ভালোবাসি তোমাকেই – ২

তন্ময় মাকে অত্যন্ত ভালবাসে। এত ভালবাসে যা আজ কালের ছেলেমেয়েরা বিশ্বাস করাতো দূরের কথা, কল্পনাও করতে পারবে না। তার ধারণা, যে মেয়েকে বিয়ে করবে, সে যদি কোনো কারণে মায়ের মনে ব্যথা দেয়, তা হলে তা সহ্য করা তার পক্ষে সম্ভব হবে না। ফলে তাদের দাম্পত্য জীবন যেমন অশান্তিময় হয়ে উঠবে তেমনি মাও অশান্তি পাবে। তাই সে বিয়ে করতে চায় না। তার উপর বন্ধু রাসেলের বিবাহিত জীবন অশান্তিময় জানার পর থেকে তার ঐ ধারণা আরো দৃঢ় হয়েছে। সেই জন্যে যখন তার মা বিয়ের কথা তুলল, তখন সে তার মতামত জানাল। মায়ের কাছ থেকে নিজের রুমে এসে ঐ সব ভাবতে ভাবতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ল।

ফিরোজা বেগম কাগজে বিজ্ঞপ্তী দেখে যেখানে চিঠি দিয়েছিলেন, সেখান থেকে মেয়ের ফটো ও ফোন নাম্বারসহ চিঠি দিয়ে তারা ফোনে যোগাযোগ করতে বলল। মেয়ের ফটো দেখে ফিরোজা বেগমের পছন্দ হল। বিকেলে অফিস থেকে তন্ময় ফিরে এসে যখন চা নাস্তা খাচ্ছিল তখন চিঠি ও ফটোটা ছেলের হাতে দিয়ে বললেন, দেখ, মেয়েটা কি সুন্দরী।

তন্ময় ফটো দেখে বলল, হ্যাঁ, সুন্দরী। কিন্তু মা আমি যে এখন বিয়ে করব না, সে কথা তো তোমাকে সেদিন বললাম।

কখন তা হলে করবি?

যখন করব তখন জানাব।

ফিরোজা বেগম ভিজে গলায় বললেন, সেই যখনটা কখন, আজ তোকে বলতেই হবে। এত সুন্দরী মেয়ে তোর পছন্দ হচ্ছে না?

তন্ময় মায়ের চোখে পানি দেখে জড়িয়ে ধরে বলল, মা, তুমি অবুঝ হয়ো না। সাধারণতঃ সুন্দরী মেয়েরা অহংকারী হয়। তারা স্বামীকে রূপের জালে গ্রাস করে সংসারে অশান্তি আনে। মাগো, আমি সব কিছু সহ্য করতে পারব; কিন্তু আমার স্ত্রী তোমার মনে ব্যথা দিবে, কষ্ট দিবে, এটা কিছুতেই সহ্য করতে পারব না। তারপর মায়ের মন রাখার জন্য বলল, যদি সেরকম মেয়ের সন্ধান পাই, যে নাকি আমার চেয়ে তোমাকে বেশি ভক্তি শ্রদ্ধা করবে, আমার মনে কষ্ট দিলেও তোমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবে না, তা হলে বিয়ে করব। তুমি সেরকম মেয়ের সন্ধান কর, আর আমিও করব।

ফিরোজা বেগম ছেলের মাতৃভক্তির কথা শুনে সেদিনের মতো আজও খুশী হলেন। কিন্তু সেই সাথে চিন্তিতও হলেন এই ভেবে যে, তেমন মেয়ে কখনও পাওয়া যাবে কি? কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, এদেরকে কি বলব?

তন্ময় বলল, আমি যা বলার ফোন করে বলে দেব, তোমাকে ভাবতে হবে না।

এরপর আরো এক বছর পার হয়ে গেল। ফিরোজা বেগম ছেলেকে না জানিয়ে ঘটকের দ্বারা অনেক মেয়ের সন্ধান নিয়েছেন। কয়েক জায়গায় নিজে গিয়ে মেয়ে দেখে এসেছেন। কিন্তু মনের মতো মেয়ে পান নাই। তাই মাঝে মাঝে ছেলেকে জিজ্ঞেস করেন, তুই কি তোর মনের মতো মেয়ের খোঁজ পাস নি?

তন্ময় বলে, আমি ব্যবসার কাজ নিয়ে থাকি; মেয়ের খোঁজ করব কখন? তুমি এত ব্যস্ত হচ্ছ কেন?

ফিরোজা বেগম ছেলের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে আরো বেশি চিন্তিত হয়ে পড়লেন। চিন্তায় চিন্তায় তিনি কঠিন অসুখে পড়ে গেলেন।

তন্ময় বড় বড় ডাক্তার নিয়ে এসে চিকিৎসা করাতে লাগল। কিন্তু আরোগ্য হওয়া তো দূরের কথা, ফিরোজা বেগম দিন দিন শয্যাশায়ী হয়ে পড়লেন। ডাক্তাররা কোনো রোগ ধরতে পারছেন না। অথচ রুগী ক্রমশঃ কাহিল হয়ে যেতে লাগল। শেষে ফিরোজা বেগম যখন মৃত্যুশয্যাশায়ী হয়ে পড়লেন তখন একদিন ডাক্তারদের সামনে ছেলেকে বললেন, আমি মরেই যাচ্ছি; এবার তুই বিয়ে কর। তুই তো বলেছিলি, আমি মরে যাওয়ার পর বিয়ে করবি। এখন যদি করিস, তা হলে তোর বৌ দেখে শান্তিতে মরতে পারতাম।

রোগীর কথা শুনে ডাক্তাররা এতদিনে রোগ ধরতে পারলেন। তারা তন্ময়কে পাশের রুমে ডেকে নিয়ে গিয়ে বললেন, আপনার মাকে যদি বাঁচাতে চান, তা হলে অতি শিঘ্রী বিয়ে করুন। নচেৎ আপনার মাকে বাঁচান যাবে না।

তন্ময়ও বুঝতে পারল, সে বিয়ে করেনি বলে মা মৃত্যুপথ যাত্রী। বলল, এত তাড়াতাড়ি মেয়ে পাব কোথায়?

ডাক্তারদের একজন বললেন, আপনি যে তাড়াতাড়ি বিয়ে করবেন, সে কথা আপনার মাকে বুঝিয়ে বলুন। তারপর মেয়ে দেখে বিয়ে করুন।

ডাক্তার রহিম এই সময় দেশে ছিলেন না। সরকারী কাজে বিদেশ গিয়েছেন। তিনি থাকলে ফিরোজা বেগমের এরকম অবস্থা হত না।

ডাক্তাররা চলে যাওয়ার পর তন্ময় মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলল, মা, আমি বিয়ে করিনি বলে তুমি মৃত্যু কামনা করছ, তা আগে বুঝতে পারলে এতদিন কবে বিয়ে করে ফেলতাম! তুমি আমাকে মাফ করে দাও মা। এই তোমাকে জড়িয়ে ধরে প্রতিজ্ঞা করছি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে করে বৌ এনে তোমার সেবা করাব। বল মা মাফ করে দিয়েছ?

ফিরোজা বেগম জীর্ণ হাতে ছেলের মাথা টেনে নিয়ে চুমো খেয়ে বললেন, মা কি কখনও ছেলের অন্যায় মাফ না করে পারে, আল্লাহ তোকে মাফ করুক।

মায়ের অসুখের পর থেকে তন্ময় ম্যানেজারের উপর অফিসের ভার দিয়ে বেশিরভাগ সময় মায়ের কাছে থাকে। মাঝে মাঝে কিছুক্ষণের জন্য গিয়ে একটু ঘুরে আসে। অফিস স্টাফরাও সাহেবের মায়ের কঠিন অসুখের কথা শুনেছে।

কয়েকমাস আগে তন্ময় এজাজ নামে একজন এম. এ. পাস ছেলেকে নিজের পি. এ. পদে নিযুক্ত করেছে। এজাজ খুব স্মার্ট, সুন্দর ও স্বাস্থ্যবান। আচার ব্যবহারও খুব মার্জিত। তন্ময় তার প্রতি খুব সন্তুষ্ট। সেও মালিকের মায়ের কঠিন অসুখের কথা জানে। সে মালিককে সন্তুষ্ট রাখার জন্য সর্বদা সচেতন থাকে।

এজাজের এক বন্ধু ছিল। তার নাম মজাহার। মজাহার চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছেলে। তার বাবার আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো নয়। দু’জনে একসঙ্গে ভার্সিটি থেকে বেরিয়েছে। এজাজ চাকরি পেলেও মজাহার পায়নি। তাই হতাশায় ভুগছে। বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে চরিত্র হারিয়েছে। তাদের সঙ্গে মদ খায়। মাঝে মাঝে নিষিদ্ধ পল্লীতেও যায়। সেখানকার একটা মেয়ের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠে। মেয়েটার নাম তমসা। তমসা দেখতে খুব সুন্দরী। যেমন রূপসী তেমনি ফিগার। তমসার কাছে প্রথম দিন গিয়ে মজাহার বুঝতে পারে, সে ভালো বংশের শিক্ষিত মেয়ে। হয়তো কোনো দুর্ঘটনার স্বীকার হয়ে এখানে এসে পড়েছে। তার আসল পরিচয় জানার জন্য অনেক চেষ্টা করে, কিন্তু তমসা তাকে মিথ্যে পরিচয় দিয়ে বলেছে, এখানকার বেশিরভাগ মেয়ে ভদ্র ঘরের। ভাগ্যের ফেরে এই নরকে বাস করতে হচ্ছে। তমসার রূপে ও ব্যবহারে মজাহার তার প্রতি খুব আকৃষ্ট হয়ে নিজের পরিচয় দিয়ে বলেছে, কিছু একটা রোজগারের ব্যবস্থা করতে পারলে তাকে এখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করবে। প্রায় দু’বছর হতে চলল সে তাকে একই কথা শুনিয়ে আসছে। মজাহারকে তমসারও খুব ভালো লাগে। অন্য খদ্দেরদের চেয়ে সে অনেক ভালো ব্যবহার করে।

এর মধ্যে মজাহার বিদেশ যাওয়ার একটা সুযোগ পেল। কিন্তু টাকার জন্য সুযোগটা কাজে লাগাতে পারছে না। কারণ এন. ও. সি’র জন্য পঁচাত্তর হাজার আর অন্যান্য খরচসহ মোট একলাখ টাকার দরকার, দেশে গিয়ে বাবা মাকে সে কথা জানাল, তার বাবা ভবিষ্যৎ সুখের আশায় সামান্য যা জমি জায়গা ছিল, তা বিক্রি করে ছেলের হাতে ষাট হাজার টাকা দিল। মজাহার বাকি টাকার জন্য ঢাকায় এসে বন্ধুদের কাছে হন্নি হয়ে ঘুরল। কিন্তু কেউ তাকে টাকা দিল না। শেষে হতাশ হয়ে যখন কি করবে না করবে ভেবে ঠিক করতে পারছিল না তখন হঠাৎ এজাজের কথা মনে পড়ল। ভার্সিটিতে পড়ার সময় এজাজ তাকে অনেক সময় আর্থিক সাহায্য করত। খারাপ বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে অনেক দিন তার খোঁজ খবর রাখেনি। এখন তার কথা মনে পড়তে একদিন তাদের বাসায় গিয়ে হাজির হল। বাসায় সবাইয়ের সঙ্গে মজাহারের পরিচয় ছিল। এজাজের ছোটভাই আজিজুল বলল, ভাইয়া বাসায় নেই, অফিসে গেছে। তার কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে অফিসে গেল।

মজাহারকে দেখে এজাজ সালাম বিনিময় করে বসতে বলে বলল, কেমন আছিস?

বেকারদের আবার কেমন থাকা। তা তুই তো বেশ ভালো চাকরি পেয়েছিস।

হ্যাঁ, আল্লাহপাকের মর্জি। এতদিন তুই বেকার রয়েছিস জেনে দুঃখ পেলাম। কোথাও ঢুকে পড়তে পারলি না?

তোর মতো তো সকলের ভাগ্য না, যাকগে, আমি কিন্তু তোর কাছে খুব বড় আশা নিয়ে এসেছি।

বল কি তোর আশা। সাধ্যমতো পূরণ করার চেষ্টা করব।

মজাহার বিদেশ যাওয়ার কথা বলে ত্রিশ হাজার টাকার ব্যবস্থা করে দিতে বলল।

এজাজ বলল, বন্ধু হয়ে যদি বিপদের সময় উপকার না করি, তা হলে বন্ধু কিসের। তবে আমার কাছে এখন দশহাজার টাকা আছে দিচ্ছি। তারপর ড্রয়ার টেনে চেকবই বের করে সই করে দেয়ার সময় বলল, আপাততঃ এটা রাখ। কয়েকদিন পরে আসিস, বাকিটা জোগাড় করে দেয়ার ব্যবস্থা করব।

মজাহার তার দুটো হাত ধরে ভিজে গলায় বলল, ধন্যবাদ দিয়ে তোকে ছোট করব না। শুধু এটুকু বলব, তোর মতো বন্ধু এ দুনিয়ায় অতি বিরল।

এমন সময় টেলিফোন বেজে উঠতে এজাজ রিসিভার তুলে কানের কাছে নিয়ে ঈশারা করে তাকে চুপ করতে বলল। তারপর রিসিভার রেখে বলল, একটু অপেক্ষা কর আমি আসছি। কথা শেষ করে পাশের দরজা পুশ করে চলে গেল।

মিনিট তিনেক পরে মুখ ভার করে ফিরে আসতে দেখে মজাহার জিজ্ঞেস করল, কিরে কি ব্যাপার, তোর মন খারাপ কেন?

এজাজ বলল, সাহেবের মায়ের আজ সিরিয়াস অবস্থা। সে কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল। জানিস, আমাদের সাহেব ইয়ং কিন্তু অত্যন্ত সৎ।

মজাহার জিজ্ঞেস করল, তোর সাহেবের মায়ের কি হয়েছে?

উনি মানষিক রোগে ভুগছেন।

বড় লোকদের আবার মানষিক রোগ হতে যাবে কেন?

রোগ কি আর গরিব বড়লোক বিচার করে হয়।

তা অবশ্য ঠিক। ওনার মানষিক রোগের কারণটা জানিস নাকি?

জানি। বলছি শোন, সাহেবের মা সাহেবের বিয়ে দিতে চান। কিন্তু সাহেব বিয়ে করতে চাচ্ছেন না। অনেক দিন থেকে ছেলের বিয়ে দিতে না পেরে চিন্তায় চিন্তায় মৃত্যুশয্যায় এসে পৌঁছেছেন।

সাহেবের বাবা কিছু বলেন না?

সাহেবের মা ছাড়া আর কেউ নেই।

সাহেব বিয়ে করতে চান না কেন, তুই কিছু জানিস?

জানি। সাহেব মাকে ভীষণ ভালবাসেন। বিয়ে করলে স্ত্রী যদি তার মাকে কষ্ট দেয়, সেই কথা ভেবে করেন নি।

মা মৃত্যু শয্যায় জেনেও বিয়ে করছেন না?

না, তবে এখন চাচ্ছেন। তাই একটা ভালো মেয়ের সন্ধান জানি কিনা জিজ্ঞেস করার জন্য ডাকলেন। আরো বললেন, যদি সন্ধান না থাকে, তা হলে যেন দু’একদিনের মধ্যে সন্ধান করে ওনাকে জানাই। আচ্ছা তুইই বল, এত তাড়াতাড়ি ভালো মেয়ের সন্ধান কোথায় পাই?

মজাহারের মাথায় তখন একটা বুদ্ধি খেলে গেল। বলল, তুই আমাকে তোর সাহেবের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দে। আমার হাতে একটা ভালো মেয়ে আছে।

তাই নাকি? তা হলে তো খুব ভালই হল। তুই একটু বস, আমি সাহেবের সঙ্গে কথা বলে আসি। তারপর সাহেবের রুমে গিয়ে বলল, স্যার, যদি অনুমতি দেন, তা হলে মেয়ের ব্যাপারে কথা বলতে চাই।

তন্ময় বলল, বেশ তো বলুন।

এজাজ মজাহারের কথা বলল।

উনি আপনার কি রকম বন্ধু?

আমরা এক সঙ্গে ভার্সিটি থেকে এম. এ. পাস করেছি। আমি ওদের গ্রামের বাড়িতে না গেলেও সে আমাদের বাসায় অনেক বার এসেছে।

ঠিক আছে, তাকে পাঠিয়ে দিন।

এজাজ ফিরে এসে মজাহারকে যেতে বলল।

মজাহার দরজা পুশ করে ভিতরে গিয়ে সালাম জানাল।

তন্ময় সালামের উত্তর দিয়ে বলল, বসুন। মজাহার বসার পর বলল, আমি ভূমিকা পছন্দ করি না। সরাসরি কথা বলতে ভালবাসি। আপনি এজাজকে যে মেয়ের কথা বলেছেন, তার পরিচয় বলুন।

মজাহার বলল, মেয়েটা আমার চাচাতো বোন, নাম তামান্না। বি. এ. পাশ। দেখতে অপরূপ সুন্দরী না হলেও সুন্দরী। আপনি দেখতে চাইলে দেখাতে পারি। আমার আত্মীয় বলে বলছি না, যে কেউ তাকে দেখবে সেই পছন্দ করবে। তবে বলে থেমে গেল।

তন্ময় বলল, থেমে গেলেন কেন বলুন।

আমার চাচার অবস্থা তেমন ভালো নয়। অনেক কষ্ট করে মেয়েকে লেখাপড়া করিয়েছেন। বড় ঘরে ভালো ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিতে চান। অনেক জায়গা থেকে ভালো ছেলের সম্বন্ধ এলেও টাকার অভাবে বিয়ে দিতে পারেন নি। তাই বলছিলাম, মেয়ে দেখে যদি আপনার পছন্দ হয়, তা হলে বিয়ে খরচ বাবদ অগ্রিম ত্রিশ হাজার টাকা দিতে হবে।

তন্ময় এজাজের বন্ধু জেনে মজাহারের কথা বিশ্বাস করে ফেলল। বলল, সবকিছু খোলাখুলি বলে আপনি ভালো করেছেন। এবার আমিও আপনাকে দু’একটা কথা বলব। আপনি জানেন কিনা জানি না, আমার মা ছাড়া আর কেউ নেই। আমি চাই না আমার স্ত্রী মায়ের মনে কোনো কারণে কষ্ট দিক। তাই বিয়ে করতে চাই নি। আমার মা আমি বিয়ে করিনি বলে আজ মৃত্যুশয্যায়। তাকে বাঁচাবার জন্য আমি বিয়ে করতে চাচ্ছি। কিন্তু মায়ের এই অবস্থায় বিয়ে করি কি করে। তাই বলছিলাম, আপনি যদি আমাকে এ ব্যাপারে একটু সাহায্য করেন, তা হলে বড় উপকৃত হতাম।

মজাহার বলল, বেশ তো বলুন, আপনার সাহায্য করতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করব।

তন্ময় বলল, আমি বিয়ের কাজটা মা ভালো হওয়ার পর ধুমধামের সঙ্গে করব। এখন আমার মাকে সুস্থ করার জন্য আপনার বোনকে আমাদের বাসায় নিয়ে গিয়ে স্ত্রী বলে পরিচয় দেব। আপনার বোন আমার সঙ্গে এমনভাবে স্বামী স্ত্রীর মতো ব্যবহার করবে, যাতে করে আমার মা এবং বাসার সবাই যেন বুঝতে পারে আমারা সত্যিকার স্বামী স্ত্রী। অবশ্য আমি তাকে মর্যাদার সঙ্গে রাখব। আপনার বোন যদি আমার মাকে শাশুড়ীর মতো মনে করে সেবা শুশ্রূষার দ্বারা আরোগ্য করে তুলতে পারে এবং তাকে যদি আমার পছন্দ হয়, তা হলে মা আরোগ্য হওয়ার পরপরই বিয়ের কাজ সেরে ফেলব।

মজাহারের চিন্তা শুধু কি করে ত্রিশ হাজার টাকা বাগানো যায়। একটু চিন্তার ভান করে বলল, ঠিক আছে, সে ব্যবস্থা আমি করতে পারব। এবার আমার একটা অনুরোধ আপনাকেও রাখতে হবে। ত্রিশ হাজার টাকাটা আমার বোনকে যেদিন আপনাদের বাসায় নিয়ে যাব, তার আগের দিন আমাকে দিয়ে দেবেন। চাচার হাতে টাকাটা দিয়ে বুঝিয়ে সব কথা বলে তামান্নাকে নিয়ে আসতে হবে। আর এই টাকার ব্যাপারটা তামান্নাকে অথবা অন্য কাউকে জানাবেন না। এমনকি আমার বন্ধু এজাজকেও না।

তন্ময় বলল, তাই হবে। আপনি আপনার বোনকে তাড়াতাড়ি আনার ব্যবস্থা। করুন। তারপর বিশ হাজার টাকার চেক কেটে তার হাতে দিয়ে বলল, বাকিটা ঐদিন পেয়ে যাবেন।

মজাহার চেকটা পকেটে রেখে বলল, আমার চাচারা ঢাকায় থাকেন। আজ রাত আটটা/নটার সময় আমি তামান্নাকে নিয়ে আসতে পারব। কোথায় আসব বলুন।

তন্ময় একটা ভিজিটিং কার্ডে হোটেলের নাম ঠিকানা ও সময় লিখে দিয়ে বলল, আমি এই সময়ে এখানে থাকব। রিসেপসানে খোঁজ নিয়ে আমার রুমে আসবেন। তারপর চা নাস্তা খাইয়ে বিদায় দিল।

মজাহার এজাজের কাছে ফিরে এলে জিজ্ঞেস করল, কিরে কি হল?

সব কিছু গোপন রেখে মজাহার বলল, সাহেব মেয়েকে দেখতে চেয়েছেন।

এজাজ বলল, তাই দেখা। আল্লাহ আল্লাহ করে মেয়ে যেন সাহেবের পছন্দ হয়।

মজাহার বলল, মেয়ে পছন্দ হবে না মানে, দেখবি মেয়ে দেখে তোর সাহেবের মাথা ঘুরে যাবে। এখন আসি, মেয়ের বাবার সঙ্গে দেখা করতে হবে। বাকি টাকাটা তুই কবে দিবি বল।

এজাজ বলল, আরে বস বস, অত ব্যস্ত হচ্ছিস কেন? এক কাপ চা অন্তত খেয়ে যা। এক সপ্তাহ পরে এসে নিয়ে যাস।

মজাহার দাঁড়িয়ে বলল, তোর সাহেব খাইয়েছে। এখন আর খাব না, আমি এক সপ্তাহ পরে আসব। কথা শেষ করে বেরিয়ে এসে তমসার কাছে যাওয়ার জন্য রওয়ানা দিল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *