সপ্তম অনুবাক
প্রথম সূক্ত : সেনানিরীক্ষণম
[ঋষি : ব্রহ্মাস্কন্দ। দেবতা : মন্যু। ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, জগতী]
ত্বয়া মনন্যা সরথমারুজতো হৰ্ষমাণ হৃষিতাসো মরুত্বন। তেগ্মষব আয়ুধা সংশিশানা উপ প্র যন্তু নরো অগ্নিরূপাঃ ১ অগ্নিরিব মনন্যা ত্বিষিতঃ সহস্ব সেনানীৰ্নঃ সহুরে হুত এধি। হত্বায় শন্ বি ভজস্ব বেদ ওজো মিমানো বি মৃধো নুদস্ব। ২। সহস্র মনন্যা অভিমাতিমস্মৈ রুজ মৃণম্ প্রমৃণ প্রেহি শক্র। উগ্রং তে পাজো নন্ব রবুদ্রে বশী বশং নয়াসা একজ ৷৷ ৩৷৷ একো বহুনামসি মন্য ঈড়িতা বিশংবিশং যুদ্ধায় সং শিশাধি। অকৃত্তরুত্বয়া যুজা বয়ং দুমন্তং ঘোষং বিজয়ায় কৃশ্মসি৷৷ ৪৷ বিজেষকৃদি ইবানব্ৰবোহবস্মাকং মনন্যা অধিপা ভবেহ। প্রিয়ং তে নাম সহুরে গৃণীমসি বিপ্ন তমুৎসং যত আবভূথ ৷৷ ৫৷৷ আভূত্যা সহজা বজ্র সায়ক সহো বিভর্ষি সহভূত উত্তর। ক্ৰত্বা নো মনন্যা সহ মেদ্যেধি মহাধনস্য পুরুহুত সংসৃজি৷৷ ৬ ৷৷ সংসৃষ্টং ধনমুভয়ং সমাকৃতমস্মভ্যং ধত্তাং বরুণশ্চ মোঃ। ভিয়ো দখানা হৃদয়েষু শত্ৰবঃ পরাজিতামো অপ নি লয়ন্তা৷ ৭
বঙ্গানুবাদ –হে মনুদেব! তুমি ক্রোধ বা উৎসাহের অভিমানী দেবতা এবং মরুৎ-গণের ন্যায় বেগবা। তোমার সাধনের দ্বারা রথযুক্ত শত্রুকে পীড়িত করণ পূর্বক আমাদের শূর সৈন্যগণ অগ্নির সমান দুর্ধর্ষ হয়ে আপন অস্ত্রশস্ত্রসমূহকে তেজঃ সম্পন্ন করে শত্রুর সম্মুখে উপস্থিত হোক। ১।
হে মনু! তুমি অগ্নির ন্যায় তেজস্বী হয়ে শত্রুকে বশীভূত করো। তুমি আমাদের সেনাগণের সেনাপতি হয়ে যুদ্ধে আমন্ত্রিত হও। তুমি শত্রুগণের বিনাশ সাধন পূর্বক তাদের ধন আমাদের মধ্যে বন্টন করে দাও ২
হে মনুদেব! তোমার বলকে কেউই নিরস্ত করতে পারে না। তুমি সকল মনুষ্যকে বশীভূত করে থাকো। অতএব এই রাজার শত্রুগণের হস্তী, অশ্ব ইত্যাদিকে ভঙ্গ করে, সৈনিকদলকে তিরস্কার করে, তাদের বিনাশ করে ফেলো ৷৷ ৩৷
হে মনু! আমাদের দ্বারা স্তুত হয়ে তুমি শত্রুগণকে বশীভূত করণে অত্যন্ত সমর্থ হয়ে থাকো। তুমি আমাদের প্রজাজনের মধ্যে প্রবিষ্ট হয়ে তাদের যুদ্ধকুশল করে তোলো। আমরা তোমার সহায়তাতেই এই বিজয়-নিনাদে উদ্দীপ্ত হয়ে উঠছি। ৪
হে মন্যুদেব! আমরা তোমার উৎপত্তি স্থানকে জানি এবং সেই স্থানেই তোমার প্রিয় নামে তোমায় স্তুতি করছি। তুমি ইন্দ্রের ন্যায় প্রাচীন প্রযত্ন (জয়কৌশল) করে থাকো; এই যুদ্ধে আমাদের রক্ষক হও। ৫।
হে মদ্যুদেব! তুমি প্রচণ্ড বলশালী। তুমি শত্রুবর্গকে বিনাশ-করণে সমর্থ। তুমি বহু যজমান কর্তৃক আহূত হয়ে থাকো। তুমি মহান্ ঐশ্বর্য প্রাপ্তকরণশালী কর্মের রূপস্বরূপে আমাদের প্রাপ্ত হও ৷৷ ৬ ৷
মনুদেব ও বরুণদেব দুজনেই আপনাপন ধন আনয়ন পূর্বক একত্রিত করে আমাদের প্রদান করুন। আমাদের শত্রুবর্গ ভয়ভীত হয়ে পরাজয় স্বীকার করুক এবং পলায়ন পূর্বক লুক্কায়িত হয়ে থাকুক। ৭।
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –সপ্তমেনুবাকে পঞ্চ সূক্তানি। তত্র ত্বয়া মনন্যা যস্তে মন্যো ইতি সূক্তদ্বয়ং স্বপরসেনয়োর্মধ্যে স্থিত্বা সেনে নিরীক্ষমাননা জপেৎ। তথা আভ্যাং সূক্তাভ্যাং ভাঙ্গপাশা মৌঞ্জপাশা আমপাত্রানি বা সম্পত্য অভিমন্ত্র পরসেনাসঞ্চারস্থলেষু প্রক্ষিপেৎ। তথা জয়পরাজয়বিজ্ঞানকর্মণি শরতৃণানি সেনয়োর্মধ্যে নিধায় আভ্যাং অভিমন্ত্র আঙ্গিরসাগ্নিনা দহেৎ। যাং সেনা ধূমো ব্যাগ্নেতি তস্যা পরাজয়ো ভবতীতি বিজানীয়াৎ। সূত্রিতং হি।…ইত্যাদি ॥(৪কা, ৭অ. ১সূ)৷
টীকা –সপ্তম অনুবাকের পাঁচটি সূক্তের মধ্যে এই প্রথম সূক্তটি ও এর পরবর্তী দ্বিতীয় সূক্তটি– আপন ও বিপক্ষীয় সেনার মধ্যে স্থিত হয়ে তাদের নিরীক্ষণ করতে করতে জপ করতে হয়। এই সূক্ত দুটির দ্বারা ভাঙ্গপাশা মুঞ্জপাশা বা আমপাত্র অভিমন্ত্রিত করে বিপক্ষীয় সেনাগণের সঞ্চারস্থলে প্রক্ষেপ করণীয়। তথা জয়-পরাজয় সম্পর্কিত বিজ্ঞান কর্মে উভয় সেনার মধ্যে এই সূক্তমন্ত্রে শরতৃণ অভিমন্ত্রিত করে আঙ্গিরস-অগ্নিতে দগ্ধ করণীয়। ঐ ধূম যে পক্ষের সেনাদের ব্যাপ্ত করে, সেই পক্ষের পরাজয় জ্ঞাত হওয়া যায়।…ইত্যাদি ৷ (৪কা, ৭অ. ১সূ)।
.
দ্বিতীয় সূক্ত : সেনাসংযোজনম
[ঋষি : ব্রহ্মস্কন্দ। দেবতা : মন্যু। ছন্দ : জগতী, ত্রিষ্টুপ।]
যস্তে মনোবিধ বজ্র সায়ক সহ ওজঃ পুষ্যতি বিশ্বমানুষ। সাহ্যাম দাসমার্যং ত্বয়া যুজা বয়ং সহস্কৃতেন সহসা সহস্বতা ॥১॥ মনারিন্দ্রো মনরেবাস দেব মনহোতা বরুণো জাবেদাঃ। মনবিশ ঈড়তে মানুশষীৰ্যাঃ পাহি নো মনন্যা তপসা সজোষাঃ। ২৷৷ অভীহি মন্যো তবসস্তবীয়ান তপসা যুজা বি জহি শত্রু। অমিত্ৰহা বৃত্ৰহা দস্যুহা চ বিশ্বা বসূন্যা ভর ত্বং নঃ ॥ ৩৷৷ ত্বং হি মন্যো অভিভূতত্যাজাঃ স্বয়ম্ভুর্ভামো অভিমাতিষাহঃ। বিশ্বচৰ্ষণিঃ সহুরিঃ সহীয়ানস্মম্বোজঃ পৃতনাসু ধেহি। ৪অভাগঃ সন্নপ পরেতো অস্মি তব ক্ৰত্বা তবিষস্য প্রচেতঃ। তং ত্বা মনো অক্রতুর্কিহীডাহং স্বা তদূর্বলদাবা ন এহি ॥ ৫৷৷ অয়ং তে অস্যুপ ন এহ্যবাঙ প্রতীচীনঃ সহুরে বিশ্বদাব। মনন্যা বজিন্নভি ন আ ববৃস্ব হব দস্যুংরুত বোধ্যাপেঃ ॥৬॥ অভি প্রেহি দক্ষিণতো ভব নোধা বৃত্রাণি জনাব ভূরি। জুহোমি তে ধরুণং মধ্বে অগ্রমুভাবুপাংশু প্রথমা পিবাব ॥ ৭৷৷
বঙ্গানুবাদ— হে মনুদেব! তোমাকে সেবা-করণশালী পুরুষ, শত্রবর্গকে তিরস্কৃত করার উপযুক্ত বলকে পুষ্ট করে থাকে। তোমারই সহায়তাতে সে পরাভবকারী শত্রুকে বশীভূত করে থাকে। ১।
মনুই ইন্দ্র, সকল দেবতাও মনুই। দেবতাগণের আহ্বায়ক অগ্নিও মনই। বরুণও মনুই। সকল মনুষ্য মন্যুকেই স্তুতি করে থাকে, কারণ সকল দেবতা মরূপেই বর্তমান (অথবা মই সকল দেবতার মধ্যে বিরাজমান)। হে মদ্যুদেব! তুমি আমাদের দুঃখ দূরীকরণ পূর্বক রক্ষা করো ॥ ২॥
হে মনু তুমি অমিত্রের ঘাতক তথা শত্রুর হননশালী হও। তুমি আমাদের সম্মুখে আগমন পূর্বক শত্রুগণকে নাশ করো এবং তাদের সকল ধন আমাদের প্রাপ্ত করাও। ৩।
হে মনুদেব! তুমি স্বয়ং আপন আত্মার মধ্যে উদিত হয়ে থাকো (অর্থাৎ তুমি স্বয়ংজাত ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরাত্মক)। তুমি সকলের দ্রষ্টা ও শত্রুবর্গকে বশীভূতকারী। সকল মনুষ্য তোমার বশানুবর্তী হয়ে থাকে। তুমি যুদ্ধকালে আমাদের দেহে বল স্থাপন করো। ৪
হে মনুদেব! উত্তম জ্ঞানী। তোমাকে স্তুতি করা না হলে যুদ্ধ হতে পৃথক হয়ে থাকো (অর্থাৎ যুদ্ধে প্রবৃত্ত আমাদের সহায়ক হও না)। আমরা তোমার সন্তুষ্টকরণশালী কর্ম সাধিত না করে তোমাকে রুষ্ট করে দিয়েছি। তুমি আমাদের বল প্রদানের নিমিত্ত আগমন করো। ৫
হে মদ্যুদেব! আমি তোমার স্তুতি করতে প্রবৃত্ত হয়েছি; তুমি আমাদের সম্মুখে আবির্ভূত হয়ে শত্রুর দিকে প্রস্থান করো (বা প্রধাবিত হও)। আমরা এবং তুমি উভয়ই শত্রুকে বিনাশ করবো ৷৷ ৬ ৷৷
হে মদ্যুদেব! তুমি আমাদের সম্মুখে আগত হও। আমাদের পরামর্শদাতৃত্বের নিমিত্ত আমাদের দক্ষিণ ভাগে প্রতিষ্ঠিত হও। পুনরায় আমরা শত্রুগণকে উত্তমভাবে প্রহার করবো। আমরা তোমার উদ্দেশে সোমরসের দ্বারা আহুতি প্রদান করছি; তুমি ও আমরা, উভয়েই গোপনীয় ভাবে সোমপান করবো। ৭।
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— যস্তে মনো ইতি সূক্তস্য পূর্বসূক্তেন সহ উক্তো, বিনিয়োগঃ (৪কা, ৭অ. ২সূ)।
টীকা –এই সূক্তটির বিনিয়োগ পূর্ব সূক্তের মতো॥ (৪কা, ৭অ. ২সূ)।
.
তৃতীয় সূক্ত : পাপনাশনম্
[ঋষি : ব্রহ্মা। দেবতা : অগ্নি। ছন্দ : গায়ত্রী]
অপ নঃ শশাশুচদঘমগ্নে শুশুগ্ধ্যা রয়িম। অপ নঃ শশাশুচদঘ॥১॥ সুক্ষেত্রিয়া সুগাতুয়া বসুয়া চ মজামহে। অপ নঃ শোশুচদঘম ৷ ২৷৷ প্র যদ ভষ্ঠি এষাং স্মাকাসশ্চ সূরয়ঃ। অপঃ নঃ শশাশুচদঘ।৩ প্র যৎ তে অগ্নে সূরয়ো জায়েমহি প্র তে বয়ম্। অপঃ নঃ শশাশুচদম্ ॥ ৪৷৷ প্র যদগ্নেঃ সহস্বতো বিশ্বততা যন্তি ভানবঃ। অপ নঃ শোশুচদম্ ॥ ৫॥ ত্বং হি বিশ্বততমুখ বিশ্বতঃ পরিভূরসি। অপ নঃ শশাশুচদম্ ॥ ৬৷৷ দ্বিমো নো বিশ্বতোমুখাতি নাবেব পারয়। অপ নঃ শশাশুচদষম্ ॥৭॥ স নঃ সিন্ধুমিব নাবাতি পর্ষা স্বস্তয়ে। অপ নঃ শশাশুচদঘ। ৮।
বঙ্গানুবাদ –হে অগ্নি! তোমার কৃপাতে আমাদের পাপ দূরীভূত হোক। তুমি আমাদের সকল দিক হতে ধনের দ্বারা সমৃদ্ধ করো। তোমার কৃপা দৃষ্টিতে আমাদের সকল পাপ দূরীভূত হোক। ১
হে অগ্নি! আমরা সুন্দর স্থান প্রাপ্তির নিমিত্ত, সুন্দর পথ প্রাপ্তির নিমিত্ত এবং প্রভূত ধন প্রাপ্তির কামনা করে তোমাকে হবির দ্বারা তৃপ্ত করছি। তোমার কৃপায় আমাদের পাপ দূরীভূত হোক। ২।
হে অগ্নি! আমি সকল স্তোতা অপেক্ষা অধিকরূপে তোমার স্তুতি-করণশীল। আমার পুত্র ইত্যাদিও তোমার অনন্য স্তোতা। অতএব তোমার কৃপায় আমাদের পাপ দূরীভূত হয়ে যাক। ৩।
হে অগ্নি! তোমার স্তোতৃগণ পুত্র-পৌত্র ইত্যাদি সন্ততির সাথে যুক্ত হয়ে থাকে; অতএব তোমার মহিমা-জ্ঞাপক স্তোত্রকারী আমরাও পুত্র-পৌত্র ইত্যাদির সাথে যুক্ত (বা সম্পন্ন) হবো। তোমার কৃপাতে আমাদের পাপ দূরীভূত হোক। ৪।
পরাক্রমী অগ্নির দীপ্তিরাশি সকল দিক হতে আমাদের মঙ্গল করার নিমিত্ত প্রবর্তিত হচ্ছে। অতএব অগ্নির তেজের দ্বারা আমাদের পাপ দূরীভূত হয়ে যাক ॥ ৫॥ হে অগ্নি! তুমি সর্বত্র ব্যাপক হয়ে আছে, এই সমগ্র জগৎ-সংসার তোমার বশবর্তী
হয়ে আছে; তোমারই কৃপায় আমাদের পাপ দূরীভূত হয়ে যাক। ৬। হে অগ্নি! যেমন নৌকার দ্বারা সমুদ্র উত্তীর্ণ হওয়া যায়, তেমনই তুমি পাপরূপ শত্রুদের কবল, হতে আমাদের নিস্তরণ করিয়ে। দাও। তোমার কৃপায় আমাদের পাপ দূরীভূত হয়ে যাক ৷৷ ৭।
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –অপ নঃ শোশুচৎ অঘং ইত্যস্য সূক্তস্য অপ নঃ শোশুচৎ অঘং (৪/৩৩) পুনন্তুমা (৬/১৯) সসুষীঃ (৬/২৩) ইতি (কৌ. ১/৯) বৃহঙ্গণে পাঠাৎ শান্তু্যদকাদৌ বিনিয়োগঃ। তথা স্ত্রীণাং পুরুষবিষয়াভিরতি নিবৃত্তয়ে পুরুষাণাং চ স্ত্রীবিষয়াভিরতি-নিবৃত্তয়ে চ অনেন সূক্তেন অসংখ্যাতাঃ শর্করা অভিমন্ত্র কাম্যমান-পরগৃহং স্ত্রীগৃহং বা প্রকির ব্রজেৎ। হস্তে ধারয় বা জপেৎ। সূত্রিতং হি।…ইত্যাদি। (৪কা, ৭অ. ৩সূ)।
টীকা –এই সূক্তটি, ষষ্ঠ কাণ্ডের দ্বিতীয় অনুবাকের পঞ্চম ও তৃতীয় অনুবাকের দ্বিতীয় সূক্তদ্বয়, বৃহদগণে পঠিত শান্তুদক কর্মে বিনিযুক্ত হয়। তথা পুরুষ বিষয়ে স্ত্রীগণের এবং স্ত্রীলোক বিষয়ে পুরুষগণের অভিরতি (অর্থাৎ আসক্তি) নিবৃত্তির নিমিত্ত এই সূক্তের দ্বারা অসংখ্য শর্করা অভিমন্ত্রিত করে কাম্যমান পুরুষের গৃহে বা কাম্যমানা স্ত্রীর গৃহে প্রকীরিত (ছড়িয়ে দেওয়া) কর্তব্য। ঐ শর্করা হস্তে ধারণ করেও জপনীয়।…ইত্যাদি ॥ (৪কা.৭অ.৩সূ)।
.
চতুর্থ সূক্ত : ব্রহ্মৌদনম
[ঋষি : অথর্বা। দেবতা : ব্রহ্মৌদনম। ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, জগতী, শক্করী ]
ব্রহ্মাস্য শীর্ষং বৃহদস্য পৃষ্ঠং বামদেব্যমুদরমোদনস্য। ছন্দাংসি পক্ষৌ মুখমস্য সত্যং বিষ্টারী জাতস্তপসোহধি যজ্ঞঃ ॥ ১। অনস্থাঃ পূঃ পবনেন শুদ্ধাঃ শুয়ঃ শুচিমপি যন্তি লোক। নৈষাং শিশ্নং প্ৰ দহতি জাবেদাঃ স্বর্গে লোকে বহু স্ত্রৈণমেষাম। ২৷৷ বিষ্টারিণমোদনং যে পচন্তি নৈনানবর্তিঃ সচতে কদাচন। আস্তে যম উপ যাতি দেবান্তসং গন্ধর্বৈমদতে সোম্যেভিঃ ॥ ৩৷৷ বিষ্টারিণমোদনং যে পচন্তি নৈনা যমঃ পরি মুাতি রেতঃ। রথী হ ভূত্বা রথযান ঈয়তে পক্ষী হ ভূত্বাতি দিবঃ সমেতি ॥ ৪৷ এষ যজ্ঞানাং বিততো বহিষ্ঠো বিষ্টারিণং পক্কা দিবমা বিবেশ। আভীকং কুমুদং সং তনোতি বিসং শালুকং শফকো মুলালী। এতাস্তা ধারা উপ যন্তু সর্বাঃ স্বর্গে লোকে মধুমৎ পিন্থমানা .. উপ ত্বা তিন্তু পুষ্করিণীঃ সমন্তাঃ ॥৫॥ ঘৃত্যুদা মধুকূলাঃ সুরোদকাঃ ক্ষীরেণপূর্ণা উদকেন দপ্ত। এতাস্তা ধারা উপ যন্তুসাঃ স্বর্গে লোকে মধুমৎ পিম্বমানা উপ জ্বা তিষ্টন্তু পুষ্করিণীঃ সমন্তাঃ ॥ ৬চতুরঃ কুম্ভাংশ্চতুৰ্দ্ধা দদামি ক্ষীরেণ পূর্ণা উদকেন দা। এতান্ত্বা ধারা উপ যন্তু সর্বাঃ স্বর্গে লোকে মধুমৎ পিন্বমানা উপ ত্বা তিন্তু পুষ্করিণীঃ সমন্তাঃ ॥ ৭৷ ইমমোদনং নি দধে ব্রাহ্মণেষু বিষ্টারিণং লোকজিং স্বর্গ। স মে মা ক্ষেষ্ট স্বধয়া পিন্বমাননা বিশ্বরূপা ধেনুঃ কামদুঘা মে অস্তু ॥ ৮।
বঙ্গানুবাদ –রথন্তর সাম এই অন্নের (ওদনের) শির, বৃহসাম এর পৃষ্ঠ, বামদেবের দৃষ্টভাগ এর উদর, গায়ত্র ইত্যাদি ছন্দ এবং পঙ্খ (বা পক্ষ) এবং সত্য নামক সাম এর মুখ। এই রকম বিকশিত অবয়বসম্পন্ন সকল যজ্ঞ ব্ৰহ্ম অপেক্ষাও উচ্চ রূপে প্রকট হয়েছে। ১।
যাদের শরীর অস্থির সাথে যুক্ত ষট্-কোশ সম্পন্ন নয়, তারা সকল যজ্ঞের কর্তা বায়ুর দ্বারা পবিত্ৰীকৃত হয়ে উজ্জ্বল লোকে গমন করে; এদের ভোগ-সাধন ইন্দ্রিয় (শিশ্ন)-কে অগ্নি দহন করে না। সেখানে (অর্থাৎ সেই উজ্জ্বল সুকৃতলোকে) পুণ্যের ফলস্বরূপ বহু ভোগের সামগী তারা প্রাপ্ত হয়ে থাকেন। ২৷৷
যে যজমান উপযুক্ত রীতিসম্পন্ন ওদনকে পাক পূর্বক ব্রাহ্মণবর্গকে প্রদান করেন, দরিদ্রতা কখনও তাঁদের স্পর্শ করে না। সেই সকল যজ্ঞানুষ্ঠানকারীগণ মৃত্যুর পরে যমলোকে পূজিত হয়ে সূখ পূর্বক বাস করে থাকেন এবং যমের অনুমতিক্রমে দেবতাগণের সামীপ্য প্রাপ্ত হয়ে গন্ধর্ব ইত্যাদি গণের সাথে সোমপানে প্রসন্ন হয়ে থাকেন। ৩।
যে যজমান উপরিউক্ত অন্ন পাক করে ব্রাহ্মণগণকে প্রদান করেন, যমরাজ সেই সকল যজ্ঞশালীকে কখনও বীর্যহীন করেন না। তারা পৃথিবীর মধ্যে রথে আরোহন পূর্বক ভ্রমণ করে থাকেন এবং অন্তরিক্ষে পক্ষযুক্ত হয়ে উচ্চ লোকসমূহ প্রাপ্তি পূর্বক ভোগসমূহকেও লাভ করে থাকেন। ৪
পূর্বোক্ত রীতি অনুসারে যজমান অন্ন পাক করে তার ফলস্বরূপ স্বর্গে গমন করে থাকেন। যে যজমান এই জগতে অণ্ডাকার কন্দ হতে উৎপন্ন শ্বেত কমলকে সরোবরে স্থিত করেন এবং পদ্মকন্দ, উৎপলক তথা পশুর খুরাকৃতি সম্পন্ন জলজাত পদার্থকেও সরোবরে স্থিত করেন, তিনি এই সুকর্মফলের ভোগস্থান স্বর্গে কুমুদ ইত্যাদি যুক্ত জলপূর্ণ ক্রীড়া-পুষ্করিণী প্রাপ্ত হন। দধি, মধু, ও ঘৃত ইত্যাদির এই ধারাসমূহ মধুর ভাবকে পুষ্ট করে স্বর্গলোকে তোমাকে প্রাপ্ত হোক ॥ ৫॥
হে সর্বজ্ঞ-কর্তা! ঘৃতযুক্ত সরোবর, মধুর দ্বারা পূর্ণ-কুলা পুষ্করিণী, দুগ্ধ-দধি-জলের দ্বারা পূর্ণ ধারাসমূহ, মধুময় পদার্থ সমূহকে পুষ্ট করে স্বর্গলোকে তোমাকে প্রাপ্ত করাক ॥ ৬৷৷
দুগ্ধ ইত্যাদির দ্বারা পূর্ণ চারিটি কলশকে আমি চারিটি। দিকে স্থাপিত করছি। এই দুগ্ধ ইত্যাদির ধারাসমূহ মধুর রসকে পুষ্ট করে তথা জলের দ্বারা পূর্ণ পুষ্করিণী, নদীসমূহ তোমাকে প্রাপ্ত হোক ॥৭৷
এই পাকনিষ্পন্ন ওদন বিস্তার যুক্ত এমন স্বর্গ ইত্যাদি লোক সমূহকে প্রাপ্তিদায়ক। আমি একে (অর্থাৎ এই ওদনকে) ব্রাহ্মণগণের মধ্যে স্থাপিত করছি (অর্থাৎ দান করছি)। এই ওদন যেন ক্ষীণ না হয় এবং অভিলষিত ফল-দানশালিনী ধেনুরূপে পরিণত হয় ॥ ৮
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –ব্রহ্মাস্য শীর্ষং ইতি সূক্ত্যং ব্রহ্মাস্যোদনসবে নিরুপ্তবিরভিমৰ্শনাদি কর্মণি বিনিযুক্তং। তত্রৈবানেন সূক্তেন চতষু দিক্ষু হ্রদকরণং কুল্যাকরণং তাসাং রণৈঃ পূরণং হ্রদেযু আণ্ডীকাদিমন্ত্রোক্তদ্রব্যবিধানং চ কুর্যাৎ। সূত্রিতং হি।….ইত্যাদি। (৪কা, ৭৩, ৪সূ) ৷৷
টীকা— এই সূক্তটি ব্রহ্মাস্য-ওদন যজ্ঞে নিরুপ্ত হবিঃ অভিমৰ্শন ইত্যাদি কর্মে বিনিযুক্ত হয়। এই সূক্তের দ্বারা চতুর্দিকে হ্রদ, পুষ্করিণী প্রভৃতি স্থাপন করে তাদের রসের দ্বারা পূরণ করে ও মন্ত্রোক্ত বিধানে আণ্ডীকাদি ঠি স্থাপন করণীয়।…ইত্যাদি ॥ (৪কা, ৭অ. ৪সূ)।
.
পঞ্চম সূক্ত : মৃত্যুসংতরম
[ঋষি : প্রজাপতি। দেবতা : অতিমৃত্যু। ছন্দ : ত্রিষ্টুপ ]
যমোদনং প্রথমজা ঋতস্য প্রজাপতিস্তপসা ব্ৰহ্মণেইপচৎ। যো লোকানাং বিধৃতির্নাভিরেষাৎ তেনেদনেনাতি তরাণি মৃত্যুম্ ॥১॥ যেনাতর ভূতকৃতোহতি মৃত্যুং যমন্ববিন্দ তপসা শ্রমেণ। যং পপাঁচ ব্ৰহ্মণে ব্ৰহ্ম পূর্বং তেনৌদনেনাতি তরাণি মৃত্যুম্ ॥ ২॥ যো দাধার পৃথিবীং বিশ্বভোজসং যো অন্তরিক্ষমাপৃণাদ রসেন। যো অস্তদ দিবমূধ্বো মহিমা তেনেদনেনাতি তরাণি মৃত্যুম ৩ যম্মাম্মাসানি মিস্ত্রিংশদরাঃ সংবৎসররা যম্মানির্মিতো দ্বাদশারঃ। অহোরাত্রা যৎ পরিষন্তো নাপুস্তেনৌদনেনাতি তরাণি মৃত্যুম্ ॥ ৪৷ যঃ প্রাণদঃ প্রাণদবান্ বভূব যস্মৈ লোকা ঘৃতবন্তঃ ক্ষরন্তি। জ্যোতিষ্মতীঃ প্রদিশো যস্য সর্বাস্তেনৌদনেনাতি তরাণি মৃত্যুম্ ॥ ৫॥ যম্মাৎ পক্কাদমৃতং সম্বভূব যো গায়ত্রা অধিপতিবর্ভূব। যস্মিন্ বেদা নিহিতা বিশ্বরূপাস্তেনৌদনেনাতি তরাণি মৃত্যুম্ ॥ ৬অব বাধে দ্বিষন্তং দেবপীয়ুং সপত্না যে মেইপ তে ভবন্তু। ব্রহ্মেদিনং বিশ্বজিতং পচামি শৃন্বন্তু মে শ্ৰদ্দনস্য দেবাঃ ॥ ৭৷৷
বঙ্গানুবাদ –যে ওদন (অন্ন)-কে হিরণ্যগর্ভ নামক প্রজাপতি আপন কারণরূপে নির্মাণ (পাক) করেছিলেন; নাভি যেমন প্রাণীগণকে ধারণশালী হয়ে থাকে, তেমনই যে ওদন পৃথিবী ইত্যাদিকে ধারণ করতে সমর্থ হয়ে থাকে; সেই ওদন দান করে আমি মৃত্যুকে অতিক্রম করছি। ১।
যে ওদনকে দেবতাগণ তপস্যার দ্বারা লাভ করেছিলেন, যে ওদনের দ্বারা তারা মৃত্যুকে লঙ্ঘন করে গিয়েছিলেন, যে ওদনকে হিরণগর্ভ নিজের নিমিত্ত পাক করেছিলেন, তার (দানের) দ্বারা আমি মৃত্যু ও তার কারণরূপ দেবতাকে (অর্থাৎ মৃত্যুর অভিমানী দেবতাকে) অতিক্রম করছি ॥ ২॥
যে ওদন পৃথিবীকে ধারণ-নিষ্পন্ন করেছে, যা আপন রসের দ্বারা অন্তরিক্ষকে পূর্ণ করে এবং দ্যুলোককে আপন মহিমায় স্তম্ভিত করে থাকে, তার (অর্থাৎ সেই ওদনের দানের) দ্বারা আমি মৃত্যুকে অতিক্রম করছি ॥৩॥
যে ওদনের দ্বারা দ্বাদশ মাস ও রথচক্রের কীলক (গোঁজ বা খুঁটা) রূপ ত্রিশদিন উৎপন্ন হয়েছিল, যে ওদনের দ্বারা সম্বৎসর উৎপন্ন হয়েছিল, সেই ওদনের দানের দ্বারা আমি মৃত্যুকে লঙ্ঘন করছি। ৪
যে ওদনের নিমিত্ত সকল লোক ঘৃতাধারসমূহকে সিঞ্চন করে, যে ওদনের তেজের দ্বারা দিমূহ তেজঃ-সম্পন্ন হয়ে থাকে, যে ওদন মুমূর্যগণের প্রাণদায়ক হয়ে থাকে, সেই ওদনের দানের দ্বারা আমি মৃত্যুকে উল্লঙ্ঘন করছি। ৫।
পাকযুক্ত (বন্ধনকৃত) যে ওদন হতে আকাশে অমৃত উৎপন্ন হয়েছে, গায়ত্রী ছন্দের অধিপতি দেবতা যে ওদনের দ্বারা হয়ে থাকে, এবং ঋক্-যজু-সাম ইত্যাদি বেদ যে ওদনে ব্যাপ্ত আছে, আমি সেই ওদনের দ্বারা মৃত্যু হতে উত্তীর্ণ হচ্ছি ৷ ৬৷৷
আমি বৈরিতা-সম্পন্ন শত্রুগণকে এবং দেবতাবর্গের হিংসকগণের কার্যে বিঘ্ন সাধিত করছি। আমার শত্রু বিনষ্ট হোক,–এই নিমিত্ত আমি ব্ৰহ্মরূপ ওদনকে (অর্থাৎ ব্রাহ্মণবর্গকে প্রদেয় অন্নকে) সংস্কৃত করছি। পূজ্যপাদ দেবগণ আমার স্তুতি শ্রবণ করুন। ৭।
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –যং ওদনং ইতি সূক্তং অতিমৃত্যুসবে নিরুপ্তহবিরভিমৰ্শনাদিষু বিনিযুক্তং। সূত্রিতং হি।…ইত্যাদি। (৪কা, ৭অ, ৫সূ)। টীকা –এই সূক্তটি অতিমৃত্যুসবে নিরুপ্তহবিঃ অভিমৰ্শন ইত্যাদিতে বিনিযুক্ত হয়ে থাকে।… ইত্যাদি। (৪কা.৭অ. ৫সূ)।