পঞ্চম অনুবাক
প্রথম সূক্ত : পরস্পরচিত্তৈকীকরণম
[ঋষি : ভৃগ্বঙ্গিরা। দেবতা : মন্যু। ছন্দ : অনুষ্টুপ]
অব জ্যামিব ধন্বনো মন্যং তনোমি তে হদঃ। যথা সংমনসৌ ভূত্বা সখায়াবিব সচাবহৈ ॥১॥ সখায়াবিব সচাবহ অব মোং তনোমি তে। অধস্তে অশ্মনো মনুমুপাস্যামসি যো গুরুঃ ॥ ২॥ অভি তিষ্ঠামি তে মনুং পাষ্ণা প্রপদেন চ। যথাবশশা ন বাদিয়ো মম চিত্তমুপায়সি। ৩৷৷
বঙ্গানুবাদ –ধনুর্ধারী কর্তৃক ধনুকের দণ্ড হতে জ্যা উন্মুক্ত করণের ন্যায়, হে পুরুষ! আমি তোমার হৃদয় হতে ক্রোধকে অপসারিত করে দিচ্ছি। আমরা উভয়ে যেন পরস্পর অনুরাগ রক্ষা করে একমনা হয়ে কার্য সাধন করতে পারি। ১।
আমরা এক মনে কার্যে নিয়োজিত হতে পারি, সেই কারণে আমি তোমার ক্রোধকে গুরুভার প্রস্তরের নীচে প্রেরিত করছি। ২।
আমি তোমার ক্রোধের উপর দণ্ডায়মান হয়ে পায়ের অগ্রভাগ এবং পাষ্ণির (গোড়ালির) দ্বারা সেই ক্রোধকে নিষ্পীড়ন পূর্বক আমার অধীন করে নিচ্ছি। আমি তোমার ক্রোধকে অবদমিত করে তোমাকে আপন অনুকূল করে নিচ্ছি ৷৷ ৩৷৷
.
দ্বিতীয় সূক্ত : মন্যুশমনম
[ঋষি : ভৃগ্বঙ্গিরা। দেবতা : মন্যুশমনম। ছন্দ : অনুষ্টুপ]
অয়ং দর্ভো বিমনকঃ স্বায় চারণায় চ। মনন্যাৰ্বিৰ্মনকস্যায়ং মনুশমন উচ্যতে ॥ ১। অয়ং যো ভূরিমূলঃ সমুদ্রমবতিষ্ঠতি। দর্ভঃ পৃথিব্যা উখিতো মনুশমন উচ্যতে ॥ ২॥ বি তে হনব্যাং শরণং বি তে মুখ্যাং নয়ামসি। যথাবশশা ন বাদিযো মম চিত্তমুপায়সি ॥ ৩৷৷
বঙ্গানুবাদ –এই দর্ভ (কুশসমূহ), আপন জাতির অথবা শত্রুজনের ক্রোধকে নষ্ট করণে সমর্থ হয়ে সম্মুখে অবস্থান করছে। স্বভাবতঃ ক্রোধী ও কারণবশতঃ ক্রোধ-করণশালীর ক্রোধকে নিবারণের ক্ষেত্রেও এর প্রয়োগ এক উপায়স্বরূপ ॥ ১।
এই পুরোবর্তী কুশসমূহ অনেক মূলসম্পন্ন হয়ে তথা অধিক জলসম্পন্ন ভূভাগকে অবলম্বন করে অবস্থিত রয়েছে। পৃথিবী হতে অন্তরিক্ষের দিকে উখিত এই দৰ্ভকে ক্রোধের শাস্তি-করণশালী বলা হয়েছে। ২।
হে ক্রোধবন্ত! ক্রোধকে প্রকট-করণশালিনী তোমার হনুসম্বন্ধিনী ক্রোধাভিব্যঞ্জিকা ধমনিসমূহকে আমরা শান্ত করে দিচ্ছি; এবং ক্রোধাবেশে মুখের উপর প্রকটশীলা ধমনিসমূহকেও শান্ত করে দিচ্ছি। আমি তোমার ক্রোধকে অবদমন পূর্বক পরাধীন করে তোমাকে আপন অনুকূল করে দিচ্ছি ৷৷ ৩৷৷
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— …তত্র আদ্যেন তৃচেন স্ত্রীপুরুষয়ে স্ত্রীবিষয়ে পুরুষস্য মনুবিনাশার্থং কুপিতং পুরুষং পশ্য অস্মানং অভিমন্ত্র হস্তেন গৃহীত্বা সখায়ামিব ইতি দ্বিতীয়াং ঋচং জপন অশ্মানং ভূমৌ প্ৰক্ষিপ্য অভি তিষ্ঠামি ইতি তৃতীয়াং ঋচং জপ তস্যাশন উপরি নিষ্ঠীবেৎ৷৷ তথা তস্মিন্নেব কর্মণি কুপিতস্য পুরুষস্য ছায়ায়াং অনেন তৃচেন ধনুরভিমন্ত্র সজ্যং কুর্যাৎ। এবং পুরুষবিষয়ে স্ত্রিয়া মবিনাশার্থং উক্তং কর্ম কুর্যাৎ। সূত্রিতং হি।…তথা দীক্ষায়াং যজমানঃ ক্রোধে প্রাপ্তে এতং তৃচং জপেৎ….সর্ববিষয়-মবিনাশার্থং অয়ং দর্ভ ইতি, তৃচেন দৰ্ভমূলং ঔষধিবৎ খাত্বা সম্পত্য অভিমন্ত্র বপ্নীয়াৎ।…ইত্যাদি। (৬কা, ৫অ. ১-২)।
টীকা— প্রথম সূক্তের দ্বারা স্ত্রী-বিষয়ে পুরুষের ক্রোধ অপনয়নের নিমিত্ত ক্রুদ্ধ পুরুষকে দর্শন করে একটি প্রস্তর অভিমন্ত্রিত করে হস্তে ধারণ পূর্বক এই সূক্তের দ্বিতীয় মন্ত্রটি (সখায়ামিব ইত্যাদি) জপ করে প্রস্তরটি ভূমিতে প্রক্ষিপ্ত করে পরবর্তী তৃতীয় মন্ত্রটি (অভি তিষ্ঠামি ইত্যাদি) জপ করে তার উপর থুকার করণীয়। এমন কর্ম কুপিত পুরুষের ছায়াতেও এই সূক্তমন্ত্রে ধনুঃ অভিমন্ত্রিত করে করণীয়। এই রকমেই পুরুষ-বিষয়ে স্ত্রীলোকের ক্রোধ অপনয়ন করা যায়। দীক্ষায় ক্রোধপ্রাপ্ত যজমান এই সূক্ত জপ করবেন।… সকল বিষয় সম্পর্কিত ক্রোধ অপনোদনের নিমিত্ত দ্বিতীয় সূক্তিটির দ্বারা দৰ্ভমূল ঔষধির মতো খনন পূর্বক অভিমন্ত্রিত করে ধারণীয়।…ইত্যাদি। (৬কা, ৫অ. ১-২)।
.
তৃতীয় সূক্ত : রোগনাশনম
[ঋষি : বিশ্বামিত্র। দেবতা : বনস্পতি। ছন্দ : অনুষ্টুপ, বৃহতী ]
অস্থাৎ দৌরস্থাৎ পৃথিব্যস্থাদ বিশ্বমিদং জগৎ। অম্বুবৃক্ষা ঊর্ধ্বপ্নাস্তিষ্ঠাদ রোগগা অয়ং তব ॥১॥ শতং যা ভেষজানি তে সহস্রং সঙ্গতানি চ। শ্রেষ্ঠমাস্রাবভেষজং বসিষ্ঠং রোগনাশনম্ ॥ ২॥ রুদ্রস্য মূত্ৰমস্যমৃতস্য নাভিঃ। বিষাণকা নাম বা অসি পিতৃণাং মুলাদুখিতা বাতীকৃতনাশনী ৷ ৩৷
বঙ্গানুবাদ— যে প্রকারে গ্রহ নক্ষত্রসমূহের সাথে দ্যুলোক আপন স্থানে অবস্থান করছে, যে প্রকারে সকলের আধারভূত পৃথিবীও অবস্থিত আছে এবং যে প্রকারে এই জঙ্গম প্রাণীসমূহ পৃথিবীর উপর আশ্রিত আছে, যে প্রকারে এই বৃক্ষসমূহ দণ্ডায়মান হয়ে নিদ্রা, অনুভব পূর্বক আপন স্থিতিতে অটল হয়ে থাকে, তেমনই, হে ব্যাধিত পুরুষ! তোমার রুধির স্থির ভাবে অবস্থান করুক, যেন ক্ষরিত (বাহিত) না হয় ॥ ১।
হে রোগী! রোগকে প্রশমন করণশালিনী যে শত বা সহস্র সংখ্যক ঔষধি প্রাপ্য হয়ে থাকে, তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হলো এই রক্তস্রাব দূরীকরণশালী কর্ম। ২।
হে গোশৃঙ্গোদক! তুমি রুদ্রের মূত্রস্বরূপ এবং চিরকাল জীবনরূপ অমৃতকে বন্ধনশালী; অতএব তুমি রোগকে বিনাশ করো। হে গোঙ্গ! তোমার বিষাণকা নাম (নাম বৈ) বিশেষভাবে রোগ-শমনের সূচক ও পিতৃদেবগণের মূল আস্রাব রোগের উপাদান স্বরূপ পাপকে নির্মূল করণশালী ॥ ৩৷৷
.
চতুর্থ সূক্ত : দুঃস্বপ্ননাশনম্
[ঋষি : অঙ্গিরা প্রভৃতি। দেবতা : দুঃস্বপ্ননাশন। ছন্দ : পংক্তি, অনুষ্টুপ ]
পরোহপেহি মনস্পাপ কিমশস্তানি শংসসি। পরেহি ন ত্বা কাময়ে বৃক্ষাং বনানি সং চর গৃহে গোষু মে মনঃ ॥১॥ অবশসা নিঃশাসা যৎ পরাশসোপারিম জাগ্রতো যৎ স্বপন্তঃ। অগ্নিবিশ্বন্যপ দুষ্কৃতান্যজুষ্টান্যারে অম্মদ দধাতু ॥ ২॥ যদি ব্ৰহ্মণস্পতেইপি মৃষা চরামসি। প্রচেতা ন আঙ্গিরসো দুরিতাৎ পাত্বংহসঃ ॥ ৩৷৷
বঙ্গানুবাদ –হে পাপে আসক্তি রক্ষণশালী আমার মন! তুমি আমা হতে দূরে থাকো, আমাদের দুঃস্বপ্ন প্রদর্শন করো না। তুমি অশোভন উক্তি আনয়ন করে থাকো, এই নিমিত্ত আমি তোমাকে কামনা করি না। তুমি বৃক্ষভূমিষ্ঠ বনানীতে প্রবেশ করে সেখানেই অবস্থান করো। আমার মন স্ত্রী, পুত্র ও গো-ইত্যাদি পশুসমূহের মধ্যে যথোচিত ভাবে অবস্থান করুক ॥১।
আমরা যে দুঃস্বপ্নের দ্বারা পীড়িত হচ্ছি, সেই দুঃস্বপ্নের কারণ রূপ পাপকে অগ্নিদেব আমাদের নিকট হতে দূর করে দিন ॥২।
হে মন্ত্রস্বামী ব্ৰহ্মণস্পতি! হে ইন্দ্রদেব! পাপবশ যে দুঃস্বপ্নের দ্বারা পীড়িত হয়ে আমরা মিথ্যালোকে বিচরণ করি, সেই পাপ হতে আঙ্গিরস-মন্ত্রশালী (প্রচেতা বা প্রকৃষ্টজ্ঞানশালী) বরুণ আমাদের রক্ষা করুন ॥ ৩
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— অস্মাদ দ্যৌঃ ইতি তৃচেন অপবাদভৈষজ্যকর্মণি স্বয়ং পতিতং গোশৃঙ্গং সম্পাত্য তদ উদকে নিধায় অভিমন্ত্র ত উদকং আচময়েৎ লোক্ষেচ্চ। সূত্রিতং হি।…পরোপেহি ইতি তৃচেন দুঃস্বপ্নদর্শননিমিত্তদোষ নিহঁরণার্থং উত্থায় মুখং প্রক্ষালয়েৎ। তথা অতিঘোরদুঃস্বপ্নদোষনিৰ্হরণ কর্মণি ব্রীহিযবসোধূমাদি মিশ্ৰধান্যময়ং পুরোডাশদ্বয়ং কৃত্বা একং অনেন তৃচেন অগ্নৌ জুহুয়াৎ। অপরংশত্রুক্ষেত্রে নিদধ্যাৎ..ইত্যাদি। (৬কা, ৫অ. ৩-৪সূ)।
টীকা –তৃতীয় সূক্তটির দ্বারা অপবাদের ভৈষজ্যকর্মে স্বয়ংপতিত গোঙ্গ সম্পাতিত করে জল রক্ষা পূর্বক অভিমন্ত্রিত করে সেই জলে আচমন ও প্রোক্ষণ করণীয়। চতুর্থ সূক্তটির দ্বারা দুঃস্বপ্নদর্শননিমিত্ত দোষ নিবারণকল্পে শয্যা হতে উত্থিত হয়ে মুখ প্রক্ষালন কর্তব্য। তথা অতিঘোর দুঃস্বপ্ন দর্শনজনিত দোষ নিবারণ কর্মে ব্রীহি-য-গগাধূম ইত্যাদি মিশ্রিত দুটি পুরোডাশ প্রস্তুত করে একটি এই (৪র্থ) সূক্তের দ্বারা অগ্নিতে হোম করণীয়। অপর পুরোডাশটি শত্রুক্ষেত্রে প্রক্ষেপণীয়।…ইতাদি। (৬কা, ৫অ. ৩-৪)।
.
পঞ্চম সূক্ত: দুঃস্বপ্ননাশনম
[ঋষি : অঙ্গিরা, প্রচেতা ও যম। দেবতা : দুঃস্বপ্ননাশন। ছন্দ : পংক্তি, ত্রিষ্টুপ, অনুষ্টুপ]
যো ন জীবোহসি ন মৃতো দেবানামমূতগর্ভোহসি স্বপ্ন। বরুণানী তে মাতা যমঃ পিতাররুর্নামাসি ॥১॥ অথর্ববেদ-সংহিতা বিদ্ম তে স্বপ্ন জনিং দেবজামীনাং পুত্রোইসি যমস্য করণঃ। অন্তকোহসি মৃত্যুরসি। তং ত্বা স্বপ্ন তথা সং বিঘ্ন স নঃ স্বপ্ন দুম্বপ্ন্যাৎ পাহি ॥ ২॥ যথা কলাং যথা শফং যথর্ণং সনেয়ন্তি। এবা দুম্বপ্ন্যং সর্বং দ্বিষতে সং নয়ামসি ॥ ৩৷৷
বঙ্গানুবাদ— হে স্বপ্ন! তুমি প্রাণধারকও নও, মৃতও নও; তুমি জাগ্রতাবস্থার অনুভব হতে উৎপন্ন। হে স্বপ্ন! বরুণের পত্নী তোমার মাতা ও বরুণ তোমার পিতা। তুমি অররু (আর্তিকর অসুর) নামে অভিহিত ॥১॥
হে স্বপ্নভিমানী দেবতা! আমরা তোমার জন্ম সম্পর্কে জ্ঞাত আছি। তুমি বরুণপত্নীর পুত্র। তুমি যমের ব্যাপার (কার্য) সাধন করণশীল। আমরা তোমাকে উত্তম প্রকারে জ্ঞাত আছি। তুমি দুঃস্বপ্নের ভীতি হতে আমাদের রক্ষাকরণশালী। ২
যেমন ঋণী মনুষ্য ধন প্রত্যর্পণের দ্বারা ঋণকে চুকিয়ে দেয়, যেমন গাভীর খুর ইত্যাদি দূষিত অঙ্গকে ছেদন ইত্যাদি কর্মের দ্বারা দূর করা হয়, তেমনই আমরা দুঃস্বপ্ন হতে সঞ্জাতব্য ভয়সমূহকে নিজেদের নিকট হতে দূর করে শত্রুদের উপর আরোপিত (প্রেরিত) করে দেবো॥ ৩৷৷
.
ষষ্ঠ সূক্ত : দীর্ঘায়ুঃপ্রাপ্তিঃ
[ঋষি : অঙ্গিরা, প্রচেতা। দেবতা : অগ্নি, বিশ্বে দেবা, সুধন্বা। ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]
অগ্নিঃ প্রাতঃসবনে পাত্বস্মন্ বৈশ্বানররা বিশ্বকৃদ বিশ্বশংভূঃ। স নঃ পাবকো দ্রবিণে দত্মায়ুষ্মন্তঃ সহভক্ষাঃ স্যাম ॥ ১৷ বিশ্বে দেবা মরুত ইন্দ্রো অম্মানস্মিন্ দ্বিতীয়ে সবনে ন জ্যঃ। আয়ুষ্মন্তঃ প্রিয়মেষাং বন্তো বয়ং দেবানাং সুমতৌ স্যাম ॥ ২॥ ইদং তৃতীয়ং সবনং কবীনামৃতেন যে চমসমরয়ন্ত। তে সৌধন্বনাঃ স্বরানশানাঃ স্বিষ্টিং নো অভি বস্যো নয়ন্তু ॥ ৩॥
বঙ্গানুবাদ –সেই অগ্নিদেবতা প্রাতঃসবন কর্মে আমাদের রক্ষা করুন। সেই বিশ্বের কর্তা, প্রাণীবর্গের হিতৈষী, দুঃখকে শান্ত করণশালী (বৈশ্বানর) আমাদের যজ্ঞের ফলরূপ ধনে স্থাপিত করুন। তাঁর কৃপায় আমরা দীর্ঘায়ু লাভ করে জীবিত থেকে পুত্র-পৌত্র ইত্যাদির সাথে একত্রে ভোজন করতে থাকবো ॥১॥
ঊনপঞ্চাশৎ সংখ্যক মরুৎ ও তাদের অধিস্বামী ইন্দ্রদেব আমাদের অর্থাৎ এই ঋত্বিক ও যজমানদের দ্বিতীয় সবনে যেন ত্যাগ না করেন। আমরা তাদের প্রসন্ন-করণশীল স্তুতি-বাক্য উচ্চারণ করে শতায়ু লাভ করবো এবং তাদের কৃপার পাত্র হয়ে থাকবো ॥ ২॥
এই তৃতীয় সূবন সেই ঋতু-দেবতাগণের, যাঁরা সোম-ভক্ষণের পাত্র এই চমসকে আপন শিল্পকর্মের দ্বারা প্রস্তুত করেছিলেন। সেই ঋভুগণ, (অর্থাৎ সুধন্য অঙ্গিরার ঋভু, বিভু ও বাজ বা নামে পুত্রত্রয়), রথ চমস ইত্যাদি নির্মাণের কারণে দেবত্ব লাভ করেছেন। এই হেন সেই ঋভুগণ যজ্ঞের উত্তম ফলকে স্মৃতিতে রক্ষা করে আমাদের সিদ্ধি প্রাপ্ত করান ॥ ৩ ৷৷
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— যো ন জীবঃ ইতি তৃচেন দুঃস্বপ্নজনিতদোষনিবৃত্তিকামঃ পরোপেহি (৪৫) ইতি চোক্তানি কর্মাণি কুর্যাৎ।….অগ্নি প্রাতঃসবনে ইতি ত্রিসৃভিঋগভিৰ্য্যথাক্ৰমং প্রাতরাদিত্রিযু সবনেষু সবনসমাপ্তিহোমা জুহুয়াৎ।….ইত্যাদি। (৬কা, ৫অ. ৫-৬সূ)।
টীকা –পঞ্চম সূক্তটির দ্বারা দুঃস্বপ্ন ও অতিঘোর দুঃস্বপ্নজনিত দোষ নিবৃত্তির কামনায় বিনিয়োগ সম্পর্কে পূর্ববর্তী ৪র্থ সূক্তে উক্ত হয়েছে। ষষ্ঠ সূক্তের দ্বারা যথাক্রমে প্রাতঃসবন, মাধ্যন্দিন-সবন ও তৃতীয় সবনের সমাপ্তিহোম করণীয়।…ইত্যাদি। পঞ্চম সূক্তের প্রথমে স্বপ্নকে যে ন জীবোহসি ন মৃতোহসি বলা হয়েছে, সেই সম্পর্কে ব্যাখ্যা এই যে, মিথ্যাপরিকল্পিতস্বভাবত্বাৎ স্বপ্নস্য জীবনমরণয়োঃ প্রাণিধর্ময়য়ারসম্ভভ ইত্যর্থঃ। অর্থাৎ স্বপ্ন প্রকৃতপক্ষে জীবের মিথ্যা কল্পনা হতে সঞ্জাত, সুতরাং জীবন বা মৃত্যুরূপে প্রাণীর যে ধর্ম, তা স্বপ্নের মধ্যে থাকা অসম্ভব ॥ (৬কা, ৫অ, ৫-৬সূ) ৪
.
সপ্তম সূক্ত : স্বস্তিবচনম
[ঋষি : অঙ্গিরা, প্রচেতা ও যম। দেবতা : শ্যেন, ঋভু, বৃষা। ছন্দ : উষ্ণিক।]
শোনোহসি গায়ত্ৰচ্ছন্দা অনু ত্ব রভে। স্বস্তি মা সং বহাস্য যজ্ঞস্যোদৃচি স্বাহা। ১। ঋভুরসি জগচ্ছন্দা অনু স্বা রভে। স্বস্তি মা সং বহাস্য যজ্ঞস্যোদৃচি স্বাহা। ২. বৃষাসি ত্রিষ্টপছন্দা অনু ত্বা রভে। স্বস্তি মা সং বহাস্য যজ্ঞস্যোদৃচি স্বাহা ॥ ৩৷৷
বঙ্গানুবাদ –হে প্রশংসনীয় গতিশালী প্রাতঃসবনে সাধিতব্য যজ্ঞ! তুমি বাজপক্ষীর ন্যায়। শীঘ্রগামী। তোমার স্তোত্রসমূহে গায়ত্রী ছন্দের আধিক্য থাকার কারণে তুমি গায়ত্ৰচ্ছন্দা। আমি। তোমাকে দণ্ডের ন্যায় গ্রহণ করছি, অতএব তুমি আমাকে যজ্ঞের অন্তিম শ্রেষ্ঠ ঋক্-সমূহ প্রাপ্ত করাও (অর্থাৎ যজ্ঞের সুষ্ঠু সমাপ্তি ঘটাও)। তোমার উদ্দেশে এই স্বাহাকৃত হবিঃ আহুত হচ্ছে। ১।
হে তৃতীয় সবনশালী যজ্ঞ! জগতী ছন্দের অধিক প্রয়োগ হওয়ার কারণে তুমি জগচ্ছন্দা। ঋভুগণকে। প্রসন্ন করণশালী হওয়ার কারণে তুমি ঋভু-নামধারী। আমি তোমাকে দণ্ডের ন্যায় গ্রহণ করছি। তুমি আমাকে যজ্ঞের অন্তিম শ্রেষ্ঠ ঋক্-সমূহ প্রাপ্ত করাও। তোমার উদ্দেশে এই স্বাহাকৃত হবিঃ আহুত হচ্ছে ॥ ২।
হে মাধ্যন্দিন সবনশালী যজ্ঞ! তোমার স্তোত্রসমূহে ত্রিষ্টুপ ছন্দের অধিক প্রয়োগ। হওয়ার কারণে তুমি ত্রিষ্ঠুছন্দা, এবং সেচন-সমর্থ ইন্দ্রকে প্রসন্ন করণশালী হওয়ার কারণে তুমি ইন্দ্র-রূপ। আমি তোমাকে দণ্ডের ন্যায় গ্রহণ করছি। তুমি আমাকে যজ্ঞের অন্তিম শ্রেষ্ঠ ঋক্-সমূহ ১ প্রাপ্ত করাও। তোমার উদ্দেশে এই স্বাহাকৃত হবিঃ আহুত হচ্ছে। ৩।
.
অষ্টম সূক্ত : অগ্নিস্তবঃ
[ঋষি : গার্গ্য। দেবতা : অগ্নি। ছন্দ : অনুষ্টুপ, জগতী]
নহি তে অগ্নে তন্বঃ কুরমানংশ মর্তঃ। কপিভস্তি তেজনং স্বং জরায়ু গৌরিব ॥১॥ মেষ ইব বৈ সং চ বি চোর্বসে যদুত্তরদ্রাবুপরশ খাদতঃ। শীষ্ণা শিবরাহসান্সে অয়ন্নং বস্তি হরিতেভিরাসভিঃ ॥ ২॥ সুপর্ণা বাচমক্রতোপ দ্যব্যাখরে কৃষ্ণা ইষিরা অনৰ্তিযুঃ। নি যনিয়ন্তপরস্য নিষ্কৃতিং পুরূ রেতো দধিরে সূর্যশিতঃ ॥ ৩॥
বঙ্গানুবাদ –হে অগ্নি! বানরের ন্যায় চঞ্চল গতিশালিনী ও দেহগত জলকে পানকারিণী তোমার শিখাসমূহ এই জীব-দেহকে সেইভাবেই ভস্ম করে দেয়, যেভাবে প্রসূতা গাভীর দ্বারা প্রসবের পর ভূমিতে পতিত আপন জরায়ু (গর্ভবেষ্টন ঝিল্লি) ভক্ষিত হয়ে থাকে। ১।
হে অগ্নি! তুমি দহন-যোগ্য পুরুষের দেহে সেই রকমে ব্যাপ্ত হয়ে থাকে। যেমন শুষ্ক তৃণময় বনের মধ্যে গমন করে মেষসমূহ সেই তৃণরাশিকে ভক্ষণের নিমিত্ত ব্যাপ্ত হয়ে যায়। বৃক্ষযুক্ত বনে সঞ্চরণশীল দাবাগ্নি ও শবকে ভস্ম-করণশালী শবাগ্নি যখন ভস্ম করতে থাকে, তখন তারা বৃক্ষ বা পুরুষকে, (জীবদেহকে) ভস্ম করতে করতে সোম ইত্যাদি লতাকেও ভক্ষণ করে থাকে। ২।
হে অগ্নি! তোমার জ্বালাসমূহ আনন্দে উৎফুল্ল কৃষ্ণমৃগের লম্ফ-ঝম্পের ন্যায় আকাশে উথিত হয়ে নৃত্য করছে। তারা (অর্থাৎ তোমার সেই শিখাসমূহ) বাজ পক্ষীর ন্যায় বেগশালিনী হয়ে দাহাত্মক ধ্বনি উৎসারিত করছে। তারা অধিক ধূম উৎপন্ন করে মেঘসমূহকে রচনা করছে। হে অগ্নি! সূর্যমণ্ডলকে প্রাপ্ত হয়ে তোমার দীপ্তিসমূহ, প্রাণীবর্গের উপাদান-রূপ বৃষ্টির জলকে সংসারের নিমিত্ত ধারণ, করছে ৷ ৩৷৷
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –শ্যেনোহসি ইতি তৃচেন উপনীতস্য মাণবকস্য আচার্য্যো দণ্ডং অভিমন্ত্র। দদ্যাৎ। সোপি মাণবকঃ এতৎ তৃচং জপ প্রতিগৃহীয়াৎ। …তথা অভয়কামঃ অনেন তৃচেন সপ্তর্ষী যজতে উপতিষ্ঠতে বা।…তথা শ্যেনোহসি ইত্যাদ্যাভিঋগভিঃ যথাক্ৰমং সবনসমাপ্তিহোমা জুহুয়াৎ।..নহি তে অগ্রে ইতি তৃচেন মৃতাচার্যদহনাগ্নৌ শ্রেয়াস্কামো ব্রহ্মচারি সূত্রোক্তপ্রকাবণ পুরোশং জুহুয়াৎ। সূত্রিতং হি ….ইত্যাদি ৷ (৬কা, ৫অ. ৭-৮)।
টীকা— সপ্তম সূক্তের দ্বারা আচার্য কর্তৃক উপনীত মানবককে অভিমন্ত্রিত দণ্ড প্রদান, অভয়কামী ব্যক্তি কর্তৃক সপ্তর্ষির যাগ করণ, তিনটি সবনে ব্রহ্মা কর্তৃক যজমানকে পাঠ করানো এবং যথাক্রমে সবনের সমাপ্তি-হোম কর্তব্য। অষ্টম সূক্তের দ্বারা মঙ্গলকামী ব্রহ্মচারী কর্তৃক সূত্রোক্ত প্রকারের দ্বারা পুরোশ হোম করণীয় ॥ (৬কা, ৫অ, ৭-৮)।
.
নবম সূক্ত : অভয়যাচনা
[ঋষি : অথর্বা (অভয়কামঃ)। দেবতা : অশ্বিনদ্বয়। ছন্দ : জগতী, পংক্তি]
হতং তং সমমাখুমশ্বিনা ছিন্তং শিরো অপি পৃষ্টীঃ শৃণীতম। যবান্নেদদানপি নহতং মুখমথাভয়ং কৃণুতাং ধান্যায় ॥১॥ তর্দ হৈ পতঙ্গ হৈ জভ্য হা উপস। ব্রহ্মেসংস্থিতং হবিরনদন্ত ইমান যবানহিংসততা অপোদিত ॥ ২॥ তদাপতে বঘাপতে তৃষ্টজম্ভা আ শৃণোত মে। য আরণ্যা ব্যদ্বরা যে কে চ স্থ ব্যদ্বরাস্তাসর্বান্ জম্ভয়ামসি ॥ ৩॥
বঙ্গানুবাদ –হে অশ্বিদেবদ্বয়! তোমরা এই হিংসক আখুদের (মূষিকদের) বিনাশ পূর্বক তাদের শিরগুলি বিচ্ছিন্ন করে দাও, তাদের অস্থি-পঞ্জর চূর্ণ করে দাও। তোমরা আমাদের ব্রীহি যব ইত্যাদি ধান্যকে রক্ষা করণের নিমিত্ত তাদের মুখগুলি বন্ধ করে দাও। ১।
হে হিংসক মূষক, পতঙ্গ ইত্যাদি! তোরা উপদ্রবী হওয়ার কারণে হিংসার যোগ্য। ব্রহ্মের সমতুল্য ভয়ঙ্কর এই হবিঃ তোদের বিনাশ-করণের নিমিত্ত অশ্বিনীকুমারদ্বয়কে সমর্পণ করা হতে যাচ্ছে। অতএব এই হবিঃ-কর্মের আগেই তোরা আমাদের যব ইত্যাদি শস্যকে ভক্ষণ না করে এই স্থান হতে অন্যত্র চলে যা ॥ ২॥
হে মূষক ও পতঙ্গ ইত্যাদির অধিস্বামী! সম্মুখস্থ হয়ে আমার বচন শ্রবণ করো। তোমরা যদি ইচ্ছা করো, তবে জঙ্গলেরই হোক বা গ্রামেরই হোক, যেখানেরই হও না কেন, আমরা আপন এই কর্মের দ্বারা তোমাদের সকলকেই বিনাশ করে দিচ্ছি ৷ ৩৷৷
.
দশম সূক্ত : এনোনাশনম
[ঋষি : শন্তাতি। দেবতা : সোম, আপ, বরুণ। ছন্দ : গায়ত্রী, ত্রিষ্টুপ, জগতী ]
বায়োঃ পূতঃ পবিত্রেণ প্রত্যঙ সোমো অতি দ্রুতঃ। ইন্দ্রস্য যুজ্যঃ সখা। ১৷ আপো অম্মা মাতরঃ সূদয়ন্তু ঘৃতেন নো ঘৃতপৃঃ পুনন্তু। বিশ্বং হি রিপ্রং প্রবহন্তি দেবীরুদিদাভ্যঃ শুচিরা পূত এমি ॥ ২॥ যৎ কিং চেদং বরুণ দৈব্যে জনেভিদ্রোহং মনুষ্যাশ্চরন্তি। অচিত্তা চেৎ তব ধর্মা যুয়োপিম মা নস্তম্মদেনসো দেব রীরিষঃ ॥
বঙ্গানুবাদ –বায়ু-সম্বন্ধী পবনসাধন দশাপবিত্রের দ্বার শুদ্ধ হয়ে রসতত্বকে প্রাপ্ত হয়ে সোম। প্রত্যেক শরীরস্থ মুখ হতে নাভি পর্যন্ত উপনীত হচ্ছে। সেই সোম ইন্দ্রের সখা ॥ ১৷
সংসারের মাতৃরূপ জল (জলদেবীগণ) আমাদের পাপ-রহিত করুন। ক্ষরণশীল রসের দ্বারা জগৎ-সংসারকে পবিত্রকরণশালী ক্ষরণশীল সারের (বা ঘৃতের দ্বারা) সেই জলদেবীগণ আমাদের পবিত্র করুন। সেই দেব-রূপ জল স্নান, আচমন, প্রোক্ষণ ইত্যাদি কর্মের দ্বারা সকল পাপকে প্রবাহিত (বা ক্ষালন)-করণশালী হয়ে থাকে। আমি এইরকম জলে স্নান ইত্যাদির দ্বারা পবিত্র হয়ে (যজ্ঞ) কর্মের নিমিত্ত উত্থিত হচ্ছি। ২।
হে বরুণ! দেব-সম্বন্ধী যে পাপ মনুষ্যগণ করে থাকে, এবং অজ্ঞানবশে ধর্মকে পালন না করে বিপরীত আচরণ করে; সেই অজ্ঞান হতে উৎপন্ন পাপের দণ্ড-রূপী তোমরা আমাদের বিনাশ করো না ॥ ৩৷৷
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— হতং তং ইতি তৃচেন মূষকপতঙ্গশলভটিটিভকীটহরিণশল্যক– গোধাদীনাং সস্যভক্ষকানাং নিবৃত্তয়ে লোহময়ং সীসং ঘর্ষন এতং তৃচং জপ মূষকাদিযুক্তং ক্ষেত্রং অতিক্রামেৎ। তথা অনেন তৃচেন শর্করা অভিমন্যু মূষকাদিস্থানে পরিকিরেৎ…বায়োঃ পূতঃ ইতি তৃচেন …..সর্বরোগভৈষজ্যে আজ্যহোমং পলাশাদিশান্তবৃক্ষসমিদাধানং চ (কুর্যাৎ)। ….ইত্যাদি। (৬কা, ৫অ. ৯-১০)। টীকা— নবম সূক্তটির দ্বারা মূষক-পতঙ্গ ইত্যাদি শস্যভক্ষকদের নিবারণ করা হয়। এই নিমিত্ত লোহময় সীসা ঘর্ষণ পূর্বক এই সূক্তটি জপ করে মূষিক ইত্যাদি অধ্যুষিত ক্ষেত্র অতিক্রম করণীয়। তথা এই মন্ত্রগুলির দ্বারা শর্করা অভিমন্ত্রিত করে ঐসকল স্থানে পরিকীর্ণ করে দেওয়া কর্তব্য। দশম সূক্তটির দ্বারা সর্বরোগভৈয়জ্যে আজ্যহোম করণে, সোমবমনপান ইত্যাদি জনিত ব্যাধিপ্রশমনে, অর্থোপনবিঘুশমন, ইত্যাদি কর্মে বিনিযুক্ত হয়।..ইত্যাদি। (৬কা, ৫অ. ৯-১০সূ)।