স্পাই মেয়ে – ৮

আট

১৯১৫ সনের খৃষ্টমাস্ ঈভ। আগের দিন একটি আহত বেলজিয়ান বালককে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। অতটুকু ছেলেও যে যুদ্ধে যেতে চায় দেশের ডাকে, এ দেখে গর্বে ভরে উঠেছিল আমার বুক।

ছেলেটির বাড়ী রুলার্স থেকে বেশী দূরে নয়, তাই হাসপাতালে আসা অবধি ও বায়না ধরেছিল ওর দিদিকে একবার দেখবে বলে। ওর দিদির নাম ‘ফিফাইন’। সে নাকি মোটে দু’বছরের বড় ওর থেকে। হাসপাতালে আসার পর থেকেই ফিফাইন এ বাতো, ফিফাইন ও করতো, ফিফাইন তাকে কত ভালবাসে—ওর মুখে সব সময়ই কেবল এই কথা।

আমাকে ডেকে ছেলেটি বললো—দিদিমণি! আপনি একবার বলুন না ওবার্তাজকে! আপনি বললে ওবার্তাজ নিশ্চয়ই শুনবেন। আপনি বলুন যে শুধু একটিবার আমি ফিফাইনকে দেখতে চাই।

ছেলেটির কাতর অনুরোধে অবশেষে খবর পাঠানো হলো ফিফাইনকে। ফিফাইন ওকে দেখতে আসবে! আবার ও দেখতে পাবে ফিফাইনকে—কি আনন্দ ওর তখন!

বিকেলের দিকে ফিফাইন এলো। সঙ্গে তার একজন জার্মাণ অফিসার। ভাইকে দেখে কাছে ছুটে এসে তার কপালে, মাথায়, গালে অজস্র চুমো দিতে দিতে ফিফাইন বললো—লক্ষ্মী ভাইটি আমার! এখন কেমন আছো? বেশী আঘাত লাগেনি তো?

ফিফাইনের সঙ্গের জার্মাণ অফিসারটির দিকে আড় চোখে চেয়ে ছেলেটি বললো—ও লোকটা তোমার সঙ্গে কেন? ওকে আমার সামনে থেকে চলে যেতে বলো! ও কে হয় তোমার?

লজ্জায় রাঙা হয়ে ওঠে ছেলেটির মুখ!

জার্মাণ অফিসারটি এই সময় ছেলেটির বিছানায় কাছে এগিয়ে এসে বললো—তোমার সঙ্গে আমার—মানে আমি তোমার বোনকে, অর্থাৎ আমাদের দু’জনের মধ্যে গভীর ভালবাসা–

এই বলে পকেট থেকে একখানা একশো মার্কের নোট বের করে ছেলেটার বিছানার উপরে ঝুঁকে পড়ে বললো—”আমার এই উপহার…।”

লোকটার কথা শেষ হবার আগেই ছেলেটি হঠাৎ স্প্রিংয়ের মত লাফিয়ে উঠে বসল বিছানার উপরে। চোখের পলক ফেলবারও আগে ও সেই অফিসারটির বেল্ট থেকে রিভলভারটা ছিনিয়ে নিয়ে বুকের উপরে ধরে বললো—ওরে শয়তান! ড্যাম, সোয়াইন তোকে দেখাচ্ছি মজা–

এই বলেই সে পরপর দু’বার গুলী করলো অফিসারটির বুকে।

ঘটনাটা এতই আকস্মিক যে, কেউ বাধা দেবার সময়ও পেলো না। গুলীর আওয়াজ শুনে হৈ হৈ করে ছুটে এলো গার্ডরা। একজন গার্ড রিভলভারটা কেড়ে নিল ছেলেটির হাত থেকে।

গুলী খেয়ে অফিসারটি তখন মেঝের উপরে পড়ে ছট্‌ফট্ করছিল। ক্ষতস্থান দিয়ে রক্ত পড়ে ভেসে যাচ্ছিল ঘরের মেঝে

ফিফাইন প্রথমটা হতভম্ভ হয়ে গিয়েছিল এই ব্যাপার দেখে।

একটু পরেই সে দু’হাতে মুখ ঢেকে ফুঁফিয়ে কেঁদে উঠলো।

অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা হ’ল ছেলেটিকে।

আর্দালীরা এসে সরিয়ে নিয়ে গেল আহত অফিসারটিকে। বেচারার মৃত্যুর আর বেশী দেরী ছিল না তখন।

সেই ছেলেটির কথা চিরদিন মনে থাকবে আমার। অনেকদিন পরে খবর পেয়েছিলাম যে ছেলেটিকে জার্মাণীতে চালান দেওয়া হয়েছে— হয়তো গুলী করে হত্যা করা হয়েছে ওকে।

খৃষ্টমাস্ পর্ব এসে গেল। উৎসবের আনন্দে মেতে উঠলো জার্মাণ সেনাদল। এই সময় যুদ্ধক্ষেত্রে জার্মাণদের পরপর কয়েকটা জয়ের খবর আসায় সৈন্যরা এমনই উদ্দাম হয়ে উঠলো যে আনন্দের আতিশয্যে একদিন রাইফেল থেকে বেপরোয়া গুলীবৃষ্টি শুরু করলো কেউ কেউ।

হঠাৎ বেপরোয়া গুলীর আওয়াজ শুনে ভাবলাম “বুঝিবা বিদ্রোহ আরম্ভ হয়ে গেছে, কিন্তু পরে জেনেছিলাম যে না, ওটা উৎসবের আনন্দের গুঁতো!”

এই ঘটনার দু’দিন পরেই ‘গ্যারিসন অর্ডার’ বের হলো—

“কোন উৎসবে, এমন কি বিজয়োৎসবেও গুলী বারুদ নষ্ট করা চলবে না। ভবিষ্যতে যাতে এ রকম কোন ঘটনা আর না ঘটে সে দিকে কড়া দৃষ্টি রাখতে হবে কমাণ্ডারদের। এ রকম ঘটনা ভবিষ্যতে ঘটলে বিশেষ কড়া ব্যবস্থা অবলম্বন করা হবে।”

এদিকে যখন এই রকম উৎসবের হট্টগোল চলেছে সারা সহরে, আমি তখন হাসপাতাল থেকে দু’জন ইংরাজ সৈন্যকে হল্যাণ্ড সীমান্তে পালিয়ে যাবার ব্যবস্থা করছিলাম। হাসপাতালের ইংরেজ সৈন্য দু’জনকে এই কথা জানালে ওরা তো আনন্দে একেবারে অস্থির হয়ে উঠলো। আমি তখন ক্যান্টিন মাকে বললাম যে, সে যদি লোফেম সীমান্তের কাছে কোন এজেণ্ট রাখবার ব্যবস্থা করতে পারে তা’হলে দু’জন ইংরেজ সৈন্যকে পাচার করতে পারি আমি। আমি আরও বললাম যে, সে যদি তার গাড়ীখানা নিয়ে সীমান্তের কাছাকাছি কোন জায়গায় অপেক্ষা করতে পারে তো খুব ভাল হয়, কারণ আমি তা’হলে ওদেরকে পৌঁছে দিয়ে সেই গাড়ী করেই ফিরে আসতে পারি।

পরদিন সকালেই ক্যান্টিন মা এসে জানিয়ে গেল যে সব ব্যবস্থা ঠিক হয়ে গেছে। সেই রাত্রেই কাজ হাসিল করতে হবে।

আমি তখন গোপনে দুই সুট চাষীর পোষাক জোগাড় করে ইংরেজ সৈন্যদের দিয়ে চুপি চুপি বললাম সেই পোষাক পরে রাত আটটার সময় পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে ডান দিকের রাস্তাটা ধরে পশ্চিম দিকে একটা প’ড়ো বাড়ীর সামনে হাজির হতে।

যে বাড়ীটার কথা বললাম ওদিকটায় রাতের বেলায় লোকজন বড় একটা চলাফেরা করতো না।

আমি সেখানে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলাম যে আমার আগেই ওরা এসে গেছে। আমরা তখন সবাই মিলে ঢুকে পড়লাম সেই বাড়ীটার ভেতরে।

ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে আমরা পেছনের দিকের একখানা ঘরে গিয়ে ঢুকলাম। ওখানে আলো জ্বাললে বাইরে থেকে কেউ দেখতে পাবে ভেবে টর্চ জ্বেলে দেখতে চেষ্টা করলাম বাড়ীর পেছনে কোন দরজা আছে কি না। হঠাৎ লক্ষ্য করলাম, কে যেন একরাশ খড় এনে জড়ো করে রেখেছে সেই ঘরের মধ্যে। আমরা তিনজনে তখন সেই খড়ের গাদার উপরে বসে বিশ্রাম করতে লাগলাম।

আমি ওদের জন্য দুটো পাইপ আর কিছু তামাক জোগাড় করে এনেছিলাম। অনেক দিন পরে তামাক পেয়ে আনন্দে অধীর হয়ে উঠলো ওরা। আমাকে ধন্যবাদ দিয়ে পাইপ দুটো আর তামাকের থলেটা নিয়ে মহানন্দে ধুমপান শুরু করে দিল।

আমি বললাম আর দেরী নয়, এইবার আমাদের পালাবার বন্দোবস্ত করতে হবে।

ঘর থেকে বেরিয়ে এসে সদর দরজা খুলতেই পড়ি তো একেবারে দু’জন ‘বার্লিন ভ্যাম্‌পায়ার’ এর সামনে। ওরা তখন বাড়ীটার সামনের রকে বসে সিগারেট ফুঁকছিল। দরজা খোলবার আওয়াজ পেতেই ওরা রাইফেল বাগিয়ে ধরে বললো— ‘হুকুমদার’?

সর্বনাশ! আর বুঝি রক্ষে নেই।

তাড়াতাড়ি দরজাটা বন্ধ করে আমি ওদের এক রকম টেনে নিয়ে গেলাম ভেতর দিকে। সেলারের দরজাটা যদি পাই তবেই রক্ষে! আমার মনে হলো যে সেলারে ঢোকবার দরজাটা বোধ হয় খড়ের গাদার নীচে চাপা পড়ে আছে। তাড়াতাড়ি খড় সরাতে গিয়ে আর এক বিপর্যয় ঘটে গেল। ওদের একজনের লুখ থেকে হঠাৎ তামাকের পাইপটা পড়ে গেল সেই শুকনো খড়ের উপরে। পাইপ থেকে আগুন ছিট্‌কে পরে দেখতে দেখতে আগুন লেগে গেল সেই খড়ের গাদায়।

আমরা তখন উপায়ান্তর না দেখে প্রাণপণে সেই জ্বলন্ত খড়ের গাদা সরিয়ে ফেলতে লাগলাম সবাই মিলে। উদ্দেশ্য যদি সেলারের দরজাটা পাওয়া যায়।

ভাগ্য আমাদের ভালই বলতে হবে, কারণ সেলারের দরজাটা সত্যি পেয়ে গেলাম আমরা। ঘরের মধ্যে তখন দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। আর এক মুহূর্তও দেরী না করে আমরা নেমে পড়লাম সেই অন্ধকার সেলারের ভেতরে।

নীচে নেমে দরজা বন্ধ করতেই ঘুরঘুট্টি অন্ধকার। কোন জানালা বা ফুকর কিছুই দেখা যাচ্ছিলো না। টর্চ জ্বেলে দেখতে পেলাম যে, সেলারটার মাঝখানে একটা দেয়াল তুলে পার্টিশন করা হয়েছে। দেয়ালের পাশ দিয়ে অন্য ঘরে যেতেই দেখতে পেলাম যে, উপরের দিকে একটা ছোট জানালার মত আছে সেই ঘরে!

আমি বললাম—একজনের ঘাড়ে উঠে জানালা দিয়ে মাথা গলিয়ে দেখুন তো এদিকে কেউ আছে কি না?

তাই করা হলো। ওদের মধ্যে একজন নীচু হয়ে বসতেই আর একজন তার ঘাড়ে উঠে জানালা দিয়ে বাইরে মাথা গলিয়ে এদিক ওদিক দেখে নিয়ে বললো—না কেউ নেই এদিকে।

আমরা তখন একে একে সেই জানালা দিয়ে গলে বাইরে উঠে এলাম। শেষের লোকটাকে তোলা হল হাত ধরে টেনে। আমরা তখন প্রাণপণে ছুটতে আরম্ভ করলাম বাড়ীখানাকে পেছনে রেখে।

কিছুদূর যেতেই কিন্তু বুঝতে পারলাম যে আমরা ভুল পথে চলেছি। আবার তখন ফিরতে হল আমাদের। এবার আর সোজা রাস্তা দিয়ে না গিয়ে মেটো পথ ধরলাম আমরা। মেটো পথ দিয়ে কিছু যেতেই হঠাৎ লক্ষ্য করলাম ছুটো সাইকেলের আলো আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। তাড়াতাড়ি রাস্তায় পাশের একটা গাছের আড়ালে লুকিয়ে পড়লাম। একটু পরেই দু’জন জার্মাণ মিলিটারী পুলিশ সাইকেলে করে চলে গেল।

ওরা চলে যেতেই আবার ছুট্। এই ভাবে প্রায় তিন ঘণ্টা সমানে ছুটে রাত প্রায় বারটার সময় আমরা লোফেন সীমান্তের কাছাকাছি এসে পড়লাম। হঠাৎ দূরে মোটর গাড়ীর হেড় লাইট দেখে দারুণ ঘাবড়ে গেলাম আমরা। কাছে এমন কোন জায়গা নেই যে লুকিয়ে পড়া চলে—এমন কি একটা গাছ পৰ্য্যন্ত নেই। ওদিকে হেড লাইট এর আলো ক্রমেই এগিয়ে আসছে। ভয়ে ভয়ে রাস্তা থেকে নেমে পড়লাম আমরা। রাস্তার নীচেই পচা ড্রেন। জলে আর কাদায় একেবারে ভরতি হয়েছিল সেই ড্রেনটা। আমরা তখন সটান শুয়ে পড়লাম ড্রেনের সেই কাদাজলের মধ্যেই। তুষার কণা আর কাদায় আমাদের শরীরের অর্দ্ধেকের বেশী ডুবে গেল। সেই অবস্থায় ঐ ঠাণ্ডা জলকাদার মধ্যে শুয়ে প্রতি মুহূর্তে ধরা পড়বার ভয় করতে লাগলাম আমরা, কিন্তু ভগবানের অসীম করুণা, ওরা আমাদের লক্ষ্য করলো না।

গাড়ীখানা চলে যেতেই আমরা তিনজনে কাদামাখা ভূত হয়ে উঠে পড়লাম নর্দমা থেকে। শীতে ঠক্ ঠক্ করে কাঁপছিলাম আমরা। পা যেন আর চলতে চায় না—কিন্তু উপায় নেই—আর একটু মাত্র পথ, যেমন করেই হোক যেতে আমাদের হবেই।

আরও কিছুক্ষণ চলবার পর সেই হোটেলের আলো দেখতে পেলাম আমরা। আলো দেখতে পেয়ে যেন শরীরের শক্তি ফিরে এলো আমার। আমরা তখন প্রাণপণে ছুটতে শুরু করলাম সেই আলোকশিখা লক্ষ্য করে।

হঠাৎ একটা লোককে অন্ধকারে আমাদের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে থমকে দাড়ালাম।

হায় ভগবান! শেষে কি তীরে এসে তরী ডুববে?

—কে তোমরা? সীমান্তে যাবার বন্ধু কি?

এই কথা শুনে দেহে যেন প্রাণ ফিরে এলো।

বললাম—হ্যাঁ, আমরা সীমান্ত পার হতে চাই।

লোকটি এগিয়ে এসে বলল—আমার সঙ্গে আসুন, সব ব্যবস্থাই ঠিক করা আছে।

আমি তখন ইংরেজ সৈন্যদের বললাম—এইবার তাহলে আসুন আপনারা!

ওরা দু’জনে আমার দু’খানা হাত ধরে ফেললো আবেগভরে।

একজন বললো—আপনার কথা জীবনে ভুলবো না নার্স।

আর একজন বললো—বিদায় বন্ধু বিদায়!

.

ওরা চলে গেলে আমি ক্যান্টিন মা’র সেই গাড়ীর খোঁজ করতে আরম্ভ করলাম। একট খুঁজতেই আমার পরিচিত সেই গাড়ীখানা দেখতে পেয়ে কাছে যেতেই ক্যান্টিন মা নিঃশব্দে নেমে এসে আমাকে গাড়ীতে তুলে নিয়ে শুইয়ে বস্তা চাপা দিয়ে ফেললো।

পরদিন ঠিক সময়েই আমি হাসপাতালে উপস্থিত হয়েছিলাম বটে কিন্তু আমার পায়ের তলা যেন জ্বলন্ত কয়লার মত পুড়ে যাচ্ছিলো।

ওবার্তাজ গার্ডদের যাচ্ছেতাই গালাগালি দিয়েছেন শুনলাম।

আমাকে কিন্তু কোন সন্দেহ করতে পারলো না। সন্দেহ করতে না পারলেও আমি সব সময়েই সতর্ক হয়ে রইলাম। আমার চালচলন, কথাবার্তা কিছুতেই কেউ কোন রকম সন্দেহ না করতে পারে সে দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখলাম আমি।

.

উপরোক্ত ঘটনার কিছুদিন পরের কথা। সেই দিন ছিল শনিবার। আমি একট, সকাল করেই ডিউটি থেকে ফিরেছিলাম। কি একটা কাজে কাফের পেছন দিকের বারান্দায় যেতেই কমাণ্ডার ‘ফ্যাসুজেল’ এর কথা কানে গেল। কাকে যেন জিজ্ঞাসা করছিল সে—’চার্চ প্যারেড’ কাল ক’টায় হচ্ছে?

——বেলা দশটায়!’ কে যেন বলছে শুনতে পেলাম।

আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম কথাটা শুনে। ‘চার্চ প্যারেড’ হচ্ছে! নিশ্চয় তা হলে অনেক সৈন্য জমায়েত হবে ওখানে। খবরটা যদি ঠিক সময় ‘সাত বোন’কে পৌঁছে দিতে পারা যায়!–আমি উৎকর্ণ হয়ে রইলাম।

ফ্যাসুজেল বললো—যত সব বাজে ব্যাপার! ভাবলাম রবিবার দিনটা একটু আরাম করে ঘুমানো যাবে, তা না কোথাকার এক বিশপ এলেন ধর্ম কথা শোনাতে! আরে ভাই ধর্ম কথা শুনে কি আর যুদ্ধ হয়?

অন্য লোকটাকে বলতে শোনা গেল—কাল তাহলে এখান থেকে ন’টায় রওয়ানা দিতে হবে আমাদের। ওয়েষ্ট রুজবেক পৌছাতে প্রায় ঘণ্টাখানেক লাগবে!

—তাহলে ‘ওয়েষ্ট রুজবেক’ এ হচ্ছে এই প্যারেড!

একটা খবরের মত খবর বটে! আজ রাত্রে খবরটা পাঠালে ওরা যদি কাল সকালেও সেটা পায়, তা হলে ‘সাত বোন’ এসে ঠিক কাজ করে যেতে পারবে।

রাত্রেই খবরটা পাঠিয়ে দিলাম আমি।

পরদিন সকালে হাসপাতালে যেতেই ওবার্তাজ ডেকে পাঠালেন আমাকে।

আমি যেতেই তিনি বললেন—’ওয়েষ্ট রুজবেক’এ এক বিরাট ‘চার্চ প্যারেড’ হচ্ছে দশটার সময়। তুমি এখনই রুগীদের মধ্যে যারা চলতে পারে তাদের নিয়ে এম্বুলেন্স করে সেখানে যাও।

.

একেই বলে ভাগ্যের বিড়ম্বনা। এ যে দেখছি নিজের খোঁড়া কবরে নিজেকেই গোরে যেতে হবে। ‘সাত বোনের’ বোমা আমাকেও তাহলে ভবপারে নিয়ে যাচ্ছে! বেশ তাই হোক!

বেলা ন’টার সময় আমি দু’খানা এম্বুলেন্স বোঝাই করে রুগীদের নিয়ে রওয়ানা দিলাম ওয়েষ্ট রুজবেকের দিকে।

আমি যখন চার্চের মাঠে পৌঁছলাম তখন সেখানে হাজার হাজার সৈনিক।

একটু পরেই আকাশে ঘর্ঘর শব্দ শোনা গেল। সচকিত হয়ে উপরের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম আমারই প্রেরিত খবর পেরে ‘সাত বোন’ এসে গেছে। কিন্তু আজ ওরা হয়তো আমারই যম হয়ে এসেছে!

বোমা বৃষ্টি আরম্ভ হয়ে গেল। বক্তৃতা বন্ধ হয়ে গেল।

সবাই ছুটাছুটি হুড়াহুড়ি করছে পালাবার জন্য—একটু খানি আশ্রয়ের জন্য! কিন্তু সেই খোলা মাঠে কোথায় আশ্রয়!

চীৎকারে মুহূর্তে ভয়াবহ হয়ে উঠলো চার্চ প্রাঙ্গণ। আমি এম্বুলেন্সের তলায় কানে আঙ্গুল দিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লাম। আমার ডাইনে, বামে, সামনে, পেছনে সবদিকেই তখন চলেছে অমানুষিক ধ্বংসলীলা!

চোখের সামনে মৃত্যুর সেই ভয়াবহ তাণ্ডব দেখে শিউরে উঠলাম।

‘সাত বোন’ চলে গেল। চার্চের মাঠ তখন হাজার হাজার মৃত আর আহত সৈনিকে ভরতি। দু’চারজন অফিসার যারা বেঁচে ছিল তারা তাদের __

[এই প্যারাটির বাকি অংশ মিসিং]

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *