1 of 2

বই এবং বইমেলা (জানুয়ারি ২৯, ২০১২)

সেদিন আমাকে একজন ভদ্রলোক বললেন, ‘কী করি বলুন তো। আমার ছোট ছেলেটা দিন-রাত টেলিভিশনে কার্টুন দেখে।’ আমি বললাম, ‘বন্ধ করে দিন। দরকার হলে টেলিভিশনটা দোতলা থেকে নিচে ফেলে দিন। একটা টেলিভিশন নষ্ট হবে, কিন্তু একটা ছেলে রক্ষা পাবে।’ ভদ্রলোক আমার কথা খুব সিরিয়াসলি নিলেন না। ভাবলেন, আমি ঠাট্টা করছি। আমি কিন্তু মোটেও ঠাট্টা করছিলাম না। আমি আসলেই বিশ্বাস করি, একটা ছোট শিশু যখন বড় হয়, তখন টেলিভিশনের থেকে খারাপ কিছু হতে পারে না। সারা পৃথিবীতে যে অটিস্টিক শিশুর সংখ্যা বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে, যদি শেষ পর্যন্ত দেখা যায় যে তার জন্য টেলিভিশন (এবং কম্পিউটার গেম) দায়ী, তাহলে আমি মোটেও অবাক হব না।
টেলিভিশন যে রকম ভয়ংকর একটা জিনিস, ঠিক তার উল্টো অসম্ভব সুন্দর একটা জিনিস হচ্ছে বই। যে শিশু লেখাপড়া শেখেনি, কথা বলতে শেখেনি তাকেও যদি নিয়মিতভাবে তার উপযোগী বই পড়ে শোনানো হয়, তাহলে সে নিজে নিজে লেখাপড়া শিখে যায়, সেটা আমি নিজের চোখে দেখেছি। বই কী অপূর্ব একটা জিনিস, সাদা কাগজে আঁকিবুঁকি দেওয়া কিছু অক্ষর, কিছু শব্দ, কিছু বাক্য—আমার চোখ দিয়ে আমি সেগুলো দেখি আর আমার মস্তিষ্কের ভেতর ম্যাজিক হতে শুরু করে। বইয়ের লেখাগুলো আমার কল্পনার জগৎটা খুলে দেয়। যে মানুষের কল্পনাশক্তি যত বেশি, একটা বই তার জন্য তত চমৎকার একটা বিষয়।
শুধু আমাদের দেশে নয়, সারা পৃথিবীতেই টেলিভিশন, কম্পিউটার, স্মার্টফোন বইকে হটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমি মনে করি, মানবসভ্যতার জন্য এটা হচ্ছে সত্যিকারের একটা হুমকি। যদি দেখা যায়, সত্যি সত্যি মানুষ বই পড়া বন্ধ করে টেলিভিশন দেখে বিনোদনের সব কাজ সেরে নিচ্ছে, তাহলে মোটামুটি নিশ্চিতভাবে বলে দেওয়া যায়, মানুষের প্রজন্ম তখন হবে অসম্পূর্ণ একটা প্রজন্ম! টেলিভিশনের রেডিমেড ফাস্টফুড বিনোদনে যদি অভ্যস্ত হয়ে যাই, তাহলে আমরা কি সত্যিকারের মননশীল কাজ কখনো করতে পারব?
সে জন্য আমি সুযোগ পেলেই সবাইকে বই পড়ার কথা বলি। কেউ যদি বলে খুব আনন্দ হচ্ছে, তাহলে আমি বলি, একটা ভালো বই পড়ে আনন্দটা আরও বাড়িয়ে নাও। কেউ যদি বলে মনটা ভালো নেই, তাকেও আমি বলি, বই পড়ো, তাহলে মনটা ভালো হয়ে যাবে। কেউ যদি বলে ঘুম আসছে না, আমি তাকে বলি, বই পড়ো, ঘুম চলে আসবে। কেউ যদি বলে শুধু ঘুম পায়, তাকেও আমি বলি, বই পড়ো, তাহলে ঘুম চলে যাবে। কেউ যদি বলে শরীরটা ভালো লাগছে, আমি বলি, চমৎকার, এটা হচ্ছে বই পড়ার সময়। কেউ যদি বলে শরীরটা ম্যাজম্যাজ করছে, আমি বলি, বই পড়ো, শরীর ঠিক হয়ে যাবে! আমি কৌতুক করে বলি না, আমি গভীর বিশ্বাস থেকে বলি।
ফেব্রুয়ারি মাসে আমাদের বইমেলা হয়। এটা কী চমৎকার একটা ব্যাপার। যারা বই পড়ে না, তারাও এই মেলায় চলে আসে। বই নেড়েচেড়ে দেখে। মাঝেমধ্যে কেনে। বাসায় নিয়ে সাজিয়ে রাখে। আমার খুব ইচ্ছে, আমাদের তরুণ প্রজন্ম বই পড়ুক। একটা বই পড়ার আগে তারা যে মানুষ থাকে, একটা ভালো বই পড়ার পর তারা আর সেই মানুষটি থাকে না। তারা অন্য একজন মানুষ হয়ে যায়! নিজেকে ভালো মানুষে পাল্টে দেওয়ার এত সহজ সুযোগটি তারা কেন ছেড়ে দেবে?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *