দাবিদার – ২০

বিশ

মুখে রোদ পড়তে ঘুম ভেঙে গেল জনের।

ছাতের ফুটো দিয়ে আসছে সূর্যকিরণ।

উঠে বসল ও। মুহূর্তে নেকড়ের মত সতর্ক। মাথাটা ঘুরিয়ে দেখছে ডাইনে-বাঁয়ে, হাত চলে গেছে পিস্তলে।

না। বিপদ বা ভয়ের কিছু নেই। সব কিছু স্থির, অচঞ্চল।

চর্ম স্টলে দাঁড়িয়ে মেঝেতে খুর ঠুকছে ঘোড়াটা, ওটার পেটের গুড়গুড় শব্দ শুনতে পেল জন।

পেশিতে ঢিল পড়ল ওর, ধীরে সুস্থে উঠে দাঁড়াল, গা থেকে ঝেড়ে ফেলল পচা কাঠের টুকরো।

ব্যাগে ব্রাশ আর চিরুনি আছে। ওগুলো দিয়ে ঘোড়াটার কেশর আঁচড়ে দিল জন। এখন বেরোলে কেউ দেখে ফেলার ভয় নেই, এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পর ঘোড়ার পিঠে স্যাডল চাপাল সে, কম্বল গুটিয়ে বেঁধে নিল ঘোড়ার পিছনে। তারপর বেরিয়ে পড়ল শহর অভিমুখে।

চাচা যেন সকালবেলায় ঘুরতো বেরিয়েছে-এরকম একটা ভাব ধরে শহরের মূল রাস্তায় চলে এল জন। ঘোড়াটার পেটে কিছ দানাপানি দেয়া দরকার। তবে আগে জুলিয়ার সঙ্গে দেখা করবে।

জুলিয়া আর ওর বোন ম্যাগি।

ছোট বোনটা বোধ হয় জানে না, কী ঘটছে। জনকে দেখে প্রথমটায় একটু বোকা বনে গিয়েছিল সে, বিরক্ত হয়েছিল। তবে জুলিয়ার উপরে ওর অগাধ বিশ্বাস। বড় বোন চাইলে ম্যাগিকে কসম খেয়ে বলতে হবে, জন সারা রাত তাদের স্যালুনেই ছিল।

এখন পর্যন্ত জুলিয়া কিংবা ম্যাগি কাউকেই জনের জন্য কারও কাছে মিথ্যা হলফ করে কিছু বলতে হয়নি।

গরু চুরির সঙ্গে ওর কোনও সম্পর্ক আছে বলেও কোনও প্ৰমাণ নেই।

সেদিন রাম ধোলাই খাওয়ার পর থেকে আর ওর ছায়াও মাড়ায়নি বার্ট।

তবে মার খেয়ে ও ভয় পেয়েছে বলে মোটেই ভাবছে না জন। ওর ধারণা, সময় ও সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে লোকটা।

বার্টকে ধোলাই দিয়ে অনেকেরই প্রশংসা কুড়িয়েছে জন।

মুখে না বললেও তাদের চাউনি দেখে ব্যাপারটা বোঝা যায়।

ও প্রমাণ করেছে, এ শহরে অন্তত একজন মানুষ আছে, যে বার্টের বাঁশির সুরে নাচে না।

শহরের বাসিন্দারা বার্টকে যেরকম ভয় পেত, তাতে একটু হলেও ভাটা পড়েছে।

স্যালুনে ঢুকে পিছনে সুইঙ্গিং ডোর বন্ধ করে দিল জন।

সকাল গড়িয়েছে, তাই লোকের ভিড়ও বেড়েছে।

জুলিয়াকে দেখতে পেল।

পরনে উঁচু গলার কালো একটা ড্রেস। এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে যাচ্ছে। হেসে হেসে কথা বলছে খদ্দেরদের সঙ্গে। কারও ঠাট্টা-তামাশার জবাব দিচ্ছে। চোখ তুলতেই জনকে দেখতে পেল-এগোচ্ছে একটা টেবিলের দিকে।

দ্রুত একটা হাত উঠে গেল বুকে, পরক্ষণে নামিয়ে ফেলল জুলিয়া। তারপর তাড়াহুড়ো না করে জন যে টেবিলটাতে বসেছে, সেদিকে এগোল।

‘উইস্কি?’ বারম্যান জিজ্ঞেস করল জনকে।

মাথা নাড়ল ও। ‘না। কফি।’

লোকটা মাথা ঝাঁকিয়ে চলে গেল।

জনের বিপরীত দিকের চেয়ারটা দখল করল জুলিয়া। কাগজের মত সাদা ওর মুখ। ‘কী খবর?’ আড়ষ্ট গলায় জিজ্ঞেস করল।

‘খবর ভাল।’

‘কোনও সমস্যা হয়নি তো?’

‘না। বলার মত কোনও সমস্যা হয়নি।’ কপালে ভাঁজ পড়ল জনের। ‘কিন্তু তোমার কী হয়েছে?’

‘বার্ট শহরে এসেছে। মার্শালের অফিসে গেছে।’

চেয়ারে হেলান দিল জন। পকেট থেকে সিগারেট তৈরির সরঞ্জাম বের করল। ‘তাতে আমার কী? আমি তো কাল সারা রাত এখানেই ছিলাম, তা-ই না?’

‘হ্যাঁ,’ সায় দিল জুলিয়া। ‘অবশ্যই। কিন্তু কেন যেন ব্যাপারটা আমার পছন্দ হচ্ছে না।’

‘ওরা কোনও প্রমাণ না পেলে তো আমাকে গ্রেফতার করতে পারবে না।’

‘মার্শালকে তুমি চেনো না।’ তর্জনী আর মধ্যমা একত্রিত করল জুলিয়া। ‘বার্ট আর ও হরিহর আত্মা।’

‘তাতে আমার কিছু আসে-যায় না,’ পাত্তা দিল না জন। ‘তুমি যতক্ষণ আমার পাশে আছ, কিছুই গ্রাহ্য করি না আমি।

‘তুমি জানো, আমি তোমার পাশে থাকব,’ বলল জুলিয়া। অদ্ভুত আবেগ তার কণ্ঠে। ‘তবে আমি বলি কি, তুমি যদি-’

‘পালিয়ে যাব? শুরুটা যেহেতু আমিই করেছি, এর শেষ না দেখে ছাড়ছি না।’

বারম্যান কফি এনেছে।

সে চলে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করল জন।

জুলিয়া একটা কাপে কফি ঢেলে ওর দিকে এগিয়ে দিল।

‘আমি ভাবছিলাম…’ শুরু করেও শেষ করল না জন।

‘কী?’

‘ভাবছিলাম, কোর্টে যাওয়ার মত যথেষ্ট গরু তো জোগাড় করে ফেলেছি। ওগুলো বিক্রি করে-’

বাধা পড়ল ওর কথায়।

বাইরে, সাইডওঅকে বুটজুতোর শব্দ হচ্ছে। অনেকগুলো জুতো।

ঝট করে মাথা ঘোরাল জন। হাত জোড়া থাকল টেবিলের নীচে, যাতে প্রয়োজনে চট করে অস্ত্র বের করতে পারে।

দরজা খুলে ভিতরে ঢুকল বার্ট।

সঙ্গে ভেস্টে তারকা পরা ঢ্যাঙা এক লোক। চল্লিশের কোঠায় বয়স।

ওদের পিছনে দু’জন পাঞ্চার।

দলটার একেবারে পিছনে পিটার উইলিয়ামস।

দোরগোড়ায় কয়েক সেকেণ্ড দাঁড়িয়ে রইল ওরা, ঘরের চারপাশে নজর বুলাচ্ছে।

পিন পতন নিস্তব্ধতা।

তারপর জনকে দেখতে পেয়ে ধীর, সতর্ক পদক্ষেপে এগোল ওর দিকে।

এবার সবার সামনে হাড্ডিসার কাঠামোর মার্শাল। বার্ট রইল মার্শালের পাশে।

অন্যরা-পিটার সহ, অর্ধবৃত্তাকারে এগিয়ে এল।

শীতল চোখে তাকাল জন ওদের দিকে। ‘কী ব্যাপার?’

কর্কশ, গাধার ডাকের সুরে কথা বলে উঠল মার্শাল, ‘জন উইলিয়ামস, তোমাকে গ্রেফতার করা হলো।

‘যদি বুদ্ধিমান হও,’ যোগ করল বার্ট, ‘সুবোধ ছেলেটির মত আমাদের সাথে চলো।’ নেকড়ের হাসি তার মুখে। তা নইলে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাব

বহু কষ্টে মেজাজ সামলাল জন। মার্শালের উপর থেকে চোখ সরিয়ে বার্টের দিকে তাকাল। তারপর আবার চাইল মার্শালের দিকে।

‘আমাকে গ্রেফতার করছ? বেশ, বেশ। তো, কোন্ অভিযোগে?’

‘অনেক অভিযোগ আছে,’ আগ বাড়িয়ে বলল বার্ট।

‘মার্শালকে কথা বলতে দাও,’ ধমক দিল জন।

বলল মার্শাল। অভিযোগটা খুনের।

একুশ

ভীষণ আঁতকে উঠল জুলিয়া।

জনের মনে হলো, ওর রক্ত জমাট বেঁধে গেছে। তবে কথা বলার সময় গলার স্বর একটুও কাঁপতে দিল না। ‘খুন? এসব কী বলছ? কাউকে খুন-টুন করিনি আমি। কে খুন হয়েছে?’

‘আমার এক কর্মচারী,’ বলল বার্ট, ‘হতভাগার নাম ক্লাইড ব্রেনান। পিছন থেকে গুলি করা হয়েছে ওকে। গত রাতে রাসলাররা আমার কিছু গরু চুরি করে নিয়ে যায়। ক্লাইড নিশ্চয় দলটাকে দেখে ফেলেছিল। আজ সকালে রানশের উত্তর দিকে ওর লাশ খুঁজে পাই। বাজ পাখির ওড়াউড়ি দেখে ওদিকে গিয়েছিলাম আমরা।’

‘ক্লাইড ব্রেনান,’ নামটা আওড়াল জন। পেটের ভিতরটা গুলিয়ে উঠলেও চিন্তার ঝড় বইছে মস্তিষ্কে। ‘সেই লোকটা, যে আমার পিঠে বন্দুক ঠেসে ধরেছিল, আর সেই সুযোগে তুমি ঘুসি মেরে ফেলে দিয়েছিলে আমাকে?’

‘তুমি আমাকে গুলি করার চেষ্টা করলে ব্রেনান তোমার হাত থেকে অস্ত্র কেড়ে নেয়,’ শীতল গলায় বলল বার্ট। ‘হ্যাঁ, ও-ই। ওর উপর রাগটা ভুলতে পারোনি, তা-ই না?’

‘ব্রেনান মারা গেছে?’ ভাবনা-চিন্তা করার জন্য সময় ক্ষেপণ করছে জন।

‘মাথাটা একদম ছাতু হয়ে গেছে।’

ক্লাইড ব্রেনান। গত রাতের সেই বন্দি।

যাকে বাঁচাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিল জন।

….আর ফোর্ড…ডাবল-ক্রস করল ওকে! গোল্লায় যাক হারামজাদা!

কী ঘটেছে, পরিষ্কার বুঝতে পারছে জন।

সে ফোর্ডের আউটফিট ত্যাগ করা মাত্র ব্রেনানের পিছনে কাউকে লেলিয়ে দিয়েছিল লোকটা।

মরা মানুষ কথা বলতে পারে না…তা না হলে…

জিভ দিয়ে ঠোঁট চাটল জন। ‘আমি ক্লাইড ব্রেনানকে হত্যা করিনি। কাউকেই হত্যা করিনি আমি।’

আশ্চর্য শান্ত ও পরিষ্কার গলায় জুলিয়া জানতে চাইল, ‘তোমরা বলছ, কাল রাতে খুন হয়েছে ব্রেনান?’

‘হ্যাঁ, তা-ই,’ বলল পিটার। বেল্টের ফাঁকে আঙুল ঢুকিয়ে এক কদম সামনে বাড়ল।

‘তা হলে জন উইলিয়ামস এ কাজ করেনি,’ ঠাণ্ডা গলায় বলল জুলিয়া।

‘তুমি কী করে জানো, ম্যা’ম?’ নম্র সুরে প্রশ্ন করল মার্শাল।

‘আমি জানি, কারণ…গত রাতে সে এখানেই ছিল। দোতলায় ঘুমাচ্ছিল।’

‘দোতলায় থাকে নাকি ও?’

‘হ্যাঁ।’ জুলিয়ার চেহারাটা ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে।

‘যে-কেউ রাতের বেলা ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে কাজ সেরে আবার ঘরে ফিরতে পারে,’ ঘোঁত-ঘোঁত করল বার্ট। ‘তুমি কী করে জানো, ও ওর ঘরে ছিল কি না?’

বুক ভরে দম নিল জুলিয়া। ‘ছিল না।’ অবাক হয়ে জুলিয়ার দিকে তাকাল জন।

নিজের বারোটা বাজাতে যাচ্ছে জুলিয়া। ও যেভাবে জনকে বাঁচানোর পরিকল্পনা করেছে, তাতে মেয়েটার নামে সারা শহরে ছি-ছি পড়ে যাবে। জানেও না সে, ক্লাইড ব্রেনানকে সত্যি খুন করেছে কি না ও। তারপরও বিরাট ঝুঁকি নিতে যাচ্ছে।

জনের বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠল। জুলিয়া-’

‘সত্যি কথাটা বলতে দাও আমাকে,’ বাধা দিয়ে বলল জুলিয়া।

‘চুপ। চুপ করো।’

টেবিলের নীচ থেকে ধীরে আর সাবধানে ডান হাতটা বের করল জন। সিধে হলো। আবার কথা বলার আগে দীর্ঘক্ষণ লোকগুলোকে জরিপ করে নিল। ‘আমি আবারও বলছি, ক্লাইড ব্রেনানকে খুন করিনি আমি। …ওয়ারেন্ট এনেছ?’

‘ওয়ারেন্ট?’ নাক সিটকাল বার্ট। ‘লম্বা রাস্তা ঠেঙিয়ে কে যাবে গ্র্যাণ্ড রিভার সিটিতে ওয়ারেন্ট আনতে? বেণ্ট’স ক্রসিং-এ কোনও জাজ নেই। ‘

‘তার মানে, আমাকে তোমরা বেআইনি ভাবে গ্রেফতার করছ।’ জনের কণ্ঠ ভাবলেশশূন্য। ‘না যেতে চাই যদি?’

যেতে তোমাকে হবেই,’ চিবিয়ে চিবিয়ে বলল বার্ট।

চেহারায় ক্রুদ্ধ ভাব ফুটিয়ে সামনে কদম বাড়াল পিটার। তার মুখটা সাদা। চোখ জোড়া জ্বলজ্বল করছে উত্তেজনায়।

বাবার বন্দুক নিয়ে খেলা করা বাচ্চার মত আচরণ ওর, ভাবল জন। বুঝতে পারল, সারাটা সকাল বেশ ভাল মতই ছেলেটার ব্রেন ওয়াশ করেছে বার্ট।

‘হ্যাঁ, যাবে তুমি,’ কাকাতুয়ার মত বুলি আওড়াল পিটার। ‘ভুলে যেয়ো না, সার্কেল ইউ-র অর্ধেক মালিকানা আমার। ক্লাইড ব্রেনান আমাদের একজন রাইডার ছিল। ভালয় ভালয় আমাদের সাথে চলো। নয়তো…

বার্টের প্রতি প্রচণ্ড ঘৃণা হচ্ছে জনের। নিজেকে সামলে রাখতে খুব কষ্ট হচ্ছে।

হারামজাদাটা কী চালাক! জনকে গ্রেফতার করতে পিটারকে ব্যবহার করছে সে। শয়তানটা খুব ভাল করেই জানে, সৎ- ভাইয়ের বিরুদ্ধে হাত তুলবে না জন।

পরাজয় মেনেই নিতে হলো। এ ছাড়া উপায় নেই।

‘ঠিক আছে,’ আশ্চর্য শান্ত শোনাল জনের কণ্ঠ। ‘আমি যাচ্ছি।’

চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল জুলিয়া। ‘আমি কসম খেয়ে বলছি…’ গলাটা কেঁপে গেল তার।

‘জুলি, চুপ!’ হাত তুলে ওকে থামতে বলল জন।

সন্তুষ্টির ঘোঁত-ঘোঁত শব্দ বেরিয়ে এল বার্টের নাক দিয়ে। এক লাফে জনের সামনে এসে ঝট করে ওর হোলস্টার থেকে গোল্ডপ্লেটেড কোল্টটা তুলে নিল সে। তারপর দৃষ্টি ফেরাল জুলিয়ার দিকে। মুখ বাঁকা করে ছুঁড়ে দিল ওটা পিটারের কাছে। ‘রেখে দাও এটা। সুভেনির হিসেবে থাকবে আমার কাছে।’

‘বার্ট অ্যান্ড্রিউ,’ শান্ত গলায় বলল জুলিয়া, তবে প্রতিটা শব্দে উৎসারিত হলো প্রবল ঘৃণা, ‘যতদিন তুমি নিঃশ্বাস নেবে, আমাকে নিয়ে ভয়ে থাকতে হবে তোমার…

‘কোনও মহিলাকে ভয় পাই না আমি।’ খ্যাক-খ্যাক করে বিশ্রী হাসল বার্ট। ‘আর তোমার ক্ষেত্রে ‘বেশ্যা মাগী’ কথাটাই বেশি মানায়।’

শরীর শক্ত হয়ে গেল জনের।

ঠিক তখনই ওর পিঠে ঠেসে ধরা হলো বন্দুকের নল।

‘একদম নড়বে না,’ শাসাল মার্শাল। বার্টের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘যথেষ্ট হয়েছে, বার্ট।’

‘যার যা পরিচয়, তাকে সেভাবেই সম্বোধন করা উচিত,’ বলল বার্ট, ‘হ্যাঁ, যথেষ্ট বকবকানি হয়েছে। এখন ওকে নিয়ে গিয়ে জেলে পুরে রাখো। আফসোস, হারামজাদাকে এখনই ফাঁসিতে ঝোলাতে পারলাম না। ক্লাইড ব্রেনান একজন ভাল মানুষ ছিল।’

‘বার্ট,’ এমন নিচু স্বরে বলল জন যে, প্রায় অস্পষ্ট শোনাল ওর কণ্ঠ। ‘জুলিকে তুমি ভয় না পেলেও আমাকে ভয় পাওয়া উচিত। এখন থেকে, যদি সামান্যতম সুযোগও পাই, গুলি করে খুলি উড়িয়ে দেব তোমার।’

‘বন্ধু, যেখানে যাচ্ছ, সেখানে খুলি উড়িয়ে দেয়ার কোনও সুযোগই পাবে না।’ হাসল বার্ট। পিস্তল বের করে জনের বুকে গুঁতো মারল। তারপর এমন জোরে ধাক্কা দিল যে, প্রায় পড়ে যাচ্ছিল জন। ‘আগে বাড়ো!’

বাইশ

সপ্তাহের মাঝামাঝি এখন।

দুপুরবেলা।

মিছিলটা যখন ভিতরে ঢুকল, চেয়ারে বসে থাকা লোকটা তড়াক করে লাফিয়ে উঠল।

কালো দাড়ি। ষণ্ডা-মার্কা চেহারা। অফিসের এক কোণে বসে ঝিমুচ্ছিল।

একে দেখলে বুঝতে অসুবিধে হয় না, মানবজাতির বিবর্তন বানর থেকেই।

গরিলার মত অস্বাভাবিক লম্বা পেশিবহুল হাত দুটো প্ৰায় হাঁটু ছুঁই-ছুঁই। কাটা তামাকের মত মাথার চুল, নোংরা, এলোমেলো, ঝুঁকে আছে কপালের উপর।

শার্টের বুকে একটা তারা।

‘ধরা গেল তা হলে, অ্যাঁ?’ কথা তো নয়, যেন গুড়গুড় ডাকল মেঘ।

‘হ্যাঁ, বোব। পাকড়াও করে এনেছি,’ উল্লসিত কণ্ঠ বার্টের। ‘পালিয়ে যেন না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে, বুঝলে?’

হলুদ দাঁত বের করে হাসল বোব। ‘এখান থেকে কেউ জ্যান্ত বেরোতে পারে না। চিন্তা কোরো না, মিস্টার। বোব কোনও দিন কোনও কয়েদিকে পালাতে দেয়নি।’

বিরাট একটা হাত বাড়িয়ে জনের শার্টের পিছনটা খামচে ধরল সে। ‘বন্ধু, ক্লাইড ব্রেনানকে খুব পছন্দ করতাম আমি,’ বলে সেল ডোর খুলে এমন প্রবল ধাক্কা দিল, ছিটকে গিয়ে বাড়ি খেল জন কারাপ্রকোষ্ঠের কাঠের দেয়ালে।

ইস্পাতের দরজা বন্ধ করে মস্ত তালা ঝুলিয়ে দিল বোব। ‘একদমই ভাববে না, মিস্টার অ্যান্ড্রিউ। যতদিন চাইবে, ততদিনই ফাটকে বন্দি হয়ে থাকবে ও।’

‘ভেরি গুড। পকেট হাতড়ে একটা স্বর্ণমুদ্রা বের করল বার্ট ছুঁড়ে দিল বোবের দিকে।

আলো পড়ে ঝিকিয়ে উঠল দুই ঈগলের ছাপ মারা স্বর্ণখণ্ডটি।

শূন্যেই ওটা খপ করে ধরে ফেলল বোব।

‘যেদিন ওকে এখান থেকে নিয়ে যাব ফাঁসিতে ঝোলানোর জন্য,’ বলল বার্ট, ‘সেদিন এরকম আরেকটা জিনিস পাবে।’

‘আমি সেই সুন্দর দিনটার অপেক্ষায় থাকলাম,’ সহাস্য বক্তব্য বোবের।

মার্শাল একবার ওর দিকে তাকাল, তারপর বার্টের দিকে। ‘বার্ট,’ বলল সে, ‘বোবকে কিন্তু বেতন দেয়া হয়।’

‘চব্বিশ ঘণ্টা জেগে থেকে পাহারা দেয়ার মত যথেষ্ট বেতন নিশ্চয় পায় না সে।’

অসন্তোষে বিড়বিড় করল মার্শাল।

মুখে আবছা হাসি ফুটিয়ে আইন রক্ষকের দিকে তাকাল বার্ট। ‘তোমাকে কেমন যেন বিরক্ত দেখাচ্ছে, মার্শাল। ঘটনা কী? তুমি কি একটা কথা ভুলে গেছ?’

‘কিছুই ভুলিনি আমি,’ খেঁকিয়ে উঠল মার্শাল।

‘উঁহুঁ, ভুলে গেছ। ভুলে গেছ যে, আমার নাম বার্ট অ্যান্ড্রিউ। আর এ নাম ভুলে যাওয়া কারও জন্যই মঙ্গলজনক নয়। বিশেষ করে, সে যদি বেণ্ট’স ক্রসিং-এর পাবলিক অফিসের কর্তার দায়িত্ব পালন করে।’

চেহারায় ব্যক্তিত্ব ফোটানোর চেষ্টা করল মার্শাল। ‘আমাকে ইলেকশনে জেতাতে কোনও ভূমিকা রাখোনি তুমি। রেখেছে মরিস উইলিয়ামস।’

‘মরিস উইলিয়ামস এখন মৃত,’ শীতল গলায় বলল বার্ট। ‘আমিই এখন ফ্লেচার’স হোল-এর দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। কথাটা ভুলে যেয়ো না।’ মার্শালের চোখের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সে।

চাউনি সহ্য করতে না পেরে চোখ ফিরিয়ে নিল মার্শাল। ‘আমরা ওর উপর ঠিকঠাক নজর রাখব,’ অনুচ্চ কণ্ঠে বলল।

‘আমি চাই,’ হাসল বার্ট। ‘ওর জীবনটা তোমরা নরক করে তুলবে।’ হো-হো করে হেসে উঠল এবার। ‘চলো, পিটার। আজকের সকালটা বেশ ভালই কাটল। এই খুশিতে এক ঢোক পান করা যাক। মার্শাল, তুমিও চলো।’

‘আমার কাজ আছে,’ শুকনো গলায় বলল মার্শাল।

ভুরু কোঁচকাল বার্ট। ‘সত্যি, মার্শাল, দিন-দিন বড্ড অবাধ্য হয়ে উঠছ তুমি। বললাম না, সবাই মিলে পান করব?’

কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল মার্শাল। বার্ট আর পিটার বাইরের দিকে রওনা হয়েছে, ওদের পিছন-পিছন এগোল।

তেইশ

কারাপ্রকোষ্ঠের চারধারে চোখ বুলাল জন।

দেয়ালগুলো পুরু, গায়ে গা লাগানো কাঠের গুঁড়ি দিয়ে তৈরি, একেকটা বারো ইঞ্চি হবে ব্যাসার্ধে, দুটো গুঁড়ির মাঝে কোনও ফাঁক-ফোকর নেই।

মাথার উপরে আট ইঞ্চি বাই আট ইঞ্চি মাপের ছোট্ট জানালা।

নিরেট চার দেয়ালের মাঝে সবেধন নীলমণি ক্ষুদ্র একটা ফাটল।

সেলের মেঝে পাথরের স্ল্যাবের, ময়লার পুরু আস্তরণ তাতে। হাতে তৈরি দরজাটা প্রকাণ্ড, দশাসই একখানা তালা ঝুলছে। চাবি ছাড়া ও-তালা কোনও ভাবেই খোলা সম্ভব নয়।

মেঝের এক কোণে ময়লা উপচে পড়া একটা বাকেট আর এক জোড়া কম্বল চোখে পড়ল জনের। আসবাব বলতে আর কিছু নেই।

পলায়ন দুঃসাধ্য।

তার উপর বার্ট ওই নরবানরটাকে কুড়ি ডলার ঘুষ দিয়েছে সার্বক্ষণিক নজর রাখার জন্য। এ থেকেই বোঝা যায়, জনকে সে কী পরিমাণ ভয় করে।

নিষ্ফল আক্রোশে দুপদাপ পা ফেলে পায়চারি করতে লাগল জন সরু প্রকোষ্ঠে। নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছে ওর।

শুরু থেকেই নির্বোধের মত কিছু কাজ করেছে। সার্কেল ইউ-র মত একটা আউটফিট দখল করার চেষ্টাটা ছিল এক নম্বরের বোকামি।

দ্বিতীয় গাধামিটা করেছে টম ফোর্ডের মত আউট-লকে বিশ্বাস করে।

সব কিছু ভজকট পাকিয়ে যাওয়ার মাঝে একটাই সান্ত্বনা-জুলিয়ার মত চমৎকার একটা মেয়ের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে।

জনের জন্য মিথ্যা কথা বলেছে মেয়েটা, নিজের মান-সম্মান বিসর্জন দিয়েছে ওকে রক্ষা করার জন্য।

পায়চারি থামাল জন। জুলিয়ার কথা ভাবতেই অদ্ভুত এক উষ্ণতায়, আশ্চর্য এক ভাল লাগায় ভরে যাচ্ছে বুক।

এত কিছু যখন করেছে, তা হলে মেয়েটা যে নিস্পৃহ ভাব দেখায়, ঔদাসীন্য—এসব হয়তো সত্যি নয়, অভিনয়।

…হয়তো আশা করার দুঃসাহস দেখাতে পারে জন-

আশা?

শব্দটা যেন উপহাস করল জনকে।

জেলখানায় বন্দি, আবার আশাও করছে? যেখানে বার্ট ওকে ফাঁসিতে ঝোলাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ?

আদৌ কি কোনও বিচার হবে ওর? নাকি বিনা বিচারেই? …হাহ, আশা!

নিজেকে গাল দিল জন। আবার শুরু করে দিল পায়চারি।

‘অ্যাই, হাঁটাহাঁটি বন্ধ করবে তোমার?’ গরাদের ওপাশ থেকে ঘোঁত-ঘোঁত করে উঠল বোব। চেয়ারটা সেলের সামনে নিয়ে এসেছে, যাতে জন কী করছে, সব দেখতে পায়। এক হাতে ধরে রেখেছে ডাবল ব্যারেলের শটগান। বলল, ‘তোমার পায়চারির শব্দে খুব অসুবিধা হচ্ছে।’

খেঁকিয়ে উঠল জন, ‘তাতে আমার কী? জাহান্নামে যাও তুমি!’

আস্তে আস্তে চেয়ার ছাড়ল বোব। ছোট-ছোট চোখ জোড়া আগুনের মত জ্বলছে। ‘আমাকে জাহান্নামে যেতে বলে নিজের দোজখে যাওয়ার রাস্তা সুগম করলে, গমগমে গলায় বলল। এখানে দাঁড়িয়ে কেউ বোবকে অসম্মানজনক কথা বলতে পারে না। বোব তাতে খুব মাইণ্ড করে, আর তাকে একটা শিক্ষা দেয়। তোমাকেও শিক্ষা দিতে হবে।’

শটগান কক করল সে। অস্ত্রটা এক হাতে ধরে-ট্রিগারের উপর আঙুল-পকেট থেকে বের করে আনল চাবি। দাঁত কেলিয়ে হাসতে হাসতে খুলল কারাপ্রকোষ্ঠের দরজা।

‘আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার বোকামি নিশ্চয় করবে না, ‘ গাঁকগাঁক করে বলল বোব। ‘শুধু ট্রিগার টিপে দিলেই-বুম! সেল সহ দু’টুকরো হয়ে যাবে তুমি।’

পিছনে হাতড়ে হাতড়ে সেলের তালা বন্ধ করল গরিলা। ‘এখন,’ জনের দিকে এগোতে এগোতে বলল, ‘ঘোরো। ঘরের ওই কোনায় গিয়ে সুবোধ ছেলেটির মত দাঁড়াও।’

নড়ল না জন। খুব ইচ্ছা করছে নরবানরটার উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে। শটগানের নল দুটো লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দেখে চিন্তাটা মাথা থেকে দূর করে দিল।

কোনও সুযোগই নেই।

‘কী হলো, কথা কানে যায় না?’ হুঙ্কার ছাড়ল গরিলা। শটগান দিয়ে গুঁতো মারার ভঙ্গি করল।

কথা বলার সময় থুতু বেরিয়ে এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে বোবের দাড়ি। চোখ জোড়া উন্মাদের মত চকচক করছে।

জন বুঝতে পারল, ট্রিগার টেপার জন্য নিশপিশ করছে লোকটার হাত। কাজটা যদি সে করে, বার্টের কাছ থেকে তিরস্কারের বদলে পুরস্কার পাবার সম্ভাবনাই বেশি।

ধীরে, আড়ষ্ট শরীর নিয়ে ঘুরে দাঁড়াল জন। হেঁটে গেল সেলের কিনারে।

‘বেশ। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো এখন। একদম নড়বে না—’

প্রচণ্ড ব্যথায় চিৎকার বেরিয়ে এল জনের মুখ থেকে।

শটগানের কুঁদো দিয়ে মারাত্মক এক গুঁতো মেরেছে হারামিটা ডান কিডনির ঠিক উপরে।

পা দুটো ভাঁজ হয়ে গেল ওর, ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করল। তার আগেই বন্দুকের দ্বিতীয় বাড়িটা খেল শরীরের অপর পাশে।

বনবন ঘুরতে শুরু করল ঘরটা জনের চারপাশে।

হাঁটু ভেঙে পড়ে গেল ও মেঝেয়। চার হাত পায়ে উবু হয়ে রইল। বহু কষ্টে ঠেকিয়ে রেখেছে উদ্‌গত কান্না।

‘আশা করি, এ থেকে তুমি শিখলে-আমি কিছু বললে তা শুনতে হয়,’ সন্তুষ্টির সুরে বলল বোব।

আবছা শুনল জন, সেলের দরজা বন্ধ হয়ে গেল পিছনে।

তালায় চাবি লাগানোর শব্দ ভেসে এল।

‘কাজেই, সাবধান,’ হুঁশিয়ার করল বোব। ‘বোবকে আর কক্ষণো অসম্মান করার কথা কল্পনাও কোরো না…’

অনেকক্ষণ উবু হয়ে রইল জন। ভীষণ অসুস্থ বোধ করছে। শেষে হামাগুড়ি দিয়ে নোংরা কম্বলগুলোর উপর হাত-পা ছড়িয়ে উপুড় হয়ে পড়ল।

ভয়ঙ্কর এ ব্যথার যেন উপশম হবে না, এখনও ঘুরছে মাথা।

অনেক সময় লাগল ধাতস্থ হতে।

মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল জন, একবার যদি সুযোগ পায়, এর শোধ নেবে ও। কড়ায়-গণ্ডায় মিটিয়ে দেবে সব।

চব্বিশ

পরবর্তী চব্বিশ ঘণ্টা ছিল জন উইলিয়ামসের জীবনের দুঃসহতম সময়।

ব্যথায় কাতরেছে ও সারাক্ষণ। শক্ত মেঝেতে দুর্গন্ধযুক্ত দুটো কম্বল পেতে শুয়ে থেকেছে। একবার শুধু বহু কষ্টে উঠে দরজার ফাঁক দিয়ে বোবের ঠেলে দেয়া খাবার খেয়েছে।

খাবার বলতে কটু স্বাদের কফি, আলুভাজা আর গরুর মাংস।

খাবারটা খেয়ে ওর উপকারই হয়েছে।

রেইডের আগে, দুপুরের পর থেকে পেটে কিছু পড়েনি। খাওয়ার পরে শরীরে একটু বল পেল জন, অসুস্থতাও যেন খানিকটা কাটল। আবার চিন্তা করার শক্তি ফিরে পেল সে। নিজের বর্তমান অবস্থা নিয়ে ভাবতে লাগল।

একটা ব্যাপার নিশ্চিত-এখান থেকে পালাবে ও।

যেভাবেই হোক, ওরা ওকে ফাঁসিতে ঝোলাবে, যদিও নিজের ভাগের গরুই চুরি করেছে ও।

মার্শাল আর জেলার-দু’জনেই বার্ট অ্যান্ড্রিউর ইশারায় চলে।

কাজেই, জনতার হাতে ওকে তুলে দেয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

নষ্ট করার মত সময় একদমই নেই। পালাতেই হবে ওকে। কিন্তু কীভাবে?

কাজটা অসম্ভব।

যে এই জেলখানা বানিয়েছে, খুব মজবুত করেই তৈরি করেছে।

দেয়াল ফুটো করতে যন্ত্রপাতি আর লোকবল লাগবে।

একা একজন মানুষের পক্ষে এখান থেকে বেরোনো সম্ভব নয় কোনও মতেই—বিশেষ করে, বোব যখন দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা নজর রাখছে।

নরবানরটা বার্টকে দেয়া প্রতিশ্রুতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করছে। কোলের উপর শটগান রেখে ঠায় বসে থাকে সেলের সামনে। তন্দ্রা এসে গেলে ঝিমোয়।

তবে তার ঘুম বেড়ালের মত পাতলা। জনের বুট মেঝেতে একটু ঘষা খেয়েছে কি খায়নি, ওই সামান্য শব্দেই জেগে যায় বোব, চোখ খোলার সঙ্গে সঙ্গে তাক করে ধরে শটগান।

রাতটা ছাড়া-ছাড়া ঘুমে কেটে গেল জনের। মাঝে মাঝেই জেগে গেল। ভাবল, বোবকে দেখবে, নাক ডাকিয়ে ঘুমাচ্ছে। আর সেই ফাঁকে সেলটা পরীক্ষা করে দেখবে, পুরু দেয়ালের কোথাও ফাটল বা গর্ত আছে কি না। যদিও না থাকারই কথা।

কিন্তু ওর আশায় গুড়েবালি।

কীভাবে যেন টের পেয়ে যায় বোব, জেগে গেছে জন। সঙ্গে সঙ্গে তন্দ্রা টুটে যায় তার।

‘ট্রায়ালের আগ পর্যন্ত ওভাবেই বসে থাকবে বুঝি?’ ঠাট্টার সুরে একবার বলল জন। ‘ওরকম বসে থাকতে থাকতে তো লেজ গজিয়ে যাবে তোমার।’

ঘন দাড়ির ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে এল বোবের হলুদ দাঁতের সারি। ‘খুব বেশি দিন বসে থাকতে হবে না এখানে।’

‘বিচার কবে?’ জিজ্ঞেস করল জন।

‘বিচার?’ কৃত্রিম বিস্ময়ে চোখ বড়-বড় করল বোব। ‘কে বলল তোমার বিচার হবে?’

আবার শুয়ে পড়ল জন।

একমাত্র ভরসার স্থল জুলিয়া-কিন্তু জুলিয়াই বা কী করতে পারবে? ও হয়তো জনের ধারে-কাছে ঘেঁষারই সুযোগ পাবে না।

হয়তো মেয়েটার উপর নজর রাখা হচ্ছে, ওর মতই অসহায় অবস্থায় রয়েছে জুলিয়া।

তা ছাড়া, জন চায়ও না, জুলিয়া ওর জন্য আর কোনও ঝুঁকি নিক।

ইতোমধ্যেই বড় একটা ঝুঁকি নিয়ে ফেলেছে সে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *