সাঁওতালি ভাষায় সাহিত্য চর্চা

সাঁওতালি ভাষায় সাহিত্য চর্চা

সাহিত্যের ভাষায় এবং মুখের ভাষায় সামান্য পার্থক্য থাকে। এই পার্থক্য ইংরাজীতে আছে বাংলায়ও আছে, কিন্তু সাঁওতালি ভাষায় এই পার্থক্য নাই। তবে ইদানীং দু একজন ক অক্ষর গোমাংস, গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল এই পার্থক্য তৈরি করার জন্য, প্রমাণ করার জন্য আদা জল খেয়ে নেমে পড়েছেন। গান, ছড়া, লোকগাথা এবং কাহিনী ইত্যাদি যদি সাহিত্যের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয় তবে একথা স্বীকার করতেই হবে যে, সাঁওতালি ভাষায় সাহিত্য চর্চা আদিকাল থেকেই চলে আসছে, তবে লিখিত ভাবে সাঁওতালি ভাষায় সাহিত্য চর্চা খুব বেশি দিনের নয়। লিখিতভাবে সাঁওতালি ভাষায় সাহিত্য চর্চায় বেনাগাড়িয়া ব্যাপটিস্ট মিশনের অবদান অপরিসীম এবং এই ব্যাপটিস্ট মিশনেই লিখিতভাবে সাহিত্য চর্চার পথিকৃত। সাঁওতালি ভাষায় সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে P.O. Bodding এবং Andrew Campbell এর নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হবে। তাঁরা উভয়েই বহু পরিশ্রম করে সাঁওতালদের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বহু গান, ছড়া, লোকগাথা, কাহিনী, ধাঁধা ইত্যাদি সংগ্রহ করে লিপিবদ্ধ করে গেছেন। স্বাধীনতার উত্তরপর্বে সাঁওতালি ভাষার সাহিত্যাকাশে একঝাঁক সাহিত্যিকের আবির্ভাব ঘটে, যার কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন ড: ডমন সাহু ‘সমীর’। Wordsworth কে কেন্দ্র করে ইংরেজী সাহিত্যে যেমন একঝাঁক নক্ষত্রের আবির্ভাব ঘটেছিল ডমন সাহুকে কেন্দ্র করেও অনুরূপ একঝাঁক নক্ষত্র সাঁওতালি ভাষার সাহিত্যক্ষেত্রে আত্মপ্রকাশ করে। তাদের রচনা ঋজু এবং সাবলীল। আবহমান কাল ধরে বেয়ে চলা নদীর ফল্গুধারার মত সদাই গতিশীল। তাদের সবার রচনাকে এখানে ঠাঁই দেওয়া সম্ভব নয়। আমি কেবল তাঁদের যোগ্য উত্তরসুরী আধুনিক যুগের দুজন অমর কথাশিল্পীর বিরাট কর্মকাণ্ডের একটা ভগ্নাংশ মাত্র তুলে ধরছি। প্রথমে রূপচাঁদ হেম্ভ্রমের কথা উল্লেখ করে পরে সোনা হেম্ভ্রমের কথায় আসছি। রূপচাঁদ হেম সাঁওতালি ভাষার একজন স্বনামধন্য কথা শিল্পী হিসেবে সুপরিচিত কিন্তু গদ্যের মত পদ্যেও যে তিনি সমান স্বচ্ছন্দ, নিম্নলিখিত রচনা তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ

পারগানা’

(পরগণার শাসনকর্তা)

রায়বার ইনাবার ঢেঁশকেদায় গুরুবার
অনারেয়াঃক দরবার তায়মতেদ ছারখার
নডেচং, হাঁডেচং, ইঞচং, হানিচং,
অজহাকোওয়াঃক কাথাতে হেঁচং, বাংচং
গড়মবা খুটরে অডকএন খুশিদ
হেঁ রেহঁ, বাংরেই নেহড়গে দুশিদ।
সুনুমরে সাকামরে খাড়িরে সিনাম
অজহাকোকো জ্ঞামকেদা ইঞাঃকগে মুঠান।
কামিরে, কুড়াইরে, স্যে সিঞরে, ঞিদারে,
কিষাঁড় বঙ্গা জানিচ জাঁপাড়েন ইঞরে
বাংইঞ রেবেনরে বতএচন জানঠেন,
নঙ্কাগে আরিচালি অকয় চেৎ এয় মেন।

উনখন বাপধন মন ইঞাঃক ভাঙ্গিয়েন
বারবেড়া সোরপেড়া মানেতেক সাগিঞএন।
নাওয়া পেড়া কুশিকাতে আকতেক লাহালেন,
সুনুম ঠগা সাকাম বঙ্গা বতরতেক সাহায়েন
ইঞ মাহো গুনী গরীব ঞৎগিঞ বেঁগেৎ কেৎ,
বাঞ বাড়ায় সমাজ গাড়ায় বুহেলিঞ অকাসেৎ?

আপেগেহো দিহরি মা মাজহি পারগানা
সমাজ বেয়াঃক আরি মা আপে তিরে মেনাঃক।
অনাহঁ দহায় বাতে হাপড়াম ধরম,
ওড়গো পোড়গোপে কাড়গো পারম।
বাংখান চেদাঃক তেহেঞ জাজিলমান আরি।
সারিয়ান এড়ে কাতে এড়েয়াঃকপে সারি।

বাড়িচলেন রেপে দুসাও হাপড়াম লেঠা,
নাপায়ঃকরেদ আপে কড়ামপে চেটাগ।
আরিরেপে জারিয়েদা বডে রাজআরি,
আতোরেপে সিরজাওএদা বয়হা খাপারি।
বাংপে লুতুরাঃকহো নে হড়াঃক এগের,
সমাজরে লাদেঃক কানা হামাল গেমের।

থুকুম হো পারগানা মা পেড়াদ ঞামকম
সারজম, মাতকম, বাচকম, পারকম,
তালে খিজুর আর কিতা পাটিয়া
হাঁড়ি ঞু লাগিৎ চুঁকডুচ টাটিয়া।
বানিজ দহ মেনাঃক পেড়া দারাম
সমাজরে সাগুন ইতা আমগে এরাম।

বায়বার সেইবার
বিধান দিল বেশপতিবার।
সেই নিয়ে দরবার
তারপরেই সব ছারখার।।
এখানে, ওখানে অথবা
আমি সে যেই হউক
ওঝাদের কারসাজিতেই
হোক চাই, না হউক।।
পিতামহর সাতকুলে
দেখা দিল খুঁতযে।
সত্য হউক, মিথ্যা হউক।
নিজেই ত দোষী যে।।

শুকনো পাতায় তেল পড়া
ওঝা দিল রায়।
অপরাধী তুমি নিজে
অন্য কেহ নয়।।
দিবারাত্র অহর্নিশ
কাজে কিম্বা ভোজে।
লক্ষী (দেব) দেবীর আর্শিবাদ
তুমি লভিয়াছ।।
গররাজী হচ্ছি দেখে
জান দুয়ারে ছুট দিল।
এটাই রীতি নীতি
আমায় মেনে নিতেই হল।।

সেই থেকে মন আমার
ভেঙ্গে গেল বাপধন।
খবর শুনে কেটে পড়ল
আত্মীয় স্বজন।।
নতুন নতুন আত্মীয় জন
যাদের ছিল মন।
বঙ্গা সংবাদ শুনতে পেয়েই
ভঙ্গ দিল রণ।।
গরীব আমি দুঃখে আমার
চোখে সর্ষে ফুল দেখি।
কে জানে কোন অতল তলে
তলিয়ে আমি যাবো কি?
ন্যায়ালয়ের ন্যায়মূর্তি
তোমরা সমাজপতি।

ন্যায় অন্যায় নির্ধারণের
ভার তোমারে হাতই।।
কিন্তু কেন অতীত দিনের
ধর্ম দোহাই দিয়ে।
নিজের গড়া নিয়ম ভাঙ্গো
বলতে পার কি হে?
তা না হলে আজ কেন ঐ
শক্তিশালী মত, প্রথা
মিথ্যা কেন সত্য
আবার সত্য কেন হয় মিথ্যা?

খারাপ কিছু ঘটলে পরে
দুষ বিধির বিধান দান।
ভাল কিছুর আবির্ভাবে
ম্লান কেন হয় অম্লান?
নীতি কথার নামে কেন
জারি কর দুর্নীতি।
ভাই এর সঙ্গে ঠাঁই কেন নয়
কেন কর রাজনীতি?
করলে পালন সুবোধ বালক
অন্যথায় জোটে লাঞ্ছনা।।

পারগানার শ্রীচরণে
নিবেদন ইতি।
শুভস্য শীঘ্রম তব
করি মিনতি।।
চর্ব্য চুষ্য লেহ্য পেয়র
আয়োজন মেলা।
দিয়ে মনে অন্বেষণ
কর এই বেলা।।
পার যদি ক্ষমা কর
তব নিজ গুণে।
অধমের ইত্যকার
আবেদন শুনে।।

উপরে উল্লেখিত রচনাটি রূপচাঁদ হেম্ব্রমের দলবৃত্ত ছন্দের একটি অনবদ্য রচনা। সাঁওতালি থেকে বাংলায় তর্জমা আমার নিজের। সাঁওতালি ভাষায় আমি বেশ দুর্বল, তার উপর আবার কবিতার অনুবাদ! তাই আমার মনে হয় অনুবাদে কবিতার যথার্থ প্রতিফলন ঘটেছে কিনা আমার সন্দেহ আছে। ঘটকালি করাকে সাঁওতালি ভাষায় বলে ‘রায়বার’। কবিতাটির নামকরণ পারগানা হলেও ঘটকালি নিয়েই বিভ্রান্তির সূত্রপাত। হিন্দুদের কাছে ঘটকালি পেশা হিসাবে গণ্য। কিন্তু সাঁওতালদের কাছে মোটেই তা নয়। রায়বার সম্বন্ধে কবি রূপচাঁদ হেম্ভ্রমের উপলব্ধি রায়বার সৃষ্টির কারিগর, নবজীবনের প্রতীক, ভবিষ্যতের দূত। সে কথাই পারগানা কবিতায় আনুপূর্বিক বর্ণিত হয়েছে। এই উপলব্ধিই পারগানা কবিতার বড় পাওনা।

এখন সোনা হেম্ব্রমের কথায় আসছি।

‘ধন তাঁহেনতে নাচার‘

গিদরা বাসিয়াম। জিনতি পিপিড় জিউঈয়ান সানামকগে আপান আপিন জিয়ন বাঞ্চাও লাড়াহাইরে করিঘাম। বাস গাড়ীরে তোবেতআতে হড়। গাড়ী তা পিসতেয় ঞিরাঃক কানা। যুদা জায়গারেন যুদাওয়ান হড় অকয় অকাচক সেনঃক আপড়েগেক বাড়ায়া। হড়মরে হয়গে বাং লাগাঃক কানা। ধারতীরে হয় মুচাৎ হিজুঃক কান লেকা। গাড়ী ভিতার এলাং আঁগরা সেঁগেল মেনাঃক সিক। হড়ময় ভাপাও এদা। ভাপা উদগার লল। সেরমা মেদাঃক বায় জরঅ আকাদা। ধারতী আকাব সাকাব। মনে হুয়ুঃক কানা ধারতী চেতান সেঁঙ্গেল আরেল জাড়িতে ধারতী মানওয়াদয় গচ মারাও কওয়া। কুঞ, টিউবওয়েল/ঢেংকচ রেয়াঃক দাঃক সোত সাহারদ লাতার আকান। বাসরেন সানামকগে উদগারতে বরাম। অকয়দ তিরেয়াঃক উদুঃক কাটুপতে খান অকয়দ উরমালতে স্যে আরই আঁগরপ রেয়াঃক তি দাবি লুগড়িচতে মলং মুখানবেয়াঃক উদগার দাঃকক জদেৎ তাকাওয়া। ভীড় খাতির অকয়দ মেৎ মুখানরে তিগে বাকো ইদি দাড়েয়াঃক কানা। অনকান হড়াঃক মলং মুখান করেদ সেতাঃক শিশির দাঃক লেকা উদ্‌গার টলমলঃক কানা। যাকে যেমনাঃক মচা করে রেহডা হাসা রাহামগে লেকা উদগার লুটি চেতানতে সড়অ বলঃক কানা

কুঠিন ঠেলাও ঠেপেলাও। গাড়ী তিনাঃকএ ঞিরাঃক কানা বেরহ উনাঃকগে ঠিক তিকিন স্যেচত্র মহড়া আকানা হেপরাওঃক কান লেকাকিন। হেঁ এন্তে থিরদ অকয়ে তাঁহেনা? জিউঈ বহেজঃকগে ধরম। বেড়হায় রেয়াঃক ধরম লেকাতে সানামাঃকগে চালাওঃক কানা খাসাওঃক কানা। আর অনাতে নাসেরেহঁ আরু ফেরাঃক কানা। নওয়া আরু ফেরাওগে সভ্যতা।

গাড়ী ধামপড় গদঃকরে হড়ম রেয়াঃক বজ হামাল ঠিক দহয়রে অকা অক্তদ এটাঃক হড়মরে টেহাড পাড়াঃকআ।

কুড়ি হপন বিদালরেই অনকাগে। মেনখান কড়া কুড়ি খানগে সাম্বাড়ও আরহ। চেদাঃক সো কড়া কুড়ি হড়ম ভিড়াও লেনখান তার রেয়াঃক Negative Positive যে লেকা অনকাগে হোয় বাড়িজঃকআ।

মলং মুখান রেয়াঃক উদার দাবিতে জৎ এনাঞ চিঁকাড় মলং—দুডুপ জায়গাহঞ জ্ঞামকেদা। মিৎ ঘাড়ি তায়ম ইঞাঃক লুতুর সোররে অকয় চয় রড় কেদা, স্যার আপনি? এই বাসে, ভাল আছেন ত? বহঃক তুল কাতিঞ ঞেলেয়াদ মিৎ সান্তাড় হড়। উপরুম গেয়ালিঞ, মেনখান সতাসংদ বাং। তাঁহেন আর চাকরী কামিহঁ তালিঞ হাঁড়ে নাডে আদ, কবিগুরু সাধু রামচাঁদ মুরমু আঃক কাথাশিক :

দেশ দিশম কুড়ি কড়া,
আদিবাসী যতগে পেড়া।
যাঁহাতিস, যাঁহারে সাগিজ্ঞ হর জ্ঞাপাম।
রাসকা, রপড়াব দুকব রাম।।

হোই অনকাগে, অকয় অকারেন কানালিঞ—আদিবাসী হতেচতে উপরুম। যাঁহাতিস জ্ঞাপামঃকরে রড় রপড়তালিঞ। লেঁগা তারেনরে মিটাং লুগড়িচ রেয়াঃক থুলয়াংক। হামালগে। হোই চেৎ চং যাঁহানাঃক পুথি পতব গেচং অনাদ আয় উমানাঃকগে। আদ অনকান এতুমান হড়ঠেনদ অনকানাঃক বেগর চেৎ তাঁহেনা, ‘নঙ্কাগে আপিস বাবুহঁ কানায়।

হাহাড়াঃক এনাঞ সান্তাড় হড় দিকু পারশিতে চাঃকএ কুকলিঞ কানা? মিৎ ঘাড়ি আয় উমান রেয়াঃক কুরুমুটু কেদাঞ। উনাঃক হড় গাদাল তালারে হড়তে রড়দ পালেনে লাজাঃক কানা। পালেকো বাড়ায় বতেচকেয়া উনিদ সান্তাড় হড় মেন্তে। আদ বাম রড় রেহঁ মহড়া রেগেম বাড়ায় অচঃক কানদ। হেঁ চং আচ সাঁওতে দিকু পুষি গাতেক তাঁহে কানা স্যে বাং অনাদ হাঁঃক অহঞ মেন দাড়ে কেয়া। মেনখান দিনাম হিজুঃক সেনঃক মিৎ বার কড়া কুড়ি সাঁও উপরুমদ তাঁহে দাড়েয়াঃক গেয়া।

উপরুমদ চেচং মেনাঃকআ, মেনখান উনাঃক তুম পারিশ হাবিচদ বাং– এনে মেৎ ঞেপেল উপরুম। দিকু পুষি কঠেনদ যাঁহাঃকগে মেনখান হড় হপনঠেন আডিগে এতুমান, জাতি সমাজ দরদিয়া। দিনাম লেকাগে উনিঠেনদ অনলিয়া, অনড়ইিয়াকো হেচ বাড়াঃকআ। তুমান হড় হতেচতে এটাঃক পারসিরেন খবরিয়া কহঁ উনিয়াঃক Interview ক হাতাও বাড়ায়া। ইঞদ এন্তে আলগেল হড়। সাহিত্যরেয়াঃক উনাঃক চেহঁ বাঞ বুঝাওয়া, মেনেখান নওয়াঞ বুঝাওয়া বলে আপনারাঃ জানাম পারশি তাঁহেনতে এটাঃক জাতাঃক পারশিতে রড়তেদ সাবাসি ক রেয়াঃকদ চেৎ বানুঃকআ। পারসি মান মহহঁ বাং রাকাপ বদলতে নিকমঃকআ। আর নঙ্কা কাতেগে জানাম রড় আড়াং আদঃকআ। অনে নাহাঃকমা অকয়কদ হড় সেবেঞ ক্যাসেটক অডক এদা, যাঁহা ক্যাসেট করেনাঃক রু, রাড়কদ হড় হপনাঃক সেরেঞ রু, রাড় সালাঃকদ বাং জুরীঃক কানা। অনাকরেদ লাড়ে লাপ্পা হিন্দি সেরেঞ রু রাড় রেয়াঃক হাওভাব মেনাঃক আ। নওয়া বেগর সমাজ সেরওয়া রড় সাগাই হিড়িঞ বাগি কাতে আপনার কুশিতে রড় সাগাই চল লেখান সেরওয়া সাগাই ঘাওদ দারদারাঃক গেয়া। আদ নঙ্কান হড়কদ জাত তাম ধরম তাম লংক তাম ঠুঃকতাম বাংক বাড়ায়া চাই মানিমান।

হড়তেগে ররড় সানাকিদিঞা। মেনখান উনিয়াঃক মান দহয় লাগিৎ দিকু তেগেঞ রড় আদেয়া। মনেদ বাং ভারতিঃক কানা বাঞ কুশিঃক কান গেয়া। হুদিশেৎ কানাঞ জানাম রড়তে রড়দ ‘জুদা গেয়া’, নওয়াহঁ মনেরে উক বুকাও এনা ‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে, তব ঘৃণা তারে যেন তৃনসম দহে’, এনখান ইঞহঁ অনা থকরেনগিঞ হুয় এনদ।

মাড়াং রেগিঞ মেন আকাদা, ইঞদ আলগেল মিৎ হড়। অনলিয়া অনড়হিয়া, সাসাপড়াওগমকে, সুসারিয়া পঁড়েত হড়ক লেকা এতুমান হড়দঞ বাং কানা অনাতে যে হিসাবতে স্যার মেন কাতে দিকুতেয় রড় আদিঞ ইঞņ বাঞ কুশি সাত লেনা। দমে তেৎগিঞ লাজাও পাড়াও এনা। ‘স্যার’ ইঞঠেনদ কিরিঞতে জ্ঞামঃক গোবর গ্যাস সারগিঞ মনেকেদা। চেদাঃকস্যে Sir মেন হচঃক হহ হচঃক হড়মাঞ বাং কান, অনাতে অপমান কিদিঞ লেকাঞ আটকার কেদা, আর যাঁহায় স্যার মেনলেক কানাক, অনা রড় রাহা আড়াংদ যুদা গেয়া।

বাঞ বুঝাও দাড়েয়াঃক কানা যে, নঙ্কান এতুমান হড়। যাঁহায় চেতানরেদ সাত্তাড়ী সাহিত্য তরাও রাকাপ ভারিয়া মেনাঃক আকাদা উনিদ হড় তুলুচ হড়তে চেদাঃক বাংএ রড়া? নঙ্কান হড় আতে খাঁটি সাহিত্য পারশি সেওয়া গানঃকতে?

এটাঃক পারশিতেয় রড়েততে থড়া হড়দক সাবাসি দাড়ে আয়া। আর আয়মা সাত্তাড় বেগরহঁ এটাঃক পারশিরেন হড়দ লেলহা মুরুখ হড়ক মেতায়া। আদ এনখান মেন বাং খানদক চেদাক স্যে অকা যুগরেন মানওয়া ‘মাতৃভাষাই মাতৃদুগ্ধক’ মেনে‍ কানা অনা যুগ পিড়হিরেন অলঃক পাড়হাঃক বাড়ায়ান হড় সাত্তাড়কদ এটাঃক পারশিতেয় ররড় কানা। মাসে অকা লেকা হদিশ?

আদ হাঁঃক নঙ্কান হড়গে লাটু লাটু কথাক রড়া, জাত সমাজ চেতান দরদক উদুগা। এহো নওয়াকদ ঝত এড়ে ভড়ং কানা। বহঃকরে নওয়াব গুরলাউ সাঁওতে বহঃক ললয়েনতিজ্ঞা। উনি স্যেচ কয়ঃক কাতে রাগাৎ আড়াংতিঞ মেন কেদা, হড়দবন চাবা হেচ আকানা, অনাহঁ আব তেগে। মেনখান ইঞ বাং উরুমিঞ লেকা চেৎগে বাংএ রড় রুওয়াড় লেদা। সোর সোপোর তাঁহে কাতেহঁ আডি সাগিঞ রেগে মেনাঃকলিঞা আটকার কেদাঞ।

বাড়ায়কিদাঞ ধন তাঁহেনতে নাচার আকানাবন নঙ্কান হড় খাতিরগে।

সব থেকেও কিছু নেই’

সবে বাচ্চাদের জল খাবারের সময় হয়েছে। পৃথিবীর বড় থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর জীব জীবন সংগ্রামে নাজেহাল হয়ে উঠেছে। বাসে উপচে পড়া ভীড়। গাড়ী ছুটছে ত ছুটছেই। বিভিন্ন জায়গার বিভিন্ন প্রকৃতির মানুষ বিভিন্ন অভিমুখে যাত্রা করেছে। কে জানে কোথায় যাচ্ছে? গায়ে এতটুকু হাওয়া লাগেনা। মনে হয় পৃথিবীর সব হাওয়া, হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। বাসের ভেতর অসহ্য গরম। মনে হচ্ছে যেন কে বা কারা বাসের ভেতরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। গরমে শরীর ঝলসে উঠছে। গরম, ঘাম, দাবদাহ। আকাশে বৃষ্টির ফোঁটার দেখা নাই। পৃথিবীর বুক ধড়ফড় করে। রৌদ্রের তেজ দেখে মনে হচ্ছে আগুনের গোলা দিয়ে পৃথিবীর সব মানুষকেই মেরে ফেলবার চক্রান্ত হচ্ছে। নদী নালা, খাল বিল, কুয়ো, পাতকুয়ো মায় টিউবওয়েলের জল পর্যন্ত তলানিতে এসে ঠেকেছে।

বাস যাত্রীদের সবারই, শরীরের সবটাই ঘামে ভেজা। তাদের কেউ কেউ হাত দিয়ে ত, কেউ রুমাল দিয়ে আবার কেউ জামার হাতা দিয়ে ঘামের জল মুচছে। আবার অনেকেই ভীড়ের ঠেলায় হাতই সোজা করতে পারছে না। সকালে সূর্যের আলোয় শিশিরের বিন্দু যেমন টলমল করে ওঠে তাদের কপাল এবং মুখের ঘামের বিন্দুও তেমনি টলমল করে উঠছে। কারো কারো আবার বিন্দু বিন্দু ঘাম কপাল থেকে নাক চোখ বেয়ে সোজা মুখে এসে ঢুকছে, যার স্বাদ নুন গোলা জলের মত নোনতা।

প্রচণ্ড ভীড়ে একে অপরের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি লেগে যাচ্ছে। ওদিকে মহাকাশে সূয্যি মামা আবার বাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাঝ আকাশের দিকে দৌড়াচ্ছে। সত্যিই তো চুপ করে কেই বা আর থাকবে? এগিয়ে যাওয়াই ত প্রকৃতির ধর্ম। প্রকৃতির নিয়ম অনুসারেই সবাই, সব কিছুই চলছে আবার খসেও পড়ছে। এর ফলেই পরিবর্তিত হচ্ছে, আর এই পরিবর্তনের নামই তো সভ্যতা।

ব্রেক কসবার ফলে গাড়ি দুলে উঠছে ফলে গাড়ি ভর্তি মানুষ এ, ওর গায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে।

মেয়েদের ক্ষেত্রেও তাই। তবে ছেলেমেয়ে এক সঙ্গে হুমড়ি খেয়ে পড়লেই অসুবিধা। কারণ বিদ্যুৎ বাহিত তারের মত Negative Positive এক হবার ভয় থাকে।

চোখ মুখের ঘাম হাতের তালু দিয়ে নয় বাহু দিয়ে মুছে ফেললাম। ইতিমধ্যে বসবার জায়গাও পেয়ে গেলাম। কিয়ৎক্ষণ পরেই কে যেন পেছন থেকে আমার কানের কাছে মুখ এনে বিড় বিড় করে উঠল, স্যার, আপনি এই বাসে? ভালো আছেন তো? চোখ কপালে তুলে পেছন ফিরে তাকাতেই দেখি আমারই স্বজাতি, একজন সাঁওতাল! পরিচয় আছে বটে তবে একসঙ্গে যাওয়া আসা নেই। চাকরি এবং বাসা বাড়িও তাই। কিন্তু ঐ যে, কবিগুরু সাঁধুরাম চাঁদ মুরমু বলেছেন :

বিদেশ বিভুঁয়ে যদি
কোনোদিন কোথাও,
হয় দেখা সাক্ষাৎ
আমাদের হঠাৎ।
আদিবাসী নরুনারী
নিকট কি দূরের
মনখুলে কথা বলে
দুঃখ ঘুচাব।।

আমাদের অবস্থাও তাই। কে কোথাকার জানি না। কেবল আদিবাসী বলেই চেনাজানা। কোনোদিন কোথাও দেখা হলেই কথা বলি। বাঁ কাঁধে একটা শান্তিনিকেতনী কাপড়ের থলে। দেখে মনে হয় বেশ ভারি। বোধহয় বইটই হবে। ঐ রকম নাম ডাকওয়ালা লোকের সঙ্গে বই ছাড়া আর কিই বা থাকবে? লেখাজোখা ছাড়াও অফিসে কাজ করে।

সাঁওতাল হয়ে বাংলায় কথা বলতে দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ভাবতে লাগলাম এত লোকের সামনে মাতৃভাষায় কথা বলতে বোধহয় লজ্জা পাচ্ছে, যদি কেউ জানতে পারে যে, সে সাঁওতাল সম্প্রদায় ভুক্ত। কিন্তু চেহারা দেখেই ত লোকে তাকে চিনে নিয়েছে যে সে সাঁওতাল বলে। সঙ্গে তার পরিচিত কেউ আছে কিনা সেই জানে। নিত্যদিন যাতায়াতের ফলে পরিচয় হতেই পারে।

পরিচয় হয়ত আছেই তবে ঘনিষ্ট পরিচয় বোধহয় নাই। ভিন জাতীয়দের কাছে সে যাই হউক নিজের লোকজনের কাছে সে স্বজাতি এবং স্বীয় সমাজ দরদি হিসাবে প্রচণ্ড রকমের নামকরা। তাঁর সঙ্গে কবি সাহিত্যিকদের অন্তরঙ্গ পরিচয় এবং নিত্য যাতায়াত আছে। বিখ্যাত হবার জন্যই অন্য ভাষার সাংবাদিকরাও তার Interview নিয়ে থাকে। অন্যদিকে আমি একজন হাবাগোবা লোক। সাহিত্যের অতকিছু বুঝিনা, তবে এটুকু বুঝি যে, নিজের মাতৃভাষাকে বাদ দিয়ে অন্য ভাষায় কথা বলার মধ্যে বাহাদুরি কিছুই নাই। তাতে ভাষার মর্যাদা ত বাড়েই না বরং খাটো হয়, এবং এইভাবে মাতৃভাষা হারিয়ে যায়, লুপ্ত হয়। অনেকেই এখন সাঁওতালি গানের ক্যাসেট তৈরি করছে। কিন্তু সাঁওতালি গানের সঙ্গে ক্যাসেটের তাল, লয়, ছন্দের মিল নাই। ক্যাসেটের কলের গান লাড়ে লাপ্পা হিন্দি গানের হুবহু অনুকরণ। এই রকম ভাবে নিজের Tradional এবং ঐতিহ্যমণ্ডিত সংস্কৃতি ভাষা এবং সাহিত্যের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে অন্যের সৃষ্টিকে আপন করে নিলে সমাজ জীবনে ঘুণ ধরতে বাধ্য। এই সব লোকের কাছে ঐতিহ্যমণ্ডিত এবং Tradional সমাজ সংস্কৃতি, গোল্লায় গেলেও কিছুই যায় আসেনা। এদের চাই মান সম্মান তা সে যে কোন মূল্যের বিনিময়েই হউক।

মাতৃভাষা সাঁওতালিতেই জবাব দেব বলে ঠিক করেছিলাম কিন্তু পাছে তার সুনাম হানি হয় তাই বাধ্য হয়ে বাংলায় উত্তর দিলাম, কিন্তু মনের ভেতরটা ছ্যাঁক করে উঠল, এই কথা ভেবে যে ‘মাতৃভাষাই মাতৃদুগ্ধ’, ‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে তব ঘৃণা তারে যেন তৃণ সম দহে’ কথাটা মনে হতেই মনটা ছটপট করতে লাগল। অন্যায় কারীকে অন্যায় কাজে মদত দিয়ে নিজেও ত অন্যায় দোষে দুষ্ট হয়ে পড়লাম।

আগেই বলেছি আমি লেখক, সাহিত্যিক, কবি, সংবাদপত্রের সম্পাদক কিম্বা সমাজ সেবীদের মতন পণ্ডিত ব্যক্তি নই। আমি নেহাতই হাবাগোবা। তাই ‘স্যার’ ডাক শুনে বেজায় লজ্জিত হলাম। ‘স্যার’ আমার কাছে হাটে বাজারে কেনা সার বলেই মনে হল। কারন ‘Sir’ সম্বোধনের উপযুক্ত আমি মোটেই নই। তাই স্যার বলে আমাকে অপমানিত করা হল বলেই আমার মনে হল। তাছাড়া যারা স্যারের উপযুক্ত তাদের সম্বোধনের বাকভঙ্গিই আলাদা।

আমি বুঝতে পারছি না, এমন নামকরা লোক, যার কাধে সাঁওতালি ভাষায় সাহিত্য চর্চার গুরুভার অর্পিত হয়েছে সে কি করে মাতৃভাষাকে অবহেলা করে একজন সাঁওতালের সঙ্গে অন্য ভাষায় কথা বলে? এই ভাবে কি সাঁওতালি ভাষা সাহিত্যের উন্নতি হবে?

মাতৃভাষাকে অবহেলা করতে দেখে কেউ কেউ তার পিঠ চাপড়ে দিতেই পারে কিন্তু অনেকেই তাকে ক অক্ষর গোমাংস বলবে। আর বলবে নাই বা কেন বলুন ত? এখন ত মাতৃভাষাই মাতৃদুগ্ধের যুগ। সেই যুগের একজন লোক হয়ে তিনি মাতৃভাষাকেই অবহেলা করছেন। ভাবুন, তার বিচার বুদ্ধি কেমন?

এরাই আবার স্বজাতির প্রতি দরদ দেখিয়ে সমাজসেবী বলে পরিচয় দিয়ে লম্বা চওড়া ভাষণ দেবে। ওহে এরা সব কালকা যোগী, বকধার্মিক। এসব কথা ভাবতে ভাবতেই মাথায় খুন চেপে গেল। তার দিকে পিছন ফিরে রাগে গরগর করতে করতে বললাম, আমরা শেষ হয়ে এসেছি, তাও আবার নিজেদের দোষেই। কিন্তু সে আমাকে না চেনার ভান করে আমার কথার কোন উত্তরই দিল না। এত কাছে অথচ মনে হল আমরা অনেক অ-নে-ক দূরে।

তখন বুঝলাম এদের জন্যই আমাদের সব থেকেও কিছু নেই। (বাংলায় রূপান্তর আমার নিজের)

আলোচ্য ‘ধন তাঁহেন তে নাচার’ রচনায় লেখকের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা যে কত নিখুঁত ক্ষুদ্র পরিসরে তা সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে। তাই রচনাটিকে অসাধারণ বললেও কম বলা হয়। সাহিত্যিক সমাজের কাছে দায়বদ্ধ। তিনি কিছু পাবার আশায় অথবা কোনো কিছুর বিনিময়ে লেখেন না। লেখেন তাঁর দায়বদ্ধতা থেকে। তাই তাঁকে হতে হয় আপোসহীন। আলোচ্য প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক এক কঠিন কঠোর বাস্তব সত্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এই বাস্তব সত্য হচ্ছে মাতৃভাষার প্রতি অবহেলা। এটা কারো ব্যক্তিগত সমস্যা নয় সামাজিক সমস্যা। এই সমস্যার শিকড় যে কত গভীরে প্রোথিত সেটা বোঝা যায় যখন দেখি অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামে যার নেতৃত্ব দেওয়ার কথা সে নিজেই অবক্ষয়ের শিকার। অবক্ষয়ে আক্রান্ত হয়ে নিজের আসল পরিচয়কে চাপা দেওয়ার জন্য মাতৃভাষা সাঁওতালির পরিবর্তে অন্য ভাষায় কথা বলেন। এই উপলব্ধি লেখককে আহত করে, তার মনে আঘাত লাগে। সেই আঘাত যে কত গুরুতর লেখক তা এক কথায় প্রকাশ করেছেন। ইংরেজী ‘স্যার’ যার অর্থ মহাশয়, সেই স্যারকে তার মনে হয়েছে হাটে বাজারে অর্থের বিনিময়ে বিনিময়যোগ্য পণ্য, সহজলভ্য বর্জ্য পদার্থ সার হিসাবে। এখানেই রচনাটি সার্থক হয়ে ওঠে।

অন্য ভাষায় কথা বলায় দোষের কিছু নেই, কিন্তু নিজের মাতৃভাষার বর্তমানে নিজের পরিচিত স্বজাতির সঙ্গে অন্য কোন ভাষায় কথা বলার অর্থ সব থেকেও কিছু নাই। এখানেই নামকরণের সার্থকতা।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *