গ্র্যানি

গ্র্যানি

‘আপনার মনের অবস্থা আমি বুঝতে পারছি, মিসেস উইলবি। তবে আপনার মাকে কোনো প্রাইভেট হোমে পাঠানোই সবচেয়ে ভালো হবে। উপযুক্ত চিকিৎসা পাবেন তিনি ওখানে। পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠার চান্স তাঁর মোটেই নেই। কাজেই আমার পরামর্শ হলো যারা এসব কাজে উপযুক্ত তাদের হাতেই দায়িত্ব ছেড়ে দিন।’

অস্বস্তি নিয়ে ডাক্তারের দিকে তাকাল মিসেস উইলবি। কিন্তু মা প্রাইভেট হোমে যেতে চাইবেন না কিছুতেই। ওসব জায়গায় যত ভালো ব্যবস্থাই থাকুক, আমরা ধারণা, ওখানে গেলে মার কাছে নিজেকে সবসময় বন্দী মনে হবে। যেন কয়েদখানায় এসেছে। মা হয়তো দম বন্ধ হয়েই মারা যাবে। ‘

‘সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার আপনার। যদি মনে করেন বাড়িতে রাখলে উনি সুস্থ হয়ে উঠবেন, কোনো সমস্যা হবে না, তাহলে আমার কিছু বলার নেই। তবে নার্স চার্টারিসের মতো আরেকজন নার্সের ব্যবস্থা করুন। নাইট ডিউটি দেবে। মিসেস হিনটনকে দিনে বা রাতে কখনোই একা রেখে কোথাও যাবেন না। আমার সন্ধানে বিশ্বস্ত একজন আছে। বিকেলের দিকে পাঠিয়ে দেব।’

কব্জি উল্টে ঘড়ি দেখল তরুণ ডাক্তার, তারপর বলল, ‘এই অ্যারেঞ্জমেন্টে কাজ না হলে বিকল্প কিছু ভাবতে হবে।’ হ্যাট তুলে মাথায় চাপাল সে, গ্লাভস জোড়া তুলে নিল মেহগনি কাঠের সিন্দুকের ওপর থেকে।

মিসেস উইলবি ডাক্তারের সাথে নেমে এল নিচে, পার্ক করে রাখা বুইকের দিকে পা বাড়াল।

‘আমাদের জন্য অনেক করছেন আপনি,’ বলল জোয়ান উইলবি। ‘সাহায্য চাইলে সাধ্যের অতীত করবেন জানি। তবে আমার মাকে ওরকম জেলখানায় পাঠানোর কথা মনে এলে নিজেরই দম বন্ধ হয়ে আসে।’ হাত বাড়িয়ে দিল সে। বসন্তের ঝিলমিলে সকালে তাজা রোদ পড়েছে ওর মধুরঙা চুলে। অপূর্ব সুন্দর মুখখানা বিষণ্ণ।

বিদায় মুহূর্তে হ্যান্ডশেক করল ডাক্তার বুরলে। মেয়েটার জন্য মায়া লাগছে তার। এখনো পঁচিশ পেরোয়নি। এরই মধ্যে বেচারির জীবন থেকে আনন্দ-ফুর্তি সব চলে গেছে। গত বছর ওর স্বামী প্লেন ক্র্যাশে মারা গেছে। আর ইদানীং মাকে নিয়ে শুরু হয়েছে কঠিন সমস্যা। ভীষণ মানসিক চাপের মধ্যে আছে জোয়ান। ওর মাকে শেষ পর্যন্ত পাগলাগারদে পাঠাতে হতেও পারে। তবে এখানে ঠিকমতো দেখভাল করা হলে অবস্থা খানিকটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা যাবে।

ডাক্তার চলে যাবার পরে মিসেস উইলবি ধীর পায়ে এগোল সিঁড়ির দিকে। মাকে এখানে রেখে দেয়ার বুদ্ধিটা ঠিকই আছে। ড্রইংরুমের ঘড়ি দেখল জোয়ান। এগারোটা বাজে। বাজারে যেতে হবে। মেরীটা আবার কোথায় গেল। আগামী সোমবারের আগে স্কুল খুলছে না ওর। আর মেরী তার মার সাথে শপিংয়ে যেতে খুব ভালোবাসে। সে বাগানের দিকে ফিরে গলা তুলে ডাকল, ‘মেরী! মে-এ-রী!’

কিচেন কোয়ার্টারের দরজা খুলে গেল। হাতে রুপোর ট্রে, পার্লারমেইড বলল, ‘মিস মেরী বোধহয় ওপরে আছে ম্যাডাম। মিসেস হিনটন আর নার্সের সঙ্গে।’

মিসেস উইলবি সিঁড়ি বেয়ে দৌড়ে ওপরে উঠে এল। এখানে মা থাকে। আস্তে দরজা খুলল। রোদ ঝলমলে জানালার পাশে, একটা সোফায় বসে আছেন বৃদ্ধা। তাঁর মুখ মাংসল, থলথলে, তবে বিবর্ণ হয়ে আছে চেহারা। মহিলার পায়ের কাছে বসে পুরানো একটা অ্যালবাম ওল্টাচ্ছে সাত বছরের মেরী আর আপন মনে বকবক করে চলেছে।

‘গ্র্যানি-তুমি সত্যি এরকম জামাকাপড় পরতে?’ অবিশ্বাসের সুরে প্রশ্ন করল সে একটা ছবির ওপর মোটাসোটা আঙুল রেখে। ছবিতে জাব্বিজোব্বা পরা স্থূলকায়া এক মহিলাকে দেখা যাচ্ছে।

‘হ্যাঁ, সোনা।’

মেয়েকে ভেতরে ঢুকতে দেখে মুখ তুলে চাইলেন মিসেস হিনটন। ‘তুই মেরীকে নিতে আসিসনি তো?’

‘বাজারে যাব, মা। তোমার জন্য কিছু আনতে হবে?’

‘দরকার নেই। তোমার কিছু লাগবে, নার্স?’ তাঁর পাশে, চেয়ারে বসা

নার্স চার্টারিসের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে প্রশ্ন করলেন তিনি।

বই পড়ছিল চার্টারিস। এদিক-ওদিক মাথা নাড়ল। ‘লাগবে না।’

‘মেরী,’ মেয়েকে ডাকল মা। ‘যাও তো, চট করে কোটটা পরে হলঘরে চলে এসো। তুমি রেডি হলেই বেরিয়ে পড়ব আমরা। আর হ্যাঁ, মুখ হাত ধুয়ে নিতে ভুলো না।’

মেরী লাফাতে লাফাতে নিচে নেমে এল। ও চলে যাবার পরে চোখ সরু করে জোয়ানের দিকে তাকালেন মিসেস হিনটন, ঠোঁটের কোণে ধূর্ত হাসি। ‘ডাক্তারটা আজ কী বলল তোকে? আমার অবস্থা আরও খারাপ, তাই না? ডাক্তার বোধহয় ভাবে আমি একটা পাগল, উন্মাদিনী। ও চায় আমি জেলখানায় আটকে থাকি। ঠিক বলেছি না?

‘বোকার মতো কথা বোলো না, মা। উনি কেন তা চাইবেন। ডা. বুরলে খুবই ভালো মানুষ। উনি বলেছেন তুমি আগের চেয়ে সুস্থ হয়ে উঠছ; তবে তোমার বেশি বেশি বিশ্রামের দরকার। আর শরীরের শক্তি ফিরে পেতে হলে খেতে হবে ঠিকঠাকমতো। তোমার জন্য স্পেশাল ডায়েটের ব্যবস্থা করছেন তিনি। নতুন একজন নার্সও রাখা হবে। নাইট ডিউটি দেবে। তাহলে চার্টারিসের ওপর চাপটা কম পড়বে।’

‘তার মানে ডাক্তার চায় না আমি একা থাকি, এই তো?’ হাতের সেলাই কাঁটা সক্রোধে মেঝেতে ছুড়ে ফেললেন মিসেস হিনটন। ‘এসব আমি মানব না, বুঝলি? আমি এসব মানি না। এমন ভাব করছিস সবাই যেন আমি একটা ক্রিমিনাল বা ম্যানিয়াক।’

রেগে গেলে চেহারার রং বদলাতে থাকে মিসেস হিনটনের। এবারও তাই হলো। সেই সাথে মুখ বেয়ে ফেনা বেরুতে লাগল।

‘উত্তেজিত হবেন না, মিসেস হিনটন,’ বৃদ্ধাকে শান্ত করার চেষ্টা করল চার্টারিস। তারপর জোয়ানের দিকে তাকিয়ে ইশারা করল। ‘আপনি যান। আমি ওনাকে দেখছি।’

‘তুই আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে চাস।’ রাগে কাঁপছেন হিনটন, থুথু ছিটকে বেরুচ্ছে মুখ থেকে। ‘তোরা সবাই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র পাকাচ্ছিস, এ আমি ভালোই বুঝতে পারি।’

‘না, মা। খামোখাই তুমি ভুল বুঝছ আমাদের। আমি যাই। মেরী অপেক্ষা করছে আমার জন্য।’

‘একমাত্র মেরীই আমাকে ভালোবাসে, ফুঁপিয়ে উঠলেন বৃদ্ধা। ‘আর কেউ আমাকে দেখতে পারে না।’ বিশাল শরীর নিয়ে রকিং চেয়ারে দোল খেতে লাগলেন তিনি, সেই সাথে ফোঁপানি চলল। অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে রইল জোয়ান। খানিক পরে মুখ তুলে চাইলেন মিসেস হিনটন, প্ৰায় খেঁকিয়ে উঠে জানতে চাইলেন, ‘ডাক্তার তাহলে আমার জন্য স্পেশাল ডায়েটের ব্যবস্থা করেছে, না? কী সেটা জানা যাবে?’

‘অবশ্যই। উনি তোমাকে প্রচুর দুধ, সুপ আর আধসেদ্ধ মাংস খেতে বলেছেন। তবে বেশি চা খাওয়া চলবে না,’ বলে হাসল জোয়ান।

‘তার মানে চা খাওয়াও বন্ধ!’ গুঙিয়ে উঠলেন মিসেস হিনটন।

মাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত নিচে নেমে এল জোয়ান উইলবি।

মেরী ছটফট করছিল। তার ঝকঝকে, কোমল মুখে খুশি ফুটে বেরুচ্ছে। মার সাথে শপিংয়ে যেতে খুব পছন্দ করে ও।

‘মামণি!’ অধৈর্য গলায় ডাকল সে। ‘সেই কখন থেকে রেডি হয়ে বসে আছি তোমার জন্য। ‘

‘হ্যাঁ, মা। চলো।’ বলল জোয়ান।

জার্সি আর স্কার্ট পরেই বেরিয়ে পড়ল সে। মেরী সারাক্ষণ বকবক করেই চলল। হাসিমুখে তার কথা শুনে গেল মা।

এদিকে মিসেস হিনটনকে শান্ত করতে জান বেরিয়ে যাচ্ছে চার্টারিসের বুড়িকে দুচোখে দেখতে পারে না সে। মহিলাকে পাগলাগারদে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ, এটা হলো তার ব্যক্তিগত অভিমত। বৃদ্ধা বেশ নিষ্ঠুর প্রকৃতির, মানুষকে কষ্ট দিয়ে আনন্দ পায়। আর বাচ্চাটাকে ঘনঘন এ ঘরে ঢুকতে দেয়া ঠিক হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলতে হবে। নতুন আরেকজন নার্স আসছে শুনে খুশিই হয়েছে চার্টারিস। ওর বোঝা খানিকটা কমবে।

‘আর একটা কথাও নয়, মিসেস হিনটন,’ রীতিমত শাসাল সে বুড়িকে। ‘তাহলে কিন্তু চা-এর সাথে ডিম খেতে দেব না।’

মিসেস হিনটন খেতে খুব পছন্দ করেন, এখানে চাকরি নেয়ার দুদিন পরেই বুঝে গেছে চার্টারিস। মহিলাকে বশে রাখার মোক্ষম একটা অস্ত্র হলো খেতে না দেয়ার ভয় দেখানো। এবারও কাজ হলো। বিষ দৃষ্টিতে চার্টারিসের দিকে তাকালেন হিনটন। তারপর ঝুঁকে মেঝে থেকে সেলাই কাঁটা তুলে নিলেন। খানিক পরে চার্টারিসের বইয়ের পাতা ওল্টানোর শব্দ আর সেলাই কাঁটার ছন্দোবদ্ধ টিং টিং ছাড়া আর কোনো শব্দ শোনা গেল না।

সেদিন বিকেলেই ডা. বুরলে নাইট ডিউটির জন্য আরেকজন নার্স পাঠিয়ে দিলেন। প্রকাণ্ডদেহী মহিলার চেহারায় পুরুষালি ভাবটা বেশি। নাম ফ্লোরা ম্যাকব্রাইড। ভীষণ বাচাল। সে আসার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে বাড়ির চাকরবাকররা সবাই জেনে গেল তার বন্ধুরা তাকে ‘ফ্লসি’ বা ‘ফ্লো’ বলে ডাকে এবং পুরুষ জাতটা তার দুচোখের বিষ আর তার বন্ধুভাগ্য খুব ভালো। এই সব বলে তার বন্ধুদের নিয়ে একের পর এক গল্প ফেঁদে গেল সে।

মিসেস হিনটনকে দেখে মনে হলো ‘ফ্লসি’ বা ‘ফ্লো’র আগমনে অসন্তুষ্ট হননি। তবে তাঁর অবস্থার কোনো পরিবর্তন ঘটল না, বরং মেজাজ আরও চড়া হয়ে উঠল, যখন তখন জোয়ান এবং দুই নার্সকে ধমকাতে লাগলেন আর ডাক্তার তাঁর স্বাস্থ্য সম্পর্কে কী রিপোর্ট দিচ্ছে তা জানার জন্য ওদেরকে উত্ত্যক্ত করে চললেন। বিশেষ করে নতুন ডায়েটের খাবার তালিকায় নতুন কিছু যোগ কেন হচ্ছে না তা নিয়ে প্রায়ই ভীষণ অসন্তোষ প্রকাশ করতে লাগলেন। মাঝে মাঝে দেখা গেল ফায়ারপ্লেসের সামনে চুপচাপ বসে আছেন তিনি, আগুনের দিকে তাকিয়ে ভাবছেন, কখনো কখনো ফিসফিস করে নিজের সাথে কথাও বলছেন।

চার্টারিস ডাক্তার বুরলেকে মেরীর কথা বলল। মেরী যে প্রায়ই তার নানির ঘরে যায়, এটা তার ভালো লাগছে না। কারণ মহিলার মাথা ঠিক নেই। কখন কী অঘটন ঘটিয়ে বসে। ডাক্তারও চার্টারিসের সাথে একমত। তবে মেরীর হুট করে মিসেস হিনটনের ঘরে যাওয়া বন্ধ করা যাবে না। ডাক্তারের অভিমত, তাতে বৃদ্ধা ভীষণ শক পাবেন। জোয়ানকে পরামর্শ দিল, ‘আপনার মেয়েকে ঘন ঘন ও ঘরে যেতে দেবেন না। আপনার মা যে পাগল এটা বোঝার বয়স এখনো ওর হয়নি। কাজেই এমন কিছু বলবেন না যাতে সে আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। তবে আপনার মার কোনো উন্নতি দেখছি না। ওনাকে হয়তো বাইরেই পাঠাতে হবে।

সেদিন রাতে মিসেস হিনটনকে শুভরাত্রি বলতে এসেছে জোয়ান, বৃদ্ধা বললেন, ‘জানি তো তুই কী বলবি। বলবি ডাক্তার আমার শরীর-স্বাস্থ্য নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে মানা করেছে। কিন্তু তোর কথা আমি বিশ্বাস করি না। আমাকে এত কম মাংস খেতে দিচ্ছিস কেন? আরও বেশি বেশি মাংস দিবি। তোরা তো আমাকে না খাইয়েই মেরে ফেলবি।’ শিউরে উঠলেন তিনি। ‘মাগো! মার্চের এমন ঠান্ডায় আমার বুড়ো হাড় জমে না গেলেই বাঁচি।’

কয়েকদিন পরে চার্টারিস লাফাতে লাফাতে এল জোয়ানের কাছে। হড়বড় করে বলতে লাগল, ‘মিসেস উইলবি, আর বোধহয় আপনার মাকে বাড়িতে রাখা গেল না। শিগগির ওনাকে পাগলাগারদে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। মাগো, যা দেখে এলাম তা বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছে। এই দেখুন, গায়ের রোম কেমন কাঁটা দিয়ে উঠেছে!’ এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে হাঁফাতে শুরু করল সে।

‘আহ্, কী হয়েছে খুলে বলো!’ দাবড়ানি দিল জোয়ান।

‘সকালে নাস্তা খেতে এসে দেখি আমাদের ইঁদুর ধরা কলে একটা ইঁদুর ধরা পড়েছে। ভাবলাম নাশতা সেরে থম্পসনকে ইঁদুরটা দিয়ে দেব। ও বেড়ালটাকে খেতে দেবে। মাগো, বললে বিশ্বাস করবেন না, নাশতা সেরে আমি নিচে গেছি থম্পসনকে ডাকতে। এসে দেখি মিসেস হিনটন প্রাণীটার মাথা কাটছেন টেবিল নাইফ দিয়ে। কী করছেন জিজ্ঞেস করলে উনি কী জবাব দিয়েছেন, জানেন?’ শিউরে উঠল চার্টারিস। ‘বলেছেন ইঁদুরটার রক্ত খাবেন তিনি শক্তি ফিরে পেতে। ওয়াক থু!’ এক দলা থুথু ফেলল সে খোলা জানালা দিয়ে। তারপর বলল, ‘ভাবতে পারেন ব্যাপারটা? আগে ছিলেন হাফ ম্যাড। এখন ফুল ম্যাড হয়ে গেছেন। ওনার ওপর যেন ভূত ভর করেছে। কিংবা পিশাচ। যাই। ওপরে গিয়ে দেখি আবার কী অঘটন ঘটিয়ে বসে আছেন আপনার মা।’

জোয়ান পুরো ঘটনাটা খুলে বলল ডা. বুরলেকে। থমথমে দেখাল ডাক্তারের চেহারা। গম্ভীর গলায় বলল, ‘যা ভেবেছি শেষ পর্যন্ত তাই ঘটতে চলেছে। দুঃখিত, মিসেস উইলবি, আপনার মাকে প্রাইভেট হোমে পাঠাতেই হবে। আর কোনো বিকল্প নেই। আর কাজটা করতে হবে যত দ্রুত সম্ভব। আপনি রাজি থাকলে আমি সব ব্যবস্থা করে দেব।’

নিঃশব্দে কাঁদল জোয়ান। সান্ত্বনা দিতে এ ধরনের আরও কয়েকটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা তাকে বলল ডাক্তার। সে সব কেসের ক্ষেত্রেও রোগীকে প্রাইভেট হোমে পাঠানো ছাড়া উপায় ছিল না।

শেষে ব্যাপারটার গুরুত্ব বুঝতে পারল জোয়ান। ডাক্তার নিজেই সব ব্যবস্থা করে দিল। আগামী মঙ্গলবার মিসেস হিনটনকে ‘পার্কসাইড হোম ফর মেন্টাল কেস’-এ ভর্তি করা হবে। ডাক্তার বলল বৃদ্ধাকে এ ব্যাপারে কিছুই জানানো যাবে না। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার পরে, জোয়ান অবাক হয়ে লক্ষ করল তার মনে হচ্ছে সাতমণী একটা পাথর নেমে গেল বুক থেকে।

খবরটা শোনার পরে চার্টারিস মন্তব্য করল, ‘সঠিক সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে।’ আর ফ্লোরা ম্যাকব্রাইড লাজুক ভঙ্গিতে মাথা নাড়তে নাড়তে গমগমে গলায় বলল, ‘এমন অবস্থা চলতে থাকলে ছেলেমানুষদের ভয় পাবারই কথা। আমি হলে এত চাপ সহ্য করতে পারতাম না।’

সোমবার বিকেল থেকেই মিসেস হিনটনের জিনিসপত্র বাঁধাছাদার কাজ শুরু হয়ে গেল। চাকরবাকরদের দৌড়াদৌড়ি দেখে তিনি কারণ জানতে চেয়েছিলেন। তাঁকে বলা হয়েছে ফ্লোরা ম্যাকব্রাইড চলে যাচ্ছে। ব্যাখ্যাটা সন্তুষ্ট করেছে মিসেস হিনটনকে। তিনি বসে আছেন সোফায়, অলস চোখে কাজের লোকদের দৌড়াদৌড়ি দেখছেন। পরদিন সকাল নয়টায় অ্যাম্বুলেন্স আসার কথা। তার আগেই সব কাজ সারতে হবে।

ফ্লোরা ম্যাকব্রাইড নাইট ডিউটি করতে আসে রাত দশটায়। আজ সকাল সকাল চলে এল। বলল দুপুরে ঘুমাবার চেষ্টা করেছিল। ঘুম আসেনি। মাথাটা খুব ধরে আছে। ওষুধের দোকানে যাবে মাথা ধরার ওষুধ কিনতে।

‘ঠিক আছে, যাও! সম্ভব হলে আমার জন্য পারফিউম নিয়ে এসো। ফুরিয়ে গেছে।

‘অবশ্যই আনব।’ উঠে দাঁড়াল ম্যাব্রাইড। দরজার দিকে পা বাড়িয়েছে, মিসেস হিনটনের কর্কশ কণ্ঠ শুনতে পেল সে। ভুরু কুঁচকে বলল, ‘বুড়িটা কাল চলে যাবে শুনে ভালো লাগছে। এমন বজ্জাত বুড়ি জীবনে দেখিনি।’

চার্টারিস মুচকি হাসল শুধু, কিছু বলল না।

ফ্লোরা ম্যাকব্রাইডের সঙ্গে সেও একমত। সারাক্ষণ শুধু খেতে চায়। আরে, তিন কাল গিয়ে এক কালে ঠেকেছে। আর কদিন পরে পটল তুলবি। এখনো এত খাই খাই কেন?

ফ্লোরা ম্যাকব্রাইড চলে যাবার খানিক পর বাটলার থম্পসন ঢুকল মিসেস হিনটনের ঘরে। চার্টারিসের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তোমার ফোন।’

‘কে?’

‘নাম বলেনি।’ ডাক্তারের কণ্ঠ ঠিকই চিনতে পেরেছে বাটলার, কিন্তু মিসেস হিনটনের সামনে ডাক্তারের নাম বলা যাবে না কিছুতেই। কঠোরভাবে নিষেধ আছে।

‘আচ্ছা, যাও। আমি আসছি।’

চলে গেল থম্পসন। কুতকুতে দৃষ্টিতে চার্টারিসকে দেখতে লাগলেন হিনটন। চোখে সন্দেহের ছায়া।

‘আমি ফোনটা ধরেই আসছি, মিসেস হিনটন,’ বলল চার্টারিস। তারপর সিঁড়ি বেয়ে নেমে এল নিচে। ভাবছে কে আবার ফোন করল।

ঘরে একা মিসেস হিনটন। জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন তিনি। ড্রাইভওয়েতে সাইকেল নিয়ে খেলা করছে তাঁর আদরের নাতনি। জানালার কাচে টোকা দিলেন হিনটন, মেরীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছেন। কিন্তু মেয়েটা অনেক দূরে, ঠকঠক আওয়াজ শুনতে পেল না সে। হঠাৎ কী ভেবে এদিকে তাকাতেই দেখল তার গ্র্যানি তার দিকে তাকিয়ে হাসছেন, ইশারা করছেন তাঁর ঘরে যেতে। ‘বেচারি গ্র্যানি,’ মনে মনে বলল মেরী। ‘সারাদিন ঘরের মধ্যে আটকে থাকে।’ মিসেস হিনটনের দিকে মাথা ঝাঁকিয়ে বোঝাল সে আসছে, তারপর দৌড় দিল বাড়ির দিকে।

মিসেস হিনটন মুচকি হাসলেন। নার্সের খুব শিগগির ফিরে আসার সম্ভাবনা কম। ফোনে কথা শুরু করলে সহজে থামতে চায় না চার্টারিস।

একটু পরেই হালকা পায়ের শব্দ শুনতে পেলেন তিনি সিঁড়িতে, প্যাসেজ ধরে আসছে এদিকেই।

‘গ্র্যানি!’ আধখোলা দরজা দিয়ে উঁকি দিল মেরী।

‘চুপ চুপ! শব্দ কোরো না। আমার মাথা ধরেছে-এসো, ভেতরে এসো, সোনা।’ মেরী দৌড়ে গিয়ে চুমু খেল মিসেস হিনটনকে। নানিকে আজ কেমন যেন অন্যরকম লাগছে, স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন তিনি মেরীর দিকে, তারপর গলার কাছে নেমে এল চোখ… কেমন ঘোর লাগা চাউনি … খুব খিদে পেয়েছে এমন একটা ভাব।

‘বসো, সোনা। আমার হাতে সময় খুব কম। জানোই তো ওরা আমাকে একদম একা থাকতে দেয় না। তবে তোমার সাথে খুব জরুরি কিছু কথা আছে আমার। তুমি তো জানো মামণি, আমি বুড়ো, অসুস্থ একজন মানুষ। খুবই অসুস্থ। ডাক্তার বুরলে আমাকে পাগলাগারদে পাঠাতে চাইছে। পাগলাগারদ কী জানো তুমি? যেখানে পাগল মানুষদের রাখা হয়! কিন্তু আমি কি পাগল, বলো? অথচ ডাক্তারটা আমাকে পাগল সাজিয়ে জোর করে এই বাড়ি থেকে বের করে দিতে চাইছে। আমি অসুস্থ একজন মানুষ। আমাকে ঠিকমতো খেতেও দেয় না ওরা। ঠিকমতো খেতে দিলে কবে সুস্থ হয়ে যেতাম!’

কথা বলার সময় মিসেস হিনটন মেরীকে নিজের শরীরের সাথে চেপে ধরে রাখলেন। মেরীর নরম চুলে হাত বোলাচ্ছেন তিনি, ঘাড়ে আর কাঁধে আদর করছেন। ‘তোমার গ্র্যানিকে তুমি খুব ভালোবাস, তাই না মামণি?’

‘বাসি তো!’ ছটফটিয়ে উঠল মেরী। অস্বস্তি লাগছে ওর। নানি ওর দিকে এমন অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে আছে কেন—ওনাকে সত্যি সত্যি একটা পাগলের মতো লাগছে।

সোফা ছেড়ে উঠলেন মিসেস হিনটন, দরজা বন্ধ করে ভেতর থেকে ছিটকিনি লাগিয়ে দিলেন। তারপর আবার ফিরে এলেন মেরীর কাছে।

‘কাজটা খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে, সোনা। নইলে চার্টারিস আর ওই ম্যাকব্রাইডটা যখন তখন চলে আসতে পারে।

‘কী করতে হবে, গ্র্যানি?’

‘আমাকে ছোট্ট একটা জিনিস উপহার দেবে তুমি… সামান্য একটা জিনিস…’ বলতে বলতে উত্তেজিত হয়ে উঠলেন তিনি, থুথু ছিটকে পড়তে লাগল, ‘…জিনিসটা আমার খুবই দরকার।’

‘আমাকে ভয় দেখাচ্ছ কেন, গ্র্যানি!’ কাঁদো কাঁদো গলায় বলল মেরী I

‘ভয়ের কিছু নেই, সোনা। বেশি লাগবে না আমার। এক কাপ হলেই চলবে। তোমার তাজা রক্ত চাই আমার এক কাপ। আমার স্পেশাল ডায়েট। তুমি ইচ্ছে করলেই তোমার গ্র্যানিকে সুস্থ করে দিতে পারো। তোমার গ্র্যানিকে তো তুমি খুব ভালোবাস, মেরী। এক কাপ রক্ত দিলে তোমার কোনো ক্ষতি হবে না। কিন্তু আমি সুস্থ হয়ে উঠব। বাঁচব আরও অনেক দিন।’

‘এসব কী বলছ, গ্র্যানি? আমার ভাল্লাগছে না। আমি যাই।’

‘বোকার মতো কথা বোলো না। বললাম তো ব্যথা পাবে না। আমার জিনিসটা আমাকে দিয়ে দিলেই দরজা খুলে দেব।’

এবার কাঁদতে শুরু করল মেরী।

‘আরে আরে বোকা মেয়েটা কাঁদছে দেখো। কান্নাকাটি বন্ধ করো। কাজটা এক্ষুনি সারতে হবে। সময় নেই।’

প্রকাণ্ড শরীর নিয়েও ঝড়ের গতিতে টি টেবিলের দিকে এগোলেন মিসেস হিনটন, খপ করে তুলে নিলেন টেবিল নাইফটা। বিস্ফারিত চোখে দৃশ্যটা দেখল আতঙ্কে জমে যাওয়া মেরী। গলা খুলে চিৎকার দিল সে। হিংস্র বাঘিনীর মতো ঘুরে দাঁড়ালেন হিনটন, রাগ আর শঙ্কায় গনগনে লাগছে মুখটা।

চুপ করো বোকা মেয়ে। নইলে এক কোপে কল্লা কেটে ফেলব।’

জলের তোড়ে সবকিছু আবছা দেখাচ্ছে, গলা দিয়ে হেঁচকি উঠে গেছে ভয়ের চোটে, ছোট্ট মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে ছুটল দরজার দিকে, কিন্তু ছিনকিনিটা ওর নাগাল থেকে অনেক উঁচুতে। দরজায় দমাদম ঘুষি মারছে মেরী, ‘মা! মা!’ বলে কাঁদছে, এমন সময় শক্ত একটা হাত চেপে ধরল ওর নরম ঘাড়। পরক্ষণে ওকে ছুড়ে ফেলে দেয়া হলো সোফার ওপর, হাতে ছুরি, ভয়ংকর চেহারা নিয়ে ওর গায়ের ওপর উঠে এলেন মিসেস হিনটন।

‘মা…মা… চার্টারিস… বাঁচাও…বাঁচাও…!’ মিসেস হিনটন বাচ্চাটার ঘাড়ের কাছের চুল চেপে ধরলেন, হ্যাঁচকা একটা টান দিলেন, শব্দ হলো মট করে, পরক্ষণে থেমে গেল মেরীর চিৎকার।

এদিকে নার্স চার্টারিস এসে ফোন তুলেছে।

‘হ্যালো?’

‘চার্টারিস বলছ?’

‘জি।’

‘আমি ডা. বুরলে। তোমাকে ফোন করেছি…’ হঠাৎ কেটে গেল লাইন। মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল চার্টারিসের। সে ‘হ্যালো হ্যালো’ বলল কিন্তু ওধার থেকে কোনো সাড়া নেই। এরকম মাঝে মাঝেই হয়। কথা বলতে গিয়ে লাইন কেটে যায়। সে বিরক্ত হলেও ধৈর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। আশা করল ডা. বুরলে ওকে ফিরতি ফোন করবেন। এক মিনিট চলে গেল। ফোন আসছে না। অধৈর্য ভঙ্গিতে জুতোর ডগা দিয়ে মেঝে খুঁড়তে লাগল চার্টারিস। দুশ্চিন্তা হচ্ছে ওর-মিসেস হিনটনকে একা রেখে আসাটা উচিত হয়নি। তবে অল্প সময় তো। বুড়ি এর মধ্যে নিশ্চয়ই কিছু ঘটিয়ে ফেলবে না।

রাগ নিয়ে ফোনের দিকে তাকাল চার্টারিস। তিন মিনিট হলো এখনো কোনো সাড়াশব্দ নেই। হঠাৎ বেজে উঠল ফোন। চট করে রিসিভার তুলল সে।

‘চার্টারিস?’ ডা. বুরলের গলা। ‘হঠাৎ লাইন কেটে গিয়েছিল। যাকগে, শোনো, আমি বলতে ভুলে গিয়েছিলাম যাবার আগে মিসেস হিনটনকে সিডেটিভ দিয়ে ঘুম পাড়াতে হবে। মেডিনল খাইয়ে দিয়ো। ঘুমাতে থাকলে গাড়িতে তোলার সময় কোনো ঝামেলা করতে পারবেন না উনি। কাল সকালে আমি আসব তোমাদের বাড়িতে। বিদায়।’

ফোনটা সিঁড়ির পাশে, একটা টেবিলের ওপর। দোতলায় যাবার আগে চার্টারিস ভাবল মিসেস উইলবির সাথে একটু কথা বলা দরকার। চূড়ান্ত প্রস্তুতির ব্যাপারে ওনার যদি কোনো পরামর্শ থাকে…

জোয়ান উইলবি ড্রইংরুমে বসে বই পড়ছিল, চার্টারিসকে দেখে মুখ তুলে চাইল, ‘কিছু বলবে?’

‘আমার সাথে আপনার কোনো কাজ আছে কিনা…’

‘না। কোনো কাজ নেই। সবকিছুই চমৎকার সামলে নিয়েছ তোমরা। ডা. বুরলে কাল সাড়ে আটটার মধ্যে চলে আসবেন, হাসপাতালের গাড়ি আসার আধা ঘণ্টা আগেই।’ বইটা কোল থেকে নামাল সে। ‘চার্টারিস, জানি ঠিক কাজটাই করছি, তারপরও কেমন অস্বস্তিতে ভুগছি।’

মার জন্য, সন্তান হিসেবে যা করার আপনি সবই করেছেন,’ বলল চার্টারিস 1 জোয়ানের ঠোঁটে বিষণ্ণ হাসি ফুটল, তারপর বলল, ‘থম্পসনকে একটু আসতে বলো তো।’

দ্রুত প্যান্ট্রির দিকে পা বাড়াল চার্টারিস, থম্পসনকে খবরটা দিল। দুজনে মিলে ড্রইংরুমের দিকে আসছে, এমন সময় মেরীর চিৎকার শুনতে পেল ওরা। তীব্র আতঙ্ক নিয়ে চিৎকার করছে মেরী, আর চিৎকারটা আসছে মিসেস হিনটনের ঘর থেকে। কিন্তু হঠাৎ শুরু হয়ে থেমে গেল কেন চিৎকার? থম্পসনের হাত খামচে ধরল চার্টারিস-’সর্বনাশ! মেয়েটা মিসেস হিনটনের ঘরে! আমার সাথে একটু আসো তো!’

সিঁড়ি লক্ষ্য করে দৌড় দিল চার্টারিস, পেছনে থম্পসন। ড্রইংরুমের পাশ দিয়ে যাবার সময় চোখের কোণ দিয়ে দেখল বিস্মিত দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে মনিবনী।

মিসেস হিনটনের ঘরের সামনে উড়ে চলে এল চার্টারিস। টান দিল। ভেতর থেকে বন্ধ দরজা। দিশেহারা বোধ করল চার্টারিস। কিন্তু এ সময় মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে, নিজেকে বোঝাল ও।

‘মিসেস হিনটন! দরজা খুলুন, প্লিজ! আমি চার্টারিস।’

কোনো সাড়া নেই। ঘরের ভেতরের নীরবতা অস্বাভাবিক এবং ভয়ংকর ঠেকল চার্টারিসের কাছে। ভেতরে কেউ যেন দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ, কান পেতে শুনছে।

‘মিসেস হিনটন! দরজা খুলুন বলছি। আমি জানি ভেতরে আছেন আপনি।’ দরজায় লাথি মারল সে।

হঠাৎ অস্পষ্ট একটা গোঙানির আওয়াজ শোনা গেল ভেতর থেকে। কপালে ভাঁজ পড়ল চার্টারিসের। মেরী নিশ্চয়ই ব্যথা পেয়েছে। ঈশ্বর জানেন শয়তান বুড়ি ওর কোনো ক্ষতি করেছে কিনা। থম্পসনের পেশিবহুল শরীরের দিকে তাকাল সে। হ্যাঁ, ওকে দিয়ে কাজ হবে।

‘মিসেস হিনটন, দরজা খুলুন। না হলে কিন্তু ভেঙে ফেলব।’ এবার ভেতরে থপথপ আওয়াজ শুনল চার্টারিস। দৌড় দিল কে যেন।

চার্টারিস ইশারা করল থম্পসনকে। ধাক্কা দিল থম্পসন। কাজ হলো না। এবার শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে লাথি মারল। মড়াৎ করে শব্দ হলো। দরজার গায়ে চিড় ধরেছে। সেই সাথে থরথর করে কেঁপে উঠেছে গোটা বাড়ি। বিকট শব্দ শুনে জোয়ান, পার্লার মেইডসহ বাড়ির অন্যান্য চাকরবাকর দৌড় দিল প্যাসেজ লক্ষ করে। থম্পসন সর্বশেষ চেষ্টা করল। কয়েক পা পিছিয়ে গিয়ে দৌড়ে এসে ভারী শরীর নিয়ে আছড়ে পড়ল দরজার গায়ে। কান ফাটানো শব্দে ভেঙে গেল দরজা, ঝড়ের গতিতে ভেতরে ঢুকে পড়ল চার্টারিস। মিসেস হিনটন দারুণ চমকে উঠে নেমে পড়লেন সোফা থেকে; দলা পাকানো, রক্তাক্ত জিনিসটাকে ছেড়ে।

ভেতরে ঢুকবে কি ঢুকবে না ভেবে দ্বিধান্বিত জোয়ান দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে ছিল, এমন সময় মিসেস হিনটনকে দেখতে পেল সে। তার মাথাটা ভীষণ ঘুরে উঠল। মার মুখের নিচের অংশটা লাল রক্তে মাখামাখি আর হাতেও রক্ত, যেন টকটকে লাল গ্লাভস পরেছেন তিনি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *