1 of 3

০৬।০৯ ষষ্ঠ কাণ্ড : নবম অনুবাক

নবম অনুবাক
প্রথম
সূক্ত : ভৈষজ্যম
[ঋষি : ভগ দেবতা : সূর্য, চন্দ্রমা, রামায়ণী ছন্দ : অনুষ্টুপ]

অপচিতঃ প্ৰ পতত সুপর্ণো বসতেরিব। সূর্যঃ কৃপোতু ভেষজং চন্দ্রমা বোহপোচ্ছতু। ১। এন্যেকা শ্যেন্যেকা কৃষ্ণেকা রোহিণী দে। সর্বাসামগ্রভং নামাবীরঘীরপেতন ॥ ২॥ অসূতিকা রামায়ণ্যপচিৎ প্র পতিষ্যতি। গৌরিতঃ প্র পতিষ্যতি স গলুন্তো নশিষ্যতি ৷৷ ৩৷৷ বীহি স্বামাহুতিং জুষাণো মনসা স্বাহা মনসা যদিদং জুহোমি ॥ ৪৷৷

বঙ্গানুবাদ –হে গণ্ডমালাসমূহ (গ্রীবাদেশে জাত স্ফোটকসমূহ)! এই দেহ হতে পৃথক হও। যেমন উড্ডীয়নে চতুর বাজপক্ষী আপন নীড় হতে শীঘ্র বাহির হয়ে যায়, তেমনই তোমরা (এই পুরুষের গণ্ডদেশের নিম্নভাগ পরিত্যাগ পূর্বক) শীঘ্র পলায়ন করো। আদিত্য তোমাদের চিকিৎসা করুন এবং চন্দ্রমা তোমাদের দূরে প্রেরণ করুন। ১

গণ্ডমালাসমূহ কোনটি রক্ত-শ্বেতবর্ণ মিশ্রিত, কোনটি পরম শুভ্র, কোনটি কৃষ্ণবর্ণ এবং কোনটি লোহিত বর্ণশালিনী হয়ে থাকে। হে গণ্ডমালাসমূহ! তোমরা বাত, পিত্ত, শ্লেষ্মর ভেদে অনেক নাম ও বর্ণশালিনী হয়ে থাকে। আমি তোমাদের সুন্দর নাম উচ্চারণ করছি; তাতে প্রসন্ন হয়ে তোমরা এই বীরকে পীড়িত না করে চলে যাও ॥ ২॥

 অসূতিকা অর্থাৎ পূয়স্রাবী, রামায়ণী নাড়ী অর্থাৎ প্রাণবায়ু-পথে রমমান ব্রণাত্মিকা (ব্রনাভিমানী) দেবতাগণ এই মন্ত্র-সামর্থ্যে দূরীভূত হয়ে যাবে। তখন পীড়াও নষ্ট হয়ে যাবে। ৩

হে ব্রণরোগ-অভিমানী দেবতা! তোমরা তোমাদের নিজস্ব মনে করে এই আহুতি গ্রহণ করো। আমিও মনে মনে এই আহুতি প্রদান করছি। ৪।

.

দ্বিতীয় সূক্ত : নির্ঋতিমোচনম

[ঋষিঃ ভগ দেবতা : নির্ঋতি ছন্দ : জগতী, বৃহতী, ত্রিষ্টুপ]

যস্যাস্ত আসনি ঘোরে জুহোম্যেং বন্ধানামবসর্জনায় কম। ভূমিরিতি জ্বাভিমন্বতে জনা নির্ঋতিরিতি ত্বাহং পরি বেদ সর্বতঃ ॥১॥ ভূতে হবিষ্মতী ভবৈষ তে ভাগো যো অস্মাসু। মুঞ্চেমানমূনেনসঃ স্বাহা ॥ ২॥ এবো স্বস্মন্নিঋতেহনেহা ত্বময়স্ময়া বি তা বন্ধপাশা। যমো মহ্যং পুনরিৎ ত্বাং দদাতি তস্মৈ যমায় নমো অস্তু মৃত্যবে৷ ৩৷৷ অয়স্ময়ে দ্রুপদে বেধিষ ইহাভিহিতো মৃত্যুভির্ষে সহস্রম। যমেন ত্বং পিতৃভিঃ সংবিদান উত্তমং নাকমধি রোহয়েমম্ ॥ ৪৷

বঙ্গানুবাদ –হে ব্রণাভিমাণী দেব! তোমার ক্রুর মুখে এই আহুতি প্রদান করছি। এই আহুতি স্বীকার হোক। ব্রণ প্রক্ষালনার্থ এই ঔষধ রূপ জল রোগকে শান্ত করে। ১।

 হে ব্রণাভিমানী দেব! যদিও সাধারণ জ্ঞানসম্পন্ন জন তোমাকে বিস্তারশালী বলে মানে, কিন্তু আমি তোমার রূপকে জ্ঞাত হয়ে তোমাকে পাপের দেবতা বলে জ্ঞাত হয়েছি। আমাদের হবিঃ গ্রহণ করে গো-ইতাদিকে রোগমুক্ত করো। ২।

হে পাপ দেবী (নির্ঋতি)! তুমি আমাদের পীড়িত করো না এবং রোগপাশ (ব্যাধির বন্ধন) ছিন্ন করে দাও। বিবস্বানের পুত্র প্রাণাপহারক যম, হে রোগী! তোমাকে আমার নিকট পুনরায় প্রত্যর্পন করেছেন। সেই যমদেবের উদ্দেশে আমার নমস্কার জ্ঞাপন করছি ৷৷ ৩৷

হে নির্ঋতি! যখন তুমি পুরুষকে লৌহময় শৃঙ্খলে আবদ্ধ করো, তখন সে জ্বর ইত্যাদি শত শত বন্ধনে যুক্ত হয়ে থাকে। তুমি আপন অধিষ্ঠাত্ পাপ দেবতা যম ও পিতৃদেবগণের সাথে স্বর্গলোকে এই পুরুষকে স্থান প্রাপ্ত করাও ৷৷ ৪৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— অপচিতঃ ইতি তৃচেন গণ্ডমালাভৈষজ্যকর্মণি শঙ্খং ঘৃষ্টা অভিমন্ত্র শুনকলালাং বা অভিমন্ত্র গণ্ডমালাং লিম্পেৎ। তথা অনেন তৃচেন জলুকাং গৃহগোধিকাং বা অভিমন্যু রুধিরমোক্ষার্থং গণ্ডমালাস্থানে সংশ্লেষয়েৎ। তথা তত্রৈব কর্মণি সৈন্ধবলবণং চূর্ণয়িত্বা অভিমন্ত্র গণ্ডমালায়া বিকীর্য তুষ্ণীং নিষ্ঠীবেৎ। সূত্রিতং হি।….ব্রীহি স্বাং ইতি পঞ্চ-ঋচেন চতুষ্পদগণ্ডভৈষজ্যার্থং শান্তুদকং অভিমন্ত্র ব্রণং প্রোক্ষেৎ।…ইত্যাদি। (৬কা, ৯অ. ১-২সূ)।

টীকা— প্রথম সূক্তের প্রথম তিনটি মন্ত্রের দ্বারা গণ্ডমালা রোগের ভৈষজ্যকর্মে শঙ্খ ঘর্ষণ করে অভিমন্ত্রিত পূর্বক গণ্ডমালায় প্রলেপন কর্তব্য। এই তিনটি মন্ত্রের দ্বারা জলুকা বা গৃহগোধিকা অভিমন্ত্রিত পূর্বক রুধির মোক্ষার্থে গণ্ডমালাস্থানে সংশ্লেষণ করণীয়। এই কর্মে সৈন্ধবলবণ চূর্ণ করে অভিমন্ত্রিত পূর্বক গণ্ডমালায় লেপন করণীয়। ইত্যাদি। প্রথম সূক্তের চতুর্থ মন্ত্রটি ও দ্বিতীয় সূক্তের চারটি মন্ত্র চতুষ্পদ প্রাণীর ব্রণ নিবারণে বিনিযুক্ত হয়ে থাকে। (৬কা, ৯অ. ১-২সূ)।

.

তৃতীয় সূক্ত : যক্ষ্মনাশনম্

[ঋষি : অথর্বা (যক্ষ্মনাশনম) দেবতা : বনস্পতি ছন্দ : অনুষ্টুপ]

বরণে বারয়াতা অয়ং দেবো বনস্পতিঃ। যক্ষ্মো যো অস্মিন্নাবিষ্টস্তমু দেবা অবীবর। ১৷৷ ইন্দ্রস্য বচসা বয়ং মিত্রস্য বরুণস্য চ। দেবানাং সর্বেষাং বাঁচা যক্ষ্মং তে বারয়ামহে ॥ ২॥ যথা বৃত্র ইমা আপস্তস্তম্ভ বিশ্বধা যতীঃ। এবা তে অগ্নিনা যক্ষ্মং বৈশ্বানরেণ বারয়ে ॥ ৩॥

 বঙ্গানুবাদ –এই পুরোবর্তী দান ইত্যাদি গুণযুক্ত বরণ নামে আখ্যাত বনস্পতি নির্মিত মণি (বরুণ বৃক্ষের মণি) রাজ্যক্ষ্মা ইত্যাদি রোগসমূহকে দূর করুক। এই পুরুষের মধ্যে যে ক্ষয়রোগ আছে, তা ইন্দ্র প্রমুখ দেবতা নাশ করুন ॥১।

 হে রোগী! আমরা মণিবন্ধনকারীগণ, তোমার ক্ষয়রোগকে ইন্দ্র মিত্র, বরুণ ও অপরাপর দেবগণের আজ্ঞাবচনানুসারে দূর করে দিচ্ছি। ২।

 যেমন ত্বষ্টার পুত্র বৃত্র সংসারের পালক মেঘসমূহের জলরাশিকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল, তেমনই আমি তোমার যক্ষ্মাকে অগ্নির দ্বারা নিবারিত করে দিচ্ছি ৷ ৩৷৷

.

চতুর্থ সূক্ত : বৃষকামনা

[ঋষি; অথর্বা দেবতা : একবৃষ ছন্দ : অনুষ্টুপ ]

 বৃষেন্দ্রস্য বৃষা দিবো বৃষা পৃথিব্যা অয়ম্। বৃষা বিশ্বস্য ভূতস্য ত্বমেকবৃষো ভব৷ ১৷ সমুদ্র ঈশে বতামগ্নিঃ পৃথিব্যা বশী। চন্দ্রমা নক্ষত্রাণামীশে ত্বমেকবৃষো ভব। ২। সম্রাডস্যসুরাণাং ককুন্মনুষ্যাণম্। দেবানামধোগসি ত্বমেকবৃষো ভব ॥ ৩॥

বঙ্গানুবাদ— শ্রেষ্ঠতা-কামনাশীল এই পুরুষ ইন্দ্রের অনুগ্রহে তৃপ্ত-করণশালী (সেচন-সমর্থ) হোক। এ আকাশ, পৃথিবী ও সকল প্রাণীকে তৃপ্ত করতে সমর্থ হোক। হে শ্রেষ্ঠতাভিলাষী পুরুষ! গোযুথের মধ্যে বৃষভ যেমন প্রধান, সকল জীবের মধ্যে তুমিও তেমনই শ্রেষ্ঠ হও॥ ১৷৷

 জলের মধ্যে সমুদ্র যেমন শ্রেষ্ঠ, পৃথিবীর অধিস্বামী যেমন অগ্নি, নক্ষত্রের অধিপতি যেমন চন্দ্রমা, তেমনই তুমি বৃষভের ককুদেব মতো উন্নত (শ্রেষ্ঠ) হয়ে ওঠো ॥২॥

হে ইন্দ্র! তুমি দেব-বিরোধী দানবগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং দেবতাগণের মধ্যে অর্ধভাগ স্বরূপ। এই হেন ইন্দ্রের প্রসাদে, হে শ্ৰেষ্ঠকামী পুরুষ! তুমি ইন্দ্রবৎ একবৃষ (অর্থাৎ সর্বশ্রেষ্ঠ) হয়ে ওঠো ॥ ৩

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –বরণো বারয়াতৈ ইতি তৃচেন রাজ্যক্ষ্মাদিরোগভৈষজ্যকর্মণি বরণবৃক্ষমনিং সম্পাত্য অভিমন্ত্র পুনস্তৃচং জপিত্বা বধীয়াৎ ….বৃষেন্দ্রস্য ইতি তাঁচেন শ্রেষ্ঠ্যকামঃ ইন্দ্রং যজতে উপতিষ্ঠতে বা।..ইত্যাদি। (৬কা, ৯অ. ৩-৪)।

টীকা –তৃতীয় সূক্তমন্ত্রের দ্বারা রাজযক্ষ্মা ইত্যাদি রোগের ভৈষজ্যকর্মে বরণবৃক্ষ-মণি অভিমন্ত্রিত পূর্বক ঐ মন্ত্রগুলি পুনরায় জপ করে রোগীর অঙ্গে ধারণীয়। চতুর্থ সূক্তের মন্ত্রগুলির দ্বারা শ্রেষ্ঠত্ব-লাভকামী জন ইন্দ্রের যাগ বা তার উপাসনা করবেন ॥ (৬কা, ৯অ. ৩-৪সূ)।

.

পঞ্চম সূক্ত : রাজ্ঞ সংবরণ

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : ধ্রুব ছন্দ : অনুষ্টুপ]

আ ত্বাহান্তরভূবস্তিষ্ঠাবিচাচলৎ। বিশস্থা সর্বা বাঞ্ছন্তু মা বৃদ্ৰাষ্ট্ৰমধি ভ্ৰশৎ ॥১॥ ইহৈবৈধি মাপ চ্যোষ্ঠাঃ পর্বত ইবাবিচাচলৎ। ইন্দ্র ইবেহ ধ্রুবস্তিষ্ঠেহ রাষ্ট্র ধারয় ॥ ২॥ ইন্দ্র এতমদীধর ধ্রুবং ধ্রুবেণ হবিষা। তস্মৈ সোমো অধি ব্ৰবদয়ং চ ব্ৰহ্মণস্পতিঃ ॥ ৩॥

 বঙ্গানুবাদ –হে রাজন! তুমি আমাদের অধিপতি হও; আমরা তোমাকে রাজ্যে আনয়ন করেছি। পৃথিবীর সকল প্রজা তোমাকে আপন স্বামী বা প্রভুরূপে মান্য করুক ॥১॥ তুমি এই রাজসিংহাসনে আরূঢ় হয়ে থাকো। তুমি পর্বতের ন্যায় দৃঢ় এবং স্থির হয়ে আপন এই রাজ্যকে সামলাও আমাদের হবিঃ দ্বারা প্রসন্ন হয়ে ইন্দ্রদেব এই রাজাকে স্থিররূপে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সোমদেব এই রাজাকে আপন বলে মনে করুন এবং ব্ৰহ্মণস্পতি দেবও একে আপন বলে ঘোষণা করুন ॥ ৩ ৷৷

.

ষষ্ঠ সূক্ত : ধ্রুবো রাজা

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : ধ্রুব ছন্দ : অনুষ্টুপ, ত্রিষ্টুপ]

 ধ্রুবা দ্যৌ পৃথিবী ধ্রুবং বিশ্বমিদং জগৎ। ধ্রুবাসঃ পর্ব ইমে ধ্ৰুবো রাজা বিশাময়ম্ ॥১॥ ধ্রুবং তে রাজা বরুণো ধ্রুবং দেবো বৃহস্পতিঃ।। ধ্রুবং ত ইন্দ্ৰশ্চাগ্নিশ্চ রাষ্ট্রং ধারয়তাং ধ্রুবম্ ॥ ২॥ ধ্রুবোহচ্যুতঃ প্ৰ মৃণীহি শত্রক্রয়তোহধরান পাদয়স্ব। সর্বা দিশঃ সংমনসঃ সচীবায় তে সমিতিঃ কল্পতামিহ ৷ ৩৷৷

বঙ্গানুবাদ –স্বর্গ, পৃথিবী ও দ্যাবাপৃথিবীর মধ্যে সম্পূর্ণ বিশ্ব যে প্রকারে স্থির হয়ে আছে, সেই রকমে এই রাজা পর্বতের সমান স্থির হয়ে থাকুন ॥১॥

হে রাজন! বরুণদেব, দেবমন্ত্রী বৃহস্পতি, ইন্দ্রদেব ও অগ্নিদেব তোমার রাজ্যকে স্থির রাখুন। ২।

 হে রাজন! তুমি এই রাজ্যে অবিচল হয়ে শত্রুগণকে মর্দন করতে থাকুন। তোমার প্রতি শত্রুভাবাপন্নগণকে অধোগতি প্রাপ্ত করাও। সকল দিক শত্রুরহিত হওয়ার পর তোমার অনুকূল হোক। তুমি এইস্থানে নিশ্চল হয়ে অবস্থিত থাকো, এবং যুদ্ধক্ষেত্রে কখনও পৃষ্ঠ প্রদর্শন করো না ৷ ৩ ৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –আ ত্বাহার্যং (৬/৮৭)– ধ্রুবা দৌঃ (৬৮৮) ইতি তৃচাভ্যাং স্থৈর্যকামো রাজা ইন্দ্রং যজতে উপতিষ্ঠতে বা।…ইত্যাদি। (৬কা, ৯অ. ৫-৬)।

টীকা –উপযুক্ত দুটি সূক্তের দ্বারা স্থৈর্যকামী রাজা ইন্দ্রের উদ্দেশে যাগ বা উপাসনা করবেন। এই মন্ত্রগুলি উদকুম্ভ ভঙ্গজনিত লক্ষণের উদ্ভুত প্রায়শ্চিত্তার্থে তথা নবকলস দৃঢ়ীকরণার্থে বিনিযুক্ত হয়। পঞ্চম সূক্তটির দ্বারা অগ্নিচয়নেও বিনিয়োগবিধি আছে ৷(৬কা. ৯৩.৫-৬)।

.

সপ্তম সূক্ত : প্রীতিসংজননম

 [ঋষি : অথর্বা দেবতা : সো, বায়ু, মিত্রাবরুণ ছন্দ : অনুষ্টুপ ]

ইদং যৎ প্ৰেণ্যঃ শিরো দত্তং সসামেন বৃষ্ণ্যম। ততঃ পরি প্রজাতেন হার্দিং তে শোচয়ামসি ॥ ১। শোচয়ামসি তে হার্দিং শোচয়ামসি তে মনঃ। বাতং ধূম ইব সঙ মামেবাম্বেতু তে মনঃ ॥ ২॥ মহং ত্বা মিত্রাবরুণৌ মহ্যং দেবী সরস্বতী। মহং ত্বা মধ্যং ভূম্যা উভাবন্তৌ সমস্যতাম৷ ৩৷

বঙ্গানুবাদ –এই প্রেম-প্রাপক বীর্যপ্রদ শির সোমদেব প্রদান করেছিলেন; এর দ্বারা উৎপন্ন হওনশীল প্রেমে (অর্থাৎ স্নেহবিশেষে আমরা তোমার অন্তঃকরণকে পীড়িত করছি৷৷ ১।

হে পতি-পত্নী! আমরা তোমাদের হৃদয়কে বায়ুর পশ্চাদগামী ধূমের ন্যায় পরস্পর অনুরক্ত করে দিচ্ছি। তোমাদের মধ্যে একের অন্তঃকরণে সন্তাপ উৎপন্ন করছি, যাতে তোমার মন আপন জীবন-সাথীর অনুকূল হয়ে থাকে। ২।

হে স্ত্রী (জায়া)! মিত্রাবরুণ দেবদ্বয় তোমাকে আমাতে (অর্থাৎ আমার সাথে মিলিয়ে দিন, দেবী সরস্বতী তোমাকে আমাতে মিলিত করুন। সকল প্রাণী তোমাকে আমাতে (অর্থাৎ আমার প্রতি) অনুরক্ত করুক; সকল প্রদেশ তোমাকে আমার করে দিক ॥৩॥

.

অষ্টম সূক্ত : ইষুনিষ্কাশনম

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : রুদ্র ছন্দ : অনুষ্টুপ, উষ্ণিক]

 যাং তে রুদ্র ইষুমাস্যদঙ্গেভ্যো হৃদয়ায় চ। ইদং তামদ্য ত্বদ বয়ং বিমূচীং বি বৃহামসি ॥১॥ যাস্তে শতং ধমনয়োহঙ্গান্যনু বিষ্ঠিতাঃ। তাসাং তে সর্বাসাং বয়ং নির্বিষাণি হুয়ামাসি ॥ ২॥ নমস্তে রুদ্রাস্যতে নমঃ প্রতিহিতায়ৈ। নমো বিসৃজমানায়ৈ নমো নিপতিতায়ৈ ॥ ৩॥

বঙ্গানুবাদ— হে রোগী! রুদ্র দেবতা যে শূল-রোগ রূপ বাণকে তোমার উপর নিক্ষেপ করেছেন, সেই বাণকে আমরা উৎপাটিত করছি ॥ ১। হে শূলরোগী পুরুষ! তোমার হস্তে ও পদে। যে শতসংখ্যক নাড়ী স্থিত রয়েছে, সেই স্থানে শূল-নাশিনী ঔষধিসমূহকে স্থাপিত করছি। ২। হে রোগ-রূপ বান-নিক্ষেপণের দ্বারা রোদন সৃষ্টিকারী রুদ্রদেব! তোমাকে নমস্কার। তোমার ধনুতে যোজিত এবং নিক্ষিপ্ত বাণকে নমস্কার। ধনু হতে মুক্ত হয়ে লক্ষ্যের উপর নিপতিত বাণকেও নমস্কার। ৩

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— ইদং যৎ প্ৰেণ্যঃ ইতি তৃচেন জায়াপত্যোরন্যোন্যং প্রীতিজননকর্মণি অননুকুলস্য শিরঃ কর্ণং চ অনুমন্ত্রয়েত কেশান বা ধারয়েৎ। সূত্রিতং হি।…যাং তে রুদ্র ইতি তৃচেন শরীরশূলরোগপরিহারার্থং লোহমণিং পাষাণমণিং বা সম্পত্য অভিমন্যু বধীয়া ইতি রুদ্র দারিলয়োভাষ্যকারয়োমতং। শূলিনঃ শূলস্থানং অনুমন্ত্ৰয়েতেতি ভদ্রস্য ভাষ্যকারস্য মতং।..ইত্যাদি। (৬কা, ৯অ. ৭-৮)।

টীকা –সপ্তম সূক্তের দ্বারা দম্পতির মধ্যে পরস্পর প্রীতি-জননের নিমিত্ত তাদের মধ্যে যে অননুকূল, তার শির ও কর্ণ অনুমন্ত্রিত করণীয় অথবা কেশে ধারণীয়। অষ্টম সূক্তটির দ্বারা ভাষ্যকারের মত অনুযায়ী, শূলরোগ পরিহারার্থে লোহমণি বা পাষাণমণি অভিমন্ত্রিত পূর্বক রোগীকে ধারণ করানো কর্তব্য। এই মন্ত্রের দ্বারা শূলস্থান অভিমন্ত্রিত করণীয়।…ইত্যাদি ॥(৬কা, ৯অ.৭-৮)।

.

নবম সূক্ত : যক্ষ্মনাশনম্

 [ঋষি : ভৃগ্বঙ্গিরা দেবতা : যক্ষ্মনাশনম্ ছন্দ : অনুষ্টুপ]

ইমং যমষ্টাযৌগৈঃ ষড়যোগেভিরচক্ষুঃ। তেনা তে তো রপোহপাচীনমপ ব্যয়ে ॥১॥ ন্যগ বাতো বাতি ন্য তপতি সূৰ্য্যঃ। নীচীনমগ্ন্যা দুহে ন্যগ ভবতু তে রপঃ ॥ ২॥ আপ ইদ বা উ ভেষজীরাপো অমীবচাতনীঃ। আপো বিশ্বস্য ভেষজীস্তাস্তে কৃন্বন্তু ভেষজম্ ॥ ৩॥

 বঙ্গানুবাদ –ঔষধিতে প্রযুক্ত-করণের নিমিত্ত এই সব অষ্টসংখক বলদ বা ষষ্ঠসংখ্যক বলদের। দ্বারা যুক্ত হালের দ্বারা কর্ষণ পূর্বক উৎপন্ন করা হয়েছে। এই যবগুলির দ্বারা, হে রোগী! তোমার রোগের কারণস্বরূপ পাপকে আমি নিম্নে নিষ্ক্রান্ত করে দিচ্ছি ॥১॥

সূর্য যেমন নিম্নদিকে তাপ প্রদান করে, বায়ু যেমন নিম্নভাগে বাহিত হয়, গাভী যেমন নিম্নাভিমুখী হয়ে দোহন করায়, তেমনই তোমার পাপও অধোমুখী হোক ॥ ২॥

ঔষধিসমূহ হলো জলের বিকার-রূপ; অতএব জলই রোগ বিনাশের নিমিত্ত সর্বোত্তম ঔষধি। এই জল সকল সংসারের ঔষধি স্বরূপ; তারাই (অর্থাৎ এই জলসমূহই) তোমার রোগ নিবারণ করুক ॥ ৩॥

.

দশম সূক্ত : বাজী

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : ইন্দ্র, বাজী ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, জগতী ]

বাতরংহা ভব বাজি যুজ্যমান ইন্দ্রস্য যাহি প্ৰসবে মনোজবাঃ। যুঞ্জন্তু বা মরুতো বিশ্ববেদস আ তে ত্বষ্টা পসু জবং দধাতু ॥১॥ জবস্তে অর্ব নিহিতো গুহা বঃ শ্যেনে বাত উত যোহচরৎ পরীত্তঃ। তেন ত্বং বাজি বলবান বলেনাজিং জয় সমনে পারয়িষ্ণুঃ ॥ ২॥ তনুষ্টে বাজি তন্বং নয়ন্তী বামমম্মুভ্যং ধাবতু শৰ্ম তুভ্যম। অহূততা মহো ধরুণায় দেবো দিবীব জ্যোতিঃ স্বমা মিমীয়াৎ ॥ ৩

বঙ্গানুবাদ— হে অশ্ব! তুমি রথে যোজিত হয়ে বায়ু-বেগশালী হয়ে থাকো। তুমি ইন্দ্রের প্রেরণায় গন্তব্যস্থানে মনের গতিতে (অর্থাৎ চকিতে) উপনীত হয়ে থাকো। উনপঞ্চাশৎ মরুৎ-গণ তোমাতে যুক্ত হোন এবং ত্বষ্টাদেব তোমার পদে গতি প্রদান করুন। ১।

হে অশ্ব! তোমার যে বেগ অসাধারণ স্থানে নিহিত হয়ে আছে, বাজপক্ষীতে ও বায়ুতে রক্ষিত হয়ে আছে, তার অপেক্ষা বলবান্ হয়ে তুমি যুদ্ধে উত্তীর্ণশালী হও ৷ ২৷৷

হে অশ্ব! তুমি বেগবান্ হয়ে থাকো। তোমার শরীরষ্টি আরোহীকে রণক্ষেত্রে বহন করে নিয়ে গিয়ে বিজয়প্রাপ্ত করাক এবং তুমি নিজেকে শস্ত্ৰক্ষত ইত্যাদি হতে রক্ষা পূর্বক দ্রুত বেগশালী হয়ে ওঠো। তুমি গ্রাম, নগর ইত্যাদির প্রাপ্তির নিমিত্ত সবল গতিতে ধাবিত হও এবং প্রত্যাবর্তন পূর্বক আপন জ্যোতির্ময় নিবাস-স্থান প্রাপ্ত হও। ৩।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –ইমং যবং ইতি তৃচেন সর্বরোগভৈষজ্যার্থং অধর্চেনাচেন আজ্যং হুত্ব, সযবে কেবলে বা উদপাত্রে চতুরঃ সম্পাতা ঘৌ পৃথিব্যাং আনীয় সম্পাতিতমৃৎসহিতোদকেন তৃচাভিমন্ত্রিতেন ব্যাধিতং আপ্লাবয়েৎ। তথা তত্রৈব কর্মণি অনেন তৃচেন যুবমণিং সম্পত্য অভিমন্ত্র। বীয়াৎ। সূত্রিতং হি।…বাতরংহাঃ ইতি তৃচেন অস্বশান্তৌ আজ্যং হুত্বা উদপাত্রে সম্পান আনীয় তেনোদকেন সূত্রোক্তরীত্যা অশ্বং আচাময়েৎ আপ্লাবয়েচ্চ।..ইত্যাদি ৷ (৬কা, ৯অ. ৯-১০সূ)। টীকা –উপযুক্ত নবম সূক্তের দ্বারা সর্বরোগের ভৈষজ্যার্থে আজাহুতি প্রদান পূর্বক যবসহ অথবা কেবল উদকপাত্রে চারবার সম্পাতিত করে দুইবার পৃথিবীতে (মৃত্তিকায়) প্রক্ষেপণ করে মৃত্তিকার সাথে সেই জল অভিমন্ত্রিত করে রোগীর অঙ্গে লেপনীয়। তথা, এই কর্মে এই মন্ত্রের দ্বারা যুবমনি সম্পাতিত পূর্বক অভিমন্ত্রিত করে রোগীর অঙ্গে বন্ধনীয়। দশম সূক্তের তিনটি মন্ত্রের দ্বারা অশ্ব-শান্তির নিমিত্ত আজাহুতি প্রদান পূর্বক জলপাত্রে সম্পাতিত পূর্বক সেই জলের দ্বারা সূত্রোক্ত রীতি অনুসারে অশ্বকে লেপন। করণীয়।…ইত্যাদি।(৬কা. ৯অ. ৯-১০)।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *