সামনে সমুদ্র নীল – পরিচ্ছেদ ১০

১০.

পরের দিনই রাত আটটা নাগাদ মালতী দেবী স্বর্গদ্বার হোটেলে এসে পৌঁছলেন। কলকাতা থেকে প্লেনে তাকে পাঠিয়ে দিয়েছেন পুলিসের লোকই।

কিরীটী তার ঘরেই ছিল। বোধ করি মালতীর আগমনের প্রতীক্ষাতেই ছিল।

মালতী দেবী একজন সাধারণ পোশাকের পুলিস অফিসারের সঙ্গে অফিসে এসে কিরীটীর খোঁজ করতেই ভবেশ অধিকারী নিজে এসে মালতীকে কিরীটীর ঘরে পৌঁছে দিয়ে গেলেন।

এই ভদ্রমহিলা আপনার খোঁজ করছিলেন মিঃ রায়।

মালতী দেবী, আসুন আসুন–বসুন।

কি ব্যাপারমালতী বললেন, এত জরুরি তলব দিয়ে আমাকে এখানে নিয়ে এলেন কেন?

আপনার স্বামীর সন্ধান পেয়েছি—

পেয়েছেন?

হ্যাঁ।

মালতী কিছুক্ষণ অতঃপর গুম হয়ে বসে রইলেন, তারপর ক্ষীণগলায় প্রশ্ন করলেন, কোথায়

সে?

এখানেই আছেন। থানার হাজতে—

থানায়? কেন?

ওর মাথার ওপর একটা খুনের চার্জ ঝুলছে।

সে কি! কাকে আবার সে খুন করল?

অনুরাধা দেবীকে।

সে কে?

সব বলব, তার আগে কয়েকটা প্রশ্ন ছিল আপনাকে আপনার স্বামীর কি আর কোন ভাই ছিলেন?

কিরীটীর আচমকা প্রশ্নটা যেন মালতী দেবীকে একেবারে পাথরে পরিণত করে, কেমন যেন বোবা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন মালতী দেবী।

মালতী দেবী আমার প্রশ্নের জবাব দিলেন না তো!

আছে, তার এক সৎভাই—

সৎভাই!

হ্যাঁ আমার শ্বশুরের দুই বিয়ে—প্রথম যাকে বিয়ে করেছিলেন তার একটি ছেলে ছিল, তারপর তার হঠাৎ সর্পদংশনে মৃত্যু হওয়ায় দ্বিতীয়বার বিবাহ করেন, তারও একটি মাত্র ছেলে, এবং বিবাহের দুই বৎসরের মধ্যে সেই স্ত্রীরও সর্পদংশনেই মৃত্যু হয়।

দুজনারই সর্পদশংনে মৃত্যু! কিরীটী প্রশ্ন করল, আশ্চর্য তো!

এর সবটাই পরবর্তীকালে আমার স্বামীর মুখ থেকে শোনা। প্রথমবারের ছেলেকে আমার শ্বশুরমশায়ের কাছ থেকে তার দিদিমা নিয়ে যান। কখনও আর তিনি তার বাপের কাছে আসেননি। শ্বশুরমশাইও যতদিন জীবিত ছিলেন সে ছেলের আর কোন সন্ধান নেননি তিনি। সে ছেলে দেখতে কেমন, কি করতেন, এখনও বেঁচে আছেন কিনা কিছুই জানি না।

কিরীটী ধীরে ধীরে বললে, মস্ত বড় একটা জট আমার খুলে গেল মিসেস চ্যাটার্জী। আমি যেন এখন সবকিছু অনুমান করতে পারছি।

কি অনুমান করতে পারছেন কিরীটীবাবু? প্রশ্ন করলেন মালতী।

বর্তমান রহস্যের গতিবিধি। ঠিক আছে, চলুন এবারে আমার সঙ্গে।

কোথায়?

থানায়। সেখানে আপনার স্বামী ক্ষিতীন্দ্রবাবু আছেন।

মালতী যেন নেহাৎ অনিচ্ছার সঙ্গেই উঠে দাঁড়ালেন।

কিন্তু তাদের আর বেরুনো হল না।

ঝড়ের মতই থানা-অফিসার হেমন্ত সাহু এসে ঘরে ঢুকলেন।

মিঃ রায়–

কি খবর—এই যে ক্ষিতীন্দ্রবাবুর স্ত্রী মালতী দেবী জামসেদপুর থেকে এখানে এসে পৌঁছেছেন। ওঁকে নিয়ে আমি থানাতেই আপনার কাছে যাচ্ছিলাম।

ক্ষিতীন্দ্রবাবু তো নেই—শুকনো গলায় উচ্চারণ করলেন হেমন্ত সাহু।

নেই, নেই মানে কি?

থানা থেকে পালিয়েছেন!

পালিয়েছেন? কেমন করে? তাকে তো হাজতে রাখা হয়েছিল?

বেলা চারটে নাগাদ হঠাৎ উনি পেটের ব্যথায় ছটফট করতে থাকেন। ক্রমশ ব্যথা নাকি বাড়তে থাকে। আমি থানায় ছিলাম না, সন্ধ্যানাগাদ ফিরে সব শুনে সিভিল সার্জেনকে কল দিই। ডাক্তার চৌধুরী এসে হাজতঘরে ঢুকে তাকে পরীক্ষা করছেন, হঠাৎ এক লাফে আমাদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে খোলা দরজা-পথে ছুটে বের হয়ে গেলেন।

তারপর?

তারপর এই ঘণ্টাতিনেক আশেপাশে সর্বত্র খুঁজেছি—আমি নিজে ও সেপাইরা চারপাঁচজন, কিন্তু কোথাও তার সন্ধান পেলাম না—তাই হোটেলে দেখতে এলাম, আপনাকেও কথাটা জানাতে এসেছি

পাগল নাকি! পালিয়েই যদি থাকেন তো হোটেলে আসতে যাবেন কেন?

এখন বুঝতে পারছেন তো মিঃ রায়, অনুরাধা দেবীর হত্যাকারী আর কেউ নয়—ঐ ক্ষিতীন্দ্রবাবুই?

না।

এখনও বলবেন, ক্ষিতীন্দ্রবাবু অনুরাধা দেবীর হত্যাকারী নন?

হ্যাঁ, তিনি নন। কিরীটীর কণ্ঠস্বরে একটা সুস্পষ্ট দৃঢ়তা ফুটে ওঠে।

তবে তিনি পালালেন কেন?

মনে হচ্ছে মৃত্যুই তাকে টেনেছে, কি জানেন মিঃ সাহু, এইরকম কিছু যে একটা ঘটতে পারে সেটা পূর্বেই অনুমান করতে পেরেছিলাম বলেই তাকে অ্যারেস্ট করে হাজতে রাখায় কোন বাধা দিইনি—আপত্তি জানাইনি। কিন্তু ভাবছি কোথায় যেতে পারেন তিনি?

কিন্তু তিনি যদি হত্যাকারী নাই হবেন, তবে—

কিরীটী বললে, ভদ্রলোক কেবল নির্বোধ নন, প্রচণ্ড ভীতুও।

কিরীটী কথায় হেমন্ত সাহু যেন একটু বিরক্তই হলেন। বললেন, কি জানি মিঃ রায়, আপনার সঙ্গে আমি একমত হতে পারছি না। তার ঐভাবে থানার হাজতঘর থেকে পালানোটাই প্রমাণ করে দিয়েছে অনুরাধা দেবীর হত্যাকারী তিনিই। আর কেউ নয়। খুঁজে তাকে আমি বের করবই, পালাবেন কোথায় তিনি! সর্বত্র তার চেহারার একটা ডেসক্রিপশন দিয়ে ওয়ারলেসে মেসেজ পাঠিয়ে দিয়েছি। চললাম।

বের হয়ে গেলেন হেমন্ত সাহু ঘর থেকে একটু দ্রুতপদেই। আর একটু পরেই নীচে জীপের শব্দ পাওয়া গেল, বোঝা গেল, হেমন্ত সাহু প্রস্থান করলেন।

মালতী দেবী এতক্ষণ একটা কথাও বলেননি। চুপচাপ বসে সব শুনছিলেন। এবার তিনি কিরীটীকে প্রশ্ন করলেন, সত্যিই আপনার ধারণা কিরীটীবাবু, ও খুন করেনি।

তাই। ক্ষিতীন্দ্রবাবু খুন করেননি।

তবে কে খুন করল মেয়েটিকে।

দুটি হত্যাই একই সূত্রে বাঁধা, তিন বৎসর পূর্বে এই হোটেলেই জীমূতবাহনকে যে হত্যা করেছিল, তিন বৎসর পরে সেই আবার ঘটনাচক্রে অনুরাধাকেও হত্যা করেছে। কেবল দুটি ঘটনার মধ্যে অলক্ষ্যে যে যোগসূত্রটা রয়ে গিয়েছে সেটা খুঁজে বের করতে পারলেই সব কিছুর মীমাংসা হয়ে যাবে।

কিরীটীর কথাগুলো শুনে মনে হল, মালতী দেবীর মুখের ওপরে যেন একটা হতাশা ফুটে উঠেছে।

কিরীটী বললে, একটা কথা বলব মালতী দেবী, মনে কিছু করবেন না, আপনি বার বার আমাকে বলেছেন আপনার স্বামী একান্ত স্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রিক, নিজের সুবিধা ছাড়া অন্য কিছু ভাবেন না, নিজেকে ছাড়া দুনিয়ার কাউকে ভালোবাসেন না, নিঃসন্দেহে তার চরিত্রের ওটা একটা দিক, তার চরিত্রের সর্বাপেক্ষা বৈশিষ্ট্য যেটা সেটা হচ্ছে তার নির্বুদ্ধিতা। বুদ্ধি বলে কোন কিছুই তার মধ্যে নেই, একের নব্বরের নির্বোধ। তাই সর্বদা বড় বড় কথা বলে নিজের বিরাটত্ব প্রমাণ করতে গিয়ে সকলের কাছে আরও হাস্যস্পদ হয়ে যান, আর এ সব কিছুর জন্যে দায়ী আপনিই।

আমি?

তাই। সে বিরাটত্ব প্রমাণ করার জন্য তিনি বার চরম নির্বুদ্ধিতা, প্রকাশ করে এসেছেন, অন্যের কাছে হাস্যাস্পদ হয়েছেন, সে বিরাটত্ব তার ওপরে আরোপ করেছেন আপনিই, এবং কার্যক্ষেত্রে তাঁর জীবনের ব্যর্থতার জন্য আপনিও বহুলাংশে দায়ী—আর তার মধ্যেই সুপ্ত ছিল তাঁর প্রতি আপনার বিরাগ, আপনাদের পরস্পরের মধ্যে অশান্তির অঙ্কুর। আপনি যদি সত্যিকারের স্ত্রীর মত স্বামীর ঐ নির্বুদ্ধিতাকে শোধরাবার চেষ্টা করতেন, তবে হয়তো আপনাদের জীবনের আজকের ট্র্যাজেড়িটাকে এড়াতে পারতেন।

মালতী দেবী মাথা নীচু করে বসে থাকেন।

যাক, অবশ্যম্ভাবীর গতিরোধ কেউ করতে পারে না।

 কিন্তু লোকটা কোথায় গেল? ক্ষীণ স্বরে বললেন মালতী।

আমার মনে হয় এখনও তিনি পুরীতেই আছেন। আপনি কিন্তু হুট করে পুরী ছেড়ে চলে যাবেন না।

কিন্তু থাকব কোথায়?

এই হোটেলেই থাকুন, ম্যানেজারবাবুকে আমি বলে দেব।

পরের দিন প্রত্যুষে ক্ষিতীন্দ্রর মৃতদেহ পাওয়া গেল সমুদ্রের ধারে বালির উপরে, স্বর্গদ্বার থেকে মাইলখানেক দূরে, পৃষ্ঠদেশে তাঁর গুলির চিহ্ন।

বোঝা গেল কেউ তাকে পশ্চাৎ থেকে গুলি হত্যা করেছে। একদল বায়ুসেবী তরুণ মৃতদেহটা আবিষ্কার করে। এবং তারাই থানায় সংবাদ দেয়।

ক্ষিতীন্দ্রর মৃতদেহটার আইডেনটিফিকেশনের জন্য থানা থেকে ডাক এল মালতী দেবীর।

কিরীটী থানাতেই ছিল। তারই পরামর্শনুযায়ী হেমন্ত সাহু মালতী দেবীকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন হোটেল থেকে থানায়। অবিশ্যি মালতী তখনও জানেন না কেন তাকে থানায় যেতে বলা হয়েছে।

স্বভাবতই হেমন্ত সাহু বিশেষ চিন্তিত। সমস্ত ঘটনাটা যে ঐভাবে অকস্মাৎ মোড় নেবে হেমন্ত সাহুর কল্পনারও যেন বাইরে ছিল এবং উভয়ের মধ্যে ক্ষিতীন্দ্রর মৃত্যুকে নিয়েই আলোচনা চলছিল।

মৃতদেহের হাত-পাঁচেক দূরে একটা ছোট কাঁটাঝোপের মধ্যে একটা ছোট জার্মান-মেক পিস্তল পাওয়া গিয়েছিল। তার ছয়টি চেম্বারের একটি চেম্বারে গুলি নেই। পিস্তলটা খুঁজে বের করেছে একজন সেপাই।

পিস্তলটা সামনের টেবিলের ওপরেই ছিল। কিরীটী বলছিল, ঐ পিস্তলটির সাহায্যেই আপনি হত্যাকারীকে সনাক্ত করতে পারবেন মিঃ সাহু।

কেমন করে? বিরস বদনে প্রশ্ন করেন হেমন্ত সাহু।

ঐ পিস্তলে একটা নম্বর আছে—ঐ নম্বরের পিস্তলের লাইসেন্স যার নামে আছে, সেটা আলিপুরের লাইসেন্স ডিপার্টমেন্ট খুঁজলেই তো পেয়ে যাবেন।

যদি অন্য কোথাও লাইসেন্সটা করানো হয়ে থাকে?

কিরীটী বললে, না। সম্ভবত আলিপুরের কোর্টেই লাইসেন্স করানো হয়েছিল। আমার অনুমান, হত্যাকারী এবং ঐ পিস্তলের যিনি অধিকারী, ওঁর—

কিরীটীর কথা শেষ হল না, মালতী এসে ঘরে প্রবেশ করলেন।

আসুন মালতী দেবী। কিরীটী বললে।

আমাকে ডেকেছেন কেন? মালতী বললেন।

একটা মৃতদেহ সনাক্ত করবার জন্য।

মৃতদেহ! কার?

পাশের ঘরেই আছে, চলুন।

কিরীটী, হেমন্ত সাহু ও মালতী এসে পাশের ঘরে প্রবেশ করলেন।

মেঝের উপরে আগাগোড়া বস্ত্রাবৃত একটা মৃতদেহ পড়েছিল। হেমন্ত সাহুই নীচু হয়ে দেহের মুখের উপর থেকে বস্ত্রখণ্ড টেনে নিতেই মালতীর কণ্ঠ হতে একটা অস্ফুট চীৎকার নির্গত হল।

কিরীটী শান্ত গলায় মালতীর দিকে তাকিয়ে বললে, এবারে আর মিথ্যা নয়, সত্যি-সত্যিই ক্ষিতীন্দ্রবাবু এবারে তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে প্রমাণ করে গিয়েছেন তিনি আর বেঁচে নেই, সত্যি সত্যিই মারা গেছেন।

মালতী পাথরের মতই দাঁড়িয়ে থাকে।

 কি—আপনার স্বামী ক্ষিতীন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ই তো? হেমন্ত সাহু প্রশ্ন করলেন।

মালতী দেবী পূর্ববৎ পাথরের মতই দাঁড়িয়ে রইলেন।

ঐসময় একজন সেপাই এসে ঘরে প্রবেশ করল।–স্যার!

কি খবর বৈজুপ্রসাদ, সেই ভদ্রলোক কোথায়? আসেননি?

তাকে হোটেলে পাওয়া গেল না। সে কি! হোটেলেই নেই?

না! দরজার লকটা বন্ধ ছিল, ড়ুপলিকেট চাবি দিয়ে লক খুলে দেখা গেল ঘরের মধ্যে কেউ নেই—ঘর খালি।

কিরীটী বললে, মিঃ সাহু, এখনি সর্বত্র ওয়ারলেস মেসেজ পাঠান চেহারার একটা ডেসক্রিপসন দিয়ে, কুইক, আর দেরি করবেন না। প্রত্যেক স্টেশনে ভুবনেশ্বর এয়ারপোর্ট, সিকিউরিটি পুলিসকে।

হেমন্ত সাহু সঙ্গে সঙ্গে ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন।

আপনার মনের মধ্যে আজ আর কোন সন্দেহ নেই তো মিসেস চ্যাটার্জী, উনিই আপনার স্বামী ক্ষিতীন্দ্রবাবু?

মালতী মাথা তুলে কিরীটীর মুখের দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি নত করলেন।

এবার বলবেন কি, তিন বৎসর আগে যে মৃতদেহটা সনাক্ত করবার জন্য এখানে এসেছিলেন। সে মৃতদেহটা যে আপনার স্বামীর নয় তা বুঝতে পেরেও কেন আপনার স্বামীর মৃতদেহ বলেই সনাক্ত করেছিলেন?

মালতী দেবী নীরব।

একটা মিথ্যার ভিতর দিয়ে মুক্তি পেয়ে গেছেন বলেই বোধ হয়, তাই নয় কি?

মালতী পূর্ববৎ নীরব।

সেদিন যদি মিথ্যাটাকে সত্য বলে না মেনে নিতেন, তবে হয়তো আজ এমনি করে মৃত্যুবরণ করতে হত না ক্ষিতীন্দ্রবাবুকে। প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে আপনিই আপনার স্বামীর মৃত্যুর জন্য দায়ী মালতী দেবী।

মালতী তখনও নীরব।

আপনি হয়তো ছেলেমেয়ে ও অন্যান্য সকলের দিক থেকে বেঁচে গেলেন, কিন্তু নিজের মনের কাছে জবাব দেবার মত কিছুই তো রইল না। আপনার স্বামীর কোন দোষ ছিল না তা আমি বলছি না। ছিল—তার অনেক দোষ ত্রুটিই ছিল, এবং সব কিছুর উপরে ছিল তার নির্বুদ্ধিতা, তবু বলব আপনার কাছ থেকে একটু সহানুভূতি পেলে হয়তো আপনাদের দুজনারই

জীবনটা এইভাবে নষ্ট হয়ে যেত না।

কিরীটী লক্ষ্য করল, মালতী দেবীর দুচোখের কোণ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।

হেমন্ত সাহু ঘরে ঢুকলেন।

সিগন্যাল মেসেজ পাঠাবার ব্যবস্থা করে দিয়ে এলাম মিঃ রায়।

ঠিক আছে, চলুন এবারে হোটেলের দিকে যাওয়া যাক। কিরীটী বললে!

আপনি কি মনে করেন মিঃ রায়, দত্ত মজুমদার হোটেলে ফিরে আসবেন?

কিরীটী মৃদু হাসল, বললে, তার জন্য ভাববেন না। পালিয়ে আর কোথায় যাবেন দত্ত। মজুমদার, ধরা তাকে পড়তেই হবে। একবার ক্ষিতীন্দ্রবাবুর—মানে আপনাদের মৃত চন্দ্রকান্তবাবুর সুটকেসটা ভাল করে উলটে-পালটে সবকিছু দেখতে হবে।

কিরীটী উঠে দাঁড়াল। চলুন মালতী দেবী।

কোথায়?

হোটেলে।

কেন?

ডেড বডির ময়নাতদন্ত না হওয়া পর্যন্ত আর ডেড বডি পাচ্ছেন না। পেতে পেতে হয়তো কাল পরশু–

আমি কিন্তু আজই ফিরে যেতে চাই, অবশ্যই আপনাদের অনুমতি পেলে–মালতী বললেন।

স্বামীর মৃতদেহের সক্কার না করেই চলে যাবেন?

মালতী মাথা নিচু করলেন।

ভদ্রলোক সত্যিই হতভাগ্য, ছোটবেলায় মাকে হারিয়েছেন, বাপের স্নেহ কোন দিন পাননি, আপনিও সারাটা জীবন বিমুখ হয়ে ছিলেন, অন্তত শেষ কাজটুকু করুন। পরলোক বলে যদি কিছু থাকে তো, হয়তো একটু শান্তি পাবেন।