সন্ধি অনুসারে এখানেই যুদ্ধ মিটমাট হয়ে যাওয়া উচিত ছিল; কিন্তু সহসা একটা দুষ্ট ত্রয়বাসীর মনে হল যদি কোনো রকমে মেনেলাসকে মেরে ফেলতে পারতাম, তা হলে ভারি নাম হতো। পেরিস আমাকে বহু টাকা-কড়ি, ধনদৌলত দিত। এখন তো সন্ধি হয়েছে, এই সন্ধি-শান্তির মধ্যে শত্রুকে যদি জব্দ করতে পারি তাহলে তো সুবিধা।
এই কল্পনা মনে হতেই, তাঁর মনে পাপ বাসনা উদয় হল। আরও কয়েকজন সঙ্গীকে সে এইকথা বললে। তারা এই কু-কাজ থেকে তাকে নিরস্ত করবে কি, আরও উৎসাহ দিলে।
দীর্ঘ ধনুকটি খাড়া করে সে তাতে একটা তীক্ষ্ণধার তীর বসালে; কিন্তু কয়েকজন ছাড়া কেউ বুঝতে পারলে না, কি অভিসন্ধি তার মনে রয়েছে। যাই হোক, ধীরে ধীরে সে গ্রিক সৈন্যনিবাসের দিকে অগ্রসর হতে লাগলো–তার দুষ্ট কাজের বন্ধুরাও তাঁকে ঘেরাও করে সম্মুখের দিকে চল্লো, কেউ যেন কিছু বুঝতে না পারে।
গ্রিকদের মনে এখন আর কোনো সন্দেহ ছিল না। হঠাৎ একটা তীর এসে মেনেলাসের স্কন্ধ ভেদ করে গেল, শরীর হতে রক্তধারা বের হতে লাগলো। এগামেমনন ক্ষিপ্রগতিতে মেনেলাসকে কোলে তুলে নিলেন। গ্রিকেরা অসর্তক ছিলেন বলেই এই দুর্ঘটনা হয়েছে–এত সহজে বীর মেনেলাসকে আঘাত করে এমন সাধ্য অতি অল্পলোকেরই ছিল।
এগামেমনন মেনেলাসের যত্ন করতে লাগলেন। আর বলতে লাগলেন হতভাগ্য জাহান্নামী ত্রয়বাসী, যে অধর্ম তোমাদের রাজপুত্র করেছে তার তুলনা নেই; তোমরা যে এত বড় হীন তা স্বপ্নেও ভাবি নি। সন্ধির বাহানায় আজ আবার এ কী কাজ করলে? ঠিক জেনো এর প্রতিফল পাবেই। তোমরা এত বড় শঠ, তা জানতাম না। ভেবেছিলাম, রাজপুত্রের কুকর্মের সঙ্গে তোমাদের কোনো যোগ নেই, অনিচ্ছায় যুদ্ধ করতে এসেছে–সে ধারণা আমার ভুল। যাক, আর না-হয় গ্রিকেরা এই সমুদ্রকূলে ধ্বংস হবে, নতুবা ত্রয় নগরকে চূর্ণ করে, পেরিসকে জীবন্ত জ্বালিয়ে তারা হেলেনকে উদ্ধার করবে।
তার পর মেনেলেসকে লক্ষ্য করে বল্লেন–বন্ধু মেনেলাস, জীবনের এই অসময়ে তোমাকে হারাবার জন্যেই কি এখানে এসেছিলাম? তোমাকে ছেড়ে কী করে দেশে ফিরবো, আর তো সহ্য হচ্ছে না; হে মাটি, তুমি দু’ভাগ হয়ে যাও–তোমার গর্ভে প্রবেশ করে এ শোক আমি জুড়াই।
মেনেলাস সান্ত্বনা দিয়ে বললেন–ভাই এগামেমনন, অধীর হইও না, আঘাত তত গুরুতর হয় নি। চিকিৎসককে ডাক, খোদার মরজি শীঘ্রই ভালো হবো, জন্মভূমির গৌরব রক্ষার্থে আবার তোমার পার্শ্বে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করতে সক্ষম হবো। হা হতভাগী হেলেন–এই কথা বলে মেনেলাস অশ্রু বিসর্জন করতে লাগলেন।
চিকিৎসক তাঁর ঔষধ নিয়ে এলেন। নির্মল শীতল পানিতে ক্ষতটা ধুয়ে ঔষধ লাগাতেই মেনেলাস অনেকটা আরাম বোধ করলেন। ক্ষতমুখে রক্ত বন্ধ হয়ে গেল।
এগামেমনন বন্ধু মেনেলাসকে জাহাজে পাঠিয়ে সমবেত সৈন্য শ্ৰেণীকে উচ্চকণ্ঠে বললেন, তোমরা বুঝতে পেরেছ, ন্যায়ধর্মের প্রতি তাদের কোনো মন নেই। তাদের কুমতলবের অন্ত নেই। বৃথা তোক ক্ষয়ে বিশেষ লাভ কি ভেবে আমি সন্ধিপ্রার্থী হয়েছিলাম–ত্রয়বাসীরা তার প্রতিদান কী দিয়েছে, তা তোমরা স্বচক্ষে দেখলে। ত্রয় নগরের একটি প্রাণী যতক্ষণ বেঁচে থাকবে, যতক্ষণ না তাদের পাপের চরম শাস্তি দিয়ে হেলেনকে উদ্ধার করতে পারি, ততক্ষণ আমরা ত্রয় ত্যাগ করবো না। যদি এখানে কোরবানি হয়ে যেতে হয় সেও ভালো তবুও অন্যায়কে জয়যুক্ত দেখে আমরা ফিরে যাবো না। পাপ দমন করাই শ্রেষ্ঠ ধর্ম–কুকুরের ন্যায় হীন হয়ে এ জগতে বেঁচে থাকতে গ্রিসের কোনো মানুষ যেন না চায়।
সৈন্যগণ উত্তেজিত হয়ে উঠলো।
অতঃপর সেখানে দুই মহাবীর ছোট ও বড় আজাক দাঁড়িয়ে ছিলেন, এগমেমনন সেখানে উপস্থিত হলেন। বীরত্ব গৌরবে তেলামনের ছেলে বড় আজাকের স্থান এচিলীসও ওদেসিজ এর নিচেই।
বিদ্যুৎ-প্রবাহ মেঘপুঞ্জের মতো গ্রীক সৈন্য সম্মুখে ছুটতে লাগলো।
এগামেমনন বড় আজাককে বললেন–ভাই, তোমাকে আমার কিছু বলতে হবে না, এদিকের সকল ভার তোমার উপর রইল আমি অন্যদিকে চলোম।
বৃদ্ধ বীর নেস্তরকে যেয়ে বললেন, বার্ধক্য আপনাকে দুর্বল করে দিয়েছে, নইলে গ্রিক যোদ্ধাদের মধ্যে আপনিই শ্রেষ্ঠ। নেস্তর হেসে বললেন–যুবক বয়সের শক্তি আর নেই, তাই বলে ভয় করবেন না; আমি একা যা করতে পারি, সহস্র গ্রিক যুবকও তা করতে পারবে না।
এগামেমনন সন্তুষ্ট হয়ে সম্মুখে অগ্রসর হলেন। ওদেসিজ বসে বসে গল্প করলেন, যুদ্ধের কথা কিছু ঠিক পান না। সন্ধি যে ভেঙ্গে গিয়েছে, তাও তিনি জানেন না। এগামেমনন কঠিন ভাষায় ওদেসিজকে লক্ষ্য করে বললেন–কাপুরুষ! সকলে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে, আর তুমি বসে বসে গল্প করছে।
ওদেসিজ ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন–এগামেমনন, তেলিমেকাসের বাপ ওদেসিজকে কাপুরুষ বলেছো? তুমি আমাকে এত ছোট মনে করো?
এগামেমনন লজ্জিত হয়ে বললেন–কথাটা তাড়াতাড়ি বলে ফেলেছি, মাপ কর।
বৈশাখের ঝড়ের মতো গ্রিক-সৈন্য ত্রয় সৈন্যশ্রেণীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। সমুদ্র তরঙ্গ শত বিভঙ্গে যেমন করে গর্জে ওঠে, গ্রিক সৈন্যরাও তেমন করে গর্জে উঠতে লাগলো। মার মার, কাট কাট করে শত্রু-সৈন্যরা আক্রমণ করলে তলোয়ারে তলোয়ারে, গদায় গদায়, বর্শায় বর্শায় ঝনঝন ঝন শব্দ শুরু হল। ত্রয়ের যুদ্ধক্ষেত্রে রক্তস্রোত বইতে লাগলো। দিন। ভর যুদ্ধ চললো। ত্রয়বাসীরা কিছুতেই পারছে না। এগামেমনন, ওদেসিজ, আজাক, নেস্তর প্রভৃতি যোদ্ধার ভীষণ তলোয়ারের সামনে ত্রয় বীরগণ কেবল হটে যেতে লাগলো।
উপায়হীন হয়ে হেক্তর দ্রুত বেগে পথে ধাবিত হলেন। সারা শহরের নারী ও বুড়োদেরকে উচ্চৈঃস্বরে ডেকে বললেন-হে ত্রয়বাসীগণ, তোমরা একস্থানে জমা হয়ে আল্লা আল্লা করো, নইলে রক্ষা নেই। শত্রুর ভীষণ আক্রমণের সামনে সৈন্যেরা কিছুতেই টিকতে পারছে না। তার পর দ্রুতবেগে হেক্তর একবার তার পত্নী ও শিশু পুত্রকে দেখতে গেলেন। পত্নী শিশুকে কোলে করে উঁচু মাচার উপর দাঁড়িয়ে যুদ্ধ দেখেছিলেন। স্বামীকে আসতে দেখেই তিনি নেমে এলেন। তার পর স্বামীর বাহু ধরে বললেন–প্রিয় স্বামী, তোমার এই শিশুর মুখের দিকে একবার চেয়ে দেখ। যে যুদ্ধ বেধেছে তাতে তুমি কিছুতেই বাঁচবে না, এই যুদ্ধই তোমার মুত্যুর কারণ হবে। প্রিয়তম, তুমি ছাড়া আর আমার কেউ নেই। তোমাকে হারিয়ে আমি কিছুতেই বেঁচে থাকতে পারবো না। আমার যারা আপন ছিল, তারা সকলেই থেবসের যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছেন। এ জগতে শুধু তুমিই আমার আছ, তবে। কি বলে আমাকে অনাথিনী করে যাচ্ছ? আমি যে তোমার বিবাহিতা পত্নী। আমাকে কার। হাতে দিয়ে যাচ্ছ? এই শিশু কাকে বাপ বলে ডাকবে?
হের অশ্রুসিক্ত নয়নে বললেন–প্রিয়তম, তোমার কথা ঠিক। কিন্তু বল দেখি, দশজনকে যুদ্ধক্ষেত্রে ফেলে কেমন করে পালিয়ে থাকি? তোমার স্বামী যে কাপুরুষ নয়। অস্ত্র নিয়ে খেলা করতেই তার আনন্দ।
শিশুকে আদর করবার জন্যে হেত্তর হাত বাড়ালেন–শিশু অস্ত্রসজ্জিত পিতার মূর্তি দেখে ভয় পেয়ে কাছে এলো না। হের একটু হাসলেন!
হের বললেন–প্রিয়তমে, তুমি যে বীর স্ত্রী। তোমার কি এ দুর্বলতা সাজে?
হেকতর-পত্নী আন্দ্রমেকি বললেন–না পতি! দুর্বলতা আমার সাজে না। যাও, যুদ্ধ করতে যাও, তবে এ বেদনা যে সহ্য করতে পারি নে।
হেকতর বললেন–আমাদের এই যুদ্ধ ধর্মের নয়। পেরিস মেনেলাসের পত্নীকে চুরি করে এনেছে, তা তুমি জান। ত্রয়ের প্রত্যেক বীরের পতন হবে, এ নগর ধ্বংস হবে, রাজপ্রাসাদ ধুলোয় মিশবে–এ আমি বলে রাখছি! রাজপরিবারের প্রত্যেকের কঠিন শাস্তি হবে। যে দিন বিজয়ী গ্রিক-সৈন্য ত্রয় নগর ধ্বংস করে পরাজিত শত্রুদের স্ত্রী-কন্যা ধরে নিয়ে যাবে, সে দিনের কথা মনে হচ্ছে। বীর হেকতরের রাজকুল-সেবিকা পত্নীকে একদিন গ্রিকেরা দাসীরূপে বিক্রয় করবে। কোথায় থাকবে তোমার শিশু আর কোথায় থাকবো
আমি। কোনো দূর দেশে কার বাড়িতে তুমি পানি তুলবে, এ দৃশ্য মনে উঠলেও যে আমার কলিজা ফেটে যাচ্ছে।
হেক্তর-পত্নী বললেন–স্বামী, ত্রয়নারীরা কি এতই দুর্বলা? তারা নারীরূপে স্বামী সেবা করে, প্রয়োজন হলে অসি ধরে যুদ্ধ করতেও জানে। তারা যেমন কটাক্ষ হানতে পারে, তীর নিক্ষেপ করতেও তারা তেমনি অভ্যস্তা। আমাদের জন্যে ভেবো না। বীরপত্নী জানে, সম্মান রক্ষার জন্যে কী করতে হয়। অসম্মান অপেক্ষা মৃত্যুই সে ভালবাসে।
শিশু ও পত্নীর মুখে চুম্বন দিয়ে হেক্তর বললেন–তবে বিদায় দাও।
পত্নী হেরের স্কন্ধে মাথা রেখে অতিকষ্টে বললেন–যাও স্বামী যাও। খোদার হাতে তোমাকে সমর্পণ করলাম।
হেক্তর ঘোড়া ছুটিয়ে পেরিসের ঘরের দিকে এলেন। ফটকের কাছে দাঁড়িয়ে উচ্চকণ্ঠে বললেন–পেরিস, পেরিস, এ কি হেলেনকে নিয়ে আলাপ করবার সময়? সারা দেশের পুরুষ যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ দিচ্ছে, আর তুমি এখানে রমণীর সঙ্গে প্রেম করছ! হায়, কেন তোমার ন্যায় নরাধমকে খোদা আমাদের ভাই করে পাঠিয়েছিলেন? ভিতর বাড়ি হতে বের হও।
পেরিস লজ্জিত হয়ে বাড়ির বের হয়ে এলো। তার হাতের তলোয়ার সূর্যরশ্মিপাতে ঝিকমিক করছিলো।
নগরের লোকগুলিকে আবার উপাসনা করতে বলে তাঁরা যুদ্ধক্ষেত্রের দিকে ছুটলেন।
তখন বেলা প্রায় শেষ হয়ে এসেছিল। সৈন্যরা সারাদিন যুদ্ধ করে হয়রান হয়ে পড়েছে। শত্রু সৈন্যের সম্মুখীন হয়ে হেক্তর বললেন–হে গ্রিক সেনানী। দুর্বল সৈন্যদলকে বিশ্রাম করতে দাও। আজকার মতো যথেষ্ট রক্তপাত হয়েছে। এখন তোমাদের কোনো বীরকে আমার সঙ্গে যুদ্ধ করতে দাও। এখন হাতিতে হাতিতে লড়াই হোক পিঁপড়ে দলের কামড়া-কামড়ি দেখে আর কাজ নেই! কে আছ, এগোও দেখি। হেকতর
আজ একা যুদ্ধ করে গ্রিসের যুদ্ধসাধ মিটাবে।
বৃদ্ধ নেস্তর গর্জে উঠে বললেন, কী, এত বড় কথা! এখনও গ্রিসের কোনো বীর দুর্বৃত্তকে শিক্ষা দেবার জন্যে প্রস্তুত হচ্ছে না? কী বলবো! যদি যৌবনের তরল রক্ত আজ আমার বাহুতে থাকতো, তা হলে এতক্ষণে হেতরের মাথা দেহের সঙ্গে থাকতো না! নেস্তরের দাপটে একদিন পাহাড় কেঁপেছে। আজ আমি অকর্মণ্য বলে কি সকলেই অকর্মণ্য?
সঙ্গে সঙ্গে নয়জন বীর লাফিয়ে উঠে বললেন–আমি হেরের সঙ্গে যুদ্ধ করবো!
বাহুতে কে কত বল ধরে তা দেখাবো। এচিলীস যুদ্ধক্ষেত্রে নেই বলে কি এখানে আর কোনো বীর নেই।
নয় জনের সঙ্গে একা হেকতরের তো যুদ্ধ হবে না।
নয় জনই শূন্যে তলোয়ার ছুঁড়ে বললেন–যার তলোয়ার সকলের উপরে উঠবে, সেই যুদ্ধে যাবে। বীরবর বড় আজাকের বৃহৎ তলোয়ার ভো ভো করে বাতাসের সঙ্গে মিশে গেল। হের ঊর্ধ্বে সেই ভীষণ তলোয়ারের ঘূর্ণমান চক্র দেখে একবার কেঁপে উঠলেন। বীর আজাকই জয়ী হলেন। গ্রিক সৈন্যেরা জয়ধ্বনি করে উঠলো।
এগামেমনন বললেন–বীরশ্রেষ্ঠ আজাক, হেৰ্তরের দর্প চূর্ণ করবার জন্যে তুমিই উপযুক্ত।
অদূরে হেকতর ক্রুদ্ধ ব্যাঘের মতো দাঁড়িয়েছিলেন। আজাক একবার তার দিকে চেয়ে দেখলেন উত্তেজনায় হৃৎপিণ্ড তাঁর ঘন ঘন কাঁপছিল।
তার পর সেই ভীষণ চেহারা আজাক ঘোড়ায় চড়লেন। মুহূর্তের জন্য কেন যে হেকতরের প্রাণ কেঁপে উঠলো। উভয় দলের সৈন্যগণ এই দুই মহাবীরের জীবন-মরণ লড়াইয়ের দিকে চেয়ে রইল।
হেকতরের উন্নত বিশাল বক্ষ, তার দীর্ঘ কঠিন বাহু, শক্তিশালী অশ্ব সেই রণভূমির বালুকণার প্রাণে পর্যন্ত ভয়ের সঞ্চার করছিল। মহাবীর আজাক এহেন বীরকে তুণের সমান জ্ঞান করলেন। যখন তিনি পাহাড়ের মতো উঁচু মাথায় হেকতরের সম্মুখীন হলেন তখন গ্রিক সৈন্যদের প্রাণ জয়োল্লাসে নৃত্য করতে লাগলো। কারণ ত্রয়বাসীদের সর্বশ্রেষ্ঠ বীর হেকতর যদি হেরে যায়, তা হলে দুদিনেই ত্রয় নগর ধ্বংস করে হেলেনকে উদ্ধার করা যাবে।
হেকতর আজাকের পানে তার বর্শা নিক্ষেপ করলেন। পাহাড়ের গায়ে মাটির দলার যেমন দূরবস্থা হয়, হেরের বর্শাও তেমনি অবস্থা হল। সে কী ভীষণ আঘাত! বুকের উপরকার লোহার চাঁদর ভেদ করে হাড়ে যেয়ে লাগতো, যদি না হেক্তর মুহূর্তের মধ্যে উপুড় হয়ে বর্শা বেগকে একটু কমিয়ে দিতেন।
দুই হিংস্র ব্যাঘের মধ্যে যেমন করে লড়াই হয়, হেক্টর ও আজাকের তেমনি লড়াই। চলতে লাগলো। একখানি প্রকাণ্ড পাথর তুলে হেক্তর আজাকের উপর ছুঁড়ে ফেল্লেন, কিন্তু আজাকের তাতে কিছুই হল না। আজাকও প্রতিশোধ নেবার জন্য ততোধিক বড় একখানা পাথর নিয়ে হেকতরের মাথা সোজা নিক্ষেপ করলেন, কপালগুণে পাথরখানি হেকৰ্তরের হাঁটুতে যেয়ে লেগেছিল, নইলে তখনই তাকে যমের বাড়ি যেতে হতো।
সন্ধ্যা হয়ে এসেছিল। উভয় বীর তলোয়ার নিয়ে যুঝতে যাচ্ছিলেন এমন সময় উভয় পক্ষের সৈন্যগণ চিৎকার করে বল্লে–সাবাস! সাবাস! কিন্তু আর নয়! আজকের মতো এই পর্যন্ত থাক। আঁধার হয়ে এসেছে। আজাক বল্লেন–হের প্রথমে আমাকে যুদ্ধে আহ্বান করেছে, যুদ্ধ স্থগিত রাখবার জন্যে প্রথমে তারই প্রস্তাব করা উচিত।
হেক্তর বল্লেন–আজাক, আপনার বীরত্বে আমি সন্তুষ্ট হয়েছি, আসুন, আজ আমরা যুদ্ধে ক্ষান্ত দি। জাতির জন্যে যুদ্ধ করতে এসেছি সুতরাং আপনাতে আমাতে কোনোই শত্রুতা নেই। বন্ধুরূপেই আজকের মতো আমরা বিদায় নিই। তার পর আর এক শুভদিনে আমাদের পরস্পরের বল পরীক্ষা হবে।
আজাক বল্লেন–বেশ।
অতঃপর উভয়ে উভয়ের নিকট থেকে বিদায় নিলেন! আজাক হেরকে একটা সোনার কোমরবন্ধ উপহার দিলেন, হেরও আজাককে একখানা তলোয়ার দিলেন।
সে রাত্রিতে সমস্ত গ্রিক সৈন্য আজাককে নিয়ে আমোদ উৎসবে কাটিয়ে দিল।