পড়ার ঘরে পড়তে বসি যখন, বাবা ডেকে বলেন,-- 'ওরে খোকন, মন দিয়ে খুব করিস্ লেখাপড়া-- একজামিনে নইলে খাবি বড়া।' কিন্তু আমি পড়ি কেমন করে ? বাবা জানেন না ত, পড়ার ঘরে জুটেছে সব দুষ্টু পাজি যত-- পড়তে কি দ্যায় একটু মনের মত ? বলেন বাবা-- 'কেবল পড়া ভুলিস্ ! ডাকব নাকি পুলিশ ? টিকটিকি, তুই আমার দেয়ালে ঘুরে বেড়াস্ মনের খেয়ালে। কার হুকুমে করিস্ পোকা সাবাড় ? পোকা ছাড়া নেই কি রে আর খাবার ? আয় না নেমে উঁচু দেয়াল ছেড়ে, ল্যাজটি কেটে বানিয়ে দেব বেঁড়ে! কইলে কথা, বল্ ত ওরে নবাব, একটি বারও দিস্ না কেন জবাব ? পোকা-মাকড় খেয়ে কেবল ফুলিস্-- ডাকব নাকি পুলিশ ? ছারপোকা, তুই আমার চেয়ারে লুকিয়ে বসে থাকিস যে, আরে ! ভাবিস বুঝি চেয়ারখানা তোর ? বেরিয়ে কেন আসিস্ না রে, চোর। কুটুস কুটুস কামড় দিয়ে জ্বালাস্-- ফুড়ৎ করে ফুটোর মধ্যে পালাস ! একরত্তি চেহারা তোর, তাই ধরতে গিয়ে ফস্কে খালি যাই। পড়ার সময় পাগল করে তুলিস,-- ডাকব নাকি পুলিশ ? আরশোলা, তুই ফরফরিয়ে উড়িস, দেমাক-ভরে মাথার উপর ঘুরিস্ ! নিজেকে তুই মনে ভাবিস্ নাকি-- উড়োজাহাজ কিম্বা ঈগল পাখি ? পড়িস যদি চীনেম্যানের হাতে, কচমচিয়ে চিবিয়ে খাবে দাঁতে। আমি নেহাৎ ভালমানুষ ছেলে ! আমার ঘরেই উড়িস্ পাখা মেলে সড়সড়িয়ে পিঠের পরে বুলিস্-- ডাকব নাকি পুলিশ ? মাকড়সা, তুই ঘরের কোণাতে ব্যস্ত আছিস্ যে-জাল বোনাতে, সে-জাল নিয়ে করবি কি'রে বোকা ? ডাঙ্গায় বসে ধরিস্ খালি পোকা। জেলে ধরে কাৎলা ইলিশ রুই মাছ না ধরে মাছি ধরিস তুই ! ছাত থেকে তুই শূন্যে নেমে ঝুলিস্, দোলনা চেপে মনের সুখে দুলিস্, দুলে দুলে বোধ হয় খালি ঢুলিস্-- ডাকব নাকি পুলিশ ?