সপ্তম পর্ব
বাংলা সিনেমার পালাবদল দেখলাম নিজের চোখে। সেই স্বর্ণযুগের বাংলা ছবি মাঝে একেবারে দু’ভাগে ভাগ হয়ে গেল। যে দর্শক এক সময় উত্তমকুমার, মলিনা দেবী, তুলসী চক্রবর্তী, ভানুদার মতো শিল্পীকে পেয়েছে, তাদের কাছে বাংলা ছবির ভাঙন কষ্টের বই কী। তবে ফের ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। একদিকে হরনাথ, স্বপন সাহা একটা ধারা তৈরি করছেন, অন্যদিকে ঋতুপর্ণ ঘোষ, গৌতম ঘোষরা একটা ধারা তৈরি করেছেন। সবই ভালো।
আমি নিজে একটা ছবি পরিচালনা করেছি। একসময় ‘চারমূর্তি’ ছবিতে আমি অভিনয় করেছি। সেই ছবিই ‘টেনিদা’ নামে পরিচালনা করেছি। টেনিদার ভূমিকায় শুভাশিস ভালো অভিনয় করেছে। ছবিটা মফসসলে ভালো চলেছে। আমি বর্তমান রাজ্য সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ ৪ সপ্তাহের জন্য ছবিটাকে করমুক্ত করায়। আরও একটা হাসির ছবি বানানোর পরিকল্পনায় আছি।
একা একা অবসাদগ্রস্ত জীবনে অনেকের কথা মনে পড়ে। খুব মনে পড়ে মেকআপ ম্যান শক্তি সেনকে। আমায় মেক-আপ করাতেও শিখিয়েছিলেন। স্টুডিয়ো-তে এখন আর বিশেষ যাই না, মূলত বাড়িতেই থাকি। নাকের কাছে স্পিরিট গামের গন্ধটা খুব মিস করি। পুরোনো বন্ধু বলতে বিভাস চক্রবর্তী, অশোকের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। থিয়েটার ওয়ার্কশপের ধরবাবুর কথা মনে পড়ে। আমার খরচ এক সময় বহন করতেন। ক্যামেরাম্যান সৌম্যেন্দু রায় আমার বিশেষ বন্ধু। বলব বলরাম চৌধুরীর কথা, থিয়েটার সিনেমার যে কোনও সাহায্য এই মানুষটির কাছে পাওয়া যায় সবসময়। ‘প্রাণ তপস্যা’ নামে যে নাটক সৌমিত্র নানা জায়গায় করায়— তা বলরামবাবুর সাহায্যে সৌমিত্র আমি প্রথম শুরু করি। না, এ নিয়ে সৌমিত্রর সঙ্গে আমার কোনও বিবাদ নেই। আমার এক ছেলে শঙ্খ (টনি) ও এক মেয়ে টিনা। টিনা বাইরে থাকে। আবার কিছুদিনের মধ্যে দেশে ফিরবে। ছেলের বিয়ে হয়ে বউমা এলে আমার বেশ ভালো লাগবে— পরিবারে নতুন তো কেউ আসবে।
আর আমার সর্বক্ষণের সঙ্গী, আমার ১২ বছরের পুরোনো গাড়ির চালক। আমার ওষুধপত্র থেকে খাওয়া দাওয়া ওই দেখে। অরুণ চট্টোপাধ্যায় আমার সব সময়ের সঙ্গী। প্রণব নন্দী আমার অতি ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাছাড়া আমার একরাশ অবসাদ আর একাকিত্ব। তা, তবে আর বেশিদিন হয়তো না। আমি দুমড়ে-মুচড়ে থাকার মানুষ নই। অন্ধকার কাটবে শীঘ্রই। ওপারে যাওয়ার আগে দু’টো ছবি পরিচালনা আমি করবই। সেই আশায় বুক বাঁধছি। নাকের কাছে স্পিরিট গামের প্রিয় গন্ধটা নিয়ে আমি মরতে চাই।