স্বপ্নবাসবদত্তা – তৃতীয় অঙ্ক
(চিন্তাব্যাকুল বাসবদত্তার প্রবেশ)
বাসবদত্তা—বিবাহের আনন্দোৎসবে উচ্ছ্বসিত অন্তঃপুর! চতুঃশালায় বিদ্যাবতীকে রেখে আমি চলে এলাম এই প্রমোদবনে, দুঃখের সান্ত্বনার আশায়!
(ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে)
কী দুর্ভাগ্য আমার! আজ আমার স্বামীও অন্যের হতে চলেছেন! একটু বসি এখানে!
(বসলেন : একটু পরে )
চক্রবাক বধূই ধন্যা, প্রিয়তমের বিচ্ছেদে সে বেঁচে থাকে না; কিন্তু আমি তো প্রাণত্যাগ করতে পারছি না, আমি নিশ্চয়ই হতভাগিনী, আর্যপুত্রকে দেখবার আশায় এখনও বেঁচে আছি।
(হাতে ফুল নিয়ে চেটীর প্রবেশ)
চেটী―(এদিক-ওদিক তাকিয়ে) আর্যা আবন্তিকা গেলেন কোথায়? (একটু অগ্রসর হয়ে বাসবদত্তাকে দেখে) এই যে প্রিয়ঙ্গুলতার নিচে শিলায় বসে আছেন- অলঙ্কার নেই, কিন্তু পরিচ্ছন্ন বেশ, কিসের ধ্যানে যেন মগ্ন! দেখে মনে হচ্ছে যেন কুয়াশায় আচ্ছন্ন চন্দ্রলেখা! কাছে যাই!
(বাসবদত্তার কাছে এসে)
আর্যে আবন্তিকে! কতক্ষণ আপনাকে খুঁজে বেড়াচ্ছি!
বাসবদত্তা—কেন?
চেটী—আমাদের রানি বললেন, আপনি উচ্চবংশে জাতা, স্নেহময়ী ও নিপুণা, তাই আপনাকে বিবাহের মালা গাঁথতে হবে।
বাসবদত্তা—কার জন্য গাঁথব?
চেটী—আমাদের রাজপুত্রীর জন্য!
বাসবদত্তা—(স্বগত) এই কাজটিও আমাকেই করতে হবে, এই কি নিয়তির নির্দেশ! দেবগণ কী নিষ্ঠুর!
চেটী এখন আর ভাববার সময় নেই। জামাতা মণিভূমিতে স্নান করছেন! তাড়াতাড়ি মালা গেঁথে দিন!
বাসবদত্তা—(স্বগত) আমি যে আর কিছুই ভাবতে পারছি না! (প্রকাশ্যে) তুমি কি জামাতাকে দেখেছ?
চেটী—রাজপুত্রীর প্রতি স্নেহ, আর আমাদের কৌতূহল, দেখা হয়ে গেছে বই কি! বাসবদত্তা– জামাতা কেমন দেখতে?
চেটী—সত্যি বলছি, এমন আর আগে দেখিনি!
বাসবদত্তা—ওগো বল না, দেখতে সুন্দর তো?
চেটী—কী আর বলব, মনে হল যেন ধনুঃশর হীন স্বয়ং কামদেব! মনে হল—
বাসবদত্তা—থাক্, ও কথা থাক।
চেটী—বলতে বারণ করছেন কেন?
বাসবদত্তা—পরপুরুষের গুণকীর্তন শুনতে নেই!
চেটী—তাহলে মালা গাঁথার কাজটি তাড়াতাড়ি করে ফেলুন—
বাসবদত্তা—ফুল নিয়ে এস, গেঁথে দিচ্ছি।
চেটী—এই নিন ফুল! (হাতের ফুল ঢেলে দিল)
বাসবদত্তা—(ফুলগুলো পরীক্ষা করে) এই ওষুধটির নাম কী?
চেটী—‘অবিধবাকরণ’।
বাসবদত্তা—(স্বগত) আমার ও পদ্মাবতীর জন্য এটি বহুবার গাঁথব! (প্রকাশ্যে এটির কী নাম?
চেটী—‘সপত্নীসংহার’!
বাসবদত্তা—এটি গাঁথব না!
চেটী—কেন?
বাসবদত্তা—তাঁর ভার্যা তো মরেছে, কাজেই এর আর প্রয়োজন নেই!
(অন্য এক চেটীর প্রবেশ)
দ্বিতীয় চেটী—আর্যে, একটু তাড়াতাড়ি গাঁথুন। এয়ো-দল জামাতাকে অন্তঃপুরের চতুঃশালাতে নিয়ে যাচ্ছেন!
বাসবদত্তা—গাঁথা হয়ে গেছে। এই নাও!
চেটী—সুন্দর হয়েছে। আর্যে। আমি তবে এখন যাই।
(দুই চেটীর প্রস্থান)
বাসবদত্তা—যাক্ চলে গেছে! দুর্ভাগ্য আমার। আর্যপুত্রও আজ পরের হয়ে গেলেন।
যদি নিদ্রা হয়, শয্যাতেই আমার দুঃখ দূর করব!
[তৃতীয় অঙ্ক সমাপ্ত]