লেক ট্যাঙ্গানিকার তীরে – ৪

ফজরের নামাজের পর নদীর ধারে বেড়াতে এসেছে আহমদ মুসা ও মাকা। নদীটি বেশ বড়ই বলা যায়। এই লোয়াংগ নদী জাম্বিয়ার বড় নদীগুলোর একটি। যাকে স্রোতস্বিনী বলে লোয়াংগ নদী সেটাই। বেশ স্রোত নদীতে। লেক মালাবীর পশ্চিমে মাফিনদা ও লিলোনা পাহাড়ে এর জন্ম। নদীটি গিয়ে পড়েছে জাম্বেসি নদীতে।

নদীর দুই তীরের সব জায়গা যে হাঁটার জন্য উপযুক্ত, তা নয়। কিন্তু মাকাদের চিসোমো গ্রাম এলাকায় নদীর তীর ব্যবহারকারীদের জন্যে খুব সুন্দর হয়ে উঠেছে। নদীর তীর ঘেঁষে হাঁটার জন্যে সুন্দর পথ রয়েছে।

সবুজ গ্রামীণ পরিবেশে নদীর তীর দিয়ে হাঁটার এমন সুযোগ আহমদ মুসা বহু দিন পর পেয়েছে।

হাঁটছে আহমদ মুসা ও মাকাও।

আহমদ মুসারা দেখল মাকার মা, দাদীরাও নদীর তীরের দিকে আসছে। সেরেজী বাস ও রেলস্টেশন থেকে যে সড়কটা মাকাদের বাড়ির পাশ দিয়ে নদীর তীরে এসেছে সে সড়ক ধরেই ওরা দল বেঁধে আসছে। আহমদ মুস রাি নদীর তীরে এসেছে পায়ে হাঁটা সংক্ষিপ্ত পথ দিয়ে।

দাদীর হুইল চেয়ার ঠেলে নিয়ে সুরিয়া আসছে আগে আগে। তার পেছনে সুরিয়ার মা এবং তারপর মাকার ভাবী ও বাচ্চাদের দল। মা, দাদী, সুরিয়া, মাকার ভাবী সবারই মাথা ও গা ঢাকা। তাদের ফুল হাতা জামা। তাদের মুখ ছাড়া শরীরের আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। হিজাব পরা তাদের ঠিকমতোই হয়েছে। খুশি হলো আহমদ মুসা।

তবে ওদের এভাবে দল বেঁধে আসা দেখে আহমদ মুসা কিছুটা বিস্মিতই হলো।

মাকা তোমার মা, দাদী, ভাবীরা কি নদী তীরে আসেন এইভাবে? জিজ্ঞাসা করল আহমদ মুসা।

 জি স্যার, প্রতিদিন সকালে ঘণ্টা খানেকের জন্যে আমরা নদীর তীরে

আসি। বলল মাকা।

ভালো অভ্যাস তোমাদের। আহমদ মুসা বলল। মাকার মা, দাদীরা নদীর তীরে পৌঁছে আহমদ মুসাদের সালাম দিল।

 আহমদ মুসারা তখন পশ্চিম দিক থেকে হেঁটে এসে সড়কের মুখে পৌঁছেছে। আহমদ মুসা সালাম নিয়ে বলল, দাদী আপনারা সামনে। এগোন। আমরা পেছনে আছি।

এসো ভাই। তোমাকে সাথে নিয়ে এই নদীর তীরে বেড়াবার এই স্মৃতিটা হয়তো কোনো দিনই আমরা ভুলতে পারব না। দাদী বলল।

সবাই হাঁটছে।

আহমদ মুসা তার হাতে থাকা জ্যাকেটটা পরে জুতার তলা ঘাসের উপর একটু ঘষে পরিষ্কার করে নিয়ে মাকাকে বলল, চলো…।

আহমদ মুসা কথা শেষ করতে পারল না।

একটা গাড়ি পাগলের মতো ছুটে এসে নদী-তীরের প্রান্ত ঘেঁষে হার্ড ব্রেক করে দাঁড়াল।

 একটা এ্যাংলো-আফ্রিকান মেয়ে গাড়ি থেকে দ্রুত বেরিয়ে এলো। চারদিকে পাগলের মতো দৃষ্টি ফেলে আহমদ মুসাদের কাছে ছুটে এলো এবং আমাকে বাঁচান বলে চিৎকার করে উঠল।

এ সময় আরেকটা গাড়ি তীর বেগে ছুটে এলো। এ গাড়িটিও হার্ড ব্রেক কষল মেয়েটার গাড়ির পেছনে এসে।

 গাড়িটা দাঁড়িয়ে স্থির হতেই গাড়ির চারটি দরজা দিয়ে ছয়জন লোক বেরিয়ে এলো। ছুটে এলো তারা মেয়েটার দিকে। তাদের সবার হাতে রিভলভার।

ওরা ছুটে আসতে আসতে বলল, এই খুনি মেয়েটা পলাতক।

মেয়েটা এসে আহমদ মুসার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করে বলল, ওরাই খুনি, ভাড়াটে খুনি। আমাকে ধরে নিয়ে প্রতিপক্ষের হাতে তুলে দিতে চায়। আমি FDLR-এর লোক।

ওরা ছুটে আসছিল। কাছাকাছি এসে রিভলভার বাগিয়ে এক পা দুপা করে সামনে এগোতে লাগল। বলল তারা আহমদ মুসাদের লক্ষ্য করে, আপনারা হাত তুলে সরে দাঁড়ান। না হলে আপনাদের পথ থেকে শুধু নয় দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়ে তারপর শয়তান মেয়েটাকে নিয়ে যাব।

মেয়েটা বলল সে FDLR-এর লোক, আপনারা কে? হাত মাথা পর্যন্ত তুলে বলল আহমদ মুসা।

 আমরা তোমার বাপ। নষ্ট করবার মতো সময় তোমার বাপের নেই। বলে একজন আহমদ মুসার দিকে তাক করা তার রিভলভারের ট্রিগারে তর্জনি সেট করে বলল, যাও শালা পরপারে।

 তার পরপারে শব্দটার উচ্চারণ শেষ হবার আগেই আহমদ মুসার ডান হাত বিদ্যুৎ বেগে ঘাড়ের পেছনের জ্যাকেটের গোপন পকেটে আটকানো রিভলভার নিয়ে পর পর দুটি গুলি করল। একটি গুলি আহমদ মুসাকে টার্গেটকারী এবং দ্বিতীয় গুলি মেয়েটিকে টার্গেটকারী লোকটিকে বিদ্ধ করল। দুজনের মাথায় গুঁড়িয়ে গেল।

তাদের পেছনের চারজনও আকস্মিকতার ধাক্কা সামলে নেবার পর পকেট থেকে রিভলভার বের করছিল। আহমদ মুসার প্রস্তুত রিভলভার ওদেরকে সময় দিল না। আরো চারটি গুলি বেরিয়ে এলো পরপর। ওদের রিভলভার সমেত হাত উঠে আসার আগেই ওরা গুলি খেয়ে একের পর ঢলে পড়ল মাটিতে।

এ্যাংলো-আফ্রিকান সেই মেয়েটি অপার বিস্ময় নিয়ে একবার লাশগুলোর দিকে, একবার আহমদ মুসার দিকে তাকিয়ে উপুড় হয়ে পড়ে গেল আহমদ মুসার পায়ের উপর।

আহমদ মুসা এক পা পেছনে হটে বলল, বোন উঠ, আল্লাহ তোমাকে এবং আমাদের সবাইকে বাঁচিয়েছেন।

মেয়েটা চিৎকার করে কেঁদে উঠল।

 উঠ বোন। বলল আবার আহমদ মুসা।

উঠল মেয়েটি। তাকাল আহমদ মুসার দিকে অশ্রুধোঁয়া চোখে। কাঁদতে কাঁদতে বলল, আমরা সংগঠনের কাজে লুসাকা যাচ্ছিলাম। কাপিরি এমপোসিতে এসে আমার গাড়ি দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আগে থেকেই ওরা আমাদের ফলো করছিল। আমাকে একা পেয়ে ওরা আমার উপর চড়াও হয়। তাড়া খেয়ে আমি মোচিংগা হাইওয়েতে ঢুকে পড়ি। তারা আমার পেছনে ছুটে আসতে থাকে। সেরেনজেতে ওরা আমাকে প্রায় ধরেই ফেলেছিল। কোনো উপায় না দেখে দক্ষিণের উপত্যকার দিকে আসা সড়কটিতে ঢুকে পড়ি এবং পথের শেষে আমি এখানে এসে পৌঁছি। আমার বাঁচার কোনোই উপায় ছিল না। আপনি আমাকে অলৌকিকভাবে রক্ষা করেছেন। মেয়েটির শেষ কথাগুলোও কান্নায় ভেঙে পড়ল।

কাউকে রক্ষা করার শক্তি আমার নেই। আমি তোমাকে রক্ষা করিনি। রক্ষা করার মালিক আল্লাহ। তিনি তোমাকে রক্ষা করেছেন। বলল আহমদ মুসা।

আপনি কি মুসলিম? মেয়েটি বলল।

 হ্যাঁ বোন, আমি মুসলিম।

কথাটা শেষ করেই আহমদ মুসা আবার বলে উঠল, ওরা কারা বোন?

 ওরা আফ্রিকান ক্যুনিস্টলীগ ACL-এর লোক। ওদের এখন কোনো আদর্শিক কাজ নেই এবং কোনো ধরনের আদর্শবাদী কাজ করার ইচ্ছাও তাদের নেই। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাবার পর ওরা এখন অভিভাবকহীন হয়ে ডাকাতি, দস্যুতাসহ নানা রকম ভাড়াখাটার কাজ করছে। বলল মেয়েটি।

ওরা কার পক্ষে তোমাদের পিছু নিয়েছিল? আহমদ মুসা বলল।

 ওরা কয়েকটি খ্রিস্টান সংগঠনের পক্ষে কাজ করছে। বলল মেয়েটি। তাদের কারো নাম জানো? ওদের সাথে তোমাদের বিরোধ কেন? আহমদ মুসা বলল।

মেয়েটি চোখ তুলে গভীর দৃষ্টিতে তাকাল আহমদ মুসার দিকে। বলল, সংগঠনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়, প্রভাবশালী ও আন্তর্জাতিক পরিসরের হলো ব্ল্যাক ক্রস। আমরা ব্ল্যাক ক্রসসহ ওদেরকে শত্রু মনে করি না কিন্তু ওরা আমাদের শত্রু মনে করে। ওরা আমাদের ধ্বংস করতে চায়। এর কারণ আমার মতে একটাই। সেটা হলো, আমরা আফ্রিকান জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী। আমরা আফ্রিকার নিজস্ব ধর্ম, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য রক্ষা করতে চাই। মানুষ স্বাধীনভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে আমরা তার বিরোধী নই। কিন্তু রাজনৈতিক, সামরিক, আর্থিক শক্তির উপর ভর করে কেউ তার ধর্ম-সংস্কৃতি মানুষের উপর চাপিয়ে দিক, আমরা তার বিরোধী। ওরা আমাদেরকে আর্থিক ও রাজনৈতিক সুবিধা দিয়ে এবং হুমকি-ধমকির আশ্রয় নিয়ে আমাদের চুপ করাতে চেয়েছিল। এসব কোনো কিছুই আমাদের চুপ করাতে পারেনি। এরপরেই তারা আমাদের উপর খড়গহস্ত হয়েছে। আমাদের ধ্বংসই এখন ওদের কাম্য।

আহমদ মুসার ঠোঁটে এক টুকরো হাসি ফুটে উঠল। বলল, ব্ল্যাক। ক্রসের হাত তাহলে আফ্রিকান জাতীয়তাবাদীদের উপরও উঠেছে!

স্যার মনে হচ্ছে ওদের চেনেন? বলল মেয়েটি।

 শুধু চিনি নয়, খুব বেশি পরিমাণে চিনি। সম্ভবত তোমাদের চেয়ে আমি ওদের বড় শত্রু।

 কথাটা বলেই আহমদ মুসা প্রসংগ পাল্টিয়ে বলল, তোমার নাম, যদি আপত্তি না থাকে।

নাদা ডেনিসা। বলল মেয়েটি।

 তোমার সাথের লোকরা কোথায়? জিজ্ঞাসা আহমদ মুসার।

মনে হয় ওরা আমাকে কাপিরি এমপোসিতেই খোঁজ করছে। বলল নাদা ডেনিসা মেয়েটি।

এতটা সময়েও ওদের জানাওনি? আহমদ মুসা বলল।

দুর্ভাগ্য আমার, মোবাইলে চার্জ নেই। বলল নাদা ডেনিসা। আহমদ মুসা তাকাল মাকার দিকে।

মোবাইল দিচ্ছি স্যার। বলে পকেট থেকে মোবাইল বের করে মেয়েটার দিকে তুলে ধরল।

ধন্যবাদ বলে মেয়েটা মাকার হাত থেকে মোবাইল নিয়ে তল করল। সাথীদের পেয়ে গেল। জানাল সে সব ঘটনা। এক সময় মোবাইল মুখের সামনে থেকে সরিয়ে বলল, আমাকে কোথায় এসে পাবে, সেটা ওদের

জানাতে হবে।

 মাকা ওদের গ্রামের নাম ও তাদের নাম্বার বলল মেয়েটাকে। মেয়েটা ঠিকানাটা ওদের জানিয়ে দিল।

নাদা ডেনিসার কল ক্লোজ হলে আহমদ মুসা মাকাকে লক্ষ্য করে বলল, লাশগুলোর কি করা যায় মাকা?

 স্যার, যদি আমরা পুলিশকে এড়াতে চাই, তাহলে নদীতে ডুবিয়ে দেয়াই ভালো। বলল মাকা।

পুলিশের ঝামেলায় অবশ্যই আমরা যাব না। তাহলে লাশগুলো নদীতে ফেলার ব্যবস্থা করতে হয়। আহমদ মুসা বলল।

ভাববেন না স্যার, আমি ব্যবস্থা করছি। বলল মাকা।

 শোন, লাশ টানাটানির জামেলায় না গিয়ে ওদের গাড়িটা এখানে নিয়ে এসো। লাশগুলো গাড়িতে তুলে দরজা লক করে গাড়িটা নদীতে ফেলে দাও। আহমদ মুসা বলল।

ঠিক বলেছেন স্যার, আমি এটাই করছি। আপনারা বরং বাড়ির দিকে যান। বলল মাকা।

মাকার মা দাদীরা সবাই আহমদ মুসাদের কাছে চলে এসেছিল। গোলা গুলিও তারা কিছু দূরে দাঁড়িয়ে দেখেছে। তাদের সকলের চোখ মুখ ভয় বিস্ময়ে পীড়িত। দু দুটি রিভলভারের টার্গেট হয়েও অস্ত্রধারী ছয়জনকে আহমদ মুসা চোখের পলকে হত্যা করল, এটা তাদের কাছে সিনেমার শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্যের চেয়েও বড় মনে হচ্ছে। এই বিস্ময় ছাড়াও একটা ভয়ও তার মনে উঁকি দিচ্ছিল। যদিও খুনোখুনি জাম্বিয়ার এ এলাকায় অপরিচিত কিছু নয়, তবু থানার ঝামেলায় পড়তে কেউই চায় না। লাশের একটা নিরাপদ ব্যবস্থা হতে দেখে তাদের মনে সাহস অনেকটা ফিরে এলো। দাদী আহমদ মুসাদের লক্ষ করে বলল, ভাই তোমরা এসো, আমরা বোনটিকে নিয়ে যাই। ওর উপর অনেক ধকল গেছে।

 নাদা, কোনো আপত্তি নেই তো? সড়কের পাশেই আমাদের বাড়ি। বলল মাকার যা নাদা ডেনিসাকে লক্ষ করে।

অবশ্যই না। আপনারা আমার মান সম্মান ও জীবন রক্ষা করেছেন।

আমি কৃতজ্ঞ আপনাদের কাছে। নাদা ভেণিমা বলল।

সুরিয়া গিয়ে নাদার হাত ধরে বলল, চলো ভাই। নাদাকে নিয়ে দাদীরা চলে গেল। নাদার গাড়িতেই গেল ওরা।

গাড়ি সমেত লাশগুলোর সুব্যবস্থা করে আহমদ মুসা ও মাকা বাড়িতে। চলে এলো।

মাকার মা দাদীরা নাদাকে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে নাস্তা সারল। আহমদ মুসা ও মাকা নাস্তা করল আহমদ মুসার ঘরে।

নাস্তা শেষে মাকা চলে গিয়েছিল মায়ের ডাক শুনে।

নাস্তা খাওয়ার পর ঘরের মধ্যেই কিছুক্ষণ পাইচারী করেছিল আহমদ মুসা। তারপর শুয়ে পড়ে একটু রেস্ট নেবার নিয়তে। কিন্তু ঘুমিয়ে পড়ে।

দুঘণ্টা পরে ঘুম থেকে জাগে মাকার ডাকে। মাকা বলে, স্যার, নাদা ডেনিসার সাথীরা এসেছে। আপনার সাথে কথা বলতে চায়।

কখন এসেছে ওরা? বলল আহমদ মুসা।

 প্রায় ঘণ্টাখানেক আগে। ওদের নাস্তা করানো হয়েছে। আপনি ঘুমাচ্ছিলেন বলে ডাকা হয়নি। মাকা বলল।

ওরা কয়জন? বলল আহমদ মুসা।

 ওরা সাতজন। মাকা বলল।

 চলো যাই। বলল আহমদ মুসা।

ওদের বসানো হয়েছে বাইরের ড্রইংরুমে। রুমটা অনেক বড়। দুই দিকে সোফাসেট। অন্যপাশে একটা বড় ডাইনিং টেবিল সেট করা। ডাইনিং টেবিলে আটটি চেয়ার।  ঘরে একসেট সোফা ছাড়াও বেশ কয়েকটি কুশন চেয়ার রয়েছে।

আহমদ মুসা ও মাকা প্রবেশ করল ড্রইং রুমে।

ওদের সাতজনের পাঁচজন সোফায় বসে আছে। দুইজন বসে আছে। কুশন চেয়ারে। আর নাদা ডেনিসা বসে আছে এক সিংগল সোফায়। আহমদ মুসা বুঝল, নাদা ডেনিসা সংগঠনের একটু উচ্চপদে আছে। একক একটা গাড়িও তার একটা প্রমাণ।

আহমদ মুসারা প্রবেশ করতেই তড়াক করে উঠে দাঁড়াল নাদা ডেনিসা। কয়েক ধাপ এগিয়ে এসে আহমদ মুসাকে দেখিয়ে বলল, এই স্যারই আমাকে বাঁচিয়েছেন। দুটি রিভলভারের গুলিরমুখে নিজের রিভলভার বের করে দুই রিভলভারধারীসহ আরো চারজনকে হত্যা করেছেন চোখের পলকে। পরের চারজনও রিভলভার বের করেছিল, কিন্তু গুলি করার সময় পায়নি। গুলি চালনায় এমন ক্ষিপ্র কেউ হতে পারে তা আমার কল্পনাতেওঁ ছিল না।

একটু থামল নাদা ডেনিসা। সংগে সংগেই আবার বলে উঠল, স্যার আসুন, বসুন। এরা সকলেই আমার সংগঠনের সাথী।

বিশেষ একজনের দিকে আঙুল তুলে বলল, ইনি আমার বড় ভাই, রিংগু রবার্ট। আমাদের আট জনের টিমের তিনি অধিনায়ক। আর আমি সহঅধিনায়ক।

একে একে টিমের অন্য ছয়জন সদস্যেরও নাম বলল নাদা। শেষে বলল, স্যার আপনার নাম জানি না এই জন্যে বলতে পারিনি। দয়া করে কি বলবেন আপনার নাম? বাড়ির মেয়েরা মানে মা, দাদী ও ভাবীরাও আপনার নাম বলতে পারেনি।

নাদা, আমি মিথ্যা বলি না আবার সময় বিশেষে সত্যও প্রকাশ করা যায় না। এটা আমার মজবুরী। বলল.আহমদ মুসা।

নাদারা সংগে সংগে কিছু বলল না। তারা চাইল একে অপরের মুখের দিকে। অল্প কিছুক্ষণ নীরবতা।

নীরবতা ভেঙে নাদাই বলল, আপনি ব্ল্যাক ক্রসকে জানেন কি করে? ওরা আমার পুরানো শত্রু। আজ আমি যে জাম্বিয়ায়, এটাও ব্ল্যাক ক্রস, ওকুয়া, কোক প্রভৃতি সন্ত্রাসবাদী খ্রিস্টান সংগঠনের কারণে। বলল আহমদ মুসা।

কীভাবে? নাদা ও তার ভাই রিংগু রবার্ট প্রায় এক সাথেই বলে উঠল।

 দুদিন আগে আমাকে দারুস সালাম বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন থেকে কিডন্যাপ করে একটা কফিনে ভরে আমাকে লুসাকায় আনা হয়। ব্ল্যাক ক্ৰসরাই এই কিডন্যাপের ব্যবস্থা করে। আজ ব্ল্যাক ক্রস, কোক ও ওকুয়ার প্রধানরা লুসাকায় আসার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই আমি মুক্ত হয়েছি। বলল আহমদ মুসা।

হ্যাঁ, আমরাও এ খবর পেয়েছিলাম যে, দারুস সালাম বিমানবন্দর থেকে বড় কাউকে কিডন্যাপ করে লুসাকা নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা আরো খবর পেয়েছি সৌদি আরব, তুরস্ক ও অন্য কয়েকটি মুসলিম দেশের সরকারসহ চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া সবাই তানজানিয়া ও জাম্বিয়ার উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করায় দারুস সালাম ও লুসাকায় প্রায় জরুরি অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলা যায়। তাহলে দুনিয়ায় হুলস্থুল সৃষ্টি করা সেই গুরুত্বপূর্ণ লোকটি আপনিই স্যার। নাদার ভাই রিংগু রবার্ট বলল। তার চোখে-মুখে বিস্ময় ও অপার কৌতূহল।

স্যার, আমাদের কৌতূহলের মাত্রা এবং আপনার সম্পর্কে জানার ইচ্ছা আরো তীব্র হয়ে উঠল। আপনি অতি অসাধারণ কেউ না হলে চীন, রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, সৌদি আরবকে এক সাথে এক কথার উপর নিয়ে আসা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। বন্দুক হাতে আপনার যে ক্ষীপ্রতা দেখেছি, আলোচনায় আপনার যে সহৃদয়তা দেখেছি, একজন পরাজিত, আশ্রিতকে বোন বলে সম্বোধনের যে মন আপনার দেখেছি, তা শুধু আপনার বড়ত্ব নয়, তা আপনার অনড় আদর্শবাদিতারও প্রমাণ। নাদা ডেনিসা বলল।

স্যরি বোন, আলোচনাটা ব্যক্তিকেন্দ্রিক না হয়ে বিষয়ের উপর থাকলেই ভালো হয়। বলল আহমদ মুসা।

ধন্যবাদ ভাইয়া, আপনার এ কথাও বড়ত্ব, নিঃস্বার্থতা ও প্রশংসা বিমুখতার আরো একটা প্রমাণ। দুঃখিত আপনার উপর এত কথা বলার জন্যে। নাদা বলল।

স্যার, ব্ল্যাক ক্রসের সাথে আপনার বিরোধ কিসের, কি নিয়ে? বলল রিংগু রবার্ট।

আপনাদের সাথে ব্ল্যাক ক্রসের বিরোধ যে কারণে আমার সাথেও একই কারণে। আপনারা আফ্রিকানদের ধর্ম-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য ওদের হাত থেকে রক্ষা করতে চান। আর আমি আফ্রিকান মুসলিমদের ধর্ম-সংস্কৃতি, জমিজমা সম্পত্তি ওদের গ্রাস থেকে বাঁচাতে চাই। গোটা আফ্রিকা অর্থাৎ একটা দৃষ্টান্ত হিসেবে আফ্রিকার মধ্য পশ্চিম উপকুলের কথাই ধরুন- ওরা আফ্রিকার দক্ষিণ থেকে গোপনে মুসলিম উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে গ্যাবন, গিনীবিসাউ হয়ে ক্যামেরুন পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। আইনের চোখ এড়িয়ে অর্থ ও সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়ে মুসলিমদের লক্ষ লক্ষ একর জমি ওরা দখল করে নিয়েছে। এর ফলে হাজার হাজার মুসলিম পরিবার উচ্ছেদ হয়ে গেছে। ফ্রান্সে আশ্রয় নেয়া ক্যামেরুনের একটি মুসলিম পরিবারের উপর অবিচারের মোকাবিলা করতে গিয়ে আমি ক্যামেরুনে যাই এবং গোটা বিষয়টা আমার নজরে আসে। বিষয়টা আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ করে এর প্রতিবিধানে নামি। সংঘাত শুরু হয় গোপন ভূমি দখলকারী ঐ সংগঠন ব্ল্যাক ক্রস, কোক ও ওকুয়ার সাথে। সংঘাতে…।

আহমদ মুসার কথার মাঝখানেই উঠে দাঁড়িয়ে নাদা ডেনিসার ভাই রিংগু রবার্ট বলতে শুরু করে, স্যার, আপনার পরিচয় আমরা পেয়েছি। আপনি আহমদ মুসা, যার নাম গোটা দুনিয়ায়। আমরা সবাই জানি, ক্যামেরুনে আপনি যা ঘটিয়েছেন, তা একটা মিরাকল। এভাবে লক্ষ লক্ষ একর জমি উদ্ধার হয়, উচ্ছেদকৃত মানুষের জন্য ক্ষতিপুরণ আদায় করা যায়, তা এক অকল্পনীয় ব্যাপার। আপনি সেটাই বাস্তবে করেছেন। যদিও আপনার নাম প্রচার হয়নি, সরকার জানলেও তা সরকারি লোকরা প্রকাশ করেনি। কিন্তু সংগঠন সূত্রে সবকিছুই আমরা জানতে পেরেছি। আপনাকে আমাদের সবার পক্ষ থেকে স্যালুট স্যার।

ওদের পাপের মোলকলা পূর্ণ হয়েছিল, যা ঘটাবার আল্লাহই ঘটিয়েছেন। সেবার আমি সংঘনদীর তীরে কংগোর বোমাসায় এসেছিলাম।

কথাটা শেষ করেই আহমদ মুসা বলে উঠল, থাক এসব কথা, আপনাদের কথা শুনি। আমার জানা মতে পূর্ব কংগোতে সক্রিয় দলগুলোর মধ্যে আপনাদের FDLR সবচেয়ে বড় সংগঠন। M-23 এর এখন অবস্থা কি?

  ওদের বড় একটা হটকারিতায় ওদের এখন দুর্দিন চলছে। ওদের নেতা নতাংগাদা এখন হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের সম্মুখিন। দলটি এখন একেবারেই নিষ্ক্রিয়। বলল রিংগু রবার্ট।

 FLN এখন বুরুন্ডিতে কি কাজ করছে? জিজ্ঞাসা আহমদ মুসার।

 FLN আসলে হুতুদের একটা এথনিক সংগঠন। হুতু ও তুতসিদের রাজনৈতিক আপোষ মীমাংসা হবার পর বুরুন্ডির রাজনীতিতে এরা নাকগলায় না, তার প্রয়োজনও হয় না। বান্টু বংশোদ্ভূত হুতুরা মোট জনগোষ্ঠীর ৮৫ ভাগ, তুতসীরা মাত্র ১৪ শতাংশ। FLN আমাদের মতোই খ্রিস্টানদের গোপন অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সক্রিয়। বলল রিংগু রবার্ট।

যাক, গোপন খ্রিস্টান গ্রুপগুলোর অপতত্রতা এখন কংগো, বুরুন্ডি, রোয়ান্ডা, তানজানিয়া অঞ্চলে কেমন? আহমদ মুসা বলল।

গোটা আফ্রিকায় মানে মধ্য আফ্রিকায় গোপন খ্রিস্টান গ্রুপগুলোর অপতৎপরতা একই রকম। তবে আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল ও মধ্য অঞ্চলের রাজ্যগুলোতে ওদের অর্থ ও গায়ের জোর বেশি। আর পূর্বাঞ্চলে ওদের শিক্ষা-সংস্কৃতির আগ্রাসন বেশি। স্যার, তার সাথে যুক্ত রয়েছে গোপন নির্মূল প্রোগ্রাম। এসব আমরা শুনি, জানি, কিন্তু কিছু করার মতো সুযোগ-সামর্থ্য আমাদের নেই। বলল রিংগু বরার্ট।

কথা শেষ করেই আবার শুরু করল, স্যার, আসুন না ঐ অঞ্চলে। অনেক কিছু জানতে পারবেন। আমরা খুব খুশি হবো। আপনার কাছে আমাদের শেখার অনেক কিছু আছে।

আমি বুরুন্ডির বুজুমবুরার দিকে যেতে পারি। আফ্রিকার লেক আর বনাঞ্চল আমার খুব ভালো লাগে। বলল আহমদ মুসা।

আপনি বজুমবুরায় গেছেন এটা আমরা জানতে পারলে খুশি হবো স্যার। রিংগু বরার্ট বলল।

জানাবো কীভাবে? বলল আহমদ মুসা।

রিংগু বার্ট তাকাল নাদার দিকে।

 আমি ওয়্যারলেস কোড স্যারকে দিচ্ছি ভাইয়া। নাদা ডেনিসা বলল।

ছোট একটা কার্ড তুলে দিল নাদা আহমদ মুসার হাতে। বলল নাদা, স্যার, বোন ডেকেই কি শেষ? বুজুমবুরা গেলে বোনের বাড়িতে আপনাকে যেতে হবে। স্যার, আমার শহর মোম্বার হলো কাসুংগো শহরের প্রায় লাগোয়া, কংগোর কাসুংগো শহরের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। এমন শহর। উত্তর আফ্রিকা, সুদান ও জাঞ্জিবার এলাকা ছাড়া গোটা আফ্রিকায় আর পাবেন না স্যার। আর বুজুমবুরা থেকে এর দূরত্বও বেশি নয়। বুজুমবুরার খুব কাছাকাছি লেক ট্যাঙ্গানিকার তীরে কংগোর সীমান্ত শহর বুকাভু। বুকাভুর পর সড়ক পথে প্রথম শহরই হলো কাসুংগো। কাসুংগো ও আমাদের মোম্বার শহর পাশাপাশি।

লোভ তো খুবই লাগছে। এখন আল্লাহ মঞ্জুর করলেই হয়। বলল আহমদ মুসা।

 স্রষ্টা মানে আল্লাহর উপর দেখছি আপনার খুব ভরসা, খুব বিশ্বাস! নাদা বলল।

আল্লাহ আমার, আপনাদের, গোটা ইউনিভার্সের স্রষ্টা। তার প্রতি ভয়, ভরসা, বিশ্বাস সবই থাকতে হবে। বলল-আহমদ মুসা।

আমরা জন্মগ্রহণ করেছি, একদিন মরে যাব, যেমন গাছ জন্মগ্রহণ করে মরে যায়। গাছের ভবিষ্যৎ নেই, আমাদেরও নেই। তাহলে ভয়, ভরসা, বিশ্বাসের দরকারটা কি স্যার? নাদা বলল।

গাছের দেখার জন্যে চোখ নেই, শোনার জন্যে কান নেই, অনুভব করার জন্যে মন নেই, চিন্তা করার জন্যে মাথা নেই, আমাদের মতো পরিবার নেই, সমাজ নেই, সমাজ ব্যবস্থা নেই, রাষ্ট্র নেই, রাষ্ট্র ব্যবস্থা নেই। এ সবকিছুই মানুষের আছে, সুতরাং মানুষের ভবিষ্যৎ আছে। বলল আহমদ মুসা।

স্যার, মানুষের সে ভবিষ্যৎ কি? নাদা বলল।

দেখ, মানুষ অন্যায় করে আবার ন্যায়ও করে। অন্যায়ে উৎসাহ দেয়া হয় আবার অন্যায়ের প্রতিরোধও করা হয়। মানুষকে কাঁদানো হয়, হাসানোও হয়। দুনিয়াতে অনাচার আছে, সদাচারও আছে। বিনীত মানুষ আছে, দুর্বিনীত মানুষও আছে। ক্রোধ আছে আবার ক্ষমাও আছে। লোভ আছে তার পাশে ত্যাগও আছে। যুদ্ধের হুংকার আছে আবার আছে শান্তির প্রয়াসও। এভাবে দেখ দুনিয়াতে মনুষ্য সমাজে বিপরীতমুখী দুরকমের কাজ অব্যাহতভাবে চলে আসছে। প্রশ্ন কি জাগে না, বদগুণ ও সদগুণ যে ফল দিচ্ছে, তা কি বৃথাই যাবে? তার কোনো প্রতিফল বা পরিণতি নেই? সদাচারী ও দুরাচারী তাদের স্ব স্ব কাজের ফল কি পাবে না? অবশ্যই পাবে। এই পাওয়াটাই মানুষের ভবিষ্যৎ। বলল আহমদ মুসা।

ফলটা কি? নাদা বলল।

হাসল আহমদ মুসা। বলল, তোমার প্রশ্নের উত্তর দুনিয়ার সাধারণ মানুষরা জানে না। উত্তরটা অদৃশ্য জগতের সাথে জড়িত। এই উত্তর আল্লাহ তাঁর বার্তাবাহী প্রফেট, নবী-রসুলদের মাধ্যমে মানুষকে জানিয়েছেন। আল্লাহর দেয়া সেই বার্তা আমি তোেমাদের বলতে পারি।

 বলুন স্যার, আমরা মানুষের মৌল এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাই, বুঝতে চাই। নাদা বলল।

এই উত্তর আমাদের ধর্মগ্রন্থ আল কোরআনে অনেক জায়গায় অনেকভাবে দেয়া হয়েছে। আমি দুএকটা দৃষ্টান্ত তুলে ধরছি। আমাদের কোরআন মজিদের এক জায়গায় বলা হয়েছে যে, তিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন মানুষকে পরীক্ষার জন্যে, কে তাদের মধ্যে কাজের দিক দিয়ে উত্তম। কোরআন মজিদের আরেক জায়গায় আল্লাহ বলেছেন, আমরা তাদেরকে পরীক্ষা করব। তাই আমরা তাদেরকে করেছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন। নিশ্চয় আমরা তাদের পথনির্দেশ দিয়েছি, হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, না হয় সে অকৃতজ্ঞ হবে। এখানে আল্লাহর দুই উক্তিতে যা বলা হয়েছে, তা কি সবার কাছে পরিষ্কার?

নাদাই উত্তর দিল, হ্যাঁ, পরিষ্কার হয়েছে। প্রথম উদ্ধৃতিটিতে পরীক্ষার বিষয়বস্তু বলা হয়েছে কাজকে। দ্বিতীয় উদ্ধৃতিতে বলা হয়েছে আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করবেন বলেই তাকে জ্ঞান সম্পন্ন করা হয়েছে। কিন্তু উদ্ধৃতির শেষ অংশের পথনির্দেশ দেয়া এবং কৃতজ্ঞ ও অকৃতজ্ঞ হওয়ার ব্যাপারটা আমার কাছে পরিষ্কার হয়নি, মনে হয় কারো কাছেই তেমন পরিষ্কার হয়নি।

আল্লাহ রাব্বল আলামিন এখানে যে কথা বলেছেন তার মূল বক্তব্য হলো, পরীক্ষায় ভালো করার জন্যে মানুষ যাতে আল্লাহ ও তাঁর বার্তাবাহী। নবী-রাসুল-নির্দেশিত কাজসমূহ করতে পারে এবং মন্দ কাজ ও মন্দ পথ এড়িয়ে যেতে পারে এজন্যে আল্লাহ মানুষকে দুটি জিনিস দিয়েছেন। এক. বুদ্ধি-জ্ঞান-বিবেক, দুই, নবী-রসুলদের মাধ্যমে পাঠানো আল্লাহর পথ। নির্দেশ। এই পথ নির্দেশই হলো ধর্ম বা জীবন-ব্যবস্থা। কৃতজ্ঞ হওয়া, অকৃতজ্ঞ হয়ে যাওয়ার বিষয় মানুষের পরীক্ষার সাথে সম্পর্কিত। আল্লাহ মানুষকে যে পথনির্দেশ বা ধর্ম দিয়েছেন তা মানুষের উপকারের জন্যেই। পরীক্ষায় ভালো ফল করার জন্যে এই যে সাহায্য আল্লাহ মানুষকে করলেন সেজন্যে মানুষের কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত আল্লাহর কাছে। অন্যদিকে মানুষ আল্লাহর পথনির্দেশকে উপেক্ষা করা এবং মানুষের প্রতি আল্লাহর দয়াকে অস্বীকার করাই অকৃতজ্ঞতা। আল্লাহ যেহেতু মানুষকে পরীক্ষার মাধ্যমে পুরস্কার ও শাস্তির জন্যে বাছাই করতে চান, তাই কৃতজ্ঞ হওয়া অকৃতজ্ঞ হওয়া- দুই অধিকারই আল্লাহ মানুষকে দিয়েছেন। বলল আহমদ মুসা।

ধন্যবাদ-স্যার, বুঝতে পেরেছি। কিন্তু একটা সমস্যা আছে, ধর্ম তো একটা নয়। কোটা মানবো, কোষ্টা বাদ দিব? নাদা বলল।

 এটা প্রকৃতই কোনো সমস্যা নয়। আল্লাহ আগে পাঠানো নবী বা রাসুলের ধর্মীয় বিধান বাতিল করার পর আরেকজন নবী বা রাসুল পাঠান। নতুন নবী, বা রাসুল আসার পর আগের নবী-রাসুলের বিধান সবকিছুই বাতিল হয়ে যায়। সংবিধান ও সরকারের পরিবর্তনের মতোই ব্যাপারটা। সংবিধান ও সরকার পরিবর্তন হলে নতুন সংবিধান ও নতুন সরকারই কার্যকরী থাকে। বলল আহমদ মুসা।

 হাসল নাদা। বলল, তাহলে তো স্যার এখন ধর্ম হিসেবে শেষ নবী আনীত ইসলামই একমাত্র কার্যকরী থাকছে। নাদা বলল।

  হ্যাঁ, এটাই সত্য। শেষ ধর্ম ইসলামই কিয়ামত কাল পর্যন্ত মানুষকে পথ দেখাবে, মানুষের জীবন পরিচালনায় মানুষের সব প্রয়োজন পূরণ করবে। বলল আহমদ মুসা।

  ধন্যবাদ স্যার, কথা প্রসংগে আপনার আলোচনা ও যুক্তিপূর্ণ কথাগুলো

আমাদের অশেষ উপকার করবে। ধর্মের প্রয়োজনের কথা, জীবনে তার অপরিহার্যতার কথা এভাবে শোনার কোনো সুযোগ আমাদের জীবনে কখনো হয়নি। মানুষের জন্যে আল্লাহর পরীক্ষা, পরীক্ষার বিষয়, ফলাফল ও তার পরিণতির দিকটি সত্যি আমাকে অভিভূত করেছে। মনে হচ্ছে, আমাদেরকে এখানে ঈশ্বরই এনেছেন আপনার এই মূল্যবান কথাগুলো শোনার জন্যেই। যে আলোর সন্ধান এখানে পেলাম, তাকে যেন উজ্জ্বলতর করতে পারি, এই প্রার্থনা আপনার কাছ থেকে আমরা আশা করি। বলে একটু থামল রিংগু রবার্ট।

সবার দিকে তাকিয়ে একটু সোজা হয়ে বসে বলল, স্যার এবার আমরা উঠতে চাই।

সংগে সংগেই মাকা বলে উঠল, মা বলেছেন আপনারা দুপুরে খেয়ে যাবেন।

আপনার মার কাছে আমরা ক্ষমা চাচ্ছি মাকা ভাই। নাদার হঠাৎ বিপদ হওয়ায় অনেকটা সময় আমাদের নষ্ট হয়েছে। আমাদের কাজটা খুব জরুরি। এখনি আমাদের বেরুতে হবে।

মাকার উদ্দেশ্যে কথা শেষ করেই আহমদ মুসাকে লক্ষ করে বলল অনুমতি দেন স্যার। বলে উঠে দাঁড়াল রিংগু রবার্ট।

তার সাথে সাথে নাদাসহ সবাই উঠে দাঁড়াল।

আহমদ মুসাও উঠল। হ্যান্ডশেক করল সবার সাথে। রিংগু রবার্ট-এর সাথে হ্যান্ডশেক করে বলল, ধন্যবাদ আপনাদের সাথে দেখা হওয়ায় কংগোসহ লেক ট্যাঙ্গানিকা অঞ্চলের পরিস্থিতি আমার কাছে অনেক স্বচ্ছ। হয়েছে।

 আর স্যার আপনার সাথে দেখা হওয়া আমাদের এক বিরাট সৌভাগ্য। আপনাকে ভুলতে পারব না কোনো দিন। আপনি সাধারণ হয়েও অতিবেশি অসাধারণ। আপনার ধর্ম নিষ্ঠা আমাকে চমৎকৃত করেছে। আপনার কাছ থেকে এক নতুন জীবনের সন্ধান নিয়ে যাচ্ছি।

 ধন্যবাদ নতুন জীবনের সন্ধান যেন আপনাদের নতুন মানুষ করে, আল্লাহর কাছে এটা আমার প্রার্থনা। বলে আহমদ মুসা ঘুরে দাঁড়াল নাদার দিকে।

স্যার, আমার সব প্রশ্নেরই আপনি জবাব দিয়েছেন, শুধু একটা প্রশ্ন তোলা রইল ভবিষ্যতের জন্যে। সেটা হলো, আপনি সেন্ট না হয়ে সংগ্রামী হলেন কি করে?

আহমদ মুসা হাসল। বলল, তোমার এই প্রশ্নের পঁচিশ পারসেন্ট উত্তর আমি এখনই দিয়ে দেই। সেন্ট যদি হন ধর্ম বিষয়ে জ্ঞানী, তাহলে আমি সেন্টও, সংগ্রামীও এবং সংসারীও। আমার রাসুল (সা.) তাই ছিলেন।

না স্যার, আর এগোবেন না। প্রশ্নটা ভবিষ্যতের জন্যে ভোলা থাকল। ভবিষ্যতকে বর্তমানে টেনে আনলে আপনার সাক্ষাৎ পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে যাবে। তবে যে পঁচিশ পারসেন্ট বলেছেন, তাতে আমার ভালোই হলো। আগামীতে আপনার সাথে সাক্ষাৎ পর্যন্ত সময়টা আমার এর ব্যাখ্যাতেই কেটে যাবে। বলল নাদা।

নাদা, তুমি সত্য সন্ধানী হও। ভালো থেকো। আহমদ মুসা বলল।

স্যার, যে জীবনটাকে আপনি বাঁচিয়েছেন, সে জীবন যেন স্রষ্টার কাছে। চূড়ান্ত পুরস্কারের উপযুক্ত হয়, আপনার কাছে এই প্রার্থনা আমি চাই। বলল নাদা।

আমিন। আহমদ মুসা বলল। সবাই ড্রইং রুম থেকে বেরিয়ে এলো। গাড়িতে উঠল সবাই। রিংগু রবার্ট এবং নাদা ডেনিসা এক গাড়িতে উঠল।

সবাই হাত নেড়ে বিদায় জানানোর মধ্য দিয়ে তিনটি গাড়ি এক সাথে যাত্রা শুরু করল।

.

না ভাই আহমদ মুসা, সুলতান মাকানজিলার গুপ্তধনের প্রতি আমাদের কোনো অধিকার নেই। বলল দাদী।

ফ্যামিলি ড্রইংরুমে আহমদ মুসা, দাদী, মাকার মা, মাকার ভাবী, বোন সুরিয়া এবং মাকা সোফায় গোল হয়ে বসেছে। নাস্তার পর এ বৈঠকের। আয়োজন আহমদ মুসাই করেছে। সবাই বসলে আহমদ মুসা বলেছে, সুলতান মাকানজিলার ধনভাণ্ডার নিয়ে আপনারা আরো কি ভাবলেন এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত। ধনভাণ্ডারের ব্যবস্থাপনা আপনাদের পবিত্র দায়িত্ব।

আহমদ মুসার এ প্রস্তাবের উপরই আলোচনা শুরু হয়েছিল। দাদীর এই সিদ্ধান্তকরী উক্তির পর সবাই তার দিকে তাকিয়ে ছিল। যে চোখগুলো দাদীর দিকে ছিল তা ঘুরে আবশেষে নিবদ্ধ হলো আহমদ মুসার উপর।

  দাদী, সুলতান মাকানজিলার এই ধনভাণ্ডার তাঁর উত্তরসূরিদের জন্যে গচ্ছিত রাখা হয়েছে। আপনাদের অধিকার নেই বলছেন কেন? সুলতান মাকানজিলার ইচ্ছার প্রতি এটা অবমাননা। আহমদ মুসা বলল।

দুঃখিত, তাঁকে এবং তাদেরকে অবমাননা করার স্পর্ধা আমাদের নেই। তারা আমাদের দেহের অংশের মতো। তাদের প্রতি আমাদের লক্ষ কোটি শ্রদ্ধা। আমি বলেছি, তার দেয়া দায়িত্ব গ্রহণে আমাদের অযোগ্যতার কথা। বলল দাদী। এ দাদী, আল্লাহ আপনাদের যোগ্য বিবেচনা করেছেন, আর আপনারা নিজেদের অযোগ্য বলছেন। এটা আল্লাহর ইচ্ছার বা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কথা বলার শামিল। আহমদ মুসা বলল। তা না, আমি তা মনে করিনি। আল্লাহ আমাকে মাফ করুন। আমি যে কথা বলতে চাচ্ছি তা হলো আমাদের যোগ্যতায় এ রকম একটা বংশীয় ধনভাণ্ডার লুকানো আছে তা আমরা জানতে পারিনি। জানার জন্যে মুসলমানদের ধর্মীয় যে ভাষা আরবি জানা দরকার, তা আমাদের কারো জানা নেই। এমনকি আমরা তা জানার চেষ্টাও করিনি। গোপন ধনভাণ্ডার উদ্ধারের যে সংকেতগুলো দেয়া হয়েছে, আমি আমাদের মধ্যে আলোচনা করে দেখেছি, আমরা কেউ তা বুঝতেই পারিনি। এমন অযোগ্য লোকদের হাতে বংশের। পবিত্র ধনভাণ্ডার আসবে তা আমরা মনে করতে পারছি না। ভাই, তুমি না আসলে, তোমার সাথে দেখা না হলে আমরা জানতে পারতাম না যে, আমরা সুলতান মাকানজিলার বংশের উত্তরসূরি। জানতে পারতাম না তার কাহিনী, ইচ্ছা ও তার রেখে যাওয়া গোপন ধনভাণ্ডারের কথা। ধনভাণ্ডার উদ্ধারের ক্ষেত্রেও আমাদের চেষ্টায় আমরা কিছুই করতে পারতাম না। আমাদের অযোগ্য ভাবার কারণ এগুলোই।

আল্লাহ মানুষকে সাহায্য করেন নানা উপলক্ষ এবং মাধ্যমেই। বলুন তো, আমাকে এখানে এনেছেন কে? আহমদ মুসা বলল।

আল্লাহ। বলল মাকার মা।

বলুন তো আপনাদের বংশের পরিচয় সম্পর্কে আমাকে বলল কে? আহমদ মুসা বলল!

অবশ্যই আল্লাহ। মাকার মা-ই বলল।

বলুন তো আপনাদের পূর্বপুরুষদের কাগজপত্র আপনাদের কাছ থেকে আমাকে পড়াল কে? আহমদ মুসা বলল।

 নিশ্চয় আল্লাহই পড়িয়েছেন। বলল মাকার মা।

 তাহলে বলুন তো মা, এই সব ঘটনার লক্ষ কে, উপলক্ষ কে? আহমদ মুসা বলল।

 মাকার মা হাসল। বলল, অবশ্যই আমাদের বংশ এখানে লক্ষ এবং তুমি উপলক্ষ।

 হেসে উঠল মাকার দাদীও। বলল, ভাই তুমি আহমদ মুসা। অঢেল শক্তি, সাহস, বুদ্ধি, কৌশল আল্লাহ তোমাকে দিয়েছেন। আমাদের ক্ষুদ্র বুদ্ধি, চিন্তাকে তুমি মাফ করো ভাই। বুঝতে পারলাম, আমাদেরকে সাহায্যের জন্যেই আল্লাহ তোমাকে এখানে এনেছেন। আল্লাহর হাজার শোকর। আল্লাহ তোমার মতো এত বড় মানুষকে আমাদের মতো অতিক্ষুদ্র মানুষের সাহায্যে এনেছেন, যারা তাদের ধর্ম বিশ্বাসকে পর্যন্ত ঠিক রাখতে পারেনি। কান্নায় রুদ্ধ হয়ে গেল দাদীর গলা।

দাদী আল্লাহ আপনাদের মাফ করেছেন নিশ্চয়। আল্লাহর ক্ষমার দরজা মানুষের পাপের চেয়ে অনেক বড়। এখন বেশি বেশি নামাজ পড়ুন এবং

 আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন। বলল আহমদ মুসা।

 ভাই আহমদ মুসা, তুমি আমাদের নামাজ শিখিয়েছ। কয়েকটা সুরা ও দোয়া লিখে দিয়েছ মুখস্থের জন্যে। এরপর আমরা কি করব? দাদী বলল।

 আমি মাকাকে বলে দিয়েছি, লুসাকার বড় মসজিদের ইমামের সাথে কথা বলেছি। তারা আপনাদের কোরআন শেখাবে, আপনাদের ভাষার কিছু ইসলামী বইপত্র তারা যোগাড় করে দেবে। আহমদ মুসা বলল।

ধন্যবাদ ভাই। আল্লাহ তোমাকে আরো বড় করুন। জগৎ জোড়া সাফল্য তোমার হাতে ধরা দিক। আমাদের মতো সর্বহারা মানুষরা সত্য পথের সন্ধান পাক। জালেমদের জুলুমের হাত ভেঙে দেয়ার মতো তোমার শক্তি আল্লাহ আরো বৃদ্ধি করুন।

দাদী কথা শেষ করে একটু থেমেই আবার শুরু করল, বল ভাই, পূর্বপুরুষদের রেখে যাওয়া ধনভাণ্ডার নিয়ে এখন আমাদের কি কাজ?

প্রথম কাজ ধনভাণ্ডার উদ্ধার করা, দ্বিতীয় কাজ সেই ধনভাণ্ডার কাজে লাগাবার ব্যবস্থা করা। বলল আহমদ মুসা।

এই দুই কাজ করার যোগ্যতা কি আমাদের আছে, সুযোগ সামর্থ্যও কি আছে। মাকার দাদী বলল।

দাদী অর্থ পেলেই সুযোগ সামর্থ্য সৃষ্টি হয়ে যাবে। চিন্তা করবেন না। বলল আহমদ মুসা।

ভাই, তোমার তো জগৎ জোড়া অভিজ্ঞতা। একটা ইংগিত দাও তো, এই অর্থ দিয়ে মুসলমানদের জন্যে কি করা যায়?

কথাটা শেষ করেই সংগে সংগে আবার বলে উঠল, তার আগে ভাই গোপন ধনভাণ্ডার উদ্ধারের জন্যে দেয়া সংকেত সম্পর্কে কিছু বলো।

সংকেত নিয়ে আমি ভেবেছি দাদী। সংকেতে যা বলা হয়েছে, আমি তা বুঝতে পেরেছি। বলল আহমদ মুসা।

 বুঝতে পেরেছ? বলা যাবে ভাই? আমার মাথায় সংকেতগুলো কিলবিল করছে। ওগুলো খুবই সাধারণ কথা। ওগুলোর মধ্যে আবার কি অসাধারণ অর্থ আছে? দাদী বলল।

আহমদ মুসা মুখ তুলে চারদিকে তাকাল। দেখল, মাকার মা ও দাদী ছাড়া আছে মাকা ও সুরিয়া। ভাবী ও ছেলেমেয়েরা উঠে অন্য কোথাও গেছে নিশ্চয়।

আহমদ মুসা কথা বলতে যাচ্ছিল তার আগেই মাকার না বলল, সকলের সামনে বলতে কি দ্বিধা করছ বাবা?

 না মা। দেখলাম একটু বাইরের কেউ কোথাও আছে কিনা। শুনলেও ক্ষতি নেই। মূল রহস্যটা তৃতীয় সংকেতের মধ্যে। তার সমাধান ওখানে পৌঁছে জায়গাটা দেখার পরেই হবে। দাদী, প্রথম সংকেতের অর্থ হলো ইয়াও পাহাড়ের মাথাটা যেদিকে একটু ঝুঁকে আছে, সেদিক দিয়ে পাহাড়ে উঠতে হবে। আর দ্বিতীয় সংকেতের দুই শব্দ আরোহন ও বিসমিল্লাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কত দূর পর্যন্ত পাহাড়ে আরোহন করতে হবে সেই নির্দেশ এখানে আছে। প্রচলিত একটা মত অনুসারে বিসমিল্লাহর একটি সংখ্যাগত মান আছে। সেই মানে যে সংখ্যা আছে, পাহাড়ে সেই পরিমাণ উঁচুতে উঠতে হবে। সেখানে উঠে কি করতে হবে তার পথনির্দেশ হলো তৃতীয় সংকেত। এক বা একাধিক গ্রানাইট পাথরে সেই পথনির্দেশ লেখা আছে, নিশ্চয় আরবি ভাষায় এবং সংকেতের সাহায্যে। থামল আহমদ মুসা।

সবাই অপলক দৃষ্টিতে আহমদ মুসার দিকে তাকিয়ে আছে। দাদী সোফা থেকে উঠল। এগোতে লাগল আহমদ মুসার দিকে।

সুরিয়া ছুটে এসে ধরে তাকে আহমদ মুসার কাছে নিয়ে গেল। দাদী তার হাত আহমদ মুসার মাথায় রেখে বলল, ভাই, আল্লাহ তোমাকে দীর্ঘজীবী করুন। তোমার বুদ্ধি আল্লাহ আরো শতগুণ বাড়িয়ে দিন। তাতে আমাদের মতো আল্লাহর বান্দাদের অনেক উপকার হবে। একটু থামল দাদী। এ বসল মাকার পাশে। বলল, ভাই আহমদ মুসা, গত দুদিন থেকে তোমার সম্পর্কে অনেক কিছু শুনেছি। সুরিয়া মানে আমাদের সাবেরা সুরাইয়া কম্পিউটার থেকে তোমার সম্পর্কে বহু কিছু বের করেছেকিন্তু এ পর্যন্ত তোমার সম্পর্কে যা শুনেছি, তার চেয়ে তুমি অনেক বড়। সংকেতের এই অর্থ তুমি কীভাবে বের করলে? আমাদের সম্মানিত পূর্বপুরুষ সুলতান মাকানজিলা মনে হচ্ছে তোমার মতো কেউ আসবে এটা সামনে রেখেই সংকেতগুলো তৈরি করেছিলেন। আমার আরো মনে হচ্ছে, আল্লাহর ইচ্ছাই সুলতান বাস্তবায়িত করেছেন। আর মহান আল্লাহর সে ইচ্ছাতেই তুমি আজ আমাদের মাঝে উপস্থিত। সুতরাং ভাই গোপন ঐ ধনভাণ্ডার উদ্ধার ও আমাদের ঘরে তোলা শুধু নয় সুলতান যেমন বলেছেন খরচের সেই রকম ব্যবস্থাও তোমাকে করে দিতে হবে। এ ব্যাপারে তোমার মাথায় কি চিন্তা আছে তার কিছুটা আমাদের বলবে ভাই? থামল দাদী।

দাদী, আমি পাঁচটা কাজের কথা ভেবেছি। এক, উত্তর জিম্বাবুয়েসহ জাম্বিয়া, মোজাম্বিক, মালাবী, পূর্ব কংগো এবং দক্ষিণ তানজানিয়া

 এই কয়েকটি দেশ ও অঞ্চলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মুসলমানদের সংখ্যা ও পরিবার গণনা করতে হবে। এই গণনার সময় কোথায় কোথায় মসজিদ-মাদ্রাসা আছে, কোথায় মসজিদ-মাদ্রাসা দরকার, স্থানের নামসহ তার একটি পরিসংখ্যান তৈরি করতে হবে। এই কাজটা গোপনে করতে হবে। উপযুক্ত পয়সার বিনিময়ে মুসলিম কিশোর যুবকদের এই কাজে লাগাতে হবে। দুই. প্রয়োজনীয় স্থানগুলোতে স্থানীয়দের অনুমতি ও সহযোগিতা নিয়ে মসজিদ মাদ্রাসা তৈরি করতে হবে স্থানীয় মুসলমানদের মাধ্যমে। যে মসজিদ মাদ্রাসার অবস্থা ভালো নয়, তার মেরামতসহ দরকার অনুসারে ইমাম ও শিক্ষকদের ব্যবস্থা করতে হবে। ইমাম ও শিক্ষকদের জাঞ্জিবার ও রাবেতায়ে আলম আল-ইসলামের মাধ্যমে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। তিন. সরকারি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ও দরিদ্র মুসলিম ছাত্রদের পড়ালেখার জন্যে সাহায্যের ব্যবস্থা করতে হবে। চার. সোহাইলি ও চিয়াও ভাষায় একটা সাপ্তাহিক পত্রিকা চালু করতে হবে। পাঁচ. যে ধনভাণ্ডার পাওয়া যাবে, তা থেকে প্রতি বছরের যাকাতের টাকা দিয়ে একটা যাকাত ফান্ড তৈরি করতে হবে। এই ফান্ডের টাকা দরিদ্র মুসলমানদের স্বাবলম্বী করার কাজে ব্যয় করতে হবে। থামল আহমদ মুসা।

দাদী, মাকার মাসহ সকলের চোখ-মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। আহমদ মুসা থামার সংগে সংগেই মাকার মা বলে উঠল, ধন্যবাদ বাবা। তুমি অল্প কথায় কত বড় কথা যে বলেছ, তা তুমিও বোধ হয় জান না। আমরা এই এলাকায় বাস করছি বলে তোমার কথার মূল্য আমরা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করছি। তুমি জান না, তুমি আমাদেরকে একটা বড় স্বপ্ন দেখিয়েছ। যে স্বপ্ন এই অঞ্চলের মুসলিমরা তাদের অবচেতন মনে যুগ যুগ ধরে লালন করে আসছে। তোমার উল্লেখিত পাঁচটি কাজ সেই স্বপ্নের সবটাই পুরণ করবে, তা হয়তো এখন বলা যাবে না। কিন্তু এই দুর্ভাগা অঞ্চলের মুসলমানদের যুগ-যুগান্তরের অসহায় কান্নার অনেকটাই হয়তো মুছে দেয়া যাবে। থামল মাকার মা। এ সংগে সংগেই দাদী বলে উঠল, পূর্বপুরুষের পবিত্র ধনভাণ্ডার আমার পরিবারের মতো কিছুই না জানা মুসলমানদের ঘরে তুলতে আমার প্রবল অনিহা ছিল। তোমার কথায় সে অনিহা দূর হয়ে গেছে। এখন ধনভাণ্ডারের অর্থ দিয়ে পাঁচটি কাজ করার যে পরিকল্পনা তুমি তুলে ধরলে, তাতে ধনভাণ্ডারের প্রতি আমার আকর্ষণ এখন এতটাই বেড়েছে যে, আজই যদি ধনভাণ্ডার আমাদের ঘরে আসত এবং কালই যদি কাজগুলো শুরু করতে পারতাম! থামল দাদী।

আল-হামদুলিল্লাহ দাদী। আপনাদের দুজনের আবেগপূর্ণ কথা আমাকে খুবই আনন্দিত করেছে। ধনভাণ্ডারের অর্থ দিয়ে যে কাজগুলো করতে হবে, তার জন্যে শ্রম, বুদ্ধির সাথে আবেগও খুব বেশি দরকার। আর দরকার দাদী মানুষের প্রতি ভালোবাসা। মানুষকে যে দান করবেন, যে সাহায্য সহযোগিতা করবেন, সেটা তাদেরকে ভালোবেসে করতে হবে এবং আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্যেই করতে হবে। যারা দান বা সাহায্য সহযোগিতা পাবে তাদের কাছ থেকে কোনো বিনিময় আশা করা যাবে না, এমনকি তারা আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ হবে- এমনটাও ভাবা যাবে না। দাদী, মা এগুলো কিন্তু আমার কথা নয়, স্বয়ং আল্লাহর হুকুম এগুলো। সুতরাং এর অন্যথা করা যাবে না। বলল আহমদ মুসা।

কোনো কথা এলো না কারো কাছ থেকে। সবার দৃষ্টি আহমদ মুসার উপর নিবদ্ধ।

বেশি সময় নিয়ে কথা বলল মাকার মা। বলল, আল্লাহর হুকুম হিসেবে যে কথাগুলো বললে বাবা, তা খুব কঠিন কথা। অন্যদিকে মানবতা বা মান মর্যাদা রক্ষার জন্যে এবং দাতার অহমিকা ও স্বার্থপরতার সমূলে বিনাশের জন্যে এই আদেশগুলো খুবই প্রয়োজনীয়। কিন্তু এই আদেশগুলো কার্যকর করার জন্যে যে ধরনের মন ও মনন দরকার, তা আমাদের কি আছে? নেই। এমন মন তৈরি করা, এমন মননের মালিক হওয়া আমাদের মতো সাধারণ মানুষের পক্ষে কতটা সম্ভব! থামল মাকার মা।

চিন্তার কিছু নেই মা, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস বা ঈমান যদি নিখাদ হয়,

  আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ বা মুসলিম হওয়া যদি আন্তরিক হয়, তাহলে আপনাতেই ঐ মন ও মনন তৈরি হয়ে যাবে। তৈরি করতে সাহায্য করবে ঈমান। ঈমান আনার অর্থ হলো, আল্লাহ ও তার রাসুল, আল্লাহর নাযিলকৃত কিতাব, আখেরাত প্রভৃতিকে মনে বিশ্বাস করা, মুখে ঘোষণা করা এবং বিশ্বাসকে কার্যকরী করা। বিশ্বাসকে কার্যকরী করার অর্থ হলো, আল্লাহ তায়ালা কোরআন মজিদের মাধ্যমে যে আদেশ-নিষেধ ও করণীয় নাযিল করেছেন এবং আল্লাহর রাসুল (সা.) যা বলে গেছেন তা মেনে চলা। সুতরাং সত্যিকার মুসলমান হলে তার প্রয়োজনীয় মন-মনন নিয়ে কোনো সমস্যা হয় না। বলল আহমদ মুসা।

ধন্যবাদ ভাই। তুমি বিষয়টা আমাদের বোঝার মতো করে পরিষ্কার করেছ। সব বিষয়ে বুঝ আমাদের হয়নি। তবে আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর প্রতি ঈমানে আমাদের খাদ নেই। আর তুমি দান, সাহায্য, ডোনেশানের ব্যাপারে আল্লাহর যে আদেশের কথা বললে তা বুঝেছি। এ অনুসারে আমরা কাজ করতে চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। দাদী বলল।

একটু থেমেই দাদী আবার বলে উঠল, ভাই তুমি আমাদের সুলতানের ধনভাণ্ডার উদ্ধার করার ব্যাপারে কি চিন্তা করছ?

দাদী এ বিষয় নিয়ে আমি মাকার সাথে আলোচনা করেছি। আমি ও মাকার দুএক দিনের মধ্যে ইয়াও পাহাড়ে যাব। বিশ্বস্ত দুএকজনকে আমরা সাথেও নিতে পারি। আমি ওদেরকে ওখানে রেখে প্রদেশের রাজধানী শহর লিচিংগাতে আসব। ওরা ইয়াও পাহাড় এলাকায় দুই রাত দুই দিন থাকবে এবং কিছু বিষয় পর্যবেক্ষণ করবে। আমিও লিচিংগাতে দুদিন থাকব। আবার এক সাথেই বাড়ি ফিরব আমরা। তারপর ধনভাণ্ডার উদ্ধারের পরিকল্পনা তৈরি করে আমরা সম্পদ উদ্ধারের অভিযানে যাব। সব কাজই আমি খুব তাড়াতাড়ি শেষ করব আল্লাহ সহায় হলে। এ সপ্তাহের মধ্যেই বুরুন্ডির বুজুমবুরায় যাবার আমার ইচ্ছা। বলল আহমদ।

 মাকার মা, দাদীসহ সবার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল ধনভাণ্ডার উদ্ধারের পরিকল্পনার কথা শুনে। কিন্তু আহমদ মুসার শেষ কথা তাদের মুখের আলো দপ করে নিভিয়ে দিল। দাদী বলল, ভাই শেষ যে কথাটা বললে, তা এত তাড়াতাড়ি না বললে হয় না?

 দাদী বিবেচনা করুন, আমি তো এখানে আসিনি। কিডন্যাপ করে আমাকে এখানে আনা হয়েছে। আমার যাওয়ার কথা ছিল অন্য জায়গায়। বলল আহমদ মুসা।

 আল্লাহ তোমাকে নিয়ে এসেছে ভাই। আমাদের কাজের জন্যেই আল্লাহ তোমাকে নিয়ে এসেছেন। তুমি না এলে কয়েকশ বছর ধরে চাপা পড়ে থাকা মাকাও বংশের কাহিনী বের হতো না, ধনভাণ্ডারের কথাও আমরা জানতাম না। আমরা খ্রিস্টানই থেকে যেতাম। আল্লাহ এই বড় কাজের জন্যেই তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন। এদিক থেকে তুমি আল্লাহরই কাজ করছ। অতএব তাড়াতাড়ি করো না ভাই। আমাদের কষ্ট দিয়ো না। দাদী বলল।

কাজ শেষ করেই যাবো দাদী। এর মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। বলল আহমদ মুসা।

তোমার সম্পর্কে তো আমরা কিছুই জানি না। তোমার নাম পরিচয় জানা গেছে এক ঘটনায়। তোমার দেশ, তোমার স্বজনদের সম্পর্কে কিছুই জানা হয়নি আমাদের, যদিও আমাদের খুব ইচ্ছা এসব জানতে। কিন্তু তুমি এমন একজন মানুষ, যার উপর চাপ সৃষ্টি করা শোভন নয়, সে সাহসও আমাদের নেই। মাকার মা বলল। তার মুখ গম্ভীর।

বলার তেমন কিছুই নেই মা। আমার জন্মস্থান আছে, সেখান থেকে বিতাড়িত হয়েছি বালক বয়সে। বলা যায়, আমার নিজস্ব বলতে নির্দিষ্ট কোনো দেশ নেই। সৌদি সরকার নাগরিকত্ব দিয়েছেন, মদিনায় একটা বাড়ি দিয়েছেন। সেখানেই স্ত্রীরা থাকেন। একটা ছোট্ট ছেলে আছে আমার। বলল আহমদ মুসা।

স্যার, আপনি কিডন্যাপড় হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, তুরস্ক, সৌদিআরবসহ অনেক দেশ এবং ওআইসি আপনার পক্ষে তানজানিয়া ও জাম্বিয়ার উপর চাপ সৃষ্টি করে। এটা কি করে সম্ভব হয়েছে? আপনি মুসলমানদের স্বার্থে কাজ করেন, মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সমর্থন সে কারণে যৌক্তিক। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া এক সাথে আপনার পক্ষে দাঁড়াল কি করে? তাদের মধ্যে তো সাপে-নেউলে অবস্থা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোনো পক্ষকে ইয়েস বললে চীন-রাশিয়া তাকে না বলে। আবার চীন রাশিয়া ইয়েস বললে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাকে না বলে। আপনার ক্ষেত্রে এসে সবাই ইয়েস হলো কি করে? সাবেরা সুরাইয়া ওরফে সুরিয়া বলল।

  ইসলামে ফিরে আসার পর মাকার পরিবারের সবার নামেই কিছু পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তনে সুরিয়ার নাম হয়েছে সাবেরা সুরাইয়া।

ওরা সবাই নিশ্চয় আমাকে ভালোবাসে সুরাইয়া। বলল আহমদ মুসা।

কিন্তু বিপরীতমুখী স্রোত আপনার ক্ষেত্রে এসে এক হয়ে গেল কি করে? সাবেরা সুরাইয়ার প্রশ্ন।

সুরাইয়া, বিশেষভাবে আমি মুসলমানদের জন্যে কাজ করলেও দুনিয়ার সর মজলুম মানুষ, অন্যায় ও ষড়যন্ত্রের শিকার সব রাষ্ট্র আমার একান্ত আপন। তাদের জন্যে কাজ করা মুসলিম হিসেবে আমার দায়িত্ব। এই ক্ষেত্রে আমার কাছে যেমন মানুষের ধর্ম-পরিচয়, জাতি-পরিচয় বড় নয়, তেমনি রাষ্ট্রের মানব রচিত বর্ডার এবং রাষ্ট্রের পরিচয় আমার কাছে কোনো বাধা হয়নি। সুতরাং কাজ করার ক্ষেত্রে আমি যেমন চীন, রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কোনো পার্থক্য করিনি, তেমনি তারাও আমার মনে হয় আমার জন্যে কথা বলার ক্ষেত্রে নিজেদের বিভক্ত করেনি। বিভিন্নমুখী উৎস। থেকে আসা আমার প্রতি তাদের ভালোবাসা আমার ক্ষেত্রে এসে একস্রোতে। মিশে গেছে। বলল আহমদ মুসা।

 আপনার মতো দুনিয়ার মুসলমানরা যদি নিজেদের জন্যে কাজ করার পাশাপাশি দুনিয়ার সব মজলুম ও বিপদগ্রস্ত মানুষ এবং জুলুম, অন্যায় ও ষড়যন্ত্রের শিকার দেশ ও রাষ্ট্রের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পারে ধর্ম-পরিচয়, জাতি-পরিচয় ও রাষ্ট্র-পরিচয়ের উর্ধ্বে উঠে- তাহলে তো স্যার, দুনিয়ার সব মানুষ, সব দেশ ও রাষ্ট্র ধীরে ধীরে মুসলমানদের আপন হয়ে যেতে পারে এবং দুনিয়ার সবার ভালোবাসা তারা লাভ করতে পারে! সাবেরা সুবাইয়া বলল।

 ধন্যবাদ সুরাইয়া, ঠিক বলেছ। আরেকটা বড় ফলও লাভ হতে পারে। দুনিয়ার মজলুম মানুষ এবং জুলুম বা অন্যায়-ও ষড়যন্ত্রের শিকার দেশ ও রাষ্ট্র মুসলমানদের এভাবে আপন করে নেয়া ও ভালোবাসার সাথে সাথে মুসলমানদের ধর্ম ইসলামও তাদের কাছে একান্ত আপন ও ভালোবাসার বস্তু হয়ে দাঁড়াতে পারে। গোটা দুনিয়াকে উইন ওভার করার জন্যে এটা অবশ্যই একটা বড় সুযোগ। মুসলমানদের কাছে আল্লাহ এটা চান এবং এর তাকিদও তিনি দিয়েছেন পবিত্র কোরআন মজিদে। বলল আহমদ মুসা।

আহমদ মুসা থামতেই দাদী বলে উঠল, তোমাদের এসব হাইথটের কথা আমি বুঝি না ভাই। তবে এটুকু বুঝলাম, আমার বোনটির মাথায় কিছু বুদ্ধি ঢুকেছে।

কিছু নয় পুরোপুরিই ঢুকেছে দাদী। যে ধনভাণ্ডার আল্লাহ আপনাদের দিচ্ছে, তার পরিচালনা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। দাদীকে চেয়ারম্যান, মাকে ভাইস চেয়ারম্যান, মাকাকে ডাইরেক্টর এবং সুরাইয়াকে নির্বাহী ডাইরেক্টর করে দিলেই আরো কিছু সদস্য নিয়ে এই কমিটি সব কার্যক্রম ও ফান্ড যোগ্যতার সাথে পরিচালনা করতে পারবে ইনশাআল্লাহ। বলল আহমদ মুসা।

আল-হামদুলিল্লাহ। আল্লাহর হাজার শোকর। আমি খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম যে, ফান্ড কীভাবে কে পরিচালনা করবে। স্যার এ বিষয়টা ঠিক করে দিলেন। আল্লাহ এতে বরকত দিন। সাবেরা সুরাইয়াকে নির্বাহী ডাইরেক্টর করায় আমি খুব খুশি স্যার। আমার এ বোনটি খুব মেধাবী। কলেজে সাহিত্য প্রতিযোগিতা ও ডিবেটে কখনও সে দ্বিতীয় হয়নি। লেখাপড়াতেও সব সময়। শীর্ষে। তার মাথায় নানা চিন্তা, নানা পরিকল্পনা সব সময় কিলবিল করে। মাকা বলল।

মাকা আমার কথা চূড়ান্ত নয়। এটা আমার একটা তাৎক্ষণিক পরামর্শ। তোমরা পুরো পরিবার বসে কমিটি বা ট্রাস্টি ঠিক করবে। বলল আহমদ মুসা।

বাবা, তুমি আর দ্বিতীয় কথা বলো না। তোমাকে দিয়ে আল্লাহ এটা বলিয়েছেন বলে আমরা মনে করি। আমাদের প্রার্থনা, আল্লাহ এতে বরকত দান করুন। মাকার মা বলল।

আল-হামদুলিল্লাহ, আপনারা সবাই এ কথায় একমত হলে আর কোনো কথা নেই। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। বলল আহমদ মুসা।

বলেই আহমদ মুসা তাকাল, মাকার দিকে। বলল, আমাদের তো এখন উঠতে হয়।

আমি প্রস্তুত স্যার। মাকা বলল।

তোমরা কোথাও বেরুচ্ছ? তাহলে আমরা উঠি। তোমার অনেক সময় নিয়েছি ভাই। বলল দাদী।

মাকার মা, দাদী, সুরাইয়া উঠে দাঁড়াল। আহমদ মুসাও উঠল প্রস্তুত হবার জন্যে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *