স্বপ্নবাসবদত্তা – দ্বিতীয় অঙ্ক

স্বপ্নবাসবদত্তা – দ্বিতীয় অঙ্ক

(চেটীর প্রবেশ)

চেটী—কুঞ্জরিকে! কুঞ্জরিকে! রাজপুত্রী পদ্মাবতী কোথায়? (কান পেতে) কী বললে? রাজপুত্রী মাধবীলতা মণ্ডপের পাশে বল নিয়ে খেলছেন? আচ্ছা তবে যাই ওঁর কাছে (পদচারণা করে চেয়ে দেখলে) এই যে রাজপুত্রী বল খেলতে খেলতে এইদিকেই আসছেন; ওর কানের অলঙ্কার উপরের দিকে উঠে গেছে, মুখখানি ক্লান্তি হেতু সুন্দর শ্রমজনিত স্বেদবিন্দুতে চিত্রিত। (প্রস্থান)

প্রবেশক সমাপ্ত

(এরপর বল নিয়ে খেলতে খেলতে বাসবদত্তা ও পরিজনবর্গের সঙ্গে পদ্মাবতী প্রবেশ করলেন)

বাসবদত্তা—সখি, এই নাও তোমার বল!

পদ্মাবতী—আর্যে, আজ এই পর্যন্তই থাক!

বাসবদত্তা—সখি, অনেকক্ষণ বল খেলতে খেলতে তোমার হাত দুটি রক্তিম হয়ে উঠেছে, মনে হচ্ছে যেন আর কারও হাত।

চেটী―খেলুন, রাজপুত্রী খেলুন! রমণীয় কন্যাকাল এইভাবেই কাটুক!

পদ্মাবতী—আর্যে, পরিহাসের ভঙ্গীতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন যে!

বাসবদত্তা—না, না, তা নয়। আসল কথা, আজ তোমাকে বড় সুন্দর দেখাচ্ছে—তোমার চারদিকেই যেন তোমার বরের মুখ দেখতে পাচ্ছি।

পদ্মাবতী—আপনি যান তো এখান থেকে; আমাকে আর উপহাস করতে হবে না!

বাসবদত্তা—ওগো ভাবী মহাসেন পুত্রবধূ! এই আমি চুপ করলাম।

পদ্মাবতী—মহাসেন আবার কে?

বাসবদত্তা—উজ্জয়িনীর রাজা প্রদ্যোৎ; বিপুল সেনার অধিকারী বলেই তার নাম ‘মহাসেন’।

চেটী—কিন্তু তার সঙ্গে কোনো সম্বন্ধ হোক এটা তো রাজপুত্রীর ইচ্ছে নয়- বাসবদত্তা—তবে কার সঙ্গে সম্বন্ধ স্থাপন তাঁর ইচ্ছে?

চেটী—বৎসরাজ উদয়ন রয়েছেন। রাজপুত্রী তাঁর গুণে মুগ্ধ!

বাসবদত্তা—(স্বগত) আমার স্বামীকেই পতিরূপে পেতে ইচ্ছুক! (প্রকাশ্যে) কিন্তু কোন গুণে?

চেটী—তিনি খুব দয়ালু তাই!

বাসবদত্তা—(স্বগত) তা কি আর জানি না? আমিও তো ওই গুণেই মুগ্ধ হয়েছিলাম!

চেটী কিন্তু রাজপুত্রী! সেই রাজা যদি দেখতে কুৎসিত হন?

বাসবদত্তা—না, না, তিনি খুবই সুন্দর দেখতে!

পদ্মাবতী—আপনি কী করে জানলেন?

বাসবদত্তা—(স্বগত) স্বামীর প্রতি পক্ষপাতিত্বের জন্য সীমা লঙ্ঘন করে ফেলেছি! এখন কী করি। আচ্ছা, এইভাবে বলি। (প্রকাশ্যে) সখি উজ্জয়িনীবাসীরাই একথা বলে থাকে।

পদ্মাবতী—তাই বটে! উজ্জয়িনীতে তাঁর দর্শন সুলভ। সৌন্দর্য সবার কাছেই মনোহারী। (ধাত্রীর প্রবেশ)

ধাত্রী—রাজপুত্রীর জয় হোক্! রাজপুত্রী! আপনি এখন বাগ্দত্তা হলেন।

বাসবদত্তা—কার কাছে?

ধাত্রী—বৎসদেশের রাজা উদয়নের কাছে।

বাসবদত্তা—সেই রাজার কুশল তো?

ধাত্রী—তিনি কুশলেই আছেন, তাছাড়া রাজপুত্রীকে গ্রহণ করেছেন।

বাসবদত্তা—সর্বনাশ!

ধাত্রী—সর্বনাশ কেন?

বাসবদত্তা—না—না, তেমন কিছুই নয়। তবে এইটেই ভয়ের কথা যে তিনি ওইরকম সন্তাপে আবার উদাসীন হয়ে না পড়েন।

ধাত্রী—আর্যে, মহাপুরুষদের হৃদয় শাস্ত্রজ্ঞানে পূর্ণ, তাই হৃদয় প্রকৃতিস্থ হতে দেরি হয় না।

বাসবদত্তা—আর্যে, তিনি নিজেই কি বরণ করেছেন?

ধাত্রী—না, না, তিনি এখানে এসো লেন অন্য প্রয়োজনে! তাঁর বংশ, কাল, বয়স ও রূপ দেখে মহারাজ নিজেই দান করেছেন।

বাসবদত্তা—(স্বগত) তাহলে এ ব্যাপারে আর্যপুত্রের কোনো অপরাধ নেই।

(অন্য এক চেটীর প্রবেশ)

চেটী—আর্যে, শীঘ্র আসুন, আজই ভালো নক্ষত্র; রানি বললেন আজই কৌতুক মঙ্গল করতে হবে।

বাসবদত্তা—(স্বগত) এরা যত তাড়াতাড়ি করছে আমার হৃদয় ততই অন্ধকার হয়ে উঠছে।

ধাত্রী—রাজপুত্রী আসুন। আসুন! (সকলের প্রস্থান)

[দ্বিতীয় অঙ্ক সমাপ্ত]

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *