৪. মধ্য সাম্রাজ্য
থিবিস
এক শতাব্দীর অস্পষ্টতা, “অন্ধকার যুগ” আর গৃহযুদ্ধ, অস্থিরতা আর সিংহাসনের ভুয়া দাবিদারদের মাঝে বিবাদ। এই যুগে মহান পিরামিড নির্মাতা মহান স্রাটদের সকল কৃতিত্ত্ব ম্লান হয়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে এ সময়কার বিশেষ কোনো খণ্ডচিত্র পাওয়া যায়নি। সে সময়কার ছোটখাটো শাসকদের নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষাতেই ব্যস্ত থাকতে হয়, মহান সমাধি বা বিস্তারিত শিলালিপি কোনোটাই তাদের করা সম্ভব হয়নি।
এই অন্তর্বর্তী সময়ে মানেথো চারটি রাজবংশের উল্লেখ করেন তবে পৃথকভাবে কোনো রাজার নাম উল্লেখ করতে পারেননি, আর তারা তেমন প্রতিষ্ঠা অর্জন করতেও পারেননি। কাজেই এ যুগটা ধোয়াশে রয়ে যায়। সম্ভবত তারা ছিল স্থানীয় গোষ্ঠীপতি, যারা নিজেদের রাজা বলে দাবি করত, তবে নিজেদের শাসনকেন্দ্রের বাইরে তাদের সামান্যই ক্ষমতা ছিল।
সপ্তম ও অষ্টম রাজবংশ মেম্ফিস থেকে তাদের শাসনকার্য পরিচালনা করত আর তারা সেই শহরকেই প্রাচীন সাম্রাজ্যের রাজধানীর মর্যাদা দাবি করত। নবম ও দশম রাজবংশের কেন্দ্র ছিল হেরাকিমওপলিস। এটা মোয়েরিস হ্রদের তীরে অবস্থিত একটা প্রাচীন শহরের বর্তমান গ্রিক নাম।
সন্দেহ নাই সে সময় মিশর যদি অন্য কোনো দেশ হতো (এমনকি যদি সেটা পরবর্তী কোনো শতাব্দীতেও হতে) এই বিভেদ বিভাজন অনিবার্যভাবেই পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের মধ্যে অপ্রতিরোধ্য প্রলোভনের সৃষ্টি করত। দেশটি আক্রান্ত হতো, অধিকৃত হতো, কে জানে কত দিনের জন্য। এটাকে মিশরের সৌভাগ্য বলা যায় যে সে সময় পার্শ্ববর্তী কোনো দেশই এর সুযোগ নেওয়ার অবস্থায় ছিল না। অবশেষে মুক্তি মিলল সুদূর দক্ষিণের এক শহর- মেম্ফিস থেকে ৩৩০ মাইল দক্ষিণে আর প্রথম জলপ্রপাত থেকে মাত্র ১২৫ মাইল উত্তরে। এই শহরের প্রধান দেবতার নাম ছিল আমন অথবা আমেন, উর্বরতার দেবতা, পূর্ববর্তী রাজত্বের আমলে যার কোনো অস্তিত্ব ছিলনা, তবে সাম্রাজ্যের দুর্বলতার সময়ে যখন নগরটির গুরুত্ব ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছিল, সেই সাথে এই দেবতার গুরুত্বও বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এই শহরটি পরিচিতি পেয়েছিল নুয়ে নামে (অর্থাৎ আমেনের শহর) বাইবেলে নাহ্ নামে যার উল্লেখ আছে।
অনেক শতাব্দী পরে যখন গ্রিকদের আগমন ঘটল, ততদিনে নগরটির পরিসর অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে আর সেখানে অনেক বিশালাকৃতি মন্দির নির্মিত হয়েছে। কাজেই গ্রিকরা এর নাম দেয় “ডায়োসপলিস ম্যাগনা” বা দেবতার বিশাল শহর। এরই একটা উপশহরের নাম তারা রেখেছিল থিবিস, তাদের নিজেদের শহরের নামানুসারে। ইতিহাসে এই থিবিস নামটাই বেশি পরিচিত, যদিও নামটা বেশ গোলমেলে, কারণ গ্রিক নামের এই শহরের সাথে একে গুলিয়ে ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে।
পঞ্চম ও ষষ্ঠ রাজবংশের আমলে থিবিসের অনেক উন্নতি ঘটেছিল সন্দেহ নাই, কারণ এই সময়ে প্রথম প্রপাতের পাশ দিয়ে একটা বাণিজ্যপথ নির্মিত হয়েছিল। লোয়ার ঈজিপ্টে মেসি, হেলিওপলিস, হেরাক্লিওপলিসের রক্তক্ষয়ী ক্ষমতার দ্বন্দ্বে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল এই শহরটি তা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছিল। এই অন্ধকার শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে খ্রিস্টপূর্ব ২১৩২ পর্যন্ত থিবিসে পরপর বেশ কিছু সক্ষম গভর্নর ক্ষমতায় এসেছিল যারা ক্রমান্বয়ে আপার ঈজিপ্টে তাদের অধিকার সম্প্রসারণ করতে সমর্থ হয়েছিল। মানেথো তাদের একাদশ রাজবংশরূপে তালিকাভুক্ত করেছিলেন। তারা আট বছর ধরে হেরাক্লিওপলীয়দের সাথে যুদ্ধ চালিয়েছিল। অবশেষে ২০৫২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে দ্বিতীয় মেহোটেপ এই বিজয় অভিযান পূর্ণ করেছিলেন।
পেপির রাজত্বের ১৩০ বছর পর আবারও একবার মিশর একক সম্রাটের অধিকারে এসেছিল। বলা যায় মধ্য রাজবংশের সূচনা হলো। ধর্মের উপরও এই যুগের প্রতিফলন ঘটেছিল, থিবীয় দেবতা আমেন অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল, (কারণ তার অধিষ্ঠান ছিল শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রাজবংশের নিজ শহরে) যে দেবতা রী’র পুরোহিতরা নূতন দেবতাকে পূর্বতন দেবতার প্রতিরূপ বলে স্বীকৃতি, দিতে বাধ্য হয়েছিল, আর আমেনকেই সর্বোচ্চ দেবতা বলে মেনে নিয়েছিল।
এই সময়ে থিবিস প্রসারিত ও শক্তিধর হয়ে উঠছিল, সমাধি ও স্মৃতিসৌধ তাকে আরও ঋদ্ধ করে তুলছিল। এমনকি রাজবংশের পতনের পরও এটা টিকে ছিল। মধ্য সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তনের প্রায় অর্ধ শতাব্দী পরে, একাদশ রাজবংশ এক কঠিন সময়ের মধ্যে পড়ে গেল। মেহোটেপ বংশের শেষ রাজার (চতুর্থ বা পঞ্চম বংশধর) জুটেছিল একজন অতি সক্ষম উজির যার নাম ছিল আমেনেমহাট, যিনি নিজেও ছিলেন থিবিস বংশের, কারণ দেবতা আমেনের সাথে তার নামের আংশিক মিল ছিল।
বিস্তারিত বিবরণ আমাদের অজানা, তবে আমেনেমহাট ১৯৯১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে অবশ্যই বিদ্রোহ করে নিজেকে প্রথম আমেনেমহাট নামে দ্বাদশ রাজবংশের প্রথম সম্রাটরূপে সিংহাসন দখল করে বসেন। তিনি থিবিস থেকে অপসারণ করে মেম্ফিসের ২৫ মাইল দক্ষিণে লিশ নগরে রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেন। কারণ বহু দূরবর্তী থিবিস থেকে বিক্ষুব্ধ সাম্রাজ্যের উপর নিয়ন্ত্রণ রক্ষা করা কঠিন ছিল। তবে থিবিসও তার অগ্রগতির বেগ ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। কারণ পরবর্তী শতাব্দীতে এটা আবার রাজধানী হয়েছিল আর পরবর্তী পনেরোশো বছর ধরে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নগরীর মর্যাদা লাভ করেছিল।
.
নুবিয়া
পুনরেকত্রিত মিশর আবারও একবার কর্মচাঞ্চল্যে ভরে ওঠে। আবার চালু হলো পিরামিড নির্মাণ, এবং প্রথম আমেনেমহাট এবং তার পুত্রকেও লিশ শহরের কাছে নির্মিত পিরামিডে সমাহিত করা হয়। প্রথম আমেনেমহাট সিনাইতে তার ক্ষমতা পাকাঁপোক্ত করেন, দক্ষিণের সাথে তার বাণিজ্য বজায় রাখেন এবং অমাত্যদের পদানত রাখতে সমর্থ হন। এটা অন্ধকার শতাব্দীর সব কলুষ দূরীভূত হওয়ার মতো, কোনো কিছুই চিরতরে দূর করা যায়না। মধ্য রাজবংশের কোনো রাজাই প্রাচীন রাজবংশের রাজাদের মতো একচ্ছত্র আধিপত্য লাভ করতে পারেনি। মধ্য সাম্রাজ্যের পারিষদদের কখনোই সম্পূর্ণরূপে পোষ মানানো যায়নি।
তবু বলা যায় চতুর্থ রাজবংশের মতো দ্বাদশ রাজবংশকেও সুবর্ণযুগ বলা যায়, আর পিরামিডগুলি বিশালাকৃতি না হলেও অনেক শৈল্পিক কারুকার্যময় ছিল। মধ্য রাজবংশের কিছু কিছু অলংকার, যেগুলি লুটেরাদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল আর আধুনিকরা আবিষ্কার করতে পেরেছিল তার বিস্ময়কর সুক্ষ্ম কারুকাজ। ক্ষুদ্র শিল্পকর্ম, কাঠের উপর খোদিত ত্রিমাত্রিক চিত্রকর্ম রাজার জীবনপদ্ধতি প্রতিফলিত করে কবরে রাখা হতো। ১৯২০ সালে থিবিসের এক সমাধিগৃহে এমনি এক গুপ্ত ভাণ্ডারের পুরোটাই অবিকৃত অবস্থায় আবিষ্কৃত হয়। সমাধিগৃহের বিশাল জাঁকজমকের চাইতে এসব সুক্ষ্ম কারুকাজ অনেক বেশি আকর্ষণীয় ছিল। ( মধ্য রাজবংশের সাহিত্যকর্মও যথেষ্ট উৎকর্ষ লাভ করেছিল। প্রকৃতপক্ষে মিশরের দ্বাদশ রাজবংশকে মিশরীয় সাহিত্যের ধ্রুপদী যুগরূপে আখ্যায়িত করা হয়। অবশ্য আজ পর্যন্ত যা টিকে আছে তা সামগ্রিক সৃষ্টিকর্মের ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ মাত্র। কে জানে যা টিকে আছে তা যা টিকে নাই তার কত ক্ষুদ্রাংশ!
প্রথমবারের মতো জাগতিক সাহিত্য (যা পুরাণ বা ধর্মীয় সাহিত্য থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন) রচিত হয়েছিল। বলা যায় প্রথমবারের মতো পাঠযোগ্য সাহিত্য উপকরণ আমাদের হস্তগত হয়েছিল।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায় উদ্দীপনাময় কল্পনাশ্রয়ী দুঃসাহসিক অভিযানের কাহিনী, যেমন জাহাজডুবি এক নাবিকের কথা যে দৈত্যাকার এক সরীসৃপের দেখা পেয়েছিল। আর এক গল্পে আছে “দুই ভাইয়ের” কাহিনী যা অনেকটা আরব্য উপন্যাসের কাহিনীর মতো, যা প্রায় অবিকৃতভাবে আমাদের হাতে এসেছে, যোসেফের বাইবেলের অনেক কাহিনী হয়তো এসব গল্পের থেকে অনুপ্রেরণা লাভ করেছিল। তাছাড়া রয়েছে “সিমুহের কাহিনী” যাতে রয়েছে এক মিশরীয়র কথা যে সিরিয়ায় যাযাবরদের সাথে নির্বাসিত জীবনযাপন করেছিল। এতে সিরিয় যাযাবরদের অদ্ভুত জীবনপ্রণালীর কাহিনী রয়েছে যার সাথে মিশরীয়দের কোনো মিল নাই।
বিজ্ঞানের উন্নতিও লক্ষণীয়, অন্তত “ঢ়াইন্ড পেপার” নামে এক দলিলের পাঠোদ্ধার করে তাতে দেখা গিয়েছিল, যা লেখা হয়েছিল দ্বাদশ রাজবংশের আমলে যাতে বর্ণনা রয়েছে কিভাবে ভগ্নাংশ ও ত্রিমাত্রিক বস্তুর পরিমাপ করা যায়। মিশরীয় গণিত অত্যন্ত বাস্তববাচিত যাতে বিশেষ বিশেষ সমস্যা সমাধানের নিয়ম দেওয়া আছে (ঠিক যেমন রান্নার রেসিপি)। তেরো শতাব্দী পরে গ্রিকরা এরই সাধারণীকরণ করেছিল। অবশ্য দুঃখের কথা আমাদের জ্ঞান “ঢ়াইন্ড পেপিরাসের” মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আমরা বলতে পারিনা আরও কত গুরুত্বপূর্ণ দলিল নষ্ট হয়ে গেছে।
তাছাড়াও রয়েছে জ্ঞানঋদ্ধ বাণী আর তত্ত্বকথা, যার উদ্দেশ্য ছিল জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করা। যে উদাহরণটার সাথে আমরা সবচেয়ে বেশি পরিচিত তা হলো বাইবেলের প্রবচন অধ্যায়। এর মিশরীয় সমতুল্য আছে যা প্রায় হাজার বছরের পূরনো। এর একটাকে যুক্ত করা হয়েছে প্রথম আমেনেমহাটের সাথে। মনে করা হয় এটা তার পুত্রকে দেওয়া উপদেশাবলী, উদ্দেশ্য কি করে ভালো রাজা হওয়া যায় এই শিক্ষা দেওয়া। এতে কিছু তিক্ত বক্তব্য আছে যাতে বোঝা যায় কিছু দরবারী লোকজন তার প্রাণনাশের চেষ্টা করেছিল।
এমন হতে পারে আমেনেমহাটকে হত্যা করা হয়েছিল, তবে সেটা যদি হয়েও থাকে, তাতে রাজবংশে কোনো পরিবর্তন সূচিত হয় নাই। কারণ তার উত্তরসূরি হিসাবে সিংহাসনে বসেছিল প্রথম সেনুসরেট, যার জন্য পিতা রেখে গিয়েছিলেন জ্ঞানসমৃদ্ধ প্রবাদ প্রবচন। যিনি রাজত্ব করেছিলেন ১৯৭১ থেকে ১৯২৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত, গ্রিকদের কাছে যিনি পরিচিত ছিলেন সেসোস্ট্রেস নামে।
প্রথম সেসোস্ট্রেস মধ্য রাজবংশের শক্তিকে সাম্রাজ্যের সীমা বৃদ্ধির কাজে প্রয়োগ করেন আর তিনিই প্রথম মিশরীয় সম্রাট যিনি দেশজয়ে মনোনিবেশ করেন। সম্প্রসারণের একটা যুক্তিগ্রাহ্য এলাকা ছিল দক্ষিণে নীলনদ সমৃদ্ধ এলাকা, প্রথম প্রপাত থেকে উজানের দিকে। এই এলাকায় সাত শতাব্দী আগে চোফেরুর আমল থেকে মিশরীয় স্রাটরা বাণিজ্য চালিয়ে আসছিল, তবে মাঝে মাঝে বিঘ্ন ঘটত উগ্র যোদ্ধা সম্প্রদায়ের আক্রমণের ফলে। এই বাণিজ্য পথ সুরক্ষার জন্য চোফেরুকে প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করতে হতো যেমনটা করতে হতো ষষ্ঠ রাজবংশের প্রথম পেপিকে।
স্নেফেরুর ধারণা ছিল একটা সামগ্রিক বিজয় নিশ্চিত করা গেলে এবং সমগ্র মিশরকে একক আধিপত্যে আনা গেলে ব্যবসা বাণিজ্য সহজতর হবে এবং মিশরের সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা যাবে। সেসোস্ট্রেসের পদক্ষেপের ফলে মিশরের দক্ষিণের দেশগুলিতেও সমৃদ্ধির ছোঁয়া লেগেছিল। মিশরীয় এবং বাইবেলীয় লেখকদের লেখায় দক্ষিণের এই অঞ্চলটি পরিচিত ছিল কুশ নামে। গ্রিকদের কাছে অঞ্চলটি পরিচিত ছিল ইথিওপিয়া নামে, যার অর্থ “পোড়া মুখ” যা হয়তো নিগ্রোদের কালো মুখের দিকে ইঙ্গিত করে (অথবা হয়তো এটা ঈজিপ্ট নামের বিকৃত রূপও হতে পারে)।
তবে মিশরের আধুনিক ইতিহাসবিদদের দ্বারা ব্যবহৃত ইথিওপিয়া নামটি বেশ বিভ্রান্তিকর, কারণ বর্তমান সময়ে যে অঞ্চলটাকে ইথিওপিয়া নামে অভিহিত করা হয় প্রাচীন গ্রিকদের পরিচিত ইথিওপিয়া অঞ্চলের অনেকটা দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত (সুদান একটি আরবী শব্দ যার অর্থ কালো, কাজেই ইথিওপিয়া ও সুদান শব্দ দুটির মর্মার্থ একই)। অবশ্য আধুনিক সুদান আমাদের আলোচিত অঞ্চলের চাইতে অনেক বিস্তৃততর এলাকা নিয়ে গঠিত।
তবে এই এলাকার সর্বোকৃষ্ট নাম, যেটি আমিও ব্যবহার করতে চাই তা হলো নুবিয়া। এর দ্বারা আমাদের আলোচ্য অঞ্চলটিকে সরাসরি উল্লেখ করা যায়। এর ফলে আর কারও পক্ষেই বিভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকেনা। এটি একটি আঞ্চলিক উপজাতীয় শব্দ, যার অর্থ “দাস,” হয়তো বহিরাগত আক্রমণকারীদের দ্বারা স্থানীয় অধিবাসীদের দুর্ভাগ্যের কথাই মনে করিয়ে দেয়।
সেসোস্ট্রেসকে যদি বিজয়ীর জীবন শুরু করতে হয় তাহলে অবশ্যই তার একটা সৈন্যবাহিনী থাকতে হবে, তবে তার এমন কোনো বড়সড় সৈন্যবাহিনী ছিলনা। মিশরকে সৌভাগ্যবান মনে করা যায় যে তার সুরক্ষার জন্য সৈন্যবাহিনীর তেমন প্রয়োজন ছিলনা, একটা রাজকীয় দেহরক্ষীবাহিনী দিয়েই চলত, যেটা স্থানীয় পুলিশ বাহিনীর চাইতে বড় ছিলনা। সিনাই অধিকৃত অসংগঠিত আদিবাসীদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এটাই যথেষ্ট ছিল। এমনকি মধ্য রাজবংশের আমলেও, যখন শতাব্দীব্যাপী অন্তর্কলহ এবং অরাজকতা ঠেকানোর জন্য সৈন্যসংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছিল এবং উন্নত প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল, সেটাও পূর্বের এশীয় শক্তির তুলনায় নেহাৎ অকিঞ্চিৎকর ছিল। নুবিয়া তখন ছিল আদিম জাতি অধ্যুষিত এলাকা যারা মিশরের দুর্বল সামরিক শক্তিরও মোকাবিলা করতে পারত না।
কাজেই প্রথম সেসোস্ট্রেস তার সেনাদল নিয়ে প্রথম প্রপাত পর্যন্ত এগিয়ে গিয়ে নীলনদী বরাবর সারি সারি দুর্গ বানিয়েছিলেন আর প্রথম প্রপাত থেকে ২০০ মাইল দক্ষিণে দ্বিতীয় প্রপাত পর্যন্ত সমস্ত বাহিনীকে তার অধিভুক্ত করতে পেরেছিলেন। ঐ বংশের অন্য রাজারা আরও দক্ষিণে অগ্রসর হতে পেরেছিল, আর তৃতীয় প্রপাতে সমুদ্রবন্দর প্রতিষ্ঠা করেছিল, যা ছিল আরও দু’শ মাইল উজানে।
নিঃসন্দেহে মিশরীয়রা অহংকার করতে পারে যে তারা অসংগঠিত প্রতিবেশীদের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিল (জাতীয় পর্যায়ে যে কেউ দুর্বল প্রতিবেশীর উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার কৃতিত্বের দাবি করতেই পারে)। পনেরো শতাব্দী পরে যখন হেরোডোটাস মিশর ভ্রমণে গিয়েছিলেন, তখন মিশরীয়দের দেখেছিলেন নিজেদের দুর্বলতায় তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করতে, আর পুরোহিতরা তাদের পৌরাণিক অতীতে আশ্রয় খুঁজছিল। তারা অতীত রাজাদের বিজয়কাহিনী নিয়ে অতিশয়োক্তি করত আর ভান করত তারা তৎকালীন পরিচিত পৃথিবীর সবটাই জয় করতে পেরেছিল। আর তারা সেই বিজয়ী পৌরাণিক রাজার কী নাম দিয়েছিল, কেন? সেসোস্ট্রেস!
.
গোলক ধাঁধা
প্রথম সেসোস্ট্রেসের পুত্র ও উত্তরাধিকারী দ্বিতীয় আমেনেমহাটের রাজত্বকালে পুন্ট নামে এক রাজ্যের সাথে বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছিল। পুন্ট সম্বন্ধে আমরা শুধু এটুকুই জানি যে ভূমধ্যসাগরের মধ্য দিয়ে সেখানে পৌঁছা যেত, হয়তো সাগরের দক্ষিণ উপকূলে অবস্থিত ছিল। এটা বর্তমানে আরব উপদ্বীপের ইয়েমেন অথবা বিপরীত দিকে আফ্রিকার উত্তর উপকূলের সোমালীল্যান্ড। সে যাই হোক, সেখানকার প্রাপ্ত সোনা সংগ্রহ করে সিরীয় উপকূলের ক্যানানাইট শহরসমূহে বাণিজ্য চালানো হতো। কিছুটা বণিকদের মাধ্যমে আর কিছুটা সামরিক শক্তির মাধ্যমে প্রথমবারের মতো মিশরীয় শক্তি সিরিয়া পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছিল।
শান্তির কলাকৌশলকেও অবহেলা করা হয় নাই, দ্বাদশ রাজবংশের আমলে লেক মেয়েরিস উন্নত করার উদ্যোগ নেয়া হয়। ২৫ শতাব্দী আগে থেকেই এটা সংকুচিত হতে থাকে, যে সময়ে উপকূলভাগে নব্য প্রস্তর যুগের গ্রাম-বসতি গড়ে ওঠা শুরু করে, আর এর সাথে নীলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
মেয়েরিস থেকে খাল কেটে নীলের প্রবাহ ঠিক রাখাও মধ্য রাজবংশের ফারাওদের একটা চিন্তার বিষয় ছিল। বন্যার সময় যেমন খাল আটকে দিয়ে তেমনি শুষ্ক মৌসুমে খালের মুখ খুলে দিয়ে প্রবাহ স্বাভাবিক রাখা যেত।
মিশরীয় শ্রমিকদের কথা বিবেচনায় নিলে এটা মোটেই আশ্চর্যের বিষয় নয় যে প্রায় চৌদ্দ শতাব্দী পরে হেরোডোটাস লেকটি দেখে ভেবেছিলেন এটা কৃত্রিমভাবে নির্মিত।
তৃতীয় আমেনেমহাটের রাজত্বকালেই দ্বাদশ রাজবংশ ক্ষমতা ও ঐশ্বর্যের শীর্ষে আরোহণ করেছিল, যিনি ১৮৪৯ থেকে ১৭৯৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত প্রায় অর্ধ শতাব্দীকাল রাজত্ব করেছিলেন। তার রাজত্বকালে মিশর সাম্রাজ্য তৃতীয় প্রপাত থেকে সিরিয়া সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল, যার দূরত্ব প্রায় নয়শত মাইল আর জনসংখ্যা পনেরো লক্ষ অতিক্রম করে গিয়েছিল। তবে মধ্য সাম্রাজ্যের কারও ক্ষমতাই পিরামিড নির্মাতা প্রাচীন সম্রাটদের ঐশ্বর্যকে অতিক্রম করে যেতে পারেনি।
সম্ভবত তৃতীয় আমেনেমহাট বা নিকটতম কোনো পূর্বজের আমলেই পৌরাণিক গোষ্ঠীপতি আব্রাহাম প্যালেস্টাইনে বাস করতেন। যদি বাইবেলের কাহিনীকে গ্রহণযোগ্য বলে মেনে নেয়া হয়, তাহলে মনে হবে যে আব্রাহাম কেনান থেকে মিশর পর্যন্ত গোটা এলাকায় স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতেন, আর এতে করে এটাই নির্দেশ করে যে উভয় অঞ্চল একই রাজতৃভুক্ত ছিল।
তৃতীয় আমেনেমহাট ২৪৯ ফিট উচ্চতার দুটি পিরামিড নির্মাণ করে স্থাপত্যশৈলীকে বিশিষ্টতা প্রদান করতে পেরেছিলেন। সেই সাথে নির্মাণ করিয়েছিলেন নিজের এক বিশালাকৃতি মূর্তি আর মেয়েরিস হ্রদের তীর বরাবর একক প্রাচীরবেষ্টিত একপ্রস্থ জটিল ইমারত যা ছিল তার প্রাসাদ। এর অংশবিশেষ সমাধির জন্য নির্দিষ্ট ছিল। শুধু ভারত্ব আর ক্ষমতা দিয়ে পিরামিডের মমিগুলির সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব ছিলনা, কাজেই আমেনেমহাট কিছু কৌশল অবলম্বন করেছিলেন ভারত্ব দিয়ে নয়, চতুরতা দিয়ে কবর লুটেরাদের বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিলেন।
হেরোডোটাস প্রাসাদ জটিলতা দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন, যা পিরামিডের বিস্ময়কেও হার মানায়। তিনি এর সাড়ে তিন হাজার কক্ষের বর্ণনা দিয়েছেন, যার অর্ধেকটা মাটির উপর আর অর্ধেকটা মাটির নিচে (তাকে অবশ্য মাটির নিচের কক্ষগুলিতে প্রবেশ করতে দেয়া হয় নাই, কারন এগুলি ছিল সমাধিকক্ষ)। তিনি এর জটিল আঁকাবাঁকা প্রবেশ পথেরও বর্ণনা দিয়েছেন।
মিশরীয়রা এই স্থাপনাটির নাম দিয়েছে, হ্রদে “প্রবেশ পথের মন্দির”। গ্রিকরা তাদের ভাষায় এর নাম দিয়েছিল “ল্যাবিরিন্থোস”, যার ইংরেজি রূপান্তর “ল্যাবিরিন্থ” (গোলকধাঁধা)। আজকাল এই শব্দটি ব্যবহার করা হয় যে কোনো আঁকাবাঁকা পথ বোঝাতে।
মিশরীয় গোলকধাঁধার আকৃতি, এর সুচতুর নির্মাণ-কুশলতা, শ্বেতপাথর, ঋদ্ধ অলংকরণ অবাক করার মতো, তবে দুঃখের কথা আমাদের যুগের প্রশংসা অর্জনের জন্য তা বর্তমান কাল অবধি টিকে থাকেনি। তৎসত্ত্বেও বলা যায় মধ্য সাম্রাজ্যের স্থপতিদের এত সব উদ্ভাবনী কুশলতা খুব একটা কাজে লাগেনি। এর ভেতরের কবরগুলি মহা ধুরন্ধর কবর লুটেরাদের কাছে হার মেনেছিল।
নিশ্চিত করে বলা যায়, মধ্য রাজবংশের মিশরীয় গোলকধাঁধার কথা খুব কম লোকই জানতে পেরেছিল, অনেকেই শুধু গ্রিক পুরাণের মাধ্যমেই এসব কথা জেনেছিল। এই গোলকধাঁধার প্রয়োগ দেখা যায় ক্রীট দ্বীপের রাজধানী “নসোসে” (নীল উপত্যকা থেকে যার অবস্থান প্রায় চারশ মাইল উত্তরে)। এতে কল্পকথা রয়েছে, এখানে বাস করত এক “মিনোতাউর,” ( যাঁড়ের মাথাওয়ালা দৈত্য) যাকে বধ করেছিল এথেনীয় বীর “থিসিউস”।
ক্রীট সম্বন্ধে গ্রীক লোকগাথা আবিষ্কার হয়েছিল বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে, যার সত্যিকারের ভিত্তি ছিল। এই দ্বীপেও ছিল এক প্রাচীন সভ্যতা, যা মিশরের চাইতে কম প্রাচীন ছিলনা, আর প্রাচীন রাজবংশের পুরোটা সময় ধরেই এই দুই দেশের মাঝে বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল (মিশরীয়রা সমুদ্রচারী জাতি না হলেও ক্রীটিয়রা তা ছিল, প্রকৃতপক্ষে ক্রীটিয়রাই ইতিহাসের প্রথম নৌসাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল)।
মিশরের মধ্য রাজবংশের আমলেই ক্রীটের প্রাসাদগুলি বিস্তৃতি লাভ করতে থাকে। হয়তো এগুলি মিশরীয় গোলকধাঁধার কাহিনীর দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছিল, এমনকি সেগুলির কিছু অনুকৃতিও এর মধ্যে ঢুকে থাকতে পারে। এমনকি গ্রিক পুরাণেও এর অনুপ্রবেশ ঘটে থাকতে পারে। চঁড়কে উর্বরতার প্রতীকরূপে গ্রহণ করার মধ্যেই রয়েছে মিনোতাউরের কল্পনা অনেক ধর্মের মধ্যেই ক্রিটীয় প্রভাব লক্ষ করা যায়।
দ্বাদশ রাজবংশও থীবীয় উৎসের কথা অস্বীকার করেনি। দক্ষিণের শহরগুলি নির্মিত হয়েছিল এবং সেগুলি সৌন্দর্যমণ্ডিত করা হয়েছিল এবং অনেক মন্দির ও স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছিল, যদিও পরবর্তী থীবীয় বংশের দ্বারা সেগুলি খর্বাকার করা হয়েছিল।
তবে তৃতীয় আমেনেমহাটের মৃত্যুর পর কিছু একটা ঘটেছিল। হয়তো কোনো একজন দুর্বল রাজা সিংহাসনে আরোহণ করেছিল, আর সেই সুযোগে অমাত্যরা কলহে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। হয়তো গোলকধাঁধা নির্মাণে অনেক শক্তিক্ষয় হয়েছিল, যেমনটা ঘটেছিল বহু শতাব্দী পূর্বে পিরামিড নির্মাণের কারণে।
কারণ যা-ই থাক না কেন, মহান সশ্রটের মৃত্যুর কয়েক বছরের মধ্যেই মধ্য রাজবংশের সমৃদ্ধির অবসান ঘটল। এটা টিকেছিল মাত্র আড়াই শতাব্দীব্যাপী, প্রাচীন সাম্রাজ্যের অস্তিত্বকালের অর্ধেক মাত্র।
আবারও সাম্রাজ্য ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেল, খণ্ডিত রাজ্যগুলি অভিজাতদের দ্বারা শাসিত হতে থাকে। আবারও ছায়া সম্রাটরা সিংহাসনের দাবি নিয়ে হাজির। মানেথো দুটি রাজবংশের কথা উল্লেখ করেছেন, দ্বাদশ ও এয়োদশ বংশ যারা একই সময়ে রাজত্ব করতেন, যারা কেউই সাম্রাজ্যের সত্যিকারের দাবিদার ছিলেন না। বাস্তবিকপক্ষে মেনেসের সুকৃতি আবারও ধসে পড়ল, আর দুই মিশর আলাদা হয়ে গেল ত্রয়োদশ রাজবংশ থিবিসকে কেন্দ্র করে আপার ঈজিপ্টে রাজত্ব করত, আর চতুর্দশ রাজবংশ লোয়ার ঈজিপ্টে তার শাসনকাজ চালাত বদ্বীপের ঠিক কেন্দ্রস্থলের এক শহর “জোইসকে” কেন্দ্র করে।
আবার এক শতাব্দী ধরে চলল বিশৃঙ্খলা আর এল এক অন্ধকার যুগ। এবার অবশ্য বিবদমান রাজবংশগুলি এককভাবে যুদ্ধ করে এর থেকে বেরিয়ে আসার কোনো সুযোগ পেল না, তারা কেউই সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে সমর্থ ছিল না। তার বদলে এমন কিছু ঘটল, সভ্যতার সূত্রপাতের পরে মিশরের ইতিহাসে ইতিপূর্বে যেমনটা আর কখনোই ঘটেনি। বিদেশি এক আগ্রাসন ঘটল যারা মিশরের দুর্বলতার সুযোগ নেয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে ছিল।
মিশরবাসীগণ, যাদের রয়েছিল দেড় হাজার বছরের প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস, যারা এমন একটা দেশের অধিবাসী যেখানে রয়েছে দেড় হাজার বছরের প্রাচীন পিরামিড, যারা অন্যের সাথে বাণিজ্য করত শুধু কাঁচামাল আহরণের জন্য কাঠের তক্তা, মশলা, ধাতুর তাল। যেখানে মিশরীয় সৈন্যরা অভিযান পরিচালনা করেছিল এবং তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিল, যেমন নুবিয়া এবং সিরিয়া, সেসব দেশের লোক অনেক কম সম্পদশালী এবং প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে স্বল্পোন্নত। তারা নিজেদেরকে নিয়ে অহংকার করত যেমনটা করত রানি ভিক্টোরিয়ার আমলে ইংরেজরা নিজেদেরকে নিয়ে অথবা এখন যেমনটা করে থাকে যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে।
তাহলে এমনটা কী করে ঘটল যে সামান্য কিছু বিদেশি বাহিনীর আক্রমণে সমগ্র মিশর ধসে পড়ল- এমনকি বিভক্ত মিশরও, আর এটা দখল করে নিল কোনো রকম প্রতিরোধ ছাড়াই?
.
হিক্সস
পরবর্তী মিশরীয় ইতিহাসবিদগণ মিশর ইতিহাসের এই অধ্যায়টি নিয়ে লজ্জাবোধ করেন, আর তাদের ইতিহাসগ্রন্থ থেকে এই পর্বটি মুছে ফেলার সর্বাত্মক চেষ্টা করেন, আর আমাদের দুঃখের বিষয় হলো এই পর্বটি সম্বন্ধে বা কারা এই আগ্রাসক ছিল তাদের সম্বন্ধে কিছুই জানি না। এমনকি বিজয়ী আক্রামকদের নামও খুব কমই জানতে পারি।
খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীতে ইহুদি ঐতিহাসিক যোসেফাস মেনেথেকে উদ্ধৃত করে লিখেছিলেন আগ্রাসকদের বলা হতো হিক্সস আর এর অর্থ করা হয় “মেষপালক রাজা।” এতে বোঝা যায় তারা ছিল যাযাবর, যাদের জীবিকা ছিল মেষচারণ, যেটা সভ্য মিশরীয়রা বহু পূর্বেই ত্যাগ করে কৃষিনির্ভর সভ্যতায় প্রবেশ করেছে, আর যেটাকে তারা বর্বরতা মনে করত।
হয়তো ব্যাপারটা সেরকমই, তবে বর্তমানে এটাকে বুৎপত্তিজাত মনে করা হয় না। তৎপরিবর্তে বিশ্বাস করা হয় শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে মিশরীয় শব্দ “হিক শাস” থেকে যার অর্থ উজান দেশের শাসক অথবা কেবল “বিদেশি শাসক।”
তাছাড়া এটা নিশ্চিত যে হিক্সসরা উত্তর-পূর্ব দিক থেকে সিনাই উপদ্বীপ পার হয়ে বন্যার বেগে ধেয়ে এসেছে এবং তারা ছিল এশিয়ান আর তাদের কাছে ছিল উন্নত সামরিক উপকরণ। ইতিপূর্বে মিশরীয়রা এশিয়ার খুব অল্পদূর পর্যন্তই প্রবেশ করতে পেরেছিল, আর এখন এশীয়রা তার যোগ্য প্রত্যুত্তর দিচ্ছে।
১৭২০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত ইউফ্রেতিস তাইগ্রিস এলাকার লোকজন, যারা ছিল এশিয়ার জাতিসমূহের মধ্যে সামরিক শক্তিতে সবচেয়ে অগ্রগামী, এতদিন পর্যন্ত তারা মিশরে আঘাত হানার চেষ্টা করেনি। বাণিজ্যিক এবং সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান ছিল ঠিকই, তবে কোনো সামরিক সংঘাত ছিল না। যে নয়শ মাইলের দূরত্ব দুটি নদী সভ্যতাকে পৃথক করে রেখেছিল তাদের প্রাচীন ইতিহাসে কার্যকর অন্তরক হিসাবে কাজ করেছিল।
মিশরের প্রাগৈতিহাসিক যুগে এবং প্রাচীন রাজবংশের প্রথম শতাব্দীতে ইউফ্রেতিস তাইগ্রিসের নগরগুলি বিচ্ছিন্নই থেকে যায়। তারা একে অপরের সাথে অবিরাম সংগ্রাম করে চলে, নিজেদের নগরের চারপাশে সুরক্ষা প্রাচীর নির্মাণ করে, তারপর নগরদুর্গ অবরোধ এবং সেগুলি ভেঙ্গে ফেলার কৌশল আয়ত্ত করে। তারা নিজেদের মধ্যে কলহে এত ব্যস্ত থাকত যে বাইরের কোনো অভিযানের কথা ভাবতেও পারেনি।
খ্রিস্টপূর্ব ২৪০০ অব্দে আগাদে নগরের সাৰ্গন নামে এক শাসক সমগ্র এলাকাটির উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন এবং এক বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন যার সীমানা সিরিয়া এবং ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছিল। একই সাথে মিশর হয়ে উঠেছিল শক্তিশালী আর পঞ্চম রাজবংশ শান্তিতে রাজত্ব করেছিল। সাৰ্গন বা তার উত্তরসূরি কেউই তাদের সংকটময় যোগাযোগ লাইন সম্প্রসারিত করতে সাহস করেনি যেখান থেকে তারা নীল বিধৌত ভূমিতে আক্রমণ চালাতে পারে।
দুই শতাব্দীরও কম সময়ের মধ্যে সার্গনের সাম্রাজ্যে অবক্ষয় শুরু হয় আর শেষ পর্যন্ত নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় আর প্রাচীন মিশর সাম্রাজ্যও বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে খণ্ড বিখণ্ড হয়ে যায়। ইউফ্রেতিস তাইগ্রিস এলাকা পরিণত হয় বিবদমান ভূখণ্ডে আর তারা মোটেই কোনো দুঃসাহসিক পদক্ষেপ গ্রহণে প্রস্তুত ছিল না।
ঠিক সেই সময়ে যখন মিশরে মধ্য সাম্রাজ্য ক্ষমতা পাকাঁপোক্ত করছিল, তখন এ্যামোরাইটস্ নামে এক যাযাবর গোষ্ঠী ইউফ্রেতিস তাইগ্রিস অঞ্চলে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করছিল। তারা ইউফ্রেতিস নদীর তীরে এক ক্ষুদ্র শহর “বাব-ইলুকে” (তখনও গুরুত্বহীন) তাদের রাজধানী বানাল। বাব-ইলু শব্দের অর্থ দেবতার প্রবেশদ্বার। গ্রিকদের কাছে শহরটির নাম হয়ে দাঁড়ায় বেবিলন, আর এই নামেই আমাদের কাছে এটা সমধিক পরিচিত। এ্যামেরাইটসদের অধীনে বেবিলন এক মহান নগরে পরিণত হয় আর পরবর্তী দেড় হাজার বছর ধরে এর মহত্ত্ব টিকে থাকে। তাই প্রাচীন ইতিহাস পর্যালোচনা করতে গেলে ইউফ্রেতিস তাইগ্রিস এলাকা সচরাচর এই নামেই উল্লেখ দেখা যায়।
আনুমানিক ১৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বেবিলনের রাজা হামুরাবি এক সাম্রাজ্যের উপর শাসন কায়েম করেছিলেন আয়তনে যা প্রায় সাগনের রাজ্যের সমান ছিল। ইতিমধ্যে যদিও মিশরে মধ্য রাজবংশ ক্ষমতার শিখরে অবস্থান করছিল আর এশীয়রা শক্তিধর হলেও মিশরের সাথে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে অবতীর্ণ হয়নি এমনকি সিরিয়ায় মিশরীয়দের শাখা প্রশাখাতেও অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেনি।
মিশর ও এশিয়ায় ক্ষমতার উত্থান পতনের মধ্যে একটা ভারসাম্য সর্বদাই বিরাজমান ছিল, আর এদিক দিয়ে বলা যায় মিশর ছিল অধিক ভাগ্যবান যদিও সেই সৌভাগ্যের সময়কাল দ্রুত ফুরিয়ে আসছিল। এশিয়ার তুলনামূলকভাবে যে বিস্তীর্ণ এলাকায় সংঘর্ষ চলে আসছিল, সেখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ সমর উপকরণের উদ্ভব ঘটে- অশ্ব এবং রথ। এশিয়া এবং ইউরোপের বিস্তীর্ণ তৃণভূমি অঞ্চল যা বেবিলনের সভ্যতাকেন্দ্রের উত্তরে প্রসারিত, তারই কোনো এক জায়গায় ঘোড়াকে পোষ মানানো হয়েছিল।
যাযাবরেরা সাধারণত উত্তর থেকে দক্ষিণে ছুটে আসে, তবে সব সময় তাদের যুদ্ধ করে তাড়িয়ে দেওয়ার একটা সুযোগ থাকে। যাযাবরদের একটা সুবিধা হলো তারা চমক সৃষ্টি করতে পারে এবং তারা যুদ্ধ করতে অভ্যস্ত। সাধারণত নগরবাসীরা যুদ্ধের প্রতি বীতস্পৃহ থাকে, তবে তাদের থাকে সংগঠিত সামরিক বাহিনী এবং নগরকার। নিজেদের সুরক্ষার ব্যবস্থা তাদের থাকে। এ্যামোরাইটসরা বেবিলনে প্রবেশ করে নিজেদের জন্য ছোট ছোট শহর প্রতিষ্ঠা করে, আর শুধু তখনই বড় বড় নগরের দিকে হাত বাড়িয়েছিল যখন বেবিলনীয় সভ্যতার সাথে তারা নিজেদের খাপ খাওয়াতে পেরেছিল।
তবে হামুরাবি যুগের অবসানে যাযাবরেরা তাদের নতুন হাতিয়ার নিয়ে উত্তর থেকে দক্ষিণে নেমে এল। প্রতিটি ঘোড়া দুই চাকার রথ টেনে সৈন্যদের পরিবহণের কাজ করেছিল। প্রতিটি রথে ছিল দুজন করে আরোহী, একজন রথ পরিচালনা করত আর অন্যজন বর্শা বা তীর-ধনুক নিয়ে যুদ্ধ করত। তাদের অস্ত্রগুলি ছিল দীর্ঘতর, দৃঢ় এবং অনেক দূরে নিক্ষেপ করার উপযোগী, আর এসব অস্ত্র ধীরগামী পদাতিকদের চাইতে অনেক বেশি কার্যকর ছিল।
ছুটন্ত মেঘের মতো বিদ্যুৎগতি অশ্বারোহী বাহিনীর সাথে এসব ধীরগতি পদাতিক বাহিনীর মুখোমুখি হওয়ার কোনো অভিজ্ঞতাই ছিলনা। উন্মত্ত অশ্বের খুরের বজ্রনির্ঘোষ শব্দ আর ঘাড়ের কেশরের ঝাঁকানি তাদের কাছে ছিল এক ভয়াবহ দৃশ্য। এসব দ্রুতগামী জম্ভর মোকাবিলা মোটেই সহজ ছিলনা। তখন তাদের ছুটে পালানো ছাড়া কোনো গত্যন্তর ছিলনা আর তখন অশ্বারোহী বাহিনীর পক্ষে তাদের ঘেরাও করে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া মোটেই কঠিন ছিলনা।
হামুরাবির আমলে অশ্বারোহী যাযাবররা যেখানেই অগ্রসর হয়েছে সেখানেই জয় ছিনিয়ে নিয়েছে, যদি না শত্রুপক্ষ দ্রুত অশ্বারোহণের সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছে বা প্রাকারবেষ্টিত নগরের মধ্যে আশ্রয় নিতে পেরেছে।
বেবিলনের নগরসমূহ কিছু সময়ের জন্য তাদের ঠেকিয়ে রাখতে পেরেছিল, তবে একটি জাতিগোষ্ঠী, বেবিলনীয়দের কাছে যারা পরিচিত ছিল “কাশশি” আর গ্রিকদের কাছে ক্যাসাইট” নামে, তারা ক্রমাগত এগিয়ে আসতে থাকে। ১৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ নাগাদ তারা বেবিলনিয়ায় এক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিল যা প্রায় সাড়ে চার শতাব্দীব্যাপী টিকেছিল।
বেবিলনীয় নগরসমূহ যতদিন উত্তরের যাযাবরদের ঠেকিয়ে রাখতে পেরেছিল, পশ্চিমের সিরীয় নগরসমূহ ততদিন তাদের ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি। যাযাবরেরা সিরিয়া দখল করে নেয়। কিছু কিছু কেনানীয় শহর তাদের দখলে চলে যায় আর কিছু মিত্ররূপে তাদের সাথে যোগ দেয়।
যাযাবর ও কেনানীয়দের একটা সম্মিলিত বাহিনী মিশরের উপর হামলে পড়ে। তারা কোনো ঐক্যবদ্ধ জাতি বা গোষ্ঠি ছিলনা, আর তারা নিজেদেরকে হিক্সসও বলত না। মিশরীয়রাই এই নামটা তাদের দিয়েছিল, আর কোনো একক নামই কোনো একক জাতি নির্দেশ করে না।
তাছাড়া হিক্সসদের কোনো অগ্রসরমান সাম্রাজ্যের অগ্রভাগও বলা চলে না, বরং তারা ছিল বিশৃঙ্খল হামলাকারী দস্যুদল। তবে তাদের আয়ত্তে ছিল অশ্ব আর রথ এবং তীর ধনুক, যেগুলি যে কোনো মিশরীয় অস্ত্রের চাইতে উন্নততর।
মিশরীয়দের ঘোড়া ছিল না। পরিবহণের জন্য তাদের ছিল ধীরগামী গাধা। তাদের রথ ছিল না। হয়তো কোনো সক্ষম রাজা শত্রুর হাতিয়ার সহজেই আয়ত্ত করে নিতে পারত, তবে এসময় মিশর নিজেদের মধ্যেই বহুধা বিভক্ত ছিল। মিশরের ভাগ্যে চলছে অবক্ষয়ের পালা।
অশ্বারোহীরা বিদ্যুঙ্গতিতে প্রবেশ করল। মিশরীয় পদাতিকরা ছুটে পালাল। ১৭২০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে কোনো যুদ্ধ ছাড়াই পতন ঘটল মিশরের মহান সম্রাট তৃতীয় আমেনেমহাটের মৃত্যুর আশি বছরেরও কম সময়ের মধ্যে। তবে সমগ্র মিশরের পতন ঘটল না। হিক্সস বাহিনী তেমন বড়সড় ছিল না। আর তারা সমগ্র নীল অববাহিকায় ছড়িয়ে পড়ার সাহস পায় নাই, বরং তারা সুদূর দক্ষিণের নীল উপত্যকাকে নিরুদ্রবে ছেড়ে দেওয়াটাকেই বুদ্ধিমানের কাজ ভেবেছিল। লোয়ার ঈজিপ্টের সাথে সিরিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করে তারা একটা সাম্রজ্যের উপরই তাদের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ রেখেছিল।
নীল অববাহিকার দক্ষিণপ্রান্তে আভারিস নগরে তারা তাদের রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেছিল। তাদের রাজত্বের একপ্রান্ত নীল অববাহিকা আর অন্যপ্রান্ত সিরিয়া। হিক্সস বংশের দুটি ধারা মিশরের উপর রাজত্ব করেছিল। মানেথো তাদের উল্লেখ করেছিলেন পঞ্চদশ ও ষোড়শ রাজবংশরূপে (এটা মনে রাখার মতো যে বিদেশি শাসকদেরও রাজবংশরূপে চিহ্নিত করা হতো)। প্রকৃতপক্ষে এসব রাজবংশ সম্বন্ধে খুব বেশি কিছু জানা যায় না। কারণ পরবর্তী মিশরীয়গণ তাদের থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিতে এবং তাদের লেখায় ওদের কথা বেশি না লিখতেই পছন্দ করতেন। তাদের লিপিতে যদি ওদের কথা কিছু লিখতেই হতো তবে তা ছিল চরম বিদ্বেষপূর্ণ।
কাজেই এই ধারণা বদ্ধমূল হয়েছিল যে হিক্সসরা সাংঘাতিক নিষ্ঠুর ও চরম অত্যাচারী এবং তারা মিশরে নির্দয়ভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল। তবে কথাটা সত্য বলে মনে হয় না। তারা মোটামুটি ভদ্রভাবেই দেশ শাসন করেছিল।
যে বিষয়টি মিশরীয়দের খেপিয়ে তুলেছিল তা হলো হিক্সসরা এশীয় রীতিনীতি মেনে চলত আর তারা মিশরীয় দেবতাদের দিকে মোটেই দৃষ্টি দিত না। মিশরীয়রা হাজার বছর ধরে যে সব রীতিনীতি সুন্দর জীবনযাপনের জন্য অপরিহার্য বলে পালন করে এসেছে, আর যারা বিদেশিদের সম্বন্ধে প্রায় কিছুই জানত না, তারা এটা কিছুতেই মাথায় ঢোকাতে পারছিল না যে অন্য মানুষদেরও ভিন্ন জীবনধারা থাকতে পারে, যেটা তাদের কাছে সঠিক মনে হতে পারে, যেমনটা মিশরীয়দের কাছে তাদের নিজেরটা। মিশরীয়দের কাছে হিক্সসরা ছিল সম্পূর্ণ ধর্মদ্রোহী এক জনগোষ্ঠী, এবং তাদের কখনোই ক্ষমা করা যেতে পারেনা।
সত্যি বলতে কি, দ্বিতীয় হিক্সস রাজবংশের ষোলতম শাসক পুরোপুরি মিশরীয় হয়ে উঠেছিলেন, তবে সেটা মিশরীয়দের সন্তুষ্ট করার মতো যথেষ্ট না হলেও এশীয়দের ক্ষুব্ধ করার মতো যথেষ্ট ছিল। এটা হিক্সস শাসনের একটা বড় দুর্বলতা ছিল।
এমনটা হতে পারে যে হিক্সসদের শাসনামলে বিপুলসংখ্যক এশীয় অভিবাসী মিশরে প্রবেশ করেছিল, বিশেষ করে দক্ষিণ সিরিয়া (কেনান) থেকে। স্থানীয় মিশরীয় শাসনামলে এসব অভিবাসীদের সন্দেহের চোখে দেখা হতো, আর তাদের মিশরে প্রবেশ নিরুৎসাহিত করা হতো। অপরপক্ষে হিক্সস রাজারা এশীয় অনুপ্রবেশ উৎসাহিত করত, যারা স্থানীয় অধিবাসীদের চাপে রাখার ব্যাপারে রাজাদের সহায়ক বলে মনে করত।
হয়তো বাইবেলের ইউসুফ ও তার ভাইদের গল্প মিশর ইতিহাসের এই সময়ের প্রতিফলন। নিশ্চয় মিশরের সহৃদয় রাজা যিনি ইউসুফকে তার প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিলেন এবং ইয়াকুব ও তার সঙ্গী ইহুদিদের জন্য গোশেনে (বদ্বীপে, আভারিসের পূর্বে) একটা জায়গা নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন, যাতে তারা স্থানীয় মিশরীয়দের সাথে মিশে যেতে না পারে। ঐ রাজা যে একজন হিক্সস ছিলেন তাতে কোনো সন্দেহ নাই।
প্রকৃতপক্ষে, ঐতিহাসিক যোসেফাস, যিনি ইহুদি জাতির মহত্ত্ব প্রতিপাদনে উগ্রীব ছিলেন, তাদের একটা বিজয়ী ইতিহাস দেওয়ার জন্য এই বিশ্বাস পোষণ করতেন যে হিক্সসরা ছিল ইহুদি আর ঠিক এই সময়টাতেই তারা মিশর জয় করেছিল, যদিও ব্যাপারটা মোটেও সেরকম ছিলনা।