বন্দীকে মুক্তপণের ভিত্তিতে মুক্তি দেয়ার রীতি অব্যাহত থাকবে। আর বনু জুশামও ইসলাম গ্রহণকালীন অবস্থার ওপর বহাল থাকবে। তাদের সাবেকী ক্ষতিপূরণ দানের রীতি চালু থাকবে। তাদের প্রত্যেক গোষ্ঠীর মু’মিনদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গতভাবে মুক্তিপণের ভিত্তিতে বন্দী মুক্তির নীতি অক্ষুণœ থাকবে। বনু নাজ্জারও ইসলাম গ্রহণকালীন অবস্থার ওপর বহাল থাকবে। তাদের প্রত্যেক গোষ্ঠীর মু’মিনদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গতভাবে মুক্তিপণ নিয়ে বন্দী মুক্তির নীতি অব্যাহত থাকবে। বনু আমর ইবনে আওফ ইসলাম গ্রহণকালীন অবস্থার ওপর বহাল থাকবে। তাদের সাবেকী ক্ষতিপূরণ দানের রীতি অব্যাহত থাকবে। তাদের প্রত্যেক গোষ্ঠীর মু’মিনদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গতভাবে মুক্তিপণের ভিত্তিতে বন্দীকে মুক্তি দেয়া চলবে। বনু নাবীত ইসলাম গ্রহণকালীন অবস্থার ওপর বহাল থাকবে। তাদের সাবেকী ক্ষতিপূরণ দানের রীতি চালু থাকবে। তাদের প্রত্যেক গোষ্ঠীর মু’মিনদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গতভাবে মুক্তিপণ নিয়ে বন্দী মুক্তির নীতি অব্যাহত থাকবে। বনু আওস ইসলাম গ্রহনকালীন অবস্থার ওপর বহাল থাকবে। তাদের প্রত্যেক গোষ্ঠীর মু’মিনদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গতভাবে মুক্তিপণের ভিত্তিতে বন্দীকে মুক্তি দেয়া চলবে। মু’মিনগণ তাদের মধ্যকার ঋণগ্রন্ত ও অধিক সন্তানধারী প্রত্যেক ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ ও মুক্তিপণদানে সঙ্গতভাবে আর্থিক সাহায্য করবে। কোন মু’মিন অন্য মু’মিনের মিত্রের বিরোধিতা করবে না। খোদাভীরু মু’মিনগণ তাদের মধ্যকার বিদ্রোহী, ঘোরতর নির্যাতক, অপরাধী, মুসলিম সমাজের স্বার্থের ক্ষতিকারক ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারকের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যাবস্থা নেবে এবং এ ধরনের অপরাধীর বিরুদ্ধে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে পদক্ষেপ নেবে, চাই সে তাদের কারো ছেলেই হোক না কেন। কোন কাফিরের স্বার্থে এক মু’মিন অন্য মু’মিনকে হত্যা করবে না এবং কোন কাফিরকে কোন মুমিনের বিরুদ্ধে সাহায্য করবে না। মুসলিম রাষ্ট্রে অনুগত অমুসলিমের অধিকার সমানভাবে নিরাপদ। একজন নগণ্যতাম অমুসলিমকেও মুসলমানরা পূর্ণ নিরাপত্তাসহ আশ্রয় দেবে। মু’মিনরা পরস্পরের মিত্র হয়ে থাকবে, তবে অন্যদের বেলায় এ কথা প্রযোজ্য নয়। আর ইহুদীদের মধ্য হতে যে ব্যক্তি আমাদের আনুগত্য ও অনুসরণ করবে, সে আমদের সমান অধিকার ও সাহায্য লাভ করবে। এ ধরনের লোকদের ওপর কোন যুলুম চলতে দেয়া হবে না এবং তাদের ওপর কাউকে হামলা চালাতে সাহায্য করা হবে না। মু’মিনদের রক্ষাকবচ সবার ক্ষেত্রে এক ও অভিন্ন। ইসলামের স্বার্থে কোন যুদ্ধ সংঘটিত হলে সেই যুদ্ধে মুসলমান কোন অমুসলমানের সাথে সমতা ও ন্যায়ের ভিত্তিতে ছাড়া আপোষরফা করবে না। আমাদের মধ্য হতে প্রতিটা যোদ্ধাদল অন্য যোদ্ধাদলকে অনুসরণ করবে। মুমিনদের একজন অন্যজনকে হত্যা করতে পারবে শুধুমাত্র হত্যার বিনিময়ে এবং আল্লাহর বিধান অনুসারে। খোদাভীরু মু’মিনগণ সর্বশ্রেষ্ঠ ও দৃঢ়তম আদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত। মদীনার কোন মুশরিক কুরাইশ সম্প্রদায়ের কারো জানমালেরর্ কষক বা জিম্মাদার হতে পারবে না, আর কোন মু’মিনের ক্ষতি সাধনে তাকে প্রশ্রয় দেবে না। যে ব্যক্তি কোন মু’মিনকে মৃত্যুদ- অপরাধ না করা সত্ত্বেও হত্যা করবে এবং তা যথাযথভাবে প্রমাণিত হবে, তাকে প্রাণদন্ডে দন্ডিত করা হবে। অবশ্য নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীকে অন্য কোন উপায়ে খুশী করে থাকলে প্রাণদ- হবে না। তবে সর্বাবস্থায় মুমিনরা সকলে ঐ মুসলিম হন্তার বিরুদ্ধে থাকবে এবং তার পক্ষপাতিত্ব করা কোন মুমিনের জন্য হালাল হবে না। এই ঘোষণাপত্রকে মেনে নিয়েছে এবং আল্লাহ ও আখিরাতে অটুট বিশ্বাস রাখে এমন কোন মু’মিনের জন্য ইসলামী বিধানে উদ্ভট জিনিস সংযোজনকারীর সাহায্য করা বা আশ্রয় দেয়া বৈধ নয়। যে ব্যক্তি এ ধরনের লোককে সাহায্য করবে কিংবা আশ্রয় দেবে তার ওপর আল্লাহর লা’নত এবং কিয়ামতের দিন আল্লাহর গজব নামবে। তার পক্ষে কোন সুপারিশ বা পণ গ্রহণ করা হবে না। আর তোমরা যখনই কোন বিষয়ে মতবিরেধে লিপ্ত হবে, তখন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের শরণাপন্ন হবে।
মু’মিনরা যতদিন যুদ্ধরত থাকবে ততদিন ইহুদীরা তাদের যুদ্ধের রসদ যোগানোতে অংশ নেবে। বনু আওফের ইহুদিরা মু’মিনদের সাথে একই উম্মাতভুক্ত বলে গণ্য হবে, তারা নিজে এবং তাদের মিত্ররাও। কিন্তু মুসলমানরা ও ইহুদীরা সে অবস্থায় নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে। তবে যে ব্যক্তি যুলুম অত্যাচার ও অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত হবে সে কেবল নিজের পরিবার পরিজনের ধ্বংসই ডেকে আনবে। বনু নাজ্জারভ্কুত ইহুদীদের অধিকার বনু আওফের ইহুদীদের সমান। অনুরূপভাবে বনু হারেস, বনু সায়েদা, বনু জুশাম, বনু আওস, বনু সা’লাবা ও বনু শতাইবার ইহুদীদের অধিকার বনু আওফের ইহুদীদের সমান। তবে যুলুম অত্যাচার ও পাপাচারে লিপ্ত ব্যাক্তি নিজের ও নিজের পরিবার পরিজনের কেবল ধ্বংসই সাধন করবে। সা’লাবার যাবতীয় বাহ্যিক ব্যাপার তাদের ভেতরকার ব্যাপারের সমপর্যায়ে তাদের প্রাণের মতই সম্মানার্হ। আনুগত্য ও প্রতিশ্রুতিপরায়ণতা যেন সাবাইকে পাপাচার থেকে রক্ষা করে। সা’লাবার মিত্রদের অধিকার তাদের নিজেদেরই সমান। ইহুদেিদর আভ্যন্তরীণ ব্যাপার তাদের প্রাণের মতই সম্মানার্হ। তাদের ভেতর থেকে কেউ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুমতি ছাড়া মদীনার বাইনে যেতে পারবে না। প্রত্যেকের জেনে রাখা উচিত যে, কোন প্রকারের তর্ক বা জেরা দ্বারা আগুন থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না। যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করলো সে নিজের ও নিজের পরিবার পরিজনের ধ্বংসের বিনিময়েই হত্যা করলো। অবশ্য নিহত ব্যক্তি অপরাধী হলে আলাদা কথা। আল্লাহ তায়ালা এ ক্ষেত্রে অধিকতর মহানুভবতা পছন্দ করেন। ইহুদীদের ব্যয়ভার তারা নিজেরাই বহন করবে এবং মুসলামানদের ব্যয়ভারও তারা নিজেরাই বহন করবে। এই ঘোষণাপত্রকে যারা মেনে নিয়েছে তদের কর্তব্য, কোন শরীক যুদ্ধরত থাকলে তাকে সর্বতোভাবে সাহায্য করা এবং পরস্পরের মধ্যে হিতকামনা, সদুপদেশ ও মহানুভবতার সম্পর্ক থাকবে, কোন পাপা কাজে একজন আর একজনের সাথে শরীক হবে না। নিজের মিত্রের ক্ষতি সাধন এক ভয়ংকর নজিরহীন অপরাধ। মাযলুমকে সাহায্য করা সকলের কর্তব্য। মু’মিনরা যতদিন যুদ্ধরত থাকবে ততদিন ইহুদীরা তাদেরকে আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে যাবে। [৪৭. অর্থাৎ আল্লাহ ও মুমিনগণের তাদের সহযোগিতা নিতে আপত্তি নেই।] এই ঘোষণাপত্রের শরীকদের জন্য ইয়াসরিবের অভ্যন্তরে ভাগ সম্পূর্ণ নিরাপদ। প্রতিবেশী যদি অপরাধী না হয় এবং ক্ষতিকর কাজে লিপ্ত না থেকে থাকে তা হলে তার জান, মাল ও ইজ্জত নিজের জান, মাল ও ইজ্জতের মতই পূর্ণ নিরাপত্তার অধিকারী। কারো বাড়ীর ভেতরে বাড়ীর মালিকের অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করা যাবে না। এই ঘোষণাপত্র গ্রহণকারীদের মধ্যে যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা কিংবা ঝগড়া কলহ ঘটুক না কেন, তার ফায়সালার জন্য আল্লাহ ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরণাপন্ন হতে হবে। আল্লাহ সর্বাধিক সতর্কতা ও সততার সাথে এই ঘোষণাপত্রের বাস্তবায়ন দেখতে আগ্রহী।[৪৮. উল্লেখযোগ্য যে, এই ঘোষণাপত্র যখন গ্রহণ করা হয় তখন জিজিয়া আরোপ করা হয়নি এবং মুসলমানগণ দুর্বল ছিল। সে সময় ইহুদীরা মুসলমানদের পক্ষে যুদ্ধ করলে যুদ্ধলব্ধ সম্পদে ইহুদীদের অংশ থাকতো। এই ঘোষণাপত্রে তাদের জন্য যুদ্ধের ব্যয়ভার বহনে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক ছিল।] জেনে রাখা দরকার যে, কুরাইশ ও তাদের সহযোগীদের আশ্রয় দেয়া চলবে না। ঘেষনাপত্র গ্রহণকারীগণ মদীন আক্রমণকারীকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করবে। আর যখন সন্ধি ও মৈত্রী স্থাপনের আহ্বান জানানো হবে তখন তারা আহ্বানকারীর সাথে সন্ধি ও মৈত্রী স্থাপন করবে। এ ধরনের কোন সন্ধি ও মৈত্রীর দিকে তাদেরকে যখন আহ্বান জানানো হবে তখন তা মেনে চলা মু’মিনদের জন্যও বাধ্যতামূলক হবে। তবে যে বা যারা ধর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণকরবে তখন তারা তাদের প্রাপ্য অংশ সেই পক্ষের নিকট থেকে নেবে যে পক্ষ তাদেরকে বাহিনীতে ভর্তি করেছিল। আওসে ইহুদীদের ও তাদের মিত্রদের অধিকার ও দায়দায়িত্ব এই ঘোষণাপত্র গ্রহণকারীদের অধিকার ও দায়দায়িত্বের মতই এবং ঘোষণাপত্র সম্পাদনকারীদের কাছ থেকে তারা পূর্ণ ন্যায়সঙ্গতভাবে তা লাভ করতে পাবে। কেউ সততার পথ অবলম্বন করলে তার পূর্বতন পাপাচার ক্ষমার চোখে দেখতে হবে। কেউ খারাপ কাজ করলে তা তার নিজেরই ক্ষতি সাধন করবে। আল্লাহ এই ঘোষণাপত্রের আনুগত্রের ব্যাপারে সর্বধিক সততা ও সত্যবাদিতা দেখতে চান। এই ঘোষণাপত্র কোন অত্যাচারী বা অপরাধীর জন্য রক্ষকবচ নয়। যুলুম কিংবা অপরাধে লিপ্ত না হলে য্দ্ধু থেকে বেরিয়ে যাওয়া কিংবা নিস্ক্রিয় বসে থাকা লোকও মদীনার চৌহদ্দির ভেতরে নিরাপত্তা লাভ করবে। যে ব্যক্তি সততা ও খোদাভীতির পথে অবিচল থাকবে, আল্লাহ ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার আশ্রয়দাতা ও সহায়ক থাকবেন।”