পৌরাণিক কাহিনী

“পৌরাণিক কাহিনী”

সাঁওতালদের নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে কৌতূহলের অন্ত নেই। এ পর্যন্ত সাঁওতালদের নিয়ে বহু পুঁথি রচিত হয়েছে, গ্রন্থাগারে সে সব পুঁথি সযত্নে রক্ষিত আছে। সেখানে পণ্ডিতরা নিজেদের গবেষণালব্ধ জ্ঞান লিপিবদ্ধ করে কৌতূহল নিবারণের চেষ্টা করেছেন। সাঁওতালদের সম্বন্ধে তাঁরা সবাই কিছু না কিছু আলোকপাত করেছেন, তাই আমি সে চেষ্টা থেকে বিরত থেকে আজ এমন কিছু বলব যেটা ইতিপূর্বে কেউ বলেনি, এখনো পর্যন্ত, আজ পর্যন্ত কেউ বলেনি।

সাঁওতালরা অঙ্গ, বঙ্গ এবং কলিঙ্গর বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে রয়েছে। তাঁরা কোথা থেকে এল, তাদের উৎপত্তিই বা কোথায় সেটা তাদের মধ্যে প্রচলিত, মুখে মুখে চলে আসা কাহিনী থেকেই শুনব। (কাহিনীটি আমার লেখা ‘সাঁওতালি ভাষার লিপি সমস্যা এবং সেই সমস্যা সমাধানের সন্ধানে গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। আমি সেটাকে তুলে এখানে জায়গা করে দিচ্ছি।)

ডারউইনের বিবর্তনবাদ থেকে জানা যায় যে, বিবর্তনের মধ্য দিয়েই মানুষ বর্তমানের মানুষে রূপান্তরিত হয়েছে। এ্যপ নামক একপ্রকার বানর থেকে মানুষের সৃষ্টি। এই বানর চার পায়ে গাছের এ ডাল থেকে সে ডালে ঘুরে বেড়াত। এঙ্গেলসের মতে কোনো কারণে গাছে খাবারের অভাব দেখা দিলে তারা মাটিতে নেমে আসে। মাটিতে নেমে তারা বুঝল যে, এখানে চার পায়ের বদলে দু পায়ে হাঁটাই সুবিধাজনক। তাই তারা দু পায়ে হাঁটা শুরু করল। ফ্রেডরিক এঙ্গেলস এটাকে কর্মী মানুষের শ্রমের ফল বলে অভিহিত করেছেন। বানর থেকে মানুষ এবং আদিম মানুষ থেকে বর্তমান যুগের মানুষ পর্যন্ত এই যে প্রক্রিয়া, একশ, দুশ নয় কয়েক হাজার বছরের ঘটনা। কার্ল মার্কস আদিম মানুষ থেকে শুরু করে বর্তমানের সভ্য মানুষ পর্যন্ত যে সমাজব্যবস্থা তাকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছেন। আদিম সাম্যবাদী গোষ্ঠী সমাজ, দাস সমাজ, সামন্ততান্ত্রিক সমাজ, ধনতান্ত্রিক সমাজ এবং সাম্যবাদী সমাজ। আদিম সাম্যবাদী গোষ্ঠী সমাজে মানুষ দলবদ্ধ ভাবে বাস করত এবং যাযাবরের মত জীবন-যাপন করত। তখন শিকার এবং ফলমূল আহরণ করেই তারা জীবিকা নির্বাহ করত। দিনের শেষে যা সংগৃহীত হত তা সকলে সমান ভাবে ভাগ করে খেত। বিবর্তনের এই নিয়ম সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। সাঁওতালদের ক্ষেত্রেও এই নিয়মের ব্যতিক্রম নেই। মানুষের উৎপত্তি সম্বন্ধে সাঁওতালদের মধ্যে প্রচলিত কাহিনী এই মতবাদকেই সমর্থন জানায়। তাদের মধ্যে প্রচলিত কাহিনীতে আছে, সূর্য পূর্বদিক থেকে উদিত হয় এবং পশ্চিম দিকে অস্ত যায়। পূর্বদিকে অর্থাৎ যেদিক থেকে সূর্য উদিত হয় সেই দিকেই মানুষের উৎপত্তি। আদিতে পৃথিবীতে কেবল জল ছিল। বৈজ্ঞানিকরাও এই জলের কথা স্বীকার করেন, তবে তাঁদের মতে জল উষ্ণ ছিল। এই উষ্ণ জল ক্রমশ শীতল হয় এবং জলজ উদ্ভিদের জন্ম হয়। সাঁওতালদের মধ্যে প্রচলিত কাহিনীতেও সেই কথাই বলা হয়েছে, যে তখন শুধু জল ছিল, স্থল বলতে কিছুই ছিল না। দেবতারা স্বর্গ থেকে তোড়ে সুতাম (সুতো) বেয়ে এখানে স্নান করতে আসতেন। একদিনের কথা। সৃষ্টিকর্তা ঠাকরজীউ স্নান করতে নেমেছেন। তিনি ঘাটে বসে গায়ের অনেকটা ময়লা ছাড়ালেন। সেই ময়লা দিয়ে দুটো পাখি বানালেন। পাখি দুটো দেখে তাঁর খুব মায়া হল তাই তিনি তাঁদের মধ্যে প্রাণের সঞ্চার করলেন।

বিজ্ঞানীর ব্যাখ্যা এক। অন্যদিকে লোকপুরাণের স্রষ্টা একদলের মতে ঠাকুর জীউ প্রথমে জলচর প্রাণী সৃষ্টি করলেন। (ধিরি কাটকম) পাথর কাঁকড়া, কুমীর, তিমি মাছ, রাঘব বোয়াল সলে চিংড়ি (সলে ইচাঃক), কেঁচো এবং কচ্ছপ আদি জলচর প্রাণী সৃষ্টি করলেন। এরপরে সৃষ্টিকর্তা ভাবতে লাগলেন তিনি কি তৈরি করবেন? তিনি ঠিক করলেন এইবারে তিনি মানুষ তৈরি করবেন। তাই হল। তিনি মাটির দুটো মূর্তি গড়লেন। একটা পুরুষের এবং অন্যটা মেয়ের। এই মূর্তি দুটোর মধ্যে যখন প্রাণ সঞ্চার করবেন ঠিক করছেন ঠিক সেই সময় স্বৰ্গ থেকে সিঞ বোঙ্গার (সূর্যদেব) সিঞ সাদম (ঘোড়া) জল খেতে নেমে মূর্তি দুটোকে পা দিয়ে ভেঙ্গে দিলেন। ঠাকুর জীউ বেজায় দুঃখ পেলেন। তাই তিনি ঠিক করলেন, না, তিনি আর মানুষ তৈরি করবেন না। তৈরি করবেন পাখি। বুকের ময়লা ছাড়িয়ে দুটো পাখি বানালেন এবং প্রাণ দিলেন। পাখি দুটোর নাম দিলেন হাঁস এবং হাঁসিল। নামকরণ থেকে অনেকেই পাখি দুটোকে হাঁস (পুং এবং স্ত্রী) বলে মনে করেন। আমি তাঁদের সঙ্গে একমত নই। কারণ সাঁওতালি ভাষায় হাঁসকে বলে গেডে। যদি তারা হাঁস হত তাহলে হাঁসের বদলে গেডে বলা হত। আমার মতে হাঁস এবং হাঁসিল পাখি দুটোর নাম। কারণ সাঁওতালরা যে বারো গোত্রে বিভক্ত, সেই বারোটির একটাকে বলা হয় হাঁসদাঃক। সাঁওতালি দাঃক কথার অর্থ হল জল, তাহলে হাঁস কথার অর্থ যদি হাঁস হয়, তাহলে হাঁসদাঃক মানে কি জলহাঁস? মাটিকে সাঁওতালি ভাষায় বলে হাসা, আমার মতে এই হাসা বা মাটির তৈরি বলেই তাদের নামকরণ হয় হাঁস এবং হাঁসিল। নিম্নে প্রদত্ত দং সেরেঞটা বোধহয় এখানে অপ্রাসঙ্গিক হবে না।

জমআবন ঞুইআবন রাইস্কারেবন তাঁহেনা
নওয়া হাসা হড়ম বার সিঞ লাগিৎ।।

অর্থাৎ, ‘খাব দাব স্ফূর্তিতে থাকব
এই মাটির দেহ দুদিনের জন্য।’

ঠাকুর শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণদেব বলেছিলেন ‘টাকা মাটি, মাটি টাকা’ আর সাঁওতালরা বলেন হাসা হড়ম। তাঁদের বিশ্বাস শরীর মাটি দিয়ে তৈরী এবং মাটিতেই মিশে যাবে। সে যাই হউক প্রাণ পেয়ে পাখি দুটো আকাশে ডানা মেলে দিয়ে মনের আনন্দে উড়তে লাগল, কিন্তু বসার জায়গা কোথাও ছিল না। তাই ঠাকুর জীউ- এর হাতে এসে বসত। এইভাবেই দিন যায়। একদিন সিঞ সাদম তেষ্টা মেটাতে স্বর্গ থেকে তোড়ে সুতাম বেয়ে মর্তে এলেন। মুখ দিয়ে জলপান করবার সময় ঘোড়ার মুখ থেকে ফেনা জলে গড়িয়ে পড়ল। সৃষ্টি কর্তা পাখি দুটোকে সেই ফেনার উপরে গিয়ে বসতে বললেন। পাখি দুটো ঠাকুর জীউ এর কথামত সেই ফেনার উপরে গিয়ে বসল এবং ফেনার সঙ্গে দমকা হাওয়ায় নৌকোর মত ভাসতে লাগল। তারা মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই পেল বটে কিন্তু খাবার কিছুই পেল না, তাই তারা পুনরায় ঠাকুর জীউ এর স্মরণ নিল। ঠাকুর জীউ তাঁদের কথা শুনে জলচর প্রাণীদের ডেকে পাঠলেন এবং নীচ থেকে মাটি তুলতে বললেন। প্রথমে ডাকলেন কুমীরকে। কুমীর এসে ঠাকুরকে জিজ্ঞেস করলেন, তিনি কেন ডেকে পাঠিয়েছেন? ঠাকুর কুমীরকে বললেন জলের নীচে মাটি আছে, সেই মাটি তুলতে হবে। সে কি পারবে? কুমীর জবাব দিল যদি তিনি আজ্ঞা করেন তবে সে পারবে? এই বলে কুমীর নীচে নেমে গেল। কিন্তু মাটি তুলতে ব্যর্থ হল। এইভাবে পরপর চিংড়ি মাছ, রাঘব বোয়াল মাছ এবং কাঁকড়াকে ডেকে পাঠালেন, এবং সবাইকে এক কথাই বললেন। কিন্তু সবাই মাটি তুলতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হল।

সবশেষে ঠাকুর কেঁচোকে ডেকে পাঠালেন এবং মাটি তুলতে বললেন। কেঁচো রাজি হল তবে একটা শর্ত দিল। শর্তটা হল এই যে, সে মাটি তুলবে তবে কচ্ছপকে জলের উপরে স্থির হয়ে দাঁড়াতে হবে। কেঁচোর কথা শুনে ঠাকুর কচ্ছপকে ডেকে পাঠালেন। কচ্ছপ এসে ঠাকুরকে জিজ্ঞেস করলেন। ঠাকুর সব কথা খুলে বললেন। ঠাকুরের কথা শুনে কচ্ছপ জলের উপরে স্থির হয়ে দাঁড়াল। ঠাকুর কচ্ছপের চারটে পা লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে দিলেন। এইবারে কেঁচো কচ্ছপের পিঠে লেজ রেখে মুখ নীচে নামাল। মুখ দিয়ে মাটি খেতে লাগল এবং লেজ দিয়ে কচ্ছপের পিঠে সেই মাটি বার করে দিতে লাগল। এইভাবে কেঁচো কচ্ছপের গোটা শরীর মাটিতে ভরিয়ে দিয়ে খাওয়া বন্ধ দিল এবং উপরে উঠে এল।

এইবার ঠাকুর মই দিলেন। (তখনকার দিনে এবং এখনো গরু মহিষের কাঁধে জোয়াল চাপিয়ে তার সঙ্গে মই জুড়ে মাটিতে মই দিতে হয়। এ থেকে এমন মনে করা আশ্চর্যের কিছু নেই যে এই কাহিনী কৃষিকাজ শুরু হবার পরের রচনা)। ঠাকুর মই দিলেন বটে, কিন্তু মাটি সমান করতে সমর্থ হলেন না। মাটি কোথাও কোথাও উঁচু আবার কোথাও কোথাও নীচু হয়ে রইল। আর এই ভাবেই পাহাড় পর্বত এবং নদ-নদীর সৃষ্টি হল। মাটি যেখানে যেখানে উঁচু হয়ে রইল সেখানে সেখানে পাহাড়-পর্বতের, অপর দিকে আবার যেখানে নীচু ছিল সেখানে সৃষ্টি হল নদ-নদীর। সব মিলিয়ে বলা যায় স্থলভাগের বা পৃথিবীর সৃষ্টি হল। ঘোড়ার মুখের ফেনা এই স্থলভাগে এসে আটকা পড়ে গেল। ঠাকুর সেই ফেনার উপরে সিরম (এক রকম গাছ) গাছের চারা বুনলেন। সেই চারা থেকে সিরম গাছ জন্মাল। তারপর পরে পরে দুর্বা ঘাস, করম গাছ, শাল গাছ, মহুয়া গাছ এবং অন্য সব গাছের চারা বুনলেন এবং সেই চারা থেকে গাছ জন্মাল। মানুষ তখনো সৃষ্টি হয়নি।

এই যে কাহিনী এটা নিছক কাহিনী নয়। এর মধ্যে বৈজ্ঞানিক সত্য লুকিয়ে আছে সেটা আমাদের খুঁজে বার করতে হবে। এখান থেকে আমরা এই সিদ্ধান্তেই উপনীত হব যে, ঠাকুর মানুষ সৃষ্টি করবার আগে এই পৃথিবীকে মানুষের বাসযোগ্য করে তুলতে চেয়েছেন। পৃথিবীতে যে বায়ুমণ্ডল আছে তার মধ্যে অক্সিজেন এবং কার্বনডাই অক্সাইড আছে। কার্বনডাই অক্সাইড মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে, তাই গাছ কার্বনডাই অক্সাইড গ্রহণ করে মানুষকে সেই বিপদের হাত থেকে রক্ষা করে, তাই ঠাকুর মানুষ সৃষ্টির আগে গাছের চারা বুনেছেন। অতএব অস্বীকার করার উপায় নাই, সাঁওতালদের পূর্বপুরুষরা এ সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল ছিলেন। এ ছাড়া গাছ আমাদের আর একটা উপকারে লাগে তা হল গাছ মাটিকে শক্ত হতে সাহায্য করে। এই কারণেই লোকে পুকুরপাড়ে এবং অন্যত্র গাছ লাগায়।

হাঁস-হাঁসিল পাখি দুটো সেই সিরম গাছে বাসা বাঁধল এবং দুটো ডিম পাড়ল। মেয়ে পাখি সেই ডিমে তা দিতে লাগল এবং পুরুষ পাখি বাইরের কাজে ব্যস্ত রইল। Division of Labour বা শ্রম বিভাজনের অনুমান এখানে পাই। কৃষিকাজের পরবর্তী পর্যায়ে পুরুষ মানুষ ক্ষেত খামারের কাজে ব্যস্ত হয়ে রইল ফলে বাড়ির কাজ দেখাশোনা করবার একটা মানুষের প্রয়োজন দেখা দিল। এইভাবে স্ত্রীজাতির সৃষ্টি হল এবং স্ত্রী পুরুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে রূপান্তরিত হল। এখানে সেই মতবাদই ব্যক্ত হয়েছে।

কিছুদিন পরে সেই ডিম দুটো থেকে দুটো বাচ্চা জন্ম নিল। পাখির ডিম থেকে পাখির বাচ্চা হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু এখানে তা হয়নি। এখানে পাখির ডিম থেকে ফুটে বেরিয়েছে দুটো মানুষ। পৃথিবীর আদি মানব-মানবী, পিলচু হাড়াম এবং পিলচু বুডহি। আমি আগেই উল্লেখ করেছি এ্যপ নামক এক প্রকার বানর মানুষে রূপান্তরিত হয়। এই কাহিনী সেই বৈজ্ঞানিক সত্যকেই তুলে ধরেছে। জানতে খুব ইচ্ছে হয় কয়েক হাজার বছর আগে সাঁওতালদের পূর্বপুরুষরা এই কথা জানলেন কি করে? তবে কি আর্যদের আগমনের পূর্বে ভারতবর্ষে যে উন্নত জাতি গোষ্ঠী ছিল তারাই সাঁওতাল। ঐতিহাসিকরা বলেন আর্যরা ভারতে আগমনের পূর্বে অসভ্য এবং বর্বর ছিলেন। ভারতবর্ষে এসেই তারা বাড়ি তৈরির কৃৎকৌশল আয়ত্ত করেছিলেন। আর্যরা যাদের কাছ থেকে বাড়ি তৈরির Technology শিখেছিলেন তারাই কি সাঁওতাল? এই কাহিনী সেই সন্দেহকেই ঘনীভূত করে।

ডিম ফুটে দুটো মানুষ জন্ম নিল। একটা পুরুষের অন্যটা মেয়ে মানুষের। ঐতিহাসিক রাখালদাস ব্যানার্জী ময়ূরভঞ্জের ভঞ্জ রাজাদের খেড়িয়া বংশোদভূত বলে মনে করেন। কারণ আবিষ্কৃত শিলালিপিতে উৎকীর্ণ ভঞ্জ রাজাদের ইতিহাস থেকে জানা যায় যে তাদের পূর্বপুরুষরা ডিম ফুটে বেরিয়েছিলেন। খেড়িয়াদের মধ্যে অনুরূপ কাহিনী প্রচলিত থাকায় এইরূপ সন্দেহের কারণ। ময়ূরভঞ্জের অধিবাসীদের একটা বড় অংশ হচ্ছেন সাঁওতাল সম্প্রদায়ভুক্ত। আমরা জানি যে সাঁওতালদের মধ্যেও অনুরূপ কাহিনী প্রচলিত আছে। এ ছাড়াও ভঞ্জ রাজাদের সঙ্গে সাঁওতালদের আর একটা জায়গায় মিল আছে তা হল সন্তান সন্ততির নামকরণ। ভঞ্জ রাজাদের মত সাঁওতালরা তাদের সন্তান সন্তুতির নামকরণ করেন তাদের পূর্বপুরুষদের নামানুসারে। সাঁওতালদের মধ্যে অনেককেই দেখেছি শহরে নগরে এসে বিজাতীয় মেয়ে বিয়ে করে গোত্র পরিবর্তন ঘটিয়ে হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে। আমি দাবী করছি না যে ভঞ্জ রাজারা সাঁওতাল সম্প্রদায়ভুক্তই, কারণ এ বিষয়ে গবেষণার প্রয়োজন আছে। তবে তারা যে সাঁওতালি মঞ্জ যার অর্থ খুব ভালোতা থেকেই ভঞ্জ হয়ে যায়নি একথা কে বলতে পারে?

সে যাই হউক হাঁস-হাঁসিল মানুষ দুটোকে দেখে হায়! হায়! বলে কাঁদতে লাগল।

হায়! হায়! জ্বালাপুরীরে
হায়! হায়! নুকিন মানওয়া।।
হায়! হায়! বুসাড় আকানকিন
হায়! হায়! নুকিন মানওয়া।।
হায়! হায়! তকারে দহকিন হায়!
হায়! দুসে লাই আয়বেন।।
হায়! হায়! মারাং ঠাকুর জীউ হায়!
হায়! বুঁসাড় অকাননকিন।।
হায়! হায়! নুকিন মানওয়া
হায়! হায়! তকারে দহকিন?

(হড় করেন মারে হাপড়ামক রেয়াঃ কাথা থেকে সংগৃহীত) তিনটে পুরী আছে। স্বর্গপুরী, মর্তপুরী আর পাতালপুরী। মর্তপুরীই জ্বালাপুরী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এখানে জ্বালা যন্ত্রণা আছে বলেই পাখি দুটো হায়! হায়! জ্বালাপুরী বলে রোদন করতে লাগল। তাই জ্বালাপুরীকেই হায়! হায়! ধ্বনি দিয়ে ধিক্কার জানাচ্ছে। Shame, Shame ধ্বনির মত।

(রূপান্তর লেখকের)

হায়! হায়! মর্ত্যপুরীতে
হায়! হায়! এই দুই মানব।।
হায়! হায়! জন্ম নিয়েছে হায়!
হায়! এই দুই মানব।।
হায়! হায়! এদের কোথায় রাখি?
হায়! হায়! যাও বলনা গিয়ে।।
হায়! হায়! মহান ঠাকুর জীউকে
হায়! হায়! জন্ম নিয়েছে।।
হায়! হায়! এই দুই মানব
হায়! হায়! এদের কোথায় রাখি?

হায়, হায় ধ্বনি এখানে দুই অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। প্রথম পঙক্তিতে যদিও মর্ত্যলোককে ধিক্কার জানানো হয়েছে তবে পরবর্তী পঙতি গুলিতে কিন্তু হায়, হায় দুই অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। করুণা এবং ধিক্কার। কারণ মানুষ দুটোকে দেখে হাঁস হাঁসিলের সামনে সংকট দেখা দিয়েছে। প্রথমত, তারা কোথায় থাকবে। দ্বিতীয়ত, তারা কি খাবে? হাঁস-হাঁসিল, পাখি তারা গাছের ডালে বাসা বানিয়ে থাকবে। কিন্তু মানুষ ত সেখানে বাস করতে পারবে না। তাই সৃষ্টিকর্তা ঠাকুর জীউ এর কাছে তাদের কাতর আবেদন নিবেদন। পাখিদের কাতর আবেদনে ঠাকুর সাড়া দিলেন। পাখিদের কাছ থেকে সব কথা শুনে তিনি তাদের তুলো দিলেন এবং পরামর্শ দিলেন যা খাবে তার রস দিয়ে তুলো ভেজাবে এবং খাবারের রস দিয়ে ভেজানো সেই তুলো মানুষ দুটোর মুখে দিয়ে নিংড়াবে। তারা তাই করতে লাগল। ক্রমে ক্রমে মানব মানবী দুটো বেড়ে উঠতে লাগল। তাদের বড় হতে দেখে পাখিদের চিন্তা বেড়ে গেল, ভয় পেতে লাগল, তাই তারা পুনরায় সৃষ্টিকর্তার স্মরণ নিল। সৃষ্টিকর্তা ঠাকুর জীউ তাদের থাকার জন্য একটা জায়গা খুঁজতে বললেন। তারা পশ্চিমদিকে উড়ে গেল এবং হিহিড় পিপিড়ির খোঁজ পেল। ফিরে এসে ঠাকুর জীউকে তারা সেই কথা জানিয়ে দিল। সৃষ্টিকর্তা মানব-মানবী দুটোকে সেখানে রেখে আসতে বললেন। ঠাকুরের কথামত পাখিরা মানুষ দুটোকে পিঠে করে হিহিড়ি পিপিড়িতে পৌঁছে দিল। তারপর হাঁস এবং হাঁসিলের কি দশা হল তা জানা যায় নি।

এইভাবে শুরু হল যাযাবরের জীবন। তাদের কথায় পূর্বদিকে তাদের উৎস ভূমি। পূর্ব থেকে পশ্চিমে হিহিড়ি পিপিড়িতে এলেন। কেউ কেউ হিহিড়িকে হিমালয় পর্বত বলেন এবং পিপিড়িকে হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত সমতল ভূমি বলে অভিহিত করেন। ডাবলিউ. ডাবলিউ. হান্টার ও এই মতবাদে বিশ্বাসী। তাঁর মতে হিহিড়ি এবং পিপিড়ি একটাই শব্দ। প্রজাপতিকে সাঁওতালি ভাষায় পিপিড়ি বলে। হান্টার হিহিড়িকে পিপিডির প্রতিলিপি বলেই মনে করেন। এবং হিহিড়ি পিপিড়িকে প্রজাপতির বাসোপযোগী হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল বলেই মনে করেন।

পৃথিবীর আদি মানব-মানবী যারা ডিম ফুটে বেরিয়েছে তাদের নাম দেওয়া হল হাড়াম অর্থাৎ বুড়ো এবং আরো অর্থাৎ মা। কেউ কেউ বলেন পিলচু হাড়াম অর্থাৎ পিলচু বুড়ো এবং পিলচু বুডহি অর্থাৎ পিলচু বুড়ি। পিলচু কথার অর্থ অতি ছোট। তারা পূর্বে জন্মেছেন এবং পূর্ব থেকে পশ্চিমে এসে হিহিড়ি পিপিড়িতে বাসা বেঁধেছেন। তারা ক্রমে ক্রমে বেড়ে উঠতে লাগল কিন্তু তাদের লজ্জার বালাই ছিল না। তাই একদিন হঠাৎ লিটা গডেৎ এসে উপস্থিত হলেন এবং তাদের কাছে ঠাকুরদা বলে পরিচয় দিলেন। তিনি তাদের বনে নিয়ে গেলেন। শেকড় বাকড় সংগ্রহ করে রানু (রান কথার অর্থ ঔষধ, তার থেকেই রানু হয়েছে) বানাতে শিখিয়ে দিলেন এবং সেই রানু দিয়ে হাঁড়িয়া ধরতে বললেন। তারা শ্যামা ঘাস এবং সুমতুবুকুচ ঘাসের দানা ছাড়িয়ে ভাত রান্না করলেন এবং পাত্রে ঢেলে সেই ভাত ঠাণ্ডা করলেন তারপর তার উপর রানু গুঁড়ো করে ছড়িয়ে দিলেন এবং সেই রাণু ছড়ানো ভাত হাঁড়িতে ঢেলে চাপা দিলেন। পাঁচদিন পর লিটা আবার এলেন ততদিনে ভাত পচে হাঁড়িয়ায় পরিণত হয়েছে, তার গন্ধে মাতাল হবার যোগাড় হয়েছে। লিটা সেই হাঁড়িয়া প্রথমে মারাং বুরুর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে নিজেদের খেতে বললেন। সাঁওতালদের মধ্যে এই রীতি এখনো পালন করা হয়। প্রথমে মারাং বুরুকে উৎসর্গ করা হয়। তারাও তাই করলেন। প্রথমে মারাং বুরুর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে অবশিষ্ট হাঁড়িয়া নিজেরা খেলেন। হাঁড়িয়া খেয়ে তাদের নেশা হল। তাই তাদের মধ্যে খুনসুটি শুরু হল এবং সবশেষে খুনসুটি করতে করতে একসময় এক বিছানায় শুয়ে পড়ল। সৃষ্টি কর্তার ইচ্ছা পূর্ণ হল। পরদিন সকালে লিটা এসে পিলচু হাড়াম বুডহিকে ডাকতে লাগলেন। লিটার ডাক শুনে তাদের ঘুম ভেঙ্গে গেল, কিন্তু বাইরে আসতে সাহস হল না, কারণ এখন তাদের লজ্জা পাচ্ছে। তারা সেই কথা লিটাকে জানাল। লিটার সেই কথা জানাই ছিল। তিনি তাদের তাতে কি হয়েছে বলে আশ্বস্ত করলেন এবং হাসিমুখ করে চলে গেলেন। পিলচু হাড়াম এবং পিলচু বুডহি তারপর থেকে বটগাছের পাতা দিয়ে লজ্জা ঢাকা দিলেন। কাহিনী বাস্তবের উপর ভিত্তি করে রচিত। তাই কোথাও অতিরঞ্জিত করা হয় নি। যা যা ঘটেছিল তার কথাই হুবহু উল্লেখ করা হয়েছে।

অবশেষে তারা সন্তান সন্ততির মা বাবা হলেন। তারা সাত ছেলে এবং সমপরিমাণ মেয়ের জন্ম দিলেন। পিলচু হাড়াম ছেলেদের নিয়ে একদিকে শিকারে যায় এবং তার পত্নী পিলচু বুডহি আর এক দিকে শাকপাতা তুলতে যায়। আদিম সাম্যবাদী গোষ্ঠী সমাজে মানুষ শিকার ফলমূল আহরণ করেই জীবিকা নির্বাহ করত। এখানে সেই কথাই উল্লেখ করা হয়েছে। এই ভাবেই দিন যায়। ছেলেমেয়েরাও ক্রমেই বেড়ে উঠতে লাগল। একদিন ছেলেরা সবাই খাণ্ডেরায় পর্বতে শিকারে গেল। অপরদিকে মেয়েরাও সুডুকুচ পাহাড়ে শাক তুলতে গেল। শাক তোলা হয়ে গেলে মেয়েরা সবাই নিচে বটগাছের তলায় জড়ো হল এবং বটগাছের লম্বা ঝুরিতে দুলতে দুলতে ডাহার গান গাইতে লাগল। উল্টোদিকে ছেলেরাও শিকার শেষে বাড়ির পথে রওনা দিয়েছিল, কিন্তু মেয়েলি কণ্ঠের সুরেলা আওয়াজে তাদের যাত্রা ভঙ্গ হল। শিকার ছেড়ে তারা সুরেলা আওয়াজের সন্ধান করতে লাগল। গাছ তলায় পৌঁছে বড়জন বড় মেয়ের সঙ্গে, পরের জন তার পরের সঙ্গে এবং এইভাবে আর সবাই নিজেদের সমকক্ষের সঙ্গে জুটি বেঁধে নাচগানে জায়গাটা মুখরিত করে তুলল। নাচগানের শেষে সেই অবস্থায় বাড়ি ফিরল। এই দেখে পিলচু হাড়াম এবং পিলচু বুডহি তাদের বিয়ে দিলেন। তাদের সন্তান সন্ততি হলে পিলচু হাড়াম এবং পিলচু বুডহি তাদের গোত্রে বিভক্ত করে সমগোত্রের মধ্যে বিয়ে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করলেন।

ভাইবোনের মধ্যে বিয়ে দেওয়াব রীতি যে এককালে মানুষের মধ্যে প্রচলিত ছিল এঙ্গেলসও তা স্বীকার করেন। তিনি বলেন ভাই বোনের মধ্যে কেবল বিয়ে নয়, বাড়িতে যখন কেউ বউ হয়ে আসত সে কেবলমাত্র এক ভাই এর বউ নয়, বাড়ির সব ভাইএর বউ বলেই পরিচিত হত। বাবার অগ্রজ অনুজদের বউকে বড় মা ছোট মা বলে ডাকা থেকেই একথা প্রমাণিত হয় বলে তার মত। কিন্তু পরবর্তীকালে মানুষ যখন নিকট আত্মীয়দের সন্তান সন্ততির সঙ্গে অনাত্মীয়দের বিয়ে করা ছেলেমেয়ের মানসিক বিকাশের পার্থক্য লক্ষ করল তখন থেকেই নিকট আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে নিষিদ্ধ হয়। এই কাহিনীও আমাদের সেই কথাই বলে। পিলচু হাড়াম এবং পিলচু বুডহি তাদের ছেলেমেয়েকে যে সাতটি গোত্রে বিভক্ত করেছিলেন সেগুলি হল, সবার বড় (১) হাঁসদাঃক (২) মুরমু (৩) কিস্কু (৪) হেম্ভ্রম (৫) মাড্ডি (৬) সরেন এবং সর্বকনিষ্ঠ (৭) টুডু। পিলচু হাড়াম এবং পিলচু বুডহির বংশধররা হিহিড়ি পিপিড়িতে অনেক দিন কাটিয়ে খোজ কামানে চলে এলেন। খোজ কামানে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেল। তারা পাপ পঙ্কিলে নিমজ্জিত হল। তারা বন্য জানোয়ারে পরিণত হল। তাই দেখে ঠাকুর ভীষণ চটে গেলেন। তিনি তাদের সৎ পথে ফেরার ডাক দিলেন। কিন্তু তাঁর ডাকে কেউ সাড়া দিল না। তাই তিনি একজন আদর্শ দম্পতিকে হারাতা বুরুর (পাহাড়ের) গিরি কন্দরে আশ্রয় দিয়ে ক্রমাগত সাতদিন এক নাগাড়ে আগুন বরষে সব মানুষ এবং তাদের গৃহপালিত পশুসহ সবাইকে মেরে ফেললেন। বেঁচে গেলেন শুধু একজন আদর্শ দম্পতি যারা গিরি কন্দরে আশ্রয় নিয়েছিল। অগ্নি বর্ষণ থেমে গেলে তারা গিরি কন্দর ছেড়ে বেরিয়ে এলেন এবং পাহাড়ের পাদদেশে ঘর বাঁধলেন ক্রমে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেল। তখন তারা হারাতা ছেড়ে সাসাংবেড়ায় এসে উপস্থিত হলেন। (আমার মনে হয় কাহিনীর এই অংশ ভাই বোনের বিয়েকে চাপা দেওয়ার জন্যই সংযোজিত হয়েছে)। এতদিন তারা পাহাড়ে জঙ্গলে কাটিয়েছেন। এইবার তারা ফাঁকা মাঠে বেরিয়ে এসেছেন। এই সাসাংবেডায় এসে তারা পুনরায় গোত্রে বিভক্ত হলেন। আগের সাতটি ছাড়াও এখানে আরো পাঁচটি যুক্ত হল। গোত্রগুলি হল : (১) হাঁসদাঃক (২) মুরমু (৩) কিস্কু (৪) হেম (৫) মাড্ডি (৬) সরেণ (৭) টুডু তার সঙ্গে যে পাঁচটি যুক্ত হল (৮) বাস্কে (৯) বেশরা (১০) পাউরিয়া (১১) চঁড়ে এবং (১২) বেদেয়া। নিম্নে প্রদত্ত সাঁওতালি গানে সে কথাই উল্লেখিত হয়েছে :

হিহিড়ি পিপিড়ি রেবন জানামলেন,
খোজ কামানরেবন খোজলেন।।
হারাতারেবন হারালেন,
সাসাংবেড়াবেরন জা(ই)ত এনাহো।।

অর্থাৎ, হিহিড়ি পিপিড়িতে জন্মেছিলাম,
খোজকামানে এসে বিপথিক হলাম।।
হারাতায় এসে সংখ্যার বৃদ্ধি হল,
সাসাংবেড়ায় এসে গোত্রে বিভক্ত হলাম।।

সাসাংবেডা ছেড়ে দিয়ে পূর্বপুরুষরা জারপি দেশে এলেন। সমতল ছেড়ে পুনরায় পাহাড় জঙ্গলে ঢুকলেন। এইভাবে ঘুরতে লাগলেন। ঘুরতে ঘুরতে তারা একসময় সাতটি নদের দেশ চাই চাম্পায় এলেন। চাই চাম্পায় বহিরাক্রমণ প্রতিহত করবার জন্য অনেকগুলি গড় বা দুর্গের পত্তন করলেন এবং কুলহির শেষ প্রান্তে দেবদেবীর প্রতিষ্ঠা করলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চাই চাম্পাও ছাড়তে হল। চাই চাম্পা ছেড়ে তারা তোড়ে পুখরিতে উঠে এলেন। এখানে বহুদিন পর্যন্ত ছিলেন। তোড়ে পুখরি ছেড়ে শিখরভুঁই ছাড়িয়ে সাঁত দেশে এলেন। এই সাঁত এ ছিলেন বলেই এদের সাঁওতাল বলা হয়। কিন্তু এ কথা ঠিক নয়। সবাই সাঁতএ ছিলেন না, কিছু লোক ছিলেন তারা এখনো আছেন। পরবর্তী কালে সাঁত ছেড়ে শিখর ভুঁইএ এলেন। শিখরভুঁইএর মহারাজের বশ্যতা স্বীকার করে নিলেন। অবশেষে সেটাও ছেড়ে দিয়ে টুণ্ডি হয়ে সাঁওতাল পরগণায় এলেন। ঘোরবার সময় কোথাও কোথাও দিকুদের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে। কোথাও তারা জিতেছেন, আবার কোথাও পরাজিত হয়েছেন।

কাহিনীর শেষাংশ সাঁওতাল পরগণা থেকে সংগৃহীত বলেই সাঁওতাল পরগণার কথা উল্লেখিত হয়েছে। কিন্তু বাস্তব ঘটনা হচ্ছে, সাঁওতাল পরগণার অধিবাসী কেবল সাঁত এবং শিখরভুঁই এর অধিবাসী নন, তারা মানভূম, বরাহভূম, সিংভূম এবং বীরভূমেরও অধিবাসী। তাই তাদেরকে কেবল সাঁত এর অধিবাসী বলে উল্লেখ করা ভুল।

সাঁওতালরা ছিলেন কৃষিজীবী। গ্রামকেন্দ্রিক সভ্যতার ধারক এবং বাহক। তাই তাদের যাত্রা পথে যে সব জায়গার নাম উল্লেখিত হয়েছে সেগুলি সবই গ্রামের নাম এবং এই জন্যই ইতিহাসের পাতায় তাদের বিবরণ খুঁজে পাই না, কারণ প্রাচীনকালের ইতিহাসে কেবল মাত্র রাজা, রাজড়া এবং তাদের রাজ্য এবং রাজধানীর নাম লিপিবদ্ধ আছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *