মানুষ জীবনানন্দ – ৫

আমি যখন বরিশালে ছিলাম, তখন সেখানকার নিম্নশ্রেণীর মধ্যে খৃষ্টধর্ম বহুল পরিমাণেই প্রচারিত ছিল। বগুড়া রোডে, আমাদের বাড়ির কাছেই বেশ খানিকটা জমি নিয়ে অক্সফোর্ড মিশন নামে ক্রীশ্চানদের একটি প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছিল। প্রতি রবিবার ওখানকার গির্জায় বিশেষ ভাবে উপাসনা হত এবং সকলকে ফাদারের কাছে পাপ স্বীকার করতে হত। 

আমাদের বাড়িতে একজন ক্রীশ্চান বুড়ো-ঝি ছিল। বয়েস বেশী হয়ে যাওয়াতে কাজকর্ম বিশেষ কিছু করতে পারত না। কিন্তু অনেকদিন ধরে আছে বলে আমার শ্বশুরমশাই তাকে একখানি ছোট ঘর তৈরি করিয়ে দিয়েছিলেন। সে সেখানেই থাকত। বাড়ির ছেলেমেয়েরা–বিশেষ করে কবি ছিলেন তার বড় আপন–বড় স্নেহের। সেজন্য আমার বিয়ের পরে অন্যান্যদের সঙ্গে সেও আমাকে টাকা দিয়ে আশীর্বাদ করেছিল। তার বেশীর ভাগ দাঁতই পড়ে গিয়েছিল। আর কুঁজো হয়ে হয়ে ছাড়া সোজাভাবে হাঁটতেই পারত না। 

প্রতি রবিবারে ওই বুড়ো ঝি-ও যেত ফাদারের কাছে পাপ স্বীকার করতে। বুড়ো হওয়াতে মাথাটাও তার সব সময় ঠিক থাকত না। তার একটা ধারণা হয়েছিল যে হ্যাভোক নামে একজন ফাদার তাকে ভালবাসেন। এমন কি বয়সের পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও (ফাদার হ্যাভোক বুড়ো ঝি-এর চাইতে বয়েসে অনেক ছোট ছিলেন) তাকে বিয়ে করে সংসারী হতে তাঁর কিছুমাত্র আপত্তি নেই। 

এ ধারণা হবার একমাত্র কারণ এই যে মিশনের সব ফাদার ভাল বাংলা বলতে পারতেন না। ফাদার হ্যাভোকও তাঁদের মধ্যে একজন। আমরা যেমন বলি, ‘ভগবান সকলকে ভালবাসতে বলেছেন। তাই আমরা তোমাদের ভালবাসি।’ ফাদার হ্যাভোকও তেমনি বলতেন, ‘প্রভু যীশু বসেন (বলেছেন) সকোলকে প্রেম ক’রটে (করতে)। টাই (তাই) হামিও (আমিও) টোমাকে (তোমাকে) প্রেম করি। সুগুরমালা (সুন্দরমালা–বুড়ো ঝি-এর নাম) সটি-ই (সত্যিই) হামি টোমাকে প্রেম করি।’ 

এসব কথা সকলের কাছে গল্প করাতে পাড়ার ছেলেবুড়ো সকলেই তাকে বুঝিয়েছিল যে ফাদার হ্যাভোক তাকে সত্যিই ভালবাসেন এবং সে যদি রাজী হয়, তিনি তাকে বিয়েও করতে পারেন। তবে বিয়ের আগে তাকে দাঁত বাঁধিয়ে নিতে হবে। ফোকলা দাঁতে তো আর বিয়ে হতে পারে না। সকলের ঠাট্টার ফলে এ ব্যাপারে তার বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়েছিল। 

পাপ স্বীকার করে ফেরার সময় সে সকলকে গালাগালি দিতে দিতেই ফিরত। তার সে-সব ভাষা আমরা ঘরে বসেও শুনতে পেতাম। বুড়ো ঝি-এর গলা শুনলেই কবি বারান্দায় এসে দাঁড়াতেন আর গম্ভীরভাবে জিজ্ঞাসা করতেন, ‘কোথায় গিয়েছিলে? পাপ স্বীকার করতে বুঝি?’ 

কবিকে দেখেই সে একগাল হেসে উত্তর দিত, ‘হয় (হ্যাঁ)।’ তিনি তখন মুখের উপরে বেশ একটু চিন্তার রেখা টেনে প্রশ্ন করতেন, ‘শুনলাম, ফাদার হ্যাভোক তোমার জন্য দাঁত বাঁধাতে দিয়েছেন। তোমাকে তিনি কিছু বলেছেন কি?’ 

ঘর থেকে আমার শাশুড়ী চাপা গলায় বলতেন, ‘মিলু, থাম্। বুড়ো মানুষটার সঙ্গে আবার লাগতে গেলি কেন?’ 

যেদিন তার মন ভাল থাকত, কবির কথা শুনে হাসত। কিন্তু যেদিন রেগে থাকত, সেদিন বলত,–‘হ্যাবোগ্যারে (হ্যাভোককে) মরণ দহায় (দশায়) পাইছে। দেহা (দেখা) করনের লেইগ্যা (জন্য) যত চ্যাষ্টাই করি না ক্যান, হেডায় (সে) কি দেহা দেয়? না হামনে (সামনে) আহে (আসে)? ক্যাবল আড়ালে আবডালেই রয়। রও, হেডারে (তাকে) একবার পাইয়া লই। হ্যার (তার) মতিগতি (মনোভাব) ভাল কইরাই (ভাবেই) বুইঝ্যা লইমু। বিয়া করনের ফিকির দেহায়-কাজের কালে ঢনঢন। বড় ফাদাররে কইয়া দেহাইমু (দেখাব) না মজাডা?’ 

আমার দাদাশ্বশুর (শাশুড়ীর বাবা) গৈলার চন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত একজন রসিকপুরুষ ছিলেন। তিনি অনেক হাসির গান লিখে গিয়েছেন। তিনি যখনই আমাদের বাড়িতে আসতেন, স্নান করার পরে আমরা তাঁকে শাড়ি পরতে দিতাম। তিনিও খুশী হয়েই শাড়ি লুঙ্গির মত পরে অনেক হাসির কবিতা আওড়াতেন। 

দাদামশাইকে স্নান করে আসতে দেখলেই কবি সহাস্যে এগিয়ে এসে বলতেন, ‘কি হে চন্দরনাথ, শাড়ির পাইড় পছন্দ হইছে? চুল আঁচড়ানের কাকই (চিরুণী) পাইছ? তোমারে আর কি দ্যাওন যায়-কও।’ 

আমার শাশুড়ী হাসি সামলাবার জন্য তাড়াতাড়ি সেখান থেকে চলে যেতেন। কবির কথার উত্তরে দাদামশাই এক হাতে আমাকে আর এক হাতে কবিকে জড়িয়ে ধরে গান ধরতেন – 

‘বাজার হুদ্যা কিন্যা আইন্যা চাইলা 
দিছি পায়, 
তোমার লগে ক্যামতে পারুম হইয়া 
উঠছে দায়। 
আরশি দিছি, কাকই দিছি, চুল 
বাঁধনের ফিতা দিছি, 
ব্যালয়ারী চুড়ি দিছি, আর কি 
দ্যাওন যায়? 
বুড়া-বুড়া কইয়া ক্যাবল, ক্ষ্যাপাইয়া 
ক্যান কর পাগল? 
যহন বিয়া করছ ফ্যালবা কেমতে কইয়া 
দ্যাও আমায়।’ 

 আমার শাশুড়ী ছিলেন বরিশাল মহিলা সমিতির সম্পাদিকা। সেজন্য নানা কাজে অনেকেই তাঁর কাছে আসতেন। কবিকে আমি কোনদিনই তাঁদের সামনে বের হতে দেখিনি। কিন্তু কোন কিছুই তাঁর চোখ এড়িয়ে যেত না। 

একদিন যেমনি কালো তেমনি মোটা এবং বেঁটে এক মহিলা আমার শাশুড়ীর কাছে এলেন। তিনি চলে যাবার পরেই কি একটা দরকারে আমার শাশুড়ী কবিকে ডাকলেন। তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে প্রথমেই তাঁর মাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হরসুন্দরী চলে গিয়েছেন?’ 

মা অবাক হয়েই প্রশ্ন করলেন, ‘তুই কার কথা বলছিস?’ কবি চটপট উত্তর দিলেন, ‘কেন, এই যে কিছুক্ষণ আগে তোমার কাছে আসতে দেখলাম?’ 

মা তখন রাগতে গিয়েও হেসে ফেললেন। 

আমি ছিলাম আমার শাশুড়ীর অতি আদরের। তিনি যে আমার নিজের মা নন, একথা আমি কোনদিনই ভাবতে পারিনি। তাই তিনি আমাকে রাগ করে কিছু বললে আমিও পাল্টা জবাব দিতাম। রাতে কথা কাটাকাটি হলেও পরদিন ভোরে দেখা যেত যে আমি উঠবার আগেই আমার জন্য চা ও খাবার হাতে তিনি দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন। প্রথম দু-একদিন কবি বিরক্ত হয়ে আমাকে থামাতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কয়েকদিন পরে যখন দেখলেন যে রাতে যত বেশী রাগারাগি, দিনে তত বেশী আদর, তখন তিনি আমাকে আর কিছুই বলতেন না। আমি রাগলেই শুধু একবার উঁকি দিয়ে আমাকে দেখে নিয়েই স্বগতোক্তি করতেন, ‘আমার নিজের মা, কিন্তু আমার সঙ্গে কেন যে এই রকম রাগারাগি হয় না? ভাল মন্দ কিছু খাবার কপাল তো আর করে আসিনি। কি আর করব।’ তারপরেই আবার উঁকি মেরে জিজ্ঞাসা করতেন, ‘আচ্ছা, কাল তোমার জন্য নতুন কি খাবার হবে-কিছু অনুমান করতে পার কি?’ 

আমি ‘ওমা, দেখুন তো’ বলে ঝাঁঝিয়ে ওঠার সঙ্গেই তাঁকে আর ধারে কাছে কোথাও দেখতে পাওয়া যেত না। কারণ, শাশুড়ী নিজে আমার উপর রাগ করলেও যদি কখনও শুনতেন যে কবি আমাকে কিছু বলছেন, তাহলে ছেলেকে কিছুতেই ছেড়ে কথা কইতেন না। 

আদর শুধু যে শাশুড়ীর কাছেই পেয়েছি তা নয়, অনেক ব্যাপারে কবি নিজেও আমাকে যথেষ্টই প্রশ্রয় দিয়েছেন। আমি যে ছেলেবেলাতেই মা বাবা দুজনের স্নেহ হারিয়েছি সে-কথা তিনি নিমেষের জন্যও ভুলতেন না। 

আমার বিয়ের দশ বারোদিন পরে ঢাকায় আমার জেঠামশাই-এর কাছে যাওয়া ঠিক হল। আমি মনের আনন্দে বাক্স গুছোতে বসলাম। অল্প ক’দিনের জন্য যাচ্ছি বলে শাশুড়ী একটা ছোট বাক্সে সামান্য কিছু জামা কাপড় নিতে বললেন। কিন্তু নেবার সময় আমি কোনটাই বাদ দিতে পারছিলাম না। অথচ বাক্সেও আঁটে না। দুবার, তিনবার চেষ্টা করার পরেও যখন কিছুতেই পারা গেল না, তখন রাগ করে বাক্সটাকে উল্টে ফেলে দিয়ে উঠে গেলাম। 

কবি কাছে বসে সবই দেখছিলেন। আস্তে আস্তে আমার কাছে গিয়ে বসলেন, ‘তুমি তো গোড়াতেই একটা ভুল করে বসে আছ। অল্পদিন থাকলে ঐ ছোট বাক্সে কুলিয়ে যেত। তুমি না হয় বেশীদিনই থাকলে থাকার ইচ্ছেটা তো তোমার। সেটা অন্যের কথায় কি করে হবে?’ তখন আমার মুখে হাসি ফুটল। আমি বড় একটা বাক্স নিয়ে কাপড় গুছোতে বসলাম। 

কিন্তু কোথায় গেল সে সব দিন? পর্দার বুকে ছায়াছবির মতই একের পর এক মিলিয়ে গেল। যা কিছু দেবার ভগবান আমাকে তো দরাজ হাতেই দিয়েছিলেন। কিন্তু সব হারিয়ে আজ আমি রিক্ত, শূন্য হয়েই বসে আছি। 

লোকে জানে, কবি ছিলেন শান্ত, নিরীহ প্রকৃতির। অর্থাৎ এক কথায় যাকে বলে ভালোমানুষ। তাঁকে চালানো খুবই সোজা। কিন্তু ছাইচাপা আগুনের মত সেই নিরীহ ভাবের নীচেই চাপা থাকত তাঁর অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। তবে অকারণ চিৎকারে সে ব্যক্তিত্বকে প্রকাশ করাটা তিনি কোনদিনই পছন্দ করতেন না। শান্তভাবে, অল্প কথার ভিতরেই ছিল তাঁর অভিব্যক্তি। তাঁর এ পরিচয় আমি বহুবার বহুভাবে পেয়েছি। 

তিনি মিলের মোটা ধুতি ছাড়া পরতেন না, এবং একটু উঁচু করেই পরতেন। আমি একদিন একখানা ভাল ধুতি কিনে কবিকে বললাম, ‘কী যে তুমি মোটা মোটা ধুতি হাঁটুর উপরে পরে রাস্তা দিয়ে হাঁট। লোকে হাসে না?’ কথাটা বলেই ধুতিখানা তাঁর দিকে এগিয়ে দিতে যাচ্ছিলাম। 

তিনি তখন কি একটা লেখার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। ধুতিখানা ধরেও দেখলেন না। তাঁর মুখে সামান্য একটু বিরক্তির ভাবও প্রকাশ পেল না। শুধু লেখাটা থামিয়ে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর আস্তে আস্তে বললেন, ‘দেখ, তুমি যে ভাবে খুশি সাজ-পোশাক কর, তোমার সে ইচ্ছেয় আমি কোনদিনই বাধা দেব না। কিন্তু আমাকে এ বিষয়ে তোমার ইচ্ছামত চালাতে বৃথা চেষ্টা কোরো না!’ 

তিনি রাগলেনও না, বকাবকিও করলেন না। কিন্তু আমার মনে হল কে যেন আমার শরীরের সমস্ত শক্তি টেনে নিয়েছে। আমি কোনও মতে নিজেকে টানতে টানতে সেখান থেকে সরে এলাম। 

যতদিন তিনি পৃথিবীতে ছিলেন, আমার মুখ থেকে এ রকম কথা আর কোনদিনই বের হয়নি। যেদিন তিনি চিরদিনের মতই যাত্রা করলেন, সেই ধুতিখানাই পরিয়ে দিলাম। সেখানা বছরের পর বছর আমার বাক্সেই রাখা ছিল। 

তবে আমার সে অন্যায় কাজে তিনি যে মোটেই রাগ করেন নি, তার প্রমাণ পেয়েছি স্বপ্নের ভিতর দিয়ে। এক রাতে স্বপ্নে দেখলাম, তিনি স্নানের ঘরে ঢুকে তাঁর ধুতির খানিকটা জায়গা ধুচ্ছেন। আমিও ঠিক সেই সময় কি কারণে সেদিকে গিয়ে তাঁকে দেখে অবাক হয়েই তাঁর দিকে তাকিয়েছি। আমাকে দেখে সলজ্জমুখে তিনি বললেন, ‘দেখ তো, কি মুস্কিল! আমার মাত্র একখানাই ধুতি। তাও আবার কাদায় ভরে গেল।’ তাকিয়ে দেখি তাঁকে শেষ সময়ে পরানো আমার সেই ধুতিখানাই তিনি সযত্নে ধুচ্ছেন। 

ঘুমটা আমার ভেঙে গেল। স্বপ্নের কোন অর্থ আছে কি না জানি না। তবে মনে হয়, আমি যে অন্য কাউকে না দিয়ে চার পাঁচ বছর ধরে তাঁর ধুতি রেখে দিয়েছি শুধু ভেবেই তাঁর আত্মা কষ্ট পেয়েছে। তাই স্বপ্নের ভিতর দিয়েই তিনি আমার এতকালের অপূর্ণ আকাঙ্ক্ষাকে পূর্ণতা দিয়েছেন। 

সংসারের কাজ নিজের হাতে করতে আমি চিরদিনই ভালবাসি। কিন্তু সেই অবস্থায় বন্ধুদের সামনে বের হলে কবি খুবই বিরক্ত হতেন। তিনি মনে করতেন যে তাতে তাঁদের সঠিক অভ্যর্থনা বা আদর আপ্যায়ন করা হয় না। 

ল্যান্সডাউন রোডের বাড়িতে একদিন সকালের দিকে বালতি করে জল নিয়ে আমি বারান্দা ধুচ্ছি, ঠিক সেই সময় সদর দরজার কড়া নড়ে উঠল। আমার শাড়ি বেশ খানিকটা ভিজে গিয়েছে-ডান হাতে ঝাঁটা। চাকরটি অন্য কাজে আটকা থাকাতে আমি সেই অবস্থাতেই দরজা খুলে দিতে গেলাম। 

দরজা খুলেই কিন্তু আমাকে আড়ালে সরে যেতে হল। কারণ, ভিতরে ঢুকলেন কবিবন্ধু অচিন্ত্যকুমার ও বুদ্ধদেববাবু। ততক্ষণে কবিও বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছেন। তিনি যে খুবই বিরক্ত হয়েছেন সেটা তাঁর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। অথচ বন্ধুদের সামনে আমাকে কিছু বলতেও পারছিলেন না। চাকরতে ঝাঁটা বালতি সরিয়ে নিতে বলে আমি তাড়াতাড়ি রান্নাঘরে গিয়ে ঢুকলাম। 

তাঁরা চলে যাবার পরে কবি খুব দুঃখের সঙ্গেই আমাকে বললেন, ‘তুমি যে কি কর! বন্ধুবান্ধব মহলে আমার মানসম্ভ্রম আর থাকল না। অচিন্ত্য ও বুদ্ধদেববাবু আজ তোমাকে ঠিক কি ভেবে গেলেন।’ 

‘তা কি করব বল? আমি তো জানতাম না যে তোমার বন্ধুরা আসবেন। জানলে কি আর ঝাঁটা হাতে তাঁদের সামনে যাই। কিন্তু আমাকে কি ভাবলে তো তোমারই ডিসকোয়ালি ফিকেশন’–আমি উত্তর দিলাম। 

তিনি কথাটার অর্থ ধরতে না পেরে অবাক হয়েই আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। তখন আমি হাসতে হাসতেই বললাম, ‘তোমার চিন্তার কোন কারণ নেই। বুদ্ধদেববাবু তো আমাকে বিয়ের সময়ই দেখেছেন, সুতরাং আমি যে বেশেই থাকি না কেন, তিনি আমাকে চিনবেন বলেই মনে হয়। আর অচিন্ত্যবাবুর বাড়ির মেয়েরাও সংসারের কাজ করে থাকেন। তাছাড়া-তাঁকে তো রসিক বলেই জানি। কবি-জায়ার বদলে আমাকে ঝি ভাবলে ঠিকই তোমাকে জিজ্ঞাসা করতেন–‘এই রকম ঝি কোথায় পেলে?’ 

সেদিন তিনি এমন জব্দ হয়েছিলেন যে ভবিষ্যতে এ প্রশ্ন আর কোনদিনই তোলেন নি। 

প্রখ্যাত কবি এবং সাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র একদিন আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। কবি তখন বাড়ি ছিলেন না। তিনি আমার সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করে আবার একদিন আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলে গেলেন। 

কবি বাড়িতে আসা মাত্রই আমি তাঁকে প্রেমেন্দ্রবাবুর কথা জানালাম। খবরটা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি সভয়ে বলে উঠলেন, ‘সর্বনাশ, আমি বাড়ি থাকতেই ঝাঁটা হাতে আমার বন্ধুদের সামনে যেতে তোমার বাধে না, আর আমার অনুপস্থিতিতে প্রেমেনবাবু এসেছিলেন, তাঁর অবস্থাটা বুঝতেই পারছি। হয়ত বঁটি হাতেই হাজির হয়েছিলে।’

এত অতর্কিতে কবির পৃথিবীর মায়া কাটাবার নোটিস জারি হবে–সে কথা প্রেমেনবাবু কল্পনাও করতে পারেন নি। প্রতিশ্রুতি রাখতে হয়তো তিনি এসেছিলেন, কিন্তু কবিকে ফুলের সাজে খাটে শোয়া অবস্থায় দেখে হয়তো নীরবেই ফিরে গিয়েছিলেন। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *