০৬. বালির চরের ওপর দিয়ে

বালির চরের ওপর দিয়ে ওরা তিনজন হেঁটে যাসিল। এখন তিস্তার একটা খাতেই বয়ে যাচ্ছে, সেটা বার্নিশের দিকে। ফলে এদিকের বিরাট চারটা শুকিয়ে খটখট করছে। চরে নেমে কিছুটা গেলেই কাশগাছের জঙ্গল চাপ বেধে ওপরে উঠে গেছে। জেলা স্কুলের মুখোমুখি নদীর বুকের জঙ্গলটা বেশ ঘন, দিব্যি লুকিয়ে থাকা যায়। মাঝে-মাঝে পায়ে-চলার পথ আছে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে। সেনপাড়ার ওদিক থেকে গরিব মেয়েরা তিস্তায় কাঠ কুড়োতে যায়। পাহাড় থেকে ভেঙেপড়া গাছের শরীর তিস্তায় ভাসতে ভাসতে আসে। মেয়েরা সাঁতরে সাতরে সারাদিন ধরে সেগুলো জড়ো করে নদীর ধারে। বিকেলে সেগুলো জড়ো করে নদীর ধারে। বিকেলে সেগুলো মাথায়-মাথায় চলে যায় পাড়ায়। তারপর টুকরো হয়ে রোদে শুকিয়ে বাবুদের রান্নার জ্বালানির জন্য বিক্রি হয়ে যায়। জঙ্গলের যেখানে শুরু সেখানে কিছু লোক তরমুজের ক্ষেত করে দিনরাত পাহারা দেয়। এখন তরমুজ পাকার সময় আর কদিন বাদেই জঙ্গলটা একদম সাদা হয়ে যাবে। দারুণ কাশফুল ফুটবে তখন।

অনি এর আগে দুই-তিনবার বালির চরে এসেছে, জঙ্গলে ঢোকেনি। মণ্টুর এসব জায়গা খুব চেনা। প্রায়ই টিফিনের সময় স্কুল পালিয়ে ও একা একা এখানে যোরে। এই জঙ্গলে কোনো হিংস্র জানোয়ার সচরাচর থাকে না, কিন্তু শিয়াল তো আছে। মাঝে একবার তিস্তার জলে ভেসে সে একটা বাচ্চা বাঘ এখানে সুকিয়ে ছিল। অতএব ভয় যে একদম নেই তা বলা চলে না। জলে রে ও কী দ্যাখো কিছুতেই বলতে চায় না, জিজ্ঞাসা করে বিজ্ঞের মতো হাসে। তপন থাকে আশ্রমপাড়ায়, সবকটা দেশাত্মবোধক গান ওর মুখস্থ। অথচ এ নতুন স্যারকে নিয়ে খারাপ খারাপ রসিকতা করে।

জঙ্গলে ঢোকার আগে তরমুজক্ষেত। পাকাপাকি কোনো ব্যাপার নয়, জল এলেই পালিয়ে যেতে হবে তবু ক্ষেতের বাউন্ডারি দেওয়া হয়েছে। মাঝে-মাঝে খুঁটি পুঁতে সেগুলোর মধ্যে দড়ি বেঁধে দেওয়ায় আলাদা হয়েছে ক্ষেতগুলো। ওদের তিনজনকে বালির চর পেরিয়ে সেদিকে যেতে দেখে একজন হেঁকে উঠল, কে যায়। কারা যায়।

মণ্টু বলল, আমি গো বুড়োকর্তা। সঙ্গে আমার বন্ধুরা।

অনি দেখল ক্ষেতের মধ্যে অনেক জায়গায় লাঠির ডগলায় কাকাতাড় য়ারা ছেঁড়া জামা পরে হাওয়ায় দুলছে। তেমনি একজন শুধু মাথায়, চোখমুখ আঁকা কালো হড়িটাই যা নেই, বালির ওপর উবু হয়ে বসে এক হাতের আড়ালে চোখের রোদ্দুরে ঢেকে ওদের দেখছে। মণ্টুর কথা শুনে একগাল হাসল বুড়ো, অ খোকাবাবু, তা-ই কও! এত চোরের আওন-যাওন বাড়ছে আজকাল যে চিনতে পারি না। কালকের ফলটা মিষ্টি ছিল?

হ্যাঁ, খুব মিষ্টি ছিল। মণ্টু বলল।

যাও কই?

এক আনি পয়সা আছে, একটা তরমুজ দেবে।

বুড়ো হাসল, বোঝলাম।

তা হলে যাওয়ার সময় নিয়ে যাব, কেমন কথাটা বলে ও চাপা গলায় অনিদের বুঝিয়ে দিল, যাওয়ার সময় প্রত্যেক একটা করে নিয়ে যাব, বুঝলি!

তপন বলল, পয়সা?

মণ্টু খিঁচিয়ে উঠল, আমাকে পয়সা দেখাচ্ছিস? আমি তোমাদের মতো বাচ্চা নাকি?

জঙ্গলের ভিতর ঢুকে পড়লে আর হাকিমপড়া দেখা যায় না। শুধু দূরে জেলা স্কুলের মতো লাল ছাদটা চোখে পড়ে। জঙ্গল সরিয়ে সামান্য এগিয়ে একগ খোলা জায়গায় এসে দাঁড়াল ওরা। চারধারে জঙ্গল, মাঝখানে টাকের মতো পরিস্কার বালি। হঠাৎ মণ্টু বলল, এই অনি, আজকে আমাকে কেমন দেখাচ্ছে বল তো!

অনি মণ্টুকে ভালো করে দেখল। ওর মাথার চুল বেশ কোকড়া, গায়ের রঙ খুব ফরসা। কিন্তু ওকে তো অন্যরকম কিছু দেখাচ্ছে না। রোজকার মতো ইউনিফর্ম পরাই আছে। ওর মুখ দেখে মণ্টু সেই বিজ্ঞের হাসিটা হাসল। এই হাসিটা দেখলে অনির নিজেকে খুব ছোট বলে মনে হয়। মণ্টু ওদের বন্ধু, এক ক্লাসে পড়ে, কিন্তু ও অনির চেয়ে অনেক বেশিকিছু জানে। মণ্টু হাসিটা শেষ করে জিজ্ঞাসা করল, আজকে আসবার সময় কর-বাড়ির দিকে তাকাসনি

অনি ঘাড় নেড়ে না বলল।

তপন বলল, মুভিং ক্যাসেল পায়চারি করছিল বারান্দায়।

মণ্টু বলল, জানলার ফাঁক দিয়ে রম্ভার চোখ দুটো তো দেখিসনি তোরা, আহা। তখনই বুঝতে পেরেছিলাম আমাকে আজ অন্যরকম দেখাচ্ছে।

ওদের স্কুলের উলটোদিকে যে বিরাট বাড়িটা অনেকখানি গান নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেটা এখানকার মিউনিসিপ্যালিটি অন্যতম কর্তা শ্রীবিরাম কর মহাশয়ের। মণ্টু একদিন ওকে দেখিয়েছিল বাড়ির গেটের গায়ে ওঁর নামের আগে কে যেন অ অক্ষরটা লিখে গেছে। মানেটা ঠাওর করতে পারেনি প্রথমটায়। মণ্টু বলেছিল, তুই একটা গাড়ল। নতুন স্যারের চ্যালা হয়ে বন্ধু রয়ে গেলি। তারপর মুখ-খারাপ করে কথাটার মানে বুঝিয়ে দিয়েছিল। কানটান লাল হয়ে গিয়েছিল অনিমেষের। অথচ মণ খারাপ ছেলে ভাবতে পারে না। ক্লাসে যে-কোনো প্রশ্নের উত্তর ঠিকঠাক দেয়। অ্যানুয়েল পরীক্ষার সময় ইচ্ছে করে দুটো উত্তর না-লিখে ছেড়ে দেয় যাতে ফার্স্ট না হতে পারে। নতুন স্যার কারণটা জিজ্ঞেস করাতে ও বলেছিল, ফার্স্ট হলে ঝামেলা। ক্লাসের ক্যাপ্টেন হতে হয়, সবাই গুড বয় ভাবে। সবই অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে ছিল। নতুন স্যারও।

মণ্টু যেসব খারাপ কথা জানে, অনিমেষ তা জানে না। সেইজন্যে মণ্টু ওর চেয়ে যেন এক হাত এগিয়ে আছে। তপনটা মুখে কিছু বলে না। কিন্তু মণ্টুর সব ইঙ্গিত ও চটপট বুঝতে পারে। আলাউদ্দিন খিলজির চিতোর আক্রমণটা ক্লাসে পড়ানো হয়ে গেলে তপন আর মণ্টু দুজনে মিলে দেবলাদেবীর নাচ ওদের দেখাল। নাচটা দেখতে খুব বিশ্রী, তপন মেয়েদের, ঢং করে দেবলাদেবী। সাজছিল আর মণ্টু আলাউদ্দিন খিলজি। নাচ শেষ হলে মণ্টু বিজ্ঞের মতো জিজ্ঞাসা করেছিল, পৃথিবীতে সবচেয়ে আরাম কিসে পাওয়া যায়?

কে যেন বলেছিল, ঘুমুতে সবচেয়ে আরাম।

পেটুক অজিত বলেছিল, খুব পেটভরে রসগোল্লা খেতে দারুণ আরাম।

তপনের মাথা নেড়ে বলেছিল, ধুস! একবার খেলার মাঠে আমার পেট কামড়েছিল। উঃ, কী যন্ত্রণা! দৌড়ে বাড়ি ফিরছি, কপালে ঘাম জমে যাচ্ছে। তারপর একসময় আর পা যেন চলতে চায় না। যখন ল্যাটিন থেকে বেরিয়ে এলাম, ওঃ, তখন এত আরাম এত হারকা লাগল-এরকম আরাম হয় না।

তপনের বলার ভঙ্গিতে ব্যাপারটা এত জীবন্ত ছিল সবাই যেন বুঝতে পেরে একমত হয়ে গেল। কিন্তু মণ্টু বলল, তপন অনেকটা ঠিক কথা বলেছিস কিন্তু পুরো নয়। আচ্ছা অনিমেষ, ট্রয়ের যুদ্ধটা কার জন্য হয়েছিল?

হেলেনের জন্য। তপর উত্তরটা দিয়ে দিল।

লঙ্কাকাণ্ড?

সীতার জন্য। উত্তরটা অনেকগুলো মুখ থেকে বুলেটের মতো ছুটে এল।

আলাউদ্দিন খিলজি কেন চিতোর আক্রমণ করেছিল?

পদ্মনীর জন্য।

সবাই হেসে উঠতেই মণ্টু সেই বিজ্ঞের হাসিটা হেসে হাত তুলে ওদের থামাল, আমরা কেন মুভিং ক্যাসেলকে মাসিমা বলে ডাকি,

এবার কিন্তু কোনো শব্দ হল না, চট করে উত্তরটা খুঁজে না পেয়ে এ ওর মুখের দিকে চাওয়াচাওয়ি করতে লাগল। শুধু তপন খিকখিক করে হেসে উঠল। অনি বুঝতে পারছিল না এর সঙ্গে আরামের কী সম্পর্ক। মুভিং ক্যাসেল হল বিরাম কর মশাই-এর স্ত্র। গোলগাল লম্বা এবং প্রচণ্ড ফরসা মহিলা। বাংলায় বলা হয় চলন্ত দুর্গ, পেছন থেকে দেখলে মনে হয় ওঁর শরীরের মধ্যে অনেকে লুকিয়ে থাকতে পারে। দারুণ সাজেন মহিলা, ওর মেয়েরাও টিক পাত্তা পায় না। জলপাইগুড়ি শহরের মেয়েরা। খুব একটা উগ্র নয়, বরং স্কুলগুলোর সুবাদে একটা গোড়া রক্ষণশীল ভাব বজায় আছে। অবশ্য ইদানীং বাইরের কিছু মেয়ে আসার পর হাওয়া বদলাতে শুরু করলেও দেখলেই বোঝায় যায় কে বাইরের! সেক্ষেত্রে মিসেস বিরাম কর যাকে সবাই মুভিং ক্যাসেল বলে সত্যিই ব্যতিক্রম। গায়ের রঙ ফরসা বলেই হাতকাটা লাল সরু রাউজ: যে ওকে মানাবে একথা ওঁর চেয়ে বেশি কেউ জানে না। অনি পেছনথেকে ওঁর রিকশায় চলে-যাওয়া শরীর দেখে একদিন ভেবেছিল বোধহয় চাপ-চাপ মাখন দিয়ে ওঁকে তৈরি করা হয়েছে। বিরাম কর মহাশয়ের নাম ছেলেরা রেখেছে ফড়িংদা। মণ্টু বলে ওর দাদা। নাকি বারো বছর আগে জেলা স্কুলে পড়ত, তারাও নাকি এই একই নামে ওঁদের ডেকে গেছে। মিউনিসিপ্যালিটির ইলেকশনের সময় ফড়িংদার চেয়ে মুভিং ক্যাসেলকে বেশি ব্যস্ত দেখায়। মুভিং ক্যাসেলের তিন মেয়েরই নাম, শুধু ওদেরই, জলপাইগুড়ি শহরে আর কারও নেই। তিনজনেই মায়ের কাছ থেকে গমের মতো রং পেয়েছে, জেলা স্কুলের ছেলেরা কাকে ফেলে দেখবে বুঝে উঠতে পারে না। মেয়েগুলো এমন নির্লিপ্তর মতো তাকায় যে কাউকে দেখছে কি না বুঝে ওঠা সম্ভব নয়। মণ্টুর অবশ্য নিশ্চিত ধারণা যে রম্ভার ওর দিকে অপলকে তাকিয়ে থাকে। রম্ভা সবচেয়ে ছোট। মেনটা উর্বশী রম্ভা। মেনকাই শুধু শাড়ি পরে। নতুন স্যারে সঙ্গে কর-বাড়ির খুব হয়েছে। হোস্টেলের ছেলেরা বলে প্রায়ই, নতুন স্যার রাত্রের মিল অফ করে মুভিং ক্যাসেলের নেমন্তন্ন খান। এখন তাই জলপাইগুড়ির দেওয়ালে-দেওয়ালে নিশীথ+মেনকা লেখাটা দেখা যাচ্ছে। নতুন স্যারকে নিয়ে এসব ব্যাপার অনির খুব খারাপ লাগে।

মণ্টু বলল, কেউ পারলি না তো! পারবি কী করে, তোরা তো আর নভেল পড়িস না!

অনি বলল, এর সঙ্গে আরামের কী সম্বন্ধ?

মণ্টু হাসল, চিরকাল মেয়েদের জন্য যুদ্ধ হয়েছে, কত রাজ্য ছারখার হয়ে গিয়েছে, তাই তা থেকে যে-আরাম হয় সেটার কোনো তুলনা হয় না। মানুষ তো কষ্ট পাবার জন্য এসব করে না। সে তোরা ঠিক বুঝবি না। সত্যি ব্যাপারটা ওরা ঠিক বুঝল না এবং অনি মনেমনে একমত হল না।

এখন তরমুজের ক্ষেত পেরিয়ে কাশবনের ভেতর সরু পথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে তপন বলল, শুল, মারিস না। রম্ভা দেখেছে, বলে তুই অন্যরকম হয়ে গেছিস, না? রম্ভা আজকাল আমার দিকেও তাকায়। আমি গান গাই জানে বোধহয়।

চট করে ঘুরে দাঁড়াল মণ্টু, খুব খারাপ হয়ে যাবে তপন। মুখ সামলে কথা বলবি। রম্ভা ইজ মাই লাভার, আই লভ রঙা।

ভেংচি কাটল তপন, ইস! তুই তুই জেনে বসে আছিস না যে রম্ভা তোকে ভালোবাসে?

একটু থতমত হয়ে মণ্টু বলল, আমি বললেই বাসবে।

তপন চিৎকার করে উঠল, এঃ, তোর কেনা চাকর না? যখনই হুকুম করবি তখনই ভালোবাসবে! আবার উট মারা হচ্ছে।

আলবত মারব। তুই কি পুরুষমানুষ যে রম্ভা তোকে চাইবে? পরিস তো একটা ঢলঢলে প্যান্ট, আবার কথা! মটু কথাটা শুনে তপন হাঁ হয়ে গেল। অনি চুপচাপ দাঁড়িয়ে ওদের কথা শুনছিল। ওর মনে হচ্ছিল যে-কোনো মুহূর্তে ব্রা মারামারি শুরু করে দেবে।কার কথাটা যে সত্যি বুঝতে পারছিল

ও। এতদিন ধরে মিশে অনি ওদের এই ব্যাপারটার কথা একটুও টের পায়নি বলে নিজেই অবাক হচ্ছিল।

তপন বলল, তুই পুরুষ নাকি পুরুষ হলে দাড়ি কামায়, বুঝলি! তুই দাড়ি কামাস?

মণ্টু হঠাৎ খেপে গিয়ে দুই হাত আকাশে নেড়ে চ্যালেঞ্জ করে বসল ঠিক আছে তপন, তুই যখন প্রমাণ চাস তো প্রমাণ দেব। অনি, তুই শুনলি সব, আমি চ্যালেঞ্জ অ্যাকসেপ্ট করছি। বেশ তোর প্যান্ট খোল, অমরা দেখব।

কেমন আমশি হয়ে গেল তপনের মুখ। বোধহয় এত অবাক হয়ে গিয়েছিল যে কোনো কথা বলতে পারল না। অনিও চমকে গিয়ে মণ্টুর দিকে তাকাল।

সেইরকম বিজ্ঞের হাসি হাসল মণ্টু, কাওয়ার্ড! শুধু মুখেই জগৎ জয় করিস। বেশ দ্যাখ আমার দিকে। এই বলে ঝটপট করে ওর চাপা প্যান্ট খুলে ফেলল। প্যান্ট খোলার সময় অনি চট করে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিল। ও দেখল মটু বালির ওপর ওর শার্ট প্যান্ট ছুড়ে দিল। তারপর শুনল মণ্টু বলছে, এবার দ্যাখ। খুব সঙ্কোচে মুখ ফেরাল অনি। কোমরে হাত রেখে গোড়ালি উঁচু করে ব্যায়ামীরের মতো মণ্টু ঘুরে ঘুরে নিজেকে দেখাচ্ছে। ওর পরনে একটা সাদা ল্যাঙট, ব্যায়াম করার সময় অনেকে পরে। আর সঙ্গে সঙ্গে অনির খুব খারাপ লাগতে আরম্ভ করল। ওর নিজের একটাও জাঙ্গিয়া নেই, ল্যাঙটা তো দূরের কথা। দাদু ওকে সুন্দর জামাকাপড় কিনে দেন কিন্তু ওর যে একটা জাঙ্গিয়া দরকার তা কারও খেয়াল হয় না। এখন এই মুহূর্তে ও অনুভব করল জাঙ্গিয়া ল্যাঙট না পরলে পুরুষমানুষ হওয়া যায় না। মণ্টু বলল, দ্যাখ, পুরুষমানুষ কাকে বলে। তুই লাইফে পরেছিস?

তপন খুব ঘাবড়ে গিয়েছিল। কী বলবে বুঝতে না পেরে অনির দিকে তাকাল। তারপর মুখ নিচু করে ও বলল, বুদ্ধদেব বলেছেন মনটাই সব, শরীর কিছু নয়।

ওসব বাক্যি বইতে থাকে। ফের জামাপ্যান্ট পরতে পরতে মণ্টু বলর, রম্ভা যদি আমাকে এই ড্রেসে দেখত তা হারে একদম ম্যাড হয়ে যেত।

কথাটা শুনে অনি হেসে ফেলল, ম্যাডহলে তো কামড়াবে!

দুস! সে-ম্যাড নাকি? তোদের সঙ্গে কথা বলে সুখ নেই। তারপর গলার স্বর ভারী করে বলল, তপন, ফ্রেন্ডশিপ রাখতে চাস তো ল্যাঙ মারতে যাস না। আমি তোর চেয়ে আগে পুরুষ হয়েছে, আমার চান্স আগে। একেই শালা আমি জ্বলেপুড়ে মরছি। কদমতলার একটা ছেলে রোজ বিকেলে। ওদের বাড়ির সামনে নাকি তিনবার সাইকেলের বেল বাজিয়ে যায়। বল তোরা, এসব কি ভালো কথা?

তপন যেন এতক্ষণ এইসব কথা কিছুই শুনতে পায়নি এমন ভান করে সামনের জঙ্গল দুহাতে সরাতে সরাতে বলল, আর ফ্যাঁচফ্যাঁচ করিস না। যা দেখাবি বলেছিলি তা কোথায়, নাকি সব গুল?

শার্টের বোতাম আটকে মণ্টু বলল, এ-শর্মা বলল, এ-শর্মা ও মারে না। ফলে দেখাচ্ছি, এই যে অনিমেষচন্দ্র, চলো, দেখব তোমার শরীর কেমন ঠান্ডা থাকে। কাটা শুনে অনিমেষের কান গরম হয়ে গেল আচমকা।

জঙ্গলটা ধরে খানিক এগোতেই কয়েকটা মিহি গলা শুনতে পেল অনিমেষ। আওয়াজটা কানে যেতে মণ্টু হাত নেড়ে ওদের থামতে লাগল। ও মুখে কোনো কথা বলছে না, কিন্তু ইশারা ইঙ্গিতে এমন একটা পরিবেশ চটপট তৈরি করে ফেলল যে অনিমেষের মনে হল ব্যাপারটা ভালো হচ্ছে না। মণ্টু এখন প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে এগোচ্ছে, ওরা পেছন পেছন মাথার ওপর কাশগাছ ছাদের মতো ছেয়ে রয়েছে, দূর থেকে ওদের বুঝতে পারবে না। হই দুটো ক্রমশ জ্বালা করতে লাগল বালিতে ঘষা লেগে। কী-একটা সরসর করে ওদের পাশ দিয়ে দ্রুত চলে যেতে অনি ফিসফিস করে বলল, এই, আজ বাড়ি চল।

তপন বলল, দূর বোকা, ওটা তো শিয়াল!

মণ্টু হাসল, ফক্স দেখে ভয় পাচ্ছিস, টাইগ্রেস দেখে কী করব? আর ঠিক সেই সময় একগাদা হাসি ছিটকে এল ওদের দিকে। মেয়েলি গলায় কে যেন কী-একটা কথা বলে উঠল চেঁচিয়ে! আর একটু এগোতেই জঙ্গলটা পাতলা হয়ে এল। জলের শব্দ হচ্ছে ছলাৎ ছলাৎ করে। অনিমেষ দেখল মণ্টু কাশগাছ সরিয়ে ছোট্ট একটা ফাঁক তৈরি করেছে। অনিমেষ আর তপন ওর পাশে মাথা রাখতেই পুরো নদীটা সিনেমার মতো ওদের সামনে উঠ এল ভির জল এখন অত ঘোলা নয়, করলা নদীর চেয়ে একটু অপরিষ্কার। নদীটা এখানে বাঁক নিয়েছে সামান্য। প্রথমে কাউকে নজরে এল না অনিমেষের, শুধু একটা মেয়ে গান গাইছে এটা বুঝতে পারছিল। গানের সুরটা অদ্ভুত মিষ্টি, অথচ কেন কান্না-কান্না গলায় মেয়েটি গাইছে। ওকে দেতে পাওয়া যাচ্ছে না বটে, কিন্তু বুঝতে অসুবিধে হয় না যে গাইছে তার খুব দুঃখ। আর এই সময় অন্য কেউ হাসাহাসি কমছে না আগের মতো। শুধু ছলাৎছলাৎ শব্দ যেন সেই গানের সঙ্গে আবহসঙ্গীতের মতো বেজে যাচ্ছিল। ভালো করে কান পাতলা অনি, মেয়েটি গাইছে

এখে অঙ্গে এখে সঙ্গে
ওহে পরভু মুই
নাই রহিম মুই ঘরেরে পরভু,
হামু না যামু অরণ্যে জঙ্গলেরে।

মণ্টু ফিসফিসিয়ে বলল, মেয়েটা ঘরে থাকবে না বলছে, জঙ্গলে চলে যাবে রে!

হঠাৎ তপন বাদিকে সরে গিয়ে জঙ্গলটা ফাঁক করল। করেই খুব উত্তেজিত হয়ে ওদের ডাকল। অনিমেষ নড়বার আগেই মণ্টু ঝাঁপিয়ে পড়ে জায়গা করে নিয়েছে। ফুটোতে চোখ রেখে অনিমেষ দেখতে পেল প্রায় আট-দশজন মেয়ে ছোট ছোট কাঠ জল থেকে পাড়ে টেনে তুলছে। দুজন সতরে নদীর মধ্যে চলে গেল। আর–একটু দূরে বালিশ ওপর বসে জলে পা ড়ুবিয়ে একটি প্রৌঢ়া চোখ বন্ধ করে গান গাইছে যা ওরা এতক্ষণ শুনতে পাচ্ছিল।

মণ্টু বলল, কী রে, কেমন দেখছিস?

আর তখনই ওর নজরে পড়ল, মেয়েগুলোর কেউ শাড়ি জামা পরে নেই। কোমর থেকে একটা কাপড় গোল করে জড়িয়ে রেখেছে সবাই। ওপরে কাশগাছের গায়ে অনেকগুলো জামাকাপড় ঝুপ করে রাখা আছে, বোধহয় জলে ভিজে যাবে বলে এই পোশাকে সবাই জলে নেমেছে। ওদের নিয়েই বেশি জামাকাপড় নেই। কিন্তু ওদের দিকে তাকিয়ে অনির কেমন লজ্জা-লজ্জা করতে লাগল। এখন এই নির্জন নদীর তীরে এতগুলো নারীর বিভিন্ন আকারের বুক দেখতে দেখতে ওর শরীরে অদ্ভুত একটা। শিরশিরানি জন্ম নিল। তাকিয়ে থাকতে ওর ক্রমশ কষ্ট হতে লাগল, আর তখনই ওর কানে এল মণ্টু। বলছে, কীরে অনি, তোর মুখ এত লাল হয়ে গেল কী করে?

তপন বলল, বেদিং বিউটি একেই বলে, আহা! থ্যাঙ্ক ইউ মণ্টু।

দূরে তিস্তার মধ্যিখানে সেই মেয়ে দুটো কিছু বলে চেঁচিয়ে উঠতে টপটপ এরা কয়েকজন জলে ঝাঁপ দিল। অনি দেখল তিস্তার ঠিক মাঝবরাবর একটা বিরাট গাছের গুঁড়ি ভেসে যাচ্ছে। পুঁড়িটার অনেকখানি জলের নিচে ডোবা, কিন্তু যেটুকু দেখা যাচ্ছে দ্য থেকে এর আকৃতিটা বোঝা যায়, এটাকে দেখতে পেয়েই মেয়েগুলোর মধ্যে দারুণ উল্লাস ছড়িয়ে পড়েছে। এতক্ষণ যে গান গাইছিল সে এখন উঠে দাঁড়িয়ে দুটো হাত মুখের দুপাশে আড়াল করে সঁতরে-যাওয়া মেয়েলোকে নির্দেশ দিচ্ছিল। আগে মেয়ে দুটো যে লম্বা দড়ি কোমরে বেঁধে নিয়ে গিয়েছে অনি তা দেখেনি। এখন সেগুলোর ডগা চটপট ভেসে-যাওয়া গুড়িটার গায়ে গিটি দিয়ে বেঁধে ফেলে ওরা নিশ্চিন্ত হল। গুড়িটা কিন্তু ভেসেই যাচ্ছে। ততক্ষণে অন্য মেয়েরা গিয়ে সেই দড়িগুলোর প্রত্ত ধরে ফেলেছে। হঠাৎ একটা অদ্ভুত সুরেলা চিৎকার থেমে-থেমে ভেসে আসতে লাগল। গুড়িটা এত বড় যে মেয়েদের সরাসরি টেনে আনার সাধ্যি নেই। তাই ওরা ওটাকে স্রোতের টানে চলে যেতে দিয়ে মাঝে-মাঝে হ্যাচকা টানে একটু করে তীরের দিকে সরিয়ে আনছে। আর টানবার সময় সেই সুরেলা চিৎকার বোধহয় ওদের শক্তি যোগাচ্ছে বেশি করে। মগ্ন হয়ে ওদের পরিশ্রম দেখছিল অনি। মেয়েগুলোর শক্তি ওদের শরীর দেখে আঁচ করা যায় না।

নতুন স্যার কয়েক দিন আগে ওদের কয়েকজনকে নিয়ে শিকারপুর চা-বাগানের কাছে একটা জঙ্গলে গিয়েছিলেন। সেখানে একটা পোডড়া মন্দির আছে। জলপাইগুড়ি থেকে যেতে খুব বেশি সময় লাগে না। মন্দিরটা তিস্তা থেকে খুব দূরে নয়। লোকে বলে ওটা নাকি দেবীচৌধুরাণীর প্রতিষ্ঠিত কালীমন্দির। ডাকাতি করার আগে এ-অঞ্চলে এলে পুজো দিয়ে যেতেন। এই তিস্তার ওপর দিয়ে। দেবীচৌধুরাণীর বজরা ভেসে যেত কল্পনা করতেও রোমাঞ্চ হয়। এখন ওর মনে হল এইসব মেয়ে পরিশ্রমের দিক দিয়ে দেবীচৌধুরাণীর চেয়ে একটুও কম নয়। গাছের গুঁড়িটা স্রোতের টানে ক্রমশ চোখের আড়ালে চলে গেলেও অনি বুঝতে পারল সেটা তীরের দিকে চলে এসেছে এবার মেয়েগুলো যদি তীরের ওপর ওঠে গুণ-টানার মতো করে গুড়িটাকে এখানে টেনে নিয়ে আসে তা হলে ওদের নির্ঘাত দেখতে পাবে। বার্নিশ কিং সাহেবের ঘাটের গুণ-টানা দেখেছে ও। এখান থেকে সরে যাওয়া। দরকার। অনি পাশ ফিরে তাকিয়ে বন্ধুদের দেখতে পেল না। একটু আগেও ওরা এখানে ছিল, এত সন্তর্পনে এখান তেকে সরে গিয়েছে যে সে টের পায়নি। এদিকে মেয়েগুলোর চিৎকার বেশ দ্রুত এগিয়ে আসছে, বোঝা যাচ্ছে পাড়ে উঠে পড়েছে ওরা, এবার গুণ-টানা শুরু হবে।

মাথা নিচু করে ভেঙে-যাওয়া কাশবনের চিহ্ন দেখে ও জঙ্গলের ভেতর ঢুকে পড়ল। খানিক দূর আসার পর ও বন্ধুদের দেখতে পেল। অনি যে পা টিপে টিপে ওদের পেছনে এসেছে তা যেন ওরা টের পেল না। দুজনেই হাঁটু গেড়ে বসে সবকিছু দেখছে। অনি তপনের পিঠের ওপর হাত রাখতেই ভীষণ চমকে উঠে ওকে দেখতে শেয়ে নিশ্বাস ফ্যালে সে, উঃ, চমকে দিয়েছিলি! কথাটা একটু জোর হয়ে যেতেই পাশ থেকে মণ্টু ওর পটে জোরে চিমটি কাটল। তপনের মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে ব্যাথা লেগেছে খুব কিন্তু সেটা ও হজম করে নিল। কী দেখছে ওরা বোঝার জন্য অনি কাশবনের মধ্যে মাথা গলিয়ে দিল। প্রথমে বুঝতে পারেনি, পরে স্পষ্ট হল, সামনে এক চিলতে খোলা বালির ওপরে দুটো শরীর প্রচণ্ড আক্রোশে কুস্তি লড়ছে। অনেকক্ষণ ধরে লড়াইটা হচ্ছিল। অনি দেখতে আসার সময়মটায় একজনকে প্রায় কবজা করে ফেলেছে প্রতিদ্বন্দী। এরকম এক নির্জন জঙ্গলের মধ্যে ওরা কুস্তি করছে কেন বুঝতে না পেরে অনি হাঁ করে দেখল বিজয়ী উঠে দাঁড়াল, বিজিত শুয়ে আছে চিত হয়ে বালিতে। সঙ্গে সঙ্গে চমকে উঠল অনি। এরা দুজনেই মেয়েমানুষ। যে শুয়ে আছে অসহায়ের ভঙ্গিতে, একটা হাত চোখের ওপর আড়াল কলে, তার বয়স হয়েছে শরীরটা কেমন চললে। যে জিতল, তার উঠে দাঁড়ানোতে একটা গর্ব ফেটে পড়ছিল যা তার অল্প বয়সের সঙ্গে দারুণ মানিয়ে যাচ্ছিল। তার দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় না। খুব গর্বিত ভঙ্গিমায় সে ছেড়ে-রাখা জামাকাপড় পরতে লাগল। হঠাৎ ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অনির মনে হল শরীরে যেন অনেক জ্বর এসে গেছে। গলা জিভ দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অনির মনে হল শরীরে যেন অনেক জ্বর এসে গেছে। গলা, জিভ শুকনো। একটু একটু করে কপালে ঘাম জমছে। পায়ে কোনো সাড়া নেই। যুবতী যাবার সময় থুক। করে শুয়ে-থাকা প্রৌঢ়ার দিকে একদলা থুতু ফেলে চলে গেল, প্রৌঢ়া সেই ভঙ্গিতেই পড়ে থাকল। কিছুক্ষণ, তারপর হঠাৎ উপুড় হয়ে চাপা গলায় ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল, মণ্টু ফিসফিস করে বলল, বেচারা বরটাকে হারাল। এর আগে কী কথা হয়েছে মেয়ে দুটোর মধ্যে অনি শোনেনি তাই মণ্টু কথাটা বলতে ও ঠিক বুঝতে পারল না। কিন্তু ওর শরীর এরকম করছে কেন?

মানুষের শরীরের মধ্যে যে আর-একটা শরীর আছে এই প্রথম অনিমেষ অনুভব করল। ওর সর্বাঙ্গে কাটা দিয়ে উঠল। হঠাৎকী-একটা বোধ ওর মেরুদণ্ডে টোকা মারতেই ও তীরের মতো জঙ্গল ভেদ করে দৌড়াতে লাগল। পেছনে মণ্টুর চাপা গলায় ডাক পড়ে থাকল। ওর হাত-পা ছড়ে যাচ্ছিল কাশগাছে, কিন্তু তরমুজের ক্ষেত পেরিয়ে বালিতে না আসা অবধি ও থামল না।

এই শরীরটা ওর চেনা ছিল না আশ্চর্য, এই সময় আর কানের কাছে সেই গলাটা শুনতে পাচ্ছিল যে তাকে মাঝে মাঝে সঠিক পথ বলে দেয়।

পেছন ফিরে তাকিয়ে ও কাউকে দেখতে পেল না। এই বিরাট ফাঁকা বালির চরে দাঁড়িয়ে ওর মনে হল আজ সে যে-কাজটা করে ফেলেছে তা কাউকে বলা যাবে না। দাদু-পিসিমাকে একথা বলাই যায় না। তাছাড়া দাদু পিসিমার সঙ্গে ক্রমশ যে ব্যবধান হয়ে যাচ্ছে সেটা প্রতিদিন ও টের পাচ্ছে। বাবার সঙ্গে যোগাযোগের প্রশ্নই ওঠে না। সেই ঘটনার পর বাবা নাকি খুব চুপচাপ হয়ে গেছেন। জলপাইগুড়িতে যখন আসেন তখন গম্ভীর হয়ে থাকেন। এমনকি ছোটমাও যেন অন্যরকম হয়ে গেছে। সেই ঘটনার কথা ভুলেও তোলে না, প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না।

না, কেউ নেই। মা বলতেন কোনো কথা লুকোবি না অনি, আমার কাছে সব কথা খুলে বললে কোনো পাপ হবে না। অনেক দিন পর অনির বুকটা টনটন করতে লাগল মায়ের জন্য। যত দিন যাচ্ছে রাত্রিবেলায় আকাশের দিকে তাকালে তারাগুলো তারাই থেকে যাচ্ছে, সূর্যের মতো সেগুলো এক-একটা নক্ষত্র জানার পর এখন আর মা র সঙ্গে মনেমনে কথা বলেন না।

অল্পবয়সি মেয়েটার শরীরটা যেন চোখের সামনে থেকে সরানো যাচ্ছে না। সেই অনেক দিন আগে দেখা কামিনটার কথা চট করে মনে পড়ে গেল আজ। তখন তো এমন হয়নি। তখন তো মাকে স্বচ্ছন্দে সব কথা খুলে বলতে পেরেছিল। চকিতে ও কপালে শব্দটা লিখে কয়েক বছর আগে শেখা। রামকৃষ্ণের প্রণাম-মটা উচ্চারণ করল। এবং এবার আশ্চর্যভাবে কোনো কাজ হল না। কী-একটা আক্রোশে ও লাথি মেরে একগাদা বালি ছড়িয়ে নিজের অজান্তে জেলা স্কুলের দিকে দৌড়াতে লাগল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *