হা অন্ন
সুমার মাঠে লোকটা দাঁড়িয়েছিল। চুল উস্কখুস্ক। গালে কতদিনকার বাসি দড়ি। চোখ কোটরাগত। তবু চোখে আগুন জ্বলে। যেন দাবদাহ, সব পুড়িয়ে ছারখার করে দিতে ইচ্ছে যায়। পেটে হা অন্ন। জন্ম থেকেই সে হা-অন্নের দাস। পরনে ত্যানাকানি। পাশে রেল-লাইন, গাড়ি যায়। তার শব্দ কানে আসে। আর কত শব্দ সব, এই যেমন পাখিরা উড়ে যায়, দুন্দুভি বাজে, দূর থেকেই সে শুনতে পাচ্ছে, ভোটবাবুর জয় জয় হে। সে উবু হয়ে ধান খোঁটে। ধন্যি মা-লক্ষ্মীর সংসার। কাটতে ঝাড়তে দু-এক কণা বাড়তি শস্যদানা পড়ে থাকে। মা-লক্ষ্মীর ভাঁড়ার খালি থাকে না। কাজেই পৌষে সে এই সুমার মাঠে ঘুরে বেড়ায়। কোঁচড় খুঁটে খুঁটে শস্যদানা তোলে। সারাদিন যায়, বেলা পড়ে আসে। সাঁঝ লাগে। আকাশে নক্ষত্র ফোটে। তার নিচে একটা মানুষ, হা-অন্নের মানুষ টিপে টিপে দেখে শস্যদানা। সংসারে বড়ই অমূল্য ধন এরা। তার নিজের গতরে আর শক্তি নাই, সাহস নাই, সংসার অসার ভাবে। অথবা কোন এককালে জমি-জিরাত ছিল, গরুবাছুর ছিল, মেলা-পার্বণ ছিল, আর মনে থাকে না। কোন এক পূর্ণ-গ্রাস এসে একে একে সব তার হরণ করে নিল। চালাক-চতুর না হলে মনুষ্যকুলে এই লেখা থাকে। ধান্দাবাজ না হলে মনুষ্যকুলে এই লেখা থাকে। সে নিজেকেই বলল, হা কুমড়ার বাপ, পায়ে জোর নাই হে তোমার। তার দণ্ডটি তুলে সে খাড়া করে। বটতলায় হেঁটে না গেলে সে একটু আগুন পাবে না। শীতের হিমেল হাওয়ায় তলপেট পর্যন্ত শুকিয়ে উঠছে। সে হাঁটতে থাকল।
তখনও দুন্দুভি বাজে। সকাল থেকেই বাজছে। দুপুরেও বাজছে। কেবল বেইজে যাচ্ছে। ভোটবাবু আসবে। ভোটবাবুর স্যাঙ্গাতরা সারা রাস্তাটা নিশান পুঁতেছে। পতপত করে উড়ছিল। কলাগাছ পুঁতছে। কাগজের লাল নীল রঙের শিকল জড়ানো রাস্তা ঘাট। মহা ধুমধাম, প্রায় মচ্ছবের লাখান। সে বলল, ‘জয় জয় দাওহে ভোটবাবুর। তেনার রাজত্বে দুঃখ কষ্ট দূর যাবে। তেনার রাজত্বে পেটভরে খাওয়া। লুচি মণ্ডা যত চাও। জয় জয় দাও হে।’ সে চিৎকার করে বলল, ‘হা কুমড়ার বাপ, জয় দিতে পার না। দাসবাবু, নগেনবাবু, অমর মহারাজ, বেণী দাস হুজুর, সবাই জয় দেবার জন্য সকাল থেকে সাজগোজ করে আছে। সাঁঝে ভোটবাবু নামবে। তিনি অনন্ত ঈশ্বর, তাঁর দয়ার অন্ত নেই। যখন দেয়ালে দেয়ালে এই সব লেখা, তখন কুমড়ার বাপ চোখ মেলে তাকায় আর দেখে, সম্বৎসর এই দেখে দেখে চোখ হায়রান হয়ে গেলছে। তার অবশিষ্ট কুঁড়ে ঘরটাকেও নোংরা করে গেছে ইবারে ভোটবাবুর লোক। সে লাঠি উঁচিয়ে বলেছিল, মারব এক ঘা ব্যাটারা। আমার পিঠে লিখে রাখছে আর আমারই দাঁড়ি উপড়ালছ’!
ওরা হেসে গড়িয়ে পড়েছিল। একজন মান্যি গণ্যি মানুষ বলেছিল, ‘দেশ থেকে শোষণের মুক্তি আসছে হে। পিঠ না পারলে কলজেটা দ্যাও। বড় সুসময় যায় হে!’
সে বলেছিল, ‘নাই। চু চু, নাই। কলজে নাই। দিব কোথা থেকে।’
তখনই যেন কোন এক ছোকরা তীরবেগে ধেয়ে আসে।
বলে, ‘সব ফোঁপড়া কুমড়ার বাক্স। বিশ্বাস করবা না। যে যায় লঙ্কায় সেই বাপ, রাবণ, তার পেটে একটা বিশাল গর্ত। নদীমাতৃক দেশ, গিলে খেতে ভালবাসে।’
তারপর সে কিছুদিন ছোকরার আর সাক্ষাৎ পায় নি। একদিন হিজলের বাঁধ অঞ্চলে তার সঙ্গে দেখা। বলেছিল, ‘হে কুমড়ার বাপ, ভোট দিলা’।
‘তা দিলাম বাপু।’
‘দিলা ক্যান!’
‘বাবু ভাইরা যে বুলল দিতে।’
‘না দিলে কী হয়!’
‘তাত জানি না বাপ!’
কিছু হয় না হে। যার যার সংসার। সংসার সামলাচ্ছে। তা ভাঙন থাকে না! ভাঙছে! তোমার কুমড়া কোথায় এখন! সে টাউনবাজ হয়ে যায় নি। সে আলগা হয়ে যায় নি; ভিন ঘরে উঠে যায় নি! তুমি বাপ হয়ে কিছু করতে পারলে।
—না বাপু কুমড়ার কথা কয়ো না। বুকে খিল ধরে। আমার দশটা না পাঁচটা, একটা কুমড়া তাও গোত্র-ছাড়া।
—তুমি অক্ষম মানুষ, তোমার ছেইলেই ভাবে না।
—তা কি বুলব। না ভাবলে কি বুলব। আমার আর ক’দিন!
—কেউ ভাবে না। সংসার। বুঝলা সংসার সামলাচ্ছে।
—কে সামলায়!
—ঐ যে দুন্দুভি বাজে!
—বাজছে!
—ওরা বাজিয়ে যায়, তুমি কুমড়ার বাপ শুনে যাও।
সহসা সে এবার দেখল, কি ভাবতে ভাবতে রেললাইনের ধার এসে গেছে। সুমার মাঠে এখন শীত ঝাপসা হয়ে নেমে এসেছে। উত্তুরে হাওয়ায় ত্যানাকানি উড়ছিল। রাস্তায় ইলেকট্রিকের বাতি দূরে। ভোটবাবুর বিজয় হে। এখনই গা থেকে কোথায় উড়ে যাচ্ছিল ত্যানাকানি। কি টাল! হি হি হি। সে তার দণ্ড ধরে কাঁপছিল। আর একটু যেতে পারলেই বটগাছতলা। সেখানে রাঢ় থেকে আসা ধান বোঝাই গাড়ি পড়ে আছে। মানুষে মোষে থিকথিক। টেমির আলো, খড়ের আগুন, সেদ্ধ ভাতের গন্ধ। যে যত ত্বরিতে সম্ভব হাঁটে। হাঁটতে গিয়ে আবার বুঝল, ত্যানাকানি হাওয়ায় বড়ই ক্ষেপোমো করছে। সামলে-সুমলে না হাঁটলে টাল লেগে মরে পড়ে থাকবে।
দুন্দুভি সেই ক্রমাগত বেজে চলছে। মানুষের মিছিল দূরের রাস্তায়। সাঁজের ট্রেনে ভোটবাবু নামবে। ইস্টিশনে গেলে, মানুষের ওম পাওয়া যাবে। পাশে ডানদিকে মড়ার খাটলি বয়ে নিয়ে যাবার পথটায় গেলেও আগুন পাওয়া যাবে। মানুষের ওমের চেয়ে ঐ আগুনটা তাকে টানছে বেশি। সে বোধ হয় এতটুকু পথ যেতে পারবে। সে বলল, ধন্যি মা বসুন্ধরা, তুই ছেইলে কোলে লইয়ে বইসে আছস। তুই বড়ই দেড় নজরে মা জননী। তোর কেউ খায়, কেউ খায় না। তোর সংসারে কত তাল বেতাল। কত ভৈরব ভৈরবী। আমার ত আর কিছু আহোস ছিল না মা, পেটে দুটো অন্নি, তাই তুই জুটালি না মা!
অন্ধকারে একটা প্রেতাত্মার মতো কেউ এগিয়ে আসতেই লোকগুলি ভয় পেয়ে গেল। রাস্তাটা ভাল না। পেল্লাই অশ্বত্থ গাছটা আরও খারাপ। কিন্তু রাতে নদী পার হওয়া যায় না বলে জেনেশুনেও গাড়োয়ানেরা এই অশ্বত্থতলায় মোষের কাঁধ থেকে গাড়ি নামিয়ে রাখে। খড়ের জাবদা দেয়। ইঁটের ওপর মেটে হাঁড়ি চড়িয়ে আলু সেদ্ধ ভাত। ধনেপাতা কুচি আর সরষের তেল দিয়ে রাতের আহার। এ-সময়টায় এরা আগুন জ্বেলে গোল হয়ে বসে থাকে। ঠাণ্ডায় টাল মেরে যাবার যোগাড়। আষ্টেপৃষ্ঠে শীত কাতর করে রাখে। তরাসে অগ্নিকুণ্ডে তৈরি করে রাখে। শীত এবং শয়তান সবাই আগুনকে বড় ভয় পায়। এসব কারণেই কেউ হাঁকল, আগুনের সামনে কে আসে?
কুমড়ার বাপ বলল, মুই বাপ। আগুনের পাশ থেকে একটা লোক ঠাঙ্গা হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। —বলবাত!
কুমড়ার বাপ বলল, আগুন বড় টানে বাপ। তা কোন সড়কের পাড়ে ঘর?
—হুই রামানবাসপুর যেতি হবে।
কুমড়ার বাপ দণ্ডটা নিচে রেখে বলল।—ভাত হলছে ত!
লোকগুলির মধ্যে জ্যেষ্ঠটি বলল, তুমি একটা আবাল লোক হে। গন্ধ পালছ না।
—আর সে গন্ধ পালছি কোথায়! তা গন্ধ ছিল, নয়নজুরি চালের। নোনা মিশ্রি চালের। আঁখ জ্বাল দিছ কখনও। গুঁড়ের গন্ধ বাতাসে মঁ মঁ করে না। সেই গন্ধ আর নেই। দিন বড় খারাপ হলছে হে। সাবধানে থেক।
কুমড়ার বাপকে এরা চেনে। পথ চলতে, গাঁ গঞ্জে এমন অনেক লোকের সঙ্গে ধানী গাড়োয়ানদের দেখা হয়ে যায়। কুমড়ার বাপের বদমতলব আছে। গেল বছরেও উদ্ভুটে মানুষটা গাছের গুঁড়িতে ঠেস দিয়ে বসেছিল। আকালের কিসসা, পরীর জাদুকরী প্রভাব আর হিজলের বানবন্যার কথা বলে পাত পেতে বলেছিল, দাও দিখিনি, কি চালের কি গন্ধ দেখি। যেন গন্ধ শোঁকার জন্যই পাত পেতে বসা। যেন না দিলে অধম্ম হবে। পথে কু-প্রভাবে পড়ে যাবে। ধানী গাড়োয়ানরা রাত বিরেতে পথ চলতি বিশ্বাস অবিশ্বাসে ভোগে। লোকটা কোন জাদু টোনা করে শেষে না মোষের ঘাড় ভেঙে দেয়। ফলে ঐ থেকে ভাগ করতে গিয়ে দেখেছিল লোকটা একাই চারজনের ভাত জঠরে ঠেলে দিয়েছিল। বলেছিল, খ্যালাম। বড়ই সুস্বাদু অন্ন। অন্নের দাস মানুষ। অন্ন ঈশ্বরের শামিল। তার অবহেলা দেখাতে নাই। লোকটার মুখে খাবার পর অমৃত ঝরছিল।
আবার এই জাড়জরাতে লোকটার উদয়। যেন রেললাইনের হুঁই উঁচু টিলায় দাঁড়িয়ে দেখে—ধানী গাড়োয়ানরা হিজলের মাঠ ভেঙে আসছে কি না! দণ্ডে ভর করে দাঁড়িয়ে থাকে। আসে, পথ পার হয়ে যায়, নদী পার হয়ে যায়। থামে না। না থামলে আগুন জ্বলে না অশ্বত্থের আন্ধারে। আর জ্বললেই দণ্ডে ভর করে উদয়—মুই কুমড়ার বাপ। সাকিন নাই, নিবাস নাই, পরকিতির লীলা খেলায় মত্ত হয়ে আছি বাপ। দাও দুটো দেখিনি, কি গন্ধ, কেমন গন্ধ দেখি।
এবার কনিষ্ঠটি বলল, ভাত হবে না, ভাগ।
—ভাত রোচে না বাপ! আগুন লাগে। আগুনে সেঁইধে যেতে ইচ্ছে করে। তা একটুখুনি আগুন। হা হা টাল। বড় টাল হে। বলেই লোকটা হুড়মুড় করে ভাতের আগুনে হাত ঠেলে দিয়ে কাতর গলায় বলল, দুন্দুভির আত্তয়াজ বড় গুম গুমায়।
সত্যি গুমগুম করছিল। যেন প্লাবন আসছে। মানুষের মিছিল। বিজয় মিছিল। পাকা সড়কে যানবাহন ভ্যাপো ভ্যাপো করছে। ইস্টিশনে গিজগিজ করছে—ভোটবাবুর বিজয় হে। কুমড়ার বাপ হাত দিচ্ছে আগুনে। হাত ঝলসে যায় না। মরা আগুন। কুমড়ার বাপ হামলে পড়ল এখানে সেখানে। খড়কুটো তুলে আনছে। আর নিক্ষেপ করছে। বড় টাল। শরীর টাল খাচ্ছে। তবু জাড়জরা থেকে বাঁচার বড় শখ। বছর যায়! বয়স বাড়ে। হে পারে নদীর জলে কুম্ভীর ভাইস্যা আসে। ভোটবাবুর জয় হে।
জ্যেষ্ঠ বলল, অ কুমড়ার বাপ ভোটবাবুরে দেখতে যালছ না!
কুমড়ার বাপ মুখটা তুলে হাঁ করে থাকল। রোঁয়া ওঠা শরীর। ছেঁড়া ত্যানাকানিতে হাত পা অসাড়। গায়ে পায়ে বদহজমের মত ঠাণ্ডা লেগে চোখ মুখ ফোলা। সে বলল, বড় সুঘ্রাণ হে। দাও দিকিনি গন্ধ শুঁকি। কি ধানের কোন চাল বলে দিলছি।
প্যাঁ করে কি যেন বাজল। ট্রেন থেকে চাগা চোপকান পরে কে নামছে একজন। হল্লা হচ্ছে। দু সাল পাঁচ সাল যায় আর হল্লা ওঠে। জমি রুখাই থাকে, কুমড়ার বাপের কাছে ভাতের ঘ্রাণের চেয়ে বড় ঘ্রাণ আর কিছু নাই। সে ফের বলল, কানে যেইছে না।
এবারে গাড়োয়ানদের জ্যেষ্ঠ কনিষ্ঠ সবাই বলে ফেলল, ও তোমারে চিনাতে হবে না। ভাগ।
কুমড়ার বাপ বড় বিস্ময়ে বলল, মা জননীর সন্তান আমি। জমি জিরেত থেইকে অন্ন তুলে নিয়ে যাবি, জননীর ছেইলেটারে অন্ন দিবি নে!
বড় সামিয়ানার নিচে ভোটবাবু। সাদা চাদর বিছানো। ফুলের মালা গলায়। রজনীগন্ধার ঝাড় ফুলদানিতে। মাইকে কে একজন হ্যালো হ্যালো করছে। বলছে জয় দিন!
জ্যেষ্ঠটি বলল, জয় দাও। শোনছ না জয় দিতে বুলছে।
সে বলল, জয় দিলে খেতে দিলছ?
সবাই বলল, দাও না।
—এই দিলম। বলে সে ত্যানাকানি যা ছিল অঙ্গে উত্তরের হিমেল হাওয়ায় ছুঁড়ে দিল। ফের বলল, এই দিলম। সে তার দণ্ড ধরে ঘুরাতে থাকল। রক্ত বড় সঞ্চালন জীব।
জ্যেষ্ঠ বলল, মরবে শালা। বলে সে ত্যানাকানি তুলে এনে জড়িয়ে দিল গায়। ওদের কষ্ট হল। মনুষ্য জাতির বড় গোলমেলে রহস্য—যার লতাপাতা আগাছায় বনজঙ্গলে ভরা। গাছের নিচে গাছ, তার নিচে কচু কদু আগাছার ঝাড়। রোদ যে পায়, সে বাড়ে। যে পায় না, সে মরে। জ্যেষ্ঠটির মনে সুমার মনুষ্য সমসারের কথা ভেবে দয়া উপজিল। বলল, খাও হে কুমড়ার বাপ। ত্যানাকানি পরেই খাও। তারপর জয় দিও, ভোটবাবুরে জয় দিও। তিনার দয়াতেই তোমার অঙ্গে শেষে হাড় কখানা আছে। জয় না দিলে বাকি ক’দিনে, তাও যাবে। তার আগে শুধু জয় দিয়ে যাও হে।
কুমড়ার বাপ গোগ্রাসে খালছিল। খাচ্ছিল না। খাচ্ছিল শব্দটা বাবুভাইদের কথা। কুমড়ার বাপ খালছে। খাচ্ছে না। খালছে। কুমড়ার বাপ খেতে খেতেই বলল, অন্ন বড়ই সুস্বাদু। তারে অবহেলা করতে নাই। অন্ন মানুষের ঈশ্বর। তখন মাইকে ফুলকো লুচির মতো গলার আওয়াজ ভেসে বেড়াচ্ছে। কুমড়ার বাপ তখনও খালছে। মাঝে মাঝে বলছে হ হ। অন্নে বড়ই সুঘ্রাণ। তারে কেড়ে লিলে ঝাড়ে বাঁশ।
গান বাজনা আলো আরও কত কি ইস্কুলের মাঠে তখন। সামিয়ানার নিচে ভিড় ভারাক্কা। মঞ্চে কোলাহল। মাইকে বাজনা। উত্তুরে হাওয়া আরও হিমেল। হিজলের মাঠে জোনাকিরা উড়ছে না। নক্ষত্রের চরাচরে এক জীব কুমড়ার বাপ। অশ্বত্থের নিচে ধানী গাড়োয়ান। কলাপাতায় গরম ভাপের মধ্যে সাদা সরু তীক্ষ্ণ সব অমূল্য বীজ। কুমড়ার বাপ তাকিয়েই আছে। খাওয়ার কথা মনে আসছে না। হঠাৎ খাওয়া থামিয়ে দিয়ে কি যেন দেখছে। জ্যেষ্ঠটি ঠ্যালা দিয়ে বলল, ও-কুমড়ার বাপ চোখ নড়ছে না কেন! ও ও কুমড়ার বাপ! হা আবাল আমার। খেতে খেতে আটকে গেছে। শুকনো নাড়ি। ভাত নামছে না। কুমড়ার বাপ বুকে হাত দিতে চাইল। পারছে না। কেমন ঝুঁকে তারপর হাত পা বিছিয়ে পড়ে গেল। ঢেকুর তুলল দুটো।
—হায় আবাল মানুষরে খেতে গিয়ে মরে গেলা!
সামিয়ানার নিচে তখন ভাষণ। ফুলকো লুচির মতো ভাষণ আকাশে বাতাসে ওড়াউড়ি করছে।