চতুর্থ অনুবাক
প্রথম সূক্ত : সত্যানৃতসমীক্ষকঃ
[ঋষি : ব্রহ্ম। দেবতা : বরুণ। ছন্দ : অনুষ্টুপ, ত্রিষ্টুপ, জগতী ]
বৃহন্নেষামধিষ্ঠাতা অন্তিকাদি পশ্যতি। যস্তায়ন্মন্যতে চরন্তসর্বং দেবা ইদং বিদুঃ ॥১॥ যস্তিষ্ঠতি চরতি যশ্চ বঞ্চতি যো নিলায়ং চরতি যঃ প্রতঙ্ক। দৌ সংনিষদ্য যন্ত্রয়েতে রাজা তদ বেদ বরুণস্তৃতীয়ঃ ॥ ২॥ উতেয়ং ভূমিৰ্বরুণস্য রাজ্ঞ উতাসৌ দ্যৌবৃহতী দূরেঅন্তা। উততা সমুদ্রেী বরুণস্য কুক্ষী উতাস্মিন্নল্প উদকে নিলীনঃ ॥ ৩॥ উত যো দ্যামতিসপাৎ পরস্তা স মূচ্যাতৈ বরুণস্য রাজ্ঞঃ। দিব স্পশঃ প্র চরন্তীদমস্য সহস্রাক্ষা অতি পশ্যন্তি ভূমিম ॥ ৪সর্বং তদ রাজা বরুণো বি চষ্টে যদন্তরা রোদসী যৎ পরস্তাৎ। সংখ্যাতা অস্য নিমিষো জনানামক্ষানিব শয়ী নি মিনোতি তানি॥ ৫৷৷ যে তে পাশা বরুণ সপ্তসপ্ত ত্রে তিষ্ঠন্তি বিষিতা রুশন্তঃ। ছিনন্তু সর্বে অনৃতং বদন্তং যঃ সত্যবাদ্যতি তং সৃজন্তু ॥ ৬৷৷ শতেন পাশৈভি ধেহি বরুণৈনং মা তে মোচ্যনৃতবা নৃচক্ষঃ। আস্তাং জান্ম উদরং শংসয়িত্বা কোশ ইবাবন্ধঃ পরিকৃত্যমানঃ ৭৷ যঃ সমামো বরুণো যো ব্যাম্যো যঃ সংদেশ্যো বরুণো যো বিদেশ্যঃ। যো দৈবো বরুণো যশ্চ মানুষঃ ॥ ৮ তৈত্ত্বা সর্বেরভি ষ্যামি পাশৈরসাবামুয্যায়ণামুয্যাঃ পুত্র। তানু তে সর্বাননুসন্দিশামি ॥
বঙ্গানুবাদ –যে বরুণদেব সদা অধিষ্ঠানশীলা বস্তুসমূহের এবং নাশবান্ পদার্থ সমূহের জ্ঞাতা। যে মহিমাবান্ বরুণদেব পাপাচারী শত্রুগণের উপর নিয়ন্ত্রণ রক্ষা করে থাকেন এবং তাদের অন্যায় কর্মসমূহকে সমীপবর্তী হয়েই দর্শন করে থাকেন; তিনি অতীন্দ্রিয় জ্ঞানসম্পন্ন হওয়ার কারণে সকল বৃত্তান্তই আতশালী ॥ ১
যে শত্রু ছলনার দ্বারা প্রতারণাশীল, যে শত্রু অদৃশ্য বা দৃশ্যরূপে সঞ্চরণশীল এবং যে কৃচ্ছসাধনের দ্বারা জীবন বিপন্ন করে চলে, রাজা বরুণ তাদের সকলকেই জানেন, কেননা তিনি সর্বজ্ঞ। মন্দ কর্মের ইচ্ছাপরায়ণ হলেও (অর্থাৎ অন্যায় কর্ম করার পূর্বেই) বরুণ তাদের দণ্ড প্রদানে সমর্থ। ২৷
এই পৃথিবী বরুণের বশীভূতরূপে অবস্থিত, এই বৃহৎ দ্যুলোকও বরুণের অধীন; পূর্ব-পশ্চিমের দুই সমুদ্র ও বরুণদেবের দক্ষিণ-উত্তরস্থ দুই পার্শ্বের ন্যায় > বর্তমান। এই রকমে বরুণদেব জগৎসংসারের সর্বত্র ব্যাপ্ত করণশালী হয়ে সরোবর ইত্যাদির স্বল্প জলেও বর্তমান আছেন ৷ ৩৷৷
পাপ-সাধনশীল শত্রু গোপনে কুপথে গমন করলেও, সে বরুণের পাশবন্ধন হতে মুক্ত হতে পারে না। বরুণের দূতগণ (বা চরবর্গ) এই পৃথিবীর উপর বিচরণ পূর্বক সকল বৃত্তান্ত (বা সকলের আচরণ) সূক্ষ্ম রীতির (বা দর্শনের উপায়ের) দ্বারা দর্শনে সমর্থ হয়ে থাকে। ৪।
আকাশ-পৃথিবীর মধ্যস্থানে অবস্থানকারী এবং আপন সম্মুখে অবস্থানকারী প্রাণীবর্গকে বরুণ বিশেষভবে দর্শন করে থাকেন; এই নিমিত্ত সকল কর্ম-অকর্ম অনুসারে, পাপ করণশালীগণকে অক্ষক্রীড়কের অক্ষ-পাতনের (অর্থাৎ জুয়ারীর দ্বারা পাশা ফেলার) ন্যায়, উত্তোলিত করে নিক্ষেপ করেন ॥৫॥
হে বরুণ! তোমার উত্তম, মধ্যম ও অধম ভেদে তিন রকম পাপীদের বন্ধনের নিমিত্ত যে সাত-সাতটি পাশ আছে, সেই সত্যরূপী পাশ মিথ্যাভাষী শত্রুদের সন্তাপ-দানশীল হোক এবং পুণ্যাত্মাগণের পক্ষে সুখপ্রদ হোক ॥ ৬
হে বরুণ! এই মিথ্যাভাষী শত্রুদের বন্ধন পূর্বক তুমি দণ্ডদান করো। তুমি মনুষ্যগণের সত্য-অসত্য কর্মসমূহকে আপন বিবেকের দ্বারা দর্শন করে থাকো; অতএব তোমা দ্বারা কোন মিথ্যাভাষী জন যেন রক্ষা না পায় এবং তার উদর জলোদর ব্যাধির দ্বারা আক্রান্ত (বা নষ্ট) হয়ে ছিন্নতা প্রাপ্ত হোক ॥ ৭।
বরুণের সামান্য নামক পাশ (বন্ধন) সামান্য রূপে ব্যাধিগ্রস্ত করে দেয়; ব্যাম্য নামক পাশ অনেক রূপে ব্যাধিগ্রস্ত করে দেয়; সংদেশ্য নামক পাশ স্বদেশে ও বিদেশ্য নামক পাশ বিদেশে, দৈব নামক পাশ দেবতাগণের মধ্যে এবং মানুষ নামক পাশ মনুষ্যবর্গের উপর প্রভাবকারী হয়ে থাকে। ৮
হে অমুক (যথা) নাম, অমুক (যথা) গোত্র ও অমুক (যথা) মাতার পুত্র! পূর্ব ঋক্-মন্ত্রে বর্ণিত বরুণের সকল পাশের দ্বারা আমি তোমাকে বন্ধন করছি। তুমি হেন শত্রুকে সেই পাশের দ্বারা বশীভূত করছি। ৯।
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— চতুর্থেবাকে পঞ্চ সূক্তনি। তত্র বৃহন্নেষাম ইতি আদ্যেন সূক্তেন অভিচারকর্মণি শত্ৰুং ক্রোশং অনুক্ৰয়াৎ (কৌ. ৬/২)। ধূমকেতুৎপাতশান্তৌ বারুণপশুপ্রয়োগে উতেয়ং ভূমিঃ ইত্যেষা (কৌ. ১৩/৩৫)। (৪কা. ৪অ. ১সূ)।
টীকা –চতুর্থ অনুবাকের পাঁচটি সূক্ত। তার মধ্যে এইটি আদ্য বা প্রথম সূক্ত। এই সূক্তটির দ্বারা অভিচার কর্মে শত্রুর পরাভব সাধিত হয়। ধূমকেতু জনিত উৎপাতের শান্তি ইত্যাদিতে উতেয়ং ভূমি এই তৃতীয় মন্ত্রের বিনিয়োগ দেখা যায়। (৪কা. ৪অ. ১সূ)।
.
দ্বিতীয় সূক্ত : অপামার্গ
[ঋষি : শুক্র। দেবতা : অপামার্গ বনস্পতি। ছন্দ : অনুষ্টুপ। ]
ঈশানাং ত্বা ভেষজানামুজ্জেষ আ রভামহে। চক্রে সহস্রবীর্যং সর্বম্মা ওষধে ত্ব।১। সত্যজিতং শপথযাবনীং সহমানাং পুনঃসরা। সর্বাঃ সমহোষধীরিতো নঃ পারয়াদিতি ॥ ২॥ যা শশাপ শপনেন যাঘং মূরমাদধে। যা রসস্য হরণায় জামারেভে তোকম সা॥ ৩৷৷ যাং তে চক্রামে পাত্রে যাং চকুনীললোহিতে। আমে মাংসে কৃত্যাং যাং চক্রুস্তয়া কৃত্যাকৃত জহি ॥৪॥ দৈষপ্ল্যং দ্যৌজীবিত্যং রক্ষো অভৃমরাষ্যঃ। দুর্ণামীঃ সর্বা দুর্বাচস্তা অম্মন্নাশয়ামসি ॥ ৫৷৷ ক্ষুধামারং তৃষ্ণামারমগোতামনপত্যতা। অপামার্গ ত্বয়া বয়ং সর্বং তদপ মৃহে ॥ ৬৷ তৃষ্ণামারং ক্ষুধামারমথো অক্ষপরাজয়। অপামার্গ ত্বয়া বয়ং সর্বং তদপ মৃহে ॥ ৭৷৷ অপামার্গ ওষধীনাং সর্বাসামেক ইদ বশী। তেন তে মৃন্ম আস্থিতমথ ত্বমগদশ্চর ॥৮॥
বঙ্গানুবাদ –হে সহদেবী! তুমি ঔষধি রূপে গৃহীতা অপর ঔষধিসমূহের অধীশ্বরী। শত্রুদ্বারা কৃত অভিচারের দোষকে নষ্ট করার নিমিত্ত আমরা তোমাকে স্পর্শ করছি এবং সকল দোষকে দূর করার নিমিত্ত তোমাকে সামৰ্থযুক্ত করছি। ১
অভিচার (বা পাপজনিত) দোষকে বিনাশশালিনী সত্যজিতা, অভিচারকে সহ্য-করণশালিনী–সহমানা, অন্যের আক্রোশকে দূরীকরণশালিনী শপথযাবনী এবং বারংবার অনেক ব্যাধিনাশিনী–পুনঃসরা, এই ঔষধিসমূহকে অন্য ঔষদিসমূহের অভিচারজনিত দোষ দূর করার উদ্দেশ্যে প্রাপ্ত হতে হয় ॥ ২॥
ক্রোধ পূর্বক শাপ প্রদানশালিনী যে পিশাচী মূৰ্ছিত-করণে বা শরীরের রক্তকে হরণ করার নিমিত্ত অপরের পুত্রকে আলিঙ্গন করে, সেই সকল পিশাচী আমার প্রতি অভিচার-করণশীলেরই পুত্রকে ভক্ষণ করুক৷ ৩৷৷
হে কৃত্যা! যে অভিচারিকগণ ধূমের দ্বারা নীল ও জ্বালার দ্বারা লোহিত তোমাকে অগ্নিস্থানে স্থাপিত করেছে, অপক্ক (কাঁচা) মৃৎপাত্রে, অপক্ক কুকুট ইত্যাদির মাংসের দ্বারা অভিচার কর্ম করেছে, তুমি সেই কৃত্যাকারীদেরই বিনাশ করে দাও। ৪।
ব্যাধি দর্শনরূপ দুঃস্বপ্নকে, রাক্ষসগণকে, অভিচারের দ্বারা উৎপন্ন ভীষণ ভয়কে, দুষ্ট নামধারিণী ও দুষ্ট বচনশালিনী পিশাচিকাগণকে এবং অসমৃদ্ধিকারিকা অলক্ষ্মীবর্গকে আমরা এই অভিচারগ্রস্ত পুরুষ হতে বিতাড়িত করে দেবো ॥ ৫॥
ক্ষুধার দ্বারা পুরুষের মারণ, পিপাসার দ্বারা পুরুষের মারণ বা ক্ষুৎপিপাসায় নষ্ট হওয়ার কারণে পুরুষকে মৃত্যুগ্রস্ত-করণ, পুরুষকে গো-হীনতা ও সন্তান রাহিত্য করণরূপ হে অপামার্গ! তুমি উপায় স্বরূপ; তোমার দ্বারা আমরা এই সন্তাপসমূহকে দূর করছি। ৬।
পিপাসা বা ক্ষুধার দ্বারা মরণ, দ্যুতক্রিয়ায় পরাজয় ইত্যাদি সকল কারণকে, হে অপামার্গ! তোমার দ্বারা দূর করে দিচ্ছি। ৭৷
হে অভিচারগ্রস্ত পুরুষ! কৃত্যার দ্বারা ব্যাপ্ত ব্যাধিসমূহকে আমরা অপমার্গের দ্বারা দূরীভুত করে দিচ্ছি। পুনরায় তুমি রোগ-রহিত হয়ে চিরকাল ব্যাপী (অর্থাৎ পুর্ণ আয়ুষ্কাল পর্যন্ত) জীবিত থাকো। এই অপামার্গ অন্য সকল ঔষধিকে বশীভূত করে থাকে। ৮।
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –স্ত্রীশূদ্রকাঁপালাদিকৃতাভিচারদোষ নিবৃত্ত্যর্থং দর্ডাপামার্গ-সহদেব্যাদ্যা মন্ত্রোক্তা ওষধীঃ শান্তুদককলশে প্রক্ষিপ্য তদনুমন্ত্রণবিনিযুক্তে মহাশান্তিগণে ঈশানাং ত্ব ইত্যাদি সূক্তত্রয়ং আবপনীয়ং। সূত্রিতং হি৷ দুষ্যা দুষিরসি (২কা/১১সু অর্থাৎ ২কা, ২অ. ১সূ) যে পুরস্তাৎ (৪/৪০) ঈশানাং ত্বা (৪/১৭) সমং জ্যোতিঃ (৪/১৮) উততা অস্য বন্ধুকৃৎ (৪/১৯) সপর্ণা (৫/১৪) ৪ যাং তে চক্রুঃ (৫/৩১) অয়ং প্রতিসরঃ (৮/৫) যাং কল্পয়ন্তি (১০/১১) ইতি মহাশান্তিং আবপতে ইতি (কৌ.৫/৩)। এতৎসূক্তসঙ্ঘস্য কৃত্যাপ্রতিহরণগণত্বাদ অস্য গণস্য যত্রতত্র বিনিয়োগস্তত্র সর্বত্র অস্য সূক্তাত্রয়স্যাপি বিনিয়োগো দ্রষ্টব্যঃ। (৪কা. ৪অ. ২সূ)।
টীকা –স্ত্রী-শূদ্র-কাঁপালিক ইত্যাদি কৃত অভিচারজনিত দোষ নিবৃত্তির নিমিত্ত দর্ভ, অপামার্গ, সহদেবী ইত্যাদি মন্ত্রোক্ত ওষধিসমূহ শান্তু্যদক কলশে প্রক্ষিপ্ত করে তার অনুমন্ত্রণে এই সূক্তটি এবং এর পরবর্তী দুটি সূক্তের মন্ত্র মহাশান্তিগণে বিনিযুক্ত হয়।…ইত্যাদি ॥ (৪কা. ৪অ. ২সূ)।
.
তৃতীয় সূক্ত : অপামার্গ
[ঋষি : শুক্র। দেবতা : অপামার্গ, বনস্পতি। ছন্দ : অনুষ্টুপ ]
সমং জ্যোতিঃ সূর্যেণাঙ্গা রাত্রী সমাবতী। কৃণোমি সত্যমূতয়েহরসাঃ সন্তু কৃত্বরীঃ ॥ ১। যো দেবাঃ কৃত্যাং কৃত্বা হরাদবিদুষো গৃহ। বৎসসা ধারুবির মাতরং তং প্রত্যগুপ পদ্যতাম্ ॥ ২॥ অমা কৃত্বা পাম্মানং যন্তেনান্যং জিঘাংসতি। অশ্মানস্তস্যাং দধায়াং বহুলাঃ ফট্ করিতি ॥ ৩৷৷ সহস্রধামন্ বিশিখা বিগ্রীবাং ছায়য়া ত্ব। প্রতি স্ম চক্রুষে কৃত্যাং প্রিয়াং প্রিয়াবতে হর ৷ ৪৷৷ অনয়াহোষধ্যা সর্বাঃ কৃত্যা অদূদুষ। যাং ক্ষেত্রে চক্র্যাং গোষু যাং বা তে পুরুষেষু ॥ ৫৷৷ যশ্চকার ন শোক কর্তৃং শশ্রে পাদমসুরি। চকার ভদ্রমস্মভ্যমাত্ননে তপনং তু সঃ ॥ ৬৷৷ অপমার্গোহপ মার্ক্স ক্ষেত্রিয়ং শপথশ্চ যঃ। অপাহ যাতুধানীরপ সর্বা অরায্যঃ ॥ ৭ ৷৷ আপমৃজ্য যাতুধানানপ সর্বা অরায্যঃ। অপামার্গ ত্বয়া বয়ং সর্বং তদপ মৃহে ॥ ৮।
বঙ্গানুবাদ –আদিত্যের আভা, কখনও আদিত্য হতে পৃথক হয় না। রাত্রিও সমান প্রসারশালিনী হয়ে থাকে। যেমন আভা আদিত্যের এবং দিন তথা রাত্রির সমানত্ব সত্য, তেমনই আমি অভিচার-গ্রস্ত পুরুষের রক্ষার্থে সত্য (বা যথার্থ) কর্ম সাধিত করছি, যাতে হিংসাত্মক কৃত্যাসমূহ ব্যর্থ হয়ে যায়। ১৷৷
হে দেবগণ! যে শত্রু সন্তাপ-দানশালিনী কৃত্যাকে অপর অজ্ঞাত পুরুষের গৃহে খনন পূর্বক স্থাপন করতে আসে, কৃত্যা প্রত্যাবৃত্ত হয়ে সেই অভিচারীকেই আলিঙ্গন ও ই করুক, যেমন দুগ্ধ পানকারী বৎস আপন মাতার সাথে আঠার মতো লেগে থাকে। ২৷৷
যে বিশ্বাসঘাতী, এক সাথে থেকে কৃত্যা খনন পূর্বক মারণ করতে চায়, সেই শত্রুর কৃত্যা প্রতিকার কর্মের দ্বারা অসমর্থ হয়ে যাক এবং মন্ত্র-বলের দ্বারা উৎপন্ন অনেক প্রস্তরের সাহায্যে সেই শত্রুকে বিনাশ করে দিক৷ ৩৷৷
হে সহদেবী! তুমি অনেক স্থানে উৎপন্ন হয়ে থাকো! তুমি আমাদের শত্রুগণকে ছিন্ন গ্রীবা ও কর্তিত কেশশালী করে বিনাশ করে দাও। তুমি শত্রুগণের হিতকারিণী কৃত্যাকে সেই কৃত্যাকারীর উপরেই প্রত্যাবৃত্ত করে দাও ৷৷ ৪।
যে কৃত্যাকে বীজ-বপনের ক্ষেত্রে খনন করে দেওয়া হয়েছে, যে কৃত্যাকে গো-গণের গোষ্ঠে প্রথিত করে দেওয়া হয়েছে, যে কৃত্যাকে বায়ু-সঞ্চরণের স্থানে রক্ষিত করা হয়েছে এবং যে কৃত্যাকে মনুষ্যের চলাচলের পথে খুনন করা হয়েছে, সেই সকল কৃত্যা এই সহদেবীর দ্বারা নিবীর্য (কর্মক্ষমতাহীন) হয়ে যাক ॥ ৫॥
যে দুষ্ট জন কৃত্যার দ্বারা এক পাদ ও এক অঙ্গুলীকেও নষ্ট করতে চায়, (অর্থাৎ কারো অঙ্গহানি করতে চায়), সে যেন আপন উদ্দেশ্য সাধনে সফল না হয় এবং তার অভিচারকর্মকে নিষ্ফলকারিণী ঔষধিসমূহ এবং মন্ত্রের শক্তিতে আমাদের নিমিত্ত মঙ্গলময় হয়ে সেই কৃত্যাকারী শত্রুকে পীড়িত করুক ॥ ৬৷৷
হে অপামার্গ! মাতা-পিতা হতে প্রাপ্ত (অর্থাৎ বংশগত) কুষ্ঠ, ক্ষয় ইত্যাদি সংক্রামক রোগকে এবং শত্রুর আক্রোশকে আমাদের হতে পৃথক্ করে দাও। পিশাচী ও অলক্ষ্মীবর্গকে বন্ধন পূর্বক আমাদের নিকট হতে দূর করে দাও। ৭।
হে অপামার্গ! তুমি যক্ষ রাক্ষস ই্যদিকে এবং সকল অলক্ষ্মীকরী ও পাপদেবতাগণকে আমাদের নিকট হতে দূর (বা পৃথক) করে দাও ৮৷৷
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –সমং জ্যোতি ইতি সূক্তস্য পূর্বসূক্তেন সহ উক্তো বিনিয়োগঃ … ইত্যাদি৷ (৪কা, ৪অ. ৩সূ)।
টীকা –সমং জ্যোতি এই সূক্তের বিনিয়োগ পূর্ব সূক্তে উক্ত হয়েছে।…ইত্যাদি। (৪কা, ৪অ. ৩সূ)।
.
চতুর্থ সূক্ত : অপামার্গ
[ঋষি : শুক্র। দেবতা : অপামার্গ, বনস্পতি। ছন্দ : অনুষ্টুপ, পংক্তি]
উততা অস্যবন্ধুকৃদুতো অসি ন জামিকৃৎ। উতত কৃত্যাকৃতঃ প্রজাং নডমিবা চ্ছিন্ধি বার্ষিক ॥ ১৷ ব্রাহ্মণেন পযুক্তাসি কন্বেন নার্যদেন। সেনেবৈষি ত্বিষীমতী ন তত্র ভয়মস্তি যত্র প্রাপ্লেষ্যোষধে ॥ ২॥ অগ্রমেয্যোধীনাং জ্যোতিষেবাভিদীপয়ন্। উত ত্রাতাসি পাকস্যাথো হন্তাসি রক্ষসঃ ॥ ৩৷৷ যদদো দেবা অসুরাংস্কৃয়াগ্রে নিরকুর্বত। ততমধ্যোষধেইপামাগো অজায়থাঃ ॥৪॥ বিভিন্দতী শতশাখা বিভিন্ন নাম তে পিতা। প্রত্যগ বি ভিন্ধি ত্বং তং যো অম্মা অভিদাসতি ॥ ৫॥ অসৎ ভূম্যাঃ সমভবৎ তদ্যামেতি মহৎ ব্যচঃ। তৎ বৈ ততো বিধূপায়ৎ প্রত্যক কর্তারমৃচ্ছতু ॥ ৬৷৷ প্রত্যঙ হি সম্বভূবিথ প্রতীচীনফলস্তু। সর্বান মচ্ছপথ অধি বরীয়ো যাবয়া বধম। ৭। শতেন মা পরি পাহি সহস্রেণাভি রক্ষ মা। ইন্দ্ৰস্তে বীরুধাং পত উগ্র ওমানমা দৎ ॥ ৮
বঙ্গানুবাদ –হে সহদেবী! তুমি আমাদের শত্রুবর্গের বিনাশকারিণী হও। তুমি কৃত্যাকারী শত্রুর পুত্র-পৌত্র ইত্যাদিকে বর্ষায় উৎপন্ন নলতৃণের (নলখাগড়া ঘাসের) মতোই ছেদন পূর্বক বিনষ্ট করে দাও। ১।
হে সহদেবী! ষদ-পুত্র কম্ব ঋষি তোমার বিনিয়োগ করেছিলেন। তুমি যজমানের রক্ষার্থে সেনার ন্যায় গমন করে থাকো। তুমি যেস্থানে গমন করো, সেস্থানে অভিচারের ভয় থাকে না ॥ ২
প্রকাশের (অর্থাৎ আপন জ্যোতির) দ্বারা তেজস্বী সূর্য যেমন সকল জ্যোতিষ্কের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, তেমনই হে সহদেবী! তুমি সকল ঔষধির মধ্যে শ্রেষ্ঠ। হে অপামার্গ! তুমি আপন শক্তির দ্বারা কৃত্যার নিষ্ফলকর্তা রূপে নির্বলের রক্ষায় ও রাক্ষসগণের হত্যাকর্মে সমর্থ হয়ে থাকো ॥ ৩ ৷৷
হে ঔষধি! পূর্বকালে ইন্দ্র ইত্যাদি দেবগণ তোমার দ্বারাই রাক্ষসবর্গকে অধীনস্থ করে ফেলেছিল। তুমি অন্য ঔষধির উপর-স্থানে অবস্থিত হয়ে অপমার্গের দ্বারা উৎপন্ন হচ্ছো। ৪।
হে অপামার্গ! তুমি অসংখ্য শাখাসম্পন্ন হওয়ায় বিভিন্দতী নামশালিনী হয়ে আছে। তোমার উৎপাদক হলো বিভিন্দন। এই নিমিত্ত যারা আমাদের বিনাশ করতে ইচ্ছুক, সেই শত্রুদের সমক্ষে গমন পূর্বক তাদের বিদীর্ণ করে দাও ॥ ৫
হে ঔষধি! তোমার ব্যাপ্ত তেজ যে ভূমি লাভ করে থাকে, তাতে অর্থাৎ সেই ভূমিতে খনিত কৃত্যা নিরর্থক হয়ে কার্য-সমর্থ হয় না, বরং সেই কৃত্যা নিষ্ফল হয়ে, সেই স্থান হতে নির্গমন পূর্বক কৃত্যাকারীকেই নাশ করুক ॥ ৬।
হে অপামার্গ! তুমি প্রত্যক্ষ ফলশালী। তুমি শত্রুর আক্রোশকে আমার নিকট হতে দূর করে এবং তারই উপর পাতিত করো (অর্থাৎ তারই প্রতি আরোপিত করো)। শত্রুর হিংসা-সাধন শস্ত্র বা কৃত্যাকে আমাদের হতে পৃথক্ করে দাও। ৭।
হে সহদেবী! তুমি রক্ষা-যোগ্য সকল উপায়ের দ্বারা আমাদের রক্ষা করো এবং কৃত্যাজনিত দোষকে বিযুক্ত করো। মহাতেজস্বী ইন্দ্রদেব আমাতে তেজঃ স্থাপিত করুন ॥ ৮৷৷
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –উতো অসি ইতি সূক্তস্য, পূর্ববৎ বিনিয়োগঃ। (৪কা. ৪অ, ৪সূ)।
টীকা –এই সূক্তটির বিনিয়োগ পূর্বের মতো ॥ (৪কা. ৪অ. ৪সূ)।
.
পঞ্চম সূক্ত : পিশাচান্তয়ণম
[ঋষি : মাতৃনামা। দেবতা : ওষধি। ছন্দ : অনুষ্টুপ ]
আ পশ্যতি প্রতি পশ্যতি পরা পশ্যতি পশ্যতি। দিবমন্তরিক্ষমাৎ ভূমিং সর্বং তৎ দেবি পশ্যতি ॥১॥ তিম্রো দিবস্তিঃ পৃথিবীঃ ষট চেমাঃ প্রদিশঃ পৃথক। ত্বয়াহং সর্বা ভূতানি পশ্যানি দেব্যোষধে ॥ ২॥ দিব্যস্য সুপর্ণস্য তস্য হাসি কনীনিকা। সা ভূমিমা রুরোহিথ বহ্যং শ্রান্তা বধূরিব ॥ ৩ তাং মে সহস্রাক্ষো দেবো দক্ষিণে হস্ত আ দধৎ। তয়াহং সর্বং পশ্যামি যশ্চ শূদ্র উর্ষঃ ॥ ৪৷৷ আবিষ্কৃণুম্ব রূপাণি মাত্মানমপ গৃহথাঃ। অথো সহস্রচক্ষো ত্বং প্রতি পশ্যাঃ কিমীদিনঃ ॥ ৫৷৷ দর্শয় মা যাতুষানান্ দর্শয় যাতুধান্যঃ। পিশাচান্তসর্বান্ দর্শয়েতি ত্বা রভ ওষধে ॥ ৬ কশ্যপস্য চক্ষুরসি শুন্যাশ্চ চতুরক্ষ্যাঃ। বীর্ধে সূর্যমিব সন্তং মা পিশাচং তিরস্করঃ ॥৭॥ উদগ্রভং পরিপাণাদ যাতুধানং কিমীদিন। তেনাহং সর্বং পশ্যামত শূদ্রমুতাম ॥ ৮ যো অন্তরিক্ষেণ পততি দিবং যশ্যাতিসৰ্পতি। ভূমিং যো মন্যতে নাথং তং পিশাচং প্র দর্শয় ॥ ৯৷৷
বঙ্গানুবাদ –হে সদম্পু নাম্নী ঔষধি! এই পুরুষ তোমার মণিকে ধারণ করে আসন্ন (বা, ভাবী) ভীতিকে, বর্তমান ভীতিকে এবং দূরস্থিত ভীতিকে সন্দর্শন করতে পারে। (অর্থাৎ সেই ভীতিগুলিকে পরিহার করতে সক্ষম হয়ে থাকে)। স্বর্গ, অন্তরিক্ষ ও পৃথিবী এই তিন লোকে নিবাসকারী সকল প্রাণী হতে উৎপন্ন ভয়কে ত্রিসন্ধ্যামণির ধারণকারী সাধক সন্দর্শন করতে পারে। (অর্থাৎ ব্রহ্মগ্রহ ইত্যাদি যে ভয়-কারণ-সমূহ ত্রিলোকে ব্যাপ্ত হয়ে আছে, তা ত্রিসন্ধ্যামণির ধারণ মাহাত্মে ধারক পরিহার করতে সক্ষম হয়ে থাকে) ॥১।
হে ঔষধি! তিন স্বর্গ, তিন পৃথিবী, তিন ঊর্ধ্ব-দিক, তিন নিম্ন-দিক ও সেগুলিতে নিবাসকারী সকল প্রাণীকেও আমি তোমাকে মণিরূপে ধারণের প্রভাবে সন্দর্শন করছি। ২৷
হে সদম্পু! তুমি স্বর্গের দেবতা রূপ, সুন্দর পক্ষসম্পন্ন গরুড়ের নেত্রের কনীনিকা (চোখের মণি) স্বরূপ। যেমন পরিশ্রান্তা স্ত্রীলোক বহনযোগ্য শিবিকায় আরোহিতা হয়, তেমনভাবেই তুমি গরুড়ের নেত্র হতে স্খলিত হয়ে ভূমিতে ঔষধিরূপে সমুৎপন্ন হয়েছে ॥৩॥
দান ইত্যাদি গুণে বিভূষিত ইন্দ্রদেব সদম্পুস্পাকে আমার দক্ষিণ বাহুতে ধারণ করিয়েছেন। হে ঔষধি! তোমার দ্বারা আমি ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র সকলকেই বশীভূত করে রাক্ষস ইত্যাদিকেও নিরাকৃত করার নিমিত্ত যত্ন করছি ৷৷ ৪
হে ঔষধি! তুমি রাক্ষস ইত্যাদিকে, দূরীকরণশালী আপন গুণসমূহকে প্রকট করো, আপন স্বরূপকে সংগুপ্ত করে রেখো না। তুমি সহস্র দর্শন-সাধনের দ্বারা দর্শনশালী হয়ে আছো; তুমি গূঢ়ভাবে বিচরণশীল রাক্ষসদের উপর দৃষ্টি রক্ষা করে, (অর্থাৎ তাদের আক্রমণাত্মক গতিবিধির উপর লক্ষ্য রেখে), আমাদের রক্ষা করো ॥৫৷
হে সদস্পা। তুমি রাক্ষসদের আমাদের দর্শন করিয়ে দাও (অর্থাৎ আমরা যেন রাক্ষসদের দেখতে পারি), যাতে তারা গুপ্তরূপে অবস্থান পূর্বক আমাদের পীড়া দিতে না পারে; সেইসঙ্গে রাক্ষসীদেরও সন্দর্শন করিয়ে দাও। এই নিমিত্ত আমি তোমাকে ধারণ করছি ৷৬৷৷
হে ঔষধি! তুমি কশ্যপ ঋষির নেত্রস্বরূপা। তুমি দেব-কুকুরী সরমার ও নেত্রস্বরূপা। গ্রহ-নক্ষত্র ইত্যাদি সমম্বিত অন্তরিক্ষলোকে সূর্যের মতোই বিচরণশালী পিশাচদের অন্তর্হিত হতে দিও না ॥৭॥
আমি রক্ষণের উপায়ের উদ্দেশ্যে যাতুনবর্গকে (অর্থাৎ নিশাচর রাক্ষসদের) বশীভূত করে নিয়েছি, যাতে তাদের দ্বারা শূদ্রজাতি যুক্ত নীচ অথবা ব্রাহ্মণজাতিযুক্ত উচ্চ সকল গ্রহকে (অর্থাৎ পিশাচবর্গকে) লক্ষ্য করতে সমর্থ হই ॥৮॥
যে পিশাচ অন্তরিক্ষলোকে এবং দুলোকে বিচরণপূর্বক পৃথিবীকে আপন অধিকৃত (বা বশীভূত) বলে মনে করে, সেই ত্রিলোক-ব্যাপ্ত পিশাচদের আমাকে দেখিয়ে দাও; আমি তার জন্য প্রযত্ন করছি (অর্থাৎ তাদের নিরাকৃত করার জন্য চেষ্টিত আছি) ॥৯॥
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –আ পশ্যতি ইতি সূক্তেন ব্রহ্মগ্রহাদিজনিতভয় নিবৃত্তয়ে ত্রিসন্ধ্যামণিং সম্পাত্য অভিমন্ত্র বধুীয়াৎ। সূত্রিতং হি।..ইত্যাদি। (৪কা. ৪অ. ৫সূ)৷৷
টীকা –ব্রহ্মগ্রহ ইত্যাদি জনিত ভয় নিবারণকল্পে এই সূক্ত-মন্ত্রের দ্বারা ত্রিসন্ধ্যামণি অভিমন্ত্রিত পূর্বক ধারণীয়।..ইত্যাদি ॥ (৪কা. ৪অ. ৫সূ) ॥